ভ্রমণ আজটেকদের দেশে(৬)-মলয় সরকার-শরৎ ২০২২

আগের পর্ব–> পর্ব-১ পর্ব -২, পর্ব- ৩, পর্ব ৪, পর্ব ৫

bhroomonaztektitle

আমরা এখান থেকে বেরিয়ে গাড়ি করে সোজা গেলাম ন্যাশনাল আর্টস প্যালেসে। এটির সৌন্দর্য সত্যিই দেখার মতো। শ্বেতপাথরে তৈরি, অনেকটা বেলুড় মঠের ঢঙে বিশাল হলটি দেখার মতো। তার সামনে অনেকটা ফাঁকা চত্বর, সাজানো চার ভাগে উঁচু বেদিতে বাঁধানো সবুজ গাছপালার জায়গা করা একটা নান্দনিক সৌন্দর্যের দৃষ্টান্ত। ভিতরে খানিকটা অংশে সবাই ঢুকতে পারে, যেখানে টিকিট কাটা হয়। এটি আসলে আমাদের নন্দন বা রবীন্দ্রসদনের মতো। এখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের শো চলে বিভিন্ন সময়। তাই বিভিন্ন টিকিটের কাউন্টার আছে। একেবারে হলের ভিতরে না ঢুকলেও, অল্প ঢুকেই যা এর বিশালত্ব এবং সাজসজ্জা, তা দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। যে-কোনো আধুনিক বড়ো মলের ভিতর ঢুকেছি মনে হয়। অনেকদিন আগে জয়পুরের বিখ্যাত সিনেমা হল রাজমন্দিরে ঢুকে সিনেমা দেখেছিলাম। অনেকটা তার মতো লাগল। যাই হোক, এর উলটোদিকেই রয়েছে এক বিশাল উঁচু অফিস বিল্ডিং, ল্যাটিনো আমেরিকান টাওয়ার। এটি দর্শনীয় হলেও কলকাতাতেও অনেক এরকম আকাশচুম্বী অফিস হয়েছে যা দেখে চমকে ওঠার মতো কিছু নেই।

এখানেই রয়েছে পাশেই হাউস অফ টাইলস। এটি এককালে দর্শনীয় হয়তো ছিল, এর বিশেষ ধরনের নীল ও সাদা টালি দিয়ে গোটা বাড়িটি তৈরির জন্য যা আনা হয়েছিল পুয়েব্লা থেকে। বর্তমানে অনেক হাতবদল হতে হতে এটি এখন দোকান ও অফিসে পরিবর্তিত হয়েছে।

তবে এর পাশেই দেখলাম পোস্টাল মিউজিয়াম। এটি এখনও পোস্ট অফিস হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এরই একপাশে নীচের তলায় কিছু অংশে এই মিউজিয়ামটি আছে। সেখানে পুরোনো দিনের টেলিগ্রাফ যন্ত্র, ডাকহরকরার ব্যবহৃত জিনিস, ডাকগাড়ি, পুরোনো দিনের ডাক ব্যবস্থার সম্পর্কিত সমস্ত জিনিস রাখা আছে।

bhromonmexico8201

এখানে আসার আগে এরই পাশে একটা জিনিস দেখে মনটা ভরে গেল। বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে রয়েছে পুরোনো বইয়ের বাজার, ঠিক আমাদের কলেজ স্ট্রিট বা দিল্লির দরিয়াগঞ্জের মতো। বেশ ভালো লাগল দেখে, যে এরাও আমাদেরই মতো পুরোনো বইয়ের মর্যাদা বোঝে বা কদর করে। তাই এখানে হয়তো গার্সিয়া মার্কেজের মতো সাহিত্যিকরা জন্মান। মেক্সিকোর সাহিত্য-জগৎও এই কারণেই বেশ উজ্জ্বল। যে দেশ বইয়ের মর্যাদা দেয় তারা, আর কিছু না হোক, সকলের কাছেই একটা সম্ভ্রম আদায় তো করেই।

ঠিক তার সামনেই ছিল ন্যাশনাল আর্টস মিউজিয়াম। তার ঠিক সামনে উঁচু বেদির উপরে এক বীর ঘোড়সওয়ারের পায়ের নীচে বসে বিশ্রাম নিলাম আর বসে বসে সামনের প্রচণ্ড ভিড় রাস্তার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আরাম করে আইসক্রিম খেলাম। কারণ, তখন পাঁচটা বেজে গিয়েছিল, আর দেখার সময় নেই। তাছাড়া সব অফিস ছুটি হয়ে যাওয়ায় ভীষণ ভিড় রাস্তায়। এখানে রাস্তায় একটি জিনিস দেখেছি গান বাজিয়ে ভিক্ষে করার মতো। একজন লোক একটা স্ট্যান্ডের উপর একটি বাক্স রাখে। সে নিজে সাধারণত ট্রাম কন্ডাক্টরের মতো টুপি পরে। তার জামাপ্যান্ট খাকি কোনও ট্রাম কন্ডাক্টরের মতোই। বাক্স থেকে বেরোনো একটি হ্যান্ডেল সে ঘোরাতে থাকে আর সুন্দর সুর বাজতে থাকে। কী বলে এই যন্ত্রটাকে ঠিক জানি না। সে বা তার সহকারীরা টুপি খুলে টুপির মধ্যে পয়সা চায়। ভিক্ষের এটাও একটা ধরন। এইখানেই কেন যেন এখানকার মানুষের সঙ্গে, দেশটার সঙ্গে একটু একাত্ম বোধ করলাম। আমাদের দেশের কলকাতা শহরের বিভিন্ন ধরনের ভিখারির কথা মনে পড়ল।

(যন্ত্রটাকে অনেকে বক্স অর্গ্যান বলেন। এর বাদ্যকর ভিক্ষুকদের স্থানীয়রা ‘সিনিল্ড্রেরো নামে ডাকেন। নীচে মেক্সিকোর পথে এক সিলিন্ড্রেরোর বাজনার ভিডিও রইল। – সম্পাদক)

আজ খুব ক্লান্তি এসে গিয়েছিল। ফিরলাম হোটেলে। পরের দিন টিওটিহুয়াকানে যাওয়ার কথা।

আজ সেই বহু প্রতীক্ষিত দিন, যার জন্য প্রধানত আমার এই মেক্সিকোতে আসা। আমার একরকমের স্বপ্নপূরণই বলা যায়। কেন যেন আমি এইসব ছবিগুলো স্বপ্নে লালন করেছিলাম। সকালে সোজা উবেরে করে চললাম মেট্রো নর্থে বাস স্টেশনে। উবেরওয়ালা আমাদের দেখেই বুঝে গেল যে আমরা চলেছি পিরামিড দেখতে। সে চালাতে চালাতে এগিয়ে এসে বলে, “চলুন, আমি আপনাদের নিয়ে যাব। বাসে যেতে হবে না। আরামে গাড়িতে যাবেন।”

কিন্তু আমরা তো তার কথা বুঝতে পারছিলাম না, না ও আমাদের কথা। অগত্যা ও-ই বুদ্ধি করে ফোনে গুগল ট্রান্সলেটর খুলে স্প্যানিশে বলল। আমরা ইংরাজিতে দেখে বুঝলাম। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম কত দিতে হবে। ও জানাল, বেশি নয়। কিন্তু যা বলল, তা দেখলাম বাসে যাতায়াতের দ্বিগুণ। আমরা ফলে আর আগ্রহ দেখালাম না। তাছাড়া বিদেশ-বিভূঁই জায়গা, নিয়ে গিয়ে আবার কী ফাঁসে ফেলে কে জানে।

আমরা বাস স্টেশন দেখে আশ্চর্য। বিশাল বড়ো অর্ধচন্দ্রাকৃতি বাস স্টেশনে বহু কোম্পানির বাস দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর ভিতরটা বেশ এয়ারপোর্ট বা বড়ো ট্রেন স্টেশনের মতো। প্রতিটি বাস কোম্পানির আলাদা আলাদা টিকিট কাউন্টার রয়েছে। এরকম বড়ো বড়ো এয়ারপোর্টের মতো ব্যবস্থাওলা বাস স্টেশন আমি চিনেও দেখেছি। আমরা পিরামিড দেখতে যাব বলতেই ওরা দেখিয়ে দিল আট নম্বর কাউন্টার। গিয়ে দেখি সেটি শুধু পুয়েব্লা ও টিওটিহুয়াকান যাবার বাসের কাউন্টার। কম্পিউটারেই টিকিট কাটা হল, ৫২ পেসো করে জনপ্রতি। পিছন দিকে টিকিট নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই ওরা দেখিয়ে দিল কোন বাস যাবে। কাছে গিয়ে দেখি, ও হরি, বাসে মাথায় লেখা ‘পুয়েব্লা।’ কী ব্যাপার! আমি তো যাব পিরামিড দেখতে। ওরা কি ভুল করল? উঠে আবার নেমে এলাম সন্দেহ নিয়ে। পুয়েব্লা আর পিরামিড তো সম্পূর্ণ উলটোদিকে। শেষে এক জায়গায় যেতে আরেক জায়গায় পৌঁছে যাব। তাই আবার নেমে এলাম, আমাদের বাসের কন্ডাক্টরকে টিকিটটা দেখালাম, সে দেখে নিশ্চিত করল, হ্যাঁ, এই বাসটাই। আবার উঠলাম। বাস তো বেশ ভালোই, দারুণ সুন্দর। তবে আমি জানি না, একটা ব্যাপার, আমি ঠিক কারণ বুঝিনি। তা হল, যত বাস রাস্তায় দেখেছি সমস্ত বাসই যেন সদ্য নতুন কেনা হয়েছে। কী করে এত চকচকে আছে এ-কথা আর কাউকে জিজ্ঞাসা করে জানা হয়নি। যাই হোক, বাসে উঠে বসতে গিয়ে দেখি আমাদের সব সিটে লোক বসে আছে। এত ভালো বাসে এটা কী করে হয়! যারা বসে আছে তাদের টিকিট আর সিট নম্বর দেখিয়ে বললাম, এগুলো তো আমাদের সিট। তাও কেউ বুঝতেও পারল না, উঠলও না। বাধ্য হয়ে আবার নামলাম। আবার কন্ডাক্টরকে ব্যাপারটা বোঝাতে চেষ্টা করলাম। দু-একবার চেষ্টার পর সে বুঝল ব্যাপারটা। সে যা বোঝাল, তা হল, এখানে কোনও সিট নম্বর কেউ মানে না। যেখানে সুবিধা বসে যায়। শেষে সবাই বিচ্ছিন্নভাবে আলাদা আলাদা বসলাম। বাস তো ছাড়ল। কিন্তু মন থেকে ধোঁয়াশা তো কাটে না। শেষে পুয়েব্লা চলে যাচ্ছি না তো? এক বুদ্ধি এল। বাস কিছু দূরে যেতেই মোবাইলে জি.পি.এস খুলে বসলাম। দেখি, বাস ঠিক যাচ্ছে কি না। অনেকক্ষণ লক্ষ রাখলাম। শেষে দেখলাম যে, ঠিকই যাচ্ছে। নিশ্চিন্ত হওয়া গেল বা ধড়ে প্রাণ এল বলা যায়।

মেক্সিকো শহর থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে এই টিওটিহুয়াকান। বুঝলাম, এটাই বোধ হয় পুয়েব্লা যায়। তবে এখন পিরামিড যাচ্ছে। মোটামুটি ভালোই রাস্তা। শহর ছেড়ে বেরোতেই ফাঁকা মাঠের বুক চিরে চলেছে রাস্তা।

আমরা গিয়ে হাজির হলাম একেবারে পিরামিডের সামনে। বাস চলে গেল সামনের দিকে। আমরা দেখি, বাস স্টেশনটি আমাদের এখানের যে-কোনো তীর্থস্থানের মতোই। রাস্তার দু-পাশে নানা খাবার জিনিসের দোকান এবং তারা দোকানের বাইরে বেরিয়ে খাবার জন্য ডাকাডাকি করছে। দোকানগুলোর অবস্থাও ঠিক আমাদের ওখানে দ্রষ্টব্য স্থানে ঢোকার মুখের দোকানগুলোর মতোই। দূর থেকে দেখলাম, দাঁড়িয়ে রয়েছে পিরামিড। তবে ঢোকার মুখেই দেখি জনপ্রতি টিকিটের ব্যবস্থা। সেখান থেকে দেখি দূরে ফাঁকা মাঠের মাঝে পিরামিড যেন ডাকছে। আর এই চত্বরে কাছাকাছি কোথাও এক বিন্দু ছায়া বা গাছ নেই। শুকনো পাথুরে মাটি। টিকিট করার পর দেখি একটা ঢোকার রাস্তা আর একটা বেরোনোর। কাছে গিয়ে দেখি রাস্তা শেষ হয়েছে এক উঁচু প্ল্যাটফর্মে। সেখান থেকে সোজা সামনে পূর্বদিকে দেখা যাচ্ছে সবচেয়ে বড়ো এবং উঁচু, পিরামিড অফ সান বা সূর্যের পিরামিড।

bhromonmexico8202

বাঁদিকে বা উত্তরদিকে শেষ মাথায় রয়েছে অপেক্ষাকৃত নীচু্ পিরামিড অফ মুন বা চন্দ্রের পিরামিড আর তার সামনে দিয়ে চলে প্রায় ২ কিমি মতো মৃতের রাস্তা বা অ্যাভেন্যু অফ দ্য ডেড।

bhromonmexico8203

এখান থেকে পিরামিডের সমান ভূমিতলে নামার জন্য বেশ খাড়া অনেক সরু সরু ধাপওলা সিঁড়ি আছে। তবে আমার আর সে সাহস হল না। তাই একটু দূর দিয়ে সহজ রাস্তায় ঘুরে পিরামিডের সামনে পৌঁছলাম। সেখান থেকে অ্যাভেন্যু অফ ডেড ধরে হাঁটতে লাগলাম পিরামিড অফ মুনের দিকে। আর এই রাস্তার দু-পাশে বেশ কিছু ছোটো ছোটো অর্ধেক পিরামিডের মতো উঁচু উঁচু প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যার উপর ঘর বা মন্দির বা ওই ধরনের কিছু ছিল। সেগুলি এখন আর নেই, তবে তার উপরে ওঠা যায়। এরই মধ্যে এক জায়গায় দেখলাম একটি দেওয়ালের গায়ে আজও আঁকা রয়েছে একটি বাঘের মতো কিছু। এটির রঙ বেশ অবিকৃত।

চন্দ্রের পিরামিডের দিকে যাচ্ছি। রোদে যেন গা পুড়ে যাচ্ছে, কোথাও এক ফোঁটা ছায়া নেই। তবে নতুনত্ব আর দেখার আনন্দে সব ভুলে যাচ্ছি। এইটুকু রাস্তার দু-ধারেই বসে রয়েছে গরিব হকাররা কিছু কিছু স্মৃতি রাখার জিনিসপত্র নিয়ে, যেমন সব জায়গাতেই থাকে। হয়তো সেগুলোও চিনেরই তৈরি। আমি ইটালির ভেনিস কি পিসা বা প্যারিসের আইফেল টাওয়ারে গিয়ে দেখেছি যা পাওয়া যায় সবই চিনের তৈরি, আবার একই জিনিস আমি কলকাতায় বসে নিউ মার্কেট থেকেও কিছু কিনেছি। অর্থাৎ কোথাও গেছি বলে সেইখানের জিনিস এনে ঘর ভরানোর আর কিছু নেই, সব কলকাতাতে বসেই পাওয়া যায় চিনের দৌলতে।

যাক, যেতে যেতে দেখি হঠাৎ রাস্তার পাশে মাটির উপর অনেক গর্ত। কীসের গর্ত দেখতে গিয়ে দেখি দু-একটি দিয়ে লজ্জাবতী বউয়ের মতো ঘোমটা খুলে মুখ বাড়িয়েই আবার গর্তে মুখ লুকোচ্ছে বড়ো বড়ো ইঁদুর। অনেকে গর্তের সামনে খাবার দিচ্ছে। ওদের যে প্রকৃতপক্ষে ভয়-ডর আছে এমন নয়। খাবার দেখলেই বেরিয়ে এসে খাবার নিয়ে আবার গর্তে সেঁধুচ্ছে। বেশ মজা লাগল। অনেকে বাচ্চা সমেত তো এতেই মেতে রয়েছে। আমরা আর সময় নষ্ট করলাম না।

যাক গে, একটু এগিয়েই দেখি বাঁদিকে একটা বেশ চওড়া প্যাসেজমতো। ভাবলাম ‘চাঁদে’ যাওয়ার আগে সেদিকেই যাই। বেশ উঁচুতে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হল। এরা যে এত উঁচুতে সব কেন করেছে বুঝি না, তাও আবার এত খাড়াই সিঁড়ি। তাদের কি হাতে কোমরে আমাদের মতো ব্যথা হত না বয়সকালে, নাকি! এই একই ব্যাপার দেখেছি কম্বোডিয়ার অঙ্কোরভাটে বা ওখানের সব মন্দিরে। সেখানে তো আরও খাড়াই আর আরও ছোটো সিঁড়ি। এখানেও এত উঁচু সব আর ছোটো ছোটো সিঁড়ি, ওঠা বেশ কষ্টকর। যাক, এখানে উঠলাম, সাবধানে। বেশ উঁচু, তবে উপরে অনেকটা চাতালমতো। বুঝলাম, এখানে ঘর ছিল, ভেঙে গেছে। ডানদিকে দেখি আস্ত একটা ঘর রয়েছে। সেখানে গেলাম। আশ্চর্য! ঝকঝক করছে নিরেট পাথরের তৈরি যেন আধুনিক বাড়ি। দেওয়ালে সে-যুগের কারুকার্য, উঠোন বা চাতাল ঝকঝকে পরিষ্কার, এমনকি কিছু কিছু জায়গায় রঙের আঁকাও নিটোল আছে একেবারে ঠিক আমাদের অজন্তার মতো, এত যুগের রোদ-জল-হাওয়া সহ্য করেও। তবে দেখে মনে হল সব ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। মানুষই করেছে, প্রকৃতি নয়। মানুষের এরকম কত সৃষ্টিই তো মানুষ নামধারী অমানুষের হাতে পড়ে নষ্ট হয়েছে এবং নিত্য অহরহ হচ্ছে। এগুলোও হয়তো নষ্ট হয়েছে বিজয়ী টোলটেকদের হাতে বা অন্য কারও হাতে। ঘরের থাম বা দেওয়ালের কারুকার্য, অত বড়ো পাথরের ছাদকে ধরের রাখার জন্য সঠিক থামের পরিকল্পনা, ঘরের নকশা একদম এখনকার মতোই। এমনকি মাটির তলা দিয়ে জল যাওয়ার ব্যবস্থা বা উপর থেকে জল নীচে যাওয়ার ফুটো পর্যন্ত রয়েছে। প্রতিটি পাথরের জোড় নিঁখুত। পাথর ঠিক সমান করে কাটা নয়, যেমনটি চিনের প্রাচীরে আছে, কিন্তু দেওয়াল একেবারে মসৃণ। আজটেকরা যদিও মনে করে বা দাবি করে যে এর নির্মাতারা তাদেরই পূর্বপুরুষ, তবে ঐতিহাসিকরা মনে করেন, এর স্থাপত্যের ভিতরে অনেক জাতির সংমিশ্রণ আছে। গঠন ও স্থাপত্য দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলাম।

এর পাশেই রয়েছে, একটু নীচে নেমে, কিছু মাটি খুঁড়ে বের করা ঘরের সারি। কিছুটা বের করা হয়েছে, তবে এখনও অনেক দূর পর্যন্ত সেইসব ঘর ছিল যা আর খোঁড়া হয়নি। মনে হয়, এগুলো সবই এইসব মন্দিরের পুরোহিত বা কর্মী-সেবকবৃন্দের বাসস্থান ছিল। তবে এই জনহীন, জলহীন প্রান্তরে কেন এইরকম মন্দির হল জানি না। তবে হয়তো তখন এত জনহীন ছিল না। কারণ ইতিহাস বলছে, এখানে নাকি তখন কয়েক লক্ষ মানুষ বাস করত। এই নীচের ঘরগুলো দেখার জন্য একটু নীচে নামতে হল আবার সিঁড়ি দিয়ে। ঘরগুলোর শুধু ছাদটুকুই যা নেই, বাকি সব আছে। অনেকটা প্রাচীন রোমের পরিত্যক্ত শহর অস্টিও এন্টিকার মতো। এখানেও দেওয়ালের জোড় একেবারে সুন্দর এবং দেওয়ালের বাইরের দিক মসৃণ। বলা হয় নাকি জোড়া হয়েছিল চুন এবং সুরকি দিয়ে। হতে পারে এরকম জোড় আমাদের দেশের দাক্ষিণাত্যের মন্দিরগুলোতে বা অন্যত্রও দেখেছি। অথচ বর্তমানে আমরা এত প্রযুক্তিতে উন্নত হয়েও আমাদের তৈরি বড়ো বড়ো স্থাপত্য যে-কোনো সময় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। আরেকটা জিনিস লক্ষ করলাম, এর অসমান জোড়ার দেওয়ালগুলোতে কিন্তু মশলা খুব মোটা করে দেওয়া আর সেই মশলার উপর একটা একটা করে পাথর ধরে ধরে গাঁথা রয়েছে, যদিও তার বাইরের দিকটা দেওয়ালের সঙ্গে সমান মসৃণ। হয়তো এটা জোড়টা আরও শক্ত হওয়ার জন্য। ঘরের মাপ একেবারে এখনকার মতোই। দেখতে গিয়ে ভুলে যেতে হবে যে, এটা সেই কবে কোন যুগে প্রায় দু-হাজার বছর আগে অর্থাৎ যিশু খ্রিস্টের সময়ে তৈরি হয়েছিল। এই ঘরগুলো দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম একটা ছাদওয়ালা ঘরের মধ্যে। ভিতরে ভিতরে বেশ কিছু ঘর রয়েছে, যার ভিতরে ঢোকা যায়। আবার কয়েকটা দর্শকদের জন্য বন্ধ করা আছে। আমরা দেখলাম একটি ঘরে রীতিমতো খুব ভালো পরিষ্কার চিত্র রয়েছে, এমনকি রঙগুলোও নিটোল। গাইড বোঝাচ্ছিলেন ঐতিহাসিকদের মত অনুযায়ী ছবিগুলির অর্থ কী। সে-সব বেশিরভাগই আমার কাছে দুর্বোধ্য, ভাষার কারণে। তবে ছবির ভাষা বুঝতে তো আর অন্য ভাষা লাগে না, সেটা অন্তরের ভাষা দিয়ে বোঝা যায়। দেখলাম টিয়া পাখির মতো সবুজ পাখি, কিছু বানর বা ওই জাতীয় কিছু প্রাণীর ছবি। ছবিতে লাল রঙেরই প্রাধান্য, তবে অন্য রঙও আছে। তবে ছবিগুলো বেশিরভাগই দেওয়াল জুড়ে নয়। দেওয়ালের নীচের অংশে বা উপরের অংশে কিছুটা প্লাস্টার করে সমান করে নিয়ে তার উপর আঁকা। তবে আঁকার রেখা নিটোল, আঁকায় মুন্সিয়ানা যথেষ্ট। ঘরের ভিতরটা অন্ধকার, জানালা দেখলাম না। তাহলে এত অন্ধকারে কী করে যে তারা এঁকেছে বা রঙ ফুটিয়েছে বুঝতে পারলাম না, যেমনটি বুঝিনি আমাদের অজন্তা চিত্রের বেলাতেও।

একটা ঘরের ভিতর সিঁড়ি দিয়ে ওঠার জায়গা রয়েছে, বন্ধ থাকায় বুঝলাম না কোথায় গেছে। পাথরের কারুকার্যগুলোও মসৃণ ও শৈল্পিক, নিটোল। হ্যারা-ঢোরা মোটেই নয়।

এখান থেকে বেরিয়ে আবার চললাম চন্দ্রের পিরামিডের দিকে। তারও সামনে একটা বেদি। বেশ বড়োই সেটা, তবে বেশি উঁচু নয়। এই পিরামিডটি সূর্যের পিরামিডের থেকে একটু ছোটো বা কম উঁচু, তবে অন্য সবার থেকে বেশই উঁচু। এই চন্দ্রের পিরামিডেই শেষ হয়েছে ওই মৃতের রাস্তা। এটার মাথায় অনেকটা চওড়া চাতালমতো। তার উপরেই নাকি পূজার জন্য বলি দেওয়া হত বিভিন্ন পশু, এমনকি মানুষও। এখানে যে যথেষ্ট মানুষ বলি হত এবং সেটা পূজার অঙ্গ ছিল, এটা প্রমাণিত। এখানে বলি দেওয়া পশু এবং মানুষের কবরও পাওয়া গেছে বেশ কিছু। তাতে পাওয়া গেছে এরকম অনেক কঙ্কাল। জল, মাটির উর্বরতা ও পৃথিবীর দেবীর পূজা হত এখানে। পিরামিডের সামনের দিকে ঠিক মাঝ-বরাবর উপরে ওঠার জন্য ধরার একটা রডমতো আছে, অনেকেই সেটা ধরে উঠছে। সিঁড়ি এত সরু আর খাড়াই, তবু আমারও ইচ্ছা হল। কিন্তু একটু উঠেই দেখলাম নীচের দিকে তাকিয়ে মাথা ঘুরছে। তখন ভাবলাম, কোনোক্রমে উঠতে পারলেও নীচে নামার সময় আর সিঁড়ি দিয়ে নীচে আসতে পারব না। সোজা শর্টকাটে মাধ্যাকর্ষণের বলেই সঙ্গে সঙ্গে নীচে এসে পৌঁছাব। বুড়ো বয়সে আর অত আরাম (?) করবার সাহস হল না।

এখানে একট আশ্চর্য জিনিস দেখে ঘাবড়ে গেলাম। একটি শ্বেত শিশু অত রোদের মধ্যে পিরামিডের নীচে মাটিতে বসে আছাড়ি-পিছাড়ি করে কাঁদছে। তার পাশ দিয়ে সমস্ত দর্শকরা নির্বিবাদে পিরামিডে উঠছে, নামছে, চলে যাচ্ছে। কেউ শিশুটিকে না কোলে নিচ্ছে, না কেউ তার মা-বাবার খোঁজ করছে। প্রথমে এ-পাশ ও-পাশ তাকালাম, কোথাও তার মা বা কাউকে দেখা যায় কি না। দেখে বুঝতে পারলাম, না, কে তার মা-বাবা, তারা একে ছেড়ে কোথায়ই-বা গেল, কেনই-বা গেল, আহা রে। এইসব দেখি আমি বা আমরাই ভাবছি। অথচ এখানকার নিয়মে পরের ব্যাপারে নাক গলানো অপরাধ, কাজেই চুপ করে দেখা আর দেখে শিশুটির কষ্টে অধীর হওয়া ছাড়া কিছু করার নেই। হঠাৎ একটু পরে দেখি একটি মেয়ে পিরামিডের উপর থেকে নেমে এল। সঙ্গে একটি ছেলে, তার সঙ্গী। এসে ছেলেটিকে কোলে তুলে নিয়ে ভোলাতে ভোলাতে চলে গেল। আমি তো ব্যাপার দেখে থ। এরাই তবে বাবা-মা! কী নিশ্চিন্তে ছেলেকে একা কারও জিম্মায় না দিয়ে, কাঁদছে দেখে ছেড়ে এই চড়া রোদে রেখেও এতক্ষণ উপরে আনন্দে পিরামিড দেখে ফিরে এল! ভাবতে গিয়ে আমিই হোঁচট খেলাম। বুঝলাম, এইখানেই বাঙালিনী মা আর স্প্যানিশ বা অন্য ইউরোপীয় মায়ের তফাত। এই জন্য বাঙালি মায়েরা সারাজীবন ছেলে আঁকড়ে থাকে এবং বিপরীতে ছেলেরাও বুড়ো বয়স পর্যন্ত মায়ের কাছেই থাকে, বাইরে যায় না বা স্বাবলম্বী হয় না। আর ওরা একটু বড়ো হতেই স্বাধীন, স্বাবলম্বী বা ডাকাবুকো। মা-বাবা বা পরিবারের প্রতি টানও এইজন্য কম। স্প্যানিশরা তাই অত ছোটো বয়সে পৃথিবী জয় করে বেরিয়েছে আর ব্রিটিশরা—কত বাচ্চা ছেলে নিজের দেশ ছেড়ে কোথায় ভারতবর্ষের মতো দূর-দেশে এসে রাজত্ব করে গেছে।

ফিরলাম এবার সূর্যের পিরামিডের দিকে। রাস্তায় দু-একটা ছোটো স্মৃতিচিহ্ন নিলাম। রোদ আরও চড়া হয়েছে। সঙ্গে আনা শুকনো খাবার একটু খেয়ে নিলাম, বেলাও তো হয়েছে। এই পিরামিডটা আরও বড়ো। এখানের পিরামিডের সঙ্গে মিশরের পিরামিডের কিছু তফাত আছে। এই পিরামিডগুলোর মাথা ওগুলোর মতো ছুঁচালো নয়। তাছাড়া ওগুলো যেমন নীচের থেকে সোজা উঠেছে, মাঝে কোনও ধাপ নেই, এখানে কিন্তু চূড়ায় যাবার পথে দুটি তিনটি বা চারটি ধাপ আছে উচ্চতা অনুযায়ী। এছাড়া যা দেখলাম, মিশরের পিরামিডের চূড়াটা কাজের উপযোগী ছিল না, আসল প্রয়োজন ছিল পিরামিডের ভিতরটা, যেখানে ফারাওদের মমি বা ধনরত্ন থাকত। এখানে কিন্তু উপরটাই বা চূড়াটাই প্রয়োজনীয় ছিল পূজা বা ওই ধরনের অন্য প্রয়োজনে। সেই জন্যই উপরে ওঠার ব্যবস্থা ছিল, যেটা মিশরের পিরামিডে নেই। তবে হ্যাঁ, উপরে ওঠার যা ব্যবস্থা, সেটা বোধ হয় আমাদের কালের মানুষদের কথা ভেবে তৈরি হয়নি। তাছাড়া বোধ হয় এই পিরামিডের ভিতরটা দরকার হত না। তাই এগুলো নাকি মাটি দিয়ে পাহাড় বানিয়ে তার উপর পাথর গাঁথা।

যাই হোক, পৌঁছলাম সূর্য পিরামিডের সামনে। সেখানে সিঁড়ি দিয়ে তো উঠতে পারব না। ‘চাঁদে’ই যেতে পারিনি, আর এই ক্ষমতায় ‘সূর্যে’ উঠার চেষ্টা দুরাশা। কাজেই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো করে র‍্যাম্প দিয়ে যতটা ওঠা যায় ততটুকু উঠলাম। এটা অনেক উঁচু, কাজেই না উঠেই নেমে এলাম। চাঁদের পিরামিডে যেমন সোজাসুজি নীচে থেকে সোজা উপরে গেছে সিঁড়ি, এখানে কিন্তু তা নয়। এখানে ওঠার ব্যাপারটা একটু পাশ থেকে শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপ পর্যন্ত এসে তারপর সোজা উপর দিকে উঠে গেছে। এই পিরামিড চত্বরটা কিন্তু বেশ একটা উঁচু দেওয়াল গোছের গাঁথনি দিয়ে ঘেরা।

এখানে এসে আমার নিজের এক অদ্ভুত অনুভূতি হল। তা ঠিক বলে বোঝানো যাবে না। সেটা হতে পারে আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছাপূরণের আনন্দ বা সেই যুগের মধ্যে এসে পৌঁছানোর একটা আলাদা অনুভূতি বা সব মিলিয়েই একটা অন্যরকম ভালো লাগা। এই জিনিসটা হয়েছিল জর্ডনের পেত্রাতে কিংবা তুরস্কের এফেসিয়াসে।

যাই হোক, ফিরতে হবে। মনটা একটা বিচ্ছেদ বেদনায় ভরে গেল। ফিরে এসে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম, যেখানে নেমেছিলাম সেখানেই।

ফিরে যখন নর্থ বাস স্টেশনে নামলাম, তখনও অনেক বেলা রয়েছে। সেখান থেকে হোটেলে না ফিরে সোজা গেলাম বিখ্যাত চার্চ, চার্চ অফ গুয়াদালুপে দেখতে, যেটার আসল নাম ব্যাসিলিকা অফ আওয়ার লেডি অফ গুয়াদালুপে।

bhromonmexico8204

যা বুঝলাম, মেক্সিকো শহরের উত্তরে এই বিশাল চার্চ আসলে স্থানীয় আদিবাসীদের দলে দলে খ্রিস্টান করার উদ্দেশ্যেই তৈরি হয়েছিল। এই রোমান ক্যাথলিক চার্চটি আরও বিখ্যাত হয়ে ওঠে কারণ বর্তমান মেক্সিকোর প্রতিষ্ঠাতা মিগুয়েল হিডালগো এর দেবীকে দেশের স্বাধীনতার প্রতীক হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন এবং এখানেই মেক্সিকোর স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ হয় যা আমেরিকা ও মেক্সিকোর মধ্যে চলেছিল তার ১৮৪৮ সালের ২রা ফেব্রুয়ারিতে সন্ধি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে। এটি ১৯০৪ সালে পোপ কর্তৃক ব্যাসিলিকার সম্মান লাভ করে। এটি টেপেয়েক পাহাড়ের কোলে এক বিশাল ঐতিহ্যমণ্ডিত চার্চ। ঢুকেই এক বিশাল ফাঁকা বাঁধানো চত্বর, সামনে বিশেষ অনুষ্ঠানে জমায়েত হওয়ার জন্য। ১২ই ডিসেম্বর এখানে বিশাল উৎসব হয় এবং প্রচুর মানুষ আসেন। চত্বরের একদিকে আছে এক বিশাল ঘড়ি। এখানে দেবী মেরিই লেডি অফ গুয়াদালুপে রূপে পূজা লাভ করেন। চার্চের বাইরে এক জায়গায় অনেক মূর্তি করা আছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, আদিবাসীরা দেবীর কাছে পূজা অর্ঘ্য নিবেদন করছে এবং দেবীও তাদের কৃপা করছেন। পাশে পুরোনো চার্চটিও আছে যেটি মাটিতে বসে যাওয়ার ফলে নতুন চার্চ তৈরি হয়েছে।

এই চার্চটি তৈরি হওয়ার পিছনের গল্পটি অনেকটা আমাদের দেশের মন্দির তৈরির পিছনে যেমন ভক্তের স্বপ্নাদেশ পাওয়ার গল্প থাকে, এখানেও তেমনই। সুন্দর গল্পটি হল, ১৫৩১ সালে ডিসেম্বরে হুয়ান দিয়েগো নামে এক গরিব আদিবাসীকে বার বার দেখা দিয়ে তাকে এখানে চার্চ বানানোর জন্য দেবী অনুরোধ করতে থাকেন। সে বিশপকে সেজন্য বার বার অনুরোধ করে, কিন্তু তিনি প্রথমে বিশ্বাস করেন না। শেষে নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে এবং দেবীর বার বার অনুরোধের মাধ্যমে তাঁর ঘটনাটি বিশ্বাস হয়। শেষে এখানে চার্চটি নির্মিত হয়। আসলে এটি যেখানে আছে, সেখানে আগে ছিল আদিবাসীদের দেবী টোনান্টজিন-এর মন্দির। স্প্যানিশরা ১৫১৯-২১-এর মধ্যে এটি যখন জয় করে তখন সেই পুরোনো মন্দিরটি ধ্বংস করে সেখানে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করে। স্থানীয় আদিবাসীদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করে তাদের জন্য এই গল্পটি তৈরি করে এবং তাদের বিশ্বাস করতে বাধ্য করে যে আগের দেবীই এখন এই নামে অবতীর্ণ হয়েছেন। আর উপরের গল্পটি এখানে প্রাপ্ত এক পার্চমেন্ট কাগজের পুথিতে তৎকালীন ভাষা নাহুয়াটলতে লেখা আছে সেই ভক্ত হুয়ান দিয়েগোর সই করা। তবে বিশেষজ্ঞরা উপরের গল্পটি বানানো বলে মনে করেন এবং আরও একটি ১৬ পাতার দলিল যার নাম নিকান মপোহুয়া, পাওয়া গেছে এবং সেটি নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরিতে রাখা আছে। তবে যাই থাক সঠিক সত্যি ঘটনার খুব বেশি প্রমাণ নেই।

ক্রমশ

ভ্রমণ সব লেখা একত্রে

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s