বনের ডায়েরি-বন বন্দুকের ডায়েরি-জল হুপু-মার্ভিন স্মিথ অনু-দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য-শরৎ২০২২

বন বন্দুকের ডায়েরি আগের পর্বঃ হাতি হাতি, শঙ্খচূড়ের ডেরায়, আলাদিনের গুহা, শিকারী বন্ধু গোন্দ, হুনসুরের আতঙ্ক… পীর বক্স (১), হুনসুরের আতঙ্ক… পীর বক্স (২)বোয়া সাপের খপ্পরে, বে-ডর লছ্‌মণ, মানুষখেকো নেকড়ে , নেকড়ে মানুষ সিয়াল, বাঘমারা ভীম, ডাইনি প্যান্থার, মহিষাসুরের খপ্পরে, অরণ্যের সন্তান জুয়াং

bonerdiarybonbondukhead

আফ্রিকার বিভিন্ন ভ্রমণকাহিনি যাঁরা পড়েছেন তাঁরা মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার আদি বাসিন্দাদের শিকারের পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত। এঁরা শিকারের জায়গা নির্বাচন করেন খুব যত্ন করে। জায়গাটায় প্রচুর জীবজন্তু থাকা তার প্রথম শর্ত। সেই সঙ্গে ভূপ্রকৃতিও শিকারের পদ্ধতির উপযুক্ত হতে হবে। ঠিকঠাক জায়গা খুঁজে নেবার পর সেখানে একটা V আকারের অতিকায় খোঁয়াড় বা হুপু তৈরি করা হয়। তার ঢোকবার মুখটা প্রায় এক মাইল চওড়া। পেছনের সরু অংশটা বেজায় শক্তপোক্ত করে গড়া হয়। সরু অংশের একেবারে মাথায় একটা ছোটো দরজা রাখা হয়। তার ঠিক মুখটায় খোঁড়া হয় একটা পনেরো ফিট গভীর খাড়াই গর্ত।

খোঁয়ার তৈরি শেষ হলে এলাকার গ্রামগঞ্জের সমস্ত ছেলেবুড়ো একত্র হয়ে সে অঞ্চলের বিস্তীর্ণ জঙ্গলে খেদা শুরু করে। পাছে জন্তুজানোয়ার ঘাবড়ে গিয়ে অন্যদিকে পালায় তাই খেদা করা হয় ধীরেসুস্থে, কয়েকদিন ধরে। এইভাবে আস্তে আস্তে V-এর চওড়া মুখের মধ্যে জন্তুজানোয়াররা একত্র হলে খেদার দল থেকে মেয়ে আর বাচ্চারা ফিরে যায়। এইবার দলের পুরুষরা তির-ধনুক, বল্লম হাতে বেজায় শোরগোল তুলে হুপুর গভীরে তার সরু মাথাটার দিকে জন্তুজানোয়ারদের তাড়িয়ে নিয়ে চলে।

সরু মাথায় পৌঁছে সামনের জন্তুরা তার দরজার বাইরে গর্তটা দেখলেও আর পিছু হঠতে পারে না। পেছনের ছুটন্ত জন্তুদের ঠেলায় গিয়ে সটান আছড়ে পড়ে গর্তের ভেতর। ফলে খানিকক্ষণের মধ্যেই বিরাট গর্তটা হাজারো ছোটোবড়ো জন্তুতে ভরে ওঠে। তাতে যেমন হরিণ, শুয়োর থাকে তেমনি গণ্ডার, জিরাফ এমনকি হাতির মতো বড়োসড়ো জীবজন্তুও বাদ পড়ে না।  প্রথম যে শিকাররা গর্তে পড়ে তারা ঘাড়ের ওপর আছড়ে পড়া আর সব জানোয়ারের চাপে চিঁড়েচ্যাপটা হয়ে যায়।

গর্ত একেবারে কানায় কানায় ভর্তি হয়ে যাবার পরও যদি খোঁয়াড়ের মধ্যে আরও জীবজন্তু বাকি থাকে তাহলে তারা গর্তভরা বন্ধুবান্ধবদের ঘাড়ে খুর বা থাবা চাপিয়ে পার হয়ে উলটোদিকের জঙ্গলে উধাও হয়। এবার শুরু হয় উৎসব। মহোল্লাসে গর্তভর্তি শিকার কেটেকুটে তার মাংস ভাগ করে নিয়ে যে যার গ্রামে ফিরে যায় শিকারির দল। একেকজনের হিস্যায় যত মাংস আসে তাতে তাদের কয়েক সপ্তাহ হেসে-খেলে চলে যায়।

জল-হুপু এই ডাঙার হুপুরই অন্য সংস্করণ। শুধু এতে ডাঙার জীবজন্তুর বদলে জলের মাছ ধরা পড়ে এই যা তফাত। কিছুদিন আগে এই জল-হুপু দিয়ে মাছশিকার দেখলাম এক জায়গায়। এবারে সেই গল্প বলব।

বাংলা মুলুকের পশ্চিমদিকটায় ঝোরাদের বাস। এরা গোন্দজাতির একটা শাখা। ঝোরারা পেশায় সোনাখোঁচা আর মেছুড়ে। বর্ষাকালে যখন ছোটোনাগপুরের পাহাড় ধোয়া জলের ঢল নামে নদীনালায়, তখন এরা তার বালি ছেঁকে তার মধ্যে থেকে সোনার কণা খুঁজে ফেরে। আর শুকনোর সময় যখন নদীতে জল খানিক কম থাকে তখন তাদের মাছ ধরবার পালা।

এই মাছ ধরার সময়টা এদের অবস্থা খানিক ভালো হয়। পেট পুরে খাবার জোটে। ধেনো মদ জোটে। সেই নিয়ে আনন্দ-উল্লাসে দিন যায় তখন তাদের।

হুপু দিয়ে মাছ শিকার খুব সহজ ব্যাপার নয়। ও-কাজে পাকা হাত আর মাথা দুইই লাগে। তাই সে-শিকার করা হয় ও-কাজে গ্রামের সবচেয়ে পোড়খাওয়া মানুষটার নজরদারিতে। তাতে নজরদারের লাভও হয় বেশি। শিকার করা মোট মাছের ষোলো ভাগের এক ভাগ সে একা পায়।

এ-শিকারে আমার মাঝি সামুর বেজায় নামডাক। তাই তিন বছর ধরে এ-চত্বরের হুপু শিকারের সে-ই হর্তাকর্তা। এ-বছরও তার নড়চড় হয়নি। জঙ্গলের বাসিন্দাদের হালচাল যেমন একজন পাকা শিকারির নখদর্পণে থাকে, তেমনি জলের বাসিন্দাদের হালচাল সামুরও একেবারে মজ্জাগত। নদীই তার ঘরবাড়ি। আশেপাশের কয়েক মাইলের মধ্যে কোয়েল আর কারো নদীর প্রত্যেকটা বাঁক, প্রত্যেকটা ঝরনার খবর তার কাছে থাকে। তাদের কোন এলাকায় কখন কোন মাছের ঝাঁক মিলবে তাও সে মুখে মুখে বলে যেতে পারে একটুও না ভেবে।

তখন গ্রীষ্মকাল। নদীতে জল কমে এসেছে। তার মাঝে-মাঝেই মস্ত মস্ত বালির চরা আর তার ফাঁকে ফাঁকে অগভীর জলের স্রোত। বেশিরভাগ জায়গাতেই সে-জল পায়ে হেঁটে পার হওয়া যায়। ওরই মধ্যে কারো আর কোয়েল যেখানটা এসে মিলেছে সেখানটাতে জল বেশ গভীর ছিল তখনও। এই জায়গাটাকে সামু তার হুপুর শেষ মাথা হিসেবে নিশানা করল।

জায়গাটা নদীখাতের ভেতর একটা গোল পুকুরের মতো। শ-খানেক ফিট চওড়া আর প্রায় ষোলো ফিট গভীর। তার একধারে ঢালু পাড়। এই ঢালু পাড়ের দিকটা ছেড়ে পুকুরের অন্য তিন ধার প্রথমে জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হল। পদ্ধতিটা সোজা। বাঁশের গায়ে জাল বেঁধে জলের ধারে ছেড়ে দেওয়া। বাঁশ ভেসে থেকে জালকে সিধে করে ঝুলিয়ে রাখবে একেবারে জলের নীচের বালি অবধি। ওর গায়ে দুটো দরজা। যেখান দিয়ে স্রোত এসে পুকুরে ঢুকছে আর যেখান দিয়ে তা পুকুর ছেড়ে বেরোচ্ছে সেই দুটো জায়গায় জালে খানিকটা করে ফাঁক। ফাঁকের বাইরে একটা করে তালের ডোঙা ভাসছে। তার মাঝির হাতে জালের খানিক অংশ ধরা। দরকার হলে যাতে এক নিমেষে ফাঁক দুটোকে বন্ধ করে দিতে পারে সে, তাই এই বন্দোবস্ত।

গোল জলাশয়টাকে তিনদিক ঘিরে ফেলে ঢালু পাড়ের দিকটায় এবার চারপাশের গ্রাম থেকে প্রায় শ-তিনেক লোক এসে জড়ো হল। এদের মধ্যে জনা চল্লিশেক ছিল ঝোরা মেছুড়ে। ওদিকে ততক্ষণে পুকুরের দু-পাশে এসে ঢোকা আর বের হয়ে যাওয়া জলের স্রোতকে উজান আর ভাটি দু-দিকেই জাল দিয়ে ঘেরার কাজ শেষ। প্রায় আধমাইল করে এলাকা জুড়ে এমনভাবে জাল সাজানো হয়েছে যে তার মধ্যে একবার ঢুকলে মাছের সেই পুকুরে এসে পড়া ছাড়া অন্যদিকে যাবার পথ নেই।

জাল পাতার কাজ শেষ হলে এইবার ঝোরারা দুটো দলে ভাগ হয়ে গেল। একদল গেল উজানের দিকে আর অন্যদল ভাটির দিকে। তারপর নদীর বুকে নেমে ছড়িয়ে পড়ে দাঁড় দিয়ে জলের বুকে পিটুনি শুরু হল। জল পেটাতে পেটাতে তারা আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছিল পুকুরটার দিকে।

পুকুরের জল তখন একেবারে শান্ত। শুধু সামু আর আমার তার কাছাকাছি যাবার অনুমতি ছিল সে-সময়। পুকুরের প্রায় দুশো গজ দূরে এসে জল পেটানেওয়ালারা দাঁড়িয়ে পড়ল চুপচাপ। সামু তখন গভীর মনোযোগ দিয়ে পুকুরের জলের দিকে দেখছে। তার চোখ যেন ওই ষোলো ফিট গভীরতা পেরিয়ে পুকুরের একেবারে তলাটা অবধি দেখে নিচ্ছিল সেই সময়টা।

তারপর হঠাৎ তার একটা ইশারায় তালের ডোঙার মাঝিরা এক নিমেষে জাল টেনে বন্ধ করে দিল ফুটোর মুখ দুটো। প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই জনা পঞ্চাশেক লোক পুকুরের জলে ঝাঁপ দিল। তারপর যন্ত্রের মতো মসৃণভাবে ভেসে গিয়ে স্থির হল পুকুর ঘিরে রাখা জালটার চারপাশে।

লোকজনের হল্লায় জায়গাটা তখন হঠাৎ সরগরম হয়ে উঠেছে। তালের ডোঙা, ভেলা, এমনকি কাঠের গুঁড়ি—যে যা পেয়েছে তাইতে চেপে গিয়ে লোকজন জালের চারপাশে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। এইবার তারা সবাই মিলে আস্তে আস্তে গোল হয়ে ভাসতে থাকা জালের ফাঁদকে ঠেলে ঠেলে ঢালু পাড়টার দিকে নিয়ে আসা শুরু করল। জাল ঘিরে সাঁতরাতে থাকা পঞ্চাশ শিকারি তখন বার বার জলে ডুব দিয়ে নেমে জালকে টানটান রাখে। খেয়াল রাখে যাতে জলের নিচের উঁচুনীচু পাথরে ঠেকে জালে ফাঁক হয়ে মাছ পালাতে না পারে। এই জলে ডুব দিয়ে থাকবার কর্মে ঝোরাদের চাইতে পটু জাত আমি আর দেখিনি। আডেন-এর যে জাহাজযাত্রীরা সোমালি ছোকরাদের ডাইভ দেবার খেলা দেখে মোহিত হন, তাঁরা একবার এই ঝোরাদের ডাইভিং দেখে গেলে সোমালিদের ওই ভেলকি আর তাঁদের চোখে লাগবে না সে আমি হলফ করে বলতে পারি।

এদিকে জালের ফাঁদ যত ছোটো হয়ে আসে ততই ভেতরের জলে মাছের খলবলানি বেড়ে ওঠে। মাঝে-মাঝেই জল ছেড়ে লাফ দিয়ে ওঠা দু-একটা রুই মাছ গিয়ে জালের বাইরের কোনও ডোঙায় গিয়ে পড়লে তাই নিয়ে এমন কাড়াকাড়ি পড়ে যে দুলুনির চোটে ডোঙা উলটে তার মালিক জলে হাবুডুবু খায়। আর সেই দেখে চারপাশে হাসাহাসির ধুম পড়ে যায়।

bonerdiarybonbonduk

ওদিকে আমাদের দিকের ঢালু পাড়েও তখন লোকজনের উত্তেজনা তুঙ্গে। তির-ধনুক হাতে ছেলেরা জলের দিকে নিশানা করে দাঁড়িয়ে থাকে। জল থেকে কোনও মাছ উঁকি দিলেই  শনশনিয়ে তির ছোটে তাকে গাঁথবার জন্য। সে তিরের গড়ন আলাদা। তার ফলাটা তিনমুখো আর তার লেজে লম্বা সুতো বাঁধা। মাছের গায়ে ত্রিশুল গাঁথলে তখন সুতো ধরে খেলিয়ে তাকে তুলে আনা হয়। খুব বড়োসড়ো মাছ গাঁথলে তখন তাকে খেলিয়ে তোলাটাও একটা দেখবার মতো দৃশ্য।

জালের ফাঁদ গুটিয়ে পাড়ের কাছাকাছি চলে এলে এইবার কয়েকজন ঝোরা জাল টপকে তার ভেতর ঢুকে এল। তারপর শুরু হল জলে হাত ডুবিয়ে দশ-পনেরো পাউন্ডের এক-একটা মাছ তুলে তুলে পাড়ে ছুড়ে ফেলার পালা। পাড়ে দাঁড়ানো লোকজন হাতের অস্ত্রশস্ত্রের ঘায়ে প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই সে-সব মাছের ছটফটানির অন্ত ঘটিয়ে দিচ্ছিল। সেই সঙ্গে জলে দাঁড়ানো ঝোরারা জালে আটকে যাওয়া বড়ো মাছগুলোকে মুগুরের ঘায়ে কাবু করে ছুড়ে দিচ্ছিল পাড়ে।

খানিক বাদে বড়ো মাছ সব ধরা হয়ে যেতে এইবার গ্রামের মেয়ে আর বাচ্চাদের পালা এল। অমনি পুকুর ভরে উঠল জল ছোড়াছুড়ি আর খিলখিল হাসির শব্দে। মেয়ের দল কেউ ঝুড়ি হাতে, কেউ মাদুরের টুকরো নিয়ে, কেউ-বা গায়ের কাপড়ের আঁচলটুকু সম্বল করে ঝাঁপ দিয়েছে জলে। তারা হাসে, খুশিতে চিৎকার করে এ ওর গায়ে ঢলে পড়ে, কিন্তু চোখটি তাদের জলের দিকে ঠিকই ধরা থাকে।

খানিকক্ষণের মধ্যেই তাদের ঝুড়ি, মাদুর বা আঁচলে বাঁধা হয়ে জলের মধ্যে থেকে চুনোপুঁটিগুলো অবধি পাড়ে উঠে আসবার পর শুরু হল মাছের ভাগবাটোয়ারার পালা। আদিকাল থেকে তার নিয়মকানুন একেবারে বাঁধা। শিকারের অর্ধেক পাবে ঝোরা মেছুড়েরা। গ্রামের বাকি লোকজনের ভাগে জুটবে চার ভাগের এক ভাগ মাছ। এছাড়া শিকারের কর্তা, জাল আর নৌকোর মালিকরা, জমিদার, মানে আনন্দপুরের ঠাকুরসাহেব আর পুরুতরা প্রত্যেকে পাবে মোট মাছের ষোলো ভাগের এক ভাগ করে।

সামুর ভাগে যা মাছ পড়েছিল সেইটে আমি ওজন করে দেখেছিলাম। চুয়াল্লিশটা মাছ মিলে তার ওজন হয়েছিল বিরানব্বই পাউন্ড। সেগুলো সব এক বিঘতের চাইতে বেশি লম্বা। ওর ভেতর তিনটে মাছ ছিল দশ পাউন্ডেরও বেশি করে, আর সব মাছ এক-একটা আধ পাউন্ডের কম। সেই হিসেবে এক বিঘতের চেয়ে বেশি লম্বা মাছ সেদিন উঠেছিল প্রায় দেড় হাজার পাউন্ড। ওর সঙ্গে পনেরো ঝুড়ি চুনো মাছের শ-পাঁচেক পাউন্ড জুড়লে একদিনের জল-হুপু শিকারে সেদিন মাছ উঠেছিল প্রায় দু-হাজার পাউন্ডের মতো। তিন-চারশো লোক মিলে একদিনে মন্দ রোজগার নয়।

যত জাতের মাছ উঠেছিল সেদিন, তাদের মধ্যে কয়েকটার কথা একটু বলি। ছিল ডিমভরা বোয়াল। তাদের কেউ কেউ সাড়ে তিন ফিট অবধি লম্বা, আর ওজনে দশ পাউন্ডের বেশি। রুই উঠেছিল কিছু। দেখতে অনেকটা মহাশোলের মতন। সে ভারি সুস্বাদু মাছ। মিষ্টি জলের হেরিং উঠেছিল বেশ কিছু। আকারে আমাদের ইয়ারমাউথের জনপ্রিয় হেরিংয়ের চাইতে দ্বিগুণ। তবে এখানে এ-মাছের পেটির খানিকটা জায়গা বাদে বাকিটা খাওয়া যায় না। এছাড়া ‘কানা’ নামে একটা কুচ্ছিত চেহারার মাছও উঠেছিল। ফুটি ফুটি দাগভরা চামড়া, খুদে খুদে চোখ। মুখের সামনে অনেকগুলো করে শুঁড়, বড়োসড়ো মাথা আর চোয়াল, শক্তিশালী লেজ—সব মিলিয়ে একেবারে হাঙরের জাতভাই। তাকে কাটলে দেখা গেল মাংসের রঙ গোলাপি। অনেকটা স্যামনের মতন।

মাছের ভাগবাটোয়ারা শেষ হলেও তাদের সেদিনের কাজ তখনও শেষ হয়নি। ততক্ষণে সূর্য ডুবে গেছে। থালার মতন চাঁদ উঠেছে আকাশে। তার আলোয় নদীর ধারের বালিতে তখন ছোটো ছোটো অগ্নিকুণ্ড জ্বলেছে। তার ধোঁয়ায় মাছগুলোকে খানিক শুকিয়ে নিচ্ছিল সবাই। এরপর বাড়ি ফিরে ধিকিধিকি আঁচে আরও তিনদিন ধরে তাদের শুঁটকি তৈরি হবে। তাতে নুন না মিশিয়েও বহুদিন ভালো থেকে যাবে ও-মাছগুলো।

এভাবে মাছমাংসের সংরক্ষণ অবশ্য নতুন কিছু নয়। হাজারো বছর আগে মিশরীয়রাও এ-কায়দার ব্যবহার করত। আবার সভ্যতার মূল ধারা থেকে অনেক দূরে এই বিজন বনের মানুষরাও দেখলাম সেই নুন ছাড়া খাবার সংরক্ষণের কৌশল দিব্যি ব্যবহার করতে জানে। তাদের শুকনো মাছ বহুদিন একইভাবে থেকে যাবে। বুনো লতাপাতার ধোঁয়ার হালকা সুবাস তার গায়ে জড়িয়ে থেকে তাকে সুস্বাদ রাখবে।

সে-সপ্তাহে নদীর আরও দু-জায়গায় জল-হুপুর বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে প্রথমদিনের মতো এত মাছ আর পড়েনি।

বনের ডায়েরি সব লেখা একত্রে

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s