গল্প কাকামণি সিদ্ধার্থ সিংহ বর্ষা ২০১৭

সিদ্ধার্থ সিংহের আগের গল্প আব্বুলিশ

ছোটোবেলা থেকে কাকামণির কাছে ওই গল্পটা যে কতবার শুনেছি, তবুও এখনও আমরা ভাইবোনেরা এক জায়গায় হলে আর সেখানে যদি কাকামণি থাকেন তা হলে আর কোনও কথা নেই। ফের উঠবে সেই অদ্ভুত গল্প এবং আমরা এই বয়সেও মুগ্ধ হয়ে শুনব তাঁর কলেজ জীবনের প্রথম চাকরি করতে যাওয়ার সেই গা ছমছম করা গল্প।

কাকামণি তখন কলেজে পড়েন। হঠাৎ একদিন দাদুকে এসে বললেন, “কাগজে একটা বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন করেছিলাম। এবং হবে কি হবে না, তাই কাউকে কিছু না জানিয়ে ইন্টারভিউও দিয়ে দিয়েছিলাম। আর অবাক কাণ্ড, অতগুলো ছেলের মধ্যে থেকে একমাত্র আমিই নির্বাচিত হলাম এই চাকরির জন্য। লোভনীয় চাকরি। দারুণ জায়গা। সবরকমের সুযোগ-সুবিধা আছে। অসুবিধে যা, তা হল একটু দূরে। দূরে বলতে সাতসমুদ্র তেরো নদীর পারে নয় ঠিকই, তবুও দূরেই। দেশের গণ্ডির বাইরে হলে তাকে তো দূরেই বলতে হবে, নাকি?”

দাদু তো কোনওরকমে রাজি হলেন। কিন্তু ঠাকুমাকে রাজি করানোই হয়ে উঠল দায়। ছোটোছেলে বলে কথা! শুরু হল গোসা, কান্নাকাটি, খাওয়াদাওয়া বন্ধ। এমনকি ‘থাকবই না’ গোছের কিছু একটা বলে রাগ করে কাদের বাড়িতে গিয়ে কাটিয়ে এলেন একটা গোটা দিন। এ বোঝায়, সে বোঝায়, কিন্তু কে শোনে কার কথা।

কাকামণিও তেমনি। তিনিও অভিমান করে শুরু করলেন অনশন। অনেক কথাকথি, অনেক চাপানউতোর, তারপর কাকামণি যেদিন মাথা ঘুড়ে পড়ে গেলেন তখন কোনও উপায় না দেখে ঠাকুমা মত দিতে বাধ্য হলেন। মত দিলেন মানে, প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুটো করে চিঠি দিতে হবে এবং প্রতি মাসে একবার করে বাড়ি আসতে হবে।

প্রতি মাসে! দুটো কেন, প্রতি সপ্তাহে সাতটা করে চিঠি দেওয়া যেতে পারে, তা বলে ওখান থেকে প্রতি মাসে বাড়ি! ওরা বছরে দু’বার বাড়ি যাতায়াতের খরচ দেবে ঠিকই, কিন্তু নিজের পয়সায় বাড়ি আসা মানে তো ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রি। তিনমাসের মাইনে জড়ো করলেও এক পিঠের ভাড়া হবে কি না সন্দেহ। তবুও তখনকার মতো ঠাকুমাকে শান্ত করার জন্য কাকামণি তো রাজি হলেন এবং খিদিরপুরের ডক থেকে জাহাজে চেপে পাড়ি দিলেন সেই অদ্ভুত দেশে।

কাকামণি জানতেন, পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গা আছে যার সঙ্গে আমাদের এই পৃথিবীর অন্য কোনও জায়গার সঙ্গে কোনও মিল নেই। বাসে বিক্রি হওয়া দু’টাকার একটা চটি বইয়ে নাকি কাকামণি একবার পড়েছিলেন, এমন একটা জায়গা আছে, সেখানকার প্রত্যেকটা মানুষের হাতের এবং পায়ের আঙুল ছ’টা করে। তাদের কাছে ওটাই স্বাভাবিক। কারও হাতে পাঁচটা আঙুল দেখলে তারা ভিরমি খায়। সেই বইতেই আবার আরেকটা জায়গার কথা পড়েছিলেন, সেখানে নাকি একটাও মেয়ে নেই। সবাই পুরুষ। এমন জায়গা হয়! নিশ্চয়ই হয়, না হলে ‘জ্ঞানের আলো’, ‘জানবার কথা’, ‘জেনে রাখা ভালো’ গোছের বইগুলোতে এগুলোর উল্লেখ থাকবে কেন?  কিন্তু সেসব বইতে কাকামণি নাকি ওই দেশের কোনও উল্লেখ পাননি। অথচ ও দেশের মাটিতে পা দিয়েই তাঁর মনে হয়েছিল, এ দেশের কথা সবার আগে লেখা উচিত ছিল ওই গ্রন্থপ্রণেতাদের। কাকামণি না গেলে আমাদেরও জানা হত না, অমন একটা অদ্ভুত দ্বীপ রয়েছে এই পৃথিবীতেই।

দেশটা অদ্ভুত। খুব ছোট্ট একটা দ্বীপ। সাবুর দানার মতো ধবধবে সাদা মাটি। সূর্যের আলোটা কেমন যেন নীলচে নীলচে। মাটিতে পড়ে ঠিকরে পড়ছে চারদিকে। বাড়িগুলো গোল গোল। গাছপালা খুব কম। তাও যা নজরে পড়ছে, তা এক-দেড় মানুষের বেশি লম্বা কোনওটাই নয়। একদম লিকপিকে কাণ্ড, ডালাপালা। পাতাগুলো গাঢ় পিত্তি রঙের। রাস্তায় একটাও কুকুর চোখে পড়ল না। শুধু খরগোশ আর গিনিপিগ। আকাশময় বদ্রিকা আর পরিযায়ী পাখি। লোকগুলো বেশ বেঁটে বেঁটে। কিন্তু হাতগুলো বেশ লম্বা। হাঁটু ছাড়ানো। হলদেটে ফরসা। মুখগুলো লম্বাটে ধরনের। খুব খুঁটিয়ে না দেখলে সবাইকে একইরকম লাগে। এসব তো ঠিকই আছে, সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, এখানকার লোকেরা সকলেই জন্মগত সূত্রে জ্যোতিষী। কেউ মানুষের মাথার একটা চুল নিয়ে নাড়চাড়া করে বলে দিতে পারেন, তার আজকের দিনটা কেমন যাবে। কেউ কারও ব্যবহৃত রুমাল দেখে বলে দিতে পারেন তার ভূত-ভবিষ্যৎ। কেউ কারও ছায়া দেখে নির্ভুলভাবে বলে দিতে পারেন, তার শোয়ার ঘরের খাটটা কোনদিকে রাখলে ফের তার জীবনে শান্তি ফিরে আসবে। কেউ শুধু কন্ঠস্বর শুনেই বলে দিতে পারেন, আগামী দশ বছরের যাবতীয় খুঁটিনাটি। কেউ আবার সদ্যোজাতর হাত-পায়ের গড়ন দেখে বলে দিতে পারেন, বাচ্চাটা ভবিষ্যতে কোন পেশায় যাবে এবং আশ্চর্যের বিষয় হল, এঁদের নাকি এর জন্য কোনও চর্চাই করতে হয় না। এই ভবিষ্যৎদ্রষ্টার গুণ তাঁরা এমনি এমনিই অর্জন করে ফেলেন।

মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির যে কাজের দায়িত্ব নিয়ে কাকামণি গিয়েছিলেন, সেটাও বড়ো অদ্ভুত। কাকামণির কাজ ছিল প্রতি সপ্তাহে ওখানকার অন্তত পনেরো জন অধিবাসীর সঙ্গে কথা বলে তাঁদের হাত বা পায়ের তালুর ছাপ সংগ্রহ করে দিল্লির মূল অফিসে পাঠানো।

থাকা টাকার ব্যবস্থা এখান থেকেই কোম্পানি করে দিয়েছিল। সেইমতো কাকামণি তো ওই দ্বীপে নেমেই শুরু করে দিলেন কাজ। প্রথম যে লোকটির সঙ্গে আলাপ হল, তিনি এগারোটা ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন। সাতটি ভাষা খুব ভালো করে পড়তে পারেন আর চারটি ভাষায় লেখা, পড়া, বলা সবেতেই দারুণ তুখোড়। তো, কাকামণি তাঁর সঙ্গে ছেচল্লিশ মিনিটের মধ্যে বেশ বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেললেন এবং তারপর যখন তাঁর আসল উদ্দেশ্যটা পড়লেন, লোকটা আচমকা কাকামণির কপালের কাছে নাক নিয়ে বেশ জোরে একবার ঘ্রাণ নিলেন এবং কয়েক সেকেন্ড চোখ বুজেই লাফিয়ে উঠলেন। তুমি! তোমার তো সাহস কম না! তুমি এক্ষুনি এ দ্বীপ ছেড়ে চলে যাও।

কাকামণির তো থ। লোকটা বলেন কী! সবে চাকরি নিয়ে এসেছেন। এখনও আটচল্লিশ ঘণ্টাও কাটেনি। অথচ… লোকটা পাগল নাকি!

কিন্তু ততক্ষণে লোকটা এমন হই-হট্টগোল জুড়ে দিয়েছেন যে আশেপাশে লোক জড়ো হয়ে গেছে। কীসব বলাবলি করছে। ওদের কথা বলার ধরনটা যেন কেমন কেমন। কাকামণি ঠিক ধরতে পারছেন না। ধরতে না পারলেও এটা বুঝতে পারছেন যে, তাঁকে নিয়েই কথা হচ্ছে। কাকামণি একবার এর মুখের দিকে তাকান, একবার ওর মুখের দিকে। বোঝার চেষ্টা করেন উত্তেজিত হয়ে ওরা কী বলাবলি করছে।

এমন সময় একটা লোক কাকামণির হাতটা তুলে নিয়ে ঝপ করে জিভ দিয়ে একটু চেটে নিল। তারপর জিভটা কয়েকবার ভেতর-বার করে চোখ পিটপিট করে বলল, “চল, তোকে জড়িবুটির কাছে নিয়ে যাই।”

কাকামণির কিছু বুঝে ওঠার আগেই লোকটা কাকামণিকে টানতে টানতে নিয়ে চলল। লোকটার গায়ে যে এত জোর, তা তার চেহারা দেখে মালুম করা শক্ত। হই হই করে পেছনে পেছনে আসতে লাগল বাকি লোকগুলো।

ওরা কাকামণিকে নিয়ে যেখানে হাজির হল, সেটা একটা মাচার মতো। সেখানে একটা লতানো গাছ। গাছ জুড়ে ঝিরিঝিরি পাতা। মাঝে মাঝে থোকা থোকা ফুল। কোনও থোকা লাল, কোনও থোকা সবুজ, কোনও থোকা বেগুনি। এক একটা থোকা এক একটা রঙের। প্রত্যেকটা রঙই একদম গাঢ়। লতানো গাছটা মাচা জুড়ে ছড়ানো। আর তার চারদিকে খা খা। ওরা কাকামণিকে তার সামনে দাঁড় করাতেই একজন ওই গাছের একটা লতানো ডাল তুলে কাকামণির গায়ে ঠেকাতেই সবক’টা ফুলই গাছ থেকে ঝরে পড়ল এবং লোকগুলো সকলেই প্রায় আঁতকে উঠে বিস্ফারিত চোখে কাকামণিকে দেখতে লাগল। যেন আজব কিছু। পৃথিবীর অন্য কোনও গ্রহ থেকে এসেছেন। আর যাঁর সঙ্গে কাকামণির প্রথম আলাপ হয়েছিল, তিনি বলে উঠলেন, “কীই? বললাম না, এই সেই লোক।”

কাকামণির কেন যেন হঠাৎ মনে হল, ওরা আচমকা মারমুখী হয়ে উঠতে পারে। তাই কোনওদিকে না তাকিয়ে কাকামণি ছুট লাগালেন। ছুট মানে কুকুরছোটা। আর তাঁর পেছনে হেই হেই করে ছুটতে লাগল ওই লোকগুলো। ওই লোকগুলোর দেখাদেখি রাস্তাঘাটের লোকজনও পিছু নিল। কাকামণি যত ছোটেন, ওরাও তত ছোটে এবং ক্রমশ বাড়তে থাকে তাদের দল। ছুটতে ছুটতে কাকামণি যখন আর পারছেন না, যেকোনও সময় মুখ থুবড়ে পড়তে পারেন, তখনই তার চোখে পড়ল, সামনেই একটা বিরাট ফুটবল। বিরাট বলতে বিরাট প্রায় আকাশছোঁয়া। সাত-আট তলার মতো সমান তো হবেই। কাকামণি পেছন না ফিরেও বুঝতে পারলেন ওই লোকগুলো তাঁর পিছু পিছু আসছে। একবার ধরতে পারলে যে কী হবে কে জানে! তাই ছুটতে ছুটতেই ভাবলেন, এর আড়ালে লুকোবেন কি না। সেইমতো ওই ফুটবলটার কাছে গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে একটু দম নেওয়ার জন্য দাঁড়ালেন। ঠিক কোন জায়গাটায় দাঁড়ালে অনায়াসে ফাঁকি দেওয়া যাবে ওদের চোখকে? এদিকে ওদিকে তাকাতেই তাঁর চোখে পড়ল, ক’হাত দূরে একটা সুড়ঙ্গ। ঈশ্বর সত্যিই আছেন। না হলে এই সময়ে এমন একটা জায়গা তাঁর সামনে খুলে যাবে কেন! কাকামণি প্রাণ বাঁচাতে সেখানে ঢুকে পড়লেন।

ঢুকেই দেখেন, সুড়ঙ্গ কোথায়? এ তো অফিস। এখানে ওখানে টেবিল। টেবিল ঘিরে চারটে, ছ’টা, আটটা করে চেয়ার। আর সেইসব চেয়ারে লোকজন। সকলেই প্রায় বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন।

কাকামণি ঢুকতেই ওঁরা কাকামণির দিকে ফিরে তাকালেন। অনেকেই উঠে এসে কাকামণিকে ঘিরে ধরলেন। সকলেই বেশ শান্তশিষ্ট। সৌম্য চাহনি। একজন বললেন, “বোসো।”

কাকামণি অবাক। তাঁর মনে হল, লোকগুলো যেন তাঁর জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। হতে পারে! এখানকার লোক তো ভবিষ্যৎদ্রষ্টা। আগেই সব জেনে যেতে পারেন। তাই বসেই, কাকামণি যেদিক দিয়ে ঢুকছেন, সেদিকে আঙুল তুলে আমতা আমতা করে বলতে শুরু করলেন, “ওরা বলছে, তুমি এক্ষুনি দেশ ছেড়ে চলে যাও।”

সামনে লোকটা খুব ধীরে স্থির ভঙ্গিতে বললেন, “হ্যাঁ, তুমি চলে যাও।”

কাকামণি তখন মরিয়া হয়ে বললেন, “আমি নতুন চাকরিতে জয়েন করেছি। এখনও দু’দিন পুরো হয়নি।”

লোকটা বললেন, “জানি, এবং তুমি যে আসবে আমরা তাও জানতাম। তাই তোমার জন্যই আমরা আজ সকাল থেকে অপেক্ষা করে আছি।”

“তার মানে?”

“মানে তুমি বুঝবে না। তুমি এক্ষুনি ফেরিঘাটে চলে যাও। ওখানে তোমার জন্য জাহাজ অপেক্ষা করছে। তুমি গেলেই ছাড়বে।”

কথাটা একজন বললেন ঠিকই, কিন্তু কাকমণির মনে হল কথাটা একজনের নয়, কথাটা ওঁদের সবার। এবং কথাটা সম্মোহনের মতো। কাকামণি যেন কেমন হয়ে পড়লেন। পায়ে পায়ে ওখান থেকে বেরিয়ে ফেরিঘাটে এসে দাঁড়ালেন। সেখান তখন ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছে দিনেমার জাহাজ। কাছে যেতেই একজন দৌড়ে এলেন, “এই যে আপনার টিকিট। শিগগির উঠে পড়ুন।”

“আমার সবকিছু তো ওইখানে।”

“না। আমরা নিয়ে এসেছি।”

কাকামণির আর কিছু বলার ছিল না। উঠে পড়েছিলেন জাহাজে। যথারীতি বাড়ি ফিরে এসেছিলেন ক’দিনের মধ্যেই। কাকামণিকে দেখে ঠাকুমার সে কী আনন্দ! চিঠি নয়, চিঠির বদলে স্বয়ং ছেলে এসে হাজির হয়েছে বাড়িতে। হই হই পড়ে গেল বাড়িতে। হই হই পড়ে গেল পাড়াতে। কিন্তু কেউ কেউ যে ভ্রূ কোঁচকায়নি, তা নয়। এ কী রে বাবা! গেল চাকরি করতে বিদেশে, আর গিয়েই ফিরে এল! এ কেমন চাকরি!

কী হয়েছে, সবাই জানতে চাইল ঘটনাটা। কাকামণিও বললেন। কিন্তু ক’জন বিশ্বাস করল সে কথা, বলা মুশকিল। তবে দাদু নাকি বলেছিলেন, যেমনি মা তেমনি তাঁর ছেলে। কেউই তার জেদ ছাড়বে না। একবার যখন বলে ফেলেছে যাবে, তখন যাবেই। তাই গিয়েছিল। কিন্তু গিয়েই মায়ের জন্য বোধহয় মনে কেমন করছিল, তাই ফিরে এসেছে। এখন কী বলবে, তাই ওইসব সাতপাঁচ গল্প বানিয়ে বানিয়ে বলছে।

গল্প হোক বা সত্যি হোক, কেন জানি না, আমাদের কিন্তু দারুণ লাগত গল্পটা। আরও দারুণ লাগত, যখন কাকামণি বলতেন। সত্যি কথা বলতে কী, ওইভাবে আর কাউকে কখনও গল্প বলতে শুনিনি।

ছবিঃ অংশুমান

জয়ঢাকের গল্প ঘর

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s