সনৎকুমার ব্যানার্জ্জীর আগের গল্প ভাঙা নিব
সনৎকুমার ব্যানার্জ্জী
তপোবন। ঝাড়গ্রাম ষ্টেশন থেকে কিলোমিটার দশেক দূরে। পাঁচ নম্বর রাজ্য সড়কের ধারে দিন কয়েক ছুটি কাটাবার আস্তানা। আমাদের মতন যারা শুধু নির্জনে শান্ত পরিবেশে খেয়ে, ঘুমিয়ে, গাছের তলায় মাটিতে বা হ্যামকে শুয়ে বই পড়ে, আলসেমি করে, পাখি, প্রজাপতি, ফড়িং দেখে সময় কাটাতে চায় তাদের পক্ষে আদর্শ জায়গা। আমি তখন প্রকৃতি, ভ্রমণ ইত্যাদি বিষয়ক একটা দ্বিমাসিক পত্রিকার গ্রাহক ছিলাম। প্রায়ই সেগুলোতে ছোট খোপের মধ্যে এই তপোবনের বিজ্ঞাপন দেখতাম। যোগাযোগের জন্য নাম, কলকাতার ঠিকানা আর টেলিফোন নম্বর দেওয়া থাকত। কয়েকদিন ধরেই কাছে পিঠে দিন তিন-চারেকের জন্য কোথায় যাওয়া যায় ভাবছিলাম। ঝাড়গ্রামটা মন্দ হবে না। সদলবলে যাওয়া যাবে। দল বলতে অবশ্য আমার সঙ্গে উনি আর ওঁর সঙ্গে আমি।
টেলিফোনে যোগাযোগ করে একদিন সন্ধ্যাবেলা অফিস ফেরত ভবানীপুরে মালিক ভদ্রলোকের বাড়ি এলাম। তিন তলায় থাকেন। ঘরদোর, আসবাবপত্র, পরিবেশ দেখলে বোঝাই যায় প্রাচীন পড়তি ধনাঢ্য পরিবার। বেল দেবার তিন-চার মিনিট বাদে দরজা খুললেন একজন বয়স্কা ফর্সা ভদ্রমহিলা। সবুজ পাড় সাদা শাড়ি সাধারণভাবে পরা, মাথার চুল অধিকাংশই পাকা, চোখে সরু কালো ফ্রেমের চশমা। বেশ স্নেহময়ী মায়ের মতন চেহারা। দরজা খুলেই আমাকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, “কাকে চাইছ বাবা?”
আমি বললাম, “দিবাকরবাবু আছেন? ওঁর সাথে টেলিফোনে কথা হয়েছে ঐ তপোবন গেস্ট হাউসের ব্যাপারে।”
ভদ্রমহিলা বললেন, “ভেতরে এসে বসো। আমি ডেকে দিচ্ছি”।
আমি একটা সোফায় এসে বসলাম। উনি একটা দরজার পর্দা সরিয়ে ভেতরে চলে গেলেন। খানিকক্ষণ বাদে এসে বললেন, “দিবাকর এই অফিস থেকে ফিরেছে। একটুক্ষণ বসতে হবে বাবা”।
“ঠিক আছে, আমার কোন অসুবিধা নেই, আপনি বসুন না মা!”
ওঁকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমারই অস্বস্তি হচ্ছিল।
উনি বলছিলেন ঝাড়গ্রামের বাড়িটার কথা, “আমার বিয়ে হয়ে আসার বছরদুয়েক আগে শ্বশুরমশাই বাড়িসমেত এই জায়গাটা কেনেন। এটাকে আমরা বলতাম বাগানবাড়ি। প্রায় ছুটিতেই আমরা জায়েরা, কর্তারা সব দল বেঁধে যেতাম। প্রথম প্রথম শ্বশুরমশাই, শাশুড়িমাও গিয়েছেন। ননদ-নন্দাইরাও মাঝে মাঝে যেতেন। সে খুব মজা হত। রান্নার লোক থাকত। আমরাও নানারকম পদ রাঁধতুম। চাঁদের আলোয় বড় বড় মাদুর পেতে গানের আসর বসত”।
আমি বললাম, “এখন যান না?”
“ভাসুরঠাকুর চলে যাবার পর থেকে দিদি যেতেন না। তাই আমারও ভাল লাগত না। তারপর কর্তাও চলে গেলেন। আর যাওয়া হয়নি। এখন তো যাবার কোন লোকই নেই। ছেলেমেয়েরা সব কেউ বাংলার বাইরে, কেউ বিদেশে চাকরি করে। অত বড় সম্পত্তি দেখাশোনার খুব অভাব হচ্ছিল। বিশ্বস্ত লোকও পাওয়া যায় না। খুব চুরি হচ্ছিল। গাছ-টাছ সব কেটে নিয়ে যাচ্ছিল। আর এখনকার দিনে রক্ষণাবেক্ষণের কত খরচ বল বাবা? তাই সবাই মিলে ঠিক করে এটা গেস্ট হাউস করা হল। দিবাকর আর আমার ছোট ঠাকুরপোই সব দেখাশোনা করছে। ওখানে গেলে তোমাদের খুব ভাল লাগবে। কত গাছ-গাছালি, পাখপাখালি রয়েছে”।
ইতিমধ্যে দিবাকরবাবু পর্দা সরিয়ে ঘরে ঢুকে হাত জোড় করে নমস্কার করলেন। আমিও প্রতিনমস্কার করলাম। বৃদ্ধা ভদ্রমহিলা, “ঐ তো দিবাকর এসে গেছে। তোমরা কথা বল। আমি আসি, আমার আহ্নিক শেষ হয় নি।” বলে ভেতরে চলে গেলেন। আমিও উঠে দাঁড়িয়ে ‘হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই’ বলে দিবাকরবাবুর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতে উনি বললেন, “আমার মেজোমা মানে মেজো কাকিমা”।
দিবাকরবাবু্র বেশ দিব্যি মোটাসোটা গোলগাল চেহারা। ফরসা। চোখে লালচে-বাদামি রঙের চশমা। সাদা পায়জামা আর ঘিয়ে রঙের হাফ হাতার কম লেংথের পাঞ্জাবি পরা। এ ধরণের না-পাঞ্জাবি না-ফতুয়া গোছের জামাগুলোকে আমরা পানতুয়া বলতাম। ওঁর সাথে একটা খাতা ছিল। সেটা খুলে আমরা যে কটা দিন থাকব সে-দিনগুলোতে দাগ কেটে দিলেন। আমাদের একটা ঘর লাগবে। তিন রাত্রি থাকব। সে সময়ে অবশ্য এখনও পর্য্যন্ত আমরাই শুধু বুক করেছি। রুম-রেন্ট, ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, সন্ধেবেলার চা আর তার সঙ্গে টা, ডিনার সব মিলিয়েই চার্জ। আমি চেকবই সঙ্গে করেই এনেছিলাম। চেক কেটে দিলাম। বললাম, “ঐ সময়ে আপনি থাকছেন তো?”
উনি বললেন, “না। আমার ছোটকাকা সম্প্রতি রিটায়ার করে এখন ওখানেই থাকেন। উনিই সমস্ত দেখাশোনা করেন। উনি খুব ভাল মানুষ । শান্তশিষ্ট, খুব কম কথা বলেন অথচ খুব দক্ষ আর কর্মঠ। উনি আছেন বলেই গেস্ট হাউসটা চালাতে পারছি। আমি আজই ওঁকে টেলিফোনে সব জানিয়ে রাখব।”
মে মাসের চার কি পাঁচ তারিখ ঠিক মনে নেই হাওড়া থেকে ইস্পাত এক্সপ্রেস করে যখন ঝাড়গ্রাম ষ্টেশনে নামলাম তখন আমার ঘড়িতে নটা বেজে কুড়ি মিনিট। মিনিটদশেকের মতন লেট করেছে ট্রেনটা। ষ্টেশন থেকে বেরিয়ে একটা অটোরিক্সা নিয়ে রওনা হলাম তপোবনের উদ্দেশ্যে।
ষ্টেশনের রাস্তা ছাড়িয়ে পাঁচ নম্বর রাজ্য সড়ক ধরে অটো ছুটে চলল। শহরের কোলাহল ছাড়িয়ে বনের ভেতর প্রবেশ করলাম। বন মানে দু’ধার জুড়ে শুধু শাল গাছ। মাঝে বুক চিরে রাজ্য সড়ক।
প্রায় আধঘন্টা লাগল তপোবনের দোরগোড়ায় পৌঁছোতে। ঢোকার মুখে পাইপ আর রড দিয়ে তৈরি বড় লোহার গেট। একদিকের পাল্লা ইটের থাম সমেত ভেঙে মাটিতে পড়ে আছে। পড়ে শুনেছিলাম দলমা থেকে প্রায়ই হাতি আসে। আগের রাতে ভেঙে দিয়ে গেছে। লাল ল্যাটারাইট মাটির রাস্তা। দু’ধারে শুধু শালের, মহুয়ার আরও কত গাছের জঙ্গল।
অটোটা এসে একটা উঠানের মতন জায়গায় দাঁড়াল। বা দিকে একটা একতলা বাংলো ধরণের বড় বাড়ি। টালির চাল। বোঝাই যায় ইংরেজ আমলের তৈরি। বারান্দা থেকে যে ভদ্রলোক নেমে এগিয়ে এলেন, তিনি নিশ্চয়ই ছোটকাকা। রোগা, বেঁটেখাটো চেহারা। মাথায় কাঁচাপাকা ঠাসা চুল – উল্টে আঁচড়ান। চোখে মেটাল ফ্রেমের চশমা। পায়জামা আর শার্ট পরা।
আমি হাতজোড় করে নমস্কার জানিয়ে বললাম, “ছোটকাকা?”
উনি হেসে মাথা নেড়ে হাত জোড় করলেন। ডানদিকে একটা দোতলা বাড়ি। একতলায় পর পর তিনটে ঘর। উঠোন থেকেই তিন ধাপ করে সিঁড়ি উঠে গেছে। সামনে টিনের চাল। দোতলাতে তিনটে বড় জানালা দেখা যাচ্ছে। মাথায় টিনের চাল। মনে হয় একটা বড় হল ঘর। জিজ্ঞাসা করে জানলাম ওটা খাবার জায়গা। আমাদের থাকার জন্য প্রথম ঘরটা দিলেন। তার পাশ দিয়ে লোহার চওড়া সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় যেতে হয়। পুরো সিঁড়িটা টিনের আচ্ছাদন দেওয়া।
ঘরটা যথেষ্ট বড়। ডবল-বেডেড খাট, কাঠের ওয়ারড্রোব, ড্রেসিং টেবিল সবই আছে। অবশ্য টিভি আর এসি নেই। আর এ-রকম প্রাকৃতিক পরিবেশে এ দুটো উৎপাত না থাকাই ভাল। আমাদের ঘরের ঠিক পেছনেই কয়েকটা বেল গাছ। মাটিতে কত পাকা বেল পড়ে আছে। পাকা বেল দেখে আমরা উচ্ছসিত। মিনিট দু-তিনেক পরেই দেখি ছোটকাকা গোটা চারেক ছোট ছোট গাছপাকা বেল নিয়ে এসে বললেন, “এটা খেতে থাকুন। জলখাবার তৈরি হচ্ছে। সেই কোন সকালে বেরিয়েছেন”।
এরপর যে দুটো দিন ছিলাম, সকালবেলায় চারটে করে ছোট বেল দিতে ছোটকাকার ভুল হয়নি। এমনকি আসার দিন পর্যন্ত।
লুচি, আলুর তরকারি, চা খেয়ে ঘরের পাশে দুটো গাছের গুড়িতে বাঁধা দড়ির হ্যামকে বই নিয়ে শুয়ে পড়লাম। ড্যান ব্রাউনের ‘দা ভিঞ্চি কোড’-টা পড়ব বলে নিয়ে এসেছিলাম। প্রথম পাতা পড়তে না পড়তেই চোখটা বুজে আসছে। কখন যে ঘুমিয়ে গেছি জানি না।
মুখে রোদ এসে পড়াতে ঘুমটা ভেঙে গেল। খুব গরম লাগছে। ঘরে এসে পাখার তলায় না বসলেই নয়। আয়েশ করে আলসেমিতে অনেকদিন এ-রকম কাটাইনি।
দরজাটা খোলাই ছিল। হঠাৎ দেখি একটা দেশি কুকুর লেজ নাড়তে নাড়তে সিঁড়ি দিয়ে উঠে দরজার মুখে দাঁড়িয়ে আমাদের দেখছে। গায়ের রঙ কালো। মুখের সামনেটা, গলা, পেট সাদা। কপালের ঠিক ওপরে অষ্টমীর চাঁদের মতন কিছুটা জায়গা সাদা। চারটে পায়েরই ওপরের অংশ কালো কেবল নীচের অংশ সাদা। মনে হয় যেন সাদা মোজা পরেছে। আমরা ঘাবড়ে গেলাম। এই রে! ভেতরে চলে আসবে নাকি? হ্যাট হ্যাট করে হঠানোর চেষ্টা করলাম। সে কিন্তু ঘরে ঢুকল না। বাইরে থেকে খানিকক্ষণ ভাল করে দেখে আবার নেমে চলে গেল। আমরা আপাতত দরজাটা বন্ধ রাখলাম।
খানিক বাদে ঠক ঠক শব্দ শুনে দরজা খুলে দেখি ছোটকাকা। খেতে ডাকছেন। দরজা বন্ধ করে সিঁড়ি দিয়ে মাত্র নেমেছি, ওমনি কালো কুকুরটা কোত্থেকে ছুটে এসে আমাদের গায়ে, পায়ে একেবারে নাক ঠেকিয়ে শুঁকতে আরম্ভ করল।
আমাদের দুজনেরই খুব অস্বস্তি হচ্ছে। তখন ছোটকাকা ‘কালাচাঁদ যাও’ বলাতে দেখলাম কুকুরটা আস্তে আস্তে চলে গেল। পাশের লোহার সিঁড়ি দিয়ে উঠে খাবার জায়গায় এলাম। সরু চালের ভাত, মুশুরির ডাল, আলুভাজা, আলু-পটলের তরকারি, কাতলা মাছের কালিয়া, কাঁচা আমের চাটনি। রান্নাও ভাল হয়েছে। বেশ পেট ভরেই খাওয়া হল। ঘরে এসে লম্বা ঘুম।
সাড়ে চারটে নাগাদ চা খেয়ে তপোবন জায়গাটা একটু ঘুরে দেখব বলে বেরোলাম। সিঁড়ি দিয়ে নেমেই দেখি শ্রীমান কালাচাঁদ সামনেই কুন্ডলি পাকিয়ে শুয়ে আছে। আমাদের দেখেই ঘাড় তুলে একটু উঠে বসল। এই রে! এ তো আচ্ছা জ্বালা হ’ল। এক্ষুনি আবার গায়ের কাছে ঘেঁষে আসবে।
অনেকেই কুকুর ভালবাসে। আমরা অবশ্য সেই দলে নেই। কুকুরের সাথে শত্রুতা নেই ঠিকই তবে দেখলেই আ আ তু তু করে ঘাড়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করি না। দূরের থেকে ঠিক আছে।
কালাচাঁদ অবশ্য এবার আর কাছে এল না। ঐ একবার দেখে নিয়ে আবার শুয়ে পড়ল। যাক বাবা! ভাল কুকুর। আরও চার পাঁচটা কুকুর আছে। তার মধ্যে কালাচাঁদই বেশি তাগড়া আর একটু পান্ডা গোছের।
প্রায় চৌত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বিঘা জায়গা নিয়ে এই গেস্ট হাউসটা। ঘরের জানালা থেকে, সামনের উঠানে দাঁড়িয়ে যেদিকেই তাকাই, যতদূরেই তাকাই শুধু গাছ আর গাছ। শাল, মহুয়া, সেগুন, গামার, আম, পিয়াশাল, অর্জ্জুন, কাজু, নিম, বট, অশ্বত্থ, কেন্দু, বয়রা, হরতকি আরও যে কত রকমের গাছ তার ঠিক নেই। গাছের পাতা পড়ে পড়ে গাছের তলাগুলো কার্পেট বিছানোর মতন হয়ে গেছে। জঙ্গলের মধ্যে এঁকে বেঁকে পায়ে চলার পথ। আমাদের ঘরের সামনে কিছুটা গেলে জঙ্গলের মুখে নতুন দোতলা বাড়ি হয়েছে। ওপরে নীচে চারটে করে ঘর। প্রায় সারাটা শীতই পুরো গেস্ট হাউস বুকড থাকে। অনেক সময়ে কলেজের বিশেষ করে বোটানির ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষকদের সাথে শিক্ষামূলক ভ্রমণে আসে।
নিবিড় বনানী, পায়ে চলার পথ ধরে ধরে ইতস্তত ঘুরে বেরাচ্ছি। আলো ছায়ায়, গাছের পাতার মর্মরধ্বনিতে, বুনো গন্ধে এক মোহময় পরিবেশ। মাথার ওপর উঁচু গাছের ডালের ফাঁক দিয়ে রক্তিম আকাশ। অস্তগামী সূর্যের আলোয় রাঙা।
ঘুরে ঘুরে আবার আমড়াতলার মোড়ে ফিরে আসার মতন আমাদের ঘরের কাছেই এলাম। কালাচাঁদ বেপাত্তা। যাক বাবা! বাঁচা গেল। এখনও যথেষ্ট আলো আছে। তাই ঠিক করলাম, সকালবেলা যে লম্বা রাস্তাটা ধরে এসেছিলাম, সে-দিকটা একটু হেঁটে আসা যাক।
লাল মাটির নির্জন রাস্তা – দুধারে শুধু গাছের সারি। একটানা ঝিঁঝিঁর ডাক। এখনও একটা পাপিয়া পরিত্রাহিতে ‘চোখ গেল’ ‘চোখ গেল’ করে চেঁচিয়ে যাচ্ছে। দুজনে চুপচাপ হেঁটে চলেছি। আলো কমতে কমতে কেমন ঝুপ করে অন্ধকার নেমে এল।
লোহার গেটটা আর পঁচিশ-তিরিশ ফুট হবে। গেট পর্য্যন্ত গিয়ে ফিরে আসব। হঠাৎ ‘ওরে বাবা’ বলে আতঙ্কে চিৎকার করে উনি লাফ মেরে আমার ডানপাশ থেকে একেবারে বাঁ-পাশে এসে খামচে আমার পাঞ্জাবীর হাতাটা ধরে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। আমিও সাথে সাথে হতচকিত হয়ে ‘কী হ’ল কি?’ বলে চিৎকার করে উঠলাম।
না সাপ টাপ কিছু নয়। মূর্তিমান কালাচাঁদই বটে। কোত্থেকে জানি না ছুটতে ছুটতে এসেছে। হ্যা হ্যা করে হাঁপাচ্ছে। এবারে আমাদের সামনে পথ আগলে ঘেউ ঘেউ করে চিৎকার করছে। দৌড়ে সামনে খানিকটা এগিয়ে গেল। আমরাও পেছন পেছন আসছি দেখে কালাচাঁদ ছুটে এল আর সমানে ঘেউ ঘেউ করতে লাগল। আমাদের সামনের পুরো রাস্তাটা জুড়ে ছু্টোছুটি করছে আর চেঁচাচ্ছে। এমন অবস্থা যে আমরা এক পা-ও এগোতে পারছি না।
নাঃ! এ তো ভারি জ্বালা হল। কোন গাছের ডাল পড়ে আছে কি না খুঁজে দেখছিলাম। পেলে ঘা-কতক দেব। আবার ভয় হচ্ছে কামড়ে না দেয়! তা হ’লে তো দফা রফা। হঠাৎ দেখি কালাচাঁদ সামনের একটা বড় আম গাছের দিকে মুখ উঁচু করে অদ্ভূত এক কান্নার মতন কেঁউ উঁ উঁ উঁ শব্দ করে ডাকছে।
আমার গিন্নি আবার খুব সংবেদনশীল। বললেন, “শোন! এক্ষুনি ফিরে চল।”
বলে না দাঁড়িয়ে সোজা পেছন ফিরে দ্রুত হাঁটা শুরু করলেন। উপায়ান্তর না দেখে অগত্যা আমিও। তাই দেখে কালাচাঁদ আমাদের ঠিক পেছন পেছন প্রায় গা ঘেঁষে আসতে আরম্ভ করল। তাড়াতাড়ি হাঁটার ফলে অল্প সময়ে আমরা আমাদের ঘরের সামনে এসে গেলাম। চারিদিক বেশ অন্ধকার। ঘরের বাইরের দেওয়ালে তিনটে কাঁচে ঢাকা বালবের আলোয় উঠান চত্বর আলোকিত। কালাচাঁদ এবার আমাদের সামনে দিয়ে দুলকি চালে ছোটকাকা উল্টোদিকে যে বাড়িটায় থাকেন তার পেছন দিকে চলে গেল।
আমাদের দেখে ছোটকাকা তাঁর ঘরের বারান্দা থেকে বেরিয়ে আমাদের কাছে এসে বললেন, “বেগুনী ভাজা হচ্ছে। সাথে কি মুড়ি চলবে?”
আমরা তো প্রায় লাফিয়ে উঠলাম, “চলবে মানে? এ তো দৌড়বে!”
ওপরে খাবার ঘরে মুড়ি, বেগুনি আর আলুর চপ। সাথে দু কাপ করে চা। আমরা আবার চিনি ছাড়া লিকার চা খাই। রাতে মুরগীর কোর্মা হচ্ছে। আমরা ভাত খাব না। রুটি খাব জানিয়ে দিলাম। না, ডাল, তরকারি কিচ্ছু লাগবে না। শুধু রুটি আর মাংস। রাতে অবশ্য তার সাথে চারটে করে ভাল স্পঞ্জ রসোগোল্লাও জুটল।
পরদিন সকালে চা খেয়ে একটু ঘুরতে বেরোলাম। সকাল বেলায় বনের এক আলাদা সৌন্দর্য। ঝোপেঝাড়ে টুনটুনিদের লম্ফঝম্প, নানা রঙের প্রজাপতি আর ফড়িঙের সমারোহ, গাছের ডালে বুলবুলি, বেনে বৌ, মাটিতে কুবো, ঘন পাতার আড়াল থেকে পাপিয়া আর নীলকন্ঠ বসন্তবৌরির বিরামহীন ডাক। খানিকক্ষণ এদিক ওদিক ঘুরে গিন্নিকে বললাম, “চল কালকের ঐ রাস্তা ধরে আবার যাই।”
“কী দরকার? দেখলে না কালকে, কালাচাঁদ কীরকম করছিল? কুকুরদের কিন্তু সেন্স মানুষের থেকে অনেক বেশি। ও নিশ্চয়ই কিছু টের পেয়েছিল। না হলে ওরকম করবে কেন?”
“সেটা ঠিকই। ওদের ঘ্রাণশক্তি মানুষের থেকে দশ হাজার গুণ বেশি। ওরা অনেক শব্দ শুনতে পায় যা মানুষের শোনার ক্ষমতার বাইরে। ওদের দৃষ্টিশক্তি খুব প্রখর। মানুষ যতটা দূরের জিনিস দেখে ওরা তার চারগুণ বেশি দূরের জিনিস দেখতে পায়। কুকুররা তো মানুষের মতন যুক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ করে সব ঘটনাকে বিচার করে না! ওরা কোন অপ্রাকৃত কিছু দেখলে বা শুনলে বা কোন সম্ভাব্য দুর্ঘটনার আগাম আভাস পেলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ও রকম ডাকাডাকি, লাফাঝাঁপি করতে থাকে। এ ধরণের অনেক লেখা আমি ইন্টারনেটে পড়েছি। আর কালাচাঁদ কী দেখে ও’রকম করছিল কী করে বলব? কোন সাপ বা বাঁদর জাতীয় কিছুও তো দেখতে পারে। আর যদি অন্য সেরকম কিছু দেখেও থাকে, নিশ্চিন্ত থাকো দিনের বেলা ও সব কিছু দেখা যাবে না। গতকাল তো আমরা সকালে এই পথ দিয়েই অটো করে এসেছি।”
মুখটা একটু ব্যাজার করেই উনি আমার সাথে চললেন। আমরা হাঁটতে হাঁটতে সোজা প্রায় গেট অবধি পৌঁছে গেলাম। আমগাছটাও ভাল করে দেখলাম। কোন কিছুই চোখে পড়ল না। বেশ বড় আর ঘন পাতার গাছ। বৈশাখ মাস। অথচ গাছটায় কোন আম চোখে পড়ল না। গেট পেরিয়ে বাইরের রাস্তায় বেশ খানিকটা ঘুরে আবার ঐ পথ ধরে ফিরে আসছি, পথেই কালাচাঁদের সাথে দেখা। সে আমাদের কোন রকম পাত্তা না দিয়ে যেমন হাল্কা দুলকি চালে আসছিল, তেমনই চলে গেল।
সেদিন বিকেলে চায়ের পর আবার হাঁটতে বেরোলাম। এবার অন্য দিকে যাব। ঘরের কাছেই উঠানে কালাচাঁদ শুয়ে আছে। আমাদের বেরোতে দেখেই সোজা উঠে দাঁড়াল। আমরা এবার ওকে পাত্তা না দিয়ে সোজা বনের পথ ধরে চলতে শুরু করলাম। কিছুদূর গিয়ে পেছন ফিরে দেখি কালাচাঁদ আবার কুন্ডলি পাকিয়ে শুয়ে পড়েছে।
এই পথটা গিয়ে যেখানে শেষ হয়েছে সেখানেও একটা লোহার গেট। তার বাইরে পাঁচ নম্বর রাজ্য সড়ক। ছোটকাকা বলছিলেন কাছেই একটা গোলাপের বাগান আছে। কিন্তু যেভাবে সন্ধে হয়ে আসছে তাতে সেদিকে এখন গেলে অন্ধকারে ফিরতে হবে। তার ওপর কাছে হলেও জায়গাটা খুঁজে বার করতে হবে তো। নাঃ থাক তার থেকে ফেরাই যাক।
পরের দিন সকালে একটা অটোরিক্সা করে চিল্কিগড় কনকদুর্গা মন্দির আর আশেপাশের দু-একটা জায়গা দেখে এলাম। ফিরে এসে খেয়ে দেয়ে ঘুম। আমার মাতামহের একটা কথা এবার হৃদয়ঙ্গম করলাম, ‘কামের মধ্যে দুই, খাই আর শুই’।
বিকেলে ঘুম থেকে উঠতে বেশ দেরিই হয়ে গেল। চা খেয়ে বেরোলাম। কালাচাঁদের কোন পাত্তা নেই। তখনও কিছু আলো আছে। বললাম, “চল ওই আমগাছের দিকে আবার যাই।”
উনি একটু গাঁইগুঁই শুরু করলেন। আমি বললাম, “আরে গতকাল সকালেই তো গেলাম। আর এই পথ দিয়েই সবাই যাতায়াত করে। সন্ধেবেলা কি কেউ কখনও ফেরে না? কালাচাঁদ তো নেই, আজ আর আসবে না।”
অন্ধকার হয়ে আসছে বলে একটু তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে পেছন ফিরে দেখছি কালাচাঁদ আসছে কি না। না ওর টিকি থুড়ি লেজের ডগাও দেখা যাচ্ছে না। প্রায় আমগাছের কাছাকাছি এসে গেছি। আর পনেরো-কুড়ি ফুট হবে। হঠাৎ পেছনে ঘোঁত ঘোঁত শব্দে চমকে উঠে দেখি কালাচাঁদ একেবারে আমার গা ঘেঁষে। কখন যে কোথা থেকে নিঃশব্দে ছুটে এসেছে টের পাইনি। আমাদের পথ আগলে সামনে সামনে এঁকে বেঁকে চলেছে আর সমানে ঘেউ ঘেউ করছে। একবার ঘুরে দাঁড়িয়ে আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হল যেন বকছে, ‘কোন আক্কেলে আবার আমরা এসেছি এখানে?’
আমরাও ব্যাপারটা কতদূর গড়ায় দেখতে আরও এগোতে লাগলাম। কালাচাঁদও পাল্লা দিয়ে বাধা দেবার চেষ্টা করছে। প্রায় যখন আমগাছের কাছে এসে পড়েছি কালাচাঁদ এমন আরম্ভ করল যে ভয় পেয়ে গেলাম কামড়ে না দেয়। আর এগোন সমীচীন মনে হল না।
কালাচাঁদ এবার আমগাছের দিকে কীরকম অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে মুখটা উঁচু করে সেই নাকি সুরে কেঁউ কেঁউ করে একটানা ডাকতে লাগল। বাতাসে গাছের সড়সড় শব্দ, একটানা ঝিঁঝিঁর ডাক আর তার মধ্যে কুকুরের কান্নার মতন আওয়াজ! নিস্তব্ধ অন্ধকারের মধ্যে এই পরিবেশটা আমাদের একটুও ভাল লাগছিল না। সুতরাং দ্রুত পায়ে ফিরে চললাম। কালাচাঁদ আমাদের পেছন পেছন একেবারে গায়ের সাথে লেপ্টে ফিরে এল।
আমরা এসে চুপচাপ বাইরে দুটো চেয়ার পেতে বসে রইলাম। কেউ কোন কথা বলছি না। পুরো উঠানটা চাঁদের আলোয় ভরে গেছে। আজ শুক্লা একাদশী। আর ক’দিন বাদেইতো বুদ্ধপূর্ণিমা। ইলেক্ট্রিক বালবগুলো নিভিয়ে দিতে বললাম। গাছের ফাঁক দিয়ে আকাশে চাঁদ দেখা যাচ্ছে। আর মাটিতে কালাচাঁদ আমাদের খুব কাছে এসে শুয়ে পড়ল। ছোটকাকাও আমাদের সাথে যোগদান করলেন। কাছের কোন মিষ্টির দোকান থেকে ভাল গরম শিঙারা আর মোচার চপ ভাজিয়ে এনেছেন। খেতে খেতে গল্প করতে লাগলাম। কথায় কথায় ছোটকাকাকে কালাচাঁদের ব্যাপারটা বলে জিজ্ঞাসা করলাম, “আচ্ছা আপনি তো এতদিন একাই আছেন। কখনও কিছু দেখেননি বা টের পাননি?”
ছোটকাকা খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে একটু ইতস্তত করে বললেন, “আমি তো সন্ধ্যের পর থেকে ঘরেই থাকি। বেরনোর প্রয়োজন হয় না। তারপর খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। আর আমি ঘুমোলে কিচ্ছু টের পাই না।”
বুঝলাম উনি এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাইছেন না। সে রকম কিছু একটা রটে গেলে ওঁদের ব্যাবসার ক্ষতি হতে পারে। তাই আমরাও আর ঘাঁটালাম না। অন্য প্রসঙ্গে চলে গেলাম।
পরদিন সকালে আমরা স্টিল এক্সপ্রেস ধরে ফিরে এলাম। আসার সময়ে কোথাও কালাচাঁদের দেখা পেলাম না। সত্যি বলতে প্রথম প্রথম আমরা কালাচাঁদকে দেখে বিরক্তই হচ্ছিলাম। ওর উপস্থিতিটা আমাদের কাছে একেবারেই কাম্য ছিল না। কিন্তু দু’দিন গেটের ধারে ঐ আমগাছের কাছে ওর অস্বাভাবিক আচরণ কিন্তু আমাদের অন্যরকম ভাবাচ্ছে। ও ঠিক সাধারণ নেড়িকুত্তা নয়। কালাচাঁদ তপোবনের স্থায়ী বাসিন্দা। সেই হিসেবে আমরা ওর অতিথি। অতিথিদের সম্ভাব্য কোন বিপদ থেকে সাবধান করা বা রক্ষা করা ও ওর নৈতিক দায়িত্ব বলে হয়তো মনে করেছে। এ কথা ঠিক যে আমরা নিজেরা কিছু দেখি নি বা বুঝতে পারিনি কিন্তু কালাচাঁদের এই অদ্ভূত আচরণতো আর মিথ্যে নয়। কি বিপদ হ’ত বা না হ’ত জানি না – কিন্তু ও যে আমাদের গার্জিয়ান এঞ্জেলের মতন কাজ করেছে তাতে আমাদের কোন সন্দেহ নেই। তাই কালাচাঁদকে আমরা কখনও ভুলিনি।
প্রায় বছর পাঁচেক বাদে আর একবার ঝাড়গ্রামে যাবার কথা হ’ল। তপোবন গেস্ট হাউসের ঘর বুক করার জন্য দিবাকরবাবুকে ফোন করলাম। উনি জানালেন যে ঝাড়গ্রাম ও আশেপাশের অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ হয়ে যাওয়ার কারণে ওঁদের গেস্ট হাউস প্রায় চার বছর ধরে বন্ধ পড়ে আছে। এখন অবশ্য পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। হয়তো পুজোর পরে গেস্ট হাউস আবার খুলতে পারে।
আমি ওঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, “আচ্ছা আপনাদের ওখানে একটা কুকুর আছে না? কালাচাঁদ। ওর খবর কী?”
“কালাচাঁদ? ও হ্যাঁ হ্যাঁ ঐ নামে একটা কুকুর ছিল বটে। আমিও কয়েকবার গিয়ে দেখেছি। ছোটকাকা ওকে খুব ভালবাসতেন। ও তো বছর চারেক হল মরে গেছে। তা হঠাৎ… ওর কথা?”
“আসলে কোন একটি বিশেষ কারণে ওকে আমাদের খুব মনে আছে। বলতে পারেন ওকে আমরা কখনই ভুলব না।”
“ও আচ্ছা। তা কারণটা জানতে পারি? না ওটা আপনার ব্যক্তিগত?”
“না না অবশ্যই পারেন। ছোটকাকাকেও বলেছিলাম।” এই বলে কালাচাঁদের সেই অদ্ভুত আচরণের কাহিনী বললাম।
দিবাকরবাবু শুনে বললেন, “দেখুন আমি খুব ছোটবেলা থেকে ওই বাড়িতে বহুদিন কাটিয়েছি। কোনরকম প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষ অনুভূতি আমারও হয়েছে। আমরা যেটা দেখিনি বা শুনিনি অর্থাৎ আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে যা অনুভব করি না তাকে অতি সহজেই বিজ্ঞান ও যুক্তির দোহাই দিয়ে সোজা নিশ্চিতভাবে নেই বলে দিই। কখনও বলি না যে ‘আমি জানি না’। এটা আমরা ভেবে দেখি না যে আমাদের এই পাঁচটা ইন্দ্রিয়ের সংবেদনশীলতার স্তরের একটা সীমাবদ্ধতা আছে। তার রেঞ্জের বাইরে কোন কিছুকেই আমরা ধরতে বা জানতে পারব না। তা বলে সে সব ভুয়ো বা নেই বলে হেসে উড়িয়ে দেবার পক্ষপাতি আমি নই। আপনার কথা শুনে আমি এতটুকুও অবাক হচ্ছি না। আশ্চর্যের কথা কি জানেন, আপনি যে আমগাছটার কথা বললেন কালাচাঁদের বডিটা ঠিক ওর তলাতেই পাওয়া গিয়েছিল। ঝড়বাদল কিছুই ছিল না। অথচ আমগাছের একটা বড় ডাল কীভাবে জানি না ভেঙে পড়েছিল আর কালাচাঁদ ওই ডালের তলায় চাপা পড়েছিল।”
ছবিঃ মৌসুমী, ইন্দ্রশেখর
The story, though short,has an easy flow in its narrative, like its calm locale with a bit of punch of supernatural hint. Nice to read.
Expect more stories from the author.
LikeLike
Many many Thanks!
LikeLike
Bah! Besh! Bhalo laglo,Aro golpo chai
LikeLike
Thanks a lot!
LikeLike
অ সম্ভব সুন্দর ভাবে লিখেছেন ভ্রমণ কাহিনী টা । বেশ একটা অতিপ্রাকৃত গন্ধ পাওয়া যায়। দারুণ লাগল গল্পটা।
যেতে ইচ্ছে করছে….
LikeLike
খুব ভালো লাগলো গল্পটা।
আসলে সনৎ গল্প বলতে জানে। কিভাবে পাঠকের কৌতুহল কে জিইয়ে রেখে গল্প টাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় সে ব্যাপারে ও খেলিয়ে খেলিয়ে যেমন মৎস্য শিকারীরা মাছ ধরে তেমনি দক্ষ।
কুকুর টা কেন ওদের আমগাছটা পেরতে গেলেই বাঁধা দিতো সেটা যেন একেবারে স্বতঃসিদ্ধ ভাবে বোঝা যাচ্ছে।তপবনের বাসিন্দাদের ও কোন ক্ষতি হোক ও সেটা সহ্য করতে পারতনা। এটা তো বোঝাই যাচ্ছে। তবুও শেষ পর্যন্ত ওই আমগাছের ডালে চাপা পড়ে কুকুরটার মৃত্যুও খুবই বেদনাদায়ক।
সনতের লেখা পরপর অনেক গুলো চিত্তাকর্ষক গল্প পড়তে পেয়ে আমাদের expectations আরও অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
LikeLike
অসংখ্য ধন্যবাদ। তোমাদের কমেন্টস পেলে লেখা সার্থক মনে হয়।
LikeLike
A very nice realistic story.
LikeLiked by 1 person
ছিমছাম গল্প, ভালো লাগল ।
LikeLiked by 1 person