সারাদিন সরকারি লঞ্চে চেপে একটার পর একটা দ্বীপ পরিদর্শন করার পর যখন মিনাখাঁয় ফিরলাম, তখন মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে। ঘড়িতে মাত্র পৌনে ছ’টা। অথচ আকাশ জুড়ে ঘন কালো মেঘের কল্যাণে দিনের আলো সম্পূর্ণ নিভে গেছে। মাত্র দিন তিনেক আগে শতাব্দীর ভয়ংকরতম ঘূর্ণিঝড় আমফান এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। যতদূর চোখ যায়, আদিগন্ত জলরাশির মধ্যে টিকে থাকা দু-একটা পাকাবাড়ি আর বরাতজোরে বেঁচে যাওয়া এক-আধটা ন্যাড়া গাছ জানান দিচ্ছে, মাত্র দিন তিনেক আগেও ওসব জায়গায় জনবসতি ছিল।
সকালে এখানে আসবার জন্যে অনেক কসরত করতে হয়েছে। শিকড় উপড়ানো গাছপালা আর ভাঙা ইলেক্ট্রিকের খুঁটি পড়ে রাস্তার বেশিরভাগটাই বন্ধ। হাড়োয়া থানার একজন সিভিক পুলিশ বিভিন্ন গ্রামের ভেতর দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে এসেছিল। এখন রাতের অন্ধকারে এই আকাশ-ভাঙা বৃষ্টির মধ্যে শহুরে ড্রাইভারের পক্ষে সেই রাস্তা চিনে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। থানায় ফোন করে যে আবার পুলিশের সাহায্য চাইব, তারও উপায় নেই। মোবাইলের নেটওয়ার্ক পুরোপুরি বন্ধ। সারাদিন পেটে দানাপানি কিছু পড়েনি। তেষ্টায় বুকের ছাতি পর্যন্ত শুকিয়ে কাঠ হয়ে উঠেছে। করোনা এবং ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাজারের দোকানপাট বন্ধ। রাস্তাঘাটও জনমানবশূন্য। ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে আসছিল। এরপর যদি অনাহারে খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাতে হয়, তাহলে বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা কম। তাছাড়া এই অঞ্চলে ডাকাত এবং মশা বিখ্যাত।
মরিয়া হয়ে শুনশান বাজারের পথে উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটছিলাম। কিছুটা যাওয়ার পর হঠাৎ একটু আলোর আভাস চোখে পড়তে সেদিকে এগিয়ে গেলাম। ছোট্ট একটা মুদির দোকান। একজন ভদ্রলোক টিমটিমে হ্যারিকেনের আলোয় কোনও বই পড়ছিলেন। সৌম্য চেহারা, মুখে কাঁচা-পাকা দাড়ি, কপালে ধর্মপ্রাণ নমাজির কালো দাগ। আমাকে দেখে পরিচিতের মতো অমায়িক হেসে বললেন, “এই ঝড়জলের মদ্দি কনথে আলেন?”
সবিস্তারে আমার সমস্যার কথা বললাম। সব শুনে উনি একটুখানি চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন, “আল্লার ইচ্ছেয় গরিবির বাড়ি দুটো ডালভাতের ব্যবস্থা না-হয় হবেনে, কিন্তু রাতে কনে থাকতি দিবানে, সিডাই তো সমিস্যে।” তারপর হঠাৎ মনে পড়েছে, এমনভাবে বললেন, “মোচলমানের বাড়ি খাতি আপিত্ত নেই তো?”
আমি হেসে বললাম, “আপাতত দুটো খেতে পেলে প্রাণটা বাঁচে, ওসব হিন্দু-মুসলমান পরে বিচার করা যাবে। তাছাড়া জাতপাত আমি মানি নে।”
ঠিক তখনই আরেকজন লোক হন্তদন্ত হয়ে এসে হাজির হলেন। কলিদার পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি পরা শীর্ণ শরীর, বাবরি চুল, থুতনিতে একগাছা দাড়ি। এক হাতে একটা পলিপ্যাকে কয়েকটা কাগজের ঠোঙা, আরেক হাতে একগোছা তাজা রজনীগন্ধার স্টিক। সর্বাঙ্গ দিয়ে তখনও জল গড়াচ্ছে। আমাকে যেন উনি দেখেও দেখলেন না। দোকানির দিকে ফিরে বললেন, “ধানু ময়রারে মিষ্টির জন্যি বলে রেখেলাম, কিন্তু এই ফুল জোগাড় কত্তি গে জান কয়লা হয়ে গেল। যাক গে, আসর সাজাতি তো সুময় লাগবে, দুকান বন্দ করেন। এই বাদলায় আর খদ্দের-পত্তর আসপে বলে মনে হচ্চে না।”
আমি তখনও নাছোড়বান্দার মতো দাঁড়িয়ে রয়েছি দেখে ভদ্রলোক ওঁকে বললেন, “যাকের, তুমি আগে গে জামাকাপড় ছেড়ে শুকনো কাপড় পরে ল্যাও, আমি এসতিচি। আসলে উনি বেপদে পড়ে আমার কাচে এয়েছেন, এট্টা ব্যবস্থা না করে যাই ক্যামনে?”
তারপর উনি সংক্ষেপে আমার বিপদের কথা যাকেরকে বলতে উনি হেসে বললেন, “তুমার ঘর তো ফাঁকা পড়ে আছে, নে চলো উনারে। শরগে মানুষ, গিরামে থাকতি হয়ত এট্টু কষ্ট হবেনে, কিন্তু এট্টা তো রাত! কী বলেন, বাবু?”
আমার তখন হাতে স্বর্গ পাওয়ার মতো অবস্থা। সোৎসাহে ঘাড় নেড়ে বললাম, “রাতে মাথা গোঁজার একটু আশ্রয় পেলে বেঁচে যাই। আপনারা ভাববেন না, আমার কোনও কষ্ট হবে না।”
ভদ্রলোকের বাড়ি দেখে তো আমি তাজ্জব! একটা দিঘির পাশে যেন এক বিশাল খণ্ডহর! একটা দিক সম্পূর্ণ ধ্বসে গেছে, কোনোরকমে দাঁড়িয়ে থাকা অংশটাতে সাকুল্যে খান তিনেক ঘর। তারই একটাতে আমার থাকার ব্যবস্থা হল। পুরো বাড়িটা অদ্ভুতরকম নিস্তব্ধ।
জামাকাপড় ছেড়ে ভদ্রলোকের দেওয়া পরিষ্কার লুঙ্গি পরে চৌকিতে বসতে না বসতে একজন বয়স্কা মহিলা একটা কলাইকরা পাত্রে একদলা গুড় আর ফুলকাটা কাচের গেলাসে জল দিয়ে গেলেন। যাওয়ার সময় বললেন, “বাবা, আপনি বিশ্রাম ল্যান, রান্না হলি আপনারে খাতি দোবো। আসলে আজ আমাদের রোজা বলে রান্নাবান্না হয়নিকো।”
কয়েকদিন আগে ঈদ চলে গেছে। তাই রোজার কথা শুনে একটু অবাক হলাম। ভদ্রমহিলা হয়তো সেটা আঁচ করে থাকবেন। তিনি নিজের থেকেই বললেন, “আজ একেনে এট্টা আসর বসপে তো, তাই আমরা সবাই রোজা রেকিচি।”
বার বার আসরের কথা শুনছি। কীসের আসর জিজ্ঞেস করতে ভদ্রমহিলা মৃদু হেসে বললেন, “আমার বলা মানা। তেনাদের মর্জি হলি জানতি পারবেন।”
আমার কৌতূহল ক্রমশ বাড়ছিল। সেই বর্ষণমুখর রাতে অপরিচিত জায়গায় ওই পোড়ো বাড়ি এবং সেটির বাসিন্দাদের রীতিমতো রহস্যময় মনে হতে লাগল।
***
“বাবু কি ঘুমুয়্যে পড়লেন নাকি?”
সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ধড়মড় করে উঠে দেখি সেই দোকানি ভদ্রলোক হাসিমুখে দাঁড়িয়ে। বললেন, “রান্না হয়ে এল বলে, একেবারে খেয়ে ঘুমুবেন। আপনারে এট্টা কতা বলতি আলাম। আপনি কি আসরে থাকতি চান?”
আমি বিস্মিত হয়ে ভদ্রলোকের মুখের দিকে তাকালাম। জিজ্ঞেস করলাম, “আপনার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকে আসরের কথা শুনছি, কীসের আসর একটু বুঝিয়ে বলবেন?”
এই প্রথম তিনি সোজাসুজি আমার চোখের দিকে তাকালেন। তারপর বললেন, “সব বলব। তার আগে আপনি এট্টা কথা বলেন তো! আপনি কি জীন, ভূত এসবে বিশ্বাস করেন?”
সারাজীবন বিজ্ঞানচর্চা করা মানুষ আমি। জীন-ভূতের কথা শুনে হাসি পেয়ে গেল। ভদ্রলোক আমাকে হাসতে দেখে হয়তো একটু ক্ষুণ্ণ হলেন। বললেন, “তার মানে আপনি ওসব বিশ্বাস করেন না। তেবু আপনি চালি থাকতি পারেন, এর’ম সুযোগ তা বার বার আসে না। যাকের তেনাদের অনুমতি লিয়েচে।”
“অনুমতি নিয়েছে মানে? আমি আসরে থাকলে কার অনুমতি নিতে হবে?”
অবোধ শিশুর কথা শুনে মানুষ যেভাবে হাসে, তেমনি হাসলেন ভদ্রলোক। আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে রহস্য করে বললেন, “আপনার কি ধারণা, আপনি নিজির ইচ্ছেয় আজ রাতি একেনে এয়েচেন? সব তেনাদের ইচ্ছে।”
পুরো ব্যাপারটাই বুজরুকি মনে হলেও ভদ্রলোকের বলার মধ্যে এমন একটা এক গভীর বিশ্বাস ছিল, যা উপেক্ষা করতে পারলাম না।
কিছুক্ষণ পরে খাওয়ার ডাক এল। আমার একার জন্যে রান্না হয়েছে। মোটা চালের ভাত, ডাল আর ডিমভাজা। খিদের মুখে তাই-ই মনে হল অমৃত।
বাইরে বেরিয়ে দেখলাম, বৃষ্টি থেমে গেছে। দুধসাদা জ্যোৎস্নায় চরাচর যেন ভেসে যাচ্ছে। আশেপাশে কোথাও হয়তো হাসনুহানা ফুটেছে, তার তীব্র গন্ধে পুরো বাড়িটা যেন ম ম করছে। চারপাশটা অদ্ভুতরকম নিস্তব্ধ। আমি ছাড়া বাড়িতে আরও অন্তত তিনজন মানুষ আছেন। অথচ তাঁদেরও সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে কেমন যেন দম বন্ধ করা নৈঃশব্দ্য।
“চলেন বাবু।”
চমকে পেছন ফিরে দেখি যাকের নামে সেই ভদ্রলোক। চুপচাপ কখন পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন, টেরই পাইনি। পরনে ধোপদুরস্ত সাদা কলিদার পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি। জ্যোৎস্নার আলোয় মনে হল উনি চোখে সুর্মা দিয়েছেন, কানে আতর মাখানো তুলো গোঁজা।
উনি আমাকে ঘুরিয়ে বাড়ির পেছন দিকের যে ঘরটায় নিয়ে গেলেন, সেটির সামনের বারান্দায় বাড়ির মালিক চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমাকে দেখে উনি ফিসফিস করে বললেন, “আমার একমাত্র ছেলে, আজ বছর পাঁচেক হল নিখোঁজ হয়ে গেছে। যাকের ডাকলি বছরে একবার তেনারা আসেন। দয়া হলি আমার ছেলের সঙ্গে কথাও বলিয়ে দ্যান। খোদেজা মা বড়ো দয়ালু, তিনি যদি আসেন, আপনার যা জানতি ইচ্ছে হয়, জিজ্ঞেস করবেন। যেদি পেরমান লেবার ইচ্ছে হয়, সেডাও বলবেন, ভয় পাবেন না। কিন্তু খপরদার, অনেক খারাপ জীনও খাবারের লোভে চলে আসে। তেনাদের যেন কিচু পুচ কত্তি যাবেন না। তবে আবার বলতিচি, আসরে যাই ঘটুক, ভয় পাবেন না। যাকের জিন্দা থাকতি কেউ আপনার কোনও ক্ষেতি কত্তি পারবে না।”
পুরো ঘরটা বাসরঘরের মতো ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। গোটা ছয়েক কলাইয়ের প্লেটে ফল-মিষ্টি এবং ফুলতোলা কাচের গ্লাস ভর্তি করে দুধ রাখা হয়েছে। একগোছা ধূপকাঠি জ্বলছে। কিন্তু ধূপের গন্ধ ছাপিয়ে উগ্র আতরের গন্ধে সারা ঘর ভরে উঠেছে। একটামাত্র জ্বলন্ত মোমবাতির আলোয় ঘরটা যেন রহস্যময় হয়ে উঠেছে।
মাঝখানে মুখোমুখি নকশাকাটা দুটো চটের আসন পাতা। একটার ওপর যাকের নামে সেই চিমসে ভদ্রলোক মেরুদণ্ড টান টান করে পদ্মাসনে বসলেন। আমাকে মাঝাখানে বসিয়ে দোকানি ভদ্রলোক এবং ওঁর স্ত্রী দু-পাশে বসলেন। যাকেরের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, দৃষ্টি সম্পূর্ণ ঘোলাটে। তিনি একবার চোখ বুলিয়ে চারদিকটা দেখে নিয়ে এক ফুঁয়ে মোমবাতিটা নিভিয়ে দিলেন। মুহূর্তে নিস্তব্ধ ঘরে নিশ্ছিদ্র অন্ধকার নেমে এল। যাকের ঘড়ঘড়ে গলায় দুর্বোধ্য কিছু মন্ত্র আওড়াতে লাগলেন। আমি কান পেতে রইলাম বটে, কিন্তু তার একটা বর্ণও বোধগম্য হল না।
হঠাৎ তিনি চুপ করে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে মনে হল, বহুদূর থেকে কেউ যেন লাঠি ঠুকে ঠুকে আসছে। ঘরের দরজায় এসে শব্দটা থেমে গেল। ঈষৎ খোনা গলায় বাইরে থেকে কেউ জিজ্ঞেস করল, “ঘঁরে কেঁ? ঘরেঁ কেঁ?”
মনে হল মেয়েলি গলা। যাকের সেই একইরকম ঘড়ঘড়ে গলায় বললেন, “ঘরে কেডা, তুমি জানো না?”
আগন্তুক হঠাৎ পিশাচের মতো অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। তারপর প্রচণ্ড রেগে বলল, “তুই লতিফার সঙ্গে বেত্তমিজি করিস? নিব্বংশ হবি, হারামখোর! দাঁড়া, দেখাচ্ছি মজা!”
তার কথা শেষ হতে না হতেই বাইরের দিকে বাড়ির একাংশ যেন হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল। ভয়ের একটা হিমশীতল স্রোত যেন আমার মেরুদণ্ড বেয়ে নেমে গেল। আমি কাঠের পুতুলের মতো বসে রইলাম।
হঠাৎ মনে হল, একটা সাপ যেন আমার গা বেয়ে উঠছে। সেটার হিলহিলে শরীর যেন বরফের মতো ঠান্ডা। বন্যার সময় এমনিতেই এদিকে সাপের ভয়ংকর উপদ্রব। ভয়ে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হল। বেশ বুঝতে পারছিলাম, নড়াচড়া করলে মৃত্যু অনিবার্য। সাপটা আমার বাঁদিক দিয়ে উঠে গলা বেষ্টন করল। তারপর ধীরে ধীরে নেমে গেল। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস পড়ার শব্দ হল। তারপর ক্লান্ত পায়ে কেউ যেন বেরিয়ে গেল।
এর পরের ঘটনার জন্যে আমি একদম প্রস্তুত ছিলাম না। অনেকক্ষণ ধরে একটা খট খট আওয়াজ আসছিল। মনে হচ্ছিল, কেউ যেন পায়ে খড়ম পরে হাঁটতে হাঁটতে এদিকে আসছে। আস্তে আস্তে খড়মের আওয়াজ স্পষ্ট হতে হতে ঠিক ঘরের মাঝখানে এসে থেমে গেল। কাঁপা কাঁপা গলায় কেউ একজন বলল, “মা মনসা আসলো, তারে তোরা খাওয়ার কথা বললি নে?”
কেউ কোনও জবাব দিল না।
ফের সে রাগত গলায় বলল, “প্রতুল, তোর মনে খুব অবিশ্বাস, তাই না?”
বজ্রাহতের মতো আমি বিস্ময়ে বোবা হয়ে গেলাম। যে-ই এসে থাকুক, তার পক্ষে আমার নাম জানা সম্ভব নয়। বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতে সে ফের বলল, “বছর তিনেক হল তোর ভাই নিখোঁজ হয়ে গেছে, না?”
ঘরের মধ্যে বাজ পড়লেও হয়তো আমি এতটা চমকাতাম না। আমার ভাই শোভন সাংবাদিকতা করত। একটা সর্বভারতীয় ইংরেজি পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিল। ছত্তিসগড়ে মাও অধ্যুষিত এলাকা থেকে বছর তিনেক হল সে সত্যিই নিখোঁজ হয়ে গেছে। পুলিশ, প্রশাসন, এমনকি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা দপ্তর—আজ পর্যন্ত কেউ তার সন্ধান দিতে পারেনি।
আমি সম্মোহিতের মতো জিজ্ঞেস করে ফেললাম, “সে কি বেঁচে আছে?”
সে বলল, “দশ থেকে পেছন দিকে গুনে যা।”
আমি গুনতে শুরু করলাম দশ, নয়, আট…
এক পর্যন্ত যেতেই সে বলল, “একের পেছনে কী?”
আমি কোনও জবাব দিলাম না। সে আবার বলল, “পেরমান চাস?”
বলতে না বলতে আমার কোলের মধ্যে কী যেন একটা ঠকাস করে পড়ল। তারপর কী যে হয়েছিল, কিছুই আমার মনে নেই।
পরদিন একটু বেলার দিকে ঘুম ভাঙল। দিনের আলোয় মনে হল, রাতের ঘটনাটা নিছকই এক দুঃস্বপ্ন, কোনও বাস্তবতা নেই।
রাতে মেহমানের উপযুক্ত খাতিরদারি করতে পারেননি বলে ওঁরা স্বামী-স্ত্রী বার বার আফসোস করতে লাগলেন। বড়ো যত্ন করে ডিমভাজা-পরোটা খাওয়ালেন।
ভদ্রলোক আমাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে এলেন। দরজা খুলে গাড়িতে উঠতে যাব, এমন সময় তিনি তাঁর কলিদার পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা হাতঘড়ি বের করে বললেন, “এটা বোধহয় আপনার।”
ঘড়িটা দেখে আমি চমকে উঠলাম। ডায়ালের মধ্যে খোদাই করা শোভনের নামের আদ্যক্ষর—বছর পাঁচেক আগে ওর জন্মদিনে আমিই এটা ওকে দিয়েছিলাম। তাকিয়ে দেখি, তিনি একদৃষ্টে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। চোখাচোখি হতে ফিসফিস করে বললেন, “আমার এট্টা কথা রাকপেন বাবু? আল্লার দোহাই, কাল রাতের ঘটনাটা ভুলে যান। আরেট্টা কতা, আমার সঙ্গে ভবিষ্যতে কখনও যোগাযোগের চেষ্টা করবেন না।”
সকালের নরম আলোয় দীর্ঘ ছায়া ফেলে ভদ্রলোক পেছন ফিরে হাঁটতে শুরু করলেন। আমি চিত্রার্পিতের মতো নির্বাক দাঁড়িয়ে রইলাম।
ভয়ের আবহ এমন মুন্সিয়ানার সাথে বয়ন করা হয়েছে যে আমার মত অবিশ্বাসীর ও চিত্ত দুলে ওঠে। এই অশান্ত সময়ের প্রেক্ষিতে কাহিনীতে জাতপাতের অসারতা মূর্ত হয়ে উঠেছে। অনবদ্য কাহিনী বিন্যাস এবং finishing. লেখক মশাইকে আমার নমস্কার।
LikeLike
Unique.
LikeLike
একদমই অন্য রকম গল্প। ভীষণ চমক আছে
দারুণ লেগেছে। খুব ভালো লাগছে
LikeLike