দিল্লী, অমৃতসর, ডালহৌসি, খাজিয়ার, চম্বা, ধরমশালা – বাঙালির সফর তালিকায় একটা খুবই কমন প্যাকেজ। গত শীতে আমরাও এই সফরসুচি মেনে ঘুরে এসেছিলাম উত্তর ভারতের এই অঞ্চলটাতে। অতি পরিচিত এবং বিখ্যাত এই টুরিস্টস্পটগুলিতে বহু মানুষ বহুবার গেছেন। কিন্তু কেউ কী কখনো গেছেন ‘চামিনু’তে? কেউ কী নাম শুনেছেন ছোট্ট গ্রাম চামিনু’র? সত্যি কথা বলতে কি আমি কিন্ত কখনো এই নাম শুনিনি।
আমাদের সফর সঞ্চালিকা নবনীতা চম্বাতে রাত্রিবাসের বদলে নেট ঘেঁটে হদিশ পেয়েছিল ‘not on map –H20 house’ এর। পৌঁছেছিলাম রাতে। চারপাশে তখন ঘন অন্ধকার। পৌঁছেছিলাম রাতে, চারপাশে তখন ঘন অন্ধকার। পরদিন দুপুরেই পরের গন্তব্যের দিকে রওয়ানা হয়েছিলাম।সফর শেষে বাড়ি ফিরে আমার পরে একটা আফশোস মনকে কুড়ে খেয়েছিল- বিখ্যাত জায়গাগুলোর বদলে যদি চামিনুতেই দিন তিনেক থাকতাম তাহলে বোধহয় ভালো হতো।
আসামের পূর্ব সীমান্তের ছোট্ট শহর দুলিয়াজানের অয়েল ইন্ডিয়া হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে ক্লাস ওয়ান থেকে আমরা পাঁচজন – আমি, পিনাকী, সঞ্জয়, জয়া ও বিজয়া সহপাঠী। ডিসেম্বরের ২২ তারিখে আমরা পাঁচজন ‘প্রায়’ সপরিবারে রওয়ানা হলাম কোলকাতা থেকে। ‘প্রায়’ কারণ দলে অনুপস্থিত বিজয়ার স্বামী স্বপনদা আর জয়ার ছেলে রোহণ।
২৫ তারিখ ডালহৌসি থেকে রওয়ানা ঠিক সময়েই। কিন্তু রাস্তা বরফে ঢাকা সঙ্গে ট্র্যাফিক জ্যাম।
খাজিয়ার পৌঁছতেই বেলা পড়ে এলো।
চম্বা যখন পৌঁছলাম তখন চারপাশ অন্ধকার। রাভি নদীর পাশে চম্বা একটি জমজমাট শহর।বহু প্রাচীন এই শহরটির নামকরণ হয়েছিল রাজকুমারী চম্পাবতীর নামে। সেই সময় এই অঞ্চলের রাজা ছিলেন সাহিল বর্মণ। তাঁর রাজধানী ছিল ভারমোর’এ। চম্পাবতীর অনুরোধেই নাকি রাজা রাজধানী স্থানান্তরিত করেন এই চম্বাতে।
চম্বা থেকে চামিনু-র দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। দিনের আলোয় এই পথের চারপাশের দৃশ্য চমৎকার। কিন্তু রাতের অন্ধকারে এই পথ হয়ে উঠেছিল ভয়ঙ্কর। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। পথে নেই কোনো জনমানব। জি পি এস এর ভরসায় চলছে গাড়ি। মাঝেমাঝেই হোটেলের কর্মীদের ফোন পাচ্ছি। ভরসা দিচ্ছেন ওঁরা। অবশেষে একসময় পথ শেষ হল। ক্লান্ত শরীরগুলো হোটেলে (নাকি গেস্ট হাউসে) বিভিন্ন ঘরে আশ্রয় নিল। সেই রাতেও মুগ্ধ করল হোটেলের কর্মীদের আতিথেয়তা।
দ্বিতীয় দিনের স্বল্প সময়টুকু চারপাশের অপূর্ব দৃশ্যের স্বাদ নিতে নিতে ছোট করে ফুরিয়ে গেল।
চারপাশে পাহাড়। সামান্য রুক্ষ। পাহাড়ের ঢালে ওপরে নিচে বিভিন্ন ঘর। সামনে একটা ছোট সমতল ভূমি। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট খরস্রোতা এক নদী। শুধু পাশ দিয়ে নয়, হোটেলের ঘরের সামনে দিয়েও বইছে জলের স্রোত।
সেই জলের স্রোতে যাঁতাও ঘোরে। তৈরি হয় গম থেকে আটা।
অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের আদর্শ স্থান। ইটকাঠের ঘরে না থেকে নদীর ধারে তাঁবুতেও রাত্রিবাসের ব্যবস্থা আছে। নদীর পাড়েই রয়েছে রোপ ব্রিজ।
চম্বা জেলার শিল্পকলা বিখ্যাত। ছোট্ট গ্রামের হোটেলেও রয়েছে তাঁর নিদর্শন। ঘরের দেওয়ালের ছবি থেকে ঘরের ভেতরের ছোট ছোট শিল্পকর্ম এক কথায় অসাধারণ। মনে করিয়ে দেয় অবন ঠাকুরের কাটুম কাটামকেও।
দড়ি দিয়ে পাকানো আলো বা গাছ কেটে আসনকেও তো ভুলতে পারি না।
অবশ্যই উল্লেখ করতে হয় ওই আহ্লাদী কুকুরছানার কথা। আমাদের সবার সাথেই ওর খুব ভাব হয়ে গিয়েছিল।
চামিনু ছেড়ে বেড়িয়ে আসার পরেও চোখের সামনে ভাসছে সমতলভূমি লাগোয়া সেই ছোট্ট চাষের জমি, নাম না জানা ফলের গাছ আর ফল, সেই দুই হোটেল কর্মীকে, যাদের ট্রেকিং ও মাউণ্টেনিয়ারিংএর গল্প শুনে কেটেছিল সকালের অনেকটা সময়।
হোটেলের ঘর থেকে বা সামনের চত্বর থেকে চোখে পড়ে না কোন তুষার শৃঙ্গ। কিন্তু সামান্য কয়েক ধাপ উঠে এলেই রাস্তার পাশে রয়েছে রবিশঙ্কর গুরুকুলের একটি শাখা, আর তার পেছনেই দৃশ্যমান বরফ ঢাকা পাহাড়চূড়া।
চম্বা জেলা বিখ্যাত তার লোকগীতি ও লোকসংস্কৃতির জন্য।চম্বা শহরে দেখা পেয়েছিলাম মানুষটির। চামুণ্ডা দেবীমন্দিরের প্রাঙ্গনে বসে নিজের হাতে তৈরি বাঁশিতে সুর তুলছিলেন। চামিনু ভ্রমণের বিদায় সঙ্গীতের সুর হৃদয়ে নিয়ে রওয়ানা হলাম পরের গন্তব্যের দিকে।
দেবাশিস সেন-এর আগের চিত্রভ্রমণ-মাজুলিতে একদিন
সমস্ত জয়ঢাকি ভ্রমণ একসঙ্গে
An excellent presentation .It calls for wider publicity for more number of readers who can really cherish.
LikeLiked by 1 person
এই লেখাটা প্রথম দিনই পড়েছিলাম.. ভিডিও টা দেখা হয়নি সেটা আজ দেখলাম.. অপূর্ব ভ্রমণ.. Not on map এর কথা আমার জানা আছে কিন্তু সত্যি বলতে এরকম ছোট ছোট গ্রাম গুলো তে যত কম লোক যায় ততই ভাল.. অনেক অজানা অচেনা সুন্দর ছোট ছোট সরল গ্রাম আর জায়গা বেশি বিখ্যাত হয়ে মারা পড়েছে দায়িত্ব জ্ঞান হীন পর্যটক দের ভিড়ে.. প্রার্থনা রইলো চামিনু র জন্যে একদম নিজের মত করে থাকতে
LikeLike