সুমনা সাহার আগের ছড়া- পিঁপড়ের গান,তুমিই দশম
বাগানের এককোণে বড়ো আম গাছে,
বহুরূপী প্রাণী এক বাসা করে আছে।
আমের লোভেতে আসে যত ছেলেপুলে,
একদিন বলাবলি করে সবে মিলে।
একজন বলে ভাই অদ্ভুত ব্যাপার,
দেখেছিনু এক প্রাণী সাপের আকার!
গাছের কোটরে বাসা গায়ে লাল রঙ,
এ-যাবৎ আর প্রাণী দেখিনি অমন!
আরেক সঙ্গী তাকে আমল না দিয়ে,
বলে আমি দেখেছি যে আরও কাছে গিয়ে।
লাল কোথা? সে প্রাণীটি সবুজ বরন,
পাতার আড়ালে করে আত্মগোপন।
আরেক সঙ্গী বলে নিশ্চিত জানি
দেখেছি অনেকবার, হলুদ সে প্রাণী।
একজন লোক এসে বলে তোরা থাম,
ঝগড়া থামিয়ে তোরা খেয়ে যা না আম।
এ-বাগানে দিবারাত্রি বাস করি তাই,
আমগাছে এ-প্রাণীর রোজ দেখা পাই।
কখনও এ লাল হয়, সবুজ কখনও
কখনও হলুদ কিংবা রঙ নেই কোনও।
এর নাম বহুরূপী, নানা রূপ ধরে
একেক জনেতে দেখে এক-এক প্রকারে।
সাকার বিগ্রহ তিনি ভক্তের চিন্তনে,
জ্ঞানী তাঁরে রূপহীন শক্তি রূপে মানে।
অদ্বৈতবাদীর ঈশ্বর নির্গুণ নিরাকার,
দেশ-কাল অতিক্রান্ত অব্যক্ত ব্যাপার।
সাকার আকারহীন কিংবা তারও পার,
ইতি নাই ঈশ্বরের মহিমা অপার!
যার কাছে যতখানি প্রকাশিত হন,
সেইজন বোঝে তার স্বরূপ তেমন।
ঈশ্বরের নানা রূপ বোঝাতে সে কথা,
শ্রীরামকৃষ্ণ বলেন এই বহুরূপী গাথা।
উচ্চ তত্ত্ব সহজেই মনে গেঁথে যায়,
সরল সুন্দর এই গ্রাম্য উপমায়।