ছড়ার পাতা সজারু রোয়াল্ড ডাহ্‌ল কৌশিক ভট্টাচার্য শীত ২০১৮

কৌশিক ভট্টাচার্য  র সমস্ত ছড়া একত্রে

সজারু

Roald Dahl-এর লেখা Porcupine অবলম্বনে।
অনুবাদঃ কৌশিক ভট্টাচার্য

শনিবার আসে যেই মনে জাগে ফূর্তি
মহাসুখে হবে আজ উদরের পূর্তি।
যেই না বিকেল হবে, জানি আজ বাবা ফের
পঞ্চাশ টাকা গুনে দেবে হাতখরচের।

যেই টাকা হাতে পাওয়া, এক ছুটে বাইরে
মনে মনে ভেবে চলি কি কি আজ খাই রে!
দোকানে সাজানো আছে অপরূপ সৃষ্টি
থরে থরে। কিনি সব স্বপ্নের মিষ্টি।

হ্যাংলা বন্ধু যত একটুও দাঁড়ালে
ভাগ নেবে – তাড়াতাড়ি খুঁজে কোনো আড়ালে
যেতে হবে। ছুট! ছুট! বাড়িঘর ছাড়িয়ে
বড় এক ঝোপ এলো — থেমে যাই দাঁড়িয়ে।
ঐ তো সে ছোটো টিলা — এই বারে ফিষ্টি,
জমিয়ে পাথরে বসে গপাগপ মিষ্টি।

টিলাতে যেই না বসা, ক্যাঁক করে ঝাঁপিয়ে
উঠেছি তড়াক করে সাত ফুট লাফিয়ে।
ভেবেছো কাটলো কোনো সাপে, বিছে, কীটেতে?
না! না! না! বসেছি এক সজারুর পিঠেতে!
ধেড়ে ব্যাটা গেঁড়ে বসে ছিলো কাঁটা উঁচিয়ে
পশ্চাদ্দেশ কারো দিতে ফুঁড়ে, খুঁচিয়ে!

ওরে বাবা! সে কি ব্যাথা! সারা পাছু জ্বলছে!
পিছনেতে কেউ যেন rya(n)daa দিয়ে ডলছে!
কেউ যেন বারেবারে ছ’শ পিন ফুটিয়ে
চামড়াটা ঘেঁটে দিয়ে ফের নেয় উঠিয়ে।

শ’দুয়েক কাঁটা নিয়ে পশ্চাদ্দেশেতে
রাম-কেঁদে বাড়ি ফিরি সজারুর বেশেতে
রাম-কেঁদে মা-কে বলি,
“ও মা! মা গো! গেলে কই?
হয়ে গেছি সজারু মা, আমি আর আমি নই

পিছনেতে চেয়ে দ্যাখো কত কাঁটা ফুটেছে!”
দেখে তো মায়ের চোখ কপালেতে উঠেছে,
“এ কি! এ কি! দেখি! দেখি! কতগুলো কাঁটা এ
পাছু তো না, যেন পুরো ইলিশের গাদা এ!
নাঃ, শুধু খালি হাতে তুলি কাঁটা কি করে?
একেবারে গেঁথে গেছে হাড়ে-মাঁসে শিকড়ে।
সাঁড়াশিতে পাকড়িয়ে গোড়াটা না নাড়িয়ে
ধীরে ধীরে একে একে দিতে হবে ছাড়িয়ে।
দাঁত তোলে যারা শুনি এই কাজে দক্ষ
ডাক্তার ভীম দাঁ-ই, অতএব, লক্ষ্য!”

আমি শুনে ভয়ে ঘেমে বলি কেঁদে চেঁচিয়ে,
“ভীম-কাকু! ওরে বাবা, সাঁড়াশিতে পেঁচিয়ে
কাঁটা তো বটেই, পুরো পাছুটাও ছিঁড়বে।
নিজেই তোলো না, কেন ওর কাছে ভিড়বে?”

ভালো কথা বড়দের যদি বলো, মরবে!
শুনবে তো নাই, পুরো উল্টোটা করবে।
দুঃখের কথা শোনো, মন আজ-ও খিঁচড়ে
মা আমাকে নিয়ে গেলো ধরে টেনে হিঁচড়ে।

ভীম দাঁ-র নার্সেরা — শরীরে যা ক্ষমতা
কুস্তিতে সেরা তারা, মেনে নেবে যম-ও তা,
মাসলে লজ্জা দেবে পালোয়ান গামাকে।
চ্যাংদোলা করে তারা তুলে নিলো আমাকে।
শোয়ালো উপুড় করে রোগীদের খাটেতে
দুটো হাত, দুটো পা-ই চেপে ধরে গাঁটেতে।

নার্সেরা দুটো হাত, দুটো পা-ই আঁকড়ে
ভীম দাঁ দিলেন দেখা, সাঁড়াশিটা পাকড়ে
কোমরেতে হাত রেখে — করছি না নিন্দা —
অট্টহাসির শেষে জানালেন ভীম দাঁ,
“সব কেস মনে আছে, কোনো কেস ভুলি নি,
দাঁত ছাড়া আর কিছু এতদিন তুলি নি!
পাছু থেকে কাঁটা তোলা — আমি ছাড়া কে পারে?
কেসটা ছাপাতে হবে জার্নালে, পেপারে।”

কাঁটা তোলে ভীমকাকু নেচে গেয়ে, “ভাঁইয়ো!
হাঁই মারো মারো টান হাঁইয়ো, হাইঁয়ো!”
“বাঁচাও! বাঁচাও!” বলে যত মরি চেঁচিয়ে
“হয়ে গেছে। আরো দুটো!” বলে দাঁত খেঁচিয়ে,
“চুপ করে শুয়ে থাকো — দেরি হবে নড়লে,
দুটো দাঁত-ও তুলে দেবো চ্যাঁচামেচি করলে!”
অবশেষে জানালেন, মুখে হাসি সূক্ষ্ম,
“এইটাই শেষ কাঁটা!”, মনে জানি দুঃখ!

বেসিনেতে হাত ধুয়ে জানালেন ভীম দাঁ
“বাজারে আগুন, তবু ফি নিলেই নিন্দা!
এক মনে দাঁত তুলি সারা দিন-রাত্র
সম্মান-দক্ষিণা: দু’ হাজার মাত্র!”

মা কেমন ঝগড়ুটে ভীম দাঁ-তো জানে না!
বাবা জানে। ফি-র কথা যেই গেছে কানে না,
চক্ষু কপালে তুলে বললো মা, “ছি! ছি! ছি!
এইটুকু কাজে এত ফি নেবার আছে কি?”

ভীম দাঁ বলেন হেসে, “আরে এতো সস্তা!
কাঁটা কি সে একখানা, পুরো এক বস্তা
সাঁড়াশির মহাটান না লাগালে বেচারা
ঘুরত সজারু হয়ে, করত কি এ-ছাড়া?
কাঁটারা কি নিজে থেকে উড়ে উড়ে ভাগবে?
দক্ষিণা, হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ, এটুকু তো লাগবে!”
মা-ও জানে লাভ নেই এত মারামারিতে
হাঁড়িমুখে টাকা গুনে ফিরে আসি বাড়িতে।

***
দিনটা যা গেলো, বাবা! মন তিরিতিক্ষে
গল্প তো শেষ, তবু দেই কিছু শিক্ষে!
বুঝেছো কি সজারুরা কেন এত গুছিয়ে
পৃথিবীর যত কাঁটা পিঠে রাখে উঁচিয়ে?
বোকা কোনো হাতি এসে চেপে দিলে হবে কি?
সজারুর প্রাণবায়ু মরদেহে রবে কি?
তাই বলি, সাবধান, বোকামিটা কোরো না,
পশ্চাদ্দেশে যেন কাঁটা বিঁধে মোরো না!
বসো যদি কুশনেতে টিভিটার কাছেতে
পাথরে বা জঙ্গলে ছোটো কোনো গাছেতে
বসো যদি চেয়ারে বা নিচু কোনো দেয়ালে
সাবধান! সাবধান ! থেকো না বেখেয়ালে!
ওঁৎ পেতে আশেপাশে থাকে যদি সজারু
পিঠে চেপে বসা তার মোটে নয় মজারু!

 

 

জয়ঢাকের ছড়া লাইব্রেরি

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s