আগের পর্ব- পায়ে পায়ে হরিপদ, লক্ষ গাছের কথা, গৌরহরি দু চালার কাঙালি,ভ্রুম ভ্রুম পাহাড়ে
ঘাংঘরিয়া। চারপাশে জলধারায় নির্বিরোধী গম্ভীর পাহাড়ের পর পাহাড় ভিজছে। মেঘ ভেঙে পড়ছে তার গায়ে। কাল সকালে গোবিন্দঘাট থেকেই বৃষ্টি। আজ সকালে ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার্সের দিকে হাঁটা শুরুর কথা। কেউই এই বৃষ্টিতে বেরোচ্ছে না, হঠাৎ কাঠের বারান্দার শেষে মেয়েটাকে দেখতে পেলাম। পায়ে স্পোর্টস-শু। পিঠে ন্যাপস্যাক। গায়ে ওয়েদার জ্যাকেট। যোশিমঠে দেখা হয়েছিল।
“আপনি কি যাচ্ছেন?”
কফিতে চুমুক দিয়ে টুপির আড়াল থেকে উত্তর এল, “হ্যাঁ।”
“এই ওয়েদারে, যাওয়াটা…”
“আমাকে যেতে হবে, চলি।”
গাইডের আগেই বেরিয়ে গেল মেঘেবৃষ্টিতে। পাহাড়ের পাকে পাকে হারিয়ে গেল জলছবিতে। আমার পাশে তখন পূরণ সিং। উত্তরকাশীর ছেলে। “সাব। বান্টিদিদি আজ যাবেই। গত আট বছর ধরে মা আর মেয়ে আসছে এই দিনে। দু-বছর মা অসুস্থ হওয়ায় আসতে পারছেন না। আটাশ বছরের বান্টিদিদি আসছে। দোতলার কোণের ঘরটা বুকড থাকে। আট বছর আগে বান্টিদিদির বাবা ফুলের রাজ্যে যে জায়গায় হারিয়ে গিয়েছিলেন ছোট্ট স্ট্রোকে। থেমে গিয়েছিল জীবন তাঁর। সেইখানে ফুল রেখে আসে বান্টিদিদি। বসে স্থির পর্বতরাশির মাঝে, ফুলের উপত্যকায়। নির্জন, শব্দহীন কথা হয়। মাথায় অদৃশ্য বাবার হাতের স্পর্শ পায় স্বর্গের কাছাকাছি, এইখানে, ফুলের উপত্যকায়।”
ভ্রমণ এক দর্শনের নাম। ভ্রমণ এক সংজ্ঞাহীন সম্পর্কের নাম। মানুষ হয়ে সর্বত্র ভ্রমণে থাকে। ঘুরে বেড়ায় অন্তরে অন্তরে। অজস্র পথে তার চলাবো চলতে বলে চলতেই থাকে নিরন্তর, সে টিকিট কাটুক না কাটুক, স্থানান্তর হোক না হোক, তার মন ঘটে চলে। ভিন্ন ভিন্ন পথে, বিস্ময়ে আনন্দে, দুঃখে, হর্ষে সে পথে পথেই খুঁজে নেয় পথ। মাধুকরী। জীবন। ভ্রমণের অন্যনাম।
সূত্র : শক্তি ভট্টাচার্য, বিপ্লব বসু, রত্না ভট্টাচার্য, শিবশঙ্কর দাস, হরিপদ চক্রবর্তী, অজিত পের, শিবু দেবনাথ, গৌরহরি কবিরাজ, ডা. অরিজিৎ ঘোষ।
অন্যভ্রমণ । রজত চক্রবর্তী। উৎস: আশ কথা পাশ কথা” গ্রন্থ থেকে লেখকের অনুমতিক্রমে প্রকাশিত। প্রকাশকঃ রূপালী পাবলিকেশন। ২০৬, বিধান সরণি , কলকাতা ৭০০০০৬