সন্ধ্যা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য প্রতিযোগিতা২০২২- সেরা প্রবন্ধ-প্রথম স্থান-প্রভু দাও মোরে আরো চেতনা-বুমা ব্যানার্জী দাস-শীত ২০২২

সন্ধ্যা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য প্রতিযোগিতা ২০২২- জয়ী প্রবন্ধগুলো- প্রথম স্থান- প্রভু দাও মোরে আরো চেতনা, যুগ্ম দ্বিতীয় স্থান- ভ্রাম্যমান বেচুবাবুর সঙ্কট,যুগ্ম দ্বিতীয় স্থান-মুণ্ডু ছাড়া বাঁচব নাকি, তৃতীয় স্থান- বাউড়ি জাতির ইতিহাস, চতুর্থ স্থান- এন্টিকাইথেরা দ্বীপের মহাকাশ যন্ত্র, পঞ্চম স্থান-একটি ব্যর্থ আর্কটিক অভিযান, ষষ্ঠ স্থান-ফারাওয়ের রান্নাঘর

probondhoprovu01

ধরা যাক, একটি সঙ্গীতানুষ্ঠান। মঞ্চে বিখ্যাত কোনো শিল্পী সঙ্গীত পরিবেশন করছেন, দর্শকাসন পরিপূর্ণ। সামনের সারির পরপর দশজন দর্শক সাগ্রহে, সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে সেই সঙ্গীত শুনছেন। এটাও ধরে নেওয়া যাক সেই দশজন দর্শকের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণরূপে ক্রিয়াশীল, অর্থাৎ তাঁরা ঠিকঠাক দেখতে ও শুনতে পান। তাঁদের বুদ্ধিবৃত্তিও স্বাভাবিক, অর্থাৎ তাঁদের মস্তিষ্কের গঠন সম্পূর্ণ ও সাধারণ। শারীরিক ক্রিয়া ও গঠনে এতখানি মিল থাকা সত্ত্বেও অনুষ্ঠান শেষে যদি এঁদের আলাদা করে জিজ্ঞেস করা হয়, তাহলে দেখা যাবে প্রত্যেকের অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা কিন্তু আলাদা ও ব্যক্তিগত।

শুধু তাই নয়, এই ঘটনার বেশ কিছু বছর পর যদি তাঁদের এই সন্ধ্যার স্মৃতিচারণা করতে বলা হয়, তাহলে দেখা যাবে, সেখানেও তাঁদের স্মৃতি একে অন্যের থেকে আলাদা এবং পুনরায়, ব্যক্তিগত। শুধু তথ্যভিত্তিক তফাৎ নয়, দেখা যাবে তাঁদের মধ্যে কেউ হয়ত সেদিন সন্ধ্যার অনুষ্ঠানের কিছুক্ষণ আগের হয়ে যাওয়া বৃষ্টিকে সেই স্মৃতির সাথে জুড়ে রেখেছেন, কেউ হয়ত অনুষ্ঠান সঞ্চালকের কোনো ভুল উচ্চারণকে। তাহলে স্পষ্টতই যে কোনো ঘটনার সাথে জুড়ে থাকা অনুভূতি বা অভিজ্ঞতা একান্তই ব্যক্তিগত।

এই ব্যক্তি বস্তুটি আসলে কী? কোন স্থিতিমাপ বা প্যারামিটার বা উপাদান আমাকে আমি বলে চিহ্নিত করে? দুজন মানুষ যদি একই শারীরিক বৈশিষ্ট্য বা হয়ত গুণের অধিকারী হন, তাহলেও কী সে জিনিস যা তাঁদের দুজনকে আলাদা দুটি অনন্য মানুষ করে তোলে? অবশ্যই কিছু শারীরিক বৈশিষ্ট্য আছে যা দিয়ে একজন মানুষকে নির্দিষ্টভাবে চিনে নেওয়া যায়, যেমন চোখের কর্নিয়ার নীচের আইরিস, দাঁতের গঠন বা আঙ্গুলের ছাপ। ইদানীং কানের গঠনও মানুষের অনন্য বৈশিষ্ট্য বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।

তাহলে কি একটি বিশেষ আইরিস, বিশেষ দাঁত ও কানের গঠন আর বিশেষ আঙ্গুলের ছাপের সমষ্টিই আমি? সেখানেই লুকিয়ে আছে আমার আমিত্ব? তাহলে এই সমস্ত বৈশিষ্ট্য অক্ষত রেখে কোনো মস্তিষ্কের আঘাতজনিত কারণে যদি আমি কোমায় চলে যাই, অথবা চেতনানাশক কোনো ওষুধ অর্থাৎ কোনো অ্যানেস্থেটিক ড্রাগ যদি আমাকে দেওয়া হয়? সেক্ষেত্রে তো আমার আমিত্ব, আমার অস্তিত্ব বজায় থাকছেনা। কারণ আমি তখন সচেতন নই, আমার চেতনা তখন লুপ্ত। তাহলে আমার চেতনাই কী আমি? কিন্তু তার অবস্থিতি কোথায়? মস্তিষ্কের কোন স্তরে? দেখা যাক বিজ্ঞানী আর দার্শনিকরা কী বলেন।

সপ্তদশ শতাব্দীর ফরাসী দার্শনিক ও গণিতজ্ঞ রেনে ডেকার্ত বলেছিলেন কজিটো এরগো সুম। এই বিটকেল লাতিন শব্দগুলোর মানে হল আমার চিন্তাশক্তিই আমার অস্তিত্ব প্রমাণ করে। বেশ কথা, তাহলে এই চিন্তাশক্তির উৎস খুঁজতে বিজ্ঞানীদের দ্বারস্থ হওয়া যাক। যে কোনো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রধান ধাপ হল সংজ্ঞা ও পরিমাপ। মুশকিল এই যে, এখনও পর্যন্ত চেতনার স্পষ্ট কোনো সংজ্ঞা পাওয়া যায়নি। সাধারণত কোনো বস্তুর  দুইরকমভাবে  সংজ্ঞা দেওয়া যেতে পারে। এক, কোনো উচ্চতর বস্তুর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে, যেমন চেয়ার হল একটি আসবাব, ইত্যাদি। দুই, তার ক্রিয়াশীলতা দিয়ে, যেমন উড্ডয়ন হল মাধ্যাকর্ষণ বিরুদ্ধ একটি গতি ইত্যাদি। কিন্তু চেতনাকে কোনো উচ্চতর বস্তুর সাথে যেমন সম্পর্কযুক্ত করা যায়না, তেমনি নির্দিষ্ট কোনো ক্রিয়াশীলতাও চেতনার নেই। বস্তুত শারীরিক ক্রিয়াশীলতা বজায় রেখে চেতনার অবলুপ্তি অবশ্যই সম্ভব। তাহলে চেতনার সংজ্ঞা কী হতে পারে? সজাগ অবস্থায় পরিপার্শ্ব সম্বন্ধে জ্ঞাত হওয়ার স্বতন্ত্র ক্ষমতাকে চেতনা বলা যেতে পারে। তবে মজা হল এই ক্ষমতা কিন্তু পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের উপর নির্ভরশীল নয়। কারণ অন্ধত্ব বা বধিরতা চেতনা নাশ করে না। এই সংজ্ঞা নিয়ে বিজ্ঞানীরা একমত নন, তবে তাঁরা আর কবে কোন বিষয়ে একমত হয়ছেন। 

তাহলে এবার ৮৬ বিলিয়ন নার্ভকোষ দিয়ে তৈরি তিন পাউন্ড (১.৪ কেজি মতো) ওজনের ধূসর আখরোটের মতো বস্তুটির দিকে একটু ভালোভাবে তাকানো যাক।

probondhoprovu02

সবরকম ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য উদ্দীপক বা স্টিমিউলাস মস্তিষ্কে পৌঁছে দেওয়া আর সেখান থেকে যথোচিত নির্দেশ পেশীতে পৌঁছে দেওয়ার কাজটা এই নার্ভকোষ করে থাকে। তবে যতটা সরল শোনাচ্ছে ব্যাপারটা ততটা সরল অবশ্যই নয়। মানে প্রথমবার কাঠপিঁপড়ের কামড় খেয়ে তারপর হয়তো হাত ঝাড়তে ঝাড়তে পালিয়েছিলাম, কিন্তু পরের বার কামড় খাওয়ার আগেই পালানোর নির্দেশটা চলে আসে। মানে এই স্টিমিউলাসের ইনপুট আর নির্দেশ আসার মাঝে আরো একটা প্যারামিটার ঢুকে পড়ে, সেটা হলো অভিজ্ঞতা। সেটা আবার স্মৃতি নামক বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সে সব জটিলতায় যাওয়ার আগে, ধূসর আখরোটটির প্রধান তিনটি অংশের, মানে যাদের ‘কি প্লেয়ার’ বা মূল খেলোয়ার বলে তাদের ব্যাপারে একটু আলোচনা সেরে নেওয়া যাক।

মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় সামনের অংশের নাম সেরিব্রাম। ভাঁজ খাওয়া কোঁচকানো বাইরের স্তরটার নাম সেরিব্রাল কর্টেক্স। রোজকার সাধারণ কাজ যেমন ইচ্ছামতো হাত পা নাড়ানো, ছবি আঁকা হোক কি ফুটবলে কিক করা এসব এই সেরিব্রামের নির্দেশেই হয়। তাছাড়া আমাদের স্মৃতিগুলোও এখানে জমা হয়, সে ‘মা কাল দুপুরে একগাদা উচ্ছে খাইয়েছিল’-র মতো সল্পমেয়াদী দুঃখপূর্ণ স্মৃতি হোক বা তিন বছর আগে হাফ ইয়ার্লিতে অঙ্কে আটানব্বই পাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী সুখস্মৃতি হোক।

সেরিব্রাম আমাদের যুক্তিবুদ্ধির ঘাঁটিও বটে। অর্থাৎ এইবেলা ভালোমানুষের মতো হোমওয়ার্ক করে নিলে বিকেলের ক্রিকেট ম্যাচটা মিস হবে না জাতীয় অসাধারণ বিচক্ষণতার জন্ম এই সেরিব্রামে।

এর আবার দুটো ভাগ আছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন মাথার বাঁ দিকের অংশ বিশ্লেষণধর্মী, মানে অঙ্ক, লজিক, বাকশক্তি ইত্যাদি এই অংশের দায়িত্ব। আবার ডান দিকের অংশ আমাদের সৃষ্টিশীল হতে সাহায্য করে। তবে এর কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ এখনো নেই। যদিও বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত যে সেরিব্রামের ডান দিকের অংশ আমাদের শরীরের বাঁ দিক নিয়ন্ত্রণ করে, আর বাঁ দিকের অংশ নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের ডান দিক। একে তো এটা মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ, তার উপর মানুষের প্রকৃতি, ব্যক্তিত্ব কেমন হবে সেটাও নির্ধারণ করে এই সেরিব্রাল কর্টেক্স। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই ভাবা হত মানুষের চেতনার উৎপত্তিও ঘটে মস্তিষ্কের এই ভাগে।

১৯৩৭ সাল, স্পেনে তখন সিভিল ওয়র চলছে। ২১ বছর বয়সী একটি ছেলে জানলা গলে পালাতে গিয়েছিল। জানলার বাইরে যে পাইপ বেয়ে সে নামার চেষ্টা করেছিল, সেটি ভেঙে যায় এবং ছেলেটি গিয়ে পড়ে লোহার গেটের উপর। গেটের উপরের বর্শার ফলার মতো অংশটা তার কপাল ফুঁড়ে ঢুকে যায়। লোহাটা কেটে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ওখানেই পড়ে ছিল সে। আজব ব্যাপার হল, সে সম্পূর্ণ সজাগ ও সচেতন ছিল। পরে মাথা থেকে লোহা কেটে বের করার সময়ে তার সেরিব্রাল কর্টেক্সের বেশির ভাগটাও বাদ দিয়ে দিতে হয়। এই ক্ষতিগ্রস্ত কর্টেক্স নিয়ে তার পরেও সে অনেকদিন বেঁচে ছিল। স্মৃতি সংক্রান্ত নানা সমস্যায় ভুগত সে, টাকা পয়সার হিসেব রাখতে পারত না, স্বভাব চরিত্রেও বড় ধরণের পরিবর্তন এসেছিল তার। তবে তাকে অচেতন প্রাণী বলার প্রশ্নই ওঠেনি কখনও। তার চেতনার উপর এই ঘটনার প্রভাব পড়েনি।

আবার, মস্তিষ্কের অসম্পূর্ণ গঠন নিয়ে জন্মানো মানুষও কিন্তু বিরল নয়। বর্তমানে বছর চব্বিশ বয়সী এক জার্মান যুবতীর যে সেরিব্রাল কর্টেক্সের ডান দিকের অংশ বেমালুম নেই, সেটা তার তিন বছর বয়স পর্যন্ত বোঝাই যায়নি। কিছু শারীরিক অসুবিধা তার অবশ্যই আছে, যেমন মৃগীরোগ, শরীরের বাঁ দিকের দুর্বলতা, দৃষ্টিশক্তির নানা সমস্যা কিন্তু না জানলে লোকে তাকে মোটামুটি বুদ্ধিসম্পন্ন একজন সচেতন মানুষ বলেই মনে করবে, এবং তাই করেও।

ভার্জিনিয়ার বছর পঞ্চাশের মিশেল ম্যাক তো এক কাঠি উপরে। তাঁর অর্ধেক কর্টেক্স তো নেইই, তার উপর মস্তিষ্কের বাঁ দিকের ভিতরের কিছু অংশও নেই। স্বাভাবিভাবেই সারা জীবন নানা ভয়ানক অসুবিধার সাথে তাঁকে যুদ্ধ করতে হয়েছে, কিন্তু তিনি হাই স্কুল পর্যন্ত পড়াশোনা করতে সক্ষম হয়েছেন। সচেতন প্রাণী না হলে এই কাজ করা নিশ্চয়ই সম্ভব হত না।

এইসব আশ্চর্য ঘটনা প্রমাণ করে চেতনার উন্মেষের পেছনে সেরিব্রাল কর্টেক্স তথা সেরিব্রামের ভূমিকা থাকলেও সেটাই যে চেতনার উৎপত্তিস্থল এই কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।

পরবর্তী কি-প্লেয়ারের দিকে তাকানো যাক এবার। মস্তিষ্কের পেছনের দিকে, সেরিব্রামের নীচের ছোট অংশটির নাম সেরিবেলাম। আকারে ছোট হলেও এর ভূমিকা সামান্য নয়। শরীরের ভারসাম্য, যেকোনোপ্রকার গতিবিধির সময়ে পেশীর সমন্বয়ের দায়িত্ব এই সেরিবেলামের। সহজেই অনুমেয় সেরিবেলাম যদি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা যদি কেউ অসম্পূর্ণভাবে গঠিত সেরিবেলাম নিয়ে জন্মায়, তাহলে তার শারীরিক ব্যালান্স যথাযথ থাকবে না, গতিবিধি সামঞ্জস্যপূর্ণ  হবে না, তবে সচেতন প্রাণী হতে কোনো বাধা নেই তার।

এই সূত্রে মস্তিষ্কের আরো একটা অত্যাশ্চর্য ক্ষমতার কথা বলা দরকার। ২০১৪ সালে চীনের শানডং প্রদেশে বছর চব্বিশের এক ভদ্রমহিলা হাসপাতালে গিয়ে তার বমি ভাব, মাথা ঘোরা ইত্যাদি অসুবিধের কথা জানায়। এটা সেটা পরীক্ষা করতে করতে মহিলার সিটি স্ক্যান করে ডাক্তাররা হতবাক। রুগীর মস্তিষ্কে সেরিবেলাম বলে কোনো বস্তুই নেই। তাহলে সে এতদিন স্বাভাবিক জীবন যাপন করেছে কীভাবে? স্নায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, সেরিবেলামের অভাবে তার কর্টেক্সই নিজে থেকে এই দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে। কল্পবিজ্ঞান নয়, মস্তিষ্কের এই অবিশ্বাস্য কার্যক্ষমতার নাম নিউরোপ্লাস্টিসিটি, অর্থাৎ না থাকা অংশের কাজ বাকী অংশের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়া। যদিও কতটা দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া যাবে তার অবশ্যই একটা সীমা আছে।

মস্তিষ্কের পরবর্তী আলোচ্য অংশ ব্রেইন স্টেম। সেরিব্রামের নীচে, সেরিবেলামের সামনে থাকে ব্রেইন স্টেম। স্পাইনাল কর্ডের সাথে মস্তিষ্কের সংযোগ স্থাপন করে শ্বাস প্রশ্বাস, রক্ত সঞ্চালন, খাদ্য পরিপাক এই সমস্ত নিয়ন্ত্রণ করা এর দায়িত্ব। অর্থাৎ, অনিচ্ছাকৃত পেশী সঞ্চালন এই ব্রেইন স্টেমই করে থাকে। দৌড়ে বাসে উঠে হাঁফাবার সময় হৃদযন্ত্রকে দ্রুতগতিতে পাম্প করার নির্দেশ কে দেয় তাহলে? অবশ্যই ব্রেইন স্টেম। তাছাড়া মস্তিষ্ক আর বাকি শরীরের মধ্যে যে সীমা সংখ্যাহীন মেসেজ চালাচালি হয়, সেগুলোও গুণেগেঁথে সামলে রেখে সেক্রেটারির দায়িত্ব পালনও ব্রেইন স্টেমের কর্তব্য, কারণ বিগ বসের কাছে সব মেসেজ পৌঁছানোর দরকার পড়ে না।

এই ছাঁকনির কাজটা করে ব্রেইন স্টেমের এক গুচ্ছ নার্ভ, যাদের ভালো নাম রেটিকিউলার অ্যাক্টিভেটিং সিস্টেম। এই একগুচ্ছ নার্ভের কারণেই একটা নতুন শব্দ শিখলে বা একটা নতুন গানের সুর শিখলে আমরা সব জায়গায় সেটা শুনতে থাকি। হলভর্তি লোকের কলকল কথার একটা শব্দ না শুনলেও নিজের নাম বা তার কাছাকাছি শব্দ শুনলেও আমাদের মনযোগ ধাঁ করে সেদিকে চলে যায়।

রেটিকিউলার অ্যাক্টিভেটিং সিস্টেম নির্ভুলভাবে মস্তিষ্কের ফোকাসটা কোথায় জেনে নিয়ে একটা চমৎকার ছাঁকনি বানায়। তারপর চারপাশ থেকে তার কাছে আসা তথ্যগুলো ছেঁকে নিয়ে মস্তিষ্কের কাছে পছন্দসই ডেটাটা পৌঁছে দেয়। আমরা ভাবি আরে সকাল থেকে এই গানটাই আমার মনে ঘুরছিল না? অবিশ্যি এফএমে ওই গানটাই কেন দিল তখন সেটা বলা খুব মুশকিল। হয়ত দার্শনিকরা বলতে পারবেন।

এখানেই এর কাজের লিস্ট শেষ নয় অবশ্য। ঘুম আর সজাগ অবস্থার নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে রেটিকিউলার অ্যাক্টিভেটিং সিস্টেম। এখানে একটা দরকারি কথা বলা প্রয়োজন। এই অংশে ক্ষুদ্রতম আঘাত লাগলেও, সে দুই কিউবিক মিলিমিটারের মত ক্ষুদ্র অংশ হলেও, মানুষ জ্ঞান হারাতে পারে, অর্থাৎ চেতনা লুপ্ত হতে পারে। তাহলে এটাই কী চেতনার উৎসস্থল? সেটা নিশ্চিতভাবে বলতে গেলে মস্তিষ্কের তিনটে অবস্থা একটু খতিয়ে দেখা দরকার – এক, মানুষ যখন ঘুমায়। দুই, যখন কোনো অ্যানেস্থেটিক ওষুধের প্রভাবে অচেতন হয় আর তিন, যখন আঘাতজনিত বা অন্য কোনো কারণে কোমাতে চলে যায়।

মস্তিষ্কে চার ধরণের কোষ থাকলেও প্রধানতম কোষ হল নিউরন। মস্তিষ্কে যে কোনো ধরণের মেসেজ গেলে নিউরোনের সাহায্যে বৈদ্যুতিক কম্পন তৈরি হয়। এদের বলে ব্রেইন ওয়েভ বা মস্তিষ্কের তরঙ্গ। EEG যন্ত্র দিয়ে এর কম্পাঙ্ক মাপা যায়। আমাদের সজাগ ও সচেতন অবস্থায় চার ধরনের তরঙ্গ পাওয়া যায় – আলফা, বিটা, ডেল্টা ও থিটা। সাধারণ সজাগ অবস্থায় মনোযোগ দিয়ে কোনো কাজ করার সময় পাওয়া যায় বিটা তরঙ্গ। সজাগ, সচেতন অথচ সেরকম কোনো কাজে যুক্ত না থাকলে আলফা তরঙ্গ পাওয়া যায় আর ঘুম ঘুম ভাব যখন আসে তখন মস্তিষ্কে থিটা তরঙ্গ মাপতে পারা যায়। ডেল্টা তরঙ্গ পাওয়া যায় শিশুদের মস্তিষ্কে অথবা আঘাতজনিত কারণে চিন্তাশক্তিহীন কোনো মস্তিষ্কে।

বিজ্ঞানীরা মোটামুটি একমত যে ঘুমের চারটি ধাপ আছে, যেগুলোর পুনরাবৃত্তি বেশ কয়েকবার ঘুমের মধ্যে চক্রাকারে হয়ে থাকে। প্রথম তিনটি ধাপ নিয়ে হয় নন রেম ( Rapid Eye Movement) ঘুম আর চার নম্বর ধাপটা হল রেম ঘুম। নন রেম ঘুমের তিনটে ধাপের প্রথমে শরীরের পেশী শিথিল হতে থাকে। কিন্তু ঘুমের ঠিক আগে যদি কোনো পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ আমরা করে থাকি, তার অনুভূতি এই সময় ফিরে আসে। যেমন, অনেকক্ষণ নৌকা চড়ে ঘোরার পর যদি আমরা ঘুমাতে যাই, নৌকার দুলুনির অনুভূতিটা এই সময়ে ফিরে আসে। ঘুমের এর পরের ধাপে শরীরের তাপমাত্রা সামান্য নামতে থাকে। এই সময়ে আবার হঠাৎ মস্তিষ্কের ক্রিয়া বেড়ে যায়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন এই সময় আমাদের স্মৃতি তৈরি হয়। বোধহয় এই কারণেই নতুন কিছু জিনিস শেখার পর পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সেটা বেশ মনে বসে যায়। তাই বলে পড়তে বসে ঘুমিয়ে পড়লে কানে টান পড়া ছাড়া ভালো কিছু ঘটবেনা কিন্তু। যাইহোক, এরপরই গভীর ঘুমে তলিয়ে যাই আমরা। হৃদস্পন্দন, শ্বাসপ্রশ্বাস এবং মস্তিষ্কের সমস্ত কার্যকলাপ একেবারে সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছে যায়। মস্তিষ্কের তরঙ্গ ধীরগতিতে বইতে থাকে। চেতনা লুপ্ত হয় এই সময়। স্বাভাবিকভাবে মস্তিষ্ক এই সময়ে প্রথমে আলফা ও পরে থিটা তরঙ্গ নির্গত করে। শেষ ধাপ হল রেম ঘুম। ঘুমিয়ে পড়ার প্রায় নব্বই মিনিট পর ঘুম এই ধাপে পৌঁছোয়। এই ধাপের ঘুমে আমরা স্বপ্ন দেখি। শ্বাস পড়তে থাকে ঘনঘন, হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ নন রেম ধাপের তুলনায় বৃদ্ধি পায়, বন্ধ চোখের পাতার পেছনে চোখের তারা দ্রুত নড়াচড়া করতে থাকে। মস্তিষ্কের পরিস্থিতি প্রায় সাধারণ কার্যকলাপের পর্যায়ে পৌঁছে যায় আবার। মজার ব্যাপার হল সেই ব্রেইন স্টেমের রেটিকিউলার অ্যাক্টিভেটিং সিস্টেম বাইরের কোনো শব্দ, গন্ধ, উত্তাপ কর্টেক্স পর্যন্ত পৌঁছাতে দেয়না যতক্ষণ না সেটাকে সে থ্রেট বলে মনে করছে। কিন্তু আমাদের স্বপ্নে তার প্রভাব পড়ে। রাস্তা দিয়ে চলে যাওয়া বাইকের শব্দ হয়ত টি-রেক্সের ডাক হয়ে যায়। অর্থাৎ পরিপার্শ্ব সম্বন্ধে তখনও আমরা সচেতন থাকি, কিন্তু স্টিমিউলি মস্তিষ্কের সেই জায়গা পর্যন্ত পৌঁছোয় না, যেখানে পৌঁছালে সেই স্টিমিউলি সম্বন্ধে কোনো প্রতিক্রিয়া ঘটবে বা নির্দেশ আসবে। আবার, স্বপ্নে কত অদ্ভুত ব্যাপার আমরা দেখি, ঘুম থেকে ওঠার পর সেগুলো ভেবে হাসি পেলেও দেখার সময় কিন্তু একেবারেই অদ্ভুত লাগেনা। এর কারণ হলো, মস্তিষ্কের যে অংশ আমাদের যুক্তিবুদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে, ঘুমের সময় তার ক্রিয়াকলাপ একেবারেই কমে যায়। মোটামুটি দশ মিনিট এই পরিস্থিতিতে থাকার পর আবার ধীরে ধীরে নন রেম সাইকেল চালু হয়ে যায়। যত সময় যায়, রেম ঘুমের সময়কাল তত বাড়তে থাকে।

তাহলে এসব তথ্যের উপর ভিত্তি করে আমরা বলতেই পারি নন রেম ঘুমের তৃতীয় ধাপে আমরা চেতনা হারালেও রেম ঘুমে আমরা মোটের উপর চেতনাযুক্তই থাকি।

অবশ্যই পরের প্রশ্ন হলো নন রেমের অচেতনতা আর আমাদের অজ্ঞান করে যখন সার্জেন অ্যাপেন্ডিক্স কেটে বাদ দেন, সেই অচেতনতা কি এক জিনিস? কমন সেন্স বলছে তা একেবারেই নয়। কারণ সেই পর্যায়ের গভীর ঘুম থেকে একটু চেষ্টা করলেই কেউ ডেকে তুলে দিতে পারে, কাউকে কাউকে অবশ্য ঠান্ডা জলের স্প্রে দিতে হয়, তবুও ঘুমটা ভাঙে শেষ পর্যন্ত। কিন্তু কোনো অ্যানেস্থেটিক ব্যবহার করলে ওষুধের প্রভাব কাটার আগে সচেতন হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকেনা। অর্থাৎ সে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ও তার মস্তিষ্ক ক্রিয়াশীল নয়। কিন্তু সেই অবস্থার EEG রিপোর্টও কী তাই বলছে? EEG বা ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাফি হলো খুলির উপর ইলেকট্রোড বসিয়ে মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক ক্রিয়া মাপা। মস্তিষ্কের কোষগুলো বৈদ্যুতিক কম্পনের মাধ্যমে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। ক্রিয়াশীল মস্তিষ্কে ঘুমের মধ্যেও এই কম্পন কার্যকরী থাকে। EEG রিপোর্টে এটারই গ্রাফ দেখতে পাই আমরা।

ফিনল্যান্ড আর ক্যালিফোর্নিয়ার বিজ্ঞানীরা মিলে অচেতন মানুষের উপর এই পরীক্ষাটি করেছিলেন। হালকা আ্যনেস্থেটিক প্রয়োগে অচেতন ভলানটিয়ারদের কানের কাছে স্বাভাবিক কোনো বাক্য বাজিয়ে শোনালে দেখা গেল যে মস্তিষ্ক কিন্তু সেটা প্রসেস করছে ঠিক যেমন সজাগ অবস্থায় করে থাকে। বিজ্ঞানীরা এবার উদ্ভট কিছু বাক্য তাদের কানের কাছে বাজালেন। যেমন, রাতের আকাশ ঝলমল করছে টম্যাটোতে, ইত্যাদি। সচেতন অবস্থায় এই ধরণের বাক্য যেমন প্রতিক্রিয়া ঘটায়, এবার কিন্তু EEG তে তেমনটা পাওয়া গেলনা। বরং স্বাভাবিক ও উদ্ভট বাক্য একইরকম প্রক্রিয়া ঘটালো মস্তিষ্কে। অর্থাৎ স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে তফাৎ করার মত বিচারক্ষমতা এই অবস্থায় মস্তিষ্কের নেই। যদিও জ্ঞান ফেরার পর এই ঘটনার কোনরকম স্মৃতিই তাদের ছিলনা। অর্থাৎ দৃশ্যত অচেতন হলেও পরিপার্শ্ব থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন কিন্তু হয়ে যায়নি তারা।  মস্তিষ্ক স্মৃতি তৈরি করতে না পারলেও, স্টিমিউলি সেখানে পৌঁছাচ্ছিল ও প্রতিক্রিয়াও হচ্ছিল। তাহলে বলা যেতে পারে চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগ করলে মানুষ শারীরিকভাবে পরিপার্শ্বের সাথে প্রতিক্রিয়াশীল না হলেও তার চেতনা কিন্তু সম্পূর্ণভাবে লোপ পায় না। মস্তিষ্কের পরিস্থিতি স্বপ্ন দেখার সময়ের সাথে অর্থাৎ রেম ঘুমের সঙ্গে অনেকাংশে তুলনীয়। যদিও স্মৃতি তৈরি করার ক্ষমতা, যন্ত্রণাবোধ অথবা সময় অতিক্রান্ত হওয়ার বোধ এই অবস্থায় একেবারেই থাকে না।

এবার মস্তিষ্কের সম্ভবত সবচেয়ে জটিল অবস্থা নিয়ে আলোচনা করা যাক। এই অবস্থাতে মানুষ সম্পূর্ণ অচেতন হয়ে যায়, এবং কোনরকমভাবেই তাকে সজাগ ও সচেতন করা সম্ভব হয় না। এই অবস্থাকে বলা হয় কোমা। অ্যাক্সিডেন্ট বা অন্য কোনোভাবে মস্তিষ্কে আঘাত লেগে, বা স্ট্রোক হওয়ার ফলে এরকম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় কোমাতে থাকা মানুষেরা ঘুমিয়ে আছে, কিন্তু এদের ব্রেইন স্ক্যান করে দেখা গেছে ঘুমন্ত সুস্থ মানুষের ব্রেইন স্ক্যান থেকে তা একদমই আলাদা। এই অবস্থার মানুষেরা অনেক ক্ষেত্রে চোখ খুলতে পারে কিন্তু তারা কিছু দেখতে পাচ্ছে কিনা বা কী দেখছে তা বুঝতে পারছে কিনা সেটা বোঝা বহুদিন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্দেশ মেনে চোখের পাতা খুলতে বা বন্ধ করতে সক্ষম হয় কেউ কেউ। এই পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে কিছুটা হলেও এদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভবপর হয়, যেমন হয়তো একবার চোখের পাতা ফেলা মানে হ্যাঁ, দুবার মানে না। কিন্তু এ তো গেল তাদের কথা, যাদের নির্দেশ মেনে এই পেশী সঞ্চালনটুকু করার ক্ষমতা আছে। এমনও তো হতে পারে, কোনো কোমায় থাকা মানুষ হয়ত নির্দেশ শুনতে পাচ্ছে, কিন্তু মস্তিষ্ক ও পেশীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে তাদের। অচেতন প্রাণীর পর্যায়ভুক্ত তাদের কিন্তু কখনোই করা চলে না। এই ধরণের অবস্থার মানুষদের সাহায্য করার কোনো উপায় বহুদিন পাননি বিজ্ঞানীরা। অবশেষে ২০০৫ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিশেষজ্ঞ এড্রিয়ান ওয়েন এক অভিনব উপায় বের করেন। সেটা বুঝতে গেলে fMRI বা ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেসনেন্স ইমেজিং ব্যাপারটা একটু জানা প্রয়োজন। এটি রক্তের প্রবাহের দ্বারা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বা মস্তিষ্কের কোন অংশ ক্রিয়াশীল হয়ে উঠেছে মাপতে পারে। মস্তিষ্কের যে অংশ ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে সেখানে বেশি অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়, স্বাভাবিকভাবেই সেখানে রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়। সেটাই মাপতে পারে এই fMRI. তাহলে এই ক্ষেত্রে পরীক্ষার জন্য পেশী সঞ্চালনের কোনো প্রয়োজনই থাকছে না। এই পরীক্ষা সর্বপ্রথম করা হয় তেইশ বছর বয়সী এক মহিলার উপর। ভয়াবহ গাড়ি অ্যাকসিডেন্টের পর পাঁচ মাস ধরে সে তখন কোমায়। চোখ খুলতে পারলেও নির্দেশ মেনে কোনো কিছু করা বা অন্য কোনরকম পেশী সঞ্চালন করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই সে আদৌ সচেতন কিনা সেটাও জানত না কেউ। কিন্তু ওয়েন আর তাঁর সহকারীরা যখন তাকে কল্পনা করতে বললেন যে সে টেনিস খেলছে তখন তাঁদের হতবাক করে দিয়ে fMRI ইমেজিং এ ফুটে উঠল মস্তিষ্কের ক্রিয়াশীলতা। এরপর তাঁরা কোমায় থাকা মানুষটিকে সে যেন নিজের বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছে এরকম কল্পনা করতে বলেছিলেন। এবার মস্তিষ্কের স্মৃতি ও চলাফেরার সাথে যুক্ত তিন তিনটে অংশ ক্রিয়াশীল হয়ে উঠল। যাকে এতদিন নিতান্ত অচেতন বলে ভাবা হচ্ছিল, সে নিজেকে সচেতন একটি মানুষ বলে প্রমাণ করতে পারল। নিঃসন্দেহে এই ঘটনা স্নায়ুবিজ্ঞানের জগতে এক যুগান্তকারী সূচনা এনে দিল।

পরবর্তী সময়ে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেখা গেছে কোমায় চলে যাওয়া মানুষের ১০-২০% আসলে সচেতন। মস্তিষ্ক তাদের সজাগ, কিন্তু মস্তিষ্কের নির্দেশ মেনে পেশী সঞ্চালনের ক্ষমতা তাদের হারিয়েছে। শুধু তাই নয়, স্নায়ুবিজ্ঞানীদের বিশ্বাস চেতনার উৎপত্তিস্থল মস্তিষ্কের ঠিক কোন অংশে এই চিরন্তন প্রশ্নের উত্তর পেতেও এই পদ্ধতি সাহায্য করবে। যদিও অনেক রাস্তা এখনো পেরোনো বাকি, তবু বিজ্ঞানীরা একটা বিষয়ে অন্তত একমত। তাঁরা বিশ্বাস করেন চেতনা মস্তিষ্কের কোনো নির্দিষ্ট একটা অংশে আবদ্ধ নয়। কিন্তু কোন কোন অংশ জড়িত সেই নিয়ে প্রচুর মতভেদ আছে। কেউ বলেন মস্তিষ্কের মাঝামাঝি অবস্থিত থ্যালামাসের ভূমিকা প্রধান, আবার কেউ বলেন টেম্পোরাল লোব আর প্যারাইটাল কর্টেক্সের মাঝে বসে থাকা ধূসর রঙের ইনসুলাই চেতনার ঘাঁটি। একমত হতে এখনও বিস্তর সময় লাগবে।

স্বাভাবিকভাবেই আরো একটা প্রশ্ন ওঠে এখানে। প্রাণীজগতে আমরাই কী একমাত্র সচেতন? নাকি জন্তুজানোয়ারদেরও চেতনা বলে কিছু আছে? নানা মুনির নানা মত। বললাম না, এখনও অনেকটা রাস্তা যাওয়া বাকি।

এই শতাব্দী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অর্থাৎ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআইয়ের। অবশ্যই সে সচেতন বুদ্ধিমত্তা নয়। অন্তত এখনো পর্যন্ত কোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আত্মসচেতন হওয়ার লক্ষণ দেখায়নি। তবে বিজ্ঞানীদের মতে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো আমরা সচেতন এআইয়ের সম্মুখীন হতে চলেছি। মানুষের চেতনা তার একান্তই নিজস্ব। তার পরিপূরক কোনো কিছুই হতে পারেনা, কিন্তু যদি একদিন সচেতন কোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোনো মস্তিষ্কের আঘাতে জড় হয়ে যাওয়া প্রাণকে স্বাভাবিক সুস্থ জীবন ফিরিয়ে দিতে পারে, তাতে আপত্তি করার মতো কিছু দেখিনা।

দার্শনিকরা বলেন এই সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড সচেতন, সেই চেতনার ধারাই বইছে এক প্রাণ থেকে অন্য প্রাণে, জীবনের উত্তরণ ঘটছে মহাজীবনে।

মানুষ মাত্রেই সচেতন প্রাণী। তার চেতনা তাকে করে অনন্য, হয়তো অনন্তও বটে। আর সে চেতনা থেকেই উন্মেষ ঘটে চৈতন্যের। সার্থক হয় মনুষ্যজীবন।

———————-

Information courtesy :

Google

Websites: nature.com, sciencedaily.com, neuroscience news.com, bbc.com

YouTube channels: SciShow Psych, TED, The University of Melbourne,The Royal Institution, Closer To Truth

 

 

1 thought on “সন্ধ্যা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য প্রতিযোগিতা২০২২- সেরা প্রবন্ধ-প্রথম স্থান-প্রভু দাও মোরে আরো চেতনা-বুমা ব্যানার্জী দাস-শীত ২০২২

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s