বন্দি রাজপুত্র->রেবন্ত গোস্বামী
ভোর না হতেই দু’একটি কাক যেই উঠেছে ডেকে
রাজপুত্র শয্যা ছেড়ে উঠল ঘুমের থেকে।
রূপকথার এক স্বপ্নপুরীর স্বপ্ন যেতে ভেঙে
বাইরে এসে দেখল কুমার পুবটা গেছে রেঙে।
ডাগর চোখে দেখল চেয়ে সোনার কাঠিটিকে
বদলে যেটা রূপ পেয়েছে মরচে পড়া শিকে।
ভোরের হাওয়ায় পড়ল মনে রাজারানির কথা-
রাজকুমারী বোনটি যে তার হারাল আজ কোথা!
রাজা যেতেন দোয়েল ডাকা খোলা হাওয়ার ভোরে
রাজকার্যে-সোনালি রঙ পাতার মুকুট পরে।
পান্নারঙা ঢেউগুলো সব যখন হবে সোনা,
লক্ষ্মীমায়ের পায়ের নূপুর গেলেই যাবে শোনা।
ছোট্টো কুঁড়ের রাজবাড়িতে ছড়িয়ে দিতেন রানি
সোনায় মোড়া নূপুরগুলি সারা উঠোনখানি।
রাজকুমারী এলোচুলে খাপরা নিয়ে হাতে
এক পা তুলে খেলত নেচে কিরণমালার সাথে।
রাজপুত্র দাওয়ায় বসে বইপত্তর খুলে
গুরুর দেওয়া পাঠগুলো সব পড়ত দুলে দুলে।
রূপকথাময় দিনগুলো সব রইল না আর শেষে-
রাজপুত্র বন্দি যে আজ হট্টমেলার দেশে!
কল্পলোকের শুকসারি নেই, দোয়েল শ্যামাপাখি
তারাও উধাও, হেথায় শুধু কাকের ডাকাডাকি।
কচলে দু’চোখ ছোট্টো হাতে লোহার কাঠি ধরে
রাজপুত্র উনুন থেকে ছাইগুলো বের করে।
প্রাতের ভ্রমণ করার পথে দেখতে পেল লোকে
রাজপুত্র টেবিল মোছে ঘুমজড়ানো চোখে।
গেলাস ধোয়া, জল চড়ানো, হুকুম শোনার খেলা
খদ্দের আর মালিক মিলে খেলায় সারা বে…
এমনি করে বন্দিশালার হাজার কাজের ভিড়ে
স্বপ্নপুরীর স্বপ্নগুলি হারায় ধীরে ধীরে।
তবুও যখন ঘুমপরীটি আসবে আবার রাতে
স্বপ্নখানি উঠবে ফুটে তার দু নয়নপাতে।