অন্যভ্রমণ- ভ্রুম ভ্রুম পাহাড়ে-রজত চক্রবর্তী-বসন্ত২০২১

আগের পর্ব- পায়ে পায়ে হরিপদ, লক্ষ গাছের কথা, গৌরহরি দু চালার কাঙালি

টেবিলের উপর স্লিক মনিটর। স্লাইড মোডে ছবি ভেসে উঠছে, মিলিয়ে যাচ্ছে। ন্যাড়া পাহাড়ের মাঝে পথের জ্যামিতি। তারই মাঝে বড়ো বড়ো দাঁতের খাঁজ।

ডাক্তারবাবু চেয়ারে বসেই কর্ডলেস মাউসে হাত দিলেন। মনিটর জুড়ে শোভিত দাঁত। এখন তিনি ডেন্টিস্ট।

ডাঃ অরিজিৎ ঘোষ। দীর্ঘ মেদহীন চেহারা।

হাঁ করে থাকুন কিছুক্ষণ…। ওই যে দেখছেন ছবিটা, বাঁদিকে ওই খাদে আমার বন্ধু বাইক নিয়ে পড়ে গেল, তা ৪০-৫০ ফুট নীচে। গাছে আটকাল। চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে পড়েছিল..

দেখি হাঁ বন্ধ করুন, কুলকুচি করে নিন। মিলিয়ে ফেলেছেন দাঁতের অলিগলি আর পাহাড়ের খানাখন্দ। বাইরে পেশেন্টের ভিড়। একের পর এক পেশেন্ট আসছেন। তৃপ্তিসহ চলে যাচ্ছেন।

আর তাঁর মুখে তখন ভ্রামণিকের ছটা। বাইক নিয়েই বেরিয়ে পড়েন ডাক্তারবাবু। এই মফস্‌সল শহরে, বাড়ির দোড়গোড়া থেকে বাইকে স্টার্ট দিলেন। ব্যালকনিতে প্রিয়জনের টা-টা। কাশ্মীর-কারগিল-লাদাখ-মানালি-অমৃতসর চন্দননগর।

ছোটোবেলায় মুখে গাড়ির আওয়াজ করে দৌড়ানোর মতো। এই বেড়ানোর মধ্যে কোনও কৃতিত্ব দেখেন না তিনি। তিনি দেখেন আর দেখাতে চান পাহাড়ের ছবি। টিকিট, হোটেল, বুকিং এসবের মধ্যে স্বাধীনতা নেই, তাই… বলেই আবার ছবির ভিতর।

কেদার-বদ্রি-গঙ্গোত্রী-যমুনোত্রী গিয়েছি বহুবার। ‘এটা কোথায়,এ তো রাস্তাই নেই’ –

দেখা যায় পাহাড়ের বোল্ডার রাস্তা ধরে চলেছে বাইক, নীল আকাশের নীচে ধুম্র পাহাড়ের মাঝে। ‘আমরা ট্রেকিং করতে পারব না, একজনের বুকে স্টেন্ট আছে, কারও হাঁটুর প্রবলেম, কিন্তু যেতে তো হবে। তাই বাইক। ’

‘এটা তো ট্রেকিং রুট?’

‘কী করব বলুন, যেতে তো হবেই।’

নিশিডাকের মতো বেরিয়ে পড়া দুর্গমে। মুক্তিনাথ। বাইকে? ডাক্তারবাবু নির্বিকার। মুখে তৃপ্তির হাসি।

এ তো ১৮ হাজার ৮৩০ ফুট। খারদুংলা পাস!

হ্যাঁ,বাইকেই চলে গেলাম আমরা।

আমরা মানে সবচেয়ে বেশি বয়সের সুনিত সাহা, ৬০ বছর বয়স। ব্যাংকের অফিসার ছিলেন। আর সবচেয়ে কম বয়সের ইন্দ্রনীল গুপ্ত, বয়স ৪০, কর্পোরেট সংস্থায় আছেন। মাঝখানে বেশিরভাগই পঞ্চাশোর্ধ বিভিন্ন পেশার মানুষ। অজানার ডাক যে শোনে, সেই-ই বোঝে তার তীব্রতা। মণিকরণ, অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প। বাইকের ভ্রুম। বাইকের হ্যান্ডেলে বাঁধা আছে ক্যামেরা। চলচ্ছবি। আরাম তো কিনতেই পারেন। কিন্তু মনের গভীরে অ্যাডভেঞ্চার। বেরিয়ে পড়ার নেশা,এক পঙক্তিতে বসিয়ে দেয় হরিপদ-গৌরহরি-কাঙালি-অরিজিৎদের। অন্য ভ্রমণে।

অন্যভ্রমণরজত চক্রবর্তী। উৎসঃ আশ কথা পাশ কথা” গ্রন্থ থেকে লেখকের অনুমতিক্রমে প্রকাশিত। প্রকাশকঃ রূপালী পাবলিকেশন। ২০৬, বিধান সরণি , কলকাতা ৭০০০০৬

ভ্রমণ সব লেখা একত্রে

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s