আগের পর্বগুলো
ভিন্ন রূপে তাজ
আজ চলো তাজমহল বেড়িয়ে আসি।
অনেকেই আমরা তাজমহল বেড়াতে গেছি। প্রচুর ফটো ও তোলা হয়। পৃথিবী বিখ্যাত আলোকচিত্রীদের তাজমহলের ছবি চোখের সামনে ভাসতে থাকে। Steve Mccurry র ১৯৮৩ তোলা তাজমহল এর ব্যাকগ্রাউণ্ডে রেল ইঞ্জিনের ছবিটি কখনোই ভোলা যাবে না।
মনে হতে পারে যে এত অসাধারণ ছবি আছে তাহলে আমরা আর ছবি তুলে কী করব?
সূর্যাস্তের লাল আভার ব্যাকগ্রাউণ্ডে তাজমহল এর ফটো তুলতে হয়ত ফটোগ্রাফারকে অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে।
বর্ষাকালে আকাশ ভরা কালো মেঘের পটভূমিতে তাজমহলের শুভ্রতা অপরূপ রূপ ধরার জন্য না জানি কতদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। শীতকালের কুয়াশার আবরণে ঢাকা তাজমহলের রূপ আবার একদম আলাদা ।
সারা বছর দিনের বিভিন্ন সময় তাজমহলের রূপ বিখ্যাত ফটোগ্রাফারদের ক্যামেরাতে ধরা পড়েছে।
আমাদের পক্ষে তো এইভাবে দিনের পর দিন একেই জায়গাতে থাকা সম্ভব নয়! আমরা আগ্রা বেড়াতে যাব হয়তো দুইদিনের জন্য। এসো এর মধ্যেই তাজমহলকে একটু ভিন্নরূপে দেখার চেষ্টা করি।
অবশ্যই ভোরবেলা আর সন্ধ্যাবেলা তাজমহল দর্শন করতে হবে। ভাগ্য ভালো থাকলে আকাশের রং ও মেঘ পেলে তো এমনিতেই ছবির সৌন্দর্য আরো বাড়বে। যাওয়ার আগে যথারীতি তাজমহলের ইতিহাস একটু পড়ে নিতে হবে।
অনেক সময় মনে হয় আমরা তো সব পড়েছি। কিন্তু পড়া থাকলেও পরেরবার পড়ার সময় আরো কিছু তথ্য নতুন করে জানা যায়।
ছবি তোলা কিন্তু একটা ক্রিয়েশন । তাই ভালো সিনেমা দেখা, গান শোনা, ভালো বই পড়া, সে যে বিষয়েই হোক, একটা যোগসূত্র আছে। মননশীলতা না থাকলে কিছু সৃষ্টি করা যায় না। নিজেকে তৈরি করতে হবে নানাভাবে।
ভালো ক্যামেরা হাতে থাকলে আর স্পট সুন্দর হলে নিশ্চই কিছু ফটো ভালো উঠবে। কিন্তু মনের গভীরতা না বাড়লে অন্যদের সাথে তোমার ছবির পার্থক্য থাকবে না। একটু অন্যধরণের সিনেমা তোমার অজান্তেই মনের মধ্যে কালার টোন ও ভাবনার ছাপ রেখে যাবে।
নানা ধরণের বই পড়লে তোমার চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়াবে যা তোমার সৃষ্টি মানে ছবির মধ্যে তোমার অজান্তেই ধরা দেবে। এটাই অন্যদের তোলা ফটো থেকে তোমার ফটোকে আলাদা করবে।
এত কথা এই জন্য বলছি যে বহু বছর ধরে যে জায়গার ছবি তোলা হচ্ছে সেখানেই তুমি অন্য ধরণের ফটো তুলতে পারবে চিন্তা শক্তিকে ব্যবহার করে। অন্যেরা যেটা ভিসুয়ালাইজ করতে পারবে না তোমার চোখে তা ধরা পড়বে।
তাই ফটো তোলার সাথে সাথে সময় পেলেই পৃথিবী বিখ্যাত সিনেমা, পেইন্টিং দেখবে , বই পড়বে যা নিজস্ব রুচি তৈরিতে সাহায্য করবে।
এখানে যে ফটোগুলি দিলাম সেগুলি সাধারণ কিন্তু ইন্টারেষ্টিং করার চেষ্টা করেছি। কুকুরের সঙ্গে তাজমহলের ছবি হয়তো বেমানান। কিন্তু এই ছবি দেখে প্রশ্ন জাগবে যে সারা পৃথিবী থেকে যেখানে টুরিস্ট আসে এত কড়াকড়ি সিকিউরিটি সেখানে এই প্রাণীদের প্রবেশ কি আটকানো যায় না? অবাধে বংশ বৃদ্ধি বা নোংরাও হতে থাকবে । তার দায়িত্ব কার?
তাজমহলের পেছনে যমুনা নদীতে গোপনে নৌকাবিহার করা যায় ও ফটো তোলা যায় সেটার খোঁজ খবর ও রাখতে হবে। কোন দিকে সূর্য উঠবে ও অস্ত যাবে তা-ও জেনে নিতে হবে। কাজেই অনেক সুযোগ আছে তাজমহলকে ভিন্ন রূপে ক্যামেরাতে ধরার। চলো বেরিয়ে পড়ি।
(দ্রষ্টব্যঃ ছবিগুলি লেখকের তোলা ও এদের কপিরাইট লেখকের। ব্যবহার করতে চাইলে দয়া করে অনুমতি চেয়ে নেবেন। joydhak@gmail.com এ মেইল করলে আমরা যোগাযোগ করিয়ে দেব।)