একদিন আমি আমাদের বাড়ির দোতলার ব্যালকনিতে রোদ্দুরে বসে ছিলাম। আগেরদিন রাতে খুব ঝড়বৃষ্টি হয়েছিল। একটু ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছিল। আমার নজরে এল, সামনের ঝোপে একটা কিছু নড়ছে। আমি কী হচ্ছে দেখতে নীচে নেমে এলাম। ঝোপের ধারে পৌঁছে দেখি একটা ছোট্ট সিংহের বাচ্চা ঝোপের মধ্যে বসে আছে। দেখতে ঠিক আমার সফট-টয় ‘লাইয়ু’র মতো।
খানিক আগেই আমি টিভির খবরে শুনেছিলাম যে চিড়িয়াখানার একটা সিংহের বাচ্চার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আমি ভাবলাম ওকে চিড়িয়খানায় পৌঁছে দেওয়া উচিত। ওর মা নিশ্চয়ই ওকে খুঁজে না পেয়ে কাঁদতে শুরু করেছে।
আমি আমার পিগি ব্যাঙ্ক থেকে জমানো টাকা বের করে মা-বাবাকে কিছু না বলে চিড়িয়াখানায় যাবার একটা বাসে উঠে পড়লাম। বাসে ওঠার আগে আমি সিংহের ছানাটাকে একটা ব্যাগে ভরে নিয়েছিলাম। কিন্তু বাসটা খানিক গিয়েই দাঁড়িয়ে গেল, কারণ সামনে ঝড়ে ভেঙে পড়া একটা গাছে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছিল।
আমি টাকা গুনে দেখলাম, আমি যদি ট্যাক্সি করে যাই তবে চিড়িয়াখানায় ঢোকার টিকিট কেটে বাড়ি ফেরার টাকা থাকবে না। কিন্তু বাচ্চাটাকে ওর মার কাছে পৌঁছে দেওয়া খুব জরুরি ছিল।
চিড়িয়াখানার গেটে পৌঁছে টিকিট কেটে দেখালাম বাচ্চাটা আর ব্যাগের মধ্যে নেই। দেখি, ও গুটিগুটি পায়ে হাতির কাছে যাচ্ছে। আমি দৌড়ে গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলাম, না হলে ও হাতির পায়ের তলায় চাপা পড়ে যেত।
বাচ্চাটাকে জড়িয়ে ধরে ওকে চিড়িয়াখানার গার্ডের কাছে নিয়ে গেলাম। গার্ড বাচ্চাটাকে হাতে নিয়ে আমাকে ‘থ্যাঙ্কস’ বলল।
আমি বললাম, “আমি তো ওকে পৌঁছে দিলাম, কিন্তু আমি এবার ঘরে কী করে ফিরব? আমার কাছে তো আর টাকা নেই।”
গার্ড বলল, “চিন্তা কোরো না, চিড়িয়াখানার গাড়ি তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেবে। তুমি একটা দারুণ কাজ করেছ।”
আমাকে চিড়িয়াখানার অফিসে নিয়ে গেল। সেখানে সিংহের বাচ্চাটার সঙ্গে আমার অনেক ছবি উঠল। তারপর আমাকে কেক আর আইসক্রিম খাইয়ে বাড়ি পৌঁছে দিল।
মা-বাবা আমাকে বাড়িতে না দেখে অনেক চিন্তা করলেও টিভির খবরে আমার সিংহের বাচ্চা উদ্ধারের খবর দেখেছিল। তাই আমাকে একটুও বকেনি।
শিল্পী: অভিরাজ