ভারত ও বিশ্বের বৈজ্ঞানিক-সব লেখা একত্রে
পঞ্চদশ শতাব্দীতে সারা ইউরোপ জুড়ে রেনেসাঁ— অর্থাৎ নবজাগরণ শুরু হয়। সমাজ সবেমাত্র তখন মধ্যযুগ থেকে আধুনিকতার দিকে পা বাড়াচ্ছে। পুরনো দর্শন বদলে যাচ্ছে দ্রুত। প্রগতিশীল নবচিন্তাভাবনার প্রকাশ হচ্ছে শিল্পকলা ও বিজ্ঞানে। ঈশ্বরের চাইতে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে মনুষ্যত্বে। সমাজ বদলের সেই সন্ধিক্ষণে ইতালিতে জন্ম নেন লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। যদিও চিত্রকর হিসাবেই তাঁর খ্যাতি বেশি, কিন্তু ছবি আঁকার মতো বিজ্ঞানও ছিল তাঁর প্রিয় বিষয়। অনেক অত্যাশ্চর্য বিজ্ঞান ভাবনা তাঁর মাথায় আসত, যার চিত্রণ ফুটে উঠত তাঁর ছবিতে।
আশ্চর্যের বিষয় হল, তাঁর আঁকা বিখ্যাত সব ছবি— যেমন ‘ম্যাডোনা’, ‘লাস্ট সাপার’, ‘মোনালিসা’, ‘সেন্ট জন দ্য ব্যাপ্টিস্ট’, ইত্যাদি প্রবল জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি পেলেও, অনেক আঁকাই এই খামখেয়ালী মানুষটি শেষ না করে ফেলে রেখে গিয়েছেন। সেই সব ছবি অসম্পূর্ণ না থেকে গেলে আজ আমরা দেখতে পেতাম অসাধারণ সব শিল্প কর্ম! কিন্তু একজন শিল্পীর মনের অভ্যন্তরে কী চলছে— তা জানা অসম্ভব, কারণ সেই মানুষটি নিজের মনের কথা কাউকে বলতেও কুণ্ঠিত হন, মগ্ন থাকেন তার শিল্পকর্মে।
একজন প্রকৃত স্রষ্টা ছিলেন লিওনার্দো। তাই তার প্রতিভা শুধু চিত্রশিল্পে আটকে থাকেনি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে তার সমান পারদর্শিতা ছিল, যার অজস্র উদাহরণ তিনি রেখে গেছেন তার বিরাট কর্মজীবনে। একদিকে যেমন চিত্তাকর্ষক অনেক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করে গেছেন লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, আবার অন্যদিকে সেনাবিভাগে যোগ দিয়ে মারণাস্ত্র তৈরির কাজ মন দিয়ে করে গিয়েছেন। তাঁর চরিত্রের এই বিপরীতধর্মী কাজের প্রতিফলন হয়েছে তাঁর শিল্পকর্মে ও জীবনযাপনে। যেমন, পশু হত্যার বিরোধী ছিলেন বলে নিজে সারাজীবন নিরামিষাশী ছিলেন, কিন্তু সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে যুদ্ধের কর্তব্যকর্ম থেকে বিরত থাকেননি লিওনার্দো।
ইতালির ভিঞ্চি শহরে ১৪৫২ সালে জন্ম হয় লিওনার্দোর। ভিঞ্চি শহর চিরকালই চিত্রকরদের স্বপ্নের নগরী। লিওনার্দো জন্মাবার অনেক অনেক বছর আগে থেকেই সেই শহরের সংস্কৃতিতে মিশেছিল ছবি আঁকা। লিওনার্দোর যখন ১৫ বছর বয়স, তখন তার বাবা পিয়েরো ছেলেকে ভর্তি করেন এক বিখ্যাত চিত্রকর ভেরোশিও-র ছবি আঁকার স্কুলে। সেখানে লিওনার্দো তার জন্মগত প্রতিভা কাজে লাগিয়ে তাক লাগানো একের পর এক ছবি এঁকে তাঁর গুরুকেও ছাড়িয়ে যেতে থাকেন। ভেরোশিও “ব্যাপ্টিস্ম অফ খ্রাইস্ট” নাম দিয়ে একটি ছবি আঁকেন। সেই ছবিতে অপরূপ এক পরি এঁকে দেন লিওনার্দো। গোটা ছবিটার গুণমান লিওনার্দোর তুলির ছোঁয়ায় এতই প্রাণবন্ত হয় যে, লিওনার্দোর কাজের খ্যাতি সারা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। শোনা যায় ছাত্রের অসামান্য কাজ দেখে গুরু ভেরোশিও বাকি জীবনে কোনোদিন নাকি আর নিজের হাতে তুলি ধরেননি।
ভিঞ্চির পাশে ইতালির বিখ্যাত শহর ফ্লোরেন্সে চার্চের পুরোহিতেরা লিওনার্দোকে যিশুখ্রিস্টের জীবনের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উপর ছবি আঁকার জন্য ডেকে নিয়ে যান। খ্রিস্টধর্মে প্রচলিত আছে যে, যিশুর জন্মের সময় তিনজন জ্ঞানী ব্যক্তি আকাশের তারা দেখে দিক নির্ণয় করে যিশুকে খুঁজে বার করেন। যিশু তখন মা মেরীর কোলে শুয়ে। তিনজন জ্ঞানী যিশুকে আরাধনা করে তাকে অনেক উপঢৌকন দেন। খ্রিস্টধর্মে এই ঘটনাকে বলা হয় “এডোরেশন অফ ম্যাগি”। লিওনার্দো এই বিষয়ের উপর এক জীবন্ত ছবি আঁকেন। কিন্তু সেই ছবি শেষ না করেই তিনি যোগ দেন মিলান শহরের ডিউকের চাকরীতে। খুব সম্ভব উপার্জনের তাগিদেই তাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল।
মিলান শহরের ডিউক লিওনার্দোকে তার সভার জন্য অনেক ছবি আর মূর্তি আঁকার কাজ দেন। এসব কাজ ছাড়া তাকে বলা হয় যুদ্ধের জন্য নতুন অস্ত্রশস্ত্র, বাড়ি আর যন্ত্রের নকশা বানাতে। মনে করা হয়, এই কাজে হাত দিয়েই লিওনার্দোর বহুমুখী প্রতিভার পুরোপুরি বিকাশ হয়। অনেক পড়াশুনো করে আর নিজের বুদ্ধি প্রয়োগ করে তিনি বানাতে থাকেন অভিনব সব যন্ত্রের নকশা। ট্যাঙ্ক, সাবমেরিন, ফ্লায়িং মেশিনের অভিনব সব নকশা আঁকেন একের পর এক। মিলান শহরে এই বিচিত্র কারিগরের কারখানায় ছাত্র এবং দর্শনার্থীর ভিড় লেগে থাকত। ছবি এঁকে আর মডেল বানিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে থাকেন লিওনার্দো।
কয়েক বছর পর তাঁর মাথা ঘুরে গেল অন্যদিকে। নিজের গড়া ছবি আর মডেল অসমাপ্ত রেখে ঝুঁকলেন প্রকৃতির রহস্য জানতে। কখনো বাইরের মুক্ত পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ান, পশুদের ভালবেসে তাদের গতিবিধি লক্ষ করেন, আবার কখনো নিজস্ব কর্মশালার ভিতরে ঘরের দরজা বন্ধ করে গভীরভাবে চিন্তা করেন পৃথিবী ও তার পরিবেশ নিয়ে।
মানুষের শরীরের ছবি আঁকতে আঁকতে ঝোঁক চাপল শবব্যবচ্ছেদের। মিলানে ডিউকের দেওয়া এই চাকরীতেই এরপর তিনি শবব্যবচ্ছেদ করে মানুষের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চিনতে থাকেন, ভাবতে থাকেন আর লিখতে থাকেন অনবদ্য এক ডায়েরি, যাতে চারটি বিভিন্ন ভাগে লেখা হতে থাকে – ছবি আঁকা, স্থাপত্য, জ্যামিতি ও মানুষের অঙ্গ ব্যবচ্ছেদের অভিজ্ঞতা। কর্মশালার সব কাজ থামিয়ে তিনি সেই জায়গাকে পরিণত করেন শবব্যবচ্ছেদের ল্যাবরেটরিতে। মিলানে ১৭ বছরের বসবাস কালে তিনি মাত্র ছয়টি ছবি আঁকা শেষ করেন, যার মধ্যে দুটি বিখ্যাত ছবি হল – ‘লাস্ট সাপার’ আর ‘ভারজিন অন দ্য রক্স’।
১৪৯৯ সালে লিওনার্দোর গুণের পূজারী ডিউক ক্ষমতাচ্যুত হন। কাজেই লিওনার্দোকে পেট চালানোর জন্য নতুন কোনও পৃষ্ঠপোষক খুঁজতে যেতে হয়। পরবর্তী ষোল বছর লিওনার্দোকে সারা ইতালি চষে বেড়াতে হয় কাজের সন্ধানে। একাধিক ক্ষমতাশালী মানুষের সান্নিধ্যে আসেন তিনি। এই সময়ে তার স্থাপত্যশিল্পের এক অসামান্য অবদান হল কন্সট্যান্টিনোপলে ‘গোল্ডেন হর্ন’ মোহনায় ৭৫০ মিটার লম্বা এক ব্রিজের নকশা। ঠিক এই সময়ে তিনি বহু জনশ্রুত ছবি – ‘মোনালিসা’ আঁকা শুরু করেন। অনেকে এই ছবিকে তার নিজের প্রতিকৃতি বলেও মনে করে। তিনি রোমে পোপের অধীনে কাজ শুরু করে কর্মশালা বানিয়ে আবার যন্ত্রপাতির নকশা আর ছবি আঁকার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। শবব্যবচ্ছেদের কাজও সমান ভাবে চলতে থাকে। কিন্তু মহামান্য পোপের নির্দেশে তাকে সেই কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়, কারণ মানুষের মরদেহ ঘাঁটাঘাঁটি করা খ্রিস্টানধর্মে সেই সময়ে স্বীকৃত ছিল না।
এরপর ফ্রান্সের রাজা ফ্রান্সিস-১ লিওনার্দোকে প্রধান রাজকীয় চিত্রকর ও স্থপতির পদে বহাল করেন এবং নিয়মিত মাসহারা দিতে থাকেন। লিওনার্দোর পাকাপাকি বাসস্থানের ব্যবস্থাও করা হয়। কিন্তু তিনি পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন। ডান হাত অকেজো হয়ে গেলেও বাম হাত দিয়েই ছবি আঁকা আর ছাত্রদের মডেল বানানোর শিক্ষা দিতে ছাড়েননি লিওনার্দো।
লিওনার্দোর লেখা ডায়েরি তার শিল্পী সত্ত্বার চরম নিদর্শন। তাঁর চিন্তা ভাবনার প্রসারতা যে কয়েক শতক আগে এগিয়ে ছিল, তা তাঁর ডায়েরি পড়লে বোঝা যায়। অনন্যসাধারণ মনের অধিকারী এই শিল্পী ও স্থপতি তাই আজও মানুষের বড় কাছের, বড়ই প্রিয়। তিনি মনে করতেন মানুষের দুই চোখ হচ্ছে সবচাইতে বড় প্রকৃতির দান— যার মধ্যে দিয়ে সে পরিবেশ ও পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারে। চোখে যা ধরা পড়ে, মনের পর্দায় সেই দৃশ্য বিকশিত হয়ে সত্য ধরা দেয়। তবে দেখার ব্যাপারটা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বুঝে নিতে হবে কীভাবে কোনও ঘটনা দেখা উচিত। তবেই জানা যাবে প্রকৃতির বুকে লুকিয়ে থাকা রহস্য। লিওনার্দো মনে করতেন এই পৃথিবীতে তিন ধরণের মানুষ আছে— যারা চোখে সঠিক দেখতে পায়, যারা দেখিয়ে দিলে দেখতে পায়, আর যারা একেবারে দেখতেই পায় না। প্রথম শ্রেণীভুক্ত হবার কারণে, চোখে দেখার এই অসামান্য ক্ষমতার জন্যই তিনি ছবি আঁকা ও বিজ্ঞানকে অনুধাবন করার দুই বিপরীত দিক প্রবল দক্ষতায় তুলে ধরেছেন মানুষের কাছে।
মানুষের শরীর আঁকতে গিয়ে তিনি বুঝতে চেষ্টা করেছেন কেমন ভাবে প্রকৃতি মানুষের শরীরের গঠন তৈরি করেছে, একের পর এক হাড়ের বিন্যাসের কারণে, পেশির পরিচালনায়, কী করে ফুটে ওঠে শরীরের ছন্দ ও বিভঙ্গ। প্রথমে ফ্লোরেন্স, তারপর রোমের হাসপাতালে লিওনার্দো শিক্ষা নিয়েছেন শবব্যবচ্ছেদের। প্রথম দিকে হাড় আর পেশীর বিন্যাস নিয়ে মাথা ঘামালেও পরবর্তী কালে তিনি বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান করেছেন শরীরতত্ত্বের অন্যান্য দিক নিয়েও। দেহের প্রতিটি অঙ্গ মানুষকে কীভাবে পরিচালনা করে সেই নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে মস্তিষ্ক, হৃদয়, ফুসফুসের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করেছেন, লিখে রেখেছেন প্রতিটি তথ্য। মানুষের মনের সুক্ষ অনুভূতির উপর এই অঙ্গগুলোর প্রভাব নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেছেন।
নবজাগরণের যুগে শরীরবিজ্ঞান অনেক এগিয়েছে লিওনার্দোর হাত ধরে। শরীর বিজ্ঞানের চেতনা মানুষের মধ্যে আনবার জন্য তিনি মানুষের শরীরের ছবি এঁকে আবছা তুলির টানে শরীরের আভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এঁকেছেন নিখুঁত ভাবে। গর্ব করে বলেছেন— বই পড়ে জ্ঞানার্জনের চাইতে তাঁর আঁকা ছবি দেখে শরীরবিদ্যা শেখা, অনেক বেশি কার্যকর। তবে লিওনার্দো কোনোদিন তার কোনও ছাত্রকে শরীরবিদ্যার পাঠ দেননি। কারণ তিনি মনে করতেন, যেহেতু তিনি শল্যচিকিৎসক ছিলেন না, তাই তাঁর কোনও অধিকার নেই নিজের অনুধাবন করা জ্ঞান অন্যকে শেখাবার। লিওনার্দোর শরীরবিদ্যার চর্চা পুরোটাই ছিল নিভৃতে, গোপন কক্ষে।
লিওনার্দো বলেন— মানুষের দেহের আদর্শ সামঞ্জস্য লুকিয়ে আছে বৃত্তাকার ও চৌকো জ্যামিতিক আকারে। খৃষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে ভিট্রুভিয়াস নামের এক স্থপতি ছিলেন রোমে। তিনিই মানব দেহের এই গঠনের প্রথম প্রবক্তা। তার লেখা পাণ্ডুলিপি ‘ডি আরকিটেকচ্রা’-তে তিনি তার গবেষণার কথা লিখে যান। লিওনার্দো তাঁর থেকে আর একটু সরে এসে মানুষের শরীরের গঠন একে নাম দেন – ভিট্রুভিয়ান ম্যান। এই আঁকায় তিনি দেখান— যদি একটা মানুষ মাটিতে দাঁড়িয়ে তার দুই বাহু প্রসারিত করে, তবে তার শরীর চৌকো আকৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ হবে। আর যদি পা দুটি দুদিকে ছড়িয়ে দিয়ে বাহু প্রসারিত করে, তবে তার শরীর একটা বৃত্তে সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে।
লিওনার্দো বিশ্বাস করতেন— বলবিজ্ঞানের নীতি, যা যন্ত্র বানাতে ব্যবহার করা হয়, প্রকৃতিও সেই একই নিয়ম মেনে চলে। তার মতে— প্রকৃতিই হল সব জ্ঞানের উৎস, যার নিজস্ব যুক্তি আছে। আছে বেঁধে দেওয়া নিয়ম, কারণ ছাড়া তার দ্বারা কর্ম হয় না, প্রয়োজন ছাড়া সে কোনও আবিষ্কার করে না। সারাজীবন ধরে নকশা বানাতে তাই তিনি তাঁর বলবিজ্ঞানের উদ্ভাবনী শক্তির প্রমাণ দিয়ে গেছেন। বিশাল বিশাল জটিল যন্ত্র হয়ত তিনি বানিয়ে যাননি, কিন্তু মডেল আর স্কেচের সাহায্যে বলবিজ্ঞানের নীতি সরল উপায়ে বুঝিয়ে গিয়েছেন। এখানেই তার কাজের সার্থকতা। স্ক্রু থ্রেড, গিয়ার, হাইড্রলিক জ্যাক, ইত্যাদির নকশা বানাতে গিয়ে কীভাবে বস্তুর মধ্যে ঘর্ষণ ও প্রতিরোধ সৃষ্টি হয়, তাই নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন। লিওনার্দোর এঁকে যাওয়া হেলিকাল স্ক্রু, আধুনিক গঠন বিচারে হেলিকপ্টারের সমতুল্য। উড়ে যাওয়ার ইচ্ছেয় তিনি বানিয়েছেন উড়ন্ত দুর্গ, উড়ন্ত চাকি— কিন্তু সেই যন্ত্রের জন্য প্রয়োজন জ্বালানীর কথা তিনি ভাবেননি। হাওয়া ও জলের স্বাভাবিক ধর্ম কাজে লাগিয়ে উড়ে যাওয়ার কথা খুব সম্ভবত তার মাথায় আসত।
তার বহু আঁকা ছবি, এমনকি বিশ্ববিখ্যাত মোনালিসাও অসমাপ্ত কেন, জানা যায় তার মন্তব্য থেকে। তিনি বলে যান—কোনও শিল্পকর্মই সমাপ্ত হয় না, সবই পরিত্যক্ত হয় মাত্র। এই ভাবনা থেকেই এক কাজ অসম্পূর্ণ রেখে অন্য কাজে মেতে গিয়েছেন এই অসামান্য শিল্পী মানুষটি।
লিওনার্দো দুই হাতে একসাথে সমানে লিখতে পারতেন। তিনি ছিলেন সব্যসাচী। তার বাঁ হাত দিয়ে লেখা লিপিগুলো আসলে উল্টো করে লেখা – ডান দিক থেকে বাঁ দিকে, যা আয়নার সামনে ধরলে সোজা হয়ে যায়। কেন তিনি এমন করে লিখতে ভালবাসতেন? কেউ বলে যাতে তার লেখা চুরি না যায়, সেইজন্য; আবার অনেকে বলে বাঁ হাত দিয়ে বাঁ দিক থেকে ডান দিকে লিখতে গেলে হাতের ঘষায় কালি লেগে লেখা মুছে যাবে বলেই তিনি এই পন্থা অবলম্বন করেন।
১৫১৯ সালে লিওনার্দো অসুস্থ হয়ে মারা যান। মৃত্যুর সময় ফ্রান্সের রাজা ফ্রান্সিস-১ তার শয্যার পাশে ছিলেন। জীবিতাবস্থায় লিওনার্দো বলে যান- জীবনে আমি যখন বেঁচে থাকার উপায় শিখছি, আসলে তখন আমি মরে যাওয়ার রাস্তাই খুঁজে বেড়াচ্ছি। জীবন যে বহতা নদীর মত, যার কোনও উদ্দেশ্য থাকতে পারে না- সে বিষয়ে তিনি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন, তার কথায় স্পষ্ট বোঝা যায়। প্রথাগত শিক্ষা না নিলেও নিজেকে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানী করে তুলতে চেষ্টা করে গেছেন সারাজীবন। তাই আজও শিল্প, বিজ্ঞান এবং দর্শনের জগতে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি এক প্রবাদ পুরুষ।
জয়ঢাকের বৈজ্ঞানিকের দপ্তর