আগের পর্ব- পায়ে পায়ে হরিপদ, লক্ষ গাছের কথা, গৌরহরির রিকশো
হরিপদ আর গৌরহরির যা এখনও দেখা হয়ে ওঠেনি, তা দেখে ফেলেছেন কাঙালি মণ্ডল। ৭৫ বছর পেরোলো। চোখ দুটো জ্বলে উঠল যখন বললেন – জানেন আমার পাসপোর্ট আছে, কিন্তু চিন আর আরব যাওয়ার ভিসা কিছুতেই দিচ্ছে না,আজও পেলে এই সাইকেলেই ঘুরে আসতাম একবার।’ মমতায় সাইকেলের সিটে হাত বোলাচ্ছেন। কেজো ভিসা অফিসার বুঝতেই পারছে না,পারবেও না ,কাঙালিবাবুর আকুতি,উদ্দেশ্য। ধাত্রীগ্রামের মুড়াগাছা গ্রামের এক খেতমজুর সাইকেল চালিয়ে কেন যাবে চিন বা আরব? তাও আবার এই বয়সে। কোনও যে মানে নেই, সেটাই মানে’ কাঙালিবাবুর কাছে।
‘সকল দেশের সেরা’ এই দেশটাকে দেখার তীব্র বাসনা ছোটো থেকেই। স্বপ্নপাড়ি দেয়া মন। খাবার জোটানোটাই যেখানে বড়ো প্রশ্ন,সেখানে…। রাত যায়, দিন যায়। কত দেশ,কত জায়গা। পুরানো সাইকেল। প্যাডেলে চাপ। চাকা গড়ায়। গড়াতে গড়াতে গ্রাম ছাড়িয়ে শহর। বেবাক কাঙালি মণ্ডল। সদর-জেলা ছাড়িয়ে রাজ্য ছাড়িয়ে। ভিনরাজ্যে। শুধু রাজ্যের পর রাজ্য নয়, এক একটা রাজ্যের সমস্ত শহর শুধু নয়,শহরের আনাচ-কানাচ উনি দেখে বেড়িয়েছেন। কাশ্মীর-লে-লাদাখ-হিমাচল…যা দেখার স্বপ্ন আজও চোখের তারায় নিয়ে ঘোরেন হরিপদ বা গৌরহরি বাবুরা,কাঙালি সেটা সুযোগমতো করে ফেলেছেন। তিন বছর লেগেছিল তার ভারতটা চষে বেড়াতে। ‘ভারতের সব জায়গার মানুষ বড়ো ভালো,নীচে কোনও গোল নেই, খুব মিলমিশ, উপরেই যত গণ্ডগোল। কী সুন্দর দেশ গো আমাদের।’
কাঙালিবাবুর সরল কথা শুনে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম। দাঁড় করাল কথাগুলো। অন্য ভ্রমণ তাকে অন্য এক দর্শন দিয়েছে। নিজের অজান্তে সেই জল তিনি আঁজলা ভরে সবটুকু পান করেছেন। সবের মধ্যে তিনি সুন্দর দেখতে পান। এ ভীষণ বড়ো পাওয়া। প্রতি পায়ে অভাবেও সে তৃপ্ত। তিন ছেলে আর গিন্নি লুৎকারকে নিয়ে ভরন্ত সংসার। ৭৫ পেরোলো তরুণ স্বপ্ন দেখেন… ভিসা পেলেই চলে যাবেন দু-চাকায় চিন আর আরবে।
অন্যভ্রমণ । রজত চক্রবর্তী। উৎসঃ আশ কথা পাশ কথা” গ্রন্থ থেকে লেখকের অনুমতিক্রমে প্রকাশিত। প্রকাশকঃ রূপালী পাবলিকেশন। ২০৬, বিধান সরণি , কলকাতা ৭০০০০৬