আগের পর্বগুলো
।৩৬।
ঝালোন থেকে আমি যে কজন ঠগিকে এযাত্রা সঙ্গে এনেছিলাম তাদের একজন ছিল হিদায়ত খান। লোকটাকে আমি আগে কখনো দেখিনি। লোকটাকে পীর খান চিনতো খানিকটা। তার সুপারিশেই তাকে আমার দলে নেয়া। ঠগির কাজেকর্মে সে কতটা পটু সে আমার জানা ছিল না বিশেষ। গফুর খানের পরে আমাদের পিন্ডারি শিকারের অভিযানগুলোতে সে ভাগ নেয় নি কখনো। ভুত্তোট বা সামশিয়া কোন কাজই সে করত না। শুধু আমাদের কাজ চলবার সময় নজরদারের কাজ করত। তবে হ্যাঁ,লোকটা ওস্তাদ ঘোড়সওয়ার ছিল। পিন্ডারি হিসেবে সে একেবারে এক নম্বর। তলোয়ার কিংবা বর্শা দুটোতেই তুখোড় হাত। কেন যেন, লোকটাকে আমার বিশ্বাস হত না ঠিক।
নেমাওয়ারের থেকে যখন আর মাত্র কয়েকদিনের পথ দূরে রয়েছি তখন একদিন পীর খান আর মোতিরাম সন্ধেবেলা খুব গম্ভীর মুখে আমার তাঁবুতে এসে হাজির হল। তাদের মুখ দেখে আমার সনেহ হল, খুব খারাপ কিছু একটা ঘটে গেছে। বললাম, “কী হয়েছে বল।”
মোতিরাম মাথা নেড়ে বলে, “বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছে মির সাহেব। হিদায়ত খান গিয়ে চিতুর এক কাছের লোককে আমাদের সব গোপন কথা বলে দিয়েছে। আমাদের সন্দেহ এই মুহূর্তেও হিদায়ত খান চিতুর দরবারেই গিয়ে বসে আছে।”
“আমাদের এক্ষুণি পালাতে হবে। একমুহূর্তও দেরি করা চলবে না। ঘোড়া তৈরি আছে?” আমি উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললাম।
“ঘোড়া আমাদের সবসময়ই তৈরি থাকে মীর সাহেব,” পীর খান জবাব দিল।
“ভালো। কিন্তু পালাবার আগে, সন্দেহটা যে সত্যি সে ব্যাপারে আমি একবার নিশ্চিত হয়ে নিতে চাই।”
সবাই একসঙ্গে বলে উঠল, “এভাবে নিজেকে বিপদে ফেলবেন না মীর সাহেব। কী হবে অত খবর নিয়ে? ঘোড়া তৈরি আছে। চলুন।”
আমার কিন্তু তখন রোখ চেপে গেছে। বললাম, আমি যাবোই। চিতুর তাঁবুর পেছনদিকের কানাত তুলে কান পেতে দরবারের কথাবার্তা শুনবো খনিকক্ষণ। যদি দেখি আমাদের সন্দেহ ঠিক তাহলে আর একমুহূর্তও দেরি করব না। কে কে যাবে আমার সঙ্গে।”
উত্তরে শুধু পীর খান এগিয়ে এল। বাকিরা তখন ভয়ে নড়াচড়া করতেও ভুলে গেছে।
“ভালো,” আমি বললাম, “তাহলে বাকিরা ঘোড়া তৈরি করে রাখো। আমরা আসছি।”
তাঁবু থেকে বের হয়ে আমরা দুজন বুকে হেঁটে চিতুর তাঁবুর পেছনদিকে পৌঁছে দেখি ভেতরের মশালের আলোয় তাঁবুর দেয়ালে তিনটে মানুষের ছায়া। ইচু হয়ে সাবধানে কানাতের গায়ে কান পাতলাম আমরা।
ভেতর থেকে চিতুর গলার শব্দ আসছিলো, “আশ্চর্য। তুমি বলছো আমীর খানই গফুর খানকে খুন করেছে?”
প্রশ্নটার জবাব দিল যে তার গলা শুনেই চিনলাম এটা হিদায়ত খান। সে বলছিল, “আমি খুনটা হতে দেখিনি। কিন্তু গফুর খানকে মদ খাইয়ে মাতাল করার সময় আমি সেখানে হাজির ছিলাম। গফুর খানের লাশটা কবর দিতেও আমি নিজে চোখে দেখেছি। গফুর খানের ঘোড়াটাকে আমীর খান নিজে হাতে কোতল করেছে, তা-ও আমি জানি।”
“ঠিকই বলছ হে,” চিতুর গলা ভেসে এল, “আমি শুধু শুধু গফুর খানকে ভুল বুঝেছিলাম। আর বাকি যাদের মেরেছে–”
“তারা সব সাধারণ পিন্ডারি হুজুর। নামডাকওয়ালা কেউ নয়। তবে হ্যাঁ। তাদের মধ্যে একজনকে মারতে এদের বেশ লড়াই করতেহয়েছিল। সে হুজুরের খাস চাকরদের মধ্যে একজন। নাম হাকিব উলা।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি চিনতাম ওকে।খুব তাগড়া জওয়ান ছিল। তাকেও আমীর খানই মেরেছে?”
“আজ্ঞে হ্যাঁ হুজুর। তিন রাত আগে। পির খান আর মোতিরাম লোকটাকে ধরে রেখেছিল, নইলে আমীর খান ওকে মারতে পারতো না। তখন আমি ভয়ে আপনার কাছে আসিনি হুজুর। ভেবেছিলাম আমীর খানকে আপনি এত ভালোবাসেন, আমার কথা হয়তো বিশ্বাস করবেন না।”
আমি ততক্ষণে তাঁবুর সেয়ালে ছুরি দিয়ে একটা ছোট ফুটো করে ভেতরে চোখ চালিয়ে দিয়েছি। হিদায়তের কথাটা শেষ না হতেই চিতু উঠে দাঁড়িয়ে তাঁবুর একটা খুঁটিতে মাথাটা ঠুকতে ঠুকতে বলে “করতাম না-ই তো। একেবারে বিশ্বাস করতাম না তোমার কথা। কিন্তু—যে প্রমান তুমি দেখিয়েছো তার পরে আর কোন অবিশ্বাস চলে না। কে ভাবতে পারতো, আমীর আলির মত একজন ভদ্র সভ্য লোক, যেকোন নিষ্ঠুরতা যার এত অপছন্দ, এমনকি আমাকেও যে াজকাল একটু একটু বদলে ফেলেছিল আজকাল, সে কিনা একটা ঠগি!”
“কিন্তু এটাই সত্যি হুজুর। ওদের একবার গ্রেফতার করে দেখুন, আরো অনেক প্রমাণ পাবেন। গফুর খানের তলোয়ারটা এখন পীর খান নিজের কোমরে বাঁধে। আপনি দেখলেই চিনতে পারবেন।”
“সেটা একটা অকাট্য প্রমাণই হবে,” বলে মাথা নেড়ে চিতু ফের তাকে জিজ্ঞাসা করল, “কিন্তু তুমি এদের দলে এসে ভিড়লে কী করে?”
সে বলল, “হুজুর ,পীর খান আমার চেনা মানুষ। সে এসে একদিন বলল, তার জেমাদারের সঙ্গে পিন্ডারিদের দলে ঢুকতে চাই নাকি? তার জেমাদার আমীর আলি ঝালোনের রাজার কাছের লোক। তাকে সন্দেহ করবে কে? তার ওপর, এখানে এসেও গফুর খানের আগে সে কারো গায়ে হাত দেয়ই নি। আমার জানার কোন রাস্তা ছিল না হুজুর।”
চিতু তখন তাদের সঙ্গের অন্য লোকটাকে বলল, “যাক। তুমি তৈরি তো? এবার তাড়াতাড়ি গিয়ে গ্রেফতার করে আনো এদের। কজন লোক নিচ্ছ?”
“আজ্ঞে পঞ্চাশজন বাছাই ঘোড়সওয়ার তৈরি আছে। হুকুম দিলেই গিয়ে ধরে আনবো। একটাও ঠগি আমাদের হাত থেকে পালাতে পারবে না হুজুর।”
“তবে যাও। তাড়াতাড়ি করো। হায় আমীর আলি? তোমার ওই সরল মুখটা নিয়ে কী করে আমার সামনে এসে দাঁড়াবে তুমি? আর হিদায়ত আলি, তোমার পুরষ্কারের কথা আমি ভুলিনি। তুমি পীর খানের জিনটা পাবে।”
লোকদুট তাঁবু ছেড়ে চিতুর আস্তাবলের দিকে চলে যেতেই আমরাও হামাগুড়ি দিয়ে সরে এসে দৌড়োতে দৌড়োতে আমাদের তাঁবুতে গিয়ে দেখি লুটের মাল বাঁধাছাঁদা ততক্ষণে শেষ হয়ে গেছে। তাড়াতারি ঘোড়ার পিঠে উঠে দেখলাম ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। আমাদের চারপাশে এসে ঘিরে ধরেছে খোলা তলোয়ার হাতে পিন্ডারির দল। আমি আর পীর খান অন্ধের মত তলোয়ার চালিয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে আসা দুটো পিন্ডারিকে কেটে ফেলে তীব্রবেগে ঘোড়া ছুটিয়ে দিলাম। অন্ধকারের আড়াল নিয়ে পিন্ডারিদের বেড়াজাল টপকে মিলিয়ে গেলাম ঘাঁটি থেকে দূরে।
আগে থেকেই ঠিক করা ছিল পালাতে পারলে কোথায় এসে সবাই একত্র হবো। সেইমতো বেশ অনেকটা পথ একটানা ছুটে এসে আগে থেকে ঠিক করে রাখা গ্রামটার কাছে থেমে দেখা গেল আমাদের বেশ কয়েকজন লোক প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে আসতে পেরেছে।
জায়গাটা থেকে অনেক দূরে পিন্ডারিদের ঘাঁটিটা নজরে পড়ে। সেখানে তখন দলে দলে পিন্ডারি এদিক ওদিক ঘুরছে আর থেকে থেকে গাদা বন্দুকের গুলি ছুঁড়ছে। অন্ধকারে আমরা যে কোনদিকে পালিয়েছি সেটা তারা ঠাহর করতে পারে নি।পরে শুনেছিলাম, অন্ধকারে ভুল করে তারা নিজেদেরই বেশ কিছু লোককে ঠগি ভেবে গুলি করে দিয়েছিলো সেই রাতে।
প্রায় ঘন্টাখানেক সেখানে অপেক্ষা করবার পর আস্তে আস্তে পিন্ডারিদের চিৎকার চ্যাঁচামেচি থেমে এলে আমি নিচু গলায় বললাম, “পীর খান, কজন এসে পৌঁছলো শেষ অবধি? মোতিরাম কোথায়?”
“এগারোজন। বাকিরা বোধ হয় আর বেঁচে নেই। মোতিরাম তলোয়ারের কোপ খেয়ে ঘোড়া থেকে পড়ে গেছে মীরসাহেব। আমি নিজে চোখে দেখেছি।”
“হায় আল্লা। ওরা সবাই যেন তলোয়ারের কোপে বা বুলেটের ঘায়ে মরে থাকে। না হলে অত্যাচারের আর সীমা থাকবে না বেচারাদের ওপর।”
মোতিরাম আমার নিজের ভাইয়ের মত ছিল। কিন্তু তখন দুঃখ করবার সময় নয়। চোখের জল আটকে আমি বললাম, “কে কে বেঁচে রইল তাহলে? সবাই নিজের নিজের নাম বলো।”
দেখা গেল মোতিরাম, আর তার সঙ্গে ঘাউস খান, নজর আলি আর রামদীন সিং নিখোঁজ। বিশ্বাসঘাতক হিদায়ত খানকে ধরে দলের লোক কমেছে মোট পাঁচজন। সে ছাড়া আমাদের চাকরবাকরও সবই গেছে।
বললাম, “এখানে তাহলে আর থাকবার কোন মানে নেই। যত তাড়াতাড়ি পারি ঝালোনে ফিরে যাওয়া যাক। যারা মারা গেছে তাদের লুটের ভাগ তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেব আমরা। এখানকার জঙ্গলের ভেতরকার রাস্তাঘাট আমরা সবাই চিনি। বড় রাস্তা ছেড়ে দিনের বেলা সেইসব রাস্তা ধরে গা ঢাকা দিয়ে হোসঙ্গাবাদ অবধি পৌঁছোতে পারলে তারপর আর চিন্তা নেই।”
বেশ কয়েক দিন এইভাবে পথ চললাম আমরা। নিজেদের পরিচয় দিতাম গোপন কাজে বের হওয়া সরকারি লোক হিসেবে। কেউ কেউ সন্দেহ করে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদও করেছে কিন্তু আমার কথা বলবার গুণে কোন বিপদ হয়নি। এমনি করে একদিন আমরা ফিরে এলাম নর্মদার পাশে। ঘোড়া নিয়ে তার জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে নদী পাড় হতে অনেকটা নিশ্চিন্ত হওয়া গেল।
তীব্র গরমের মধ্যে দিনে পনেরো বিশ ক্ররোশ করে রাস্তা পাড় হয়ে এরপর ঝালোনে পৌঁছোতে আর বেশি সময় লাগলো না। আগে থেকে খবর পাঠাবার উপায় ছিল না। বাড়ি যখন পৌঁছোলাম তখন মাত্রই কয়েকটা সপ্তাহের পরিশ্রমে , দুশ্চিন্তায় আর দুঃখে বয়েস যেন বেড়ে গেছে দশ বছর। প্রথমে তো আমার নিজের বাড়ির চাকরবাকররাই আমায় চিনতে পারেনি। তারপর যখন চিনতে পারল, তখন বাড়ি জুড়ে আনন্দের ঢেউ খেলে গেল। আজিমা ছুটতে ছুটতে এসে বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার। সে যে কি শান্তি! এই কদিনের সব দুঃখকষ্ট এক লহমায় ভুলে গেলাম আমি।
এরপর বেশ কয়েকদিন অপেক্ষা করলাম আমরা, যদ্দি আর কেঊ কোনভাবে ফিরে আসে সেই জন্য। কেউ এলনা আর। তারপর একদিন সন্ধেবেলা আমাদের দলটা ফের একবার একত্র হয়ে যার যার ঘোড়ার জিন থেকে লুটের মালপত্র বের করে ভাগবাঁটোয়ারা করে নেয়া হল। যারা আর ফেরেনি তাদের পরিবারের লোকজনও লুটের মালের পুরো ভাগ পেল।
এরপর আমার শান্তির দিন শুরু হল। সে মুহূর্তে ঠগি অভিযানে বের হবার কোন ইচ্ছে আমার ছিল না। টাকাপয়সা যা এনেছি তাতে বেশ কয়েক বছর পায়ের ওপর পা তুলে কাটানো যাবে। পিন্ডারিদের কোন দলেও গিয়ে যোগ দেয়ার তো প্রশ্নই উঠছে না। নাম ভাঁড়িয়ে যদি ফের অন্য কোন পিন্ডারির দলে গিয়ে ভিড়ি তাহলেও কে কবে চিনে ফেলবে সে ঝুঁকি নিয়ে লাভ কী? খবর যা পাচ্ছিলাম তাতে চিতু পিন্ডারিরও তখন সুদিন শেষ হয়ে গেছে। মারাঠারা শত চেষ্টাতেও ইংরেজের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারছে না তখন। তাদের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে চিতুও তাদের দুর্ভাগ্যের ভাগ পাচ্ছে। শেষমেষ তাকে ইংরেজরা একটা বড় জমিদারী দিতে চেয়েছিলো যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়াবার জন্য। প্রস্তাবটা মেনে নিলে হয়ত ভালো থাকতো সে। কিন্তু চিতুর মত একটা উচ্ছৃংখল, বন্য স্বভাবের মানুষের পক্ষে শান্ত হয়ে জমিদারী চালানো সম্ভব ছিল না। প্রস্তাবটা সে মানল না। তারপর ক্রমাগত তাড়া খেয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালাতে পালাতে শেষে আসীরগড়ের জঙ্গলে বাঘের মুখে ভয়ংকরভাবে মৃত্যু হয়েছিল তার। সারা জীবনে যত পাপ করেছে লোকটা , ওই ভয়ানক মৃত্যু দিয়ে সে তার প্রায়শ্চিত্ত করে গেল।
মাসতিনেক বাদে একদিন সন্ধেবেলা বন্ধুবান্ধব নিয়ে বাড়ির দেওয়ানখানায় বসে আছি এমনসময় একটা চাকর এসে বলে, বাইরে একটা লোক আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। নিজের নাম বলছে না নাকি, শুধু বলছে তোমার মালিককে ডাকো, সে আমায় দেখলেই চিনবে।
তলোয়ারটা হাতে নিয়ে উঠে গিয়ে দেখি আপাদমস্তক চাদর জড়ানো একটা লোক সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। আমায় দেখে কোন কথা না বলে সে হাত দিয়ে ইশারায় আমার সঙ্গের চাকরটাকে চলে যেতে বলল। আমি চাকরটাকে সরিয়ে দিয়ে বললাম, “কে তুমি? এবার বলো কী বলতে এসেছ।”
সে এইবার কথা বলল। বলে, “জেমাদার। আমায় তুমি চিনতে পারছ?”
“তোমার গলা আমার চেনা,” আমি বললাম, “আলোয় এসে দাঁড়াও। মুখটা দেখি-”
সে শিউরে উঠে বলল, “না জেমাদার, না। যা হাল হয়েছে আমার তাতে অন্ধকারই আমার জন্য ভালো। আ-আমি ঘাউস খান।”
আমি চমকে উঠে বললাম, “কিন্তু সে তো মারা গেছে—”
সে ভারি ক্লান্ত গলায় বলল, “তাহলে আলো আনুন একটা।”
একটা আলো এনে আমি তার মুখের সামনে ধরে শিউরে উঠলাম। এ ঘাউস খানই বটে। কিন্তু এখন আর তাকে মানুষ বলে মনে হয় না। শীর্ণ মুখটা থেকে নাকটা একেবারে চেঁছে নেয়া হয়েছে। চারপাশের চামড়া উঠে এসে ক্ষতটাকে সারিয়েছে বটে কিন্তু তার টানে মুখটা তার ভয়ানকভাবে বিকৃত হয়ে গেছে।
আলোটা সরিয়ে রেখে আমি তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। খানিক বাদে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সে বলল, “শুধু মুখ নয় মীরসাহেব। আরো আছে। এই দেখুন–” বলতে বলতে গায়ের চাদরটা মাটিতে ফেলে দিল সে। দেখলাম হাতদুটো তার কনুই থেকে কেটে বাদ দেয়া হয়েছে। তার ক্ষত তখনো পুরোপুরি সারেনি। সেগুলো আমার দিকে তুলে ধরে দেখিয়ে সে মাটিতে বসে পড়ে কেঁদে ফেলল।
পরদিন নির্জনে তাকে নিয়ে বসে একে একে বাকিদের পরিণতির গল্প শুনলাম আমি-
“সেদিন রাতে অন্ধকারের মধ্যে আমি আপনার পিছু পিছু রওনা হয়েছি এমন সময় কোমরে একটা বল্লম এসে বিঁধতে আমি ঘোড়া থেকে পড়ে গেলাম। খানিক বাদে আমার ক্ষতটার ওপরে কাপড় বেঁধে রক্তপড়া আটকে আমায় হাত পা বেঁধে চিতুর দরবারে নিয়ে যাওয়া হল। সেখানে তখন আরো অনেক লোক জমেছে। খানিক বাদে একে একে নজর আলি আর রামদীন সিংকেও নিয়ে আসা হল। তাদের বেশি চোটটোট লাগেনি। সবার শেষে বয়ে আনা হল মোতিরামকে। তার মাথায় গভীর চোট লেগেছে।
“শয়তান হিদায়ত খান দাঁড়িয়ে ছিল চিতুর পাশে। চোখদুটো তার চকচক করছে। তার দিকে ফিরে চিতু বলল, ‘এদের ব্যাপারে তোমার কিছু বলার আছে?’
“সে বলল, ‘আছে হুজুর। আমার অভিযোগ, এরা ঠগি, এরা গফুর খানের হত্যাকারী, সে ছাড়াও আরো চোদ্দজন পিন্ডারিকেও এরা খুন করেছে।’
“চিতু আমাদের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল, ‘তোমাদের জেমাদারকে এর জবাব দিক।’
“মোতিরামের অবশ্য তখন কথা বলবার অবস্থা নেই। তার প্রাণটা তখন কোনমতে টিঁকে রয়েছে। সেদিকে একবার দেখে নিয়ে আমি বললাম, ‘আমি এর জবাব দেব হুজুর। এ মিথ্যে কথা বলছে। কী প্রমাণ আছে এর হাতে? আমরা এতদিন ধরে আপনার দলে আছি নবাব, এই পিন্ডারিগুলোর তুলনায় আমাদের শরীরে কত বেশি দয়ামায়া তা আপনি দেখেন নি?’
“তাই শুনে চারপাশে খুব হইচই শুরু হয়ে গেল। মজা দেখতে জড়ো হওয়া পিন্ডারিরা বলে,’জুতো মেরে মুখ ভেঙে দে বদমাশটার–’
“চিতু বিরক্ত হয়ে হাঁক দিয়ে বলে, ‘এইও চোপ। এরপর বিচার চলার সময় একটাও কথা যে বলবে তার মুন্ডুটা আমি নিজে হাতে কাটব এই বলে দিলাম।’ এই বলে ফের আমার দিকে ফিরে সে বলে, ‘হ্যাঁ, যা বলছিলে বল।’
“ ‘আমার আর কিছু বলবার নেই নবাব। আপনার কাছে সুবিচার পাবো সে আমি জানি।’
“ ‘হ্যাঁ সুবিচার তো তুমি পাবে। কিন্তু তোমার কর্তা হঠাৎ পালিয়ে গেল যে বড়?’
“আমি একটু ভেবে নিয়ে বললাম, ‘নবাব, কর্তা পালিয়ে গেছেন তা ঠিক। কিন্তু কোন অন্যায় করে তিনি পালান নি। এই শয়তান হিদায়ত খান তার প্রাপ্য লুটের ভাগের চেয়েও বেশি হিস্যা দাবি করে আসছিল কিছুদিন ধরে। আমরা দিই নি। তখন এ আমাদের থেকে আলাদা হয়ে গেল। এরপর কদিন ধরেই দেখছি এ সুযোগ পেলেই আপনার দরবারের একজনের সঙ্গে গুজুর গুজুর করে। তারপর আজ সন্ধেবেলা যখন দেখলাম দরবারের সেই লোকটা একে সঙ্গে নিয়ে আপনার তাঁবুতে গিয়ে ঢুকছে তখন সন্দেহ হওয়ায় আমরা তাঁবুতে ফিরে কর্তাকে সব বলি। তিনি আর পীর খান তখন তখন আপনার তাঁবুর বাইরে এসে কান পেতে যখন শুনল তাদের বিরুদ্ধে খুনের নালিশ হচ্ছে তখন তারা আর দেরি করেনি। আমরা তৈরি ছিলাম না। তাই আপনাদের হাতে ধরা পড়ে গেছি।’
“সব শুনে গম্ভীর হয়ে চিতু হিদায়ত খানকে বলল, ‘এইবারে তোমার অভিযোগের প্রমাণ কী আছে দেখাও।’
“ ‘এদের তলোয়ারগুলো আনবার হুকুম দিন হুজুর। গফুর খানের তলোয়ার নিয়ে পীর খান পালিয়েছে। কিন্তু এই রামদীন সিং-এর কাছে এখনো দু রাত আগে খুন করা এক পিন্ডারির তলোয়ারটা রয়ে গেছে। তাছাড়া এদের ঘোড়ার জিনের থলে খুঁজলে আরো অনেক প্রমানই পেয়ে যাবেন।’
“অমনি পিন্ডারিদের মধ্যে একজন লাফ দিয়ে উঠে বলে, ‘কোথায় তলোয়ার? দেখাও শিগগির। দু রাত আগে আমার ভাইটা নিখোঁজ হয়ে গেছে।’
“তলোয়ারগুলো আনতেই রামদীনের তলোয়ার দেখে সে লাফ দিয়ে উঠে বলে, ‘এই তো আমার ভাইয়ের তলোয়ার। আমি এর রক্ত চাই হুজুর–’
“হিদায়ত তখন আবার বলল, ‘আমায় যদি সঙ্গে কয়েকজন লোক দিয়ে পাঠান হুজুর তাহলে আমি দুই রাত আগে যেখানে এর ভাইকে পোঁতা হয়েছে সে জায়গাটা চিনিয়ে দিতে পারি। গফুর খান সহ এই কদিনে যতগুলো খুন এরা করেছে তার দেহগুলো যে যে জায়গায় পোঁতা হয়েছে তার প্রত্যেকটা দেখিয়ে দিতে পারবো আমি।’
“চিতু একবার কেঁপে উঠল। তারপর বলল, ‘আমার বীর ছেলেগুলো—যুদ্ধক্ষেত্রে শহিদির শরবত খাবার বদলে এই খুনেগুলোর হাতে রাতের অন্ধকারে প্রাণ দিলো সব! এই কে আছিস, এদের ঘোড়ার জিনগুলো নিয়ে আয়। দেখি কী পাওয়া যায় তাতে।’
“নজর আলির জিনটা ছিল আর এক ঠগিকে মেরে জোগাড় করা। তার ভাই সেটাকে চিনে ফেলে কাঁদতে শুরু করল। তার ভেতর সেই লোকটার গোটা লুটের ভাগটাই রাখা ছিল। আমার কোমর থেকে উদ্ধার হল লোকটার কোমরবন্ধটা। তার ওপরে আবার ফার্সিতে তার নামটাও লেখা ছিল। ফলে এরপর আর বিচার লম্বা করা হল না। আমরা দোষী সাব্যস্ত হলাম।
“আমি তখন গলা উঁচিয়ে বললাম, ‘নবাব, ভাগ্যের সঙ্গে লড়াই করে আর লাভ নেই আমাদের। স্বীকার করছি আমরা ঠগি। যা শাস্তি হয় দিন। মা ভবানী আমাদের মৃত্যুর পর তাঁর পায়ে স্থান দেবেন। কিন্তু, এই শয়তান হিদায়ত খান কেন বেঁচে থাকবে? এ আমাদেরই সঙ্গে ঠজগিবৃত্তি করেছে এতদিন। তারপর নিজের পাওনার চাইতেও বেশি লোভ করে, সেই লোভ পূরণ না হওয়ায় আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। জিজ্ঞাসা করে দেখুন নবাব, ছেলেবেলা থেকে ও আমার সঙ্গে অন্তত শ-দুশ বার এ কাজ করেনি? তাকিয়ে দেখুন, মুখটা কেমন ভয়ে কুঁকড়ে গেছে শয়তানটার। ওই মুখটাই আমার সত্যি কথা বলার প্রমাণ। আর যদি সত্যিই ও সৎ লোক হত তাহলে আজ কেন এসে আপনার কাছে বলছে? খুনগুলো যখন আমরা করছিলাম তার প্রত্যেকটার সঙ্গে থাকলেও তখন কেন এসে আপনার কাছে বলেনি? কারণ হল এই প্রতিটা কাজের পুরেই ওর দাবি ছিল যা পাওয়া গেছে তার আধা হিস্যা ও একলা নেবে। এতদিন অপেক্ষা করে সে আশা কিছুতেই পূরণ হবেনা বুঝতে পেরে ও আজকে আপনার কাছে আমাদের সব কথা ফাঁস করতে এসেছে। আমরা তো শুধু ঠগি,ইলোকটা শুধু ঠগিই নয় সেইসঙ্গে একটা কাপুরুষ আর বিশ্বাসঘাতক।’
“ ‘মিথ্যেবাদি,’ চিৎকার করে উঠল হিদায়ত খান, ‘আমি জীবনে একটা লোকের গলায় রুমাল দিই নি–’
“ চিতুর দিকে ফিরে আমি বললাম, ‘তা সত্যি কথা। এর মত কাপুরুষ সে কাজ করতে পারবেও না হুজুর, তবে হুজুর এ লোক মারবার কায়দাটা যা বলল সেটা খেয়াল করেছেন কি? ঠগি না হলে এ এই গলায় রুমাল দেয়ার কথাটা মুখে আনতো না।।’
“এইবার দেখলাম চিতুর চৈতন্য হয়েছে। হিদায়ত খানের দিকে ফিরে বলে, ‘শয়তান, বিশ্বাসঘাতক নরকের কীট! এরা যা করেছে করেছে, কিন্তু তুই–’
“হিদায়ত তারপর অনেকক্ষণ চিৎকার করে প্রাণভিক্ষা করেছিল। কিন্তু তাতে কোন ফল হল না। চারপাঁচজন পিন্ডারি তাকে হাত পা ধরে ঝুলিয়ে তাঁবুর বাইরে নিয়ে বসিয়ে দিলো। তারপর তার চিৎকার চলতে চলতেই তার পেছনে দাঁড়িয়ে একজন পিন্ডারি তলোয়ারের এক কোপে তার মাথাটাকে ছিটকে দিল মাটির ওপর।
“ ‘কীহে? ভয় লাগছে না?’ আমাদের দিকে ফিরে চিতু প্রশ্ন করল, ‘এবারে তো তোমাদের পালা!’
“আমরা সবাই একসঙ্গে বলে উঠলাম, ‘না। মরতে আমরা ভয় পাই না।’
“ ‘হুঁ। এরা মরতে তাহলে ভয় পায়না দেখছি,’ বলতে বলতে চিতু তার এক শাগরেদের দিকে ফিরে বলে, ‘তাহলে তো এদের মেরে ফেলে সুখ হবে না হে, কী বলো?’ তারপর হাঁক দিয়ে একজন ফরাসকে বলে, ‘এই, এদের নিয়ে গিয়ে নাক আর কনুই অবধি হাতগুলো কেটে ফেলে ফের আমার কাছে নিয়ে আয়।’
“তাই করা হল, মীরসাহেব। সবকিছু শেষ হল যখন তখন সকলের মধ্যে শুধু আমি একা বেঁচে আছি। প্রথমে আমাদের প্রত্যেকের হাতদুটো,তারপর নাক কেটে নেয়া হল। কাটা হাতের ক্ষতস্থান ডুবিয়ে দেয়া হল ফুটন্ত তেলে। তারপর আমাদের জঙ্গলের মধ্যে তাড়িয়ে দেয়া হল জন্তুর মত। নজর আলি আর রামদীন এর পর আরো দুদিন বেঁচে ছিল। সে সময়টা আমরা আশেপাশের গ্রামে ভিক্ষা করে খেতাম। কেউ প্রশ্ন করলে বলতাম, পিন্ডারিরা আমাদের গ্রাম থেকে ধরে এনে এইভাবে ওত্যাচার করে ছেড়ে দিয়েছে। দু দিন বাদে ওদের দুজনের কাটা জায়গার মুখগুলো ফের খুলে গিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করল। ওরা আর বাঁচল না। মোতিরামের জ্বালা অবশ্য আগেই জুড়িয়েছিল। তার মাথায় তলোয়ারের কোপ খুলি ভেদ করে গিয়েছিল। তাকে আর আমাদের মত কষ্ট সহ্য করতে হয়নি। আমি একা সেই থেকে পথ চলতে চলতে আজ অবশেষে আপনার কাছে এসে পৌঁছেছি মীরসাহেব।”
ঘাউস খানকে আমি নিজের কাছে আশ্রয় দিয়ে চিকিৎসা করে সারিয়ে তুলেছিলাম বটে, কিন্তু এর পর আর বেশিদিন বাঁচে নি সে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ঘাউস খান মারা যায়।
।৩৭।
এর পর তিন বছর শান্তিতে কেটে গেল আমাদের। রাজদরবারে আমাদের যথেষ্ট সুনাম হয়েছিল। জমিদারির আকার বেড়েছিল অনেকটাই। আয়ও বেড়েছিল সেই পরিমাণে। আমাদের প্রজারা সুখে থাকত। সে খবর পেয়ে দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ এসে আমাদে জমিদারীতে বাসা করছিল। তার ফলে রোজগার আরও বাড়ছিল আমাদের। কিন্তু তবু বুকের ভেতর একটা ছটফটানি কাজ করে চলছিল আমার। শান্তিতে ঘরে বসে থেকে মন ভরে কই। আস্তে আস্তে ফের একবার একটা সাহসী দল সঙ্গে নিয়ে বের হয়ে পড়বার ইচ্ছেটা জোরদার হয়ে উঠছিলো আমার মনে। বিশেষ করে যখন নানান জায়গা থেকে অন্যান্য ঠগিদলের দুর্দান্ত সব অভিযানের গল্প আমার কানে আসত তখন মনে হত, ঠগিদের সর্বোচ্চ খেতাব পেয়ে গেলেও আরো অনেক বড় কীর্তি স্থাপন করা আমার বাকি রয়ে গেছে। মনে হত কবার শুধু যদি ডাক দিই তাহলে দেশের সেরা ঠগিরা এসে আমার সঙ্গে অভিযানে বের হতে রাজি হয়ে যাবে।
গনেশ জেমাদার তখন প্রায় সবসময়ই আমাদের সঙ্গে থাকে। ঠগিবৃত্তি ছাড়া আর কোন কাজই তার দ্বারা হত না। রাজার দরবারে বহুবার ঘুষ দিয়ে সে কাজ জোগাড় করবার চেষ্টা করেছে বটে কিন্তু কোন কাজই ভালো ভাবে করতে পারে নি। আমাদের এইভাবে সুখেশান্তিতে থাকজাটা তার একেবারে ভালো লাগত না। বারবার আমাদের বাড়িতে এসে গণেশ আমাকে চাপ দিত তার সঙ্গে ফের একবার অভিযানে বের হতে। এইবারে আমি তার প্রস্তাবে অবশেষ রাজি হয়ে গেলাম। চারপাশে খবর চলে গেল, সে বছর দশেরার পর একটা বড়সড় অভিযান বের হবে।
এ যাত্রা আজিমা আর আমায় বাধা দিল না বিশেষ। পর পর কয়েকবার বের হওয়াতে ব্যাপারটা তার মোটামুটি অভ্যাস হয়ে এসেছিল। সে ধরে নিল আমি ফের নতুন কোন ব্যবসার কাজে বের হতে চলেছি। দশেরা আসতে দেখা গেল, গনেশ জেমাদারের একশ জনের দলকে ধরে লোক জমা হয়েছে প্রায় তিনশ। তাদের প্রায় সকলেই নামকরা ঠগি।এমন একটা দল হাতে পেয়ে আমার বুকটা গর্বে ফুলে উঠছিলো। দশেরার দিন পুজোটুজো সেরে ঝালোনের বাইরে খানিক দূরে সবাই যেখানে এসে জমায়েত হয়েছে সেইখানে আমায় বিদায় দিতে গিয়ে দলটাকে দেখে বাবা এত উত্তেজিত হয়ে পড়ল যে বলে “আমি আবার বের হবো তোদের সঙ্গে।” আমরা তাতে খুশি হয়েই রাজি হলাম। হাজার হোক একজন অভিজ্ঞ মানুষ তো! সঙ্গে গেলে ভালো বই মন্দ হবে না।
দলের মধ্যে একটা প্রস্তাব উঠেছিল যে এইবার রাজপুতানা হয়ে গুজরাটের দিকে যাওয়া যাক। আবার অনেকে ফের একবার আমাদের চেনা রাস্তা ধরেই ঘুরে আসতে চাইছিল। মীমাংসার জন্য অতএব ভবানীর দ্বারস্থ হওয়া গেল। দৈবি সংকেত টংকেত বিচার করে দেখা গেল, ভবানী চাইছেন আমরা ফের একবার দক্ষিণের দিকেই যাই। অতএব ঠিক হল, ফের একবার সাগর, জব্বলপুর নাগপুরের চেনা রাস্তা ধরেই অভিযানে যাওয়া হবে।
সে যাত্রা সাগর অবধি আমাদের লাভ হল না বিশেষ। তিনশো জনের দলের হাতে শিকার জুটেছিল মাত্র চোদ্দজন। টাকাপয়সাও জুটেছিল যৎসামান্য। তার ওপর আবার একদিন রাতে আমি, বাবা আর দলের আরো কয়েকজন আমাদের তাঁবুতে বসে আছি এমন সময় শুনি রাত প্রথম প্রহরের শেষাশেষি একটা শেয়াল একারিয়া দিচ্ছে। রাতের প্রথম প্রহরে একলা শেয়ালের ডাক শুনলে এমনিতেই একটু ভয় ভয় করে। আমাদের রামাসি ভাষায় একে বলে একারিয়া। ঠগিদের কাছে এই ডাকটা, সামনে কোন বিপদের সংকেত। ডাকটা শুনতেই আমরা একেবারে চুপ করে গিয়ে ফের কান পেতে থাকলাম, যদি আবার শেয়ালে একারিয়া দেয় সেই ভয়ে। পরপর দুবার একারিয়া দেয়াটা ভোয়াবহ বিপদের আগাম সংকেত। একটূ বাদেই আমাদের বুকের ভেতর কাঁপন তুলে ফের একবার একারিয়া দিল শেয়ালটা। সঙ্গে সঙ্গে আমরা সবাই উঠে দাঁড়িয়ে পড়লাম।
ক্রমশ