বনের ডায়েরি সব লেখা একত্রে
বন বন্দুকের ডায়েরি
হাতি হাতি…
এ মার্ভিন স্মিথ
অনুবাদঃ দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য
কাইজার-ই-হিন্দের সাম্রাজ্যের যুবরাজের পায়ের ধুলো পড়বার খবর পেয়ে মহীশূর রাজ্যে বেশ হইহই পড়ে গিয়েছিল সেবার। কীভাবে তাঁর অভ্যর্থনা করা যায় সে-নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলল কিছুদিন ধরে। সাধারণত খানিক গার্ড অব অনার, বাজি পোড়ানো আর কিছু জায়গা ঘুরে দেখানো হয় এ-সব ক্ষেত্রে। তবে এ-যাত্রা ঠিক হল, ওসব গতানুগতিক অনুষ্ঠানের বদলে যুবরাজকে হাতি ধরবার অভিযানে নিয়ে যাওয়াটাই তাঁর জন্য উপযুক্ত অভ্যর্থনা হবে।
স্যান্ডারসন আমাদের সঙ্গেই ছিলেন। এই হাতিসম্রাট তখন সদ্যই গারো পাহাড় থেকে একেবারে ছ’শো হাতি ধরে নিয়ে ফিরেছেন। মহীশূরের খেদা, মানে হাতি ধরবার দফতরের তিনিই তখন মাথা। যুবরাজকে নিয়ে হাতি ধরার অভিযানের বন্দোবস্তের দায়িত্ব অতএব তাঁর ওপরেই বর্তাল।
মহীশূর রাজ্যটার উত্তর, পুব আর মাঝখানের এলাকায় জঙ্গল প্রায় না থাকার মতন হলেও, ওর দক্ষিণ আর পশ্চিমে নীলগিরি আর সহ্যাদ্রির জঙ্গল তখনও বেশ ঘন। সেখানে অনাদিকাল থেকেই অতিকায় হাতিদের বাস। রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে বেলিগেরি রঙ্গন পাহাড় এই নীলগিরি পর্বতশ্রেণীর একটা অংশ। জায়গাটা প্রায় পাঁচ হাজার ফিট মতন উঁচু। ঘন জঙ্গলে ঘেরা। গোটা এলাকাটায় মাত্র একজন কফি প্ল্যান্টারের বাস।
জায়গাটায় অগুণতি হাতির আড্ডা। ভেবেচিন্তে এই এলাকাটাকেই স্যান্ডারসন মহারানির নাতিকে হাতি ধরা দেখাবার জন্য বেছে নিল।
যুবরাজের আগমনটা অবশ্য এলাকার লোকজনের পক্ষে কিছুটা আশাভঙ্গের কারণ হয়েছিল। দিনটা ছিল স্যাঁৎসেঁতে। মেঘ, কুয়াশায় ভরা সকাল। ব্যাঙ্গালোর ঝেঁটিয়ে যত সরকারী আমলা আছে সব সে-দিন ঝড়জল মাথায় করে পেট্টা স্টেশনে এসে হাজির। এলাকার লোকও এসে ভিড় করেছে যুবরাজ দেখবার জন্য। অতিথি যদিও কয়েক মিনিটের জন্য শহর ছুঁয়েই হাতি ধরতে রওনা হবেন, তবু উৎসাহে ঘাটতি নেই কারো।
যুবরাজ বলে কথা! লোকজনের বোধ হয় আশা ছিল, মাথায় পালকের টুপি, গায়ে সোনারুপোর নকশা কাটা রাজপোশাক, বুকে গুচ্ছের মেডেল দোলানো বেশ একজন ভারীভর্তুক কেউকেটার দেখা পাবে। কিন্তু ট্রেন থামবার কয়েকমিনিট বাদে ঘুমঘুম চোখে যিনি বেরিয়ে এলেন, তিনি ছিপছিপে লম্বা, পরণে একটা সিল্কের নাইট স্যুট, পায়ে স্লিপার। দেখেশুনে তাঁকে যুবরাজ বলে বিশ্বাস করতে বেশ খানিক সময় লেগেছিল লোকজনের। নামবার পর তাঁর সঙ্গে আলাপ করে মহীশূরের দেওয়ানজি শেষাদ্রি আয়ার তো বলেই ফেললেন, “সঙ্গে চোপদার নেই, পতাকাটতাকা, রাজছত্র কিস্যু নেই, একে যুবরাজ বলে লোকে বুঝবে কী করে?”
বেল্লিগেরি রঙ্গন পাহাড়ের পাদদেশে একটা ঘন জঙ্গুলে এলাকায় খেদা মানে হাতি ধরবার ফাঁদ পাতবার বন্দোবস্ত হয়েছিল। জায়গাটা মহীশূর রেলস্টেশান থেকে ছাপ্পান্ন মাইল দূরে। শহর থেকে পঞ্চাশ মাইল অবধি মহীশূরের মহারাজা তাঁর চার ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে যুবরাজকে নিয়ে এলেন জঙ্গলের কিনারায়। সেখান থেকে, ঘোড়ার পিঠে জঙ্গল পেরিয়ে খেদার বিরাট ঝাঁপ দরজা অবধি আসা হল। দরজার ঠিক ওপরে একটা বড়োসড়ো মাচান বাঁধা হয়েছিল। খেদার একনম্বর ঘেরার ভেতর তখন একটা বড়োসড়ো দল ধরা আছে। যুবরাজ তাই দেখতে সদলবলে মাচায় চড়ে বসলেন।
খেদাটা অবশ্য বেশ ক’মাস আগেই তৈরি হয়ে রয়েছিল। বস্তুটার খানিক বর্ণনা এইখানে দিয়ে নেয়া যাক। জানুয়ারি থেকে মে অবধি এ-এলাকায় শুখা মরশুম। সে-সময়টা হাতির দল পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঁচুর দিকে চলে যায় খাবারের খোঁজে। বর্ষা এলে তারা ফের নীচে নেমে আসে পর্বতের পাদদেশের সবুজ মাঠঘাটে চরা করবার লোভে। ফলে এ-সময়টা থেকে আশপাশের ক্ষেতখামারে তাদের উপদ্রব শুরু হয়ে যায়।
শুখার মরশুমে হাতিরা যখন এলাকায় নেই, তখন পাহাড়ের পাদদেশে খেদা তৈরির জায়গা বাছাই করা হয়। সাধারণত একটু নীচু, ঘন জঙ্গলে ছাওয়া এলাকা দরকার হয় এর জন্য। তবে সেখানে হাতিদের উপযুক্ত প্রচুর খাবার আর জলের উৎস থাকতে হবে। কাছাকাছি দু-একটা চাষজমি থাকলে তো সোনায় সোহাগা।
মূল বস্তুটা হল কাঠের মোটা মোটা খুঁটি মাটিতে পুঁতে তৈরি তিনটে গোলাকার এককেন্দ্রিক দেয়াল। তার সবচেয়ে ভেতরের দেয়ালটা আধ একর চওড়া হবে। তাকে ঘিরে গড়ে উঠবে এক একর চওড়া দ্বিতীয় দেয়াল আর তার বাইরে থাকবে পঞ্চাশ একর চওড়া এক নম্বর দেয়াল। তিনটেই বেজায় শক্তপোক্ত করে গড়া। বাইরে থেকে বৃত্তের কেন্দ্রের দিকে যাওয়া একটা সরলরেখা বরাবর তিনটে দেয়ালের দরজা। গোটা জায়গাটা আবার ঘেরা হয় ছ ফিট চওড়া আর আট ফিট গভীর একটা নালা দিয়ে। সবচেয়ে বাইরের দেয়ালের গা থেকে রশ্মির মত জঙ্গলের মধ্যে ছড়িয়ে যায় বহির্মুখী কিছু খোঁটা আর নালার সার। হাতির দল পাহাড় থেকে নেমে চরা করতে করতে জঙ্গলের মধ্যে সেইসব খোঁটা আর নালার সারিতে বাধা পেয়ে নিরাপদ এলাকা খুঁজতে খুঁজতে এসে পড়ে সবচেয়ে বাইরের সেই দেয়ালের ঘেরার মধ্যে। আর, একবার সেখানে ঢুকলে আর তাদের বেরোবার পথ নেই। চারপাশে শক্তিশালী কাঠের খুঁটির বেড়া আর দরজার বাইরে বাজনাবাদ্য আগুন নিয়ে পাহারাদারের সার। বের হতে চাইলেই ভয় দেখিয়ে খেদিয়ে ফের ঢুকিয়ে দেবে ভেতরদিকে।
এই প্রথম ঘেরার ভেতর হাতিদের দলকে ঢোকাবার পর, তাদের দু’নম্বর ঘেরায় ঢোকাবার আগে কিছুদিন রেখে দেয়া হয়। সে-সময় প্রচুর খাবার আর জলের সরবরাহ দিয়ে তোয়াজে রাখা হয় দলটাকে। যুবরাজ যখন এসে হাজির হলেন সে’সময় দলটা এই প্রথম ঘেরার মধ্যে বেশ কিছুদিন থেকে দ্বিতীয় ঘেরার বন্দিশালায় ঢোকবার জন্য তৈরি।
যুবরাজের মাচাটা তৈরি করা হয়েছিল অনেকটা উঁচু এক গাছের ডালপালার ভেতর। জায়গাটা দু’নম্বর ঘেরার দরজার ঠিক ওপরে। আস্তে আস্তে, কোনো শব্দ না করে অতিথিদের তার ওপর নিয়ে চড়িয়ে দেওয়া হল প্রথমে। মাচায় থিতু হয়ে বসবার পর যুবরাজের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হল একটা দড়ি। সাধারণ কোনো দড়ি তা নয়। খেদার ঝাঁপদরজা খোলা-বন্ধের কল তার অন্য মাথায় আটকানো। তাঁকে বলা হল, হাতিদের গোটা দলটা দু’নম্বর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে যাবার সঙ্গেসঙ্গে দড়িটায় হালকা একটা টান দিতে হবে শুধু।
প্রথম ঘেরায় তখন সাঁইত্রিশটা হাতি। পনেরো দিন ধরে তাদের সেখানে ধরে রাখা রয়েছে আজকের দিনটার অপেক্ষায়। সেদিনের গোটা কাজটাই ছিল বিখ্যাত হাতি ট্র্যাকার ভূমি গৌড়ার দায়িত্বে (এর কথা স্যান্ডারসনের “থার্টিন ইয়ার্স অ্যামং দ্য ওয়াইল্ড বিস্টস অব ইন্ডিয়া” বইতে বিস্তারিতভাবে আছে।)। বড়ো ঘেরার ভেতর চারপাশে ত্রিশ পা অন্তর অন্তর গাছে গাছে একজন করে বাজনদারকে লাগিয়েছে ভূমি গৌড়া। এমনিতে তারা লুকিয়ে থাকবে। কিন্তু কোনো হাতি ছাড়া পাবার জন্য বাইরের দরজার দিকে বের হয়ে আসবার চেষ্টা করলেই লুকোনোর জায়গা ছেড়ে বাজনাবাদ্যি বাজিয়ে তার দিকে তেড়ে গিয়ে তাকে ভয় খাইয়ে ফের ঘেরায় ঢুকিয়ে দেবে, এই তাদের কাজ।
গোটা প্রস্তুতিটাই নেওয়া হল একেবারে চুপচাপ। গাছের একটা পাতা পড়লেও তার শব্দ যেন শোনা যায় তখন। খানিক বাদে বলা হল, খেদা শুরু হয়ে গেছে। আমাদের চোখে অবশ্য তখনও তার কোনো লক্ষণই ধরা পড়ে না। তারপর খেয়াল করে দেখলাম, খেদাওয়ালারা গাছের ডালে ডালে এদিকওদিক লাফিয়ে যাচ্ছে, আর হাতির দল পাতার আড়ালে তাদের শত্রুর হঠাৎ হঠাৎ আভাস পেয়ে একটু করে পিছোচ্ছে। আর সেই করতে করতেই আস্তে আস্তে জড়ো হয়ে উঠছে দ্বিতীয় দেয়ালের দরজাটার দিকে।
এমনি করে খুব আস্তে আস্তে জন্তুগুলোকে আধমাইল পথ তাড়িয়ে মাচানের কাছাকাছি আনতে সময় লাগল প্রায় একটি ঘন্টা। তখন দেখা গেল, তারা আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে নয়, শুয়োরের পালের মত গায়ে গায়ে ঘেঁষাঘেঁষি করে আসছে। পালের গোদাগুলো ভয় পেয়েছে। ঘনঘন শুঁড় তুলে তারা এদিক-ওদিক শুঁকে শত্রু যে ঠিক কোন্দিকে রয়েছে সেইটে ঠাহর করবার চেষ্টা করে।
দলটায় অনেকগুলো বাচ্চাও ছিল। তাদের অবশ্য ভয়ডরের বালাই নেই। দিব্যি বড়োদের পেটের তলা দিয়ে দিয়ে লুকোচুরি খেলায় ব্যস্ত। আস্তে আস্তে গোটা দলটা দু নম্বর ঝাঁপ দরজার মুখে পৌঁছে গেল। প্রথম সেখান দিয়ে ভেতরে ঢুকল এক তরুণ দাঁতাল। তার পিছুপিছু গুটিকয় বাচ্চা হাতি ছুটে গিয়ে সেঁধিয়ে গেল সেখানে। একে একে প্রায় সবকটা জীবই সে-দরজা দিয়ে ঢুকে এল এর পর।
কিন্তু মুশকিল হল দুই হস্তিনীকে নিয়ে। দুই তরুণী মা তাদের বাচ্চাদের নিয়ে বেঁকে দাঁড়াল দরজার মুখে। কিছুতেই ভেতরে পা দেবে না তারা। সরু সেই দরজার পেছনে কোনো অজানা বিপদের গন্ধ পেয়েছে তাদের চেতনা। খানিক বাদে অবস্থা এমন দাঁড়াল, হয় এদের বাইরে রেখেই দরজা বন্ধ করতে হবে, নইলে ভেতরের হাতিরাও ফের এক এক করে বাইরে চলে এসে কাজটাকে ভণ্ডুলই করে দেবে একেবারে।
আর ঠিক এইখানেই ভূমি গৌড়া তার খেল দেখাল। হঠাৎ তাদের পেছনে খানিক দূরে অবিকল একটা বুনো কুকুর ডেকে উঠল যেন। বাচ্চারা সে-শব্দ শুনেই মায়েদের পেটের নীচে ঢুকে আশ্রয় নিয়েছে। মায়েরা শুঁড় তুলে শব্দটা কোন্দিক থেকে এল সেইটে তখন বোঝবার চেষ্টা করছে উদ্বিগ্নভাবে। এবারে ফের একটা ডাক গোটা বিষয়টার নিষ্পত্তি করে দিল। পেছনে সাক্ষাত যমহেন বুনো কুকুরের ভয় মায়েদের সব দ্বিধাকে মুছে দিল এক নিমেষে। বাচ্চাদের নিয়ে দু’নম্বর দরজার ওপারে নিজের দলের মধ্যে ছুটে গেল তারা। প্রায় সঙ্গেসঙ্গেই যুবরাজের হাতের দড়ির টানে ঝাঁপ দরজা বন্ধ হয়ে গেল। মাচার ওপর থেকে দর্শকদের হুল্লোড়ের শব্দ উঠল একটা। সে-শব্দে ঘাবড়ে গিয়ে হাতির পাল দু’নম্বর দেয়ালের একেবারে ভেতরের দিকে গিয়ে সেঁধোল। তারপর সেখানেও না থেমে তিন নম্বর দেয়ালের দরজা পেরিয়ে সটান সবচেয়ে ভেতরের তিন নম্বর খেদার ভেতর।
দু’নম্বর ঘেরার ভেতরের এলাকাটা থেকে ঝোপজঙ্গল সাফ করে শুধু কিছু বড়ো গাছ রেখে দেওয়া হয় হাতিদের বাঁধবার জন্য। আর তিন নম্বর খেদার ভেতরটায় আগে থেকে প্রচুর ডালপালাসহ বাঁশ কেটে এনে সাজিয়ে রাখা হয়। হঠাৎ দেখলে মনে হবে যেন ঘন এক বাঁশবন। এমন জায়গায় হাতি লুকোতে ভালোবাসে। তাই দু’নম্বর খেদায় ভয়ে ভয়ে ঢুকে এসে তার ভেতরের তিন নম্বর দেয়ালের মধ্যে আস্ত একটা বাঁশবন দেখে তারা ভরসা পেয়ে তার মধ্যে গিয়ে লুকোয়। সেই সুযোগে বাইরে থেকে তাদের বন্দিশালার দরজাকে শক্তপোক্তভাবে বন্ধ করবার কাজটা সেরে নেয় হাতি ধরার লোকজন। তারপর শুরু হয় দল থেকে বাছাই করে একএকটা হাতিকে আলাদা করে ধরবার খেলা।
খেদা থেকে মাইলতিনেক দূরে আমাদের রাতের আস্তানা। গিয়ে দেখি বত্রিশটা তাঁবুর ছোটোখাটো একটা শহরই বসে গেছে যেন সেখানে। রাজকীয় সেইসব তাঁবুতে বেশ আরামে রাতটা কাটিয়ে সকাল হতে না হতেই দল বেঁধে ফের খেদায় ফিরে আসা গেল।
মাচায় উঠে তিন নম্বর ঘেরার ভেতরে একটা আশ্চর্য দৃশ্য চোখে পড়ল। রাতের বেলা হাতির দল বাঁশঝাড়ের আস্তানা ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। গোটা দলটা খেদার মাঝখানটায় গোল হয়ে বাইরের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে ঠায়। আগের দিন সন্ধেবেলা যখন তাদের এনে ঢোকানো হয়েছিল, তাদের চামড়া ছিল চকচকে কালো। তাদের চলাফেরায় স্বাধীনতার ঔদ্ধত্য ছিল। আজ তাদের চামড়ায় কাদার দাগ, তাদের আচরণে ভয়ের ছাপ, দেখে মনে হয় যেন একদল বলির পশু অসহায়ভাবে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে। তবে দলটার ছোটোদের সে’সব দিকে খেয়াল নেই কোনো। চ্যাঁচামেচি করতে করতে তারা বড়োদের থামের মত পায়ের ফাঁকে ফাঁকে ছুটোছুটি খেলা জুড়েছে।
হাতিদের দলটাকে দখলে আনবার জন্য এইবার তাদের দু’নম্বর ঘেরায় বের করে আনবার পালা। তবে একবারে সবগুলোকে আনা চলবে না। ভাগে ভাগে আনতে হবে। মাচানের ওপরে বসা লোকজনকে বলা হল একটু লুকিয়ে বসতে। হাতিদের নজরে না পড়ে যায়। অতএব যুবরাজকে নিয়ে স্যান্ডারসন তিন নম্বর ঘেরার দরজাটার ঠিক ওপরে মাচানের কোণটাতে গিয়ে শুয়ে পড়ল। সে দরজা তখন বাইরে থেকে খুলে দেয়া হচ্ছে। আর সেইসংগে দরজার বেশ খানিক দূরে লুকিয়ে থাকা খেদার লোকজন একসঙ্গে হাততালি দিতে শুরু করেছে।
হঠাৎ হাততালির শব্দ আর সামনে খোলা দরজা দেখে দলের কয়েকটা হাতি পড়িমড়ি করে ছুটে এসেছিল দরজার দিকে। কিন্তু তাদের মধ্যে একটা বিরাট বড়ো মাদি হাতি হঠাৎ শুঁড় তুলে কানফাটানো হাঁক ছেড়ে ঘুরে দাঁড়াল। তারপর চলন্ত পাহাড়ের মত ছুটে গেল, খেদার দেয়ালের যেখানটা থেকে হাততালির শব্দ আসছে সেইদিকে। দেয়ালের পেছনদিকে লুকিয়ে থাকা হাততালিওয়ালাদের শায়েস্তা করবার মতলব তার।
তার পায়ের দাপে ধুলোবালি কাঁকরের একটা ঝড় যেন দেয়ালের খুঁটির ফাঁক দিয়ে উড়ে গেল মানুষগুলোর দিকে। তবে তাতেও সে খুশি নয়। মানুষগুলোকে তার চাই। শরীরের ধাক্কায় দেয়ালের খুঁটিগুলো উপড়ে ফেলে বিশ্রী শব্দ করা জীবগুলোকে ধরবার জন্য যখন সে উঠেপড়ে লেগেছে। ঠিক তখন পেছন থেকে তার বাচ্চাটা তীক্ষ্ণ গলায় ডেকে উঠল। সে-ডাক শুনে মা কি আর থাকতে পারে? রাগটাগ ভুলে সে সঙ্গেসঙ্গে ফিরে গেল তার দলের কাছে। গোটা দলটা তখন খোলা দরজার মুখে দাঁড়িয়ে জটলা করছে।
মা হাতি সরে গেলে ফের একচোট হাততালির পালা। শব্দ শুনে ভয় পেয়ে এক তরুণ দাঁতাল আর তার পাঁচ সঙ্গিনী এক ছুটে দরজা দিয়ে দু নম্বর ঘেরার মধ্যে এসে ঢুকল। আর সঙ্গেসঙ্গেই তাদের দু-নম্বর ঘেরায় রেখে পেছনের খোলা দরজার মুখে নেমে এল শক্তপোক্ত ঝাঁপদরজা। তার পেছনে হতভম্ব হয়ে যাওয়া দলটার মাথার ওপরে তখন কানফাটানো শব্দ তুলে ব্ল্যাংক ফায়ারিং চলছে।
বন্দুকের শব্দ শুনে ভয় পেয়ে গোটা দলটা তিন নম্বর ঘেরার ঠিক মাঝখানটায় গিয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়াবার পর, দু’নম্বর ঘেরায় ঢুকে আসা জন্তু ছ’টার দিকে নজর দেয়া হল। তাদের মধ্যে সেই অতিকায় মা হাতিও ছিল। তার বাচ্চা রয়ে গেছে দরজার অন্যদিকেই। বারবার সে ধেয়ে যায় বন্ধ দরজাটার দিকে। মুখের ওপর সরাসরি বন্দুকের ফাঁকা আওয়াজেও তখন আর তার পরোয়া নেই।
তার শরীরের ধাক্কায় দরজা যখন ভেঙে পড়বার জোগাড়, তখন বাধ্য হয়ে ছ’টা কুনকি একটা দলকে ময়দানে নামানো হল তাকে আটকাবার জন্য। এই কুনকিরা হল শিক্ষিত মাদি হাতির দল। কাঁধে বসা মাহুতদের নির্দেশ মেনে তারা বারবারই চেষ্টা করছিল মা-হাতিকে ঘিরে ফেলতে। কিন্তু বারবারই তাদের ছিটকে দিয়ে মা-হাতি ছুটে যায় বন্ধ দরজার দিকে। তার ও-পিঠে তার আদরের সন্তানটি রয়ে গেছে যে!
বোঝা যাচ্ছিল, একে সামলানো কুনকিদের কর্ম নয়। তখন মহীশূরের মহারাজার হাতিকে পাঠানো হল মা-হাতিকে সামলাবার জন্য। তার নাম জং বাহাদুর। পাহাড়ের মত চেহারার সুশিক্ষিত রণহস্তী সে।
জং বাহাদুর ময়দানে নেমেই তিন নম্বর ঘেরার দরজার মুখে গিয়ে তার বিরাট দাঁতগুলোকে বল্লমের মত সামনে তুলে ধরে আড় হয়ে দাঁড়াল। মা-হাতি তার দিকে ছুটে আসতে আসতে হঠাৎ সামনে সেই জোড়া বল্লম দেখে থমকে দাঁড়িয়ে শুঁড় তুলে হাঁকার দিল একটা। জবাবে দরজার পেছন থেকে তার বাচ্চার চিলচিৎকার যেই ভেসে আসা ওমনি দাঁতটাতের পরোয়া না করে মা-হাতি জং বাহাদুরকেও ধাক্কা মারবার জন্য ছুটেছে। জং বাহাদুর একচুলও নড়ল না। শুধু শুঁড় তুলে এমন একটা হুঙ্কার ছাড়ল যে সেই শব্দ শুনেই মা-হাতির সব সাহসটাহস গায়েব। একেবারে শুঁড় গুটিয়ে তার সামনে গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে পড়ল সে। তার পেছনে ততক্ষণে কুনকিরা এসে একেবারে তাকে ঠেসে ধরে দাঁড়িয়েছে। সামনে জং বাহাদুর আর পেছনে ছয় কুনকি মিলে নড়াচড়াই বন্ধ করে দিয়েছে তার একেবারে।
এইবার দুটি কুনকির পিঠ থেকে মাটিতে নেমে এল দুই বিখ্যাত ফান্দি, গুন্নি আর ফজলি। দক্ষ হাতের কারসাজিতে মা-হাতির পেছনের দু-পায়ে জড়িয়ে দিল শক্তিশালী ফাঁস। এবারে ফাঁসের সঙ্গে একটা লম্বা জাহাজি কাছি বেঁধে দিয়ে তারা সরে যেতে কুনকিদের দুজন মিলে শুঁড়ে সেই দড়ি ধরে মা-হাতিকে টেনে সরিয়ে নিয়ে যেতে শুরু করল একপাশে। খানিক দূরের একটা বড়ো গাছের সঙ্গে কাছিটা জড়িয়ে আটকে দিতে পারলেই তাদের কাজ শেষ।
লড়াই একখানা দিচ্ছিল বটে মা-হাতি, সেই কাছির টান থেকে ছাড়া পাবার জন্য! কখনো মাটির ওপর সটান চার হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ে, কখনো গড়াগড়ি খেয়ে পাক মারে, আবার কখনো ঠিক ঘোড়ার মত পেছনের পা দুটো তুলে শূন্যে চাঁট ছুঁড়ে বাঁধন ছেঁড়বার জন্য সে কী আকুলিবিকুলি তার! লড়তে লড়তে এক-একবার সে শুধু একটা পায়ে ভর করে শরীর উঁচিয়ে তুলে, শুঁড়টা টানটান করে আকাশের দিকে ধরে হাঁক দিয়ে উঠছিল। সে দৃশ্য চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত।
ভারতবর্ষের বহু মন্দিরে আমি হাতিদের অবিশ্বাস্য ভঙ্গীতে আঁকা বহু ছবি বা ভাস্কর্য দেখেছি। সবসময়েই মনে হয়েছে ওসব শিল্পীদের কল্পনা। কিন্তু সেদিনের সে-দৃশ্য দেখবার পর বুঝতে পারছিলাম, কল্পনা নয়। শিল্পীরা সত্যিটাকে নিজের চোখে দেখে তবেই সেইসব শিল্পকর্মকে গড়েছেন।
অতবড়ো শরীরগুলো যে কী প্রচণ্ড নমনীয় হতে পারে তা নিজে-চোখে না দেখলে বোঝা মুশকিল। যেভাবে গোটা শরীরটাকে অবিশ্বাস্য সব ভঙ্গীতে বাঁকিয়েচুরিয়ে নিজেকে বাঁচাবার চেষ্টায় লড়াই দিচ্ছিল মা-হাতি তা দেখে একেকসময় মনে হচ্ছিল, বুঝি কোন হাড়গোড়ের বালাই নেই ওই দৈত্যাকার চেহারায়। তার লড়াইয়ের চোটে শেষমেষ হাল ছেড়ে দিল দুই কুনকি। বাকি হাতিগুলোকেও বাঁধা দরকার। অতএব মা হাতিকে পেছনের পা-দুটো বাঁধা অবস্থায় ছেড়ে দিয়ে তারা চলল অন্য হাতিদের খবর নিতে। তাদের নিয়ে বিশেষ সমস্যা হল না আর। ছয় কুনকি মিলে বাকিদের বেঁধে ফেলতে সময় নেয়নি বেশি। তাদের কাউকে কাউকে বড়ো বড়ো গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলা হল, আর দু-একজনকে মা-হাতির মতই পেছনের পা বেঁধে ঘেরার ভেতর ছেড়ে রাখা হল।
এবার ফের একবার ঘেরার ঝাঁপদরজা তুলে পরের দলটাকে বাইরে আনবার পালা। কিন্তু ততক্ষণে হাতিধরাদের কয়েকজন দুপুরের খাবার খেতে চলে গেছে। ফলে ঝাঁপদরজার দড়ি টানবার লোকের অভাব। কাজেই এবার আমরা শ্বেতাঙ্গরাই হাত লাগালাম সে-কাজে। যুবরাজের দলের ক্যাপটেন হলফোর্ড আর হার্ভে, মহারাজার দলের কর্নেল ম্যাকিন্টিয়ার আর গ্রান্ট, মাদ্রাজ সরকারের কর্মচারী ক্লদ ভিনসেন্ট, ব্রিটিশ রেসিডেন্ট স্যার অলিভার সেন্ট জন কেউ বাদ রইল না। সবাই মিলে ঝাঁপদরজার কাছি দড়ি মিলে ‘হেঁইয়ো জোয়ান’ বলে হাঁক মেরে টান লাগাতে বিরাট দরজাটা যেই খানিক উঠেছে, অমনি তার ফাঁক দিয়ে এদিকে দৌড়ে এল সেই মা-হাতির ছানা। পা-বাঁধা মায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে সেকি আদর খাবার ধুম তখন তার। দেখে আমাদের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠছিল। মা তার সারা গায়ে শুঁড় বুলিয়ে দেয়। খানিক বাদে বাদেই গুঁতো মেরে একটুখানি দূরে সরিয়ে দিয়ে দু-চোখ ভরে চেয়ে দেখে তার নয়নের মণিটিকে। তারপর ফের তাকে সোহাগ করে কাছে টেনে নেয়। এমনিভাবে কবার যে নিজের ছেলেকে সে দেখল তার হিসেব নেই। দেখে দেখে আশ মেটেনা যেন মায়ের। আর সেইসঙ্গে মাঝেমাঝেই শুঁড়টা মুখে পুরে পেট থেকে খানিক জল বের করে এনে নিজে স্নান করে আর বাচ্চাকেও স্নান করিয়ে সাফসুতরো করে দেয়।
দু নম্বর দলটায় দলের সবচেয়ে বড়ো চেহারার মাদি হাতিটা ছিল। কানের ডগাদুটো তার ভেতরের দিকে গুটিয়ে গিয়েছে। খুব বেশি বয়েস হলে তবেই হাতিদের এমনটা হয়।
বয়সের সঙ্গেসঙ্গে শয়তানি বুদ্ধিটাও তার বেড়েছে খুব। খুঁটির বেড়ার আড়ালে লুকিয়ে থাকা বাজনদারদের হাততালিতে সে মোটেই ঘাবড়ায়নি। উলটে বেড়ার ওপর দিয়ে শুঁড় বাড়িয়ে বাজনদারদের একটাকে পাকড়ে ধরবার মতলবে ছিল সে। দু’নম্বর ঘেরার মধ্যে তাড়িয়ে আনবার পর তার রাগ দেখে কে! পাগলের মত চারদিকে ছুটে বেড়ায় আর বারবার ঘেরার দেয়ালে ঢুঁ মারে। গতিক সুবিধের নয় দেখে স্যান্ডারসন এবার আরো ছ’টা কুনকি হাতিকে মাঠে নামাল বুড়ি হাতিকে জব্দ করবার জন্য।
মাঠে মোট বারোটা কুনকি তখন। কাজেই স্যান্ডারসন নিশ্চিন্ত ছিল যে আর কোন সমস্যা হবে না এবারে। গোটা কাজটা একেবারে কাছে থেকে দেখবার জন্য যুবরাজকে নিয়ে সে নিচে নেমে এল এবারে।
মাঠে তখন রীতিমত যুদ্ধ চলছে। বারোটা কুনকি তাদের মাহুতের নির্দেশ মেনে হাতিদের বন্দি করবার কাজে ব্যস্ত। কুনকির পিঠে বসা মাহুতদের সাধারণত এ-কাজে বিপদের বিশেষ আশঙ্কা থাকে না। কারণটা সরল। বুনো হাতির দল বুঝতেই পারে না যে তাদের তাড়া করে আসা পোষা হাতির কাঁধের ওপর বসা খুদে পুতুলগুলোই তাদের আসল শত্রু। তবে হ্যাঁ, একবার বন্দি হয়ে মানুষের কাছে কিছুদিন থাকবার পর পালিয়ে যাওয়া কোন হাতি যদি বুনোদের দলে থাকে, তাহলে কুনকির পিঠে বসা মাহুতের ঘোর বিপদ। সে-বুনো সব জানে। তেড়ে এসে সে মাহুতের ওপরে হামলা করবেই।
ওদিকে বুড়ি হাতি তখন জোর লড়াই দিচ্ছে তার পেছনে ঘিরে আসা কুনকিদের একটা দলের সঙ্গে। বারবার তার দিকে ছুঁড়ে দেয়া ফাঁস সে শুঁড় দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। আবার মাঝেমাঝেই পেছনের পা-দুটো হাওয়ায় তুলে এদিকওদিক ছোঁড়ে যাতে টিপ করে তাতে ফাঁস না পরাতে পারে ফান্দিরা।
অন্য হাতিরা অবশ্য খানিক লড়াইটড়াই দিয়েই ধরা দিচ্ছিল। তেমন একটা ছোকরা দাঁতালকে পাকড়ে নিয়ে গাছের সঙ্গে বাঁধা হচ্ছে তখন। যুবরাজ সব ভুলে একমনে তাই দেখছিলেন। এমন সময় হঠাৎ একটা কানফাটানো গর্জন শুনে আমরা ঘুরে দেখি, তাকে ঘিরে রাখা কুনকিদের দেয়ালকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে বুড়ি হাতি। আর তারপর সাক্ষাৎ যমরাজের মত সিধে ছুটে আসছে যুবরাজকে লক্ষ্য করে।
আমরা তো ভয়ে কাঠ হয়ে গেছি। কিন্তু যুবরাজ দেখি একচুলও নড়লেন না নিজের জায়গা ছেড়ে। তাঁর পাশে স্যান্ডারসনও অনড়। হাতি আরো কাছে এগিয়ে গেলে স্যান্ডারসন দেখাল কেন তাকে সারা ভারতে হাতিসম্রাট নামে ডাকা হয়। সামনে এগিয়ে এসে হাতদুটো বাতাসে তুলে সে একটা অদ্ভুত শব্দ করে হাঁক দিয়ে উঠল। মন্ত্রের মত কাজ হল সেই শব্দে। ক্ষ্যাপা হাতি তার শুঁড় নামিয়ে দিক বদল করে ছুটে চলে গেল একেবারে অন্যদিকে।
মোট সাঁইত্রিশটা হাতি ধরা হয়েছিল সে-যাত্রায়। পরদিন স্যান্ডারসনের আদেশে তাদের আটটাকে গুলি করে মারা হয়। সেগুলো ছিল বুড়ো হাতি। তাদের পোষ মানানো বা কোনো কাজে লাগানো সম্ভব নয় আর। স্যান্ডারসনকে জিজ্ঞাসা করছিলাম, ওদের তো ছেড়ে দিলেই পারত সে। এভাবে খুন করবার কোনো দরকার ছিল কি?
জবাবে সে বলল, দরকার ছিল। হাতিদের একেকটা দলে একটাই পরিবার একসঙ্গে থাকে। তিন চার প্রজন্মের হাতি। নাতিনাতনি থেকে প্রপিতামহ প্রপিতামহী সবাই একসঙ্গে ঘোরে। এদের ছেড়ে দিলেও এরা কোথাও যেত না। আশপাশে লুকিয়ে অপেক্ষা করত, তারপর সুযোগ পেলেই ক্যাম্প আক্রমণ করত সবাই মিলে। তেমন ঘটনা নাকি সে নিজেচোখে দেখেছে। একবার ছাবিশটা হাতির একটা দলকে ধরবার পর তাদের বুড়োগুলোকে ছেড়ে দিয়ে বাকিদের নিয়ে রওনা দেবার পর ছাব্বিশ মাইল দূরে গিয়ে ক্যাম্প করেছিল নাকি সে। সেই লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে ছাড়া পাওয়া হাতিরা রাতের অন্ধকারে এসে ক্যাম্প আক্রমণ করে কয়েকজন মানুষকে মেরে অন্য হাতিদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
হাতিগুলোকে মারবার পর তাদের শরীরগুলো রেখে গেলে পরিবেশ দূষণের ভয় থাকে। কাজেই বিরাট এক চিতা জ্বালিয়ে তাদের শরীরগুলো তাতে ছাই করে দিয়ে আমরা ফেরার পথ ধরেছিলাম সেবার।