শিশির বিশ্বাস এর সমস্ত লেখা একত্রে
শিশির বিশ্বাস
মথুরায় এদেশে এক অতি সুপ্রাচীন নগর। পৌরানিক কিংবদন্তি অনুসারে এখানে অনার্য অসুর রাজা মধুর রাজধানী ছিল। পুরাণ, মহাকাব্য পর্যালোচনা করে কেউ কেউ সময়টা খ্রীপূ ১৬০০ বলে অনুমান করেন। মধুপুত্র রাজা লবণকে রামচন্দ্রের ভাই শত্রুঘ্ন হত্যা করেন। এরপর পরিত্যক্ত এই নগর অরণ্যসংকুল হয়ে পড়লে লোকমুখে তার নাম হয় মধুবন। মহাভারতের যুগে এই নগর ছিল প্রতাপশালী অনার্য রাজা কংসর রাজধানী। বৈদিক আর্যরা তখন গঙ্গা-যমুনা ধরে আর্যাবর্তের দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। সেই সময় তাদের কাছে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই কংস। আর্য রাজারা কংসের ভয়ে সব সময় সন্ত্রস্ত হয়ে থাকতেন।
আর্যদের সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করেছিলেন যে মানুষটি, তিনি শ্রীকৃষ্ণ। অনার্য বংশজাত শ্রীকৃষ্ণের জন্ম কংসের কারাগারে। সম্পর্কে কংসের বোন দেবকীর পুত্র। নানা কারণে শ্রীকৃষ্ণ কংসের বিরোধিতা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সঙ্গত কারণেই এই কাজে তিনি আর্য রাজন্যকূলের সহযোগিতা পেয়েছিলেন। কৌশলী শ্রীকৃষ্ণ গোড়াতেই কংসের সঙ্গে সঙ্ঘর্ষে লিপ্ত না হয়ে তাঁর সহযোগী জরাসন্ধ প্রভৃতি অনার্য রাজা এবং যোদ্ধাদের একে একে সরিয়ে দিয়ে সবশেষে সম্মুখ সমরে কংসকে হত্যা করেছিলেন। পুরাণ মহাকাব্যে তাই শ্রীকৃষ্ণের ভুয়সী প্রশংসাই নয়, তাঁকে দেবত্বেও উন্নিত করা হয়েছিল। মহাভারতের কাল সঠিক ভাবে নিরুপণ করা যায়নি। তবে সময়টা গৌতম বুদ্ধর জন্মের (খ্রিপূ ৬ষ্ঠ শতক) আগে অবশ্যই। মুশকিল হল, পরবর্তী কালে মহাভারত পুণর্লিখিত হয়েছে একাধিকবার। আর এই পুণর্লিখনের কাজ ব্যাপকভাবে হয়েছে গুপ্তযুগে। প্রতিবারই পুণর্লিখনের সময় সমসাময়িক প্রচলিত নানা লোককথা, কাহিনী এতে স্থান পেয়েছে। আর তাই প্রচলিত কাহিনী থেকে শ্রীকৃষ্ণের ঐতিহাসিক তথ্য খুঁজে বের করা আজ আর সহজসাধ্য নয়।
মথুরা শহর ও তার আশেপাশে প্রত্নতাত্ত্বিক খননেও এ ব্যাপারে তেমন কিছু আলোকপাত সম্ভব হয়নি। এখানে বলে রাখা ভাল, সুপ্রাচীন কাল থেকে মথুরা এক সমৃদ্ধশালী নগর। গোটা আর্যাবর্ত তো বটেই, ভারতের পূর্ব, পশ্চিম আর দক্ষিণ দিকে থেকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পথ সেই সময় এই নগরে এসে যুক্ত হয়েছিল। তাই মথুরা নগর ছিল একটি গুরুত্বপূর্ন বানিজ্য কেন্দ্র। ব্যবসায়িক কাজে বিভিন্ন দেশের মানুষ এখানে আসতেন। বিভিন্ন জাতির সংস্পর্শে এই সময় মথুরায় এক উন্নত শিল্পকলা গড়ে উঠেছিল।
সেই প্রাচীন কাল থেকে নগরটির অবস্থান প্রায় একই জায়গায়। বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। তাই সন্দেহ নেই, আজকের মথুরা নগরীর মাটির তলায় চাপা পড়ে আছে অনেক পুরাতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ। সেই সময়ের শিল্পকলার নির্দশন। স্বভাবতই সেগুলি অনুসন্ধান করা যায়নি। অদূর ভবিষ্যতে হবে, এমন সম্ভাবনাও কম।
খ্রীপূ ৬ষ্ঠ শতকের মথুরা শূরসেন প্রজাতন্ত্রের রাজধানী ছিল। পরবর্তীকালে নগরটি মৌর্য (খ্রীপূ ৪র্থ-২য় শতক) ও শুঙ্গ (খ্রীপূ ২য় শতক) রাজাদের অধিকারে আসে। এরপর নগরটি ইন্দো-গ্রিক রাজাদের অধিকারে এলেও (খ্রীপূ ১৮০-১০০) অল্প দিনের মধ্যেই তারা বিতাড়িত হয়। খ্রীপূ ১ম শতকে নগরটি বহিরাগত শক তথা মহাভারতে উল্লিখিত কম্বোজ জাতির অধিকারে আসা পর্যন্ত নগরটির শাসনভার স্থানীয় রাজাদের হাতে ছিল। প্রত্নতাত্তিক অনুসন্ধানে জানা যায় খীপূ ১ম শতকে নগরে কিছু জৈন অর্হৎ বাস করতেন।
ভাস্কর্য শিল্পে মথুরা চরম উন্নতি লাভ করে কুষাণ (খ্রীপূ ৬০-খ্রী ২৪০) আমলে। পুরুষপুর (বর্তমান পেশোয়ার) তাঁদের রাজধানি হলেও মথুরা কুষাণ সম্রাটদের দ্বিতীয় রাজধানির মর্যাদা লাভ করেছিল। কুষাণ সম্রাট কদফিস, কনিষ্ক, হুবিষ্ক, বসুদেব সকলেই বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। নগরে বৌদ্ধ মন্দিরের সঙ্গে অন্য মন্দিরও নির্মিত হয়েছিল। সেখানে প্রতিষ্ঠিত ছিল কুষাণ সম্রাটদের মূর্তি। সম্ভবত সম্রাট যখন পুরুষপুরে থাকতেন, তখন নগরবাসী এবং রাজকর্মচারীবৃন্দ নিয়মিত মন্দিরে উপস্থিত হয়ে তাঁদের আনুগত্য নিবেদন করতেন।
প্রত্নতাত্ত্বিক খননে এই নগরের সর্ব প্রাচীন নিদর্শন অর্থাৎ ১ম পর্যায় মোটামুটি খ্রীপূ ৬০০ বছর আগের। বর্তমান মথুরা শহরের সামান্য উত্তরে সেই সময়ের যে নিদর্শন পাওয়া গেছে তা নগর নয়, নিতান্তই গ্রাম। মাটির ঘর-বাড়ি। পোড়ামাটি আর হাড়ের তৈরি জিনিস। গয়নার পুঁতি। এছাড়া অল্প পরিমাণে তামা ও লোহার জিনিসপত্র।
নগরের ২য় পর্যায়ের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খ্রীপূ ৩য় শতকের। মথুরা এই সময় এক সমৃদ্ধ নগর। আয়তন সাড়ে তিন বর্গ কিমির মতো। নগরের তিন দিকে মাটির উঁচু প্রাচীর। প্রাচীরের বাইরে পরিখা। নগরের পূব দিকে যমুনা নদী থাকায় সেদিকে কোনও প্রাচীর ছিল না। নগরে অধিকাংশ বাড়ির দেয়াল মাটির হলেও রোদে রাখার জন্য ব্যবহার হয়েছে বাঁশ বা কাঠ। ময়লা জল বের হবার জন্য নর্দমার ব্যবস্থা ছিল। বেচা- কেনা তথা ব্যাবসার প্রয়োজনে নগরে তখন তামার মুদ্রার প্রচলন শুরু হয়েছে। নিত্য প্রয়োজনের জণ্য নগরের মানুষ সাধারণ মানের মৃৎপাত্রর সঙ্গে অতি সৌখিন নর্দার্ন ব্ল্যাক পলিশ্ড মৃৎপাত্রও (NBP) ব্যবহার হত। কালো রঙের চকচকে এই মৃৎপাত্রের পালিশ ছিল অত্যন্ত উঁচু মানের। প্রায় আয়নার মতো। যথেষ্ট দামী হবার কারণে কেবলমাত্র ধনী ব্যক্তিদের ঘরেই এগুলি দেখা যেত। এছাড়া যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া গেছে তামা এবং লোহার জিনিসপত্র। এগুলির ভিতর রয়েছে প্রচুর সংখ্যক তিরের ফলা, পোড়ামাটির নিত্যপ্রয়োজনীয় তৈজসপত্র, নানা আকারের পুতুল, জীবজন্তুর মূর্তি, ছোটদের জণ্য খেলনা। এছাড়া বড়দের পাশা প্রভৃতি খেলার ঘুঁটি। পোড়ামাটির দেবদেবীর মূর্তিও পাওয়া গেছে। এগুলি গৃহে স্থাপন করে নিত্য পূজা করা হত।
প্রাপ্ত জিনিসগুলি দেখে বোঝা যায়, নগরে নারীপুরুষ উভয়েই হাতে বালা পরত। গলায় পুঁতির মালা। কিছু পুঁতি যথেষ্ট দামি পাথরের। আনা হত বাইরে থেকে।
মেগাস্থিনিসের লেখায় এই সময়ের মথুরা নগরের কথা পাওয়া যায়। তিনি মথুরাকে মহানগরী আখ্যা দিয়েছেন।
মথুরা নগরের ৩য় ও ৪র্থ পর্যায়ের সময়সীমা খ্রীপূ ২০০ থেকে খ্রী ৩০০ বছর। নগর এই সময় আরও উন্নতি লাভ করেছে। মাটির বাড়ি থাকলেও পোড়া ইটের বাড়ির সংখ্যা অনেক বেড়েছে। পাকা বাড়ির ছাদের জন্য পোড়া মাটির টালির সঙ্গে পাকা মেঝের জন্য চুন-বালির ব্যবহার শুরু হয়েছে। নগরের পুরোনো প্রতিরক্ষা প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে সেগুলি আরও শক্তপোক্ত করা হয়েছে। বেড়েছে উচ্চতাও। অতিরিক্ত সুরক্ষার জন্য বহিঃপ্রাচীরের ভিতর একটি আভ্যন্তরীণ প্রাচীরও দেওয়া হয়েছে। নগরের ভিতরে ছিল পাথরে বাঁধানো দুটি বড় আকারের জলাধার। এই সময়ে নগরে বাড়ি ঘরের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পথে যানবাহনের সংখ্যাও বেড়েছে। তাই এই পর্যায়ে যানবাহনের মোড় ঘোরার জন্য বড়ির যাতে ক্ষতি না হয়, তাই রাস্তার মোড়ের বাড়িগুলির ভিতের কোণার দিকে অংশ খানিকটা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নগরের কেন্দ্রে একটি অংশ অতিরিক্ত প্রাচীরবেষ্টিত। সম্ভবত এই অংশে নগরের প্রশাসকদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। খ্রীপূ ৬ষ্ঠ শতকে অঙ্গুত্তরনিকায় গ্রন্থে মথুরা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, রাস্তাঘাট ধুলোয় ভর্তি। যাতায়াত ব্যবস্থা নিম্নমানের। আর মানুষের আর্থিক অবস্থা এতই মন্দ যে, সামান্য ভিক্ষাও মেলে না। অথচ খ্রী ৩য় শতকে ললিতবিস্তার গ্রন্থে সেই নগর প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, মথুরা নগরী আকার বেড়েছে। সমৃদ্ধ নগরীতে বহু মানুষের বাস। ভিক্ষা সেখানে অঢেল।
এই পর্যায়ে সন্ধান মিলেছে উন্নত মানের ও নকশাযুক্ত প্রচুর সংখ্যক পোড়ামাটির জিনিসপত্র, শীলমোহর, মুদ্রা, পুঁতির দানা। এছাড়া এই সময়ের শিল্পকলায় তৈরি তামা এবং পাথরের মূর্তি। প্রচুর সংখ্যায় জৈন এবং বুদ্ধ মূর্তির সঙ্গে নানা ভঙ্গিতে অপ্সরা মূর্তিও পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত প্রস্তর লিপির সংখ্যাও কম নয়। এগুলি সেই সময়ের নগরের অধিবাসীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে আলোকপাত করে। জানা যায় নগরের নর্তকী, অভিনেতা ও সঙ্গীতশিল্পীদের কথা। বাদ্যযন্ত্রর মধ্যে ছিল বীণা, শঙ্খ, বাঁশি, মাদল, জয়ঢাক প্রভৃতি। কিন্তু প্রস্তর মূর্তিতে রয়েছে নাচের ভঙ্গিতে নর্তকী, পোষা প্রাণী এবং পাখি নিয়ে বিনোদনরত নাগরিক। মল্লযুদ্ধ এবং শিকার যাত্রা ছিল বিনোদনের দুটি প্রিয় বিষয়।
মথুরা নগরে মোটামুটি খ্রী ৬ষ্ঠ শতক পর্যন্ত প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান সম্ভব হয়েছে। আগেই বলা হয়েছে, বর্তমান শহরের অবস্থানের কারণে এখানে বড় ধরনের কোনও খনন করা সম্ভব হয়নি। তাই ৬ষ্ঠ শতকের পরে শহরে নাগরিকদের জীবনযাত্রার কথা সামান্যই জানা গেছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতুলতার কারণে মথুরা নগরে বহিরাগত শত্রুর আক্রমণ হয়েছে বহুবার। ক্ষতিগ্রস্ত নগরী অবশ্য সামনে উঠেছে অল্প দিনের মধ্যেই। বহিরাগত কুষাণ, শক, কম্বোজ প্রভৃতি জাতি এই নগর কয়েক শত বছর শাসন করেছে। প্রথম বড় মাপের আঘাত নগরের উপর নেমে আসে মুসলমান আমলে। ১৮১৮ খ্রী গজনীর সুলতান মামুদ এই নগর লুন্ঠন করেছিলেন। একাধিক মন্দির তাঁর হাতে ধ্বংস হয়েছিল। সুলতান মামুদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে দিল্লির সুলতান সিকন্দর লোদিও (১৪৯৮- ১৫১৭) মথুরা লুন্ঠন করে একাধিক মন্দির ও দেবদেবীর মূর্তি ধ্বংস করেছিলেন। বিখ্যাত কেশবদেব মন্দিরটিও তাঁদের হাতে ধ্বংস হয়েছিল।
কেশবদেব মন্দির
মথুরায় শ্রীকৃষ্ণের জন্ম কংসর কারাগারে। বলা হয়, পরবর্তীকালে সেই স্থানের উপর এই কেশবদেব মন্দির নির্মিত হয়েছিল। প্রবাদ আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে কৃষ্ণের প্রপৌত্র বজ্রনাভ এই স্থানে প্রথম মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীকালে গুপ্ত সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য আনুমানিক ৪০০ খ্রী এখানে বিশাল এক মন্দির তৈরি করে দেন। প্রবাদ, মন্দিরটির সৌন্দর্য এত মনোগ্রাহী ছিল যে, ছবি বা ভাষায় তা বর্ণনা সম্ভব ছিল না। সুলতান মামুদ ১০১৭ খ্রী এটি ধ্বংস ও লুন্ঠন করেন। ১১৫০ খ্রী পুরোনো মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের উপর নতুন একটি মন্দির তৈরি হয়। শ্রী চৈতন্যদেব এই মন্দির দর্শনে এসেছিলেন। ১৬ শতকে দিল্লির সুলতান সিকন্দর লোদির হাতে মন্দিরটি ধ্বংস হয়। পরবর্তীকালে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের সেনাপতি রাজা বীর সিং বুন্দেলা এখানে ২৫০ ফুট উঁচু একটি মন্দির তৈরি করে দেন। ধ্বংস করা হয় সেই মন্দিরটিও। ১৬৫০ খ্রী কাজটি করেছিলেন মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব। তিনি মন্দিরটি ধ্বংস করেই ক্ষান্ত হননি। পুরোনো মন্দিরে মালমশলা দিয়ে সেই স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। মসজিদটি আজও যথাস্থানে বিদ্যমান।
এই মসজিদটির কাছে পণ্ডিত মদন মোহন মালব্যর উদ্যোগে ১৯৬৫ খ্রী বর্তমান মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে। নতুন এই মন্দিরটি কৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দির নামেও পরিচিত।
নতুন এই মন্দিরের পাশে মসজিদের গায়ে কারাগার কক্ষের আকারে একটি ঘর রয়েছে। বলা হয়, এই ঘরেই কৃষ্ণর জন্ম হয়েছিল।
ঔরঙ্গজেবের তৈরি মসজিদটি কাটরা মসজিদ নামেও পরিচিত। কাছেই কাটরা ঢিপি খনন করে হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দিরের ভগ্ন পাথর মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। অনুমান, একাধিক হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দিয়ে মসজিদের ভিত তৈরি হয়েছিল।
শ্রীকৃষ্ণের নামাঙ্কিত মন্দির বর্তমান মথুরায় রয়েছে বেশ কয়েকটি। কিন্তু কৌতুহলোদ্দীপক ব্যাপার হল প্রত্নতাত্ত্বিক খননে শ্রীকৃষ্ণের মূর্তি বা মন্দিরের ভাগ্নাবশেষ তেমন পাওয়া যায়নি। মথুরার বিখ্যাত সংগ্রহশালায় সংগৃহীত বস্তুর অধিকাংশই বৌদ্ধ বা জৈণ ধর্ম সম্পর্কিত শিল্পকলা এবং প্রস্তরলিপি।
মনে হয়, শ্রীকৃষ্ণের উপর দেবত্ব আরোপের ব্যাপারটা গুপ্তযুগের আগে চুড়ান্ত হয়নি। মনে রাখা দরকার, গুপ্ত সম্রাটদের পৃষ্ঠপোষকতার পুরাণ, মহাকাব্য প্রভৃতি ধর্মগ্রন্থগুলির এই সময় ব্যাপক সংস্কার হয়েছিল। মন্দির প্রতিষ্ঠা করে শ্রীকৃষ্ণের পূজা সম্ভবত ওই সময় থেকে শুরু হয়। ধীরে ধীরে তা জনপ্রিয়তা লাভ করে। দূর্ভাগ্য, বর্তমান শহরে ঘন জনবসতির কারণে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে ওই সময়ের উপর তেমন আলকপাত করা যায়নি। কাটরা মসজিদ অঞ্চল, যেটি কৃষ্ণের জন্মস্থান বলে বিশ্বাস, সেখানেও যদি প্রত্নতাত্ত্বিক খনন করা হতো, তাহলেও কিছু তথ্য পাওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু ঘন জনবসতি এবং বর্তমান কাঠামোগুলির কারণে তা হয়নি।
প্রসঙ্গত বলা যায় শ্রীকৃষ্ণের এই জন্মস্থানটি নিয়ে অল্পবিস্তর বিতর্ক বর্তমান। কৃষ্ণ জন্মভূমির অল্প দূরে রাস্তার উপর চমৎকার ভাবে বাঁধানো একটি পুকুর আছে। এটি পোতরা কুণ্ড নামে পরিচিত। প্রবাদ, শ্রীকৃষ্ণের জন্মের পরে মা দেবকী এই কুন্ডের জলে তাঁর পরিধেয় বস্ত্র পরিষ্কার করেছিলেন। এই কুন্ডের উত্তর দিকে একটি মন্দির আছে। মন্দিরে বাসুদেব, দেবকী ও চতুর্ভূজ শ্রীকৃষ্ণের মূর্তি রয়েছে। অনেকের বিশ্বাস, এই স্থানটি শ্রীকৃষ্ণের প্রকৃত জন্মস্থান। কংসের কারাগার এখানেই অবস্থিত ছিল। ১৯৯২-এ অযোধ্যা কান্ডের পর শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি হবার পর থেকে এই মন্দিরে ভক্তদের ভিড় ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে।
দ্বারকাধীশ মন্দির
দ্বারকাধীশ মন্দির শহরের প্রাচীনতম এবং প্রধান মন্দির। ১৮১৪ খ্রী গোয়ালিয়রের খাজাঞ্চি শেঠ গোকুলদাস মন্দিরটি তৈরি করেন। যমুনার তীরে সরু গলির ভিতর বিশাল আকার মন্দির। নীচে দোকানপাট। পূজোর সরঞ্জাম, ফুল-মিষ্টির দোকান। বেশ ঘিঞ্জি পরিবেশ। সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠলেই প্রশস্ত চত্বরের মাঝে দ্বারকাধীশের মন্দির। জন্মভূমি মন্দিরের মতো এখানে টুরিস্টের ভিড় তেমন নেই। তবে পূণ্যার্থীর ভিড় সব সময়। মন্দিরের সামনে যমুনার বিখ্যাত বিশ্রাম ঘাট। ঘাটটি শেঠ গোকুলদাসই বাঁধিয়ে দিয়েছিলেন। কথিত আছে কংসকে বধ করার পর শ্রীকৃষ্ণ এই ঘাটে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করেছিলেন। ঘাটে ভ্রমণার্থীর অপেক্ষায় সাজানো-গোছান কয়েকটি ছোটগোছের নৌকো। ভাড়া করে যে কেউ যমুনার তীরে মথুরার ঘাটগুলি ঘুরে দেখে নিতে পারে। দোল, জন্মাষ্টমী আর দীপাবলীর সময় বড় উৎসব হয় এখানে। জাঁকজমক করে সাজানো হয় মন্দির।
মথুরার সিংহ স্তম্ভশীর্ষ
মথুরায় প্রাপ্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন লণ্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রাখা আছে। নিদর্শনটি লাল বেলে পাথরের জোড়া সিংহাকৃতি এবং বৌদ্ধ ধর্মের ত্রিরত্ন চিহ্নিত একটি স্তম্ভশীর্ষ। এটি ১৮৬৯ খ্রী ভগবান লাল ইন্দ্রজীর তত্ত্ববধানে মথুরার সপ্তঋষি ঢিপি খননকালে আবিস্কৃত হয়। সম্ভবত রাজা মুকি তথা মোগ-এর (যাঁর রাজধানী ছিল তক্ষশীলায়) মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে মথুরা নগরে এটি স্থাপিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে এই স্তম্ভশীর্ষটির উপর খরোষ্টী লিপিতে প্রাকৃত ভাষায় বুদ্ধের দেহাবশেষের উপর একটি স্তূপ নির্মানের কথা খোদাই করা রয়েছে। এই লেখাটির জন্যই নির্দশনটি সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
লিপির প্রথম কয়েকটি লাইন-
মহাক্ষত্রভস রাজলুস (মহারাজ রাজলুসের) অগ্রমহিষী ঐশি কামুই/ কম্বোজিকা (প্রথম রানি ঐশি কমুই), ধিদা খরস্তস যুবারানা (যুবরাজ খরস্তর দুহিতা তথা কন্যা), মাদ নাদসিকাসাতয়ে (নাদসিকাসা-র মাতা)।
লিপির পুরোনো পাঠ কিছু ভিন্ন। সেখানে বলা হয়েছিল, বৌদ্ধ স্তূপের প্রধান দাতা মহাক্ষত্রপ রাজুবুল-এর প্রধান মহিষী নাদাদিয়াকা/ নাদাসিয়াকা ঐশি কামুই-এর কন্যা এবং যুবরাজ খরস্ত-র মাতা।
পুরোনো পাঠ সম্ভবত সঠিক নয়। কারণ প্রপ্ত মুদ্রা থেকে জানা যায়, যুবরাজ খরস্তর পিতা হলেন অর্ত। সেক্ষেত্রে রানি নাদাসিয়াকা-র প্রথম স্বামী অর্ত। পূর্ব স্বামী অর্তর মৃত্যুর পরে তিনি রাজবুলকে বিবাহ করেন।
লেখার শুরুতে বর্ণিত পাঠটি ঐতিহাসিক Dr Sten Konow-এর। তাঁর পাঠ অনুসারে, স্তূপ নির্মাণের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ঐশি কামুই বা কম্বোজিকা মহাক্ষত্রপ রাজবুলের প্রধান রানি। তিনি যুবরাজ খরস্তর কন্যা এবং নাদসিয়াকার মাতা।
অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই তাঁর সঙ্গে সহমত। কারণ যুবরাজ খারস্ত এবং রাজকুমারী ঐশী-র নামের অন্তে কমুই বা কম্বোজিকা থাকায় মনে হয় ঐশী কমুই যুবরাজ খরস্তর মাতা নয় কন্যা।
নতুন পাঠ অনুসারে লিপিতে বলা হয়েছে, মথুরার ইন্দো-শক শাসক মহাক্ষত্রপ রাজবুলের অগ্র মহিষী খরস্ত কমুই (কম্বোজিকা)-এর কন্যা ঐষি (ঐষর্য?) কমুই-এর দান করা অর্থে স্তূপটি নির্মিত হয়েছিল। আরও বলা হয়েছে, মহাক্ষত্রপ রাজবুলের উত্তরাধীকারী ছিলেন তাঁর পুত্র শোডাস। তিনি মথুরায় তাঁর রাজধানী স্থাপন করেছিলেন।
সিংহকৃতি এই স্তম্ভশীর্ষের বিভিন্ন স্থানে খোদাই করা লেখাটিকে বিশেষজ্ঞরা মোটামুটি ৫৭টি অংশে বিভক্ত করেছেন। তার কিছু একটি মাত্র শব্দ সংবলিত। কিছু একাধিক। কিছু অংশের পাঠোদ্ধার হয়েছে। লেখাটি সেই সময়ে ভারতে শক শাসকদের বিষয়ে কিছু তথ্য দেয়। সেই প্রসঙ্গে যাবার আগে কৌতূহলি পাঠকের জন্য লেখাটির আরও কিছু অংশ উদ্ধৃত করা যেতে পারে।
১ ভগভদো শাকমুণিস বুধস (ভগবান শাক্যমুণি বুদ্ধর), স নিসিম শরীরা প্রদিথভিদ (পবিত্র দেহাবশে-এর প্রতি)।
২ মহাক্ষত্রভস রাজলুস পুত্র (মহাক্ষত্রপ রাজলুসের পুত্র) শুডেসে ক্ষত্রভে (ক্ষত্রপ শোডাস।)
৩ ভিক্ষুস শ্রাবস্তীভদোস (ভিক্ষু শ্রাবস্তীভদ)।
৪ মহাক্ষত্রভস কুসুলুয়কস পতিকস মিভকিস মিইকাস ক্ষত্রভস পূজে (ক্ষত্রপ মিইকি মহাক্ষত্রপ কুসুলক পতিকের প্রতি শ্রদ্ধা ও আনুগত্য নিবেদন করেছেন)।
৫ সর্ববুদ্ধন পূজে ধমস পূজে সঘস পূজে (সমস্ত বুদ্ধর প্রতি নিবেদিত পূজা বা প্রণাম, ধর্মকে প্রণাম, সংঘকে প্রণাম)।
৬ সর্বস শতকস নাস পূজেই (পরলোকগত সমস্ত শকবৃন্দকে পূজা বা প্রণাম)।
উল্লেখিত খরস্ত-র নামাঙ্কিত যে মুদ্রা পাওয়া গিয়েছে তা থেকে জানা যায়, ক্ষত্রপ খরস্ত অর্ত-র পুত্র (ক্ষত্রপস খরস্তস অর্তস পুত্র)। সম্প্রতি পাকিস্তানের বাজৌর অঞ্চলের সিনকোটে রৌপ নির্মিত একটি বৌদ্ধ পূতাস্থি পাত্র পাওয়া গেছে। পাত্রের গায়ে “খরস্তস” অর্থাৎ খরস্তর শব্দটি লিপিবদ্ধ রয়েছে। এটির নিরুপিত কাল খ্রী পূ ১ম শতকের শেষ পর্ব। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মথুরা সিংহশীর্ষে উল্লেখিত যুবরাজ খরস্ত এবং এই খরস্ত একই ব্যক্তি। বিভিন্ন সূত্র থেকে আবার জানা যায় অর্ত মহারাজা মোগ-এর অগ্রজ তথা জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা। আবার লিপিতে উল্লেখিত মহাক্ষত্রপ কুসুলক পতিক-এর একটি তাম্র শাসন পাওয়া গেছে তক্ষশীলায়। মথুরা সিংহশীর্ষের এই লেখাটি তাই এদেশের অতীত ইতিহাসের একটা সময় উন্মুক্ত করে দেয়। খ্রী ১ম শতকে বহিরাগত শক জাতি ভারতের উত্তর পশ্চিম তথা গান্ধার, তক্ষশিলা ছাড়িয়ে মথুরা অধিকার করে রাজত্ব করছে।
অথচ এই সময়ে রচিত মহাকাব্যে (মহাভারতের রচনাকাল খ্রীপূ ৪০০- ৪০০ খ্রীষ্টাব্দ। রামায়ন খ্রীপূ ২০০-২০০ খ্রীষ্টাব্দ) কিন্তু মথুরা শক নয় রয়েছে কম্বোজ জাতির কথা। তাই ঐতিহাসিক স্টেইন-এর মতই সঠিক মনে হয়। তিনি আলোচ্য স্তম্ভশীর্ষে উৎকীর্ণ “কামুই” এবং মহাভারত ও পুরাণে উল্লেখিত “কম্বোজ” শব্দ দুটি অভিন্ন মনে করেন। এই সময়ে মথুরায় অবস্থিত শক শাসকবৃন্দ তাঁদের নামের অন্তে কমুই তথা কম্বোজ উপাধি ব্যবহার করতেন।
কম্বোজ জাতি
মহাভারত এবং পুরাণ অনুসারে কম্বোজ জাতি গান্ধার এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতে রাজত্ব করত। বিশেষজ্ঞদের অনেকের অভিমত আলোচ্য লেখ থেকে মনে হয় শক গোষ্ঠীভুক্ত রাজপুরুষদেরও কম্বোজ বলা হয়।
মহাভারত ও পালি সাহিত্যে কম্বোজ জাতিকে ভাল অশ্বারোহী যোদ্ধা এবং উন্নত প্রজাতির অশ্ব প্রজননে সক্ষম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ভীষ্ম এবং শান্তিপর্বে বলা হয়েছে কম্বোজ জাতি উত্তরাপথের মানুষ। তারা ম্লেচ্ছ অথবা অসুর। তাদের বাস আর্যভূমির বাইরে। এখানে কম্বোজ জাতিকে যবন শক হুন কিরাত প্রভৃতি জাতির সমগোত্রীয় বলা হয়েছে। বলা হয় কম্বোজ জাতি প্রজাতান্ত্রিক। তাদের রাজ্যগুলি গণরাজ্য।
প্রাচীন ভারতে কম্বোজ দেশের অশ্বের সুখ্যাতি বারবার করা হয়েছে। মহাকাব্য পুরাণ সংস্কৃত বৌদ্ধ এবং জৈন সাহিত্যে কম্বোজ দেশের অশ্বের প্রশংসা রয়েছে।
আলেকজেন্ডার ভারত আক্রমণ কালে কম্বোজ গোষ্ঠীভুক্ত অশ্বায়ন ও অশ্বকায়ন(সম্ভবত অশ্ব ব্যবসায় যুক্ত থাকার কারণে তারা এই নামে সাধারণের মধ্যে পরিচিত ছিল) জাতির কাছ থেকে প্রবল বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন। যুদ্ধের সংকট সময়ে কম্বোজ মেয়েরাও স্বামীর পাশে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে মৃত্যুবরণ করেছিল।
অশ্বায়নরা যুদ্ধক্ষেত্রে তিরিশ হাজার অশ্বরোহী সৈন্য ৩০টি রণহস্তী এবং কুড়ি হাজার পাদাতিক সেনা হাজির করেছিল। আর অশ্বকায়নরা ভাল গোপালক ছিল। যুদ্ধের পর আলেকজেন্ডার তাদের উন্নত জাতের ২৩০০০০ বলদ লুঠ করে কৃষিকাজের জন্য ম্যাসিডনিয়ায় পাঠাতে আদেশ দিয়েছিলেন।
এই দুই জাতির রাজধানী সুরক্ষিত নগরী মশকাবতী এবং অণ্ডক জয় করতে তাই আলেকজেন্ডারকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল। যুদ্ধজয়ের পর আলেকজেন্ডারের আদেশে অশ্বকায়নপ্রজাতন্ত্রের ৭০০০ সৈন্যকে হত্যা করা হয়েছিল।
যাই হোক, মহাভারতে এই সময় মথুরায় যবন শাসকদের কথাও আছে। যবন বলতে সাধারণত বিদেশি গ্রিকদের বোঝান হলেও এক্ষেত্রে বিদেশি কম্বোজ তথা শক জাতিকেও বোঝান হতে পারে। পরবর্তীকালে শকদের বিতাড়িত করে মথুরা কুষাণ অধিকারে আসে। দুই জাতির মধ্যে চেহারায় মিল থাকার কারণে তাদেরও কম্বোজ আখ্যা দেওয়া সম্ভব। আর পুরাণে বিদেশি জাতিকে তো অধিকাংশ সময় যবন আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
ভারতে শক জাতি
ফিরে আসি শক শাসকদের কথায়। উপরে বলা হয়েছে ক্ষত্রপ খরস্ত ছিলেন অর্তর পুত্র। আর অর্ত ছিলেন মহারাজ মোগ-এর ভাই। এই মোগ (খ্রীপূ ৮৫-৬০) উত্তর- পশ্চিম ভারতের গন্ধার অঞ্চলে প্রথম শক রাজ্য স্থাপন করেছিলেন। ক্রমে উত্তর-পশ্চিম ভারতের এক বিস্তৃত অঞ্চল শক জাতির অধিকারে এসেছিল। শেষ শক রাজা ছিলেন ক্ষত্রপ রুদ্রসিংহ-৩। তিনি ৩৯৫ খ্রীঃ পর্যন্ত বর্তমান ছিলেন।
মহারাজা মোগ-এর রাজধানী ছিল তক্ষশিলার সিরকাপ নগরে। তাঁর প্রচুর মুদ্রা পাওয়া গেছে। এগুলির বেশিরভাগই তক্ষশিলার টাঁকশালে তৈরি। মোগ তাঁর মুদ্রাগুলি সেই সময় ওই অঞ্চলে প্রচলিত গ্রিক মুদ্রার অনুকরণে তৈরি করেছিলেন। ইন্দো-শক রাজা মোগ ঝিলাম নদীর পূর্ব দিকে গ্রিকদের অধিকারে থাকা পাঞ্জাব জয় করতে পারেননি। মোগের মৃত্যুর পর গ্রিকরা তাঁর রাজ্যের অধিকাংশ অধিকার করে নেয়।
মনে করা হয় মহারাজা মোগ প্রথম জীবনে একজন কৃতি শক সেনাপতি ছিলেন। ইন্দো-গ্রিক কোনও রাজা তাঁকে সেনাপতি পদে নিয়োগ করেন বা কোনও যুদ্ধের জন্য ভাড়া করে আনেন। উচ্চাকাঙ্খী মোগ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে অতি অল্প দিনের মধ্যে গ্রিকদের কাছ থেকে অনেকটা অঞ্চল অধিকার করে রাজা হয়ে বসেন।
তক্ষশিলায় যে তাম্রলিপি পাওয়া গেছে। তাতে লিখিত আছে ৭৮ বর্ষে মহারাজা (মহারায়) মোগের অধিনস্ত সামন্তরাজা লিয়ক কুসুলকের পুত্র এবং চক্ষু-র (সম্ভবত বর্তমান তক্ষশিলার কাছে চাচ নামক স্থান) শাসক ক্ষত্রপ পতিক প্রভুত দানধ্যান করেছিলেন। এই কুসুলক পতিক-এর নাম আলোচ্য মথুরার স্তম্ভশীর্ষে উল্লেখ রয়েছে। ব্রতীন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের মতে লেখাটির কাল খ্রীপূ ১৭০।
মোগের এক ধরণের মুদ্রায় রানি মাচেন-এর উল্লেখ রয়েছে। এই রানি সম্ভবত কোনও ইন্দো-গ্রিক কন্যা।
আর্তেমিডোরস নামে এক ইন্দো-গ্রিক রাজা তাঁর মুদ্রায় নিজেকে মোগের পুত্র বলে পরিচয় দিয়েছেন। মনে হয় পাশাপাশি থাকার কারণে শক এবং গ্রিক দুই জাতির মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। তবে তাঁদের সন্তান- সন্ততিরা নিজেদের অধিকতর উন্নত গ্রিক বলে পরিচয় দিত। পিতা শক হলেও উল্লেখিত আর্তেমিডাস নিজেকে গ্রিক বলতেন।
মোগের অনেক মুদ্রায় সিংহ, হস্তি এবং বৌদ্ধ ধর্মের নানা চিহ্ন দেখা যায়। মুদ্রায় ধ্যানী বুদ্ধ মোগই প্রথম প্রচলন করেন। সম্ভবত মোগের রাজত্বকালে ওই অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্ম যথেষ্ট বিস্তার লাভ করেছিল।
মনে করা হয় রাজবুল পূর্ব পাঞ্জাবের শেষ গ্রিক রাজা স্ট্রাটো-২ এবং তাঁর পুত্রকে যুদ্ধে পরাজিত এবং হত্যা করে তাঁদের রাজ্য জয় করেছিলেন।
ইন্দো-শক মহারাজ শোডাস মহারাজা রাজবুলের পুত্র। খ্রিষ্টীয় ১ম শতকে তিনি মুথুরার শাসক ছিলেন। সম্ভবত তিনি শক-পার্থীয়ান রাজা গন্ডফারেস-এর অধীনস্ত ছিলেন।
পরবর্তীকালে গান্ধার অঞ্চল কুষাণ অধিকারে এলে শক জাতি গুজরাট এবং দক্ষিন ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। শক ক্ষত্রপ নাহপান এই পর্বের শাসক। তিনি খ্রিষ্টীয় ১ম শতকে পশ্চিম ভারতে এক বিস্তৃত অঞ্চলের অধিপতি ছিলেন। তাঁর মুদ্রা এবং তিনটি লেখ পাওয়া গিয়েছে। পেরিপ্লাসে ভৃগুকচ্ছর শাসক ন্যাম্বানুসকে নহপান বলে সনাক্ত করা হয়েছে। নহপান সাতবাহনদের প্রবল প্রতিদ্বন্দী ছিলেন এবং সাতবাহনদের বিস্তৃত এলাকা করায়ত্ব করেছিলেন। তাঁর নাসিক লেখ থেকে জানা যায়, ভৃগুকচ্ছ (ব্রোচ), দশপুর (মধ্যপ্রদেশের মান্দাশোর) শূর্পারক (মুম্বাইয়ের উপকন্ঠে সোপারা) এবং অবশ্যই গোবর্ধন বা নাসিক অঞ্চল তাঁর অধীনস্ত ছিল।
নহপান চন্দনসাতকর্ণির (স্যান্ডানোস) রাজত্বকালে সাতবাহন রাজাদের অধীন গুরুত্বপূর্ণ কল্যাণ বন্দর অবরোধ করেছিলেন এবং বিদেশি জাহাজকে তাঁর অধীন বারুগাজা বন্দর ব্যবহার করতে বাধ্য করেছিলেন। তাই পেরিপ্লাসে কল্যাণ বন্দরের উল্লেখ থাকলেও পরবর্তীকালে টলেমির বইতে (আনুমানিক ১৫০ খ্রীঃ) কল্যান বন্দরের কথা নেই।
নহপান ১২৪ খ্রীঃ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন ছিলেন।
শোডাসের নামাঙ্কিত শিলালিপি
১৯৭৯ সালের এক বিকেলে মথুরা শহরের অদূরে অখ্যাত মির্জাপুর গ্রামের ছেলেরা দিল্লি- আগ্রা সড়কের ধারে এক খণ্ড পোড়া জমি খেলার মাঠ তৈরির জন্য সমান করছিল। কোদালের ফলায় উঠে এল ৯৬ সেমি দৈর্ঘ্য এবং ৪৪ সেমি প্রস্তের আয়তকার এক বেলে পাথরের ফলক। পাথরের গায়ে দুর্বোধ্য অক্ষরে উৎকীর্ণ পাঁচ লাইনের একটি লেখ।
তেমন গুরুত্ব না দিয়ে ছেলেরা ফলকটি ফেলে রেখেছিল মাঠের পাশে। হয়তো ওই ভাবেই পড়ে থাকত আরও কিছু দিন। কিন্তু ব্যাপারটি গ্রামের শিব মন্দিরের পুরোহিত বাবা বালকৃষ্ণ দাসের নজরে এল। উৎসাহী মানুষটির উদ্যোগে শিলা ফলকটি পৌছে গেল মথুরা সংগ্রহশালায়। ফলকটি বর্তমানে সেখানেই রাখা আছে। বিশেষজ্ঞরা কুষাণ-ব্রাহ্মী হরফে উৎকীর্ণ মিশ্র সংস্কৃতে লেখা লেখাটির পাঠোদ্ধারও করেছেন। কুষাণ এবং কুষাণ পূর্ববর্তী সময়ে মথুরায় তথাকথিত হিন্দু তথা ব্রাহ্মণ্য ধর্মালম্বী অভিজাত মহলে অধিক পরিমাণ সংস্কৃত ঘেঁষা এই প্রাকৃত ভাষার প্রচলন ছিল। প্রায় একই সময়ে লিখিত সিংহ তম্ভশীর্ষের লেখ কিন্তু অনেক বেশি প্রাকৃত। সেটি বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কিত বলেই কি? মনে রাখা দরকার, সেই সময় দেশের সাধারন মানুষের অধিকাংশই ছিল বৌদ্ধ ধর্মালম্বী। সেখানে বর্তমান লেখ ফলকটি যিনি স্থাপন করেছিলেন, তিনি হিন্দু তথা ব্রাহ্মণ্য ধর্মাবলম্বী।
লেখাটিতে বলা হয়েছে, মহাক্ষত্রপ শোডাস-এর কোষাধ্যক্ষ শৈগ্রভ গোত্র এবং ব্রাহ্মন কূলসম্ভূত মূলবসু-র পত্নী এবং বসু-র মাতা কৌশিকী পাক্ষ কর্তৃক একটি উদ্যান, বিশ্রামের জন্য উদ্যানগৃহ, দুইটি পুষ্করিণীর (পুকুর) মধ্যে পূর্ব দিকেরটি, একটি কূপ, স্তম্ভ ও প্রস্তর নির্মিত শ্রী প্রতিমা (লক্ষ্মীদেবী ?) এবং এই শিলাপট্ট প্রতিষ্ঠিত হল।
কৌতূহলি পাঠকের জন্য পাঁচ লাইনের মূল লেখাটির দিকে সামান্য নজর দেওয়া যেতে পারে। সম্রাট অশোক বা সিংহ স্তম্ভশীর্ষের লেখর ভাষার সঙ্গে এটির পার্থক্য সহজেই লক্ষ্য করা যায়।
১ সভমিস্য মহাক্ষত্রপস্য শোডাসস্য গরযভরস্য ব্রাহ্মণস্য (সভমি মহাক্ষত্রপ শোডাস-এর ব্রাহ্মন কোষাধ্যক্ষ)।
২ সৈগ্রভস্য গোত্রস্য মুলবসুস্য ভার্যায়ে বসুস্যয়া মাতরে (শৈগ্রভ গোত্রভূক্ত মূলবসু-র ভার্যা (পত্নী) ও বসু-র মাতা)।
৩ কৌশিকীয়ে পক্ষকায়ে করিতা পুষ্করিণী ইমাসম ইয়ামদ পু।
৪ সকরনীনাম পূর্ব পুষ্করিণী আরামো সভা উদাপন স্তম্ভ শিরিত্র প্রতিমা।
৫ ইয় শিলাপট্ট চ।
খ্রিপূ ১ম শতকের অন্তিম পর্বে উৎকীর্ণ লেখাটিতে শক শাসক শোডসকে মহাক্ষত্রপ বলা হয়েছে। নামের আগে যুক্ত হয়েছে “সভমি”। কিন্তু সিংহ স্তম্ভশীর্ষে তিনি শুধুই ক্ষত্রপ। সন্দেহ নেই, পরে তিনি মহাক্ষত্রপ উপাধি নিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে কিছু তথ্যও পাওয়া যায়।
মথুরা জেলার মোরা গ্রাম থেকে স্যার ক্যানিংহাম ১৮৮২ খ্রী একটি বড় আকারের প্রস্তর ফলক উদ্ধার করেন। ফলকটি ১৯০৮ সালে মথুরা সংগ্রহশালায় স্থানান্তরিত হয়। ফলকের লেখতে মহাক্ষত্রপ রাজবুলের রাজত্বকালে পাঁচ জন বৃষ্ণি বীরপুরুষের মূর্তি স্থাপনের কথা আছে। তাঁর পুত্রের নামের শুরুতে “সভমি” কথাটি অটুট থাকলেও পরবর্তী অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পাঠ করা সম্ভব হয়নি। তবে যেহেতু শোডাস ব্যতীত রাজবুলের অন্য কোনও পুত্রের কথা পাওয়া যায় না, তাই বিশেষজ্ঞদের অভিমত “সভমি” শব্দটির পরের অংশ মহাক্ষত্রপ শোডাস হওয়াই সম্ভব। প্রমান আরও আছে। ১৮৮৮- ১৮৯১ খ্রী লক্ষ্ণৌ মিউজিয়ামের কিউরেটর ডঃ ফুরার-এর তত্ত্বাবধানে কঙ্কালীটিলায় খননের সময় আবিষ্কৃত একটি জৈন অয়াগপট্ট (মনস্কামনা রক্ষায় নিবেদিত জৈন প্রস্তর ফলক) “মহাক্ষত্রপ শোডাস” এর রাজত্বকালে অর্হৎদের প্রতি পূজা নিবেদনের জন্য পট্টটি প্রতিষ্ঠার কথা লিখিত আছে।
Brajdicovery.org থেকে এই বিষয়ে একটি চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ১৯১৩ খ্রী পন্ডিত রাধাকৃষ্ণ তাঁর মথুরা ক্যান্টনমেন্টের বাসস্থানের কাছে একটি কুয়োর পাথরে বাঁধানো অংশে একটি লিপি সংবলিত প্রস্তর ফলক পেয়েছিলেন। ফলকটি ঔরঙ্গজেবের কাটরা মসজিদ অঞ্চল থেকে সংগৃহীত। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার, শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থানে নির্মিত প্রাচীন মন্দির এই কাটরা মসজিদ অঞ্চলে অবস্থিত ছিল। প্রাপ্ত ফলকটি কোনও মন্দিরের দরজার বাজুর অংশ। পদ্ম এবং লতাপাতা অঙ্কিত ফলকে রয়েছে কয়েক লাইন লেখ। তার উপরের অংশ অস্পষ্ট হয়ে গেলেও নিচের অংশ ভাল অবস্থায় থাকায় পাঠ করা সম্ভব হয়েছে। তাতে লেখা আছে, “কৌশীকী পাক্ষর পুত্র বসু ভগবান বসুদেব-এর মন্দিরে একটি দ্বার এবং আবেষ্টনী নির্মাণ করালেন। ভগবান বসুবেদ (শ্রীকৃষ্ণ)সভমি মহাক্ষত্রপ শোডাস-এর মঙ্গল করুন।”
পাথরের এই ফলকটি বর্তমানে কোথায় আছে, বা ১৯১৩ সালে পণ্ডিত রাধা কৃষ্ণর মূল রিপোর্টের উৎস কোথায়, সাইটে তার উল্লেখ নেই। তথ্যটি সঠিক হলে সন্দেহ নেই, এটি শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে সর্বপ্রাচীন (খ্রীপূ ১ম শতক) ঐতিহাসিক প্রামান। প্রমান শোডাসের “সভমি মহাক্ষত্রপ” উপাধি সম্পর্কেও। আলোচ্য শোডাস ফলকে উল্লেখিত বসু এবং তাঁর মাতা কৌশিকী পাক্ষর নাম দুটিও এখানে পাওয়া যাচ্ছে।
প্রত্নক্ষেত্র কঙ্কালীটিলা
আগেই বলা হয়েছে বর্তমান শহরের কারণে মথুরায় ব্যাপক প্রত্ন অনুসন্ধান করা যায়নি। যে কয়টি স্থানে অনুসন্ধান সম্ভব হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে-
১। ভূতেশ্বরটিলা।
এখানে খ্রী ২ শতকের একটি বৌদ্ধ স্তূপের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে।
২। বর্তমান কালেক্টর হাউসের কাছে জামালপুর টিলা।
এখানেও একটি বৌদ্ধ স্তূপের সন্ধান মিলেছে। এই স্থানে প্রাপ্ত ভগবান বুদ্ধের তিনটি অপূর্ব সুন্দর মূর্তি উল্লেখযোগ্য। একটি রাখা হয়ছে দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে, অন্য দুটি মথুরা সংগ্রহশালায়। বস্তুত মথুরা সংগ্রহশালায় রক্ষিত অধিকাংশ ভাস্কর্য তথা প্রত্ননিদর্শন এই জামালপুর টিলা থেকে সংগৃহীত। সঙ্গের ছবিটি খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতকের একটি বুদ্ধমূর্তি।
৩। ভূতেশ্বরঢিপি ও বর্তমান বি.এস.এ কলেজের কাছে কঙ্কালীটিলা।
মথুরার প্রত্নক্ষেত্র হিসেবে এই কঙ্কালীটিলা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে এখানে দুটি মন্দির রয়েছে। একটি হনুমান মন্দির ও অন্যটি কঙ্কালীদেবীর। দেবী কঙ্কালী কালীর অন্য রূপ। স্থানীয় কাহিনী অনুসারে কঙ্কালীদেবী রাজা কংসর আরাধ্য দেবী ছিলেন। এছাড়া এখানে রয়েছে অষ্টভূজাকৃতি চাতাল যুক্ত একটি সুগভীর কূপ। প্রবাদ এটি শ্রীকৃষ্ণের সময়ে তৈরি।
তবে বিশেষজ্ঞ মহলে কঙ্কালীটিলার খ্যাতি তার প্রত্নক্ষেত্রের জন্য। প্রত্ন অনুসন্ধানে এখানে এক সুপ্রচীন জৈন স্তূপের সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রত্নক্ষেত্রের সর্বপ্রাচীন স্তর খ্রী পূ ১ম শতক এবং সর্বশেষ স্তর ১১৭৭ খ্রিষ্টাব্দের বলে সনাক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এখানে খনন কাজ করেছেন খ্যাতনামা প্রত্নতত্ত্ববিদ
১। স্যার আলেকজেন্ডার ক্যানিংহাম (১৮৭১)। ২। ডঃ বার্জেস (১৮৮৮)। ৩। জার্মান প্রত্নতত্ত্ববিদ ডঃ ফুরার (১৮৮৯)।
কঙ্কালীটিলায় প্রাপ্ত প্রচুর সংখ্যক প্রত্ন সামগ্রী নিঃসন্দেহে প্রমান করে সুপ্রাচীন কাল থেকে এক সুদীর্ঘ সময় জৈন্য ধর্ম এই নগরে ব্যপকভাবে প্রচলিত ছিল। বরং বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব কিছু পরবর্তী। অন্যান্য স্থানে খননের ফলেও খ্রীপূ ২য় শতক থেকে খ্রিষ্টীয় ৩য় শতক পর্যন্ত মথুরায় জৈন ধর্মের ব্যাপক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
কঙ্কালীটিলা প্রভৃতি প্রত্নক্ষেত্রে প্রচুর সংখ্যক জৈন অয়গাপট্ট এবং শিলাপট্ট পাওয়া গেছে। এদের কোনওটি তৎকালীন লিপি সংবলিত। সেকালে জৈন ভক্তবৃন্দ পুণ্যসঞ্চয় বা মনোকামনা পূরণের জন্য এগুলি তীর্থস্থানে প্রতিষ্ঠা করে পূজা নিবেদন করতেন।
কিছু উল্লেখযোগ্য ছবিঃ
মথুরায় নতুন কৃষ্ণজন্মভূমি মন্দির। পিছনে কাটরা মসজিদের শীর্ষদেশ দেখা যাচ্ছে।
বর্তমান মথুরা শহরের অনতিদূরে চাষের ক্ষেতের মাঝে “টাকরিটিলা” ঢিপিতে খনন করে বড় আকারের এক মন্দিরের ভগ্নাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। এখানেই পাওয়া গেছে কুষাণ সম্রাট কণিষ্কর বিখ্যাত মস্তকবিহীন মূর্তিটি। কুষাণ শাসন অবসানের পরে মন্দিরটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।রক্ষা পায়নি কণিষ্কর মূর্তিটিও।
কঙ্কালীটিলায় প্রাপ্ত খ্রী ২য় শতকের প্রস্তরমূর্তটিকে কুষাণ সম্রাট বাসুদেবের বলে অনুমান করা হয়।
১৮৮৯ খ্রী খনন কাজ চলাকালীন কঙ্কালীটিলা প্রত্নক্ষেত্র।
শীর্ষচিত্রঃ ড্যানিয়েলের আঁকা প্রাচীন মথুরার চিত্র