অরিন্দম দেবনাথের আরো লেখা আগের সংখ্যার অণুগল্পগুলো
ডাকিনী
অরিন্দম দেবনাথ
রতিগ্রামের প্রণয় হালদারের বাড়ি খুঁজে পেতে যখন নাজেহাল অবস্থা তখনই নজরে এল ছোট্ট বোর্ডটা, ‘এখানে ডাকিনী বিদ্যা শেখানো হয়।’
গ্রামে-গঞ্জে ডাকিনী বিদ্যার চল আছে জানতাম। শুধু গ্রামে-গঞ্জে কেন? ট্রেনে, বাসে, রাস্তার ধারে অনেক জায়গায় ডাকিনী, বশীকরণ, মারণ উচাটনে সিদ্ধহস্ত অনেক তান্ত্রিকের বড় বড় ছবি দেওয়া বিজ্ঞাপন প্রায়শই চোখে পরে। বিষয়টা যে কি সেটা আমার জানা নেই।
প্রলয় হালদার নামের কাউকে খুঁজে না পেয়ে যখন ফেরার কথা ভাবছি তখন ডাকিনী বিদ্যার বোর্ডটা দেখে মাথায় বুদ্ধিটা খেলে গেল। যাক একটা স্টোরি তো হবে! প্রণয় হালদারকে নিয়ে স্টোরি করতেই রতিগ্রামে আসা। এখান থেকে একটা স্টোরি না নিয়ে গেলে ‘জয়ভারতের’ সম্পাদক রণজ্যোতি আমায় সুস্থ রাখবে না।
বাঁশের বেড়ার মাথায় টালি চাপানো বাড়ি। উঠোন নিকনো হলেও কি রকম একটা থমথমে ভাব। খানিক দূরে একটা ছোট ডোবা। বাড়ির চারপাশে বেড়াগাছের পাঁচিল। তারপরই পাটের খেত। কোন লোকজন চোখে পড়ছে না। বাড়ির বারান্দায় একটা গামছা ঝুলছে। ঘরের দরজাও খোলা। বিনা অনুমতিতে বাড়িতে প্রবেশ উচিৎ হবে কি না ভাবতে ভাবতে বাঁশের দরজা ঠেলে ঢুকে মাঝ উঠোনে দাঁড়িয়ে হাঁক পারলাম “কেউ আছেন?”
কোন সাড়া নেই। কিন্তু বেশ বুঝতে পারছি, কেউ আমাকে দেখছে। আচমকা একটা শেয়াল ডেকে উঠল। গ্রামের লোক না হলেও জানি ভর দুপুরে শেয়াল সচরাচর ডাকে না। আমি ভূত-প্রেত, ডাকিনী, তন্ত্রে বিশ্বাস না করলেও অজানা আশঙ্কায় হৃদপিণ্ডের গতি বেড়ে গেছে বেশ বুঝতে পারছি। হৃদযন্ত্রের ধক ধক আওয়াজ কানে আসছে যেন।
অজানা আশঙ্কায় এক-পা দু-পা করে পিছিয়ে চললাম গেটের দিকে। খোলা গেট দিয়ে বেরনোর আগে আমার ঠিক পেছনে ‘ঘ্রাউম’ করে প্রচণ্ড জোরে এক বাঘ ডেকে উঠল।
প্রাণপণে মাটির রাস্তা দিয়ে ছুটতে গিয়ে মাটিতে সজোরে আছড়ে পড়লাম।কয়েক মুহূর্তের জন্য জ্ঞান হারিয়েছিলাম বোধহয়। যখন হুঁশ হল তখন টের পেলাম একটা লোক আমাকে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন।
“দৌড়ে পালাচ্ছিলেন কেন?”
“বাঘ বাঘ, ওই ডাকিনীর বাড়িতে।”
“তা আপনি কিসের ডাক কিনতে এসেছিলেন? বাঘ, শেয়াল, পাখি…। আমি প্রণয় হালদার। সিনেমার লোকেরা আমার ডাক পয়সা দিয়ে কিনে রেকর্ড করে নিয়ে যায় বলে গ্রামের লোকেরা আমায় ডাকিনী বলে।”