টাইম মেশিন-বাংলার বাঘ ও ডাকাত -অকারণে-সুনীতি দেবী। অনুবাদ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়-বর্ষা ২০২২

আগের এপিসোড- ঝিয়ের গল্প্‌ ডাকাতের কবলে, প্রাণ বাঁচাল ভালুকে

timemachineokarone

একটি উচ্চবংশীয় তরুণ বাঙালি মেয়ের এক ধনীর ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল; কলকাতার কাছেই, ছোট্ট শহর হুগলিতে তাদের বাস।

বেশ ক’বছর কাটল, কিন্তু ছেলেপুলে হবার, উত্তরাধিকারী আসার, কোনো লক্ষণই দেখা গেল না। শ্বশুর শাশুড়ি বউমাটিকে খুবই পছন্দ করতেন। মেয়েটি তাঁদের মন জয় করে নিয়েছিল আর তাঁরাও যথেষ্ট স্নেহ করতেন ওকে। তবে কিনা বংশের বাতি দেবার কেউ একটা চাই, নইলে বংশরক্ষা হয় কীভাবে, ফলে ফিসফাস কথা চলতে চলতে, দ্বিতীয়বার বিয়ের কথাও উঠে পড়ল। মেয়েটির বাপ মা এতে খুবই চিন্তিত হলেন এবং মুষড়ে পড়লেন।

তখন এক সাধুবাবা এলেন, আর তাঁর দয়ায় কিছুকাল পরেই মেয়েটির কোল জুড়ে এক ছেলে এল এবং তাতে দুই পরিবারই মেয়েটিকে আর তার গর্বের পুত্রসন্তানটিকে নিয়ে আনন্দে মেতে উঠল।

বাচ্চাটির বয়েস যখন এক বছর পূর্ণ হচ্ছে, তখন এই নতুন মায়ের ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হল। দিনক্ষণ স্থির হলে মেয়ে আর আর তার শ্বশুরবাড়িতে নেমন্তন্যের চিঠি গেল। ঠিক হল মেয়েটি তার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বিয়েতে যাবে।

সেবাড়ি থেকে কাছেই, হুগলিতেই মেয়েটির আরেক বিধবা বোন শ্বশুরের ভিটেতে থাকত। সেও বিয়েবাড়ি যাবে, তাই ঠিক হল দুই বোনে মিলে এক নৌকোতেই কলকাতা রওনা হবে। দুবাড়ির কোনো পুরুষই সঙ্গে যেতে পারবে না। সুতরাং মেয়েটির বাবা কলকাতা থেকে পুরোনো এক চাকরকে পাঠালেন মেয়েদের আনার জন্য। লোকটি বিশ্বস্ত, আর বহুদিন পরিবারে থাকার সুবাদে তাকে এবাড়িরই একজন মনে করা হত।

মেয়েটি জামাকাপড় গুছিয়ে নিল। শাশুড়ি-মা খুব ভালো, তিনি সিন্দুক খুলে মেয়েটির ভালো ভালো গয়নাগাঁটি বার করে দিলেন। ভারতীয় বিয়ে মানেই দামি জামা-কাপড় আর গয়নার প্রদর্শনী আর ভালো শাড়ি গয়নায় সেজেগুজে বউমা যাওয়া মানেই শাশুড়ির ইজ্জত বেড়ে যাওয়া, বিশেষত বিয়েটা যখন তার বাপের বাড়ির দিকে; সুতরাং খুব দেখে শুনে সেসব বাছাবাছি হল। ছোটো ছেলেটিও বাদ গেল না। তার জন্মের সময় প্রচুর ছোটো ছোটো সোনার বালা, গলার হার উপহার পাওয়া গিয়েছিল আর এইবারেই তার প্রথম জনসমক্ষে কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়া।

বেশ আগে আগেই রওনা দিয়েছিল তারা যাতে বিকেল বিকেল পৌঁছে যেতে পারে। পরের দিন অনুষ্ঠান, বহু অতিথিরাই এর মধ্যে বিয়েবাড়ি পৌঁছে গেছে আর সবাই দুই বোনের জন্য খুব আগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছে। কিন্তু আসার সময় পেরিয়ে গেল, তাদের আরও দেরি হতে লাগল। বেশ রাতে পুরোনো চাকরটা এসে পৌঁছোল, উদভ্রান্ত, সারা গায়ে মাথায় কাদামাখা।

বাড়ির লোক, অতিথিরা, অন্যান্য চাকররা সবাই দুই বোনের জন্য প্রশ্নে প্রশ্নে জেরবার করল তাকে। সে একটিও রা কাড়ল না। সন্দেহের উদ্রেক হল। ডাকাত হতে পারে। সবাই বিয়ের খবর জানত আর তার মানেই পরিবারের যত লোকজন সকলে একত্র হওয়া। এলাকার সবাই আবার এও জানত যে মেয়েটি ধনী বাড়ির আদরের বউমা।

কথাবার্তা শুনতে শুনতে আশঙ্কায় অধীর হয়ে মেয়ের বাপ চাকরটাকে শাসাল যে মুখ না খুললে চাবকে তার চামড়া তুলে দেওয়া হবে। মালিকের রাগ দেখে চাকর এইবারে বললে নৌকো উলটে দুই মেয়ে আর বাচ্চাটা জলে ডুবে গেছে।

ঝলমলে হাসিখুশি বাড়িটা এক লহমায় কান্নায় ডুবে গেল। কিন্তু বাপ সেকথা পুরোপুরি মানতে পারলেন না। তিনি পুলিশ ডাকলেন এবং তোলপাড় করে তল্লাশি হল। সবকটা মাঝিকেই পাওয়া গেল। তারা বললে যে তারা সাঁতরে পাড়ে উঠেছে কিন্তু মেয়েদের ব্যাপারে কেউ কোনো হদিশ দিতে পারল না।

একমাত্র চুঁচুড়ায় নদীর পাড়ে, মিলের এক ইংরেজ একটা সম্ভাব্য হদিশ দিয়েছিল। মাঝরাতে, মেয়েদের নিরুদ্দেশ হবার দিনটিতে, সে মহিলাদের এবং একটি শিশুর কান্না শুনতে পেয়েছিল। প্রথমটায় সে ভেবেছিল বাইরে বেরিয়ে দেখবে ব্যাপারখানা কী। কিন্তু আওয়াজটা আসছিল ঘন জঙ্গলের ভেতর থেকে, ফলে সে ভেবে দেখেছিল, সেখানে কেউ বিপদে পড়েছে, এ একরকম অসম্ভব আর তাই শেষমেষ কান্নাকাটির আওয়াজ নিয়ে সে আর মাথা ঘামায়নি।

এই অশুভ ব্যাপারটা বিয়ের অনুষ্ঠান ভেস্তে দিল। বিয়ে ভেঙে গেল। এত আয়োজন সব জলে গেল। আজ অবধি অজানা সেই দুবোনের কী হল। বর এবং তার নির্দিষ্ট করা কনের অবশ্য অন্যত্র বিয়ে হয়েছিল।

পাঞ্জাবি ডাকাত

রেলগাড়ির দ্বিতীয় শ্রেণীর কামরায় তলার সিটে বসে কয়েকজন পাঞ্জাবি মহিলা নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি গল্পগুজব করছিল। একজন বাদে, তারা সবাই দামি জামাকাপড় পরেছিল আর তাদের প্রত্যেকেরই গায়ে বেশ ভালো পরিমাণে গয়নাগাঁটিও ছিল। ব্যাতিক্রমী মহিলাটি সুভদ্র, সুশ্রী, বয়েস পঁচিশ-টচিশ হবে। তার ছোটো ছোটো চুল, গলা এবং হাত খালি, গয়না নেই, পরনে সাদা শাড়ি, পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল যে সে একজন বিধবা। কিন্তু অন্যান্যদের মতো সেও হেসেহেসেই কথাটথা বলছিল, আর তাদের কথাবার্তা থেকে কোনো শ্রোতা বুঝে নিতে পারত যে তারা বিয়েতে গিয়েছিল আর এখন বাড়ি ফিরছে। অতিথিদের নিয়ে মজার কথা বলা, বউয়ের সাজ নিয়ে এটা-ওটা মন্তব্য করা, এই বিয়ের সঙ্গে অন্য বিয়ের তুলনা এসবই একজন থেকে আরেকজনের মুখে মুখে ফিরছিল। ট্রেন ছুটছিল আর যাত্রার সময়ও কেটে যাচ্ছিল এভাবে।

রাত নামল, আর মহিলারাও চুপ করে গেল। একে অন্যের গায়ে ঠেসান দিয়ে মাঝে মাঝে কেবল ঢুলতে লাগল। বিধবা মেয়েটি কামরার একেবারে শেষে একটা বাক্সের ওপরে বসে নিঃশব্দে মালা জপছিল। ট্রেনের গতি ধীর হল এবং একটা ছোটো স্টেশনে এসে ট্রেন থামল। তারপর আবার ঘণ্টা বাজিয়ে চলা শুরু হল। ছোটো স্টেশনটা পেরিয়ে বেশিদূর যায়নি এমন সময়, মেয়েদের কামরার সিঁড়িতে একটা ছায়ামূর্তির উদয় হল আর জানালাতে একটা লোকের মুন্ডু, জোর করে ঢুকতে চাইছে। মেয়েদের মধ্যে একজন চেঁচাতেই সকলের নজরে পড়ল অনধিকারপ্রবেশকারীর ওপর, যে কামরায় ওঠার চেষ্টা করছিল। ভয়ানক দেখতে সে, মাথায় ইয়াব্বড়ো পাগড়ি, গালে ঘন দাড়ি। তার একহাতে একটা ছোরা ধরা ছিল, অন্য হাত দিয়ে সে, মহিলাদের চেঁচামেচি ও বাধা দেবার মধ্যেই, কামরার ভেতরে ঢোকার চেষ্টায়।

ওদের কেউ কেউ কান্না জুড়ে দিল কিন্তু এক দুজন সাহসী আবার লোকটার সঙ্গে তর্কাতর্কিও লাগিয়ে দিল। ওদের বাধা দেওয়া এবং প্রশ্নের উত্তরে লোকটি খুব কর্কশভাবে বলল, “পরের স্টেশন আসতে ঢের দেরি। আমি তোদের গয়নাগুলো নেব বলে এসেছি। চুপচাপ দিয়ে দিলে কাউকে কিচ্ছু করব না; কিন্তু না দিলে -” লোকটা হাতের ছোরাটার দিকে ইঙ্গিত করল।

কিছু সময় পরে, যারা বাধা দিতে চাইছিল, দুর্বল মনের বাকি সঙ্গীদের সজল অনুরোধে হার মেনে নিল, আর একে একে গলার হার, কোমরের বিছে, হাতের চুড়ি, বালা, আংটি খুলে ডাকাতের হাতে তুলে দিল। মেয়েরা সহজেই বশ্যতা মেনেছে দেখে বদমাশটা আর হই চই করল না বটে কিন্তু ওখানে দাঁড়িয়েই ধীরেসুস্থে লুঠের মালগুলো নিচ্ছিল। তারপর সমস্তটা জড়ো করে একটা দামি শাড়িতে পুরে গাঁঠরি বাঁধছিল, এমন সময় ট্রেনটা আচমকা থেমে গেল আর এক ইংরেজ লোক মহিলাদের কামরার দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে লোকটার ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ল, “বজ্জাত কোথাকার!”

আচমকা আঘাত আর বিষ্ময়ে ডাকাতটা টাল সামলাতে পারল না, সে কামরার মেঝেতে পড়ে গেল আর ইংরেজ লোকটি ওর বুকের ওপর চেপে বসল। ইতিমধ্যে গার্ড ও অন্যান্যরা চলে এসে লোকটিকে ধরে ফেলে, ওর পাগড়ি দিয়েই ওর হাত-বেঁধে গার্ডের কামরায় চালান করে দিল।

এই অ্যাডভেঞ্চার কাহিনির নায়িকা ছিলেন ওই বিধবা মেয়েটি। লোকটিকে কামরায় ঢুকতে দেখেই, সে বুঝে নিয়েছিল ওর উদ্দেশ্য। বাথরুমের মধ্যে লুকিয়ে ভেতরের জানলা বেয়ে উঠে সে বাইরের পাদানিতে নেমে, কামরার হাতল ধরে ধরে পাশের কামরায় পৌঁছোয়, যেখানে কামরার একমাত্র যাত্রী, এক ইংরেজ লোক, বসে বসে বই পড়ছিল।

তার কামরার জানালায় একজন মহিলাকে ঝুলতে দেখে সে অবাক হয়ে যায়, কিন্তু সৌভাগ্যবশত মেয়েটির কথা সে বুঝতে পারে; আর যখন মেয়েটি বলে, “সাহায্য করুন। পাশের কামরায় চোর,” সে অমনি একটুও দেরি না করে দরজা খুলে মেয়েটিকে তার কামরার ভেতরে নিয়ে আসে। অল্প কথায় মেয়েটি পাশের কামরায় কী ঘটছিল তা লোকটিকে জানায়। লোকটি তক্ষুনি চেন টেনে গাড়ি থামায় এবং দৌড়ে পাশের কামরার উঠে আসে মেয়েদের সাহায্য করতে। মেয়েরা কৃতজ্ঞতায় যারপরনাই তার প্রশংসা করছিল বটে , কিন্তু সে বারবারই বলে চলল, যে তাদের জীবন ও গয়নাগাঁটি রক্ষার জন্য তাদের সাহসী বন্ধুটির কাছেই তাদের ঋণী থাকা উচিত।

একটা বাচ্চার অভিজ্ঞতা

কয়েকবছর আগের কথা, মফস্‌সলে, কলকাতা থেকে খুব দূরে নয়, এক বাঙালি ভদ্রলোক বসবাস করতেন। লোকটি বয়স্ক; তাঁর বিরাট পরিবার, ছেলেরা, নাতিপুতিরা, তাঁর ভাইয়েরা, তাদের স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েরা আর বেশ কয়েকজন দুঃস্থ আত্মীয়স্বজন – সবাই মিলে পিতৃপুরুষের ভিটেয় সুখেই বসবাস করতেন।

বাড়িটা পুরোনো ধাঁচের, বারান্দা ও উঠোনসহ অনেকগুলো ঘর। বড়ো দালানে বাড়ির পুজোটুজো হত। এখানেই বাড়ির মেয়েদের বিয়েশাদীও হত; পুরুষানুক্রমে পুরোনো দেয়ালগুলো এই পরিবারের মিলনোৎসব আর জড়ো হবার সাক্ষী হয়ে ছিল।

বাড়ির চারপাশে অনেকটা জায়গা। অন্দরমহলের প্রায় লাগোয়া এক বিরাট সবজি-বাগান। ওখান থেকেই বাড়ির নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় সবজির যোগান হত; এতই ফলন হত যে ঝাঁকা ভর্তি করে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন আর কাছাকাছি মন্দিরেও পাঠানো হত।

কিছুটা দূরে একটা ফলের বাগান, বসন্তে সেখানে অসংখ্য আমগাছে চোখজুড়োনো বোল আসত। সেখানে কাঁঠাল, জাম, পেঁপে আর পেয়ারা গাছ ছিল অগুনতি। পাশাপাশি সারবাঁধা কলা, নারকেল আর সুপুরি।

এতবড়ো জায়গাতে যথেষ্ট জলের জোগানের জন্য বাগানে ফলের বাগিচায় আর আস্তাবলে একাধিক পুকুর এবং কুয়ো ছিল। বাড়ির সামনের দিকে পাড়বাঁধানো দিঘি, বা ঝিল, তার পাড় থেকে জল অবধি শ্বেতপাথরের সিঁড়ি। এখানে বাড়ির বয়স্ক পুরুষ এবং কমবয়েসি ছেলেরা জড়ো হয়ে গপ্পগাছা করত আর ঠান্ডা দখিনা বাতাস উপভোগ করত; কখনও পাড়াপ্রতিবেশীরাও আসত, ঘণ্টার পর ঘণ্টা শ্বেতপাথরের সিঁড়িতে আমোদে কাটত।

দুপাশে গাছের সারি দেওয়া পথ, উঁচু বেড়া বাড়িটাকে বেশ আড়াল দিয়ে রেখেছিল আর বাড়ির ছাদটা ছিল পরিবারের পর্দানশীন মহিলামহলের চমৎকার আমোদপ্রমোদের জায়গা।

বুড়ো কর্তার ধনসম্পত্তি জোর আলোচনার বিষয় ছিল, মহিলাদের দামি দামি জামাকাপড়, গয়নাগাঁটি নিয়েও কথাবার্তা হত। একদিন বুড়ো কর্তা এক ডাকাতদলের একটা আগাম-চিঠি পেলেন যে সেরাতেই তারা বাড়িতে চড়াও হবে। তড়িঘড়ি শলাপরামর্শ করে পরিবারের লোকেরা সমস্ত ধনরত্ন, দামি জিনিসপত্র বাঁধাছাদা করে পালিয়ে অন্যত্র আস্তানা নিল। ঠিক হয়েছিল রাতটা কাটানো হবে বেশ কিছু মাইল দূরে এক জায়গায়।

উত্তেজনার চোটে এক তরুণী মায়ের ছেলেটা তার কাছ থেকে আলাদা হয়ে পড়ল। বাচ্চাটার বয়েস তিন কি চার বছর মতো। মা ভাবল ছেলে নিশ্চই কারো না কারো সঙ্গে কোনো না কোনো গাড়িতে উঠেছে, তাই সে অত গা করেনি। কিন্তু আশ্রয়স্থলে পৌঁছোনোর পর দেখা গেল ছেলে কারো সঙ্গেই নেই।

মায়ের মনের দুর্দশা আরও ঘনিয়ে উঠেছিল। সে তার ছেলের জন্য ফিরে যেতে চাইছিল; কিন্তু তখন অন্ধকার নেমে আসছে আর ডাকাতের মুখোমুখি হবার ভয়। সুতরাং তার ইচ্ছের আমল দেওয়া হল না আর সারা রাত ধরে মনে মনে তার ছোট্ট ছেলেটার নানান পরিণতির কথা ভেবে সে ভয়ানক উৎকণ্ঠায় কাটাল।

এদিকে হয়েছে কী, ছেলেটা তো দিব্যি মায়ের ঘরে নিজের বিছানায় আরাম করে শান্তিতে ঘুমিয়ে ছিল। খেলাধূলা করে ক্লান্ত হয়ে এসে সবার অজান্তে কখন ঘরে ঢুকে সে ওখানে ঘুমিয়ে পড়েছিল।

রাত বারোটার সময় ডাকাতেরা এসে দরজা ভেঙে ঢুকল বাড়িতে। খালি ঘরে ঢুকে তারা খুঁজেপেতে নিয়ে যাবার মতো দামি কোনো কিছুই না পেয়ে ভয়ানক চটে গেল। শেষে তারা এসে পড়ল সেই ঘরে যেখানে ছোটো ছেলেটা ঘুমিয়ে ছিল। তাদের হাঁকডাকে ছেলেটার ঘুম গেল ভেঙে। সে উঠে বসে অজানা-অচেনা মুখ দেখে আর জ্বলন্ত মশাল দেখে ভয়ে চেঁচিয়ে উঠল। তাদের মধ্যে একজন ওকে শাসাল, যদি চুপ না করে তাহলে সে ওকে মেরেই ফেলবে। আরেকজন আবার বিছানার কাছে এগিয়ে এসে ছোটো ছেলেটাকে কোলে তুলে নিয়ে বলল, “কেঁদো না খোকা, কেউ তোমায় মারবে না।”

বাচ্চাটা ওর বাপের চাকরের গলা চিনতে পেরে কচি কচি হাতে তার গলা জড়িয়ে ধরল। বাকি ডাকাতেরা এই দেখে হেসে উঠে ছেলেটাকে তাদের স্যাঙাতের কাছে রেখে ঘর ছেড়ে চলে গেল।

দিনের আলো ফুটলে বাড়ির লোকেরা সকলে ফিরে এলে, তরুণী মা, পড়িমড়ি বাড়ির ভেতরে ছুটল ছেলেকে খুঁজতে। বিষ্ময়ে এবং আনন্দে মা দেখল তার নিজের ঘরে ছেলে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে। তার পাগলের মতো আদরের ঠেলায় ছেলে জেগে গেল কিন্তু সে বুঝতে পারল না মায়ের হয়েছেটা কী!

“রাতে কিছু ঘটেনি, হ্যাঁ রে খোকা?” শুধোল মা, “কিছু বা কাউকে দেখিসনি? ও খোকা।”

ছোটো ছোটো হাতের মুঠি চোখের ওপর ডলতে ডলতে ঘুম-জড়ানো গলায় ছেলে বলল, “ ও, হ্যাঁ, তুমি কোথায় ছিলে মা? অনেকগুলো লোক এসেছিল। কেউ কেউ আমাকে মারতে চাইছিল। কিন্তু –(চাকরটির নাম নিয়ে) ছিল ওদের সঙ্গে, ওই ওদের ভাগিয়ে দেয়। তারপর আমায় মিষ্টি খেতে দিয়ে, ঘুম পাড়িয়ে দেয়।”

চাকরটাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল আর সে সব কবুলও করেছিল যে যারা চিঠি পাঠিয়েছিল, সেই ডাকাতদলে ওও ছিল আর ওরাই বাড়িতে চড়াও হয়। প্রায় গোটা ডাকাতের দলটাই ধরা পড়ে।

জয়ঢাকের টাইম মেশিন সব লেখা একত্রে

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s