আগের পর্ব–> পর্ব-১ পর্ব -২, পর্ব- ৩, পর্ব ৪, পর্ব ৫, পর্ব ৬
এর পিছন দিকে বাগান অংশটি খুবই সুন্দর। আর নতুন ব্যাসিলিকাটি এক অদ্ভুত ধরনের তৈরি। এটিকে প্রথমে দেখে কোনও চার্চের থেকেও কোনও সভাগৃহ বা ‘হল’ বলে মনে হয়। সাধারণত এখানে চার্চগুলো যেমন হয়, এটি মোটেই সেরকম দেখতে নয়। দুটি চার্চেই লোকে প্রার্থনা করে। তবে গেট দিয়ে ঢুকলে প্রথমে নতুন চার্চ ও পরে পুরাতন চার্চটি আছে।
এখান থেকে আমাদের হোটেল অনেক দূর। ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। এরপর আমরা গেলাম একটি ওহাকান হোটেলে। সেখানে ঢুকেই দেখি, হোটেলটি মোটামুটি বড়ো এবং তার ওয়েটাররাও সুন্দর ড্রেস পরে মজুত। সেখানে দেখি হোটেলটি একটু গ্রাম্য ভাব দেওয়ার জন্য দেওয়ালে, ঘরের আসবাবে সর্বত্র গ্রাম্য জিনিস দিয়ে সাজিয়ে একটা গ্রাম্য ভাব এনেছে। কলকাতায় গড়িয়াহাটের কাছে একটা হোটেলে এরকম দেখেছিলাম। এখানে হোটেলে, ছোটো বটে, কিন্তু ব্যবস্থাটা খুব সুন্দর। এককোণে দুজন গাইয়ে এবং বাজিয়ে খুব উচ্চ রবে জাইলোফোন ও অন্য একটা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গান করছে। এরা হোটেলের স্থায়ী গায়ক বলে মনে হল। এরকম এখানে অনেক দোকানে আছে। এখানে এদের ওহাকার স্পেশাল চিকেন সহযোগে মোলে এবং দু-একটি মেক্সিকান পদ নেওয়া হল। খেয়ে মনটা ভরে গেল। গান শেষ হতেই দেখি সবাই যে-যার টেবিল থেকে হাততালি বাজিয়ে শিল্পীদের সংবর্ধিত ও উৎসাহিত করছে। আমরাও দেখাদেখি তাই করলাম। বেশ ভালো লাগল এখানকার খাবার ও পরিবেশ।
পরদিন একটু দেরি করেই বেরোনো হল। আজ হোটেল ছেড়ে দেব। যাব পুয়েব্লা। তবে সেটা বিকেলে যাব। তাই বললাম হোটেলে যে, হোটেল ছেড়ে দিচ্ছি, কিন্তু জিনিসপত্র রেখে যাব ক্লোক রুমে। ফিরে নিয়ে যাব। ওরা রাজি হল।
আমরা গেলাম কোয়োয়াকান-এ। এটির অর্থ নাহুয়াটল ভাষায় কোয়োটোদের (এটি শেয়ালের মতো এক বন্যপ্রাণী) জায়গা। এখানে মেক্সিকো বিজয়ী হার্নান কর্টেজ তাঁর প্রথম ঘাঁটি গেড়েছিলেন এখানকার মানুষদের সহযোগিতায়। এই জায়গাটি প্রথমে মেক্সিকোর অন্তর্ভুক্ত ছিল না। পরে ১৮৫৭ সালে এটি মেক্সিকোর অন্তর্ভুক্ত হয়। এখানকার বিখ্যাত শিল্পীদ্বয় বা শিল্পী দম্পতি ফ্রিডা কাহলো এবং দিয়েগো রিভেরার স্মৃতিবিজড়িত ফ্রিডার বাড়ি তথা তাঁর আর্ট মিউজিয়াম দেখতে। বর্তমানে তাঁর নামডাক এত হয়েছে মিডিয়ার মাধ্যমে যে, প্রচুর ভিড় হয় ওই ছোটো বাড়িটি দেখার জন্য। ঘন নীল রঙের বাড়িটির নাম ‘ব্লু হাউস’ বা কাসা আজুল (Casa Azul)।
উবেরে করে মেক্সিকো সিটির কোয়োয়াকান এলাকায় বাড়ির সামনে নেমে দেখি, ও বাবা, বিশাল লাইন! এত বড়ো লাইন যে লাইনে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করার মতো সময় আমাদের নেই। কী আর করি, মনে মনে শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে এগোলাম অন্য এক পৃথিবী বিখ্যাত নেতার স্মৃতি দেখতে। এখানে রাস্তাগুলোর বেশ নাম, পৃথিবীর যত বড়ো বড়ো শহর আছে তাদের নামে নাম। যেমন ক্যালে ভিয়েনা, ক্যালে বার্লিন বা ক্যালে লন্ড্রেস এইসব। এই অঞ্চলটি আরও বেশি করে শিল্পী ও শিল্পবোদ্ধাদের স্বর্গ এই কারণে, যে এখানেই হল ফ্রিডা কাহলো ও দিয়েগো রিভেরার স্মৃতিমন্দির। এছাড়া রয়েছে রাশিয়ান নেতা লিওঁ ট্রটস্কি মিউজিয়াম। এছাড়া আছে সুন্দর কয়েকটি উদ্যান। এর মধ্যে জার্ডিন সেন্তেনারিও (Jardin Centenario) বেশ সুন্দর, যেখানে রয়েছে সুন্দর ফোয়ারা, তার চারপাশে দুটি কোয়োটের ক্রীড়ারত মূর্তি, যার জন্য এর নাম কোয়োটে ফাউন্টেন এবং এছাড়া আরেকটি বড়ো উদ্যান।
ট্রটস্কি মিউজিয়াম কাছেই, হেঁটে রাস্তা দিয়ে যেতে ভীষণ ভালো লাগে। এখানে সুন্দর পরিষ্কার বাঁধানো গাছের ছায়াঘেরা শান্ত রাস্তায় হাঁটার মজাই আলাদা। এখানে অনেক বাড়ি বা রাস্তাঘাট সেই ষোড়শ শতাব্দীর বা সেই সময়ের কাছাকাছি। অনেক মানুষই তাঁদের পুরোনো ঢং পরিবর্তন করতে চাননি। তাই এখানকার পরিবেশ বা দৃশ্য একটু অন্যরকমের। কিছু কিছু সরু রাস্তা আছে সেই আগের মতো। শহরটাকে দেখলেই একটা পুরোনো ছাপ চোখে পড়ে।
টিকিট করে ট্রটস্কি মিউজিয়ামে ঢুকতে হল ব্যাগ-ট্যাগ জমা রেখে। রাশিয়ান কম্যুনিস্ট নেতা ট্রটস্কি রাশিয়া থেকে বিতাড়িত হওয়ার পরে ৬ই ডিসেম্বর ১৯৩৬ সাল থেকে এখানে নির্বাসিতের জীবনযাপন করেন। তাঁর সঙ্গে শিল্পীদ্বয়ের (ফ্রিডা ও দিয়েগো) ভীষণ ভালো যোগাযোগ ছিল, যা তাঁকে এখানে আশ্রয় পেতে সাহায্য করে। তিনি ছিলেন ঘোরতর স্ট্যালিন বিরোধী এবং তা প্রকাশ করতেও দ্বিধা করতেন না। স্ট্যালিনের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করার অপরাধে তাঁকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়। ১৯২৯ সাল থেকে বিভিন্ন দেশে তাঁকে পালিয়ে বেড়াতে হয়। এই অপরাধেই তাঁকে মস্কোয় মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হয়। মেক্সিকো তাঁকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়। অবশ্য এখানে এসেও তিনি নিষ্কৃতি পাননি। তাঁকে চার বছরের মধ্যে এই বাড়ির মধ্যে, তাঁর পড়ার ঘরে এক আততায়ী, র্যামন মার্কেডের একটি আইস পিক দিয়ে মাথার পিছনে মেরে হত্যা করে। অবশ্য এর আগেও বেশ কয়েকবার তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এখানে তিনি যে-জিনিসটি যেমন রেখেছিলেন, এমনকি বাথ-রোবটি পর্যন্ত, যেমন রেখেছিলেন তেমনই আছে। ঘরের মধ্যে উঠানে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী নাতালিয়া সেডোভা আর তাঁর সমাধি রয়েছে একসঙ্গে। হত্যার পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এটি সাধারণের জন্য মিউজিয়াম হিসাবে খুলে দেওয়া হয়। প্রথম দিকে তিনি ফ্রিডার বাড়িতে কাসা আজুলেতেই থাকতেন। পরে দিয়েগোর সঙ্গে কিছু মতানৈক্য হওয়ায় তিনি কাছাকাছি ভিয়েনা স্ট্রিটে এই বাড়িতে চলে আসেন। আততায়ী সুদক্ষ অভিনেতার মতো তাঁর সেক্রেটারির সঙ্গে প্রেমিকের অভিনয় করে তাঁদের পরিবারের বিশ্বাসভাজন হয়। ফলে বাড়িতে ঢোকার সুযোগ লাভ করে। একসময় তাঁর পড়ার ঘরে তিনি যখন পড়াশোনা করছিলেন, র্যামন তাঁকে কিছু লেখা পড়তে দিয়ে অন্যমনস্ক করে দিয়ে বরফ কাটা কুঠার দিয়ে মাথার পিছনে খুলিতে আঘাত করে। তারপর তিনি তার সঙ্গে লড়াই করে তার হাত ভেঙে দেন। রক্ষীরা যখন তাকে মেরে প্রায় অর্ধমৃত করে ফেলেছিল, তখন তিনি তাকে বাঁচিয়ে রাখতে বলেন বিচারের জন্য। বিচারে তার কুড়ি বছরের জেল হয়। তারপরে জেলমুক্তির পর দেশে ফিরলে অবশ্য তাকে এই হত্যার পুরস্কার-স্বরূপ ‘অর্ডার অফ লেনিন’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। বাড়িতে বিভিন্ন চিঠি, ছবি, নানা সমসাময়িক নথিপত্র ছাড়াও সেই সময়ে তাঁর এবং পরিবারের ব্যবহৃত সমস্ত জিনিস, এমনকি টুথপেস্ট, বাথরুমের জিনিস, খাট-বিছানা, গ্যাস স্টোভ, রান্নার জিনিসপত্র সব যেমন ছিল তেমনই রাখা আছে। ঘরের উঠানটি নানা গাছপালা দিয়ে সুন্দর করে সাজানো। এছাড়া সমস্ত ঘরগুলিতে নানা ছবি, নথিপত্র, তাঁর লেখা বা তাঁর সম্পর্কিত বই, জিনিসপত্র ইত্যাদি দিয়ে সাজানো প্রদর্শনী করা আছে। ভালোই লাগল বেশ। অনেক কিছু জানা হল তাঁর সম্বন্ধে।
সেখান থেকে বেরিয়ে আমরা দুটি উদ্যান দেখে ভাবলাম, আরও একটু সময় আছে। যাই একটু্, এখানকার গ্রামীণ বাজারের ঢংয়ের বাজারটা দেখে যাওয়া উচিত। আমার সবসময় মনে হয়, কোনও জায়গাকে ভালো করে চিনতে গেলে সেখানকার বাজারটা একবার অবশ্যই ঘুরে দেখা উচিত। তবে তা অবশ্যই বর্তমান মল নয়। কারণ, সেগুলোর চরিত্র সব দেশেই এক, যা চিনে তাই কম্বোডিয়া, তাই আমেরিকা কি ফ্রান্স। তাই দেখতে হলে অবশ্যই স্থানীয় বাজার, বিশেষ করে গ্রাম্য বাজার পেলে সবথেকে ভালো হয়। আর এছাড়া যদি বইয়ের দোকান কি লাইব্রেরি যাওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়, তাহলে আরও ভালো হয়। আর এখানকার বাজার এবং তার বিভিন্ন খাবারদাবারের তো খুবই নামডাক। এর নাম মারকাডো ডি কোয়োয়াকান। ছোট্ট দরজা বাজারের, রাস্তার উপরেই। ফ্রিডা কাহলোর বাড়ির কাছেই। কিন্তু ঢুকেই চোখ ছানাবড়া। কী নেই এখানে! অনেকটা আমাদের ওখানের হাতিবাগান বাজার বা মানিকতলা বাজারের মতো। তবে যেন আরও বেশি জিনিস এবং আরও বেশি ঠাসাঠাসি করে দোকান। কিন্তু বেশ গোছানো এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এখানে এক স্ন্যাক্সের দোকানে দেখলাম ঝুড়ির মধ্যে বিক্রি হচ্ছে ভাজা বোলতা। সেগুলো এরা কুড়মুড় করে চানাচুর বা ওই জাতীয় ভাজার মতো খায়। আমাদের দেশের কোহিমা নাগাল্যান্ডেও দেখেছি পলু পোকার মতো জ্যান্ত পোকা বাজারে বিক্রি হচ্ছে খাওয়ার জন্য। চিনের বা ব্যাঙ্ককের রাস্তাতেও এরকম নানা অদ্ভুত পোকা বা সামুদ্রিক জীব বিক্রি হতে বা খেতে দেখেছি। খাবার দোকানও অনেক রয়েছে এবং তার সামনে উঁচু উঁচু ছোটো ছোটো টুল পাতা আছে। যে-যেমন অর্ডার দেবে, গরম গরম খাবার পাওয়া যাবে। আমরাও এখানে কয়েকটা খাবার খেলাম। মন ভরে গেল খেয়ে। বেশ ভালো লাগল। এখানে মাছ-মাংস, ফুল-ফল-সবজি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সবই পাওয়া যায়। এখানে স্থানীয় গ্রামীণ জামাকাপড়, খেলনা, গাছ, পাখি, ফুল, বিভিন্ন উৎসবের সাজানোর জিনিস ইত্যাদি সবই পাওয়া যায়। এত রঙচঙে বাজার, দেখে ভীষণ ভালো লাগল।
বেরোতেই হল, একটু পরেই যেতে হবে পুয়েব্লা।
ফিরলাম হোটেলে। এখান থেকে মালপত্র নিয়ে ফের সেই নর্থ বাস স্টেশনে এ.ডি.ও বা এডো বাসে পুয়েব্লা যাবার কথা। টিকিট কাটা হল। এটি ফার্স্ট ক্লাস, এয়ার কন্ডিশনড বাস। বাসে ওঠার মুখেই প্রত্যেককে খাবার জলের বোতল ও ইয়ার ফোন দিল দুটি করে। বাসে দু-তিনটে টিভি, সুন্দর টয়লেট সব আছে। সিটও খুব আরামদায়ক। একদম সঠিক সময়েই ছাড়ল। আগে খেয়াল ছিল না। সুন্দর রাস্তা, একেবারে ছবির মতো এলাকার পাশ দিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ দেখি রাস্তার দিকে জানালা থেকে দেখা যাচ্ছে জীবিত আগ্নেয়গিরি পোপোক্যাটেপেটল যা ১৭,৮০২ ফুট উঁচু এবং মেক্সিকোর দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বত। এর পাশেই আছে এর যমজ আগ্নেয়গিরি ইজতাচ্চিহুয়াতল। তবে দ্বিতীয়টি এই মুহূর্তে ঘুমন্ত। এর আগে কখনও জীবন্ত আগ্নেয়গিরি দেখার সুযোগ হয়নি। এবারও হল অনেকটাই দূর থেকে, তবু এর উত্তেজনা আর আনন্দই আলাদা। মনে হল উত্তেজনায়, আগ্নেয়গিরিটা বাইরে নয়, নিজের ভিতরেই বুকের মধ্যেই ফুটছে। পাহাড়ের মাথায় ধোঁয়া রয়েছে, হঠাৎ দেখলে মনে হবে সাদা মেঘ রয়েছে পাহাড়ের মাথায়। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই তফাতটা বোঝা যায় যে, ওটা মেঘ নয়, পাহাড়ের মাথা থেকে বেরোনো ধোঁয়া।
যাই হোক, পৌঁছলাম পুয়েব্লা। এখানে বেরোনোর মুখে পড়লাম এক ফ্যাসাদে। উবের তো ডাকা হল। কিন্তু উবের তো আর ডাকলেই হল না, তার তো আসার বা দাঁড়ানোর সঠিক জায়গা আছে। না-হলে ও এসে দাঁড়াবে ওর জায়গায় আর তুমি থাকবে অন্য জায়গায়, কেউ কাউকেই পাবে না। তাই বুঝতেই পাচ্ছিলাম না কোথায় উবের আসছে। কেউ বলতেই পারে না। বলবে কী করে, বুঝতেই তো পারছে না ভাষা। সবাই ব্যস্ত যে যা নিজের নিজের গাড়ি ধরতে। শেষে এক পুলিশকে জিজ্ঞাসা করতে কাজ হল। একটি মেয়ে ড্রাইভার এল গাড়ি নিয়ে। সে আবার এমন জায়গায়, একটু সময় নিয়ে দাঁড়িয়ে গাড়িতে উঠব তা হবে না। গাড়ি প্রায় থামেই না, কারণ ব্যস্ত রাস্তার মধ্যেই উঠতে বলল। তার মধ্যেই কোনোরকমে উঠে পড়লাম ঝুলতে ঝুলতে। সে এক বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা। ভয় পাচ্ছিলাম, অ্যাকসিডেন্ট না হয়ে যায়। যাক, যেতে যেতে দেখলাম শহরটির মধ্যে কেমন যেন একটা পুরোনো ছোঁয়া আছে। বেশিরভাগ বাড়িই পাথরের। তবে রাস্তাঘাট বাঁধানো এবং ঝকঝকে পরিষ্কার। আসলে এখানে মাটির কোনও জায়গাই নেই, ফলে ঘাস নেই, ধুলোও নেই। সমস্ত জায়গাটাই, একেবারে ঘরের কোল থেকে রাস্তা সমেত সবটাই বাঁধানো। এরা এত পরিচ্ছন্ন থাকে কী করে সবাই, বুঝতেই পারি না। যেখানে যাই সেখানটাই একেবারে চোখ টেনে নেওয়ার মতো।
যে হোটেলটায় উঠলাম, সেটা কেমন যেন একটা পুরোনো বাড়ির মতো। পুরোটাই পাথরের তৈরি। এখানে সব এত মোটা মোটা পাথরের ব্লক দিয়ে ঘরগুলো তৈরি যে কেন কে জানে। ঠিক কলকাতার পুরোনো দিনের বাড়িগুলো যেমন, মাঝে একটু চৌকো জায়গা ছাড় দিয়ে চারধার ঘিরে দু-তিনতলা ঘর তৈরি হত, তেমনই। পরে দেখলাম, এখানকার বেশিরভাগ বাড়ি, হোটেল, অফিস সব একই ধাঁচের। পুরোনো বাড়িগুলো সবই একরকমের। আর সিঁড়িগুলো কী উঁচু-উঁচুমতো! হোটেলে জিজ্ঞাসা করলাম, “এই যে তিনতলা উঁচুতে ঘর দিলে, উঠতে তো পায়ে ব্যথা হয়ে যাবে। একটু নীচে ঘর দেওয়া যায় না?”
সুন্দরী বাচ্চা রিসেপশনিস্ট মেয়েটি ঘাড় নেড়ে বলল, “না দুঃখিত, নীচে ঘর নেই।”
ও বাবা, কী করে উঠব, বুড়ো হাড়ে পায়ে ব্যথা। বললাম, “লিফট নেই?”
বলল, “না, এখানে ওসবের চল কোথাও খুব বেশি নেই।”
সবাই যেন টিওটিহুয়াকানের দেশের মতো। ভালো কথা।
“আচ্ছা, তোমাদের বয়কে পাঠাও, আমাদের সুটকেসগুলো নিয়ে যাবে।”
মেয়েটি নির্বিকারভাবে বলল, “আমাদের মাল তোলার জন্য কোনও লোক নেই।”
“মানে? একটু সাহায্য করার মতো কেউ নেই?”
বলে, “না।”
অগত্যা! মধুসূদন ভরসা। নিজেদেরই কষ্ট করে নিয়ে যেতে হবে। এই একই অবস্থা হয়েছিল আমার ফ্লোরেন্সের হোটেলে। এই অবস্থা এদের, আর এর রেটিং এত ভালো কী করে কে জানে?
যাই হোক, ঘরে তো পৌঁছলাম। ঠিক যেন গোটাটাই পুরোনো দিনের বড়ো সম্ভ্রান্ত লোকেদের বাড়ি। ঘরের বিশাল বিশাল দরজা-জানালা। শুধু তাই নয়, ঘরের ছাদ, লোহার সিঁড়ি, ব্যালকনি, দরজার ছিটকিনি সবেতেই পুরোনো দিনের আভিজাত্যের ছাপ। জিজ্ঞাসা করলাম সকালে ব্রেকফাস্টের ব্যাপারে। বলল, কন্ট্রিবিউটারি ব্রেকফাস্ট। কিন্তু পরদিন সকালে লেগেছিল চমক। সে-কথা পরে বলছি।
যাই হোক, সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। সামনে যোকালো, ঘরের দরজা থেকেই আলো ঝলমল যোকালো দেখা যাচ্ছে, তাই ভাবলাম, ঘরে বসে না থেকে বাইরে যোকালোতে যাই। আর এখানে তো একটা দিনই থাকা। সময় নষ্ট করে কী হবে। বাইরে বেরিয়ে ফুটপাথ দিয়ে একটু যেতেই পড়লাম যোকালোতে। এখানে প্রতি শহর বা গ্রামে একটা করে যোকালো আছে, আগেই বলেছি। এটা যেমন শহর তেমন তার আয়তন বা সাজানো গোজানো হয়। মেক্সিকো সিটি বড়ো শহর, তার যোকালো বড়ো, পুয়েব্লা ছোটো শহর, তার যোকালোও ছোটো। এখানে যোকালোতে একটা উঁচু বেদির মতো চারদিকের প্রধান রাস্তার ক্রসিংয়ে একটা বড়ো বাঁধানো জায়গা। সেখানে সুন্দর ফোয়ারা আছে। চারধারে অনেক বসার জায়গা আছে, অনেক গাছ আছে, অনেক আলো দিয়ে সাজানো, পরিচ্ছন্ন। অনেকটা আমাদের কলকাতার কার্জন পার্কের মতো। সেটা যদি পরিচ্ছন্ন করে সাজিয়ে আর একটু উঁচু করে বাঁধানো হয়, যেমন দেখতে লাগবে তেমনই। চারধারে সব আলো ঝলমলে বড়ো বড়ো শো-কেসওয়ালা দোকান, খাবার দোকান, ফুটপাথে নানারকমের গান, ম্যাজিক, খেলা দেখানো, হকার, বেলুনওয়ালা, খাবার ফেরিওয়ালা এইসব সাড়ে বত্রিশভাজা। একেবারে হইহই করছে, যেন মেলা লেগেছে। লোকে নিজেরা এসেছে, পরিবারকে এনেছে, বাচ্চারা খেলছে। কিছুটা সময় কাটাচ্ছে। কোথাও ব্যান্ডের দল মাইক লাগিয়ে গান করে যাচ্ছে। লোকের অনুরোধ মতোও গান করছে। তারা আবার পয়সা দিচ্ছে। বেশ একটা মজার জগৎ। আমরা কিছু চুরোস আর আইসক্রিম নিয়ে বসলাম। বেশ লাগল নতুনরকম সন্ধ্যাটা। ফেরার সময় পাশের দোকান থেকে খাবার নিয়ে ফিরলাম।
পরদিন সকালবেলা উঠে ওদের ব্রেকফাস্টের জায়গায় গিয়ে সব দেখে চোখ ছানাবড়া। যা বলব বলেছিলাম, তাই বলি। চা চাইলাম। সমস্ত জায়গার হোটেলে দেখেছি ব্রেকফাস্ট সাজানো থাকে, নিজে যা পছন্দ, তার মধ্যে থেকে নিয়ে নিতে হয়। এখানে নিজে নেওয়ার কোনও ব্যবস্থাই নেই। চা চাইলেও সেটা কোন রুম নম্বর বলে এক কাপ করে চেয়ে নিতে হবে। জনপ্রতি এক কাপ চা এবং এর বেশি নিলে পয়সা লাগবে। আবার সঙ্গে কী আছে জিজ্ঞাসা করাতে একেবারে কাগজের মতো পাতলা দু-পিস করে তরমুজের ফালি জনপ্রতি আছে, এই দেখাল। বাকি যা আছে নিতে গেলে পয়সা লাগবে। এটা একটা ব্রেকফাস্ট হল! রাগ করে চলে এলাম, দূর ছাই, আলাদা পয়সা দিয়েই যদি খাব, এর কাছে খাব কেন? বরং চট করে তৈরি হয়ে বেরোনোর ব্যবস্থা করতে গেলাম, বাইরে বেরিয়ে খেয়ে নেব।
আজ এখানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো চোলুলার পিরামিড দেখতে যাওয়ার কথা। এখানকার পিরামিড যে সবচেয়ে বড়ো এটা জানা ছিল না। আমরা তো মিশরের পিরামিডের কথাই বেশি শুনেছি। এখানে যে এত পিরামিড রয়েছে এবং সেগুলোও ধারা মিশরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, সে-কথা তো জানতামই না। এগুলো যখন তৈরি হয় বা যারা তৈরি করেছিল, তারা নিশ্চয়ই মিশরের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ না করেই করেছে এবং সত্যি কথা বলতে কী, কোনোটাই ঠিক কে তৈরি করেছিল জানা যায়নি এবং সে-সম্বন্ধে সন্দেহ আছে। তবে যে বা যারাই তৈরি করুক, তাদের স্থাপত্যজ্ঞান যে মোটেই কম ছিল না, অঙ্কে তারা যে মোটেই কাঁচা ছিল না, বরং হয়তো বর্তমান আমাদের চেয়ে বেশি পণ্ডিতই ছিল, এ ব্যাপারে নিঃসন্দেহ। তারা তো আর আমাদের ভারতবর্ষের হিন্দুদের শূন্য আবিষ্কার পায়নি, কিন্তু না জেনেই তারা অন্যদিক দিয়ে এত কীভাবে এগোল তা ভেবে পাওয়া যায় না। আমার তো মনে হয় অতীতে, আমরা এখন সারা পৃথিবী যেভাবে অঙ্ক করি, তার থেকে আলাদা অন্য নিয়ম ছিল এবং সেটা এমনও হতে পারে যে বিভিন্ন দেশে বিভিন্নরকম ছিল। অবশ্য সমস্তটাই আমার অনুমান, ভুলও হতে পারে।
যাক, খাবার কিনছি দোকানে, এমন সময় দেখি, সামনে রাস্তায় একটি বয়স্কা মেয়ে মোটরে করে সকালের ইডলি ধোসা বিক্রির মতো করে গাড়ির পিছনের ডিকি খুলে খাবার দোকান সাজিয়ে বসেছে আর ভুট্টার পাতায় করে মুড়ে গরম গরম ধোঁয়া ওঠা এনচিলাদা, গরম এম্পানাদা বিক্রি করছে। লোকে খুব খাচ্ছে। ভাবলাম আমরাও খাই। নিলাম বেশ কিছুটা। বেশ সুন্দর খেতে। এম্পানাদা হল ভাজা বা বেক করা পুর-ভরা প্যাস্ট্রি। আর এনচিলাদা হল মাংস, বিনস বা আলু ইত্যাদি দিয়ে পুর করে ভুট্টার রুটির মধ্যে রোল করা পাকানো, আমাদের এগরোলের মতো।
ইতিমধ্যে এসে গিয়েছিল চোলুলা যাবার উবের। এই চোলুলা যাবার জন্য একটা লাক্সারি, টয় ট্রেনের মতো ট্রেনও আছে। তবে তার সময় লাগে বেশি। তাছাড়া তার সময়সারণির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো সময়ও আমাদের নেই।
আমরা এসে পৌঁছলাম চোলুলা। নির্দিষ্ট জায়গায় এসে দেখি, একেবারে গ্রামের মতো। আর আমাদের তীর্থস্থানে ঢোকার মুখে যেমন খড়ের ছাউনিওলা দোকান থাকে, সেরকম অনেক দোকান আছে, বাড়িও আছে। একেবারে একটা গ্রামের মানচিত্র। দূর থেকেই দেখা যাচ্ছিল। একটা পাহাড়ের উপর সোনালি চূড়াওলা মাঝে ডোম ও ধারে মিনার দেওয়া একটি চার্চ। কাছে যেতে গিয়ে দেখি, যে রাস্তায় যেতে হবে সেটি একটু উঁচুতে উঠে যাচ্ছে ধীরে ধীরে উপর দিকে ঢালু হয়ে আর তার উপর গোটা রাস্তা জুড়ে ছাউনি খাটিয়ে বসেছে গ্রামীণ বাজার। তাতে নানারকমের ঘরে তৈরি খাবার, ভাজা, ঘরের মেয়েদের তৈরি সুন্দর সুন্দর হাতের কাজ, আচার, খেলনা, বাচ্চা ছেলেদের খেলনা, ঘর সাজানোর জিনিস ইত্যাদি নানারকম জিনিস বিক্রি হচ্ছে। আবার দেখলাম কোনো-কোনো জায়গায় কিছু লোক প্রাচীন আদিবাসী আজটেকদের মতো সেজে দর্শকদের কাছ থেকে কিছু পয়সা উপার্জনের চেষ্টা করছে। এইরকম সব মজাদার রঙিন ব্যাপার। আমাদের মতো অনেক পর্যটক বেশ উপভোগ করছেন। আমরাও কিছু জিনিস কিনে খেলাম স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিতে।
খুঁজে পাচ্ছিলাম না পিরামিডটা কোথায়, যেটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো পিরামিড। কাছে গিয়ে দেখে বুঝলাম, এই পাহাড়টা, যার উপরে ওই স্বর্ণবর্ণের চূড়াওলা চার্চ, সেই পাহাড়টাই পিরামিড আসলে।
সেটি পরিত্যক্ত হয়ে তার উপর এত মাটি জমেছে যে তার উপরে বড়ো বড়ো গাছ হয়ে গেছে, না জানা থাকলে কেউই বুঝতেও পারবে না যে তার মধ্যে ঘুমিয়ে আছে এক আশ্চর্য পিরামিড, যা আসলে মেসো-আমেরিকান দেবতা কোয়েটজেল্কোটল বা পক্ষযুক্ত সর্পদেবতার (Quetzalcoatl) মন্দির। আমাদের সৌভাগ্য যে বিজেতারা বুঝতেই পারেনি এই পিরামিডের অস্তিত্ব এবং না বুঝেই তারা এর উপরে চার্চটি বানিয়েছে, তা না হলে হয়তো অন্য সবকিছুর মতো এটিকেও তারা ধ্বংস করে দিত আর আমরা হারাতাম আজকের এই বিস্ময়কে।
আমরা ঠিক করলাম, আগে উপরে না উঠে আগে দেখে নেব পিরামিডের আশ্চর্য আভ্যন্তরীণ ইতিহাস। কারণ, উপরে তো আছে অনেক পরে নির্মিত স্প্যানিশদের তৈরি এক চার্চ। যারা বুঝতেই পারেনি যে এই কৃত্রিম পাহাড়ের নীচে লুকিয়ে রয়েছে এক ঐতিহাসিক সম্পদ। অবশ্য বুঝতে পারলেও তারা এর কতটা গুরুত্ব দিত তা বলা যায় না। তারা তো জয়ের নেশায় অন্য সব জয়ীদের মতো আগে সব পুরোনো স্থাপত্য গুঁড়িয়ে শেষ করে দিতে চেষ্টা করেছিল। তবে বর্তমানে সরকার এর অপরিসীম গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে এবং একে রক্ষা করার জন্য আশেপাশের সমস্ত জায়গাকে মুক্তাঞ্চল করে রেখেছে। এমনকি এর আশেপাশে বাজি ফাটানোও নিষিদ্ধ। কারণ, তার কম্পনে এর ক্ষতি হতে পারে।
এটি নির্মিত হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দী পর্যন্ত। আমরা ১৪৭৬ বর্গ ফুট ভূমি ও ২১৭ ফুট উচ্চতা যুক্ত এই পিরামিডের পাশ দিয়ে সরু রাস্তা বরাবর এর পিছন দিকে চলে গেলাম। পিরামিডের দু-দিক দিয়ে উপরে যাবার জন্য দুটি সিঁড়ি আছে। পিছন দিকের সিঁড়ির চেয়ে সামনের দিকে অর্থাৎ বাজারের দিক থেকে যে-রাস্তাটা উপরে গেছে, সেটিই প্রশস্ত। আমরা পিছন দিকে গিয়ে দেখি খননকার্য হয়েছে মাত্র অল্প কিছু অংশ। তাতেই যা বেরিয়েছে দেখে আমরা থ। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেই ভূমিতল থেকে অনেক নীচে এই পিরামিডের ভিত্তি ভূমি। সেখান থেকে ধাপে ধাপে উপরের দিকে উঠে গেছে। এই নীচের দিকে, যেগুলো খোঁড়া হয়েছে, আজও তার গাঁথুনি নিখুঁত, যথেষ্ট পোক্ত। গাঁথুনিতে তারা সুরকি আর সামুদ্রিক ঝিনুক জাতীয় প্রাণীর পোড়ানো চুন ব্যবহার করেছিল। অথচ কাছাকাছি তো সমুদ্র নেই তেমন, ফলে আন্দাজ করা হয় দূর কোনও সমুদ্র নিকটবর্তী দেশের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল তাদের, যেখান থেকে তারা এগুলো এনেছিল। একটা কুয়ো, বেশ কিছু সিঁড়ি, প্রকোষ্ঠ, বাঁধানো চত্বর, জলনিকাশি নালা ইত্যাদি দেখে একটা মোটামুটি আন্দাজ করাই যায় তাদের নির্মাণ শৈলীর। তাদের স্থাপত্যবিদ্যার পরিচয় পেয়ে সত্যিই আশ্চর্য হয়ে যেতে হয়। একসময় নাকি এই অঞ্চল ছিল প্রচণ্ড ঘন জনবসতি। প্রায় লক্ষাধিক মানুষ বাস করত এখানে। অবশ্য পরে আবার এই অঞ্চল লোকশূন্য হয়ে গিয়েছিল। সে যাই হোক, এতদিন ধরে একটা স্থাপত্য কী করে তৈরি হতে পারে এটা ভাবলেই আশ্চর্য লাগে। নালন্দাতে দেখেছি, একই স্থাপত্যের উপর বার বার নতুন শাসক নতুনভাবে গঠন করেছেন। কিংবা ট্রয় শহরে, একই শহরের উপর বার বার নতুন শহর তৈরি হয়েছে। এখানেও সেইরকম, মোট ছ’বার নাকি এটা বিভিন্ন শাসকের সময় বিভিন্নভাবে তৈরি করা হয়েছে একই পিরামিডের উপর। শেষে ১৫৯৪-তে স্প্যানিশরা এর উপর ক্যাথলিক চার্চটি বানানোর জন্য এটিকে আর পুরো খুঁড়ে ফেলা সম্ভব হয়নি।
কিন্তু অন্য কিছু ভাবার আগে মনটা একটা অন্য কারণে হঠাৎ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ল। চোখের সামনে হঠাৎ ভেসে উঠল সেই সমস্ত শ্রমিকদের কথা, তাদের ঘর-গৃহস্থালি, তাদের হাসি-কান্নার কথা। যা লেখা আছে শুধু এইসব পাথরের, এইসব ছবির প্রতিটি বালির গায়ে গায়ে। কিন্তু আমরা তা পড়তে পারছি না। হয়তো সেই সমস্ত শ্রমিকেরা যুদ্ধবন্দি বা ক্রীতদাস বা এই ধরনের কোনও মানুষ ছিল যারা সব ঘর-সংসার, স্ত্রীর ভালোবাসা, সন্তানের আদর সব ছেড়ে এখানে এসে প্রাণ দিয়েছে। চিরকাল সব দেশে সব শ্রমিকেরই একই ইতিহাস। নাম হয় শাসকের বা স্রষ্টার, কিন্তু সবাই ভুলে যায় এর পিছনের কান্না-ঘাম-রক্তের কথা। মিশরের পিরামিডেরও এই একই ইতিহাস, রোমেরও তাই। সব দেশের সভ্যতার আর উন্নতির মূলে একটাই কথা, দুর্বলের ওপর শোষণ। কুড়ি হাজার মানুষ দিবারাত্র পরিশ্রম করে তাজমহল বানাল আর তার নাম হল সম্রাট শাহজাহানের। এমনকি প্রধান স্থপতির নামও কোথাও নেই। সেই দক্ষ স্থাপত্যবিদ ঈশা খানকে তো হত্যাই করা হল এই তাজমহল বানানোর পুরস্কার হিসাবে। এটাই হয় চিরকাল। আর এখানে তো নরবলির বা নরহত্যার স্বীকৃত রেওয়াজ ছিলই। যুদ্ধবন্দিদের হত্যা করা হত পূজার অঙ্গ হিসাবে, এটা তো ইতিহাস প্রমাণিত। আশেপাশে অনেক কবর ও তাতে শয়ে শয়ে হত্যা করা হতভাগ্যদের কবর পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, এই পিরামিডের একদিকে মাটিতে পোঁতা একটি বড়ো বাটনা বাটার শিলের মতো পাথর রয়েছে, যার নীচে একটি ফুটো আছে। সেটি নাকি ব্যবহৃত হত বলি দেওয়ার যূপকাষ্ঠ, থুড়ি যূপ-শিলা হিসাবে।
যাই হোক, মনকে বোঝালাম সভ্যতা সমস্ত দেশে এইভাবেই এগিয়েছে। কখনও রাজনৈতিক বা কখনও ধর্মীয় বলিদানের মাধ্যমে। যেমনটি আছে কম্বোডিয়া, প্রাগ, চিন ইত্যাদি সমস্ত দেশে। হয়তো আমাদের দেশ ভারতবর্ষেও।
এখন অতীতের কথা ভেবে মনকে আচ্ছন্ন না করে দেখে নিই বর্তমানকে। একটা জায়গায় দেখলাম একটা মডেল করা রয়েছে গোটা পিরামিডটার। তবে একটা জিনিস ভালো লাগল, প্রতিটি জিনিসের পাশে ইংরাজি ও স্প্যানিশে লেখা রয়েছে। এইটা যে কেন সব জায়গায় করে না কে জানে। তাহলে আমার মতো অনেক আনাড়ি পর্যটকের খুব সুবিধা হয়। বেশ অনেকখানি জায়গা জুড়ে খুঁড়ে সব প্রদর্শন করা আছে। তবে কোথাও এক ফোঁটা ছায়া নেই। রোদে একেবারে মাথা ফেটে যাচ্ছে। এখন ফেব্রুয়ারি মাস। আমাদের ওখানে বেশ সুন্দর আবহাওয়া। আর এখানে কী গরম!
এক জায়গায় দেখলাম, একটা শেড করা ঢাকা দেওয়া ঘরের মধ্যে দেওয়ালে বেশ কিছু আঁকাও রয়েছে সেই যুগের, যেমনটি দেখেছি টিওটিহুয়াকান পিরামিডে। ধাপে ধাপে যে বিশাল পিরামিডটি উঠে গেছে, তার মাত্র কয়েকটি ধাপ নীচের দিকে খোঁড়া হয়েছে। এর পশ্চিমদিকে এখনও কিছুটা সেই যুগের সিঁড়ি রয়েছে যাতে করে কিছুটা ওঠা যায়। তবে পুরো উপরে ওঠা যায় না। এরই সামনে রয়েছে সেই যূপ-শিলা। এই বৃহৎ পিরামিডের ভূমিতলের যা আয়তন, তা গিজার পিরামিডের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি। এর উত্তর-পশ্চিম কোণে দেখলাম সেই সুন্দর ট্রেনটি দাঁড়িয়ে আছে স্টেশনে। এটি বানাতে গিয়েও এই স্থাপত্যের কিছুটা ক্ষতি তো হয়েছিলই।
এখান থেকে সোজা পশ্চিমে দাঁড়িয়ে রয়েছে আমাদের সবার প্রিয় সেই যমজ আগ্নেয়গিরি পোপোক্যাটেপেটল (Popocatépetl) এবং ইজতাচিহুয়াটল (Iztaccihuatl)ও। এখান থেকে অনেক পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে দুই আগ্নেয়গিরিকে। তার মধ্যে এখন প্রথমটিই উদ্গিরণ করে চলেছে। উত্তর আমেরিকায় ২২৪টি ও মেক্সিকোতে ১২টির মধ্যে ২টি এখানেই। আমার নিজের চোখে দেখা প্রথম জীবন্ত আগ্নেয়গিরি হিসাবে এটি স্মরণীয় হয়ে রইল। এখান থেকে পশ্চিমদিকে মাত্র ৪০ কিমি দূরে হওয়ার জন্য কোনো-কোনো সময় বেশি উদ্গিরণ হলে এখানেও ছাই ও ভস্মাবশেষ এসে পৌঁছে যায়। সম্প্রতি ২০১৯ সালের ২রা অক্টোবর রাতে এর বড়োসড়ো বেশ কয়েকটি উদ্গিরণ হয় এক রাতেই। ১৯৯৪ সালের পর এত বড়ো উদ্গিরণ আর হয়নি। তবে সবসময়েই এর মাথায় অল্প ধোঁয়া দেখাই যায়। পিরামিডের উত্তর-পশ্চিম কোনা দিয়ে সুন্দর চওড়া সিঁড়ি উঠে গেছে উপরে। সেটা দিয়ে উপরে উঠলাম। বেশ খাড়াই উপরে উঠতে হয়। আমরা একটু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে উপরে উঠলাম। একদিকে প্রচণ্ড রোদ আর একদিকে প্রচণ্ড খাড়াই সিঁড়ি। সব মিলিয়ে উঠতে বেশ কষ্টই হচ্ছিল। যাই হোক, উঠে চোখ জুড়িয়ে গেল। উপর থেকে সমগ্র চোলুলাকে দেখা যাচ্ছে। দেখি প্রচুর চার্চ শহরময় ছড়িয়ে আছে। এখানে নাকি তিনশোর চেয়েও বেশি চার্চ আছে। তবে আমি যতগুলি চার্চ দেখেছি সবগুলিই বেশ বড়ো বড়ো, যথেষ্ট কারুকার্যময় এবং দেখে মনে হয়নি কোনোটিরই খুব দৈন্যদশা। যাই হোক, এখানে যে চার্চটি রয়েছে, সেটি বেশ বড়ো, স্প্যানিশদের তৈরি ক্যাথলিক চার্চ। এটি হালকা হলুদের উপর সোনালি রঙের কাজ করা। ফলে রঙের জেল্লা বহুদূর থেকেই দেখা যায়। চার্চের চারপাশ থেকেই বহুদূর পর্যন্ত উন্মুক্ত দৃশ্য দেখা যায়। ভাবতেই আশ্চর্য লাগছে যে যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি, তার নীচেই রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো পিরামিড। এখানে আগে ছিল বৃষ্টির দেবীর (Chiconauhquiauhitl) মন্দির। পরে এখানে পবিত্র দিন ৮ই সেপ্টেম্বর এই দেবীকে পরিবর্তিত করা হয় ভার্জিন মেরিতে (Santa María Tonantzintla)। এটি বারখ স্থাপত্যের ঢংয়ে তৈরি। আগে বলেছি, যেমনভাবে প্রাচীন আদিবাসীদের দেবীকে বদল করে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচলন করার চেষ্টায় গল্প তৈরি করে দেবী মেরিতে বদল করা হয়েছে গুয়াদালুপে চার্চে, এখানেও সেইভাবেই সুদক্ষভাবে দেবীকে বদল করা হয়েছে যাতে আদিবাসীরা সহজে এই খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে এবং কোনও বাধা না দিয়ে। দৈব বা অলৌকিক এরকম গল্প ছড়িয়ে তাদের বিশ্বাস অর্জন করে দেবীর এই পরিবর্তন করা হয়েছিল সেজন্য। ক্যাথেড্রালগুলোতে ওই বাচ্চা মেয়েটির মমি রাখারও উদ্দেশ্য একই।
এখান থেকে নেমে নীচে গিয়ে দেখি সিঁড়ির একটু পাশেই রয়েছে এক সুড়ঙ্গ, যা সোজা পিরামিডের ভিতরে ঢুকে গেছে। সেখানেও আজ কোনও টিকিট লাগল না। ঢোকার মুখেই দাঁড়িয়ে রয়েছে সব গাইডের দল। আমরা আর গাইড নিলাম না। শুনলাম এই সুড়ঙ্গ ভিতরে ভিতরে নাকি প্রায় ৮ কিমি পর্যন্ত আছে, যদিও এখন সবটা দর্শকের জন্য খোলা নয়, মাত্র ২ কিমি মতো দেখা যায়। এটি ১৯৩০ সালে দর্শকের জন্য খোলা হয়। আশ্চর্যের কথা, বার বার এই পিরামিডের উপর পর পর এতবার নির্মাণ হওয়া সত্ত্বেও সুড়ঙ্গ অবিকৃত আছে। এখান থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এই সুড়ঙ্গ কিন্তু রীতিমতো বাঁধানো। চলার পথ, উচ্চতা, মেঝে, দেওয়াল, পাশের সিঁড়ি সমস্তই সুন্দরভাবে বাঁধানো। কোনো-কোনো জায়গায় অবশ্য নীচে লোহার জাল পাতা আছে হাঁটার সুবিধার জন্য। ভিতরে ঢুকে বেশ একটা অদ্ভুত অনুভূতি হল। সুড়ঙ্গের ভিতর দাঁড়িয়েই সুন্দর হাঁটা যায়। একজন হাঁটার মতো চওড়া, কিন্তু মাথার দিকটা ছুঁচোলো চার্চের মতো। যেতে যেতে দেখা যায় ডানদিক-বাঁদিকে বেশ কিছু সিঁড়ি উপরে উঠে গেছে বা পাশের কক্ষে গেছে, যেগুলি দর্শকের প্রবেশের জন্য নয়। আপাতত অল্প কিছুটা খোলা আছে, এর একদিক দিয়ে ঢুকে পিরামিডের অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া যায়। একটু আধো আলো আধো আঁধারি পথে বেশ একটা গা ছমছম করা পরিবেশ। বৈদ্যুতিক আলো আছে মাঝে মাঝে। তবে ভিতরে ঢুকে যখন ভাবছিলাম আমার মাথার উপরে রয়েছে কত বড়ো পিরামিড বা এই গুহাতে কত পুরোহিত, কত প্রাচীন মানুষ যাতায়াত করেছেন, ভাবতেই কেমন আশ্চর্য লাগছিল। মনটা হারিয়ে যাচ্ছিল সেই সুদূর অতীতে।
পাশেই রয়েছে মিউজিয়ামটি। কিন্তু এতেই এত পরিশ্রান্ত লাগছিল, আমরা আর সেখানে ঢুকলাম না।
ফিরলাম সোজা শহরে। ফিরে ভাবলাম একটু ঘুরে দেখা যাক শহরটা। এখানেও শহরটা অনেকটা গুয়াদালাহারার মতোই।
আগেই বলেছি এখানে রয়েছে শহরের মাঝে একটি যোকালো, সব মানুষের আড্ডা দেওয়ার জায়গা। এখানের রাস্তাগুলোও একেবারে বাঁধানো—বাড়ি, ফুটপাথ ও রাস্তার মাঝে দু-দিক থেকে এতটুকু মাটির কোনও জায়গা নেই। রাস্তা খুব চওড়া নয়। পাশাপাশি দুটি গাড়ি মোটামুটি পাশ দিতে পারবে, তবে দু-পাশে চওড়া ফুটপাথ হাঁটাচলার জন্য খুব প্রশস্ত এবং একদম পরিচ্ছন্ন। বাড়িগুলি বিভিন্ন উজ্জ্বল রঙে এবং বেশিরভাগই দুই বা তিনতলা। কোনও বাড়ির সঙ্গে কোনও বাড়ির মাঝে কোনও ফাঁক নেই। ফুটপাথে বেশ সুন্দর সাজিয়ে বড়ো বড়ো গাছ লাগানো আছে। রাস্তা বেশিরভাগই পাথর বাঁধানো। অনেক বাড়িতেই পুরোনো দিনের শহরের মতো বড়ো বড়ো ব্যালকনি আছে এবং তাতে সুন্দর সাজানো গাছ লাগানো আছে।
রাস্তায় অনেক হকার রয়েছে। তার মধ্যে দেখলাম আমাদের ঘটি-গরম বা গরম চানাচুরওয়ালার মতো গলায় চওড়া ঝুড়ি ঝুলিয়ে বোলতা ভাজা বিক্রি হচ্ছে কৌটোর মাপে। লোকে এটি চানাচুরের মতো খায়। এছাড়া একটি রাস্তা রয়েছে তার নাম Calle de los Dulces বা Street of Sweets। এখানে পরপর মিষ্টির দোকান। এছাড়াও ফুটপাথেও অনেকে বিক্রি করছে নানারকম মিষ্টি। কলেজ স্ট্রিট বা মীর্জাপুর স্ট্রিটের যেমন পরপর শুধু বই বা কাগজপত্রেরই দোকান, এখানে সেরকম শুধু মিষ্টিরই দোকান। প্রায় আর কিছু নেই ২৫০ মিটার লম্বা এই রাস্তায়। অনেকে স্যাম্পল খেতে দেওয়ার জন্য খরিদ্দারদের ডাকছে। আমরাও কয়েক জায়গায় চেখে দেখলাম। কিন্তু বাঙালির জিভ তো, নিজের মিষ্টি রসগোল্লা ছেড়ে কি আর অন্য কিছুতে মন মজে! ঠিক খুব ভালো লাগল না কিছুই। বড়ো চড়া, চিনির মিষ্টির মতো। বিভিন্ন ধরনের পোব্লানো মিষ্টি রয়েছে, যা এরা বংশপরম্পরায় বিক্রি করে। এছাড়াও রয়েছে মধুর তৈরি মুয়েগানোস বা বোরাচিতোস। অনেকেই বললেন এইসব মিষ্টি শতাব্দী-প্রাচীন, কিন্তু না এর সাজসজ্জা, না দর্শন, না স্বাদ, কোনও কিছুই কলকাতার বাঙালিকে খুব টানতে পারল না। তবে এখানকার দর্শনীয় হিসাবে যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য। এটা কার ব্যর্থতা, মিষ্টির না আমার তা জানি না। এই রাস্তার শুরুতেই রয়েছে একটি সুন্দর বিশাল চার্চ। সেটি দেখে এই বাজারে ঢুকেছিলাম। এর সঙ্গেই শুরু হয়েছে এক সুন্দর বাজার। রাস্তার নাম কায়ো দে অ্যান্টিক বা অ্যান্টিক পথ। এখানে নানা পুরোনো সুন্দর সুন্দর জিনিস বিক্রি হচ্ছে। তার মধ্যে একটা জিনিস দেখলাম। এখানে অনেকে পোড়া মাটির রান্নার জিনিসপত্র বা খাওয়ার বাটি-থালাও খুব ব্যবহার করে। মেক্সিকো শহরে ট্রটস্কির বাড়িতেও দেখেছি এই জিনিসটা। তাছাড়া পুয়েব্লার চিনামাটির জিনিস বেশ বিখ্যাত। এখানে সুন্দর চিনামাটির জিনিসও দেখলাম।
এখানে প্রতিটি রাস্তার মোড় সমান। ঠিক লুডোর মতো সোজা রাস্তা এবং তার চার রাস্তার ক্রসিং। সব একরকম। এত চার্চ আছে দেখে শেষ করা যাবে না। ভিখারি ও হকার এখানে আমাদের দেশের মতোই যথেষ্ট এবং আশ্চর্যের কথা অনেক জিনিস যা বিক্রি হচ্ছে, তা-ও আমাদের দেশের মতোই।
বাজারে নেই কী! লোকে রাস্তায় বা খোলা জায়গায় পসরা সাজিয়েছে নানাভাবে। দেখতেও বড়ো সুন্দর লাগে। কী নেই বাজারে—হাতে তৈরি সুন্দর সুন্দর মালা-দুল থেকে শুরু করে অ্যান্টিক, নানাধরনের ঘড়ি, নানা খাবার, আর বিভিন্ন ধরনের ঘর সাজাবার জিনিস। আমার তো কেনার থেকে দেখতেই মজা লাগছিল যে কতরকমের জিনিস হতে পারে। বেশ বিচিত্র বাজারটা।
আরেকটা চার্চের সামনে এসে পড়লাম। তার সামনে দেখি বেশ খানিকটা চৌকো খোলা জায়গা। সেখনে বেশ কিছু চেয়ার, তাতে ক্লান্ত হয়ে অনেকে বসে আছে। নানারকম মজার খেলা দেখাচ্ছে অনেকে। একটা সুন্দর বাঁধানো ফোয়ারা জল ছুড়ে জায়গাটার সৌন্দর্য অনেক বাড়িয়ে তুলেছে। এখানে এই ধরনের ফোয়ারা অনেক আছে মাঝে-মাঝেই। এটাই এখানের একটা বৈশিষ্ট্য; শুধু পুয়েব্লার নয়, মনে হয় সারা মেক্সিকোর।
এখানে অনেক জায়গাতেই লোক খুব গান করে। সেগুলোর অনেকগুলোই উচ্চ কণ্ঠে ব্যান্ডের মতো বা আমাদের লোকগীতির মতো। বুঝলাম এখানে সবাই খুব সংগীতপ্রিয়। রাস্তায় অনেকে সেজে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করছে। বাজারে বেশিরভাগ সবজিই আমাদের দেশের মতো। তবে আভোকাডো এখানে খুব হয়। ফলে এরা এভোকাডোর তৈরি সস ও গুয়াকামোলে খুব খায়। এই এভোকাডো নাকি সুগারের পক্ষে খুব ভালো।
ফিরলাম পরদিন সকালে আবার এডো বাসে। বাসে ওঠার সময় প্রত্যেকের হাতে জল, কুকিস আর ইয়ার ফোন দিল। সুন্দর বাস। এত ভালো বাস খুব কম দেখেছি। দু-তিনটে টিভি আছে।
ফেরার সময় আবার হাত নেড়ে এলাম সেই আগ্নেয়গিরি যমজকে। দেখে মনে হল যেন মুখ ভার।
এই আশ্চর্য শহরকে ছেড়ে আবার সেই কৃত্রিম প্রাণহীন শহর আমেরিকায় ঢুকতে হবে জেনে মন খারাপই হয়ে গেল।