আগের সংখ্যার অণুগল্পগুলো
দোকান
অনুষ্টুপ শেঠ
দুলকি চালে হাঁটছিল সোমনাথ। একটু তাড়াতাড়িই হল বটে আজ, এমনিতে বাজারের বাকি দোকান আটটা বাজতেই ঝাঁপ ফেলে দিলেও সোমনাথের ভবতারিণী ভাণ্ডার আরো আধঘন্টাটাক খোলা থাকে। বিক্রিবাটা হয়ও টুকটাক। সে যাক, একদিন একটু আগে বন্ধ হলে কিছু ক্ষতি নেই।
আজ আর দোকানের শাটারটা নিয়ে ওকে টানাটানি করতে হয়নি, ছেলে তিনটেই করে দিয়েছে। বাইরের মালপত্র তোলা, কাঠের কাউন্টারটা ঢোকানো, ওই জগদ্দল শাটার – তিনজনে কী অনায়াসে সব করে ফেলল! সোমনাথ তো রোজ ঘেমে যায়।
অবশ্য কোথায় একা আটান্ন আর কোথায় তেইশ চব্বিশের ছেলেছোকরা!
খুব হালকা লাগছিল সোমনাথের। কেমন আচমকাই সব টেনশন মিটে গেল!
আগের বছর পুজোর আগে ব্যাঙ্কের লোনটা নিয়েছিল। বিক্রি এত খারাপ হচ্ছে ক্রমশ, মেটাতে পারেনি। কিভাবে যেন সে খোঁজ পেয়েছিল নবীন ঘোষাল৷ পেট্রোল পাম্প থেকে রমরমিয়ে ফুলেফেঁপে উঠছে সে, বাজারের এত ভালো লোকেশনে দোকানটা পেলেই স্পেয়ার পার্টস এর, টুকটাক মেরামতির গ্যারেজ খুলে ফেলবে ধাঁ করে।
সেই থেকে নবীন তাগাদা করছিল রোজ, ও দোকান ঘোষালকে বেচেই দিক, ব্যাঙ্কের টাকা মেটানোর মুরোদ ওর নেই। মুরোদের কথায় বড় গায়ে লেগেছিল, তা বলে বাবার করা দোকান একটা মস্তানকে বেচে দিতেও রাজি হতে পারেনি।
আজ চিন্তা মিটল। ছেলে তিনটে ঢুকতেই মনে হয়েছিল কিছু একটা হতে চলেছে। একটা আফসোস রইল, নবীন ঘোষালই শেষ অবধি দোকানটা পেয়ে যাবে হয়তো। তবে দোকানের যা অবস্থা, তা সামাল দিতে ঘোষালব্যাটাকে যে নাস্তানাবুদ হতে হবে তা ভেবেও সোমনাথের হাসি পাচ্ছিল।
ফুরফুরে শরীরে ডাকাতগুলোর পিছনে পা চালাল সোমনাথ।
তবে শরীর বলা ভুল হল। সেটা তো দোকানের কাউন্টারটার পিছনে কেৎরে পড়ে আছে, কপালের ঠিক মধ্যিখানে গুলির ফুটো নিয়ে।
অলঙ্করণঃ অংশুমান দাশ