জেলের কথা
গি্রিজাপ্রসন্ন গঙ্গোপাধ্যায়
(১৯১১-১৯৭১)
ছলাৎ-ছল!ছলাৎ-ছল!
বইঠা মেরে জলদি চল।
বিয়ান বেলার তারার মুখ
যেন হীরার টুকরা টুক;
সবে চেতন ডাঙার মোড়
এরই মাঝে ফর্সা ভোর!
সামনে আছে হোগলাবন
চালাস দেখে,ও রতন!
ছলাৎ-ছল!ছলাৎ-ছল
একটুখানি সামলে চল
হুক্কাহুয়া আওয়াজ শোন
শেয়াল বাড়ি নেমন্তন
এইখানেতে জলের তোড়
এবার খানিক ডাইনে ঘোর
সামলে মাঝি আপন ডান
বাঁচাও নিজের নৌকাখান
এলাম বুঝি হাসনাবাদ,
গাছের পিছে ডুবল চাঁদ
পঞ্চরতন ওইতো বাঁয়;
ঠাহর করলে দেখন যায়
শিবঠাকুরের মঠটা ঐ।
লগ্গিতে তোর চোটটা কই?
দ্যাখ না পূবের আকাশ লাল
মাছ ধরবি আজ না কাল?
ছলাৎ-ছল!ছলাৎ-ছল
জলদি চল,জলদি চল
বদরপুর আরো দূর,
তারধারে গাঙ দপ্পচূর,
সে গাঙে পাড়-তল নাই
ঢেউয়ের মাতন সকল ঠাঁই;
সেই ঢেউয়েতে মিঠামাছ-
দে দেখিরে লগ্গিগাছ।
নে তুই মরদ কল্কিখান;
কড়া তামাক,আস্তে টান।
ছলাৎ-ছল!ছলাৎ-ছল!
ডিঙ্গি এবার জলদি চল।
বুড়া হাতের লগির চোট,
পঙ্ক্ষীরাজের মতন ছোট।
হলে কী হয় বয়স খান,
রুখতে পারি বিশ জোয়ান।
আমার কথা সবাই কয়
লোহার মটর হজম হয়।
ছলাৎ-ছল!ছলাৎ-ছল!
ডিঙ্গি এবার জলদি চল।
বাবুর বাড়ির নিমন্তন
মনে আছে,ও রতন?
লুচি খেলাম গণ্ডা দশ,
মণ্ডা সাবাড় ফসাফস্।
বাবু দেখে হলেন থ
সত্যি কিনা তুই-ই-ক।
পৌঁছে গেলাম বদরপুর,
ঐ শোনা যায় গাঙের সুর
ছলাৎ-ছল,ছলাৎ-ছল;
সকল দিকে অথই জল
সুসুংওলার দ্যাখরে নাচ,
লুফে লুফে খায় যে মাছ
এবার দেখি,দে জাল খান;
হেঁইয়ো ছুঁড়ে মারি টান।
জালে ঠেকছে অনেক ভার
রুই পড়েছে গণ্ডা চার