ভ্রমণ আজটেকদের দেশে(৫)-মলয় সরকার-বর্ষা ২০২২

আগের পর্ব–> পর্ব-১ পর্ব -২, পর্ব- ৩, পর্ব ৪

bhroomonaztektitle

এখান থেকে বেরিয়েই পাশের ভিটেতেই হচ্ছে টেমপ্লো মেয়র।

হ্যাঁ, যে আশ্চর্য হওয়ার কথা আগে বলছিলাম, তা হল, চার্চের সামনেই হচ্ছিল সেই বিশাল অনুষ্ঠান। তার ভীষণ বড়ো স্টেজ, আলো, মাইক এইসব। আমরা প্রায় একঘণ্টা পরে যখন চার্চ দেখে বেরোলাম, সব খোলাখুলি করে প্রায় মাঠ ফাঁকা হয়ে এসেছে। ট্রাক, ভ্যান, লোকজন যেন একেবারে আলাদিনের দৈত্যের মতো কাজ করে এত আয়োজন সাজসজ্জা একঘণ্টার মধ্যে সব খুলে ফেলেছে। ট্রাকে ভর্তি হয়ে গেছে সব মালপত্র। চেয়ার সব প্যাক হয়ে গেছে ভ্যানে। আর আধঘণ্টা পরে আর বোঝা যাবে না এখানে কোনও অনুষ্ঠান হয়েছে। বিদেশের এগুলো দেখলেই কেন জানি না সঙ্গে সঙ্গে নিজের মনে দেশের সঙ্গে তুলনা এসে যায়। আমাদের ব্রিগেডে বা মিলন মেলার মাঠে কোনও প্রোগ্রাম হলে তার সাফাই হতে কতদিন লাগে, তারপরও হয় পরিষ্কার হয় না, না-হলে নাম কা ওয়াস্তে পরিষ্কার করে দায় সারা হয়। এখানে সমস্ত পরিষ্কার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে বাড়তি ভ্যাট বা নোংরা ফেলার পাত্রগুলো রাখা হয়ে ছিল সেগুলোও তুলে নিয়ে চলে গেল। ফলে দেখে বোঝাও যাবে না যে এখানে কিছু হয়ে ছিল। ভাবি, এরা তো স্বর্গ থেকে আসেনি, এদের মধ্যে এত পরিষ্কার হওয়ার চেতনা কোথা থেকে এল, যেটা আমাদের দেশে এতদিনেও জন্মায়নি? এরাও তো কতদিন বিদেশির দাসত্ব করেছে, কিন্তু ভালো যা তা নিজের করে নিয়েছে। আমরা তো তা পারিনি।

যাক, একেবারে পাশেই হল সেই বিখ্যাত এবং লজ্জাজনক ধ্বংসাবশেষ। এটি স্প্যানিশরা ধ্বংস করার পর পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে ছিল। পরে ইলেক্ট্রিকের কাজ করার সময় মিস্ত্রিরা খোঁড়াখুঁড়ি করতে গিয়ে এটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পায়। এটিই ছিল সেকালের বিখ্যাত মেক্সিকা (Mexica) শহরের সবচেয়ে বড়ো মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। এটি যে বর্তমান জমির চেয়ে অনেকটা নীচুতে, তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। অর্থাৎ প্রাচীন শহর টেনোক্টিটলানের উপরেই এই নতুন শহর গড়ে উঠেছে তাকে নীচে ফেলে। এই মন্দিরটি ছিল প্রাচীন আজটেকদের যুদ্ধদেবতা হুইতজিলোপোক্টলি (Huitzilopochtli) ও বৃষ্টির দেবতা ল্যালোকের (Tlaloc)। এটি ইজকোয়াটল-এর সময়ে তৈরি হলেও কয়েকবারই এর পরিবর্তন ও উন্নতিসাধন করা হয়। স্প্যানিশরা ১৫২১ সালে এটি ধ্বংস করে।

bhromonaztec01

এটির দর্শনীর টিকিট বেশ চড়া দামের। ৮০ মেক্সিকান পেসো দিয়ে প্রত্যেকের টিকিট কাটতে হল। একটু নীচে নেমে টিকিট কাটতে হয়। সামনেই একটি মিউজিয়াম আছে, তাতে বেশ অনেক কিছু মাটি খুঁড়ে পাওয়া জিনিসপত্র রয়েছে। আর আছে একটি টেমপ্লো মেয়রের কল্পিত পূর্ণ মন্দিরের মডেল। এটিও পিরামিডের ধাঁচে। এর চূড়ার অংশটা ছিল চ্যাপ্টা। আপাতত মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের চারদিক দিয়ে এর পাঁচিলের উপর দিয়ে এর চারদিকে ঘুরে দেখার জন্য পথ করা আছে। সামনেই দেখা যাচ্ছে মন্দিরের গায়ে করা আছে এক বিশাল সাপ। এই সাপ ছিল তাদের পূজ্য। আর দেখা যায় একটি ওকগাছের পুরানো কাণ্ডের অংশবিশেষ। সেটি প্রায় ১৫০০ বছরের পুরানো। মন্দিরটিতে দেখা যায় তাদের পূজা করার জায়গা। দেবতাদের উদ্দেশে বলি দেওয়ার জায়গা, উনান বা রান্না করার জায়গা ইত্যাদি। সমস্ত গাঁথনিই ছিল পাথরের এবং দেওয়ালগুলো বেশ চওড়া। কী করে তারা অত বড়ো বড়ো পাথর গেঁথেছিল অত শক্ত ও নিখুঁত করে, তা ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়। মোট মন্দির ক্ষেত্রটাও বেশ বড়ো (১০০ মি. লম্বা ও ৮০ মি. চওড়া)। যদি না ধ্বংস করা হত, তাহলে আজও হয়তো তা টিওটিহুয়াকানের মতো সুন্দরভাবে দাঁড়িয়ে থাকত। এর মূল মন্দিরটি দুই চূড়া যুক্ত পিরামিডের মতো হলেও সামনে একটি বৌদ্ধস্তূপের মতো ছোটো মন্দির ছিল। এটি আসলে দুই দেবতার উদ্দেশে নিবেদিত ছিল, তাই ওই দুই চূড়া। এটি সম্ভবত শহরের সবচেয়ে উঁচু স্থাপত্য ছিল। এখানে সমস্ত রাজকীয় অনুষ্ঠান ও শহরবাসীর ধর্মকর্মের কাজ চলত। এত বিশাল স্থাপত্যের পিছনেও লুকিয়ে আছে এক করুণ কান্নার ইতিহাস।

আজটেকরা নরবলিতে বিশ্বাস করত। তারা বিশ্বাস করত মানুষের টাটকা রক্ত, তাদের তাজা হৃৎপিণ্ড দেবতাদের সন্তুষ্ট করার জন্য নিবেদন করতে হয়। তাই এখানে কত যে নরবলি হয়েছে তার স্থিরতা নেই। ১৪৮৬ সালে আহুইটজোটল যখন আজটেকদের রাজা হন, তখন মন্দিরের উদ্বোধনের জন্য প্রচুর সংখ্যক নরবলির প্রয়োজন হয়। তখন সম্রাট দু-বছর ধরে যুদ্ধাভিযান চালিয়ে ২০০০০ (কুড়ি হাজার) বন্দি ধরে নিয়ে আসেন। এ-সমস্ত বন্দিদের দু-লাইন করে সার দিয়ে হাঁটিয়ে এনে সম্রাট তাঁর বন্ধুর সাহায্যে নিজ হাতে পাথরের ছুরি দিয়ে তাদের বুক চিরে চিরে হৃৎপিণ্ড বের করেন ও সেগুলোকে দেবতার উদ্দেশে নিবেদন করেন। তখনও তো ধাতুর এত ব্যবহার তারা জানত না, তাই অবসিডিয়ান নামে একধরনের শক্ত কাচের মতো গ্রানাইট পাথর, যা এখানে খুব পাওয়া যায়, তাই তারা ছুরি হিসাবে ব্যবহার করত। এখানে মাটি খুঁড়ে অনেক মানুষের মাথার খুলি পাওয়া গেছে এবং তা এখানে মিউজিয়ামে রাখা আছে। তবে একসঙ্গে ২০০০০ মানুষের হৃৎপিণ্ড উপড়ানোর কথা খুব বেশি পাওয়া যায় না। অবশ্য এঁর পরে যখন দ্বিতীয় মন্টেজুমা সম্রাট হন, তিনিও একবার ১২০০০ মানুষকে বন্দি করে এরকম দেবতার উদ্দেশে বলি দেন। বিশেষত এখানের যে প্রধান খাদ্য ভুট্টা, সেই ভুট্টার জন্য একটি উৎসব হত, যেখানে একটি আদিবাসী কিশোরী মেয়েকে সাজিয়ে সারাদিন ধরে, আমাদের কুমারী পূজার মতো করে দেবতার মতো পূজা করে শেষে তাকে এক কোপে বলি দিয়ে তার রক্ত উৎসর্গ করা হত দেবতাকে। শুধু তাই নয়, কিশোরীটির গায়ের ছাল খুলে নিয়ে পুরোহিতের গায়ে জড়িয়ে দেওয়া হত। এইভাবেই ওরা সেই কিশোরীটিকে দেবীত্বে বরণ করত। এখানে বা আশেপাশেও অনেক সময় বিভিন্ন কারণেই নরবলির ব্যাপক ব্যবস্থা ছিল, তা সে খেলার মাধ্যমেই হোক বা নিছক আত্মোৎসর্গের জন্যই হোক।

আজটেকরা বিশ্বাস করত, এই জায়গাটি হল বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু। বলা হয়, এখানে তারা দেখেছিল ক্যাকটাসের গাছের উপর একটি ঈগল একটি সাপকে ধরেছে। সেটিকে ওরা খুব প্রতীকী বলে ধরে নিয়েছিল। আজও মেক্সিকোর প্রতীক ওই সাপ ও ঈগল। এখানে একটি চাকার মতো পাথর আছে যা দেবী Coyolxauhqui-র প্রতীক। এঁকে হত্যা করেন এঁর বড়ো ভাই Huitzilopochtli, যিনি আবার যুদ্ধের দেবতা। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ হওয়ার জন্য নিজের বোন ও চারশো ভাইকে হত্যা করেন।

bhromonaztec02

পুরো চত্বরটা যে দেওয়ালের উপর দিয়ে পাক দেওয়া হয় তার নাম Coatepantli বা সর্প প্রাচীর। পাক দিয়ে ঘুরে শেষের মুখেও আবার একটি মিউজিয়াম আছে। এখানেও অনেক পুরানো জিনিস রাখা আছে। তবে যা আজও দেখা যায় তা সম্পূর্ণ মন্দিরের এক ভগ্নাংশ মাত্র। এখনও এর খনন কার্য চলছে এবং প্রায়ই কিছু না কিছু আবিষ্কৃত হচ্ছে। অক্টোবর ১৯৯৬-এ পাওয়া গেছে এক বিশাল পাথর যাতে উর্বরতার দেবী Tlaltecuhtli-র ছবি আঁকা আছে। এটি মিউজিয়ামে রাখা আছে। কাছেই পাওয়া গেছে ২০১৭ সালে ৬৫০টি মাথার খুলি দিয়ে তৈরি একটি স্তম্ভ। এটির ব্যাপারে সঠিক জানা যায়নি। তবে কেবল যে পুরুষদেরই বলি দেওয়া হত তা নয়, এখানে অনেক নারী ও শিশুর কঙ্কালও পাওয়া গেছে।

bhromonaztec03

মনটা এক অদ্ভুত ব্যথামিশ্রিত পুরানোকে জানার আচ্ছন্নতায় ভরে গেল। সঙ্গে সঙ্গে এরকম একটা জায়গার সাক্ষী হওয়ার আনন্দটাও জড়িয়ে ছিল।

বাইরে তখনও বেশ রোদ। আমরা একটা দোকানে গিয়ে কিছু বেকারির জিনিস খেলাম। কিন্তু খুব পছন্দ হল না। সেখান থেকে গেলাম একটা বিশাল দোকানে। নাম ‘প্যাস্টেলেরো আইডিয়াল’। এত বড়ো দোকান, যাতে প্রচুর রকমের কুকিস, ব্রেড, কেক, ত্রেলেচে ও নানারকম মিষ্টি বিক্রি হচ্ছে। এত কাউন্টার, এত ভিড় অথচ চটপট দেওয়ার ব্যবস্থা আমি কোথাও দেখিনি। এখান থেকে কিছু কুকিস আর একটা মেক্সিকোর বিখ্যাত ত্রেলেচে নেওয়া হল। ত্রেলেচে এই নাম থেকেই বোঝা যায়, এটি তিনরকমের দুধ দিয়ে তৈরি। এখানে কোথাও দুধের মিষ্টির খুব বেশি চল নেই। খাবারদাবারও যা হয় মোটামুটি গমজাত ও ভুট্টাজাত, তবে ত্রেলেচে সম্পূর্ণ দুধেরই মিষ্টি।

bhromonaztec04

এর উলটোদিকের ফুটপাথের উপর একটা মেয়েদের কাপড়জামা, হার, চুড়ি, দুলের দোকান দেখতে পেয়ে মেয়ে আর গিন্নি দৌড়াল। আমিও গেলাম পিছনে পিছনে। হ্যাঁ, অনেক ধরনের জিনিসপত্রই রয়েছে, দেখতে ভালোই লাগল। তবে এমন কিছু মনে হল না যে এটা নিতেই হবে। দেখে বেরিয়ে আসছি, এমন সময় দেখি একজন হরেকরকম জিনিস নিয়ে বসেছে। হঠাৎ চোখে পড়ল, তার কাছে রয়েছে বেশ কিছু ধূপ, যার মধ্যে আমাদের ভারতেরও বেশ কয়েকটি ধূপ আছে, গায়ে হিন্দিতে লেখা। বেশ উল্লসিত হয়ে উঠলাম। সত্যি, দেশের উপর যত রাগই থাকুক, সুদূর বিদেশে গিয়ে যদি দেশের কিছু চিহ্ন পাই, মনটা ভরে যায়। এখানে যেমন দেখেছি, মহাত্মা গান্ধীর নামে রাস্তা, বইয়ের দোকান, মূর্তি এইসব। ভাবি, এত দূরে ভারতবর্ষের এই একটি লোককেই মানুষ জানে। দেখেছিলাম আমেরিকার সানফ্রান্সিস্কোতে বা অন্য শহরেও, আর কেউ থাকুন না থাকুন গান্ধীজীর নামে মূর্তি বা রাস্তা আছে। অবশ্য কোনও কোনও জায়গায় রবীন্দ্রনাথের নামেও অনেক কিছু আছে। এসব দেখে ভালো লাগে তখন।

এখান থেকে বাড়িতে, মানে হোটেলে ফিরে খাবারগুলো রেখে গেলাম কাছেই একটা পার্ক, জার্ডিন এস্পানাতে। শহরে এরকম সাজানো গোছানো পরিষ্কার পার্ক অনেক আছে, যেখানে মানুষ দু-দণ্ড বিশ্রাম করে, বাচ্চা কিংবা পোষ্যদের খেলতে নিয়ে আসে কিংবা প্রবীণরা এসে কিছুটা সময় কাটিয়ে যান। আরেকটা জিনিস লক্ষ করলাম, এটা গুয়াদালাহারাতেও দেখেছি, তা হল, এখানে প্রায় প্রতি পার্কে বা কখনও রাস্তাতেও মাঝে বা পাশে প্রচুর ফোয়ারা আছে। সেগুলি আমাদের দেশের মতো শুকনো নয়। সবসময় জল ছিটিয়ে সৌন্দর্য রচনা করে যাচ্ছে। তবে প্যারিসের রাস্তাঘাটে যেমন প্রেমিক-প্রেমিকাদের উদ্দাম প্রেমের বন্যা যত্রতত্র দেখেছি, তা এখানে আমার চোখে কোথাও পড়েনি। এমনকি এখানে তো এত গরম জায়গা, তা সত্বেও সংক্ষিপ্ততম হ্রস্ব পোশাকও পরতে কাউকে দেখিনি। বরং এদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে হয়েছে এরা যেন আমাদের দেশেরই মানুষ। একই রকম ব্যবহার। কোন ঔদ্ধত্য বা রূঢ় ব্যবহার কোথাও পাইনি। সবার মেজাজই যেন কেমন নমনীয়, আমাদের দেশের মতোই ভাব। অনেক ছেলে বা মেয়েদের সঙ্গেও কথা হয়েছে, বেশ ভদ্র এরা। মনে হয় যেন আমাদের ঘরেরই ছেলেমেয়ে।

তবে রাস্তায় এখানেও দেখেছি একেবারে আমাদের দেশের মতো ভিখারি, হকার, অন্যান্য স্টল, কাটা ফল বা হার-মালা-পুঁতির দোকান। এছাড়া রাস্তার ঢং মোটামুটি আমেরিকার মতোই। এরা বোধ হয় মূর্তিতে খুব বিশ্বাস করে। অনেক রাস্তারই ধারে বা পার্কে পার্কে অনেক মূর্তি করা আছে স্মরণীয় মানুষদের। সেগুলো কিন্তু বিবর্ণ নয়, যেমন দেখি আমাদের কলকাতায়, হয় তাঁদের মাথা-মুখ পক্ষীবিষ্ঠা-রঞ্জিত বা হকারদের ছাউনি কি বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং-এর পিছনে অদৃশ্য। এখানে বিজ্ঞাপন আছে, তবে আমাদের দেশের মতো বিজ্ঞাপনের পিছনে শহর মুখ লুকায়নি। এছাড়া রাস্তাগুলো দেখি বেশ চওড়া, মাঝে বুলেভার্ডও বেশ চওড়া। শুধু তাই নয়, বেশ অনেক যথেষ্ট চওড়া রাস্তাও দেখলাম ওয়ান ওয়ে। আর দুটি নতুন জিনিস এখানে দেখলাম। তা হল রাস্তায় মেট্রো বাস এবং হাইব্রিড বাস। হাইব্রিড বাস যদিও অনেক জায়গায় দেখেছি, তবে মেট্রো বাসের ব্যাপারটা বেশ নতুন লাগল। এর জন্য নির্দিষ্ট রুট আছে একই রাস্তায় এক ধার দিয়ে। আর নিয়ম যে, কোনও গাড়ি কখনও এর রাস্তা আটকাতে পারবে না। আমাদের দেশে যেমন ট্রামের রাস্তা আলাদা থাকলেও মোটর বা বাস এর রাস্তা আটকেই দাঁড়িয়ে পড়ে অর্ধেক সময়েই, এখানে কিন্তু তা হওয়ার নয়। ফলে এগুলো রাস্তায় অন্য গাড়ির ভিড় থাকলেও একেবারে নির্ঝঞ্ঝাটে ট্রেনের মতোই স্বাধীনভাবে চলে। এগুলো চলে ইলেক্ট্রিকে ট্রামের তারের মতো তারে তারে। কিন্তু নীচে ট্রামের মতো রেল লাইন নেই, সেখানে রাস্তার উপর লেনের দাগ দেওয়া আছে। মেট্রো ট্রেনের মতো আলাদা প্ল্যাটফর্ম আছে প্রতি স্টেশনে, যেগুলো আসলে বাস স্টপও। আরেকটা দেখলাম, প্রতিটা বাস, সে যে কোম্পানির বা যে রুটেরই হোক সব ঝকঝকে এবং ভাঙাচোরা বিহীন। এছাড়া মেট্রো ট্রেন তো আছেই। ফলে তিন-চাররকম যানবাহন ব্যবস্থায় লোকের যাতায়াতের কোনও অসুবিধাই নেই। বাসগুলোও বেশ লম্বা বড়ো, ভিতরেও বসার ব্যবস্থা বেশ ভালো।

এখানে আরেকটা জিনিস দেখলাম। তা হল, ভিখারি এখানে অবশ্যই আছে এবং তারা আমাদের দেশের মতোই রাস্তায় ভিক্ষা করে। তবে তার আধিক্য নেই। আমাদের ওখানে যেমন, যত বেশি জনবহুল রাস্তা বা মন্দির মসজিদের সামনে, তত বেশি ভিখারি, এখানে তা নয়। আমি তো গিয়েছি অনেক ভিড়ের জায়গায়, যোকালো বা বাজারগুলোতে কিংবা বড়ো বড়ো চার্চে, কিন্তু কোথাও দেখিনি এই সত্যি বা নকল ভিখারির মিছিল, কিংবা হাততালি দেওয়া নপুংসকের রাজত্ব। বরং মনে হয়েছে, এরা অনেক বেশি সংগীত রসিক। এমন জায়গা খুব কম আছে যেখানে রাস্তায় গানবাজনা হচ্ছে না। হয় কেউ একা গিটার বা জলতরঙ্গ বাজিয়ে গান করছে, নয়তো দল বেঁধে গান বা নাচ করছে। এরকম সংগীতপ্রিয় মানুষ খুব কম জায়গাতেই দেখেছি। শুনে মনে হয় বেশিরভাগই ফোক সং বা লোকসংগীত। এক জায়গায় তো হঠাৎ দাঁড়িয়েই পড়েছিলাম আমাদের অনুপম রায়ের গান মনে করে। পরে শুনে দেখি, না মেক্সিকান গান, কিন্তু একই সুর মনে হল। হবে হয়তো, আমাদের দেশের সুরকাররা বিভিন্ন দেশের সুর তো আমাদের উপহার দেন, এরকমই হতে পারে। কবি, সাহিত্যিক, সুরকারদের এইরকম বিভিন্ন দেশের সম্পদ আহরণ করাতেই তো আমরা সমৃদ্ধ হই।

এখানে যে-সমস্ত বিখ্যাত খাবারগুলো বেশি প্রসিদ্ধ সেগুলো হল, এন্সালাদা, এম্পানাদা, ট্যাকো, তামালে, মোলে, পোজোলে, টর্টা, চুরোও এইসব। এছাড়া হরচাতা, ফ্ল্যান তো আছেই। ট্যাকো আসলে কর্ন বা ভুট্টার রুটির ভিতর বিভিন্ন পুর ভরা। ওরা বিনস, চকোলেট ইত্যাদি মিশিয়ে একটা গ্রেভিমতো করে, তাকে বলে মোলে যা ওরা চিকেন রোস্টের বা কোনও রোস্টের উপর ছড়িয়ে খায়। আর তামালে হল পাতায় মোড়া, (আমাদের পাতুড়ির মতো অনেকটা) ভিতরে কিছু পুর দেওয়া। আর টর্টা হল ব্রেডের ভিতর পুর ভরা পাওয়ের মতন। খেতে খুব খারাপ নয়। চুরোটা  বেশ লম্বামতো ভাজা। এটা আসলে বোধ হয় স্ন্যাক্স। এখানে পর্ক এবং বিফ বেশ চলে।

রাতে যাওয়া হল একটা দোকানে যেখানে ঢুকে আলো-আঁধারিতে একটু কেমন কেমন লাগছিল। তবে যেতেই মালিকের আন্তরিকতায় আমরা অভিভূত হয়ে গেলাম। একেবারে বিনীতভাবে সামনে দাঁড়াল। খাতির করে চেয়ার এগিয়ে দিল। বসে উলটোদিকের দেওয়ালে দেখি একটা গণেশের ছবি। একটা অক্টোপাসের ভঙ্গিতে সুন্দরভাবে গণেশের মূর্তি। মালিককে জিজ্ঞাসা করলাম। ও বলল, কোন এক বিদেশি এম্পোরিয়াম থেকে কিনেছে, কোন একটা গডের মূর্তি, কিন্তু ওর ঢংটা ভালো লেগেছিল বলে নিয়ে নিয়েছে। বুঝলাম ওর শিল্পবোধ আছে, আর নিশ্চিন্ত হলাম, আমাদের দেশের গণেশ তাহলে এতদূরেও এসে গেছেন তা জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে, যেভাবেই হোক।

এখানে খেলাম পেরুর খাবার সেভিচে, যেটা কাঁচা মাছের একটা পদ। সঙ্গে ছিল মাছের ট্যাকো, অর্থাৎ একটা রুটির ভিতর কাঁচা মাছ। খুব ভালো লাগেনি। কাঁচা মাছের পদ আগে খাইনি এমন নয়, জাপানি সুসি খেয়েছি। ভীষণ ভালো লাগে। কিন্তু এগুলো ভালো লাগল না। যদিও সেভিচে আসলে পেরুর রান্না, কিন্তু এটি বর্তমানে মেক্সিকোর রান্নাঘরে বেশ বড়ো আর কায়েমি জায়গা দখল করে বসে আছে। এটি কাঁচা মাছ, লেবুর রস ও লঙ্কা সহ কিছু মশলা মিশিয়ে খাওয়া হয়। আর এখানকার মোলে হচ্ছে বিশেষ বিখ্যাত খাবার, যা তৈরিতে কুড়ি রকমেরও বেশি জিনিস লাগে। নানারকম লঙ্কা, শেষে চকোলেট মিশিয়ে তৈরি হয় এই মোলে, যেটা আসলে পুয়েব্লার নিজস্ব জিনিস। এটা মাংসের উপর বা অন্য কিছুর উপর সসের মতো ছড়িয়ে খাওয়া যায়।

পরের দিনের জন্য তৈরি হতে হবে।

পরদিন সকালে উঠেই দেখি পেটের অবস্থা ভালো নয়। সারাদিন রোদে ঘুরে ঘুরে পেট গরম হয়ে গেছে। অথচ আজকেই সেই বিখ্যাত দর্শনীয় টিওটিহুয়াকান পিরামিড দেখতে যাওয়ার কথা, যেটির উপর আমার আগ্রহটা সবথেকে বেশি। সেটি দেখতে যাওয়ার ব্যাপারে সবাই বলেছে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিয়ে যেতে। কারণ কোথাও এতটুকু ছায়া নেই। পুরোটা ওই গরম রোদে ঘুরতে হবে সারাদিন। তার জন্য বড়ো টুপি, চশমা, জল, শরবত, মুখের রোদের ক্রিম যেন যথেষ্ট থাকে। অথচ আমার সকালেই পেট গরম নিয়ে সারাদিন ঘোরাঘুরিতে ভয়ই পেলাম। তাই ভাবলাম, অতদূর না গিয়ে স্থানীয় কাছাকাছিই থাকি, যাতে পেটে চাপ পড়লে বা অস্বস্তিতে পড়লেই হোটেলে চলে আসতে পারি। এটা বুঝেছি, বেড়াতে গিয়ে শরীর খারাপের মতো বিড়ম্বনা আর কিছু নেই। সেবার নিউ ইয়র্কে গিয়ে লোভে পড়ে হালালের দোকানের কাট্টি রোল খেয়ে সে কী অবস্থা! খেতে ভালো লেগেছে, খেয়ে ফেলেছি। শুনে গিয়েছিলাম, গিয়ে দেখি লম্বা লাইন, ব্যস। আর যায় কোথা।  দাঁড়ালাম লাইনে। সবাই বলেছিল, যাও, দেখবে আমাদের দেশও কত কিছু বিদেশে পাঠায় তা গেলেই বুঝবে। তা এই কাট্টি রোল নাকি কলকাতার নিজামের থেকে আমদানি। আজ নিউ ইয়র্কে জাঁকিয়ে বসেছে। অতএব দেশি জিনিস পেয়ে খাওয়া এবং তারপর… নাহ্‌, স্বাদ সতিই সুন্দর, তবে আমার পেটে সহ্য হয়নি, এই আর কি!

যাই হোক, এখানে কিন্তু সাবধানেই আছি, বেছে বেছে খাচ্ছি। কিন্তু এখানের প্রচণ্ড রোদে শরীর কাহিল হয়ে পড়ে। সঙ্গে টুপি আছে বা যা যা বলা আছে সবই করছি। তবু… যাক, একটু দেরি করে বেরোনো হল। আর সকাল থেকে শুধু ঠান্ডা জল খেয়ে একটু ঠিক হলাম। ওদিকে দিনও তো নষ্ট করা যাবে না। তাই গেলাম মেক্সিকোর চিপুলটেক পার্কে। এটি যথেষ্ট বড়ো পার্ক, অনেক জায়গা নিয়ে তৈরি। বোধ হয় নিউ ইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কের থেকেও বড়ো। ৬৮৬ হেক্টরের উপর জায়গা জুড়ে চিপুলটেক পাহাড়ের উপর এই পার্ক—এর বনজঙ্গল, গাছপালা মেক্সিকো শহরের উপর একটা পরিবেশগত প্রভাব তো ফেলেই। পার্কে ঢোকার যথারীতি কোনও প্রবেশমূল্য নেই। ঢুকেই গেট থেকে ভিতরে যাওয়ার রাস্তা যথেষ্ট চওড়া, তবে বেশ শান্তশিষ্ট পরিবেশ। ভিতরে ঢুকেই সামনে করা আছে এক সাদা ধবধবে স্মৃতিস্মারক। একটি অর্ধবৃত্তাকার ঘেরা জায়গা। তাতে আছে পরপর ছ’টি স্তম্ভ, তৈরি হয়েছে সেই সমস্ত বীর সেনানীদের স্মৃতিতে, যাঁরা মার্কিন সেনাবাহিনীর হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে প্রাণ দিয়েছিলেন। দু-পাশে তিনটি করে স্তম্ভের মাঝে আছে একটি স্ত্রী মূর্তি, যা মেক্সিকোর প্রতিমূর্তি। মনে মনে ভাবলাম, এরাও দেশকে মা হিসাবেই ভাবে আমাদের মতো। চাতাল ও সমস্ত স্মারকটি সাদা মার্বেল পাথরে বাঁধানো। এই শহিদদের মধ্যে একজন নাকি যুদ্ধের সময় পতাকার অবমাননা বাঁচাতে নিজের গায়ে পতাকাকে জড়িয়ে পাহাড় থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। শহিদরা সব দেশেই এমনই হন বোধ হয়। তরুণ শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে।

এখানে আছে একটি দুর্গ, যা একসময়ে আজটেকদের সুরক্ষিত দুর্গ হিসাবে ব্যবহৃত হত। সেই দুর্গ পরে স্পেনীয় শাসনকর্তাদের ও পরবর্তীকালে সরকারি উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের বাসস্থান হিসাবে ব্যবহৃত হত। ১৯৪০ সাল পর্যন্ত এটি ব্যবহৃত হয়।

এছাড়া এখানে একটি পুরাতত্ত্ব মিউজিয়াম, একটি চিড়িয়াখানা, মডার্ন আর্ট মিউজিয়াম ইত্যাদি বহু জিনিস আছে। কিন্তু আমাদের হাতে তো অত সময় নেই, কেবল এই পার্ক ভালোভাবে দেখতেই লাগবে কয়েকদিন। তাই আমরা সংক্ষেপে শুধু দুর্গ বা ঐতিহাসিক মিউজিয়ামটি দেখারই সিদ্ধান্ত নিলাম। সামনেই দেখি রয়েছে ঠিক আমাদের ওখানের মতোই ঠেলাগাড়ির দোকানে নানা খাবার, সস্তা মন ভোলানো বাচ্চাদের খেলনা, রংচঙে মেয়েদের সাজগোজের জিনিস এইসবই, এমনকি অনেক জিনিসই আমাদের ওখানেও এইভাবেই পাওয়া যায়।

দুর্গটি একেবারে পাহাড়ের চূড়ার উপরে। গেটের মুখেই টিকিট কাউন্টার এবং তার আরেক পাশে সব জিনিসপত্র জমা রেখে যাওয়ার জায়গা। এমনকি জলের বোতলও নিয়ে যেতে দিল না। ভিতরে যে জল কিনে খাব তার জায়গাও তো দেখলাম না। কেন রে বাবা, এ তো এরোপ্লেন নয় যে বাইরের জল ভেতরে চলবে না। কী জানি, বেশ একটু বেশি করে জল খেয়ে নিলাম। এখান থেকে সোজা পাহাড়ের চূড়ায় উঠে গেছে রাস্তা একেবারে পাহাড়ের গায়ে পাক দিয়ে ঘুরে। রাস্তার দু-পাশে গাছ দেওয়া, বেশ সুন্দর লাগছে হাঁটতে। হেঁটেই যেতে হবে, একমাত্র সরকারি গাড়ি ছাড়া কোনও গাড়ি চলে না এই রাস্তায়। বেশ উঁচু আর চড়া রোদে বেশ কষ্টই লাগছিল। তবে যত উপর দিকে উঠছি, ডান ধারে, দূরে মেক্সিকো শহরের উঁচু উঁচু বাড়িঘর, মাঝে গাছপালা, বেশ লাগছে দেখতে। এটি, বিশেষ করে এখানকার মেক্সিকান আমেরিকান যুদ্ধে নিহত যে ছয়জন কিশোর বীরের দেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মবলিদান দিয়েছিলেন, তাঁদেরকে মনে রাখার জন্য আরও বেশি বিখ্যাত।

একেবারে শেষ মাথায় এসে দেখি সেখানেও আবার একটা ব্যারিকেড। পেরিয়ে গিয়ে সামনেই দেখি বিরাট এক প্রাঙ্গণ এবং তার বাঁহাতে সামনেই দাঁড়িয়ে দুর্গ-প্রাসাদ। দেখতে বেশ ঐতিহাসিক প্রাসাদের মতোই চূড়াওয়ালা। নীচে থেকেই দোতলায় ওঠার সিঁড়ি উঠে গেছে ঠিক আমাদের পুরানো সিনেমা বা হিন্দি সিনেমার বড়োলোকের বাড়ির মতো, একটু উঠেই দু-দিকে বেঁকে যাওয়া সিঁড়ি।

এটি ১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম তৈরি শুরু হয়েছিল, যদিও শেষ হয়েছিল অনেক পরে। সম্রাট ম্যাক্সিমিলিয়ান ও মহারানি কারলোটা ১৮৬৪ থেকে এখানে থাকতে শুরু করেন। এটি তাঁদের আবাসস্থল হিসাবে ব্যবহৃত হয়। প্রাসাদের পূর্বদিকের অংশে তাঁদের ও পরবর্তী শাসনকর্তাদের ব্যবহৃত কক্ষ ও সাজানো জিনিসপত্র রাখা আছে দর্শকদের জন্য।

মেক্সিকোর মাটি থেকে ৪৫ মি. উপরে এই তিনতলা প্রাসাদে বহু বড়ো বড়ো রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাঁদের কার্যালয় ও বাসস্থান হিসাবে ব্যবহার করেছেন। এখানে নাকি একসময় পাহাড়ে বহু ফড়িং দেখা যেত। সেই থেকেই এটির নাম হয় ফড়িংদের পাহাড় বা ‘চিপুলতেক হিল’। ১৯৩৯ সালে প্রেসিডেন্ট লাজারো কার্ডেনাস এটি দ্রষ্টব্য স্থান হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে দর্শকদের জন্য খুলে দেন। অবশ্য প্রেসিডেন্টের বাসভবন হিসাবে ব্যবহারের আগে এটি কিছু দিনের জন্য অবজারভেটরি হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

এখানে দর্শনীয় বস্তুর মধ্যে বেশ বড়ো বড়ো বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা বেশ কিছু ছবি আছে যা সত্যিই ভীষণ সুন্দর। এখানে একটি লম্বা করিডোর আছে যা বড়ো বড়ো দামি স্টেন্টেড গ্লাসের পেন্টিং দিয়ে সাজানো। সত্যি দেখার মতো সেগুলি। একেবারে ছাদের উপরে আছে বিশাল এক সুন্দর সবুজ সাজানো বাগানের ঠিক মাঝে এক ঘণ্টাঘর ধরনের বেশ উঁচু গোলাকার দ্বিতল ঘর। যার মাথায় উড়ছে দেশের পতাকা। আর চারদিকে গোল করে ঘেরা বেশ চওড়া করিডোর। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। এই উদ্যানটিকে বলে Garden of Alcazar। নীচে সমস্ত রাজপরিবারের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও শাসনকর্তাদের ব্যবহৃত ঘরগুলো সত্যি দেখবার মতো। দূর্গের নীচের তলার ফোয়ারাগুলো ও শহিদদের মূর্তি সম্বলিত চত্বরটিও বেশ সুন্দর।

এখান থেকে নেমে এলাম সব দেখে যখন, মনটা বেশ ভরে গেল।

ক্রমশ

ভ্রমণ সব লেখা একত্রে

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s