সুমনা সাহার আগের লেখা- এমন আমি ঘর বেঁধেছি
বুলির দুপুরবেলা
নভেম্বর মাসের মেঘমুক্ত এক ঝলমলে দুপুরবেলা। আন্দাজ আড়াইটা। বুলির ঘুম ভেঙে গেছে সেই কখন! মায়ের ভয়ে বিছানায় মটকা মেরে পড়েছিল। সারাদিনের কাজকর্ম সেরে মা বিছানায় একটু গড়িয়ে নিতে আসে এই সময়েই। বুলিকে তো কখন খাইয়ে দিয়ে মা ঘুমু করতে বলেছে। এখন যদি বিছানা থেকে নামে, মা-র গায়ে ছোঁয়া লেগে গেলেই মা জানতে পারবে যে, বুলি চুপি চুপি পালাচ্ছে। কিন্তু বুলির আর শুয়ে থাকতে মন চাইছেই না! তখন থেকে একটা পাখি ডেকেই চলেছে—‘টি ট্টি ট্টিট্টি টিইইই’। ওই পাখিটাকে দেখবার জন্য তার মন ছটফট করছে। বুলি আর থাকতে পারে না, পা টিপে টিপে উঠে পড়ে। কিন্তু মা তো বুলির সঙ্গে গায়ে যেন চাবি দিয়ে রেখেছে। ঠিক টের পেয়েছে, আড়চোখে একটু চেয়ে ঘুম ঘুম গলায় বলল, “ঠামিকে বিরক্ত করবে না, ছাদে যাবে না, বিলুর সঙ্গে খেলতে গেলে ক্লাস্টার ফাইভের মাঠেই থাকবে!” বুলি তখন মায়ের মিষ্টি গালে একটা ছোট্ট হামি দিয়েই ছুট—“আচ্ছাআআ মা!”
প্রথমেই বুলি গেল বারান্দায়। ওখানে মায়ের শখের টবের বাগান। নীল অপরাজিতার লতা, হলুদ বড় বড় ফুলওয়ালা এলামুন্ডার লতা, ঝুমকো জবার লতা—মায়ের লতানে গাছের খুব শখ। সব ফুলে ফুলে ভরে বারান্দা বেয়ে নিচে ঝুলবে, এইটা মা-র খুব ভালো লাগে। এছাড়াও আছে তুলসী, এলোভেরা, আদা, হলুদ, লঙ্কা চারা। শীত আসার আগেই বসানো হয়েছে গাঁদা, গোলাপ, দোপাটি চারা। এই সমস্ত গাছে ফুল ধরলে দুচারটে মৌমাছিও চলে আসে। তাই বারান্দায় গাছের বেশি কাছে যাওয়াও বারণ। তবুও একবার বারান্দায় উঁকি দিয়েই বুলি দেখল একটা ঝুঁটিওলা ঝগরাটে বুলবুলি পাখি বসে আছে, বাপি বলেছে, এগুলোকে সেপাই বুলবুলি বলে। একসঙ্গে তিনটে-চারটে হলেই ক্যাঁচর ম্যাচোর করে ঝগড়া বাঁধায়। ওদের মাস্ক পড়তেও হয় না, যখন খুশী, যেখানে খুশী উড়ে বেড়ায়। কী মজা! কেমন স্বাধীন! আর বুলি তো কতদিন স্কুলে যায়নি, স্কুলের মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে খেলেনি, টিফিন বেলায় মায়ের কাছ থেকে বায়না করে চেয়ে নেওয়া পয়সায় পিছনের ছোট গেট দিয়ে আলুকাবলি, চুড়মুড় আর ঝালনুন দেওয়া বিলিতি আমড়া খায়নি! পাখিটাকে দেখে বুলির খুব হিংসে হয়। পাখিটাও সেটা বুঝতে পেরেছে। ও সামনের করবী গাছের ডালে সরু ঠোঁট ঘষে খ্যা খ্যা করে হেসে উঠল, তারপর মহা অবহেলায় বুলির দিকে ডানা নেড়ে টা টা করে উড়ে গেল সোনালী রোদ্দুরে ডানা মেলে!
আজ কয়েকমাস হল, এদিকটায় অনেক পাখি আসছে। বাপি বলেন, এখন দূষণ অনেক কম, কী এক ‘করোনা’ নামে ভাইরাসের জ্বালায় মানুষ ঘরের ভেতরে বন্দী। ইস্কুল-কলেজ-অফিস-কলকারখানা সবই বন্ধ বা নিভু নিভু। তাই বাতাসে ধোঁয়া কালি কম। আর তাই প্রকৃতি আগের থেকে অনেক বেশি স্বচ্ছ। অনেক পাখি, যাদের এদিকে গত কয়েকবছরে দেখাও যায়নি, তাদেরও আসতে দেখা যাচ্ছে। বুলিদের এই আবাসনে আছে সব মিলিয়ে ২৫ টা ক্লাস্টার। প্রত্যেক ক্লাস্টারে চারটে করে চারতলা এপার্টমেন্ট, এ-বি-সি-ডি করে নাম দেওয়া। প্রত্যেক ক্লাস্টারের সামনে রয়েছে একটা করে উঠোনের মত ছোট খেলার মাঠ। খুব বড় একটা মাঠ আছে সব চেয়ে পিছনে, ওখানে শীতের দিনে বড় দাদাদের ক্রিকেট ম্যাচ হয়। ওরা থাকে ক্লাস্টার ফাইভ বি-তে, আর বিলুদের সি-ব্লক। তাই বুলিদের বারান্দা থেকে বিলুদের শোবার ঘর দেখা যায়। ওদের নামের যেমন মিল, উল্টেপাল্টে নিলেই হল, তেমনি ওদের ভাবও খুব। এই ইস্কুল বন্ধ সময়ে দুজনে মিলে কত যে নতুন পাখি আর নতুন নতুন লতাপাতা আবিষ্কার করেছে, তার গোনা গাঁথা নেই। এখান থেকে বেশ কিছুটা দূরে, বড় মাঠও ছাড়িয়ে আছে একটা মস্ত ঝিল, অপার বিস্ময়ের রাজত্ব সেইখানে। তার কাঁটা দিয়ে ঘেরা সেই ঝিলে আগে পাখি আসত অনেক! বাপি বলেছে, তারা নাকি এখন আর এপাড়ায় আসে না। তবে এবার শীতে নাকি দূরের পাখি আসার খুব চান্স। বুলি আর বিলুর মধ্যে গোপনে আলোচনা হয়েছে, একদিন দুজনে মিলে চুপিচুপি গিয়ে পাখি দেখে আসবে। বুলি বারান্দায় আরেকবার উঁকি দিয়ে দেখল, বিলুকে দেখা যায় কি না। সে একবার ছাদে যাওয়ার জন্য উসখুস করছিল। ছাদে যাওয়ার সিঁড়ির মুখেই ঠামির ঘর। যেতে গিয়েই ধরা পড়ে গেল, ঠামি জেগে আছে আর লাল টুকটুকে উলের বল নিয়ে সোয়েটার বুনছে। মা কত বারণ করে, “আপনার চোখের সমস্যা, কি দরকার মা এসমস্ত করবার? এখন সব দোকানে সব রকমের জিনিস কিনতে পাওয়া যায়!” ঠামি তবু শুনবে না, প্রতিবছর বুলির জন্য একটা কানঢাকা টুপি, কিম্বা বাপির জন্য একটা উলের মাফলার, নয়তো মা-র জন্য ব্লাউজ কিছু না কিছু করবেই।
ঠামি বলল, “কোথায় যাওয়া হচ্ছে বুলি রানী?”
বুলি বলল, “কোথাও না”, ও ঠামির কাছে এসে বসল। বলল, “একটা পাখির ডাক শুনছিলাম, ওটাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে!”
“তাই? তা, কেমন করে ডাকছিল পাখিটা?”
“টি ট্টিট্টি ট্টিইইইই করে।”
“ও তো হট্টিটি পাখি দিদাভাই। এখানে তো দেখতে পাবে না। ঐ যে দূরে জলা, ওইখান থেকে ডাকছে। চারদিক নিজ্ঝুম, তাই পষ্ট শোনা যাচ্ছে। আমিও শুনেছি।”
“হট্টিটি পাখি কেমন দেখতে গো, ঠামি?”
“খুব সুন্দর, জানো? দু’রকম হট্টিটি হয়, জানি, লাল আর হলদে লতিকা। আমাদের এখানে বেশি আসে লাল-লতিকা হট্টিটি। শালিখ পাখি দেখেছ, তো? তার থেকে একটু বড়সড়, কিন্তু দেহের তুলনায় ওদের ঠ্যাং দুখানি বিরাট লম্বা। সব মিলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে যখন, প্রায় তোমার এক ফুট স্কেলের চেয়েও আরেকটু বড় হবে। লাল লতিকা হট্টিটি লম্বায় ৩৪-৩৭ সেন্টিমিটার। তার মানে ইঞ্চির মাপে ১৫-১৮ ইঞ্চি হলে এক ফুট থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত বলতে পারো। এদের চোখের সামনে টকটকে লাল চামড়া। ওটাকেই লতিকা বলে, ঐ লাল লতিকা চোখের দুপাশে গোল করে ঘেরা, আর মাঝখানে কালো চকচকে চোখ, ভারি সুন্দর লাগে! দেখলে তোমার মনে হবে বুঝি ওরা রোদ-চশমা পরে আছে। গলা, বুক, মাথার তালু ও ঠোঁটের ডগা কালো। ঠোঁটের গোড়া থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত লাল। চোখের পাশ থেকে ধবধবে সাদা দাগ তুলির টানের মত ঘাড় হয়ে বুকের পাশ দিয়ে পেট ও লেজের তলা পর্যন্ত ঠেকেছে। ডানা বোজানো অবস্থায় পিঠ ও লেজের উপর দিকটা চকচকে বাদামির ওপর জলপাই রঙের আভা। লম্বা লম্বা ঠ্যাং-দুখানা ফুটফুটে হলুদ বর্ণের।”
বুলি আনন্দে হাততালি দিয়ে ওঠে। বলে, “ওরা অমন টিট্টি করে ডাকে?”
“শুধু কি একরকম? ওরা পাঁচ ধরনের সুরে ডাকতে পারে, জানো দিদাভাই? বিপদ সংকেত, খুশির সংকেত, ডিমপাড়া ও বাচ্চা ফোটার সংকেত, বাচ্চা হারানোর সংকেত, বিপদ মুক্তির সংকেত। সব কটা সুর আলাদা আলাদা ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। ওদের বুদ্ধিও খুব। খুব হুঁশিয়ার। সাবধানে চলাফেরা করে। যদি বুঝতে পারে, তুমি ওর ক্ষতি করবে, তখনই পালাবে। শীতের দিনে যখন খালে বিলে জল মরে যায়, একটু একটু চরা জেগে ওঠে, ওইখানে ওরা খাবার খুঁজতে আসে। কাদার মধ্যে, জলাজমিতে বা ধানের খেতেও ওদের দেখতে পাবে। দলে দলে থাকে, জুড়ি বেঁধে থাকে।”
“ঠামি, ওরা কি খায়?”
“জলের পোকামাকড়, ছোট মাছ, ব্যাঙাচি, কেঁচো, কচি শাকসবজি এইসসমস্ত খায়। শীতের শেষে ওরা ডিম পাড়ে।”
“ওরাও বাসা করে? বাবুই পাখির মত সুন্দর বাসা? নাকি কোকিলের মত বাসা না বানিয়ে কাকের ঘরে ডিম পাড়ে?”
“দিদাভাই, আমার সোনা মা, তুমি সব মনে রেখেছ?”
“হ্যাঁ, তুমি আরেকদিন যে আমাকে কাকের বাসাতে কোকিল ছানার কথা, বাবুই পাখির দর্জির মত বাসা বানাবার কথা বলেছিলে, আমি সেসব বিলুকেও বলেছি।”
“না গো না। এরা বাবুইয়ের মত সুন্দর করে বাসা বুনতে পারে না। এরা গাছের উপর বসতেও পারে না। ওদের ঐ লম্বা ঠ্যাং নিয়ে ভারি অসুবিধা। এদের বাসা দেখলে তোমার হাসি পাবে। বাচ্চা ছেলের মত একটা গর্ত মত জায়গায় অথবা মাঠ-প্রান্তরের নিরিবিলি জায়গায় মাটির ঢেলা দিয়ে বাসা তৈরি করে, চারপাশে ছোট ছোট মাটির ঢেলা সাজিয়ে থালার মত বাসা বানিয়ে মাঝখানে ৩-৪ টে ডিম পাড়ে। মা-পাখি আর বাবা-পাখিতে মিলে পালা করে ডিমে তা দেয়। ২১-২৩ দিন সময় লাগে ডিম ফুটতে। মা পাখিটা জলে পালক ভিজিয়ে বাচ্চাদের কাছে আসে, তখন ছানাগুলো মায়ের ভেজা লোম চুষে জলতেষ্টা মেটায়!”
“ঠামি, ওদের ঠ্যাং গুলো কেন অত লম্বা?”
“সে একটা গল্প আছে মজার।”
গল্পের গন্ধ পেয়ে বুলি ঠামির কোলের কাছে ঘেঁষে আসে।
“সে এক পুরাণের গল্পকথা। হট্টিটি পাখির একবার ভারি অহঙ্কার হয়েছিল, খালি বলে বেড়াত, “জানিস, আমি আকাশ আর পৃথিবীর ভার বইতে পারি!”
অন্য সব পাখিদের ঐকথা সে দিনরাত বলত। দেমাক দেখাত। অন্য পাখিগুলো শুনে শুনে বিরক্ত হয়ে একদিন সবাই মিলে বিধাতার কাছে গেল। বলল, “ভগবান, হট্টিটির গর্ব যে আর সহ্য হয় না! আপনি ওর দেমাকের একটা ব্যবস্থা করুন। ও আমাদের সবাইকে হেলাফেলা করে!”
বিধাতা তখন খুব রেগে গিয়ে হট্টিটিকে ডেকে পাঠালো, “কি শুনছি এসব? তুমি কি বলে বেড়াচ্ছ? তুমি নাকি স্বর্গমর্ত্যের ভার বইতে পার?”
হট্টিটির তো ধমক খেয়ে গলা শুকিয়ে গেল, ও আমতা আমতা করে বলল, “না মানে, আমি তো তেমন কিছু…”
বিধাতা আরও রেগে বললেন, “স্বর্গ নিয়ে ইয়ার্কি? যাও, এখন থেকে তোমাকে দুই পায়ে আকাশ বইতে হবে!”
সেই থেকে হট্টিটি তার ঐ লম্বা পা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় মাঠেঘাটে, গাছের ডালেও বসতে পারে না, ঘুমাবার সময় পা দুটো আকাশের দিকে উঁচু করে তুলে রাখে, যাতে মাথায় আকাশ ভেঙে না পড়ে। তবে আমি অবশ্য কখনো হট্টিটিকে পা তুলে ঘুমাতে দেখিনি।
বুলি অবাক হয়ে চেয়ে থাকে, ওর মনে কল্পনার জাল বোনা হতে থাকে। ঠামি বলেন, “এরপর একদিন বাপির সঙ্গে ঝিলের ধারে যেও, দেখ যদি সেই আলতা রঙা লাল টুকটুক ঠোঁট, হলুদ লম্বা ঠাং আর সানগ্লাস পরা পাখিটাকে দেখতে পাও!”
গল্প শুনতে শুনতে বুলি লক্ষ করে ‘ঘুরুর ঘুরুর ঘু ঘু’ করে একটানা একটা পাখির ডাক ভেসে আসছে ঠামির জানলা দিয়ে। হট্টিটির ধ্যান থেকে মন সরে আসে বুলির, সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে সে ঠামির জানলার বাইরেটা লক্ষ্য করতে করতে জিজ্ঞাসা করে, “ঠামি, এটা তো ঘুঘু পাখির ডাক, কোথা থেকে ডাকছে বলো তো? পাখিটাকে দেখতে পাচ্ছি না তো!”
“দেখতে পাবে কি করে? ওরা যে ভারি লাজুক পাখি। কোথায় ঝোপঝাড়ের মধ্যে বসে ডাকছে। তবে আমি কাল খুব ভোরে ওকে দেখেছি। তুমি তখনো ওঠনি। ওটা তিলা-ঘুঘু। ঐ যে তেলাকুচো লতা ছেয়ে আছে দেখছ, ওখানে বসে তেলাকুচো ফল ছিঁড়ে খাচ্ছিল, আমি দেখেছি। তখনও ডেকেছিল।”
“তুমি আমাকে ডাকলে না কেন ঠামি? আমিও দেখতাম। কেমন দেখতে গো তিলা-ঘুঘু?”
“আকারে এরা অনেকটা পায়রারই মত। কপালে, মাথায়, মুখে, গলায়, বুকে বেগুনি-গোলাপি আভা। ডানার ওপর সাদা ছিট ছিট। ঘাড়ের দু’পাশে কালোর ওপর সাদা ছিট। লেজ কালচে-বাদামি। লেজের তলা সাদা। ঠোঁট কালচে। চোখের চারপাশে লালচে বলয়। পা-পায়ের পাতা সিঁদুরের মত লাল। ছেলে আর মেয়ে পাখি একই রকম দেখতে। তবে মেয়ে পাখি একটুখানি ছোটখাট। এরা এত ভীতু আর বোকা যে দুষ্টু ছেলেরা এদের যথেচ্ছা গুলতির নিশানায় মেরে ফেলেছে। ঘুঘুর মাংস খেতে খুব নরম আর সুস্বাদু। তাই একটা সময় এদের মাংসের লোভে খুব শিকার করেছে মানুষ, জাল ফেলেও ধরা হত ঘুঘু। তাই এখন এদের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। আমাদের ছোটবেলায় উঠোনে ধান ছড়িয়ে দিলে কত্ত ঘুঘু এসে খেত। এখন তো খুব কমই দেখতে পাই।”
বুলির মনটা খারাপ হয়ে যায়। ঠামি বলে চলেন, “আমাদের ছোটবেলায় শুনেছি, রামঘুঘু, রাজঘুঘু, লালঘুঘু, সবুজ-ঘুঘু এমন কত সব ঘুঘুর কথা। এখন এই তিলা ঘুঘু ছাড়া আর বড় একটা চোখে পড়ে না। ঘুঘুর ডাকটা ভারি মনকেমন করা। ছোটবেলাকার কথা মনে পড়ে যায়। তিলা ঘুঘুকে ইংরাজিতে স্পটেড ডাভ বলো তোমরা, বাপির বই থেকে ছবি দেখে নিও।”
“ঠামি, ওরাও বাসা বানায়?”
“হ্যাঁ, ওরা যে কোনো গাছেই বাসা বাঁধে, নারকেল, সুপারি, আমগাছ থেকে শুরু করে একেবারে শিম, লাউগাছের ঝোপেও বাসা বাঁধে। নরম লতা বা শুকনো দূর্বাঘাস দিয়ে বাসা তৈরি করে। বেশিরভাগ ২ টো করেই ডিম পাড়ে। মা-বাবা দুজনে মিলেই ডিমে তা দেয়। ১৩-১৫ দিন পরে কচি ছানাগুলো বেরোয় ডিম ফুটে। ধান-গম সবই খায় ওরা, তবে সর্ষে খেতে খুব ভালোবাসে। তুমি এক কাজ কোরো দিদাভাই। রোজ সকালে ছাদে উঠে একমুঠো করে সর্ষে দিও তো! ডাক যখন শোনা যাচ্ছে, কাছেপিঠেই বাসা করেছে হয়তো। তুমি রোজ খেতে দিলে, ওরা এসে খাবে, তখন তোমাকে আর ভয় পাবে না। ভালোবাসলে ওরা পোষ মানে। ঠিক পায়রার মত।”
বাইরে থেকে বিলুর গলা পাওয়া যায়, “বুলি, নিচে আয়, খেলবি না?” ঠামি হেসে বলেন, “বুলি রানীর বন্ধু ডাকছে। যাও, মাস্ক পরে নিয়ে খেলতে যাও। নিচের মাঠেই থেকো কিন্তু, দূরে যেও না, মা রাগ করবে!”
বুলি ঠামিকে আদর করে বলে, “কাল আবার পাখির গল্প শুনব কিন্তু ঠামি।”
বৈজ্ঞানিকের দপ্তর সব লেখা একত্রে
খুব ভালো লেখা, দারুন ভালো উপস্থাপনা।
LikeLike