ধারাবাহিক অভিযান-কনটিকি অভিযান-থর হেয়ারডাল-অনুবাদ ইন্দ্রনাথ-বর্ষা ২০২১

কন-টিকি অভিযান-আগের পর্বগুলো

obhijaan77

মূল: থর হেয়ারডাল

আগের কথা

ছোট্ট দ্বীপটায় কোনো বসতি নেই। নারকেলের শাঁসজল, হ্রদের কাঁকড়া আর মাছ ধরে খাবার জোগাড় হয়ে গেল। দ্বীপের আশপাশ ভালো করে খুঁজে পেতে দেখলেন অভিযাত্রীরা, প্রাণের চিহ্ন অবধি নেই কোত্থাও। যন্ত্রপাতিগুলো বেশিরভাগই তীরে নিয়ে আসা হল। রেডিও ট্রান্সমিটারটা ঠিক করে ফেলা খুবই জরুরি ছিল। নারকেলগাছের পাতা, ঝোপঝাড়, কনটিকির পাল—এ-সমস্ত দিয়ে থাকার জায়গা বানিয়ে ফেলা হল। সমুদ্রের জলে স্নান সেরে, মাছ ধরে অভিযাত্রীরা খুব খুশি ছিলেন, কিন্তু চিন্তা ছিল রেডিও ট্রান্সমিটারটা নিয়ে। সেটা তখনো ঠিক হয়নি। এবারে সবাই মিলে ওটা নিয়ে পড়লেন। সময় দ্রুত পেরিয়ে যাচ্ছিল। নির্দিষ্ট সময়ের আগে রেডিও বার্তা না পেলে উদ্ধারকারী দল বেরিয়ে পড়তে পারে। বিকেল গড়িয়ে রাত এল, কিন্তু রেডিও সংকেতের কোনো লক্ষণ নেই। শেষমুহূর্তে রারোটাঙ্গার রেডিও সংকেত বেজে উঠেই চুপ হয়ে গেল। নিরুপায় হয়ে টরস্টাইন একটা সিকিউ বার্তা পাঠাল যাতে যে-কেউ ওটা শুনে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সেটা জানাতে পারে। চূড়ান্ত হতাশ হয়ে পড়েছেন অভিযাত্রীরা, সে-সময় আচমকা রারোটাঙ্গা আর পুরোনো রেডিও-বন্ধু হ্যাল বার্তাটা শুনতে পেলেন অবশেষে। একদিন দক্ষিণের দ্বীপটা দেখতে গিয়ে হারম্যান আর এরিক হ্রদের মাঝে ইল মাছের পাল্লায় পড়ল। আরেকদিন থরের পায়ে এসে একটা স্কুইড জড়িয়ে গেল। কনটিকি তখনো প্রাচীরের ওপরে আটকে। যতক্ষণ না ওটাকে পাড়ের দিকে আনা যাচ্ছে, অভিযাত্রীরা ঠিক করলেন দ্বীপেই থেকে যাবেন।

কয়েকদিন কেটে গেল। এবারে একদিন হ্রদের ওপারে দিগন্তরেখায় থাকা দ্বীপগুলোর গ্রাম থেকে পলিনেশিয় লোকেরা ক্যানো নিয়ে এসে হাজির। সঙ্গে তাঁদের সর্দার। সেদিনই বেলাবেলি জোয়ারের জলে কনটিকি ভেসে এল হ্রদের ভেতরে। কনটিকিকে টেনে এনে পাড়ে বেঁধে ফেলা গেল। তারপর সমস্ত মালপত্র ক্যানোয় চাপিয়ে হ্রদের অপর পাড়ে অভিযাত্রীদের নিয়ে গেল স্থানীয় লোকেরা। তারা ওঁদের অভ্যর্থনার জন্য গ্রামের সভাঘরে বড়সড় জমায়েত হল। থর তাঁদের আসার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করলেন। পলিনেশিয়দের প্রাচীন গল্পগাথার টিকি-র কথা আরেকবার সত্যি প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় মানুষেরা যারপরনাই খুশি হলেন। গ্রামের সবচেয়ে বৃদ্ধদের সঙ্গে কথা হল অভিযাত্রীদের।

পলিনেশিয়দের মাঝখানে

বৃদ্ধ লোকেরা যখন টিকি আর রোঙ্গো রোঙ্গো নিয়ে কথা বলতে চাইছিল, জোয়ানেরা তিমি-হাঙর আর সমুদ্রযাত্রার গল্প শুনতে চাইছিল। এদিকে খাবার তৈরি। টেকাও অনুবাদ করে করে ক্লান্ত।

এবারে গোটা গ্রামের প্রত্যেককে আমাদের সব্বার সঙ্গে হাত মেলানোর অনুমতি দেওয়া হল। ছেলেরা বিড়বিড় করে ‘ইয়া-ওরা-মা’ বলে হাত ঝাঁকিয়ে কাঁধ থেকে খুলে নেয় আর কি, অন্যদিকে যুবতী মেয়েরা লাজুক লাজুক ভাব করে এগিয়ে এসেও বেশ আকর্ষণীয়ভাবেই অভ্যর্থনা জানাল আর বৃদ্ধা মহিলারা নানান কথা বকবক করতে করতে আমাদের দাড়ি আর গায়ের রঙ দেখাচ্ছিল। সবারই চোখে মুখে বন্ধুত্বের রঙ, ফলে ভাষার সমস্যাটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না আর। ওদের কোনো পলিনেশিয় কথা যখন আমাদের বোধগম্য হচ্ছিল না তখন তার বদলি আমরা নরওয়েজিয়ানে কিছু একটা বলে দিচ্ছিলাম। সকলে মিলে বেশ মজাই হচ্ছিল। স্থানীয় যে শব্দটা আমরা সবচেয়ে আগে শিখলাম, সেটা হল ‘পছন্দ’, আর যখনই কোনো কিছুর দরকার হচ্ছে সেটা দেখিয়ে বললেই হল, পছন্দ, ব্যস অমনি সেটা এসে যাচ্ছিল, এক্কেবারে সহজ। আর নাক কুঁচকে ‘পছন্দ’ বলার মানে হল ‘পছন্দ নয়’। আর এভাবেই দিব্যি কেটে যাচ্ছিল।

গ্রামের ১২৭ জন লোকের সঙ্গে আলাপ-পরিচয়ের পালা মিটলে একটা লম্বা টেবিল পাতা হল দুই প্রধান, আর আমাদের ছ’জনের জন্য। গ্রামের মেয়েরা চারপাশ ঘিরে সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করতে লাগল। কেউ কেউ টেবিল সাজাবার কাজে লেগে গেল, বাকিরা এসে আমাদের গলায় আর মাথায় ফুলের মালা পরিয়ে দিল। একটা মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে গরমের মধ্যে একটা ঠান্ডা আর স্নিগ্ধ ভাব এনে দিচ্ছিল। আর তারপর এক সপ্তাহ অবধি আমরা ওই দ্বীপ ছেড়ে চলে না আসা অবধি এমন ভোজসভা চলতেই থাকল। আমাদের চোখ গোল্লা গোল্লা, জিভে জল চলে এল। খাবার টেবিলে থরে থরে ঝলসানো ছোটো শুয়োর, মুরগি, আগুনে পোড়ানো হাঁস, তাজা লবস্টার, পলিনেশিয় মাছের ডিশ, ব্রেড ফ্রুট, পেঁপে, আর ডাবের জল। আমরা খাবারের ওপর হামলে পড়লাম; ভিড় করে আসা লোকেরা হুলা গান গাইছিল আমাদের আমোদের জন্য আর যুবতী মেয়েরা টেবিল ঘিরে নাচছিল।

আমাদের ছেলেরা সবটুকু খুব খুশি মনে উপভোগ করছিল, প্রত্যেককে একে অন্যের চেয়ে কিম্ভুত লাগছিল, লম্বা দাড়ি আর মাথায় ফুলের শোভা নিয়ে, বুভুক্ষু মানুষের মতো আমরা পাশাপাশি বসেছিলাম। দুই সর্দারও আমাদের মতোই খোলা মনে সব উপভোগ করছিল।

obhijaan0277

খাওয়াদাওয়ার পর বেশ বড়ো করে হুলা নাচের আয়োজন করা হল। গ্রামের সক্কলে আমাদের স্থানীয় লোকনাচ দেখাতে চাইছিল। আমরা ছ’জন, টেকা আর টুপুহোকে সকলের মাঝে একটা করে উঁচু টুলে বসতে দেওয়া হল, দুজন গিটার বাজিয়ে সামনে এসে মাটিতে বসে পড়ল আর প্রকৃত দক্ষিণ-সামুদ্রিক সুর বাজাতে আরম্ভ করল। দু-সারি ছেলেমেয়েরা সামনে এগিয়ে পিছিয়ে নাচছিল, তাদের কোমরে নারকেল পাতার স্কার্ট ঝুমঝুম করে বাজছে, তাদের ঘিরে গোল হয়ে বসে বাকি দর্শকেরা গান গাইছে। ওদের মধ্যে একজন প্রাণবন্ত এবং দক্ষ গায়ক ছিল, মোটাসোটা পলিনেশিয় মহিলা, ওর একটা হাত হাঙরে কেটে নিয়েছিল। যারা নাচছিল, শুরুতে তারা একটু ইতস্তত করছিল, একটু জড়তা ছিল, কিন্তু যখন দেখল ‘পে-পে’র সাদা মানুষেরা ওদের লোকনাচ দেখে মোটেই নাক কোঁচকায়নি তখন ওরা জড়তা ঝেড়ে ফেলল আর নাচটাও ক্রমশ আরো আরো  প্রাণবন্ত হয়ে উঠল। কয়েকজন বয়স্ক মানুষেরাও যোগ দিল; ওদের ছন্দের জ্ঞান অসাধারণ আর ওদের নাচটাও, নিশ্চিত, খুব একটা এখন আর দেখা যায় না। প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে সূর্য অস্ত গেলে নাচটা যেন আরো আরো সজীব আর প্রাণবন্ত হয়ে উঠল, দর্শকদের প্রশংসার হাততালিও আরো আরো স্বতস্ফুর্ত হতে থাকল। ওরা ভুলেই গিয়েছিল, আমরা, এই ছ’জন যারা ওদের দেখছি, তারা আসলে বাইরের লোক, এখন যেন আমরা ছ’জনই ওদেরই নিজেদের লোক, ওদের সঙ্গে একসঙ্গে আনন্দ করছি।

ওদের ভাঁড়ার যেন অফুরন্ত, একটার পর একটা চমকপ্রদ প্রদর্শনী। শেষকালে কয়েকজন যুবক আমাদের একেবারে কাছে এসে গোল হয়ে নীচে বসল আর টুপুহোর এক ইশারায় হাত দিয়ে মাটিতে এক অদ্ভুত ছন্দে তাল দিতে লাগল। প্রথমে ধীরে, তারপর দ্রুত, আর ছন্দটা আরো নিখুঁত হয়ে উঠল যখন একজন ড্রামার হঠাৎ এসে ওদের সঙ্গে যোগ দিল। সে অসম্ভব দ্রুত তালে দুটো কাঠি দিয়ে খটখটে শুকনো একখণ্ড কাঠ বাজাচ্ছিল, আর তীক্ষ্ণ, তীব্র আওয়াজ হচ্ছিল। তালের বাজনাটা একটা নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছলে গান শুরু হল, আর হঠাৎই একটা হুলা-মেয়ে, গলায় মালা, কানের পেছনে ফুল গোঁজা, লাফ দিয়ে পড়ল বৃত্তের মধ্যে। আসল পলিনেশিয় স্টাইলে মেয়েটা পায়ে পায়ে তাল রাখতে রাখতে, হাঁটু ভাঁজ করে, মাথার ওপরে হাত জোড়া করে তুলে, তালে তালে কোমর ঝাঁকাতে লাগল। মেয়েটা অসাধারণ ভঙ্গিমায় নাচছিল, আর গোটা জমায়েতটা তালে তালে হাততালি দিতে লাগল। আরেকটা মেয়ে এবারে লাফ দিয়ে পড়ল, তারপরে আরেকজন। একজন আরেকজনকে ঘিরে ঘিরে অদ্ভুত দক্ষতায় একইরকম নিখুঁত ছন্দে নাচতে থাকল। মাটিতে তাল ঠোকা, গান আর কাঠের তক্তার ড্রামের আওয়াজ ক্রমশ লয় বাড়াতে থাকল আর নাচ ক্রমাগত উদ্দাম থেকে উদ্দামতর হয়ে উঠতে লাগল আর শেষ অবধি দর্শকরা হৈ হৈ করে উঠল আর নির্ভুল ছন্দে হাততালি দিতে থাকল।

দক্ষিণ সমুদ্রের জীবন এইরকমই যেমনটা পুরোনো দিনেও লোকে জানত। তারারা মিটমিট করছিল, নারকেল পাতারা সরসর। রাত্রিটা মনোরম, দীর্ঘ আর বাতাসে ফুলের গন্ধ ছড়ানো, চারপাশে ঝিঁঝিঁর শব্দ। টুপুহো একগাল হেসে আমায় কাঁধে চাপড় মেরে বলল, “মাইতাই?”

“হ্যাঁ, মাইতাই।” আমি উত্তর দিলাম।

“মাইতাই?” ও সকলকে জিজ্ঞাসা করল।

“মাইতাই।” সকলে উত্তর দিল, সকলে বিশ্বাস করেই বলল সেটা।

“মাইতাই।” টুপুহো নিজের দিকে দেখিয়ে, মাথা নাড়ল, ও-ও মজা পেয়েছে।

এমনকি টেকাও এটাকে চমৎকার ভোজসভা মনে করছিল, কেননা এই প্রথম রারোরিয়াতে ওদের নাচের অনুষ্ঠানে কোনো সাদা চামড়ার মানুষ উপস্থিত হয়েছিল। ড্রাম বেজে চলেছিল, দ্রুত থেকে দ্রুততর, আরো দ্রুত আরো দ্রুত, হাততালি, গান আর তার সঙ্গে নাচও। এবারে একটা মেয়ে গোল হয়ে ঘোরা বন্ধ করে একটা জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়াল, অসম্ভব দ্রুত লয়ে শরীর ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে হারম্যানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। হারম্যান দাড়ির ফাঁকে মুচকি হাসছিল; বুঝতে পারছিল না কীভাবে কী করবে।

“লজ্জা পেও না, যাও।” আমি ফিসফিস করে বললাম, “তুমি তো ভালোই নাচো।”

লোকজনের উল্লাসের মধ্যেই হারম্যান উঠে গেল বৃত্তের মাঝখানে, আর হাঁটু ভাঁজ করে নাচতে লাগল, হুলা নাচের সমস্ত কায়দাগুলো করছিল ও। উল্লাসে ফেটে পড়ছিল সকলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বেঙ্গট আর টরস্টাইন লাফ দিয়ে ভেতরে ঢুকে এল, আর নাচতে লাগল, ক্রমাগত লয় বাড়তে বাড়তে তীব্র মাত্রায় পৌঁছল আর তার সঙ্গে পাল্লা দিতে দিতে ওরা ঘেমে উঠল, মুখের চারপাশ দিয়ে ঘাম গড়াতে লাগল। শেষ অবধি কেবল ড্রামটা বাজতে থাকল, আর তিনজন হুলা-নাচিয়ে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অ্যাসপেন পাতার মতো কাঁপতে থাকল। শেষমেশ চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছলে ড্রামটা আচমকা থেমে গেল।

এবার সন্ধেটা ছিল পুরোপুরি আমাদের। উৎসাহের শেষ ছিল না কোনো।

পরের অনুষ্ঠানটা ছিল পাখি-নাচ—রারোরিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন উৎসবের অন্যতম। ছেলেমেয়েরা দুটো সারিতে সামনে লাফ দিয়ে দিয়ে ছন্দোময় একটা নাচ শুরু করল, যেন একদল পাখি তাদের সর্দারকে অনুসরণ করছে। প্রধান নাচিয়ের উপাধি পাখি-সর্দার আর সে প্রকৃত নাচে অংশ না নিয়ে আশ্চর্য অঙ্গভঙ্গি করছিল। নাচ শেষ হলে টুপুহো বোঝাল, যে নাচটা ভেলাটার সম্মানে হল, আর এবারে আবার সেটার পুনরাবৃত্তি হবে, কেবল প্রধান নাচিয়ের বদলে আমি থাকব। প্রধান নাচিয়ের কাজটা যা বুঝেছিলাম, বুনো ডাক নকল করা, আর হাঁটু ভাঁজ করে থাকা অবস্থায় লাফ দিয়ে দিয়ে এগোনো আর পেছনটা নাড়ানো, সেই সঙ্গে মাথার ওপরেও হাতদুটো নাড়ানো। সুতরাং আমি ফুলের মালাটা মাথার ওপরে ভালো করে এঁটে নিয়ে মঞ্চের মাঝখানে এগিয়ে গেলাম। আমি যখন নাচতে শুরু করেছি, দেখি, বুড়ো টুপুহো হাসতে হাসতে নিজের টুল থেকে প্রায় গড়িয়ে পড়ে আর কি। এদিকে গানটা আস্তে হয়ে এসেছে কারণ গাইয়ে নাচিয়েরাও টুপুহোর মতোই গড়িয়ে পড়ছে।

এবারে সবাই নাচতে চাইছে, বুড়ো জোয়ান একসঙ্গে, ড্রাম-বাজিয়ে আর মাটি থাবড়ানোর দল আবার চেগে উঠেছে, মারাত্মক হুলা-হুলা নাচের সুর বেঁধে দিল ওরা। প্রথমে হুলা নাচিয়ে মেয়েরা গোলটার সামনে এসে এমন লয়ে নাচতে শুরু করল যেটা ক্রমশ উদ্দাম থেকে উদ্দামতর হয়ে উঠতে শুরু করল। তারপর ওরা আমাদের নাচতে আহ্বান করল, আর তার সঙ্গে আরো ছেলেমেয়েরা যোগ দিতে শুরু করল, পায়ে তাল ঠুকে, শরীর নাড়িয়ে, ক্রমে দ্রুত আর দ্রুত।

কিন্তু এরিককে নাড়ানো যায়নি। ভেলার ঝাঁকুনি আর স্যাঁতসেতে আবহাওয়া ওর কোমরের ব্যথাটা বাড়িয়ে তুলেছিল, ও বৃদ্ধ নাবিকের মতো গ্যাঁট হয়ে বসে বসে পাইপ টানছিল। হুলা মেয়েরা অনেক চেষ্টা করেও ওকে নড়াতে পারেনি, কিছুতেই ওকে নাচের জায়গাতে আনা যায়নি। ও একটা ভেড়ার লোমের প্যান্ট পরেছিল, হামবোল্ট স্রোতে থাকাকালিন শীতলতম দিনগুলোতে ভেলার ওপর ও ওটা পড়ত; এখন এই মুহূর্তে, নারকেলগাছের নীচে ওই প্যান্ট পরে আদুড় গায়ে বসে ওকে এক্কেবারে রবিনসন ক্রুশোর মতো লাগছিল। একটার পর একটা সুন্দরীরা ওকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করল, কিন্তু ব্যর্থ হল। ও গ্যাঁট হয়েই বসে, ঝাঁকড়া চুলের মধ্যে ফুলের মালা পড়ে কেবল পাইপ ফুঁকে যেতে লাগল।

তখন একজন বয়স্ক মহিলা, বেশ হৃষ্টপুষ্ট, মঞ্চে ঢুকে এল, কয়েকটা চমৎকার হুলা নাচের মুদ্রা দেখিয়ে, সোজা এরিকের দিকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞভাবে হেঁটে গেল। এরিক ভড়কে গেছিল, কিন্তু মহিলা মিষ্টি হেসে ওর হাত ধরে সোজা ওকে টুল থেকে তুলে দাঁড় করাল। এরিকের হাস্যকর প্যান্টে উলটা ভেতরে আর চামড়াটা বাইরের দিকে ছিল, আর পেছনের একটা ফুটো দিয়ে একটুখানি উল খরগোশের লেজের মতো বাইরে বেরিয়ে ছিল। এরিক অনিচ্ছুকভাবে খোঁড়াতে খোঁড়াতে মঞ্চের মধ্যে গেল, ওর একহাতে পাইপ আরেকটা হাত কোমরের ব্যথার জায়গাটায়। লাফ দিয়ে নাচার সময় বেচারা প্যান্ট ছেড়ে মাথার ফুলের মুকুট সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছিল, এদিকে সেটা সামলাতে সামলাতে প্যান্ট নেমে যাচ্ছিল কোমর থেকে, ফলে ওকে আবার প্যান্টটা চেপে ধরতে হচ্ছিল। ওর সামনে ঘুরে ঘুরে যে স্বাস্থ্যবতী মহিলাটি হুলা নাচছিলেন, তিনিও সমান মজাদার, হাসতে হাসতে আমাদের চোখে জল দাড়ি বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল। ক্রমে হুলা বৃত্তের মধ্যে বাকিরা থেমে গেল, শুধু হুলা-এরিক আর তার স্বাস্থ্যবতী সঙ্গিনী ঘুরে ঘুরে নাচতে থাকল। শেষমেশ ওদেরও থেমে যেতে হল, কেননা, এই মজাদার দৃশ্য দেখে গাইয়ে বাজিয়েরাও আর হাসি চেপে রাখতে পারছিল না।

গানবাজনা ভোজসভা চলল সকাল অবধি, আবার ১২৭ জনের প্রত্যেকের সঙ্গে হাত মেলানোর পর ক্ষণিক বিরতি পেলাম আমরা। দ্বীপে থাকাকালিন প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় আমরা প্রত্যেকের সঙ্গে হাত মেলাতাম। গ্রামের বাড়ি বাড়ি থেকে ছ’জনের জন্য বিছানার জিনিসপত্র এনে সভাঘরের দেওয়াল বরাবর পাশাপাশি পেতে দেওয়া হল আর সুগন্ধি ফুলের রিং মাথায় নিয়ে তার ওপর আমরা রূপকথার গল্পের সাত বামনের মতো পরপর শুয়ে ঘুমোলাম।

ছ’বছরের যে ছোট্ট ছেলেটার মাথায় ফোঁড়া হয়েছিল, পরদিন সকালে তার অবস্থা খুবই খারাপ দেখা গেল। গায়ে ১০৬ ডিগ্রি জ্বর, আর ফোঁড়াটাও ফুলে ঢোল, প্রায় হাতের মুঠোর মতো, ব্যথায় টনটন করছে।

টেকা বলল, এভাবে অনেক বাচ্চা ছেলে মারা গেছে, আর একেও যদি আমরা কেউ চিকিৎসা না করতে পারি, এরও আর বেশিদিন বাঁচার আশা নেই।

আমাদের কাছে নতুন ট্যাবলেটের আকারে এক শিশি পেনিসিলিন ছিল, কিন্তু আমাদের জানা ছিল না যে একটা বাচ্চার জন্য তা কতটুকু প্রয়োগ করা যেতে পারে। আমাদের চিকিৎসায় যদি বাচ্চাটা মারা যায় তার ফল আমাদের পক্ষে মোটেই ভালো হবে না।

ন্যুট আর টরস্টাইন আবার রেডিওটা বার করল, আর সবচেয়ে লম্বা নারকেলগাছের ওপরে এরিয়েলটা বেঁধে দিল। সন্ধে নাগাদ আবার আমাদের না-দেখা বন্ধু হ্যাল আর ফ্র্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ হল, ওরা তখন লস অ্যাঞ্জেলিসের বাড়িতে। ফ্র্যাঙ্ক একজন ডাক্তারকে টেলিফোনে যোগাযোগ করল, আমরা মর্স কোডে ছেলেটার অবস্থাটা জানালাম আর জানিয়ে দিলাম আমাদের কাছে কী কী ওষুধপত্তর আছে। ফ্র্যাঙ্ক ডাক্তারের পরামর্শটা আমাদের জানাল, আর সে-রাতেই আমরা ছোট্ট হাউমাতার ঘরে গেলাম। বেচারা জ্বরে এ-পাশ ও-পাশ করছে আর গোটা গ্রাম এসে কান্নাকাটি করছে আর চারপাশ ঘিরে জটলা করছে।

হারম্যান আর ন্যুটকেই ডাক্তারিটা করতে হত, আর বাকি আমাদের কাজটা ছিল যথেষ্ট শক্ত, গ্রামের সব্বাইকে বাইরে সরিয়ে দেওয়া। ওর মা প্রায় উন্মাদের মতো হয়ে উঠল যখন আমরা একটা ধারালো ছুরি নিয়ে এসে গরম জল চাইলাম। মাথার চুল কামিয়ে ছেলেটার ফোঁড়াটা কাটা হল। পুঁজ ছিটকে গিয়ে প্রায় ঘরের চালে গিয়ে ঠেকল, স্থানীয় যে লোকগুলো খেপে উঠে জোর করে ঘরে ঢুকতে চাইছিল, তাদের বাইরে সরিয়ে দিতে হল। খুব সঙ্গিন অবস্থা। পুঁজ বার করে ক্ষত পরিষ্কার করে বাচ্চা ছেলেটার মাথায় ব্যান্ডেজ দিয়ে আমরা পেনিসিলিন দেওয়া শুরু করলাম। দু-দিন দু-রাত্তির, জ্বর যখন তুঙ্গে, প্রতি চার ঘণ্টা অন্তর অন্তর ওকে শুশ্রূষা দেওয়া হচ্ছিল আর ফোঁড়াটা খুলে রাখা হচ্ছিল। এছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যায় লস অ্যাঞ্জেলিসের ডাক্তারবাবুর থেকেও পরামর্শ নেওয়া হচ্ছিল। তারপর ছেলেটার জ্বর হঠাৎ করে নেমে গেল, পুঁজ শুকিয়ে ক্ষতও ভরে উঠেছিল; বাচ্চাটা হাসছিল আর সাদা চামড়ার মানুষদের আজব দেশে কেমন মোটরগাড়ি আছে, আর গরু আছে আর অনেকতলা বাড়ি কেমন আছে তার ছবি দেখতে চাইছিল।

এক সপ্তাহ বাদে হাউমাতা অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে বেলাভূমিতে খেলে বেড়াচ্ছিল, মাথায় একটা ইয়াব্বড়ো ব্যান্ডেজ, যেটা কয়েকদিনের মধ্যেই খুলে দেওয়া হবে।

এইটা ঠিকমতো মিটে যেতেই, গ্রামে একের পর এক অসুখের কথা শোনা গেল, যেন তার শেষ নেই কোনো। দাঁতব্যথা আর পেটের সমস্যা তো সর্বত্র, আর বুড়ো, বাচ্চা সব্বারই কোথাও না কোথাও ফোঁড়া। আমরা রোগীদের ডক্টর হারম্যান ও ডক্টর ন্যুটের কাছে পাঠাতে লাগলাম আর ওরাও পথ্য বাতলে দিতে লাগল, ক্রমশ আমাদের পিল আর মলমের ভান্ডার খালি হতে থাকল। কারো কারো অসুখ সেরে গেল এবং কারো অবনতি কিছু হল না আর যখন ওষুধের বাক্সটা খালি হয়ে গেল আমরা ওটের ডালিয়া আর কোকো বানালাম যেটা বিশেষত হিস্টেরিয়াগ্রস্ত মেয়েদের ক্ষেত্রে খুব কাজে লেগে গেল।

উৎসবের আবহাওয়া শেষ হল একটা নতুন অনুষ্ঠানে, তার আগে বহুদিন আমরা আমাদের বাদামি চামড়ার বন্ধুদের সঙ্গে এক হতে পারিনি। আমাদের রারোরিয়ার বাসিন্দা হিসেবে স্বীকার করে নেবার ছিল, এছাড়াও আমাদের নতুন পলিনেশিয় নামকরণ হবার ছিল। আমি আর টেরাই মাটেটা নই, তাহিতিতে হয়তো ও-নামে ডাকা চলত, কিন্তু এখানে সবার মধ্যে নয়।

উঠোনের মধ্যে ছ’টা টুল পাতা হল আর গোটা গ্রাম সক্কাল সক্কাল চলে এল চারপাশে গোল হয়ে ভালো জায়গায় বসার জন্য। টেকাও ওদের সঙ্গে বসল। ও প্রধান, সন্দেহ নেই, কিন্তু স্থানীয় প্রাচীন অনুষ্ঠানের সময় নয়, সেখানে টুপুহো দায়িত্বে।

সবাই চুপ করে বসে অপেক্ষায়, খুব গুরুগম্ভীর পরিবেশ, মোটকা টুপুহো শান্তভাবে আস্তে আস্তে ওর গাঁটওয়ালা লাঠি নিয়ে এগিয়ে এল। ব্যাপারটার গুরুত্ব সম্পর্কে ও যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিল, ও আসতেই সবার দৃষ্টি ওর ওপরে; ও-ও যথেষ্ট চিন্তিত মুখে আমাদের সামনে এসে বসল। ও একেবারে জাত-সর্দার, দারুণ বক্তা এবং অভিনেতা।

মূল গায়ক, ড্রামবাদক এবং মূল নাচিয়ের দিকে ও ফিরে তাকাল, তারপর হাতের লাঠিটা তুলে একে একে ওদের দিকে দেখিয়ে, আর নীচু স্বরে কাটাকাটাভাবে নির্দেশ দিল। তারপরেই আমাদের দিকে ফিরে হঠাৎ চোখদুটো বড়ো বড়ো করে তাকাল। ওর চোখের সাদা অংশটা ওর বাদামি মুখে ঝকঝকে দাঁতের সারির মতোই উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। ও এবার হাতের লাঠিটা তুলল আর অনর্গল প্রাচীন রীতি মেনে মন্ত্রোচ্চারণ করতে লাগল, আর সে-সব প্রাচীন অপ্রচলিত কথ্য ভাষায় বলে সবচেয়ে বুড়ো লোকেরা ছাড়া আর কেউ সেগুলো বুঝতে পারছিল না।

তারপর টেকাকে দোভাষী করে ও আমাদের বলল, এই দ্বীপে প্রথম রাজত্ব স্থাপন করে যে রাজা তার নাম টিকারোয়া, দক্ষিণ থেকে উত্তর, পূর্ব থেকে পশ্চিম, মাথার ওপরের আকাশ অবধি সমস্ত প্রবালদ্বীপে তার রাজত্ব ছিল।

সবাই মিলে এরপর রাজা টিকারোয়ার প্রাচীন গাথা গাইতে শুরু করলে, টুপুহো তার বিরাট হাতটা আমার বুকে রাখল আর শ্রোতাদের দিকে ফিরে বলল ও আমার নাম রাখছে ভারোয়া টিকারোয়া, অথবা টিকারোয়ার আত্মা।

গান থেমে এলে, হারম্যান আর বেঙ্গটের পালা এল। ওদের বুকেও বড়ো হাতখানা রাখা হল আর ওরা নাম পেল, টুপুহো-ইটেটাহুয়া এবং টোপাকিনো। এই নামগুলো দুই প্রাচীন বীরের যারা হিংস্র সমুদ্র-দানোর সঙ্গে লড়াই করে রারোরিয়া প্রাচীরে ঢোকার মুখেই সেটাকে মেরে ফেলেছিল।

ড্রামাররা কয়েক প্রস্থ দ্রুত বাজনা বাজিয়ে নিল আর দুজন বলিষ্ঠ লোক, কোমরে একখণ্ড কাপড় বেঁধে দু-হাতে দুটো বর্শা নিয়ে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল। হাঁটুটাকে কোমরের কাছে তুলে তুলে, বর্শাটা সোজা করে ধরে মাথাটাকে দু-পাশে নাড়াতে নাড়াতে ওরা মার্চের ভঙ্গিতে এগোচ্ছিল। ড্রামের আওয়াজটা বদলে নতুন রকম হয়ে যেতেই ওরা শূন্যে লাফ দিয়ে উঠল আর আনুষ্ঠানিকভাবে লড়াইয়ের নাচ শুরু করল। প্রাচীন দুই বীরের সমুদ্র-দানোর সঙ্গে লড়াইয়ের একটা নিদর্শনস্বরূপ পুরো ঘটনাটা ছোট্ট এবং ক্ষিপ্র গতিতে ঘটল। এরপর গান ও উৎসবের মধ্য দিয়ে টরস্টাইনের নামকরণ হল; এই গ্রামের এক পুরোনো রাজার নামে ওর নাম হল মারোয়াকে। প্রাচীনকালের দুই নাবিক এবং সামুদ্রিক বীরের নামে এরিক আর ন্যুটকে নাম দেওয়া হল টানে-মাতারাউ এবং টেফাউনুই। ওদের নামকরণের সময় প্রচণ্ড গতিতে দীর্ঘ একঘেয়ে সুরে আবৃত্তি চলছিল, একটানা অবিশ্বাস্য শব্দোচ্চারণের মধ্যে দিয়ে। যেটা একাধারে আনন্দদায়ক ও প্রশংসনীয়।

অনুষ্ঠান শেষ হল। আরো একবার রারোরিয়াতে পলিনেশিয় লোকেদের মধ্যে দাড়িওয়ালা সাদা চামড়ার লোকেদের উদয় হল। দু-সারি ছেলেমেয়েরা এগিয়ে এল নাচের জন্য, তাদের কোমরে পাতায় বোনা স্কার্ট, মাথায় মুকুট। ওরা নাচতে নাচতে এসে ওদের মাথার মুকুট খুলে আমাদের মাথায় পরিয়ে দিল; আমাদের কোমরেও খচমচে শব্দ করা পাতার পোশাক, উৎসব চলতে লাগল।

একদিন রাতে আমাদের ফুলসাজে সজ্জিত রেডিও অপারেটরদের সঙ্গে রারোটাঙ্গার অ্যামেচার রেডিও অপারেটরের যোগাযোগ হল। ও আমাদের তাহিতি থেকে আসা একটা বার্তা শোনাল। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ফরাসি উপনিবেশের রাজ্যপাল আমাদের অভ্যর্থনা বার্তা পাঠিয়েছেন।

প্যারিস থেকে নির্দেশ পেয়ে উনি তাহিতি থেকে সরকারি জাহাজ ‘তামারা’কে পাঠিয়েছেন, যাতে আমাদের নারকেল নিতে আসা জাহাজের জন্য অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষায় না থাকতে হয়। ফরাসি উপনিবেশের মাঝামাঝি অবস্থানে তাহিতি এবং বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে সাধারণভাবে একমাত্র যোগাযোগ রক্ষাকারী জায়গা। আমাদের বাড়ি ফেরার জন্য নিয়মিত জাহাজ ধরতে তাহিতি হয়েই যেতে হত।

রারোরিয়াতে উৎসব চলতেই থাকল। একদিন রাতে সমুদ্র থেকে অদ্ভুত ভোঁ শোনা গেল, নজরদাররা নারকেলগাছের ডগা থেকে নেমে এসে জানাল একটা জাহাজ হ্রদে ঢোকার মুখটায় এসে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা নারকেল বনের মধ্যে দিয়ে দৌড়ে এসে বেলাভূমির ঢালে এসে দাঁড়ালাম। সমুদ্রের যেদিক থেকে আমরা এসেছিলাম, এখান থেকে তার উলটোদিকটা দেখছিলাম আমরা। এদিকটায় প্রবাল প্রাচীরের লাগোয়া ঢেউয়ের প্রকোপ অনেক কম।

হ্রদে ঢোকার মুখে ঠিক বাইরেটায় আমরা একটা জাহাজের আলো দেখতে পেলাম। ঝকঝকে তারাভরা আকাশ, আমরা জাহাজের অবয়ব আর তার দুটো মাস্তুল পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম। এটাই কি আমাদের নিতে আসা সরকারি জাহাজ? তাহলে ওটা ভেতরে এল না কেন?

স্থানীয় লোকেরা ক্রমশ অস্থির হয়ে উঠছিল। এবারে আমরাও দেখতে পাচ্ছিলাম কী ঘটছে। জাহাজটাতে প্রচুল মালপত্র ছিল, আর ভয় হচ্ছিল উলটে যেতে পারে। একটা ডুবো প্রবাল প্রাচীরে আটকা পড়েছিল জাহাজটা।

টরস্টাইন একটা আলো নিয়ে সংকেত করল, “কুয়েল ব্যাতেউ?”

“মাওয়ি।” সংকেতের উত্তর এল।

মাওয়ি, দ্বীপগুলোর মধ্যে চলাচলকারী নারকেল নিতে আসা মালবাহী স্কুনার। ওটা রারোরিয়া থেকে নারকেল নিতে এসেছিল। জাহাজে একজন পলিনেশিয় ক্যাপ্টেন আর ক্রু ছিল আর ওরা প্রবাল প্রাচীরের অন্ধিসন্ধি জানত। অন্ধকারে হ্রদ থেকে বেরোনো স্রোতটা খুব গোলমেলে ধরনের ছিল। কপাল ভালো জাহাজটা দ্বীপের ঢালের দিকে ছিল আর আবহাওয়াটা শান্ত। মাওয়ি ক্রমশ আরো বেশি কাত হয়ে পড়ছিল বলে জাহাজের ক্রুরা নৌকো নামিয়ে দিল। মাস্তুলে শক্ত দড়ি লাগিয়ে ওটাকে টেনে এনে ডাঙার কাছে আনা হল। স্থানীয় লোকেরা দড়িগুলো নারকেলগাছের সঙ্গে বেঁধে দিল যাতে স্কুনারটা উলটে না যায়। ক্রুরা অন্য দড়িগুলো নিয়ে প্রাচীরের ঢোকার মুখটাতে নৌকোয় বসে রইল যাতে হ্রদে জোয়ারের জল ঢুকলে তার টানে মাওয়িকে বার করে নেওয়া যায়। গ্রামের লোকেরা তাদের সমস্ত ক্যানো নামিয়ে দিল যাতে মালপত্রগুলো উদ্ধার করা যায়। জাহাজে প্রায় নব্বই টন শুকনো নারকেল ছিল। বস্তা বস্তা শুকনো নারকেল স্কুনার থেকে এনে শুকনো ডাঙায় জড়ো করা হল।

জোয়ার আসার পরও মাওয়ি নড়ল না, ঠেকেই রইল, উলটে প্রাচীরে ক্রমাগত ধাক্কা খেতে খেতে ফুটো হয়ে গেল একপাশে। সকাল হতে দেখা গেল, প্রাচীরের ওপর আগের চেয়েও খারাপ অবস্থায় পড়ে আছে জাহাজটা। ক্রুরা কিচ্ছুটি করতে পারেনি; ওর নিজস্ব নৌকো আর ক্যানো দিয়ে ১৫০ টনের স্কুনারটা টানাটানি করেও কোনো লাভ হচ্ছিল না। যেখানে এখন ওটা আছে সেখানেই অনবরত ধাক্কা খেতে থাকলে শিগগিরিই টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। আর যদি আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে যায় তবে জলের ধাক্কায় আর প্রবল তোড়ে ওটাকে তুলে প্রাচীরে আছড়ে পড়া বড়ো বড়ো ঢেউয়ের মধ্যে নিয়ে পেড়ে ফেলবে।

মাওয়িতে কোনো রেডিও ছিল না, কিন্তু আমাদের ছিল। কিন্তু মাওয়ি টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ার আগেই তাহিতি থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ নিয়ে আসা কার্যত অসম্ভব ছিল। তবু ওই একই মাসে দ্বিতীয়বারের জন্য রারোরিয়া প্রবাল প্রাচীরতার শিকারের দান ছেড়ে দিল।

সেদিনই দুপুরের দিকে স্কুনার, ‘তামারা’কে পশ্চিম দিগন্তে দেখা গেল। রারোরিয়া থেকে আমাদের নিতে ওটাকে পাঠানো হয়েছিল। ওটার লোকেরা যখন দেখল ভেলার বদলে প্রবাল প্রাচীরে দুটো মাস্তুলওয়ালা একটা স্কুনার অসহায়ভাবে দুলছে আর আটকে আছে, মোটেই একটুও অবাক হল না।

তামারায় টুয়ামাটু এবং টুবুই দ্বীপপুঞ্জের ফরাসি শাসন-অধিকর্তা মঁসিয়ে ফ্রেডেরিক আহনে ছিলেন যাকে তাহিতির গভর্নর আমাদের নিতে পাঠিয়েছিলেন। জাহাজে একজন ফরাসি মুভি ফটোগ্রাফার এবং একজন টেলিগ্রাফারও ছিলেন, কিন্তু ক্যাপ্টেন আর ক্রুরা ছিলেন পলিনেশিয়। মঁসিয়ে আহনে তাহিতিতে জন্মানো ফরাসি বাবা-মায়ের সন্তান আর দুর্দান্ত একজন নাবিক ছিলেন। তাহিতির ক্যাপ্টেনের অনুমতি নিয়ে উনি জাহাজের পরিচালনার দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিলেন। ক্যাপ্টেন অবশ্য ওই সমুদ্রের ওই ভয়ংকর জায়গাতে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পেরে খুশিই হল। ‘তামারা’ যখন ডুবোপাহাড় আর ঘূর্ণি এড়িয়ে এড়িয়ে আসছে, শক্ত কাছি দিয়ে দুটো স্কুনার বাঁধা ছিল আর মঁসিয়ে আহনে ওঁর দক্ষ আর মারাত্মক কায়দাকানুনগুলো করে চলেছিলেন। জোয়ারের জল দুটো স্কুনারকেই প্রবাল প্রাচীরের দিকে টেনে আনতে চাইছিল।

জোয়ারের জল আরো বাড়লে মাওয়ি প্রাচীর থেকে সরে এল, আর তামারা মাওয়িকে পেছনে বেঁধে নিয়ে গভীর জলে চলে এল। কিন্তু মাওয়ির খোল দিয়ে হু হু করে জল ঢুকছিল, ওটাকে তাড়াতাড়ি টেনে এনে হ্রদের অগভীর জলে এনে ফেলার দরকার ছিল। তিনদিন ধরে মাওয়ি গ্রামের কাছে ওরকম ডুবন্ত অবস্থায় রইল, সারাদিন সারারাত ভেতর থেকে জল পাম্প করে তুলে ফেলা হচ্ছিল। আমাদের সবচেয়ে দক্ষ মুক্তো ডুবুরিরা দ্বীপ থেকে ধাতব পাত আর পেরেক নিয়ে গিয়ে সবচেয়ে বাজে জায়গাগুলো মেরামত করে দিল, যাতে পাম্প চালু অবস্থায় তামারা মাওয়িকে টেনে অন্তত তাহিতির ডক-ইয়ার্ড অবধি নিয়ে যেতে পারে।

মাওয়ি যখন যাবার জন্য প্রস্তুত, মঁসিয়ে আহনে তামারাকে হ্রদের অগভীর প্রবাল প্রাচীরের বাধা সামলে কনটিকি দ্বীপের কাছে নিয়ে গেলেন। ভেলাটাকে পেছনে বেঁধে আবার ফিরে এলেন বেরোবার মুখে, মাওয়ি আর কনটিকি ভেলা এত কাছাকাছি বাঁধা যে সমুদ্রের জল বাড়াবাড়ি রকম ঢুকে এলে মাওয়ির লোকজনকে ভেলায় তুলে নেওয়া যাবে।

রারোরিয়াকে বিদায় জানাবার ব্যাপারটা খুব মনকেমন করা ছিল। আমরা যখন জাহাজের নৌকোয় করে তামারার দিকে রওনা হলাম, গ্রামের বাচ্চা বুড়ো সক্কলে জেটিতে এসে আমাদের প্রিয় গানটা সুর করে গাইছিল আর বাজাচ্ছিল।

টুপুহো সবার মধ্যমণি হয়ে ছোট্ট হাউমাতোর হাত ধরে ছিল। হাউমাতো কাঁদছিল, প্রবল পরাক্রমী সর্দারের দু-গাল বেয়ে জল পড়ছিল। একটা লোকেরও চোখ শুকনো ছিল না, কিন্তু তারা সকলেই গাইছিল, ঢেউয়ের আওয়াজে ঢেকে যাওয়া অবধি বাজনার আওয়াজ আমাদের কানে ভেসে আসছিল।

জেটিতে দাঁড়ানো অমায়িক মানুষগুলো ছ’জন বন্ধুকে হারিয়ে ফেলছিল। আর ওই ছ’জন ১২৭ জন বন্ধুকে, ছয় বন্ধুই চুপ করে তামারার রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে জেটির দিকে তাকিয়ে ছিল, ক্রমে জেটিঘাট পামগাছের ভিড়ে ঢাকা পড়ে গেল, পামগাছগুলো সমুদ্রের ঢেউয়ে হারিয়ে গেল। আমরা তবু মনে মনে চমৎকার গানটার সুর শুনতে পাচ্ছিলাম,

“…আর আমাদের সঙ্গে গল্প করো, যাতে আমরা চিরকাল একসঙ্গে থাকতে পারি, এমনকি অনেক দূরের দেশে চলে গেলেও, ভালো থেকো।”

চারদিন বাদে সমুদ্রের বুকে তাহিতির উদয় হল। পামগাছে ঘেরা মুক্তোমালার মতো নয়। বন্য এবড়োখেবড়ো গাঢ় রঙের পাহাড় সোজা আকাশের দিকে উঠে গেছে, চূড়ার ওপর মেঘের মুকুট।

ক্রমশ কাছাকাছি হলে, গাঢ় রঙের পাহাড় বদলে গেল সবুজ পাহাড়ি ঢালে। সবুজের পর সবুজ, লালচে পাহাড়ের গা বেয়ে ঘন সবুজ গাছপালা, মাঝেমাঝে গভীর গিরিখাত আর উপত্যকা সমুদ্র অবধি বিস্তৃত। তীরের আরো কাছাকাছি হলে দেখলাম, সামনে সোনালি বেলাভূমির পেছনে উপত্যকা আর তীর বরাবর ঘন হয়ে দীর্ঘ পামগাছের সারি দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাহিতি দ্বীপ পুরোনো আগ্নেয়গিরি থেকে তৈরি। এই আগ্নেয়গিরিগুলো এখন মৃত আর তার চারপাশে প্রবাল জমে জমে প্রাচীর তৈরি করে সমুদ্রের জলে পাথুরে দ্বীপগুলোকে ক্ষয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছে।

একদিন খুব সকালে প্রাচীরের একটা খোলা অংশ দিয়ে আমরা পাপিতের বন্দরের দিকে এগোলাম। আমাদের সামনে গির্জার চূড়া, মোটা মোটা গাছপালা আর পামগাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে বাড়িগুলির লাল রঙের ছাত উঁকি মারছে। পাপিতে, তাহিতির রাজধানী, ফ্রেঞ্চ ওশানিয়ার একমাত্র শহর। শহরটা আমোদ-প্রমোদের, এখানে ফরাসি গভর্নর বসেন আর পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় যাত্রাপথের কেন্দ্রও বটে।

আমরা যখন বন্দরে এলাম, তাহিতির সমস্ত লোকজন সেখানে উপস্থিত, ঘেঁষাঘেঁষি দাঁড়িয়ে, সার সার উজ্জ্বল রঙের মানুষের দেয়াল যেন। বাতাসের বেগে খবর ছড়িয়ে গেছে তাহিতিতে, আমেরিকা থেকে আসা ‘পে-পে’টা সকলেই একবার চোখের দেখা দেখতে চায়।

বন্দরের রাস্তার পাশেই কনটিকি-কে যথাযোগ্য সম্মানের সঙ্গে রাখা হল। পাপেতির মেয়র আমাদের স্বাগত জানালেন, একটা ছোট্ট পলিনেশিয় মেয়ে, পলিনেশিয় মানুষের পক্ষ থেকে আমাদের তাহিতির বুনো ফুলের একটা বিরাট মালা উপহার দিল। এরপর তরুণী মেয়েরা এসে আমাদের সকলের গলায় সুগন্ধী ফুলের মালা পরিয়ে, দক্ষিণ সমুদ্রের মুক্তো বলে পরিচিত তাহিতিতে আমাদের বরণ করে নিল।

ভিড়ের মধ্যে আমি একটামাত্র মুখই খুঁজছিলাম, তাহিতিতে আমার পালকপিতা সর্দার টেরাইএরুর, উনি ছিলেন এই দ্বীপপুঞ্জের সতোরোটা স্থানীয় গোষ্ঠির প্রধানদের প্রধান। না, উনি হারিয়ে যাননি। বিরাট মোটাসোটা লোকটা, পুরোনো দিনের মতোই হাসিখুশি আর উজ্জ্বল আছেন, ভিড়ের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে, সারা মুখটা উজ্জ্বল, হাসিমাখা, উনি ডাকছিলেন, “টেরাই মাটেটা!” বুড়ো হয়েছেন বটে কিন্তু চেহারায় হাবেভাবে একইরকম সর্দারের মতোই রয়েছেন।

“তুমি দেরি করে এসেছ,” উনি হাসতে হাসতে বললেন, “কিন্তু সুসংবাদ নিয়ে এসেছ। তোমার ‘পে-পে’ সত্যি সত্যিই নীল আকাশ (টেরাই মাটেটা) বয়ে এনেছে তাহিতিতে, কারণ এখন আমরা জানি আমাদের পূর্বপুরুষেরা কোত্থেকে এসেছিলেন।”

গভর্নরের প্রাসাদে স্বাগত-অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল আর টাউন হলে পার্টি। দ্বীপের মানুষেরা খুবই অতিথিবৎসল, ফলে সব জায়গা থেকে আমাদের কাছে আমন্ত্রণ আসতেই থাকল।

আগেকার মতোই বিরাট ভোজের আয়োজন হল টেরাইএরুর পাপেনো উপত্যকার বাড়িতে। বাড়িটা আমি খুব ভালোভাবেই চিনতাম; রারোরিয়া তাহিতির মধ্যে নয় বলে আবার নতুন করে নামকরণের অনুষ্ঠান হল আর যাদের তাহিতি-নাম নেই তাদের নামকরণ হল।

সে-সময় দারুণ খোলামেলা দিন কাটছিল, ঝকঝকে রোদ্দুর, আকাশে ভেসে যাওয়া মেঘ। আমরা হ্রদে সাঁতার কেটে, পাহাড়ে চড়ে, পামগাছের নীচে ঘাসের ওপর হুলা নাচ নেচে কাটাচ্ছিলাম। একে একে দিন পেরোল, সপ্তাহের পর সপ্তাহ ঘুরে গেল। মনে হচ্ছিল জাহাজ এসে আমাদের বাড়ির দিকে, অপেক্ষায় থাকা কাজের ভিড়ে নিয়ে যাবার আগে মাসের পর মাসও ঘুরে যাবে হয়তো।

এরই মধ্যে নরওয়ে থেকে খবর এল, লার্স ক্রিসেনসেন, ৪০০০ টনের বিরাট জাহাজ, ‘থর-১’-কে আদেশ দিয়েছেন, সামোয়া থেকে তাহিতিতে এসে আমাদের অর্থাৎ অভিযাত্রীদের, আমেরিকা নিয়ে যেতে।

একদিন খুব ভোরবেলা বিরাট নরওয়ের জাহাজখানা এসে পাপেতির বন্দরে এসে ভিড়ল, ফরাসি নৌবাহিনির একটা ছোটো জাহাজ কনটিকিকে বেঁধে নিয়ে এল তার পাশে। জাহাজ থেকে একটা বিরাট লোহার আঁকশি নেমে এসে ওটাকে ডেকে তুলে নিল। পামগাছে ঘেরা দ্বীপের চারদিকে জাহাজের ভোঁ-এর প্রতিধ্বনি হতে থাকল। বাদামি-চামড়া, সাদা-চামড়ার সমস্ত মানুষ পালে পালে বন্দরে এসে আমাদের রাশি রাশি বিদায় উপহার আর ফুলের মালা দিল। আমরা রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে জিরাফের মতো গলা উঁচিয়ে রইলাম, মালার পর মালায় ভরে উঠছিল গলা।

শেষবারের মতো জাহাজের ভোঁ বেজে উঠলে, সর্দার টেরাইএরু চেঁচিয়ে বলল, “আবার যদি তাহিতিতে ফিরে আসতে চাও, তাহলে চলে যাবার সময় অবশ্যই হ্রদের জলে মালাগুলো ছুড়ে দিও।”

জাহাজের দড়ি খোলা হয়ে গিয়েছিল, ইঞ্জিন চালু, প্রপেলারগুলো সবুজ জল কাটতে শুরু করল আর আমরা ধীরে ধীরে বন্দর ছেড়ে বেরিয়ে এলাম।

বাড়িগুলোর লাল রঙের ছাত পামগাছের আড়ালে চলে গেল, পামগাছগুলো নীল গভীর পাহাড়ের বুকে হারিয়ে গেল, শেষ অবধি প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে তাও হারিয়ে গেল।

নীল সমুদ্রের বুকে ঢেউ ভাঙছিল। আমরা আর নীচে ততদূর, ঢেউয়ের কাছাকাছি পৌঁছতে পারছিলাম না। সাদা মেঘ ভেসে যাচ্ছে আকাশে। এখন আমরা প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে চলেছি। অনেক অনেক দূরে, বিংশ শতাব্দীতে ফেরত চলেছি আমরা।

কিন্তু ডেকের ওপর আমরা ছ’জন, সকলেই বেঁচে আছি বলে, আমাদের প্রিয় ন’টি বালসা কাঠের গুঁড়ির পাশে কৃতজ্ঞচিত্তে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আর তাহিতির হ্রদের জলে ছ’টি সাদা মালা, ঢেউয়ের সঙ্গে সঙ্গে ভেসে ভেসে পাড়ের কাছে ক্রমাগত যাচ্ছিল আর ফিরে ফিরে আসছিল।

খেলার পাতায় সমস্ত ধারাবাহিক অভিযান একত্রে

 কনটিকি অভিযান শেষ হবার পর–

১৯৭৬ সালে দুই ব্রিটিশ পর্বতারোহীর চ্যাঙাব্যাঙ শৃঙ্গের পশ্চিম ঢাল বরাবর আরোহণের রোমাঞ্চকর কাহিনি। যাকে আরেক বিখ্যাত ব্রিটিশ পর্বতারোহী স্যর ক্রিস বনিংটন বলেছিলেন, হিমালয় পর্বতে সবচেয়ে দুরূহতম আরোহণ। পরের সংখ্যা থেকে জয়ঢাক-এর পাতায় সেই অভিযানের বাংলা অনুবাদ। ইন্দ্রনাথ-এর কলমে। 

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s