পরিব্রাজক(প্রথম পর্ব),পরিব্রাজক (২য় পর্ব) পরিব্রাজক (৩য় পর্ব), পরিব্রাজক (৪র্থ পর্ব), পরিব্রাজক (৫ম পর্ব) পরিব্রাজক (৬ষ্ঠ পর্ব) পরিব্রাজক (৭ষ্ঠ পর্ব), পরিব্রাজক অষ্টম পর্ব, পরিব্রাজক নবম পর্ব,দশমপর্ব
(একাদশ পর্ব)
স্বামী বিবেকানন্দ
(১৮৯৯ সাল। কলকাতা বন্দর থেকে বাষ্পচালিত জাহাজ গোলকুণ্ডায় তিন সন্ন্যাসীকে সঙ্গে নিয়ে বিবেকানন্দ রওনা দিলেন পশ্চিমের উদ্দেশ্যে। সঙ্গে চলেছেন ভগিনী নিবেদিতা, আর তিন শিষ্য। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে পরের বছর জুলাই মাসে পৌঁছলেন প্যারিস। প্যারিস থেকে শুরু হল অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশগুলি ঘুরে বেড়ানো। স্বামীজি তাঁর প্রিয় শিষ্য স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দকে লেখা চিঠিতে তাঁর ইউরোপ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানাচ্ছেন। প্যারিস ভ্রমণ শেষ হয়েছে। এবার চলেছেন জার্মানি।)
আজ ২৩শে অক্টোবর। কাল সন্ধ্যার সময় প্যারিস হতে বিদায়। এ বৎসর প্যারিস সভ্যজগতের এক কেন্দ্র, এ বৎসর মহাপ্রদর্শনী। নানা দিগদেশ-সমাগত সজ্জনসঙ্গম। দেশ-দেশান্তরের মনীষীগণ নিজ নিজ প্রতিভাপ্রকাশে স্বদেশের মহিমা বিস্তার করছেন এই প্যারিসে। এ মহাকেন্দ্রের ভেরীধ্বনি আজ যাঁর নাম উচ্চারণ করবে, সে নাদ তরঙ্গ সঙ্গে সঙ্গে তাঁর স্বদেশকে সর্বজনসমক্ষে গৌরবান্বিত করবে। আর আমার জন্মভূমি—এই জার্মান, ফরাসী, ইংরেজ, ইতালী প্রভৃতি বুধমণ্ডলী-মণ্ডিত মহা রাজধানীতে তুমি কোথায়, বঙ্গভূমি? কে তোমার নাম নেয়? কে তোমার অস্তিত্ব ঘোষণা করে? বহু গৌরবর্ণ প্রাতিভমণ্ডলীর মধ্য হতে এক যুবা যশস্বী বঙ্গভূমির বীর আমাদের মাতৃভূমির নাম ঘোষণা করলেন। তিনি জগৎপ্রসিদ্ধ বৈজ্ঞানিক ডাক্তার জে.সি. বোস। একা যুবা বাঙালী আজ বিদ্যুতবেগে পাশ্চাত্য-মণ্ডলীকে নিজের প্রতিভামহিমায় মুগ্ধ করলেন—তার বিদ্যুৎসঞ্চার মাতৃভূমির মৃতপ্রায় শরীরে নবজীবন-তরঙ্গ সঞ্চার করলে! সমগ্র বৈদ্যুতিকমণ্ডলীর শীর্ষস্থানীয় আজ জগদীশ বসু—ভারতবাসী, বঙ্গবাসী, ধন্য বীর! বসুজ ও তাঁহার সতীসাধ্বী সর্বগুণসম্পন্না গেহিনী—যে দেশে যান, সেথায়ই ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেন—বাঙালীর গৌরব বর্ধন করেন। ধন্য দম্পতি!
মিঃ লেগেট প্রভূত অর্থব্যয়ে তাঁর প্যারিসস্থ প্রাসাদে ভোজনাদি-ব্যপদেশে নিত্য নানা যশস্বী ও যশস্বিনী নর-নারীর সমাগম সিদ্ধ করেছেন, তারও আজ শেষদিন। কবি, দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, নৈতিক, সামাজিক, গায়ক, গায়িকা, শিক্ষক, শিক্ষয়িত্রী, চিত্রকর, শিল্পী, ভাস্কর, বাদক—প্রভৃতি নানা জাতির গুণীগণ সমাবেশ মিষ্টর লেগেটের আতিথ্য-সমাদর-আকর্ষণে তাঁর গৃহে। সে পর্বতনির্ঝরবৎ কথাচ্ছটা, অগ্নিস্ফুলিঙ্গবৎ চতুর্দিক-সমুত্থিত ভাববিকাশ, মোহিনী সঙ্গীত, মনীষী-মনঃসংঘর্ষ-সমুত্থিত চিন্তামন্ত্রপ্রবাহ সকলকে দেশকাল ভুলিয়ে মুগ্ধ করে রাখত—তারও শেষদিন।
সকল জিনিষেরই অন্ত আছে। আজ আর একবার পুঞ্জীকৃতভাবরূপ স্থিরসৌদামিনী, এই অপূর্ব ভূস্বর্গ-সমাবেশ প্যারিস-এগজিবিশন দেখে এলুম।
আজ দু-তিন দিন ধরে প্যারিসে ক্রমাগত বৃষ্টি হচ্ছে। ফ্রান্সের প্রতি সদা সদয় সূর্যদেব আজ ক’দিন বিরূপ। নানা দিগদেশাগত শিল্প, শিল্পী, বিদ্যা ও বিদ্বানের পশ্চাতে গূঢ়ভাবে প্রবাহিত ইন্দ্রিয়বিলাসের স্রোত দেখে ঘৃণায় সূর্যের মুখ মেঘকলুষিত হয়েছে, অথবা কাষ্ঠ বস্ত্র ও নানা রাগরঞ্জিত এ মায়া অমরাবতীর আশু বিনাশ ভেবে তিনি দুঃখে মেঘাবগুণ্ঠনে মুখ ঢাকলেন।
২৪শে অক্টোবর সন্ধ্যার সময় ট্রেন প্যারিস ছাড়ল। অন্ধকার রাত্রি, দেখবার কিছুই নাই। আমি আর মস্যিয় বোওয়া এক কামরায় শয়ন করলুম। নিদ্রা হতে উঠে দেখি, আমরা ফরাসী সীমানা ছাড়িয়ে জার্মান সাম্রাজ্যে উপস্থিত। জার্মানী পূর্বে বিশেষ করে দেখা আছে, তবে ফ্রান্সের পর জার্মানী—বড়ই প্রতিদ্বন্দ্বী ভাব। ‘যাত্যেকতোহস্তশিখরং পতিরোষধীনাং’—এক দিকে ভুবনস্পর্শী ফ্রান্স, প্রতিহিংসানলে পুড়ে পুড়ে আস্তে আস্তে খাক হয়ে যাচ্ছে; আর এক দিকে কেন্দ্রীকৃত নূতন মহাবল জার্মানী মহাবেগে উদয়শিখরাভিমুখে চলেছে। কৃষ্ণকেশ, অপেক্ষাকৃত খর্বকায়, শিল্পপ্রাণ, বিলাসপ্রিয়, অতি সুসভ্য ফরাসীর শিল্পবিন্যাস; আর এক দিকে হিরণ্যকেশ, দীর্ঘকার, দিঙনাগ জার্মানীর স্থূলহস্তাবলেপ। প্যারিসের পর পাশ্চাত্য জগতে আর নগরী নাই, সব সেই প্যারিসের নকল—অন্তত চেষ্টা। কিন্তু ফরাসীতে সে শিল্পসুষমার সূক্ষ্ম সৌন্দর্য; জার্মানে, ইংরেজে, আমেরিকে সে অনুকরণ স্থূল। ফরাসী বলবিন্যাসও যেন রূপপূর্ণ, জার্মানীর রূপবিকাশ-চেষ্টাও বিভীষণ। ফরাসী প্রতিভার মুখমণ্ডল ক্রোধাক্ত হলেও সুন্দর। জার্মান প্রতিভার মধুর হাস্য-বিমণ্ডিত আননও যেন ভয়ঙ্কর। ফরাসীর সভ্যতা স্নায়ুময়, কর্পূরের মতো—কস্তুরীর মতো এক মুহূর্তে উড়ে ঘরদোর ভরিয়ে দেয়। জার্মান সভ্যতা পেশীময়, সীসার মতো—পারার মতো ভারী, যেখানে পড়ে আছে তো পড়েই আছে। জার্মানের মাংসপেশী ক্রমাগত অশ্রান্তভাবে ঠুকঠাক হাতুড়ি আজন্ম মারতে পারে, কিন্তু ফরাসীর নরম শরীর—মেয়েমানুষের মতো—যখন কেন্দ্রীভূত হয়ে আঘাত করে, সে কামারের এক ঘা—তার বেগ সহ্য করা বড়ই কঠিন।
জার্মান ফরাসীদের নকলে বড় বড় বাড়ী অট্টালিকা, বৃহৎ বৃহৎ মূর্তি বানাচ্ছেন, অশ্বারোহী, রথী—সে প্রাসাদের শিখরে স্থাপন করছেন, কিন্তু জার্মানের দোতলা বাড়ী দেখলেও জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা হয়—এ বাড়ী কি মানুষের বাসের জন্য, না হাতি-উটের ‘তবেলা’? আর ফরাসীর পাঁচতলা হাতি-ঘোড়া রাখবার বাড়ী দেখে ভ্রম হয়, এ বাড়ীতে বুঝি পরি বাস করবে!
আমেরিকা জার্মান-প্রবাহে অনুপ্রাণিত, লক্ষ লক্ষ জার্মান প্রত্যেক শহরে। ভাষা ইংরেজী হলে কী হয়, আমেরিকা আস্তে আস্তে ‘জার্মানীত’ হয়ে যাচ্ছে। জার্মানীর প্রবল বংশবিস্তার, জার্মান বড়ই কষ্টসহিষ্ণু। আজ জার্মানী ইওরোপের আদেশদাতা, সকলের উপর! অন্যান্য জাতের অনেক আগে জার্মানী প্রত্যেক নরনারীকে রাজদণ্ডের ভয় দেখিয়ে বিদ্যা শিখিয়েছে, আজ সে বৃক্ষের ফল ভোজন করছে। জার্মানীর সৈন্য প্রতিষ্ঠায় সর্বশ্রেষ্ঠ, জার্মানী প্রাণপণ করেছে যুদ্ধপোতেও সর্বশ্রেষ্ঠ হতে, জার্মানীর পণ্যনির্মাণ ইংরেজকেও পরাভূত করেছে। ইংরেজের উপনিবেশেও জার্মান পণ্য, জার্মান মনুষ্য ধীরে ধীরে একাধিপত্য লাভ করছে। জার্মানীর সম্রাটের আদেশে সর্বজাতি চীনক্ষেত্রে অবনত মস্তকে জার্মান সেনাপতির অধীনতা স্বীকার করছেন!
সারাদিন ট্রেন জার্মানীর মধ্য দিয়ে চলল। বিকালবেলা জার্মান আধিপত্যের প্রাচীন কেন্দ্র—এখন পররাজ্য, অষ্ট্রীয়ার সীমানায় উপস্থিত। ইওরোপে বেড়াবার কতকগুলি জিনিষের উপর বেজায় শুল্ক; অথবা কোনো-কোনো পণ্য সরকারের একচেটে, যেমন তামাক। আবার রুশ ও তুর্কীতে রাজার ছাড়পত্র না থাকলে একেবারে প্রবেশ নিষেধ। ছাড়পত্র অর্থাৎ পাসপোর্ট একান্ত আবশ্যক। তা ছাড়া রুশ এবং তুর্কীতে, তোমার বইপত্র কাগজ সব কেড়ে নেবে। তারপর তারা পড়ে শুনে যদি বোঝে যে তোমার কাছে তুর্কীর বা রুশের রাজত্বের বা ধর্মের বিপক্ষে কোনও বই-কাগজ নেই, তা হলে তা তখন ফিরিয়ে দেবে—নতুবা সে সব বইপত্র বাজেয়াপ্ত করে নেবে। অন্য অন্য দেশে এ পোড়া তামাকের হাঙ্গামা বড়ই হাঙ্গামা। সিন্দুক, প্যাঁটরা, গাঁটরি—সব খুলে দেখাতে হবে, তামাক প্রভৃতি আছে কি না। আর কনষ্টাণ্টিনোপল আসতে গেলে দুটো বড় (জার্মানী আর অষ্ট্রীয়া) এবং অনেকগুলো ক্ষুদ্র দেশের মধ্য দিয়ে আসতে হয়। ক্ষুদেগুলো পূর্বে তুরস্কের পরগণা ছিল, এখন স্বাধীন ক্রিশ্চান রাজারা একত্র হয়ে মুসলমানের হাত থেকে যতগুলো পেরেছে, ক্রিশ্চানপূর্ণ পরগণা ছিনিয়ে নিয়েছে। এ ক্ষুদে পিঁপড়ের কামড় ডেওদের চেয়েও অনেক অধিক।
২৫শে অক্টোবর সন্ধ্যার পর ট্রেন অষ্ট্রীয়ার রাজধানী ভিয়েনা নগরীতে পৌঁছুল। অষ্ট্রীয়া ও রুশিয়ার রাজবংশীয় নর-নারীকে আর্ক-ড্যুক ও আর্ক-ডচেস বলে। এ ট্রেনে দুজন আর্ক-ড্যুক ভিয়েনায় নাববেন। তাঁরা না নাবলে অন্যান্য যাত্রীর আর নাববার অধিকার নাই। আমরা অপেক্ষা করে রইলুম। নানাপ্রকার জরিবুটা-র উর্দি-পরা জনকতক সৈনিক পুরুষ এবং ফার লাগানো টুপি মাথায় জন-কতক সৈন্য আর্ক-ড্যুকদের জন্য অপেক্ষা করছিল। তাদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে আর্ক-ড্যুকদ্বয় নেমে গেলেন। আমরাও বাঁচলুম—তাড়াতাড়ি নেমে সিন্দুকপত্র পাস করবার উদ্যোগ করতে লাগলুম। যাত্রী অতি অল্প, সিন্দুকপত্র দেখিয়ে ছাড় করাতে বড় দেরী লাগল না। পূর্ব হতে এক হোটেল ঠিকানা করা ছিল, সে হোটেলের লোক গাড়ী নিয়ে অপেক্ষা করছিল। আমরাও যথাসময়ে হোটেলে উপস্থিত হলুম। সে রাত্রে আর দেখাশুনা কী হবে—পরদিন প্রাতঃকালে শহর দেখতে বেরুলুম।
সমস্ত হোটেলেই এবং ইওরোপের ইংলণ্ড ও জার্মানী ছাড়া প্রায় সকল দেশেই ফরাসী চাল। হিঁদুদের মতো দুবার খাওয়া। প্রাতঃকালে দু-প্রহরের মধ্যে, সায়ংকালে ৮টার মধ্যে। প্রত্যূষে অর্থাৎ আট্টা-ন’টার সময় একটু কাফি পান করা। চায়ের চল—ইংলণ্ড ও রুশিয়া ছাড়া অন্যত্র বড়ই কম। দিনের ভোজনের ফরাসী নাম ‘দেজুনে’ অর্থাৎ উপবাসভঙ্গ, ইংরেজী ‘ব্রেকফাষ্ট’। সায়ংভোজনের নাম ‘দিনে’, ইংরেজিতে—‘ডিনার’। চা পানের ধুম রুশিয়াতে অত্যন্ত—বেজায় ঠাণ্ডা, আর চীন-সন্নিকট। চীনের চা খুব উত্তম চা—তার অধিকাংশ যায় রুশে। রুশের চা-পানও চীনের অনুরূপ, অর্থাৎ দুগ্ধ মেশানো নেই। দুধ মেশালে চা বা কাফি বিষের ন্যায় অপকারক। আসল চা-পায়ী জাতি চীনে। জাপানী, রুশ, মধ্য এশিয়াবাসী বিনা দুগ্ধে চা পান করে, আবার তুর্ক প্রভৃতি আদিম কাফিপায়ী জাতি বিনা দুগ্ধে কাফি পান করে। তবে রুশিয়ায় তার মধ্যে একটু পাতিনেবু এবং এক ডেলা চিনি চায়ের মধ্যে ফেলে দেয়। গরীবেরা এক ডেলা চিনি মুখের মধ্যে রেখে তার উপর দিয়ে চা পান করে এবং একজনের পান শেষ হলে আর একজনকে সে চিনির ডেলাটা বার করে দেয়। সে ব্যক্তিও সে ডেলাটা মুখের মধ্যে রেখে পূর্ববৎ চা পান করে।
ভিয়েনা শহর—প্যারিসের নকলে ছোট শহর। তবে অষ্ট্রীয়ানরা হচ্ছে জাতিতে জার্মান। অষ্ট্রীয়ার বাদশা এতকাল প্রায় সমস্ত জার্মানীর বাদশা ছিলেন। বর্তমান সময়ে প্রুশরাজ ভিলহেলমের দূরদর্শিতায়, মন্ত্রিবর বিসমার্কের অপূর্ব বুদ্ধিকৌশলে, আর সেনাপতি ফন মল্টকির যুদ্ধপ্রতিভায় প্রুশরাজ অষ্ট্রীয়া ছাড়া সমস্ত জার্মানীর একাধিপতি বাদশা। হতশ্রী হতবীর্য অষ্ট্রীয়া কোনোমতে পূর্বকালের নাম-গৌরব রক্ষা করছেন। অষ্ট্রীয় রাজবংশ—হ্যাপসবর্গ বংশ, ইওরোপের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ও অভিজাত রাজবংশ। যে জার্মান রাজন্যকুল ইওরোপের প্রায় সর্বদেশেই সিংহাসনে অধিষ্ঠিত, যে জার্মানীর ছোট ছোট করদ রাজা ইংলণ্ড ও রুশিয়াতেও মহাবল সাম্রাজ্যশীর্ষে সিংহাসন স্থাপন করেছে, সেই জার্মানীর বাদশা এতকাল ছিল এই অষ্ট্রীয় রাজবংশ। সে মান, সে গৌরবের ইচ্ছা সম্পূর্ণ অষ্ট্রীয়ার রয়েছে—নাই শক্তি। তুর্ককে ইওরোপে ‘আতুর বৃদ্ধ পুরুষ’ বলে। অষ্ট্রীয়াকে ‘আতুরা বৃদ্ধা স্ত্রী’ বলা উচিত।
অষ্ট্রীয়া ক্যাথলিক সম্প্রদায়ভুক্ত। সেদিন পর্যন্ত অষ্ট্রীয়ার সাম্রাজ্যের নাম ছিল—‘পবিত্র রোম সাম্রাজ্য’। বর্তমান জার্মানী প্রোটেষ্টাণ্ট-প্রবল। অষ্ট্রীয় সম্রাট চিরকাল পোপের দক্ষিণ হস্ত, অনুগত শিষ্য, রোমক সম্প্রদায়ের নেতা। এখন ইওরোপে ক্যাথলিক বাদশা কেবল এক অষ্ট্রীয় সম্রাট। ক্যাথলিক সঙ্ঘের ‘বড় মেয়ে’ ফ্রান্স এখন প্রজাতন্ত্র। স্পেন পোর্তুগাল অধঃপাতিত। ইতালী পোপের সিংহাসনমাত্র স্থাপনের স্থান দিয়েছে। পোপের ঐশ্বর্য, রাজ্য, সমস্ত কেড়ে নিয়েছে। ইতালীর রাজা আর রোমের পোপে মুখ-দেখাদেখি নাই, বিশেষ শত্রুতা। পোপের রাজধানী রোম এখন ইতালীর রাজধানী। পোপের প্রাচীন প্রাসাদ দখল করে রাজা বাস করছেন। পোপের প্রাচীন ইতালীরাজ্য এখন পোপের ভ্যাটিকান প্রাসাদের চতুঃসীমায় আবদ্ধ। কিন্তু পোপের ধর্মসম্বন্ধে প্রাধান্য এখনও অনেক—সে ক্ষমতার বিশেষ সহায় অষ্ট্রীয়া। অষ্ট্রীয়ার বিরুদ্ধে অথবা পোপ-সহায় অষ্ট্রীয়ার বহুকালব্যাপী দাসত্বের বিরুদ্ধে—নব্য ইতালীর অভ্যুত্থান। অষ্ট্রীয়া কাজেই ইতালী খুইয়ে বিপক্ষ। মাঝখান থেকে ইংলণ্ডের কুপরামর্শে নবীন ইতালী মহাসৈন্য-বল, রণপোত-বল সংগ্রহে বদ্ধপরিকর হল। সে টাকা কোথায়? ঋণজালে জড়িত হয়ে ইতালী উৎসন্ন যাবার দশায় পড়েছে। আবার কোথা হতে উৎপাত—আফ্রিকায় রাজ্য বিস্তার করতে গেল। হাবশী বাদশার কাছে হেরে, হতশ্রী হতমান হয়ে বসে পড়েছে। এ দিকে প্রুশিয়া মহাযুদ্ধে হারিয়ে অষ্ট্রীয়াকে বহুদূর হঠিয়ে দিলে। অষ্ট্রীয়া ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে, আর ইতালী নব জীবনের অপব্যবহারে তদ্বৎ জালবদ্ধ হয়েছে।
(ক্রমশ)