ঊর্মীর আগের ভ্রমণ বিপাশার বুকে র্যাফটের দোলায়
না, প্লেনে করে ওড়ার কথা বলছি না। সে রকম তো রোজ লাখে লাখে লোক উড়ে বেড়াচ্ছে। আর ওতে মজাই বা কী আছে? যদি মুখে ঠাণ্ডা হাওয়ার ঝাপটা না লাগল, যদি কানের পাশ দিয়ে শনশন করে বাতাস না বয়ে গেল, যদি দু-চারটে গাছের পাতায় আঙুল না ছুঁয়ে গেল, তবে আর কী ওড়া হল!
আমি বলছি প্যারাগ্লাইডিং-এর কথা। এক ধরনের সরু, লম্বাটে প্যারাশুট হয়, অনেকটা পাখির ডানার মতই দেখতে, তাকে বলে প্যারাগ্লাইডার। কোনও উঁচু জায়গা থেকে লাফ মেরে, তাতে ভর করে যতক্ষণ খুশি আকাশে উড়ে ইচ্ছেমত আস্তে আস্তে মাটিতে নেমে আসা যায়। এই হল প্যারাগ্লাইডিং। এটা একটা অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্ট।
এই ধরনের আকাশে ওড়ার অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্ট আরও তিনটি আছে। প্যারাসেলিং, স্কাইডাইভিং, আর বেস জাম্পিং। প্রত্যেকটির আলাদা আলাদা মজা আর উত্তেজনা আছে। প্যারাসেলিং এর ক্ষেত্রে তোমাকে একটি খোলা প্যারাশুটের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হবে। আর একটা লম্বা দড়ির একদিক বেঁধে দেওয়া হবে একটি মোটর বোটের সঙ্গে। অন্য দিকটির সঙ্গে তুমি বাঁধা থাকবে। বোট চালু হলে তার টানে আর প্যারাশুটে হাওয়া ঢুকে তুমি আকাশে উড়ে যাবে। বোট থামলে আস্তে আস্তে নেমে আসবে। এটা সমুদ্রের ধারে অনেক টুরিস্ট স্পটেই করা হয়ে থাকে।
স্কাইডাইভিং আর বেস জাম্পিং অনেক কঠিন। স্কাইডাইভিং-এর ক্ষেত্রে প্লেন থেকে লাফ মারতে হয়। অনেকটা হু-হু করে মাটির দিকে পড়তে হবে, যাকে বলে ‘ফ্রি ফল’। তারপর প্যারাশুট খোলার পালা। বাকিটা প্যারাশুটে ভর করে হাওয়ায় ভেসে নামতে হবে। তবে সবচেয়ে কঠিন বোধহয় বেস জাম্পিং। কোনও উঁচু জায়গা থেকে লাফ মারতে হয়, প্যারাগ্লাইডিং-এর মতোই। তবে প্যারাশুট না খুলে। বেশ খানিকটা ফ্রি ফলের পর প্যারাশুট খোলার পালা।
বেস জাম্পিং ছাড়া বাকি তিনটিই কিন্তুজ পর্যটক হিসেবে, কোনও প্রশিক্ষণ ছাড়া করা যায়। প্যারাসেলিং-এর ক্ষেত্রে সঙ্গে কোনও ট্রেনর বা পাইলট লাগে না। প্যারাগ্লাইডিং আর স্কাইডাইভিং দুটোই পাইলট নিয়ে করা যায়। পাইলট যা করার করবে, তুমি তার সঙ্গে বাঁধা থাকবে। সেইভাবেই আমি প্যারাগ্লাইডিং করেছিলাম সিকিমের রাংকা বলে একটা জায়গায়। তারই গল্প বলব এবার।
আমার প্রথম ট্রেক সবে শেষ করেছি। সিকিমের গোয়েচালা বিখ্যাত কাঞ্চনজঙ্ঘার বেস ক্যাম্প বলে। সেই ট্রেকটাই করেছি। আট দিন পাহাড়ে, জঙ্গলে হেঁটে হেঁটে ঘুরে, হাজার ফুট উঠে আর হাজার ফুট নেমে, তারপর গ্যাংটক পৌঁছেছি। পা ফুলে ঢোল। কিন্তু ঠিক করেছি যখন প্যারাগ্লাইডিং করব, তখন আমায় আটকায় কে!
‘ফ্লাই সিকিম অ্যাডভেঞ্চার’ বলে একটা সংস্থার ফোন নম্বর ছিল আমার কাছে। আগের রাতে কথা বলে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম রাংকার উদ্দেশ্যে। রাংকায় রেশিথাং বলে একটা জায়গা আছে। সেখানে পরপর বেশ কয়েকটি এরকম সংস্থা আছে যারা প্যারাগ্লাইডিং করায়। গ্যাংটক থেকে ঘন্টাখানেক লাগে গাড়িতে।
দুরকম ওড়ার সুযোগ দেওয়া হয়। ‘মিডিয়াম ফ্লাই’ আর ‘হাই ফ্লাই’। কতটা ওপর থেকে লাফানো হবে আর কতক্ষণ আকাশে ভেসে থাকবে তার ওপর নির্ভর করবে। ‘হাই’ হলে বেশি ওপরে নিয়ে যাবে আর বেশিক্ষণ আকাশে থাকতে পারবে। আমি অবশ্য মিডিয়ামটাই নিয়েছিলাম। সঙ্গে ভিডিও ক্যামেরা নিতে চাইলে নেওয়া যায়। আমি সেটা নিয়েছিলাম।
আমাকে সংস্থার গাড়িতে চড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হল যেখান থেকে লাফাতে হবে সেখানে। প্যারাগ্লাইডিং করে নামতে হবে রাংকার স্টেডিয়ামে। আমার গাড়ি সেখানে অপেক্ষা করবে। বেশ খাড়া চড়াই দিয়ে আধঘণ্টা ওঠার পর একটা বিরাট বাড়ির মতো দেখতে জিনিসের সামনে এসে গাড়িটা দাঁড়িয়ে গেল। মনে হল সেটাও স্টেডিয়াম জাতীয় কিছু।
আমরা অবশ্য ভেতরে ঢুকলাম না। একপাশ দিয়ে সিঁড়ি উঠে গেছে। সেটা দিয়ে ছাদে পৌঁছে গেলাম। উঠে তো মোটামুটি আমার চক্ষু চড়কগাছ। ছাদটা ঢালু হয়ে নেমে গেছে। আর গিয়ে যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে পড়লে একেবারে হাজার-দুহাজার ফুট ‘ফ্রি ফল’ নিশ্চিত। নিচে মেঝেটাও করকরে, পা টা যেন পিছলে যাচ্ছে। আমি তো কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ভাবছি একবার যদি গড়িয়ে পড়ি তো, যাকে বলে, পপাত চ মমার চ।
আমার সঙ্গে অনেকগুলো ছেলে এসেছিল গাড়িতে। তখন ভেবেছিলাম এতজন কেন লাগবে। এখন বুঝলাম যে প্যারাগ্লাইডারটা খুলতে একাধিক লোক লাগে। দু-তিনজন মিলে আমায় ‘সেফটি গিয়ার’ পরিয়ে দিল। মাথায় হেলমেট। আর গাদা গাদা স্ট্র্যাপ দিয়ে আমার পাইলট তাশির সঙ্গে বাঁধা। তাশি ঠিক আমার পেছনে দাঁড়িয়ে। আমার কোমর থেকে আবার একটা দড়ি দিয়ে একটা ছোট্ট বসার জায়গা বাঁধা। ঠিক যেমন দোলনার সিট হয়। সেটা আমার হাঁটুর ঠিক পেছনে ঝুলছে। সব মিলিয়ে হাস্যকর দেখতে লাগছে।
তারপর অবশ্য ওরা যা বলল তাতে আমার হাসি-টাসি শুকিয়ে মাথার চুল খাড়া হয়ে গেল। আমাকে নাকি ওই খাদটার দিকে হেঁটে যেতে হবে। এবং একদম লাফাবার আগের মূহুর্তে যখন ওরা বলবে তখন সিটটায় বসে পড়তে হবে। আমার মনে হল আমি কিছুতেই মাথা ঠাণ্ডা রেখে এতকিছু করতে পারব না।
‘ভয় পাবেন না। সব ঠিকঠাক হবে। আমরা সবাই আপনার সঙ্গে ছাদের ধার অবধি যাব,’ একটি ছেলে বলল। কিন্তু তাও দেখি বুকে দামামা বাজাটা কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। ‘যদি ঠিক সময়ে বসে না পড়তে পারি?’ শুকনো ঠোঁট চেটে জিজ্ঞেস করলাম। ‘ও আপনি এমনিই বসে পড়বেন। একটা হেঁচকা টান লাগবে আর আপনি বসে পড়বেন,’ একজন বলল। সেটা শুনেও বিশেষ ভরসা পেলাম না।
সব শেষ হল। পেছনে প্যারাশুট খোলা। আমাদের সব গিয়ার পরানো। তখন দাঁড়িয়ে অপেক্ষা অনুকূল বাতাসের জন্য। সেই এক মিনিটের অপেক্ষাটা বোধহয় আমার জীবনের সবচেয়ে লম্বা অপেক্ষা। আর একবারই এরকম দমবন্ধ করা প্রতীক্ষার অভিজ্ঞতা আছে আমার। সেটা দুর্গাষ্টমীতে পাঁঠাবলি দেওয়ার আগে ঠিক সময়ের জন্যে অপেক্ষা। তফাৎটা হল, এখানে বলির পাঁঠাটা আমি নিজেই ছিলাম।
এক একবার ভাবছি পালিয়ে যাই। পালাবই বা কী করে? দু’দিক থেকে দুজন শক্ত করে হাত ধরে আছে। পেছনে ট্রেনর। আরও বেশ কয়েকটি শক্তপোক্ত ছেলে। নিজেকে অনেক বোঝালাম, ‘ছিঃ ঊর্মি, এইটুকুতেই ভয়! হাজার দু-হাজার ফুটই তো লাফাতে হবে একটা খাদের ধার থেকে। সেটা কী-ই বা এমন কাজ? নিজে তো তাও পাইলটের সঙ্গে বাঁধা, আর দুজনে প্যারাশুটের সঙ্গেও বাঁধা। ওই ছেলেগুলোর তো তাও নেই। তাও ওরা খাদের ধার অবধি যাবে…।’ এত বুঝিয়ে টুঝিয়েও দেখি পালানোর অদম্য ইচ্ছেটা যাচ্ছে না!
অপেক্ষা করতে করতে একটা ছোট্ট ঘটনা বলে নেওয়া যাক। কিছুদিন আগে কলকাতায় সায়েন্স সিটিতে একটা ভালো ইংরেজি ছবি দেখলাম। নাম ‘আড্রিনালিন রাশ’। আড্রিনালিন একটা হরমোন। মানুষ কোনও বিপজ্জনক অবস্থায় পড়লে তার শরীর এই হরমোন তৈরি করে তাকে সেই বিপদে লড়তে সাহায্য করে। বেশি পরিমাণে কিছু এলে তাকে বলে ‘রাশ’।
কিন্তু এই ‘অ্যাড্রিনালিন রাশ’ অনেক মানুষের কাছে একটা নেশা হয়ে গেছে। ‘আড্রিনালিন রাশ’ পাওয়ার জন্যে মানুষ নিজেকে বিপজ্জনক অবস্থায় ইচ্ছে করে ফেলে। যেমন এই অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস। অন্য কোনও প্রাণী শখ করে দু-হাজার ফুট ওপর থেকে লাফায় না। যাই হোক, ‘অ্যাড্রিনালিন রাশ’ ছবির বিষয়বস্তু শুধু সেটাই নয়।
রেনেসাঁস যুগের বিখ্যাত ইতালিয় শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চির নাম নিশ্চয়ই জানো। অবশ্য শিল্পী বললে কিছুই বলা হবে না। তিনি ততটাই বড় মাপের বৈজ্ঞানিকও ছিলেন। এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তাঁর অবদান আছে। তাঁর অনেক আবিষ্কারের মধ্যে একটি হল যাকে আমরা এখন প্যারাশুট বলে জানি।
লিওনার্দো একটি পিরামিডের আকারের কাপড়ের প্যারাশুটের কল্পনা করেছিলেন। তার অনেক মাপজোক দিয়েছিলেন। এবং তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে ওই মাপে জিনিসটি তৈরি করে, মাপ অনুযায়ী দড়ি ধরে সেইটি থেকে ঝুলে পড়লে একজন মানুষ হাওয়ায় ভেসে থাকতে পারবে, পড়ে যাবে না।
১৪৮৫ সালে লিওনার্দো এই প্যারাশুটের কল্পনা করেছিলেন। তারপর পাঁচশো বছরের ওপর কেটে গেছে। বিজ্ঞান কত উন্নতি করেছে। আধুনিক প্যারাশুট বেরিয়ে গেছে কত আগে। কিন্তু লিওনার্দোর সেই প্যারাশুট পরীক্ষা করে দেখার ইচ্ছে বা সাহস কারুর হয়নি।
হঠাৎ ২০০০ সালে ক্যাটারিনা ওলিকাইনেন নামে এক সুইডিশ মহিলা ভাবলেন সেটা পরীক্ষা করে দেখবেন। পৃথিবীর তা-বড় বিশেষজ্ঞরা বললেন, অসম্ভব। লিওনার্দোর ডিজাইনে নাকি গলদ আছে। কোনোমতেই তাতে হাওয়ায় ভেসে থাকা সম্ভব নয়।
ক্যাটারিনা কিন্তু প্যারাশুট তৈরি করলেন। এবং সেটা পরীক্ষা করলেন তাঁর লন্ডনবাসী বন্ধু এড্রিয়ন নিকোলাস, যিনি সাড়ে ছ’ হাজারের বেশি স্কাইডাইভ করেছেন। সাউথ আফ্রিকার এক মরু অঞ্চল সাক্ষী হয়ে থাকল এক ঐতিহাসিক ঘটনার যখন আধুনিক বিশেষজ্ঞদের মুখে চুন-কালি মাখিয়ে এড্রিয়ন আর ক্যাটারিনা প্রমাণ করে ছাড়লেন যে লিওনার্দো ভুল বলেননি। তাঁর প্যারাশুট সত্যিই মানুষকে আকাশে ভাসিয়ে রাখতে পারে। গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো ঘটনা নয় কি?
যাই হোক, এবার ফেরা যাক আমার নিজস্ব আড্রিনালিন রাশে। অনুকূল বাতাসটা ঠিক কোন সময়ে এল ঠিক বুঝলাম না। কিন্তু হঠাৎ দেখি আমি খাদের দিকে পাঁইপাঁই করে ছুটছি। মানে ঠিক আমি ছুটছি না। আমাকে টানতে টানতে বাকিরা ছুটছে। অগত্যা আমাকেও ছুটতেই হচ্ছে।
খাদের ধারটা যত কাছে আসছে তত হৃৎপিণ্ডটা যেন গলার কাছে এসে লাফাচ্ছে। খালি মনে হচ্ছে, আর বাড়ি ফেরা হবে না এ-যাত্রা। হয়ত আমাকে ছুঁড়েই ফেলে দেবে খাদের মধ্যে। প্যারাশুট-টুট ছাড়াই।
এবার খাদ থেকে দু ফুট দূরে। হৃৎপিণ্ডটা বোধহয় মুখের বাইরেই বেরিয়ে গেছে। হঠাৎ বুঝলাম আমি পড়ে যাচ্ছি। খাদেই কি? না, সিটটার ওপর বসে পড়েছি। কী করে বসে পড়লাম কে জানে।
আমি ততক্ষণে ছাদের ধারটা পেরিয়ে গেছি। পায়ের নিছে দু-হাজার ফুট খাদ। এবার অনেকগুলো গলায় হইহই, চেঁচামেচি। কিছু গণ্ডগোল হল নাকি? প্যারাগ্লাইডারটা কি ঠিকমতো খোলেনি? পপাত চ মমার চ? না, ঠিক পরের মূহুর্তেই দেখলাম আমি উড়ছি। ডানা মেলে খোলা ছাদটা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি, দূরের পাহাড়গুলোর দিকে।
তাশি দেখি নির্বিকার। ঝুলন্ত অবস্থায় স্ট্র্যাপ-ট্যাপগুলো ঠিক করছে। আমার হাতে ভিডিও ক্যামেরাটা একটা লম্বা ডাণ্ডার আগায় লাগানো। যাকে সেলফি স্টিক বলে। সেটা অবশ্য স্ট্র্যাপের সঙ্গেও লাগানো। সেটাও তাশি ঠিকঠাক করে আমায় জিজ্ঞেস করল আমি ঠিক আছি কিনা। ঠিক মানে? আমি তো তখন সপ্তম স্বর্গে!
শোঁ শোঁ করে হাওয়া কেটে এগিয়ে যাচ্ছি। বহু নিচে সিকিমের সবুজ পাহাড়, মাঠ-ঘাট সূর্যের আলোয় ঝলমল করছে। রাস্তাঘাট, গাছপালা, মানুষজন পুঁচকে পুঁচকে দেখাচ্ছে। আর তাদের দু’হাজার ফুট ওপরে আমি পাখির মতো উড়ছি! সে আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতাই আমার নেই।
ভিডিওটা এখন দেখে বুঝতে পারি তাশি কিন্তু সমানেই তার কাজ করে যাচ্ছে। প্যারাগ্লাইডারের গতি নিয়ন্ত্রণ করছে, গাছপালার কাছ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে যাতে আমি পাতা-টাতা ছুঁয়ে দেখতে পারি। ‘শুধু গাছে আটকে যেয়ো না যেন,’ বললাম আমি। তাশি হাসল।
আমার আনন্দ দেখে তাশি আমাকে একটু বেশিক্ষণই উড়িয়েছিল। কেউ ভয় পেলে তাকে তাড়াতাড়ি নামিয়ে দেয়। এবার আমার ফুলে-ঢোল-হওয়া পা দুটো দেখে জিজ্ঞেস করল আমি সেগুলো সোজা করতে পারব কিনা। আমি সঙ্গে সঙ্গে সোজা করে দেখিয়ে দিলাম। বলল, ‘গুড। নামবার সময়ে তোমাকে পা দুটো সোজা রাখতে হবে।’
ওড়ার সময় শেষ হওয়ার পর আস্তে আস্তে ঘুরে ঘুরে নামতে লাগলাম নিচে। নিচে তখন সেই স্টেডিয়ামটা দেখতে পাচ্ছি যেখানে নামব। মাটি থেকে কুড়ি ফুট ওপরে যখন, তখন তাশি আমায় বলল পা দুটো সোজা করতে। একদম মাখনের মতো ল্যান্ডিং হোল। আমি সিটের ওপর বসা অবস্থায় মাটিতে এসে নামলাম।
দেখি আমার ড্রাইভার চন্দন দৌড়তে দৌড়তে আসছে। আমায় জ্যান্ত এবং আস্ত দেখে মহা খুশি। ওর কাছে আমার ক্যামেরা দিয়ে গেছিলাম। ছবিও তুলেছে। চন্দনের গাড়িতে করেই ফ্লাই সিকিম অ্যাডভেঞ্চারের আপিসে ফিরে গেলাম। আমার ভিডিও ফিল্মটা একটা সিডি-তে ভরে দিয়ে দিল। ফিডব্যাক ফর্ম দিল। আমি তো আনন্দের চোটে সবেতেই ফুল মার্ক্স দিয়ে দিলাম। অবশ্য না দেওয়ার কোনও কারণও ছিল না।
সিকিম ছাড়া আমাদের দেশের অনেক জায়গায় প্যারাগ্লাইডিং হয়। হিমাচলে হয় সবচেয়ে বেশি। বির বিলিং তো বিখ্যাত প্যারাগ্লাইডিং-এর জন্যে। মানালির কাছে সোলাং উপত্যকাতেও প্যারাগ্লাইডিং করা হয়। হিমালয়ের আনাচে কানাচে এরকম আরও অনেক জায়গা আছে।
তাই, যদি কখনও সুযোগ পাও, ওড়ার আনন্দটা ছেড়ে দিওনা কিন্তু। একটু ভয় লাগবে, কিন্তু ভয়টাকে জয় করাটাই তো আসল। ওই যে একটা বিজ্ঞাপনে বলে না, ‘ডর কে আগে জিত হ্যায়’? ঠিক সেরকম। একবার উড়ে দেখো। মজাটাই আলাদা।
ছবিঃ সেলফি স্টিকে লেখক
সমস্ত জয়ঢাকি ভ্রমণ একসাথে