গল্প-পাবলো পিকাসো ও রাগী দাদু-সাথী সেনগুপ্ত-শীত ২০২১

golporagidadu

“এই জানো, লোকটা কেমন খেঁকি স্বভাবের?”

পাবলোর মা রিয়ার বক্তব্যের উত্তরে মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে পাবলোর বাবা অনীক বলল, “কার কথা বলছ?”

“এই যে পাশের বাড়িতে এসেছে পাঁকতেড়ে বুড়োমতো লোকটা।”

“তোমার সঙ্গে কোথায় আলাপ হল?”

“লনে পাবলো একটা হালকা বল নিয়ে খেলছিল। লোকটা ও-বাড়ির বারান্দায় বসে চা না কফি কিছু একটা গিলছিল। সেইসঙ্গে একটা বই পড়ছিল।”

অনীক মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে বলে, “তো? তাতে কী হল?”

“কী আবার হবে? খেলতে খেলতে বলটা গিয়ে ওঁর কফির কাপে পড়ে। ব্যস, উনি বেদম চেঁচিয়ে উঠলেন। পাবলোকে তো যা নয় তাই করে বকলেন। আমাদেরও ছেড়ে কথা বললেন না। জানো, ছেলের অবস্থা গোরুচোরের মতো। চোখে জল এসে গিয়েছিল ওর।” রাগে অপমানে রিয়ার গলা বসে আসে।

অনীক হেসে ফেলে। বলে, “সে আর কী করা যাবে। ভদ্রলোক সকালবেলায় শীত-রোদ গায়ে মেখে মৌজ করে চা কিংবা কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে পছন্দমতো বই পড়ছিলেন, এমন সময় যদি হঠাৎ একটা কাদা মাখা বল এসে কাপের ভেতর পড়ে আর কফিটা চলকে গিয়ে জামাকাপড়ে লাগে তাতে কার-বা আনন্দ হয় বলো?”

“মানছি। আনন্দ না-ই হতে পারে, তাই বলে ওভাবে বলবেন? কেউ তো ইচ্ছে করে অমন করেনি।” রিয়ার ফোঁসফোঁসানি থামতে চায় না।

অনীক রিয়ার কথাটা মানতে পারে না। হয়তো ভদ্রলোক একটু বেশি রি-অ্যাক্ট করেছেন, কিন্তু আচমকা ওরকম ঘটনা ঘটলে অনীকই কি ছেড়ে দিত? আচ্ছা, অনীকের কথা ছাড়ো, বাইরে থেকে বল এসে যদি রিয়ার ড্রেসিং টেবিলের আয়না ভাঙে কিংবা বিছানার ধবধবে সাদা চাদরে কাদা মাখায় তাহলে রিয়ারও খুব আনন্দ হবে কি? যাই হোক, রিয়াকে বুঝিয়ে, পাবলোকে আদর করে ব্যাপারটা অনীক সামাল দেয়।

আসলে ওরা দু-দিনের জন্য এসেছে বোলপুরের কাছাকাছি জামবনির এই নতুন কমপ্লেক্সটায়। জায়গাটা ভারি সুন্দর। ছোটো ছোটো কটেজ ছড়িয়ে রয়েছে গোটা এলাকা জুড়ে। এসব জায়গাগুলো তো পুরোদস্তুর গ্রামই। ইদানীং শহুরে লোকেরা দুয়েকদিনের ছুটিতে ভিড়ভাট্টার বাইরে খোলা হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিতে এসব জায়গায় জোটে। একটা ছোটোখাটো ছুটির বাড়ি কিনে ফেলার শখ রয়েছে অনেকেরই। রিয়া-অনীকদের সাধ থাকলেও সাধ্য নেই, তাই এখানকার কুটিরের মালিক নয় তারা। রিয়ার এন.আর.আই ছোটোমামা ওদের কুটিরটির অধিকারী। উনিও দেশে এলে কয়েকদিন কাটিয়ে যান এখানে। বাড়িটা অন্যসময় তালাবন্ধই থাকে। স্থানীয় কেয়ারটেকার ভজন দেখাশোনা করে। গতবার ছোটোমামা কলকাতা এসে রিয়াদের বলেছিলেন, ‘তোরা মাঝেমধ্যে কাটিয়ে আসতে পারিস।’ তাই এবারের গুড ফ্রাইডে-ইস্টারের তিনদিনের ছুটিতে ওরা এসেছে এখানে। এখানে চাইলে ফোন করে গাড়ি পাওয়া যায়। তা নিয়ে বিকেলে বেরোবার প্ল্যান আছে ওদের। এদিক ওদিক ঘুরে-টুরে আসার ইচ্ছে। কাল সকালবেলা পাবলোকে বিশ্বভারতীর মিউজিয়ামটা দেখাবার ইচ্ছে অনীকের।

এখানকার কটেজগুলো বেশিরভাগই বিক্রি হয়ে গেছে। ছোটোমামার মতো বেশ কিছু অনাবাসী বাঙালি সেগুলো কিনেছেন। অনীকের মনে হল, উলটোদিকের কটেজের বদরাগী বুড়োও হয়তো ওইরকম কেউ হবেন। ওই জন্যই বাচ্চাকাচ্চার বেয়াদপি সইতে পারেননি। আবার মনে হল, সে যাই হোক, মা-বাবা তুলে অপমান করাটা একটু বাড়াবাড়িই হয়ে গেছে।

জায়গাটা ঘুরে দেখতে একটু বেরিয়েছিল অনীক। তখনই দেখল বারান্দায় ছোটো চেয়ার-টেবিলে বসে ভদ্রলোক কী যেন লেখালেখি করছেন। অনীকের মনে হল একবার গিয়ে আলাপ করে আসা যাক। সেই সূত্রে পাবলোর অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য একটু সরি বলে আসা যাবে। যতই হোক, ছোটোমামার প্রতিবেশী। বয়সে ছোটোমামাদেরই সমবয়সি মনে হয়। ভদ্রলোক এতটাই নিমগ্ন হয়ে রয়েছেন লেখায়, তাঁকে বিরক্ত করতে ইতস্তত বোধ হল। হয়তো কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিয়ে বসেছেন।

এমন সময় ভজনের সঙ্গে দেখা। ভজন বলল, “এখানে কাছাকাছি একটা খাওয়ার জায়গা আছে। ওখানে আপনাদের দুপুরের খাবারটা অর্ডার দিয়ে এলাম। ওরা এসে একটা নাগাদ খাবার দিয়ে যাবে। আপনাদের আর রোদের মধ্যে বাইরে বেরোতে হবে না।”

“যাক বাবা, খুব ভালো কাজ করেছ। আচ্ছা ভজন, সামনের বাড়িতে ভদ্রলোকটি কি একাই থাকেন? ফ্যামিলি নেই?”

ভজন ঠোঁট উলটে বলে, “থাকবে না কেন, বউ, ছেলে সবই আছে কলকাতায়। শুনেছি উনি কোন কলেজের প্রফেসর ছিলেন। কিন্তু খুব একাচোরা ধরনের। এখানে বেশিরভাগ একাই আসেন। একা ঘুরে বেড়ান। মালিকে মাঝে মাঝে ফুলগাছ-টাছের কথা জিজ্ঞেস করেন। আর লেখাপড়া করেন। কারও সঙ্গে মিশতে ভালোবাসেন না। ও-বাড়িতে যে সুনীল বলে লোকটা দেখাশোনা করে, সে বলছিল বুড়োটা কেমন খ্যাপাটে ধরনের। চা-কফি দিতে দু-মিনিট দেরি করলে সুনীলের মুণ্ডুপাত করে।”

“সবাই তো একরকম হয় না। তাছাড়া প্রফেসর মানুষ, তাই হয়তো একটু গম্ভীর।” অনীক বলে। তার মনে হয় একজন অচেনা ভদ্রলোক সম্পর্কে অতিরিক্ত কৌতূহল প্রকাশ করে ফেলেছে সে।

কিন্তু ভজন একটু বেশি কথা বলে। সে বলতে থাকে, “আসলে দাদা, শুনেছি এতটা বদমেজাজি ছিলেন না। কয়েক বছর আগে অ্যাকসিডেন্টে মেয়ে আর নাতি মারা যায়, তারপর থেকেই নাকি এমন খিটখিটে হয়ে গেছেন।”

মনটা একটু খারাপ হয়ে যায় অনীকের।

ঘরে ঢুকে দেখে চমৎকার শান্তি বিরাজ করছে। রিয়া স্নান করে, চুল আঁচড়ে, গায়ে সুগন্ধি লাগিয়ে কার সঙ্গে ফোনালাপে ব্যস্ত। মাঝে মাঝে হাসির হিল্লোলে মনে হচ্ছে বান্ধবীদের কেউ। পাবলোরও স্নান শেষ। জামাকাপড় পালটে, চুল আঁচড়ে, সোফায় হেলান দিয়ে গল্পের বইয়ে মগ্ন। এই একটি সু-অভ্যাস তৈরি করতে পেরেছে রিয়া-অনীক। আট বছরের ছেলে মোবাইলে গেম না খেলে প্রচুর গল্পের বই পড়ে। অভ্যাসটা অবশ্য রিয়া-অনীকের কাছ থেকেই পাওয়া। এরা দুজনেই খুব পড়ুয়া। পাবলো ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়লেও ইংরেজি বাংলা দু-রকম বই পড়তেই ভালোবাসে। ওর স্কুলে ইংরেজি এবং বাংলা ম্যামদের কাছে ও খুব প্রিয়।

অনীক উঁকি মেরে দেখে পাবলো মন দিয়ে একটা বাংলা বই পড়ছে। রঙচঙে মলাটের ওপর বেশ জ্বলজ্বল করে লেখা ‘মধ্যরাতের ত্রাস’। লেখক শ্রী সুবিনয় মুখোপাধ্যায়।

হুম, অ্যাডভেঞ্চার। এই লেখকের লেখা পাবলোর খুব পছন্দ। এখানে আসবার সময় বইটা সঙ্গে নিয়ে এসেছে ও। ভাবতে ভাবতে বাথরুমে স্নান করতে ঢুকে যায় অনীক। যদিও অনীকের ছোটবেলায় পছন্দের লেখক ছিলেন হেমেন্দ্রকুমার রায়।

রোববার সকালে পাবলো লনে খেলছিল। তবে খুব সাবধানে। আবার না বলটা সামনের বাড়িতে চলে যায়। ও-বাড়ির দাদুটা খুব রাগী। এ জায়গাটা এমনিতে খুব সুন্দর। গতকাল বাবার সঙ্গে মিউজিয়াম দেখতেও খুব ভালো লেগেছে। পাবলো রবি ঠাকুরের কবিতা ওর স্কুলের বাংলা বইতে পড়েছে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের তো অনেক বই আছে, সেগুলো ও বড়ো হলে পড়বে। কিন্তু এখানে একটা জিনিসই খারাপ লাগছে, সেটা হল এখানে ওর কোনও বন্ধু নেই। এখানকার বাড়িগুলোতে ওর মতো আরেকটা বাচ্চা ছেলে থাকলে ওরা বেশ খেলতে পারত। ভজনকাকু অবশ্য মাঝে মাঝে ওর সঙ্গে খেলা করে যায়।

বলটা নিয়ে হালকা চালে খেলতে খেলতে পাবলো হঠাৎই দেখে সেই রাগী দাদু দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ওমা, তারই দিকে কটমট করে তাকানো! ওরে বাবা, আবার বকবে নাকি? তবে এবার তো সে কিছু করেনি। তবে দাদুটা এখনও রেগে আছে কেন? পাবলো কাঁচুমাচু মুখে বল হাতে করে জড়সড়ভাবে দাঁড়ায়। তারপর লোকটির দিকে তাকিয়ে বলে, “সরি।”

ভদ্রলোক ভুরু কুঁচকে বললেন, “হুঁ, আবার সরি কেন?”

পাবলো বলে, “আমার বলটা সেদিন… বিশ্বাস করো, আমি না ইচ্ছে করে করিনি।”

উনি নিজের মনেই কিছুটা মাথা নাড়লেন। তারপর পাবলোর দিকে তাকিয়ে বললেন, “সরি।”

পাবলো তো অবাক। রাগী দাদুটা ওকে সরি বলছে!

“তুমি সরি বলছ কেন?”

“শোধবোধ। আমারও তোমাকে অত বকা উচিত হয়নি। আমি খুব রেগে গিয়েছিলাম।”

ভয়ের আবরণ সরিয়ে পাবলো এবার হেসে ফেলে। ঝকঝকে সুন্দর হাসি।

লোকটার মুখ থেকেও রাগী রাগী ভাবটা মুছে যায়। “তোমার নাম কী হে?”

“পাবলো।”

“বাহ্‌। তা তোমার নামে বিখ্যাত কারও নাম জানো?”

“হ্যাঁ। পাবলো পিকাসো আর পাবলো নেরুদা।”

“সে কি? তাঁরা আবার কারা?”

“একজন ছবি আঁকতেন আর একজন কবিতা লিখতেন।”

“বাহ্‌, বাহ্‌!” লোকটি বেশ অবাক হয়ে যান।

“কোন ক্লাসে পড়ো?”

“ক্লাস ফোর।”

“গুড, ভেরি গুড। কিন্তু শোনো, এখানকার রোদ বেশ চড়া। তুমি রোদে খেলো না। ঘরে যাও। বিকেলে রোদ পড়লে খেলতে এসো।”

এমন সময় রিয়া ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় এসে ডাক দেয়, “পাবলো, ঘরে এসো।”

পাবলো রাগী দাদুকে টা টা করে ঘরে চলে যায়।

রিয়া বেশ রাগ রাগ করে বলল, “ওই খিটখিটে বুড়োটার সঙ্গে কী এত কথা বলছিলি?”

অনীক বিরক্ত হয়ে বলল, “ওহ্‌ রিয়া, মাইন্ড ইয়োর ল্যাঙ্গুয়েজ।”

পাবলো বলে ওঠে, “না মা, দাদুটা খিটখিটে বুড়ো নয়। একটু একটু রাগী, কিন্তু ভালো দাদু। আমার সঙ্গে ভাব হয়ে গেছে।”

অনীক রিয়ার দিকে তাকিয়ে ভ্রূ ভঙ্গি করে, ‘দেখলে তো?’

রিয়া বিব্রত হয়ে রেগে যায়। “থাক থাক, সবাই ভালো, আমিই শুধু খারাপ।”

অনীক রিয়ার কথার উত্তর না দিয়ে পাবলোকে বলে, “শোনো, ভাব হয়েছে বলে যখন তখন দাদুকে বিরক্ত করবে না।”

‘না’ বলেই পাবলো তার ব্যাগের ভেতর থেকে বই খুঁজতে লাগল। ‘মধ্যরাতের ত্রাস’ বইটা সেদিনই পড়া হয়ে গেছে। এবার টেনে বার করল এনিড ব্লাইটনের ‘ফেমাস ফাইভ’। তখনই খাবার এল। রিয়া খাবারের টিফিন ক্যারিয়ারটা টেবিলের ওপর রাখতে রাখতে বলল, “এখন বই নিয়ে বোসো না পাবলো। লাঞ্চ খেয়ে তারপর বোসো।”

পাবলো বলল, “এই একটু পড়ছি মাম্মা। তুমি খাবারটা দিতে থাকো না।”

খাওয়াদাওয়ার পাট শেষ হয়। চিকেন কারিটা বেশ ভালোই রেঁধেছিল। শেষপাতে সাদা দইও ছিল। খেতে খেতে অনীক বলল, “কাল সকাল সকাল বেরোব। একটু এদিক ওদিক ঘুরে বাইরেই খাব। ছোটোমামা কী একটা খাওয়ার জায়গার নাম বলেছিল। বোলপুর থেকে একটু দূরে, বেশ গ্রামমতো জায়গাটা।”

রিয়া বলল, “কাল বাদ দিয়ে পরশুই তো চলে যাওয়া। আমরা কালই চলে যেতে পারতাম। তুমি আবার আরেকটা দিন বাড়ালে।”

“কেন? তোমার ভালো লাগছে না? নববর্ষের ছুটিটা তো ইস্টারের লাগোয়া পেয়ে গেছি। পাবলোরও স্কুল ছুটি।”

বিকেলে পাবলো বল হাতে লনে গিয়ে দাঁড়াতেই পাশের বাড়ির লনে দাদুকে দেখতে পেল। উনি একটা ঝারি হাতে ফুলগাছে জল দিচ্ছিলেন। পাবলোকে দেখে ডাকলেন, “এই যে পাবলো পিকাসো, বল হাতে দাঁড়ানো কেন? খেলছ না?”

পাবলো বলল, “আমি কি তোমার বাগানে আসব?”

“আসতেই পারো। তুমি তো ট্রেসপাসার্স নও? রীতিমতো অনুমতি নিয়েই আসছ।”

পাবলো হাসল। ও জানে, ওই শব্দটা দাদু কোত্থেকে বলল। ক’দিন আগেই গল্পটা স্কুলে পড়ানো হয়েছে। দাদুকে বেশ ভালো লেগে গেছে পাবলোর। তাই মনে মনে বলল, ‘তুমি কখনোই সেলফিশ জায়েন্ট নও।’

মেহেদির বেড়া পেরিয়ে দাদুর বাগানে গিয়ে দাদুর সঙ্গে গাছে জল দিল পাবলো। দাদুর সঙ্গে অনেক গল্প করল। বন্ধুদের গল্প, স্কুলের গল্প। দাদু ওকে শোনালেন পাবলো পিকাসোর জীবনের গল্প। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি পিকাসোর আঁকা ছবি দেখেছ?”

পাবলো বলল, “না তো। তবে আমার স্কুলের লাইব্রেরিতে ওঁর ছবির বই আছে। কিন্তু আমাদের এখনও হাত দিতে দেয় না। তবে লাইব্রেরি ম্যাম আমাকে খুব ভালোবাসে। আমি এবার স্কুলে গিয়ে ম্যামকে দেখাতে বলব।” তারপর পাবলো বলে, “তোমার দেওয়া নামটা আমার খুব ভালো লেগেছে। আমিও তোমার একটা নাম দিয়েছি, সেটা অবশ্য তোমার নাও পছন্দ হতে পারে।”

“তাই নাকি? কী নাম?”

“রাগী দাদু।”

এইবার ভদ্রলোক হা হা করে হেসে উঠে বললেন, “বেশ বেশ।”

রিয়া আর অনীকও বাগানে হাঁটছিল। তারপর বারান্দায় বসল দু-কাপ কফি নিয়ে। রিয়া বলল, “দেখেছ, বুড়োর সঙ্গে পাবলো বেশ জমে গেছে।”

অনীক বলল, “ওঁকে ডাকবে নাকি এক কাপ কফি খেতে?”

রিয়া আপত্তি করল না।

অনীক বেড়ার ধারে গিয়ে বলল, “নমস্কার। পাবলো আপনাকে খুব বিরক্ত করছে।”

“এমন বিরক্ত হবার সুযোগ তো সচরাচর হয় না। হি ইজ আ ভেরি ইনটেলিজেন্ট বয়।”

“আসুন না, আমাদের সঙ্গে এক কাপ কফি খেয়ে যাবেন।”

“কিছু মনে করবেন না, আমার কিছু কাজ রয়েছে। তাই কফি খাওয়া আর হল না। পরে কখনও।”

ওরা আজ চলে যাবে। দশটা নাগাদ ট্রেন। গাড়িতে লাগেজ তুলছে ভজন। পাবলো ছুটে বেড়ার ধারে গেল। রাগী দাদু ও-পাশে দাঁড়িয়ে আছেন।

 “চলে যাচ্ছ নাকি পাবলো পিকাসো?”

“হ্যাঁ দাদু, আমরা কলকাতা ফিরে যাচ্ছি।”

“এই নাও তোমার দাদুর উপহার।” বলে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিলেন পাবলোর হাতে। প্লাস্টিক প্যাকেটের মুখটা স্টেপল করা। “ট্রেনে করে যেতে যেতে খুলে দেখো।”

“আচ্ছা।”

গাড়ি ছেড়ে দিল। পাবলো টা টা করল দাদুর দিকে চেয়ে।

ট্রেনে উঠে গুছিয়ে বসেই পাবলো বলল, “ও মা, দাদুর প্যাকেটটা দাও না।”

রিয়া বলল, “এখন খোলার কী দরকার? বাড়ি গিয়েই খুলে দেখো।”

“দাও না।”

অনীক বলল, “চাইছে যখন, দাওই না।”

অনীকই প্যাকেটটা খুলে দিল। একটা রঙচঙে মলাটের বাংলা গল্পের বই আর একটা চকোলেট। বইটা পাবলো হাতে নিল। “ও মা, দাদু কী করে জানল গো, আমি এই রাইটারের বই ভালোবাসি?”

রিয়া কৌতূহলী হয়ে দেখে। “ও মা, তাই তো! বান্ধবগড়ের বিভীষিকা, লেখক সুবিনয় বন্দ্যোপাধ্যায়। কী ভালো, তুই তো এটা পড়িসনি।”

অনীক বইটা নিয়ে পাতা ওলটায়। মলাট ওলটাতেই নাম আর লেখকের নাম লেখা পাতার নীচের দিকে সুন্দর টানা হাতের লেখায় লেখা–

নতুন বন্ধু পাবলো পিকাসোকে

অনেক স্নেহ ও ভালোবাসাসহ

‘রাগী দাদু’ সুবিনয় বন্দ্যোপাধ্যায়

অনীক অবাক হয়ে বার দুয়েক নামটা দেখে। পাবলোও বাবার পাশ থেকে ঝুঁকে পড়ে। তারপর খুশিতে উচ্ছল হয়ে ওঠে, “বাবা, রাগী দাদুই বইগুলো লেখে। ইস্‌, আমি বুঝতেই পারিনি।”

রিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ বলে ওঠে, “ভদ্রলোক দারুণ সারপ্রাইজ দিলেন কিন্তু।”

অলঙ্করণ-জয়ন্ত বিশ্বাস

জয়ঢাকের সমস্ত গল্প ও উপন্যাস

 

2 thoughts on “গল্প-পাবলো পিকাসো ও রাগী দাদু-সাথী সেনগুপ্ত-শীত ২০২১

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s