ক্যামেরার পেছনে

cam01ক্যামেরায় কুম্ভলগড়

onetwothree (1) (Medium)বন্ধুরা,মনে আছেতো? গতসংখ্যায় বলেছিলাম যে বেড়াতে যাব? চলো এবার আমরা বেড়িয়ে পড়ি। তোমাদের যে ধরণেরই ক্যামেরা থাক সেটা আগে থাকতেই কিন্তু গুছিয়ে রাখো। ব্যাটারি চার্জ দেবে আর চার্জারটা ব্যাগে গুছিয়ে নিয়ে নেবে। লেন্স চেঞ্জিং ক্যামেরা হলে, ক্যামেরার ব্যাগ কিনে নেওয়াই ভাল। এইসব ব্যাগ লেন্স, ক্যামেরা নিরাপদে রাখার জন্য বিশেষভাবে তৈরি।

যখন কোথাও বেড়াতে যাবে সেই জায়গার ইতিহাস ও ভূগোল জানা থাকলে বেড়ানোটি অনেক আকর্ষণীয় হয়। বেড়ানোর সঙ্গে তোমার হবি হল ফোটো তোলা। তাই নেট খুলে যদি ওই জায়গার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের ফোটোগুলি দেখে নিতে পারো তাহলে খুবই উপকার পাবে।

এবারে কুম্ভলগড়ে বেড়াতে যাবার আগে কুম্ভলগড়ের ফোটো গুগল সার্চ করে দেখে নিয়েছিলাম। ফোটোগুলি দেখে জানলাম যে সূর্যদায় ও সূর্যাস্ত এর সময়ে কুম্ভলগড় কেল্লার কোন দিক থেকে কোথায় আলো এসে পড়ে। সূর্যোদয়ের সময় বেশি সুন্দর নাকি সূর্যাস্তের সময়? কোন কোন দিক থেকে চারদিকের ভিউ পাওয়া যাচ্ছে ইত্যাদি।

onetwothree (2) (Medium)প্রত্যেক জায়গারই কোনো বৈশিষ্ট্য থাকে, কোনো বিশেষ উৎসব, মেলা পালন করা হয়। সেই সময়ে সেখানে বেড়াতে গেলে ফোটো তোলার আরো বিষয় পাওয়া যায়। রথযাত্রার সময়ে যদি পুরী বেড়াতে যাও,তা হলে রথযাত্রার ছবি তুলতে পারবে। বিভিন্ন ঋতুতে একএকটি জায়গার প্রকৃতি বিশেষ বিশেষ দ্রষ্টব্য হয়ে ওঠে। বরফ দেখতে হলে যেমন শীতকালে কাশ্মীর,বর্ষাকালে পুরী বা দীঘা বেড়াতে গেলে অন্যধরণের ফোটো তোলার সম্ভাবনা বেশি পাওয়া যাবে।

onetwothree (3) (Medium)আজ তোমাদের বলব একটু অচেনা জায়গার গল্প। তোমরা অনেকেই নিশ্চয়ই রাজস্থান বেড়াতে গেছ। জয়পুর,উদয়পুর এমনকি জয়শলমিরও হয়তো বেড়িয়ে এসেছ। কিন্তু কুম্ভলগড় কি বেড়াতে গেছ? ইতিহাস বইতে আমরা কুম্ভলগড়ের কথা পড়েছি। শিশোদিয়া রাজপুত রাজা রানাকুম্ভই এই কেল্লা প্রতিষ্টা করেন। পান্নাবাঈ এর গল্প আমরা সবাই পড়েছি। ছেলের প্রাণের বিনিময়ে রাজপুত্র উদয় সিং কে শত্রুর হাত থেকে বাঁচান। একটা ফলের ঝুড়িতে করে রাতের অন্ধকারে পাহাড়ি পথের সব বিপদ তুচ্ছ করে চিতোরগড় থেকে কুম্ভলগড়ে পালিয়ে আসেন।

এই উদয় সিং ই পরে উদয়পুর শহর গড়েন। শত্রুরা অনেকবার এই কেল্লা আক্রমণ করেছে। রানা প্রতাপের জন্মস্থান হিসাবে ও এই কেল্লা বিখ্যাত। ৩৬ কিমি. লম্বা প্রাচীর এই কেল্লাটিকে ঘিরে রেখেছে। পৃথিবীতে এটাই দ্বিতীয় দীর্ঘতম। চীনের প্রাচীরটা কেমন তার একটা আন্দাজ কুম্ভলগড়ের প্রাচীর দেখে বুঝে নেওয়া যায়। ১৫ ফিট চাওড়া প্রাচীরের ওপর স্বচ্ছন্দে হাঁটা য়ায়।

এই প্রাচীর বানানোর সময় কিছুতেই ঠিকঠাক হচ্ছিল না। এক পুরোহিতের পরামর্শে শেষমেষ কোন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি নিজেকে বলিদান করেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে প্রধান প্রবেশদ্বার, হনুমানপোল আর মন্দির তৈরি করা হয়। এখানে ৩৬০ টি হিন্দু আর জৈন মন্দির আছে। সব ভাল করে দেখতে গেলে ৩/৪ দিন লেগে যাবে। কেল্লার ওপর থেকে থর মরুভূমিও দেখা যায়। এটি  UNESCO World Heritage Site হিসাবে গণ্য করা  হয়েছে। শীতকালে এলে এই বিশাল কেল্লায় চড়ার কষ্টটা হবে না। প্রতিটি সিঁড়ির ধাপে ধাপে ইতিহাস জড়িয়ে আছে। আর কেল্লার উপর থেকে চারিদিকের দৃশ্য সব কষ্ট এক মুহূর্তে দূর করে দেবে।

এবার একটু ফটোর কথায় আসি। ক্যামেরা হাতে নিয়ে অন্য সবকিছু পিঠের ব্যাগে নিলে চড়াই ভেঙে উঠতে সুবিধা হবে। যখন সামনের ফটো তুলবে, মাঝে মাঝে পেছনের দৃশ্যও দেখে নিতে ভুলবে না। লেন্স চেঞ্জিং ক্যামেরা হলে অবশ্যই টেলিফটো লেন্স নিতে হবে দূরের দৃশ্য নেওয়ার জন্য। পাহাড়ে উঠলেও একই কথা মনে রাখতে হবে।

onetwothree (4) (Medium)সব জায়গায় ট্রাইপড নিয়ে যাওয়া যাই না। ক্যামেরা যত কম নড়বে ফটো তত ভাল হবে,এই কথাটা সবসময় মনে রাখতে হবে। তাই সামনে রাখার মতন কোন জায়গা পেলেই সেখানে ক্যামেরা রেখে ফটো তুলতে হবে। ফটোর আঙ্গেল কিন্তু কাউকে শেখান যায় না। কেল্লার উপর থেকে যখন ভিউ নিচ্ছ তখন কেল্লার পাঁচিল এর অংশটি থাকবে কি থাকবে না এটা একেবারেই ফটোগ্রাফারের বাপার। তোমার চোখে যদি ভাল লাগে তুমি সেই ভাবে দৃশ্যটি ফ্রেমবন্দি করবে। আর যদি তখন বুঝতে না পার তবে কয়েকটি অ্যাঙ্গেল থেকে ফটো তুলবে। পরে যেটি ভালো লাগবে সেটিকেই চূড়ান্ত করবে।

সাধারাণত উদয়পুর থেকে এক দিনের ট্রিপে সবাই কুম্ভলগড়ে যায়। কুম্ভলগড়ের আশেপাশে খুব ভালো থাকার ব্যবস্থা আছে। জঙ্গল সাফারিতেও যাওয়া যাবে। উদয়পুর থেকে কুম্ভলগড়ে গেলে সেখানকার সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত কোনটাই দেখা সম্ভব নয়। আর ভালো করে ফটো তুলতে হলে সেই জায়গাতে অবশ্যই থাকতে পারলে ভাল হয়। মনে রাখতে হবে একই জায়গার দৃশ্য সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময়ে দুরকম সুন্দর হয়। প্রকৃতির রংকে ধরতে পারলে সাধারণ ফটোটিও  অসাধারণ হয়ে উঠবে।

আচ্ছা পুজোতে খুব আনন্দ কর। ক্যামেরা সাথে রেখো। পরের সংখ্যাতে আমরা কিন্তু এডিট ও ফটোশপ কীভাবে করবে এই বিষয়ে আলোচনা করব।                            

ছবিঃ লেখক