গল্প কুটুসের স্বপ্ন কৃষ্ণা রায় শীত ২০১৮

                                                                

   কৃষ্ণা রায়

কুটুসের আজ বেজায় আনন্দ।  বাবা গেছে অফিস ট্যুরে।  দুপুরে দিদাকে নিয়ে  মা যাবে পুজোর বাজার করতে । ফিরতে ফিরতে রাত আটটা- নটা তো বাজবেই।  তখন কুটুসের কথা মায়ের মনেই পড়বে না।  এদিকে মীনা মাসি  আবার বিকেল ছ’টার মধ্যে বাড়ি চলে যায়।  কুটুসকে তাহলে একা একা বাড়িতে থাকতে হবে।

আজ  শনিবার। স্কুল  ছুটি হবে আগে। তবে চিন্তা নেই,   দুপুরের পরই স্পেশাল দাদু আজ ওদের বাড়ি আসবে।  স্পেশাল দাদু মানে কুটুসের পিসেমসাই। ওর একমাত্র পিসির বর। পিসেমশাই বেশ গম্ভীর প্রকৃতির। শুধু  কুটুসের কাছে এলেই শিশুর মত হয়ে যায়। এ কথাটা বাবা প্রায়ই মাকে বলে। কোন ছোটবেলা থেকে কুটুস ওঁকে স্পেশাল দাদু বলেই ডাকছে। বাবা মা দিদা কারো কথা শোনেনি।  শুধু পিসিয়া বলেছে,  আহা ডাকছে ডাকুক না, আমার বর তো কারুর কাছে জব্দ হয় না, ও যখন  কুটুসের কাছে একেবারে পোষমানা ছাগল ছানাটি হয়ে আছে, তাতে আমি কিন্তু বেশ খুশি। সারাদিন  যা ছড়ি ঘোরায় সবার ওপর!  

স্পেশাল দাদু বা  পিসেমশাইএর মাথায় বরাবর চুল কম। যে ক’গাছি বেঁচে আছে, তারা সারাক্ষণই শরতের  কাশফুলের মত  মাথা দোলায়। কুটুস কী সে কারণে ওকে দাদু ঠাউরেছিল? কেউ জিগ্যেস করলে অবশ্য এ ব্যাপারে মোটেই মুখ খোলেনা কুটুস। আসলে ওসব অত  কিছু মাথায় রাখে না আজকাল। স্পেশাল দাদু বলেছে কুটুসের মাথাটা খুব দামি। আজে বাজে কথা  দিয়ে মগজটা না বোঝাই করে সে যেন খেলায়  বেশি বেশি করে মন দেয়, ভাল ভাল ছবি আঁকে আর সায়েন্স ফিকশান পড়ে।   

কুটুস ক্রিকেট খেলতে ভালবাসে, আশপাশে যা দেখে হুবহু এঁকে ফেলতে পারে, আর  স্পেশাল দাদুর ল্যাবরেটরিতে গিয়ে জিনিসপত্র ঘাঁটাঘাঁটি  করতে তার দিব্য লাগে।  কুটুসের স্পেশাল দাদু বিশ্ববিদ্যালয়ে  কেমিস্ট্রি পড়ান।  খুব ছোট থেকেই স্পেশাল দাদুর সঙ্গ ওর ভালো লাগে।  কত রকমের গল্প যে জানে! মা, বাবা, দাদু, দিদা ওদের কেউই না পারে এত ভাল গল্প বলতে, না তারা  কুটুসের মন ঠিকঠাক করে বোঝে।

ক্লাশ ফাইভে পড়লেও এরই মধ্যে স্পেশাল দাদুর গল্প শুনে শুনে  কেমিস্ট্রির একটু আধটু জ্ঞান তার হয়ে গেছে।  গত সপ্তাহে কুটুসকে উনি অ্যালকেমিস্টদের গল্প শুনিয়েছেন, সেই  যারা সারা জীবন সোনার খোঁজে  বৃথাই দিন কাটিয়ে দিয়েছিল। আজ  নাকি বলবেন  আরো  মজার এক  আবিষ্কারের ঘটনার কথা।  বাবা এবার  ট্যুর থেকে চারদিন পরে ফিরবে। ইস! এর মধ্যে যদি আরো একদিন স্পেশাল দাদু আসতে পারত!

কুটুসের স্কুলের ম্যাথসের আন্টি পৃথা ম্যাম বড্ড রাগী। ক্লাশ ওয়ার্কে একটা মিস্টেক হলেই ডায়েরিতে নোট পাঠাবে  আর তাই দেখে মাম্মাম, বাবা দুজনে মিলে এত্ত বকাবকি করবে! এমনিতে মাম্মাম আর বাবার মতের বিশেষ মিল হয়না, শুধু কুটুস কোন ভুল করলেই ওদের কী  মিল কী মিল! যেন পৃথিবীতে আর কোন দিন কেউ ভুল করে না। অন্য কোন ক্লাসে হয় না, খালি পৃথা আন্টির টাস্কেই যত্ত কেয়ারলেস মিসটেক ঝুপঝুপ করে  খাতায় জমা হয়ে যায়।

আসলে আন্টি সব সময় এমন গোমড়া মুখে থাকে!  কুটুসের গোমড়া-মুখো লোক এক্কেবারে পছন্দ হয় না।  রিয়ান, অর্ক, তিয়াস-ওদের  কারো  কিন্তু ভুল হয় না, ওরা ক্লাশ ওয়ার্কে  দিব্যি গুড, ভেরি গুড পায়। মা এই নিয়ে একদিন স্পেশাল দাদুর কাছে খুব দুঃখ করছিল। স্পেশাল দাদু  এসব শুনেও  একটুও বকেনি ওকে। খালি বলেছে, অঙ্কটা ভালবেসে  মন লাগিয়ে করতে হয়। কেউ রাগ করুক আর  হাসিখুশি থাকুক, তাতে তোমার মন  চঞ্চল হবে কেন? তোমার মনকে তুমিই তো চালনা করবে। এ-কথাটা অবশ্য কুটুসের খুব পছন্দসই। বাড়িতে নিজের মনের মত করে সময় কাটাতে কেউ তাকে   উৎসাহ দেয় না।  

তবে একটা চিন্তা তো থেকেই যায়। বাবা বলেছে  ম্যাথসে ভাল মার্কস  পেতেই হবে,  না হলে  বড় হয়ে কেমিস্ট্রি নিয়ে পড়বে কী করে?  বড় হতে একটু দেরি থাকলেও কুটুস  জানে কেমিস্ট্রি  নিয়ে আগে থেকেই অনেক  কিছু তাকে জেনে ফেলতে হবে। স্পেশাল দাদুর  ল্যাবে কত কী যে আছে!  কাচের শিশি বোতল, কত রকমের   রঙিন সব  জল—ওদের বলে সলিউশান, এক একটার নাকি এক এক রকম কাজ। মুণ্ডুওয়ালা বোতলে নুনের মত এক গাদা  জিনিস থরে থরে সাজানো।  

টেস্ট টিউবে এটা ঢাল, ওটা মেশাও, আগুন দিয়ে গরম কর, কত নতুন  নতুন জিনিস তৈরি হবে। মাঝে মাঝে রবিবার  স্পেশাল দাদু তাকে ল্যাবে নিয়ে যায়। ল্যাবে ঢুকলেই কেমন সব অচেনা গন্ধ পাওয়া যায়। কোনো গন্ধ পচা ডিমের মত, কখনো  বেশ মিষ্টি একটা সুন্দর গন্ধ, একটু বেশিক্ষণ শুঁকলেই মাথা ঝিমঝিম করে। 

হাইড্রোজেন সালফাইড, ক্লোরোফরম,  এক এক করে নামগুলো মনে রাখার চেষ্টা করে।  এক একদিন ছোটখাটো এক্সপেরিমেন্ট দেখায় স্পেশাল দাদু। তবে একা একা কোন কিছুতে হাত দেওয়ার পারমিশন নেই সেখানে। সব কিছু হবে স্পেশাল দাদুর সামনে। এই তো  বাদামি রঙের একটা গ্যাস তৈরি   করে দেখাল  গত সপ্তাহে । কী যেন নামটা গ্যাসটার? ও ই যা! ভুলে গেছে কুটুস। ফোন করে জেনে নিতে হবে আজই।

কুটুসের স্পেশাল  ড্রয়িং ক্লাশের বন্ধু শুভম খুব মজার ছেলে। ভীষণ খেতে ভালবাসে, আর সামান্য মজার কথায় হেসে গড়িয়ে যায়। ওর মাথা চুলকে দিলে হাসে, কাতুকুতু দিলে আকুলি বিকুলি হাসে, মনে হয়  বুঝি  এক্ষুনি দম ফেটে অক্কা পাবে।  ওদের বাড়ির সবাই নাকি খুব হাসকুটে।

স্পেশাল দাদুর সঙ্গে এই নিয়ে একদিন গল্প হচ্ছিল। কুটুস বলে, “আচ্ছা দাদু, সব মানুষ ওদের মত হাসতে পারে না কেন?”

মা  তখন সামনে ছিল। চোখ পাকিয়ে বলল, “দেখছেন তো দাদা, সারাদিন শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন। আপনিও ওকে এত প্রশ্রয় দেবেন না তো,  টানা তিনদিন  ওকে নিয়ে থাকুন, প্রশ্নের ঠেলায় পাগল হয়ে যাবেন।”

স্পেশাল দাদু কুটুসের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, “খুব ভাল প্রশ্ন। তবে এর উত্তর ঠিকঠাক জানতে হলে আরো অনেক কিছু জানতে হবে,  যেমন  আমরা হাসি কেন? শুধু মানুষই কি হাসে? নাকি আরো অন্য অনেক প্রাণী? তারপর এই যে তুমি বললে,  মানুষের মধ্যে  কেউ বেশি হাসে, কেউ এক্কেবারে নয়।”  

কুটুস তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, “ঠিক যেন রামগড়ুড়ের ছানা, আর আমার পৃথা ম্যামের মত। মা আবার বকুনি লাগায়, “ছিঃ কুটুস! কতবার বলেছি না, বড়দের নিয়ে এভাবে বলবে না?”

কুটুস জিভ কেটে বলে, “স্যরি মাম্মাম, আর বলব না।”

স্পেশাল দাদু কুটুসের পিঠ চাপড়ে বলল, “ব্রেভ বয়, এই তো চাই!” তবে আজকের আলোচনায় শুধু কুটুস নয়, তার মাম্মামও থাকবে, কী কুটুস রাজি তো?”

“রাজি, খুব  রাজি,” দারুণ খুশিতে কুটুসের চোখ চকচক করে।

টানা দু’ঘণ্টা কেটে গেল, কুটুস আর তার মাম্মাম টেরই পায়নি। আসলে স্পেশাল দাদু এত যত্ন করে গল্প করছিল।  “জানো কুটুস, বেশির ভাগ মানুষ আনন্দ পেলেই  হাসে, আর সেই সময় তার মগজ থেকে এক রকমের জিনিস মানে কেমিক্যাল  বেরোয়। তাকে বলে এন্ডরফিন।  সেটা আবার ভেঙে গিয়ে বেরিয়ে আসে একটা গ্যাস, যার নাম লাফিং গ্যাস। বুঝলে কুটুস, হাসির পেছনেও আছে কেমিস্ট্রি। এই গ্যাস প্রথম  তৈরি  করেছিল  যে  বিজ্ঞানী প্রায়  আড়াইশ বছর আগে, তিনি এর কাজ জানতেন না। এর সঠিক কাজ কর্মের হদিশ দিলেন অন্য আরেক বিজ্ঞানী ১৭৯৯ সালে। নিজে আর বন্ধু- বান্ধব সবাইকে নিয়ে এই গ্যাস শুঁকে কেমন লাগত তার ইতিবৃত্ত লিখে রেখে গেছেন। কে সেই বিজ্ঞানী বল তো? তার  কথা তোমায় আগেও একবার বলেছি, সেই যে কয়লা খনির ভেতরে যারা কাজ করত, তাদের জন্য এক ধরণের  নিরাপদ আলোর ব্যবস্থা করেছিলেন?”

কুটুস একটু মাথা চুলকে ভাবে, তারপরই লাফ দিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “জানি জানি, ডেভির সেফটি ল্যাম্প। পুরো নামটা হল, ওয়ে্ট, ওয়েট,— ইয়েস, মনে পড়েছে,   স্যার হাম্ফ্রি ডেভি। কারেক্ট ?”

“এক্সলেন্ট! দেখেছো মন্দিরা, তোমার ছেলে শুধু খেলা ধুলো করে না, অনেক কিছু মনেও রাখে। কী জান তো কুটুস, ওই যে বললাম এন্ডরফিনের কথা? খেলাধুলো করলে এই এন্ডরফিন শরীরের ভেতর আরো বেশি করে বেরোয়, আর  তখন ছোট খাটো ব্যথা-বেদনা দিব্যি ভুলিয়ে দেয়। যাকগে, কথা হচ্ছিল হাসি নিয়ে।  এই লাফিং গ্যাস বা নাইট্রাস অক্সাইড কিন্তু খুব সহজে ল্যাবরেটরিতে তৈরিও করা যায়। ডেভি যেমন  বারবার করতেন আর শুঁকে শুঁকে আনন্দ পেতেন , অন্যদের ও আনন্দের ভাগ দিতেন।”

কুটুস সঙ্গে সঙ্গে বায়না জোড়ে, “আমি দেখব। তোমার ল্যাবে কবে  গ্যাস তৈরি করে দেখাবে?”  

“বেশ তো! চলে  এস সামনের সপ্তাহে।  স্পেশাল দাদু গোঁফ নাচিয়ে  মুচকি হাসে।”

“এখনো আরো ছ’দিন পর?”

পুপুর উৎসাহ দেখে স্পেশাল দাদুর সঙ্গে মা ও  হো হো করে হেসে ফেলে।

রবিবারের ফুটফুটে সকাল। ল্যাবের মেঝে তখনো মোছা হয়নি। রবিবারেও স্পেশাল দাদুর ল্যাবে অনেক ছাত্রছাত্রী কাজ করে। তবে  দাদুর  নির্দেশ, কাজের আগে ঘর পরিষ্কার রাখতেই হবে। রাক্ষসের তুলির মত দেখতে  মস্ত মস্ত পাটের দড়ি দিয়ে ঘরখানা মাজা হচ্ছে। স্পেশাল দাদু বলে দিয়েছে মনে যত দুঃখ আছে, সব এখন ভাল করে মনে করতে হবে, তা না হলে  পেট খুলে  হাসির মজা আসবে নাকি? পুপুর হাতে ছোট্ট  নোট বই ধরিয়ে দিয়েছে দাদু। টেস্টটিউবে সাদা গুঁড়োর মত  জিনিসটা নিয়ে আস্তে আস্তে যত্ন করে গরম করতে হবে। এর পোশাকি নাম একটা আছে। নামটা লিখে রাখতে হবে। আর একে  ধীরে ধীরে গরম করলেই   টেস্ট টিউবের ভেতর থেকে রঙহারা,  হাল্কা মিষ্টি গন্ধের হাসি- বায়ু  বেরিয়ে আসবে  বাইরে।

কুটুস এখন তার এগারো বছরের  জীবনের সব না পাওয়া দুঃখ, কষ্ট মগজের ভেতর যত্ন করে ভরতে থাকে। কতটা  দুঃখ  জমলে কতক্ষণ ধরে  হাসা যাবে তার কোন হিসেব কি স্পেশাল দাদু জানে? কে জানে?

শুভম আর পৃথা  ম্যামের চেঁচামেচি এখন  প্রায় আকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছে। ওহো! ওরা চেঁচাচ্ছে কোথায়?  হাসছে তো! শুভমটা না হয় দারুণ হাসিবাজ, একটুতেই মুখ থেকে হাসির ফোয়ারা ছোটায়, মনটাও খুব ভাল। সব সময় নিজেও কিছু না কিছু খায়, বন্ধুদেরও  ভাগ দেয়।  কিন্তু পৃথা ম্যামের মুখে কেউ কোনদিন হাসি দেখেছে নাকি? বাব্বা! ম্যাম  এখন একবার খন খন করে হাসছে, নয়তো খিল খিল করে আনন্দে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে, শুভম ম্যামকে ঝাঁকুনি দিয়ে সোজা করে দিচ্ছে, ম্যাম একটু পরেই আবার আহ্লাদে গা মোড়ামোড়ি করছে। হাসতে হাসতে চোখের কোণায় জলও  চিকচিক করতে দেখা যাচ্ছে। আর এর মধ্যেই স্পেশাল দাদু চিৎকার  করে  বলছে, “কুটুস, সব নোটস নিচ্ছ তো?  না শুভম, তোমার অত শোঁকার দরকার নেই । তুমি কুড়ি  মিনিট অন্তর গ্যাস ভরা  বেলুনে মুখ ঢোকাবে। আর এই যে ম্যাডাম, শুনছেন? আপনি একটু রেস্ট নিয়ে নিয়ে গ্যাসটা ইনহেল করুন। অনেক বেলুন গ্যাস দিয়ে ভরতি করা আছে। জল খাবেন?  বড্ড ঘন ঘন হাসছেন, এত হাসি ভাল নয়।  মাথা ঘুরবে, গা গুলোবে।”

কুটুস অস্থির হয়ে বলছে। “আর কত নোটস নেব? আমিও বেলুনে মুখ ঢুকিয়ে গন্ধ শুঁকব।”

খুব ভোরে  ঘুম ভেঙে গেল কুটুসের।  আজ  থেকে  হাফ ইয়ারলি  পরীক্ষা শুরু।  কাল অনেক রাত অবধি বাবার কাছে অঙ্ক করতে হয়েছে। মাম্মাম, বলেছে এবারে নো সিলি মিস্টেক। জানালা দিয়ে ভোরের নরম হাওয়া  ঘরে  ঢুকে পড়েছে। এবারে  ম্যাথস দিয়ে  পরীক্ষা  শুরু হচ্ছে। পৃথা আন্টির রাগী মুখটা সাত সকালে  মনে পড়তেই  মুখটা বিস্বাদ লাগে। পরীক্ষার দিন আন্টি  মুখখানা আরো বেশি গোমড়া করে রাখে। ইস! ঠামা বলে ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়ে যায়।   যদি কোন রকমে লাফিং  গ্যাস দিয়ে অ্যান্টিকে রোজ  এমন হাসানো যেত! আন্টির মনে  বোধহয়  অনেক দুঃখ জমা আছে। বেচারা! ওর  নিশ্চয়  কোন স্পেশাল দাদু নেই। আচ্ছা! শুভম কী করে আন্টিকে চিনল? ও তো কুটুসের স্কুলে পড়ে না। বেলুনে মুখ রেখেই শুভম মাটিতে কেমন গড়াগড়ি খাচ্ছিল!  স্বপ্নে দেখা দৃশ্যটা  মনে পড়তেই কুটুস হেসে ফেলে।  মা এসে ঝঙ্কার দিয়ে যায়, “খাটে বসে বসে  হাসি প্রাকটিশ না করে  মুখ ধুয়ে পড়তে বোসো। আজ ম্যাথস এক্সাম। মনে আছে তো?”

না, আজ কুটুসকে মন দিয়ে পরীক্ষা দিতেই হবে। তার এখন সামনে অনেক দায়িত্ব। বড় হয়ে  দুঃখী  মানুষকে হাসানোর জন্য  আরো অনেক রকম  আবিষ্কার করা দরকার। পৃথা আন্টি আজ গো্মড়া  মুখে থাকলেও  কুটুস তাকে বাবার কাছে পাওয়া বিদেশি চকোলেট  গিফট করবে। আর তারপর স্পেশাল দাদুর দেওয়া  গ্যাস ভরা নতুন বেলুনটা— কিন্তু সেটা কি সত্যি দাদু ল্যাবে এনেছিল?  না পুরোটাই স্বপ্নের কারসাজি। ঠিক মনে করতে পারল না কুটুস। তবে এটা ঠিক, হাসলে কিন্তু আন্টিকে বেশ দেখাচ্ছিল,  ঠিক এই সকালের  সুন্দর আকাশটার মত।    

ছবিঃ জয়ন্ত বিশ্বাস

জয়ঢাকের সমস্ত গল্প ও উপন্যাস

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s