জয়দীপ চক্রবর্তী
স্বস্তিক অ্যাপার্টমেন্টের যে ফ্ল্যাটটায় থাকে সায়ন্তন সেখান থেকে জানলা দিয়ে আকাশ ঠিক মতন দেখা যায় না। চারদিকেই উঁচু উঁচু বাড়ি, শপিং মল। ব্যালকনিতে দাঁড়ালে কমপ্লেক্স পেরিয়ে ওদিকে যেখানে কালো রঙের রাস্তাটা নির্বিবাদে শুয়ে আছে আর তাকে মাড়িয়ে পথ চলছে মানুষ, গাড়ি, সব্বাই, সেদিকে এক চিলতে আকাশ চোখে পড়ে বটে তবে সে আকাশের গায়ে হাজারো রকমের তার আর ফেস্টুন এমন জড়াজড়ি করে থাকে যে তার আসল রঙ আসল রূপটা যে কী তা বোঝা দুষ্কর।
অবশ্য এসব নিয়ে ভাবার সময়ও খুব একটা নেই সায়ন্তনের। সকালে ঘুম থেকে উঠেই হাত মুখ ধুয়ে নিয়ে রিডিং রুমে পড়তে বসে যাওয়া, তারপরে স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি। পুল কার আসে ঠিক সকাল দশটায়। তার আগেই রেডি হয়ে যাওয়া চাই। একটু দেরি হলেই ড্রাইভারকাকু যা রাগারাগি করে! তারপর বিকেলবেলায় স্কুল থেকে ফিরে আবার টিউশন পড়া। সায়ন্তন খুবই ব্যস্ত। মা বলে দিয়েছেন এবারে পরীক্ষায় সে যদি ফার্স্ট ফাইভের মধ্যে আসতে পারে তাহলে দারুণ একটা সারপ্রাইজ গিফটের ব্যবস্থা করে দেবেন বাবাকে বলে।
সায়ন্তন ঠিক করেই রেখেছে যে করে হোক একটা ভালো রেজাল্ট করে ফেলতে হবে এবারে। তারপর বাবাকে বলবে দূরে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যেতে। অনেক দূরে। বেশ ঝাঁ চকচকে জায়গা। অ্যাব্রডও হতে পারে, এই ধরা যাক সিঙ্গাপুর টিঙ্গাপুর… বন্ধুদের গল্প বলে তাক লাগিয়ে দেবে একেবারে ফিরে এসে। এই রুটিনে মাঝে মাঝে যে তার হাঁফ ধরে যায় না তা নয়। অনেকসময়েই বিশ্রি লাগে। অহেতুক ভারী হয়ে থাকে মন। কিচ্ছুটি ভাল্লাগে না যেন এইসময়। মনে হয় স্কুল থেকে বাড়ি না ফিরে অনেক দূরে কোথাও চলে যেতে।
কিন্তু সত্যি সত্যি তো আর তা করা যায় না। কাজেই বেজার মুখে বাড়ি ফিরতে হয় আবার। এ সময় গল্পের বই পড়ে সায়ন্তন। মনে মনে গল্পের সাথে মিশে গিয়ে গল্পে পড়া জায়গাগুলোয় চলে যায়। গল্পের চরিত্র হয়ে গল্পকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে মনে মনে। অবশ্য গল্প পড়ব বললেই তো আর পড়া যায় না। মায়ের কড়া নজর সমস্ত দিকে। স্কুলের পড়ায় ফাঁকি দিয়ে গল্পের বইতে বেশি সময় দেওয়ার উপায়ই নেই কোনো।
সারাদিনের মধ্যে যে সময়টুকু স্কুলে থাকে বেশ লাগে সায়ন্তনের। বন্ধুদের সাথে গল্প হয় ক্লাশের মাঝের সময়টুকুতে। টিফিন আওয়ারে মাঠ দাপিয়ে খেলাধুলো। স্কুল থেকেই মাঝে সাঝে নানা দারুণ দারুণ সব মন ভালো করে দেওয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কখনও ফিল্ম শো, কখনও দারুণ দারুণ ওয়ার্কশপ, আবার কখনও ম্যাজিক। এই দিনগুলো কিছুতেই স্কুলে গরহাজির হতে চায় না সায়ন্তন। যত অসুবিধে থাক, এসব দিনে সে স্কুলে যাবেই।
কিন্তু এবারে তার কিছুতেই আর স্কুলে যাওয়া হল না। এমন সময় জ্বরটা তেড়েফুঁড়ে এসে বাসা বাঁধল তার শরীরে… আগে থেকেই ক্লাশে নোটিশ দেওয়া ছিল। কিছুতেই স্কুল কামাই করতে চাইছিল না সায়ন্তন। কিন্তু মা বললেন, “কিছুতেই না। গায়ে জ্বর নিয়ে স্কুলে যাবার কোনো দরকার নেই। বিশেষত থার্ড পিরিয়ডের পরে যখন ক্লাশ হবে না আর।”
মায়ের মুখের ওপরে কিছু বলা যায় না। আর বললেও বা শুনছে কে? তাছাড়া সায়ন্তন নিজেও বুঝতে পারছিল মাথাটা যেন একেবারে ভারী হয়ে আছে। গায়েও বলশক্তি নেই তেমন। মনখারাপ করে বিছানায় চুপ করে শুয়ে ছিল সে। মন খারাপটা আরো বেড়ে গেল বিকেলে তুষার যখন ফোন করে জানাল যে আজকের ম্যাজিক শো একেবারে সুপারহিট। ম্যাজিশিয়ান জুনিয়র ডি কে সামন্ত সকলকে একেবারে হতবাক করে দিয়েছেন। শুকনো খড়ের ওপরে টাটকা গোলাপ ফুল ফুটিয়েছেন, একটা তাসকে মুহূর্তে দশখানা বানিয়েছেন, ফাঁকা টুপির মধ্যে থেকে একজোড়া পায়রা বের করে উড়িয়ে দিয়েছেন স্কুলের মাঠের ওপরের খোলা আকাশে, আরো কত কী…
টেলিফোনে শুনতে শুনতেই উত্তেজনা আর বিস্ময়ে চোখদুটো রসগোল্লার মতন গোল গোল হয়ে যাচ্ছিল সায়ন্তনের। মায়ের ওপরে অভিমানও হচ্ছিল খুব। ইশ মা যে কেন আজ তাকে স্কুলে যেতে দিল না! জ্বর গায়ে একটু হয়ত কষ্ট হত তার। কিন্তু এই দুর্ধর্ষ ম্যাজিক শোটা দেখা হল না তার। কিছুই যেন আর ভালো লাগছিল না সায়ন্তনের। সন্ধের পর থেকে চুপ করে বিছানায় শুয়ে ছিল সায়ন্তন। পড়তে ভালো লাগছে না। টি ভির দিকে চাইতেও ইচ্ছে হয়নি একবারও। এমনকি গল্পের বইয়ের পাতা উল্টেও দেখল না সে একবারও। মা একবার কাছে এসে মাথায় হাত রাখল। নরম গলায় জিজ্ঞেস করল, “কী রে শরীর খারাপ লাগছে?”
“উঁহু,” মায়ের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে দু’দিকে মাথা নাড়ে সায়ন্তন।
“গায়ে তো জ্বর নেই আর সোনাই,” মা স্বগতোক্তি করলেন নীচু স্বরে। সায়ন্তন কথা বলল না কোনো। চোখ বুজিয়ে শুয়েই রইল চুপটি করে।
বাবা যখন বাড়ি ফিরলেন তখন বেশ রাত হয়েছে। ঘুমিয়েই পড়েছিল তখন সায়ন্তন। মা ডেকে ঘুম ভাঙালেন। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, “ওঠ এবার, খেয়ে নে। নাহলে শরীর আরো খারাপ হয়ে যাবে যে!”
অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিছানার ওপর উঠে বসল সে। বেসিনের সামনে এসে চোখে মুখে জল দিল। তারপর নিঃশব্দে এসে বসে পড়ল খাবার টেবিলে। খেতে খেতে মাঝে মাঝেই ওর বাবা আড়চোখে তাকাচ্ছিলেন সায়ন্তনের দিকে। সায়ন্তন বুঝল, কিন্তু মুখ তুলল না। অন্যদিন এইসময় সে ঝরঝর করে কথা বলতে থাকে বাবার সঙ্গে। সারাদিনের সমস্ত জমে থাকা কথা উজাড় করে দেয় বাবার কাছে। বাবাও কত কিছু বলেন তাকে। বাবার সাথে কথা না বলে মনের মধ্যে কষ্ট হচ্ছিল, তবু আজ কথা বলবে না সায়ন্তন। সমীরণ ছেলেকে আড়চোখে জরিপ করলেন খানিক। একবার স্ত্রী মনিদীপার দিকে তাকালেন। মনিদীপা চোখ টিপে হাসলেন।
খাওয়া দাওয়া শেষ হলে নিজের ঘরে গিয়ে বিছানার ওপরে চুপ করে বসে পড়ল সায়ন্তন। দক্ষিণদিকের জানালা খোলা তবু ভালো করে আকাশ দেখা যাচ্ছে না। আজ আকাশে চাঁদ আছে নাকি নেই তা বোঝার উপায় নেই। কী করবে ভাবছিল সায়ন্তন। এমন সময় সমীরণ ঢুকলেন ঘরে। হাল্কা আওয়াজ করে গলা খাকারি দিলেন। সায়ন্তন বাবার দিকে চাইল। সমীরণ ছেলের পাশে বসে তার মাথায় হাত দিলেন। নরম গলায় বললেন, “তোর আজ মন খারাপ নারে সোনাই?”
সায়ন্তন মাথা নীচু করল। জবাব দিল না। তার কান্না পেয়ে যাচ্ছিল। সমীরণ আবার বললেন, “আমি সব বুঝতে পারি।” “কী বুঝতে পারো?” এবারে বাবার দিকে মুখ তুলে বলে সায়ন্তন।
“তোর মন খারাপ থাকলেই বুঝতে পারি, তুই যখন খুব আনন্দে থাকিস তখনও বুঝতে পারি। তোর মাও বুঝতে পারে।”
“মা পারে না।” অভিমানী গলায় বলে সায়ন্তন।
“তুই ভুল জানিস রে সোনাই।”
“তাহলে তোমরা জানো কেন আমার মন খারাপ?”
“জানি।”
“কেন বলতো?”
“আজ স্কুলে ম্যাজিক শো ছিল। তুই যেতে পারিসনি বলে শো টা মিস হয়েছে। তাই তো?”
“হুঁ।”
“মাও বুঝেছে?”
“বুঝেছে বৈকি।”
“তাহলে মা আমায় যেতে দিল না কেন?”
“তোর যে শরীর ভালো ছিল না। তুই যদি কষ্ট পাস মায়ের কি ভালো লাগে?”
“কিন্তু আমি তো এখনও কষ্ট পাচ্ছি।”
“মা জানে সে কষ্ট তোর থাকবেই না।”
“কী করে জানল?”
“মা যে আমায় জানে। জানে আমি নিজেই তোকে কত ভালো ম্যাজিক দেখিয়ে দিতে পারি।”
“সত্যি পারো?”
“পারি।”
“তাহলে দেখাও।”
“এক্ষুনি?”
“হ্যাঁ, এক্ষুনি।”
“ঠিক আছে দাঁড়া,” বলে উঠে পড়েন সমীরণ। তারপর পাশের ঘর থেকে এক বান্ডিল তাস আর একটা দুটো এক দু’টাকার কয়েন নিয়ে আসেন। সায়ন্তন বাবাকে কখনও আগে এমন ম্যাজিক দেখাতে দেখেনি। সে চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে ছিল। মনিদীপাও এসে দাঁড়িয়েছেন ততক্ষণ এই ঘরে। বাবা তাসের গোছাটা সায়ন্তনের দিকে বাড়িয়ে দিলেন, “নে এর মধ্যে যে কোনো একটা বেছে নিয়ে নিজের কাছে রেখে দে। আমাকে দেখাবি না কিন্তু কোন তাসটা নিলি। আমি ম্যাজিক করে জেনে যাব তুই কোনটা নিয়েছিস।”
সায়ন্তন অবিশ্বাসের চোখে বাবার দিকে চাইল একবার তারপর খুব সন্তর্পণে একটা তাস বের করে নিল। নিজে সেটা দেখে নিয়েই লুকিয়ে রাখল পকেটে। সমীরণ তাসগুলোর উল্টোপিঠের দিকে তাকিয়েই পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে বলে দিলেন সায়ন্তন কোন তাস নিজের কাছে রেখেছে। সায়ন্তন অবাক হয়ে গেল। এবারে সমীরণ একটা এক টাকার কয়েন হাতে নিলেন। সায়ন্তনের দিকে হাতের তালু মেলে ধরলেন, “ক’টা কয়েন?”
“একটা।” সায়ন্তন উত্তর দেয়।
“ঠিক?”
“ঠিক।”
তাহলে হাত মুঠো করি?”
“করো, কিন্তু হাত পিছন দিকে নিয়ে যাওয়া যাবে না।”
“বেশ, নেব না। এই হাত খুললাম এবার। ক’টা কয়েন?”
“তিনটে।” বিস্ময়ে হতবাক হয়ে বলে সায়ন্তন, “উরিব্বাস তুমি তো দুর্দান্ত ম্যাজিক দেখাতে পারো বাবা! মাকে দেখিয়েছ আগে এই ম্যাজিক?”
“দেখিয়েছি,” সমীরণ হাসেন, “কিন্তু কথা হল এই ম্যাজিক তো মামুলি ম্যাজিক। আজ তোর বন্ধুরাও হয়ত স্কুলে এই ম্যাজিকগুলোই দেখেছে। কিন্তু আমি তোকে এমন ম্যাজিক দেখাব সোনাই যে তুই হাঁ হয়ে যাবি একেবারে।”
“সত্যি?”
“সত্যি।”
“তোমারই ম্যাজিক?”
“উঁহু। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যাজিশিয়ানের সবচেয়ে সেরা ম্যাজিক।”
“মা দেখেছে এই ম্যাজিক?”
“কে জানে, তবে আমি দেখাতে নিয়ে যাইনি কখনও।”
“আমায় কবে নিয়ে যাবে তুমি বাবা?”
“তুই একটু সুস্থ হলেই।”
“প্রমিস?”
“একদম।”
২
আজ সমীরণ ছুটি নিয়েছেন। সায়ন্তনের স্কুল ছুটি স্কুলের ফাউন্ডেশন ডে বলে। মনিদীপা বলেছিলেন, “ছুটি নেবার কী আছে? রোববার গেলেই তো হত?”
“হত, কিন্তু ছুটির জন্যে মানুষ যদি অহেতুক ভিড় জমায়…”
“হলই বা ভিড়। বড় ম্যজিশিয়ানের শো, ভিড় তো হবেই,” সায়ন্তন বলে।
“উঁহু। ভিড়ে ম্যাজিকটা ঠিক মতন উপভোগ করতে পারব না রে সোনাই…” উদাস ভঙ্গীতে বলেন সমীরণ। ড্রাইভারকাকুকে সমীরণই রাস্তা বাতলে দিচ্ছিলেন। এখন মূল শহর ছাড়িয়ে গাড়ি ছুটছে এক্কেবারে ফাঁকা চকচকে পিচ রাস্তার ওপর দিয়ে। দু পাশে বাড়ি ঘর সরে গিয়ে ধু ধু করছে ক্ষেত, চাষের জমি, দু একটা পুকুর।
“কোথায় যাচ্ছি আমরা?” মনিদীপা অধৈর্য হয়ে প্রশ্ন করেন, “আমরা যে এমন লং ড্রাইভে যাব বলোনি তো আগে। কিচ্ছু প্রিপারেশন নিয়ে আসিনি।”
“আমরা আসলে একটা সময়কে পেরিয়ে যাচ্ছি,” কেমন ঘোর লাগা গলায় বলেন সমীরণ, “আমি নিজে এখন ক্রমশ চল্লিশ বছর পিছিয়ে যাচ্ছি। এখন প্রশ্ন কোরো না মনি, এগিয়ে আসা নতুন ম্যাজিকটাকে রিয়ালাইজ করার চেষ্টা করো,” বলেই চেঁচিয়ে উঠলেন তিনি, “ডান দিকে ডান দিকে। আরো মাইল পাঁচেক যাব আমরা। একেবারে নদীর গায়ে গিয়ে গাড়ি দাঁড় করাবে কিন্তু।”
গাড়ি থেকে নেমে নৌকা নিলেন সমীরণ। সঙ্গে জেটি ঘাট থেকে কিনে নিলেন প্রচুর খাবারদাবার। বললেন, “ক্ষিদে পেলে নৌকায় বসে খাওয়া যাবে।” সায়ন্তন চোখে একরাশ বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে ছিল। যা কিছু দেখছে সব, সমস্ত কিছুই অসাধারণ লাগছে তার। আকাশের এমন নীল সে আগে কখনও দেখেনি। এমন সবুজের সমারোহ এই প্রথম দেখল আজ। পাতাগুলো কী মসৃণ, ধুলোয় ঢেকে ম্লান হয়ে যায়নি তারা। সামনে জল টলটল আস্ত একটা নদী। মাঝি দাঁড় টানছে সেই সেই নৌকার আর গান গাইছে আপনমনে। সায়ন্তনের এই সব কিছু মিলে মনে হচ্ছিল একটা সুন্দর নিটোল স্বপ্ন। সে মনে মনে প্রার্থনা করছিল যেন স্বপ্নটা তাড়াতাড়ি ভেঙে না যায়। সমীরণ শিশুর মতন মুখ করে জিজ্ঞেস করলেন, “কেমন লাগছে সোনাই?”
“দারুণ।” সায়ন্তন উজ্জ্বল মুখে বলে।
“আমি আর আমার কয়েকজন বন্ধু স্কুলে পড়ার সময় রোজ এই সময় এখানে আসতাম। নৌকায় চড়ে দেখতাম সেই ম্যাজিক যেটা দেখাতে তোকে এত দূরে নিয়ে এলাম। তোর মাকেও।”
“কী ম্যাজিক বাবা?” সায়ন্তন অবাক হয়ে বলে।
“বিকেল মরে আসছে। এইবার আরম্ভ হবে সেই অদ্ভুত ম্যাজিক, আকাশ জুড়ে। যা কক্ষনো দেখিস না তোরা। তুই না, তোর মা না, তোর বন্ধুরাও নয়। আকাশ থেকে আর চোখ ফেরাস না সোনাই। তাকিয়ে থাক। তাকিয়েই থাক।”
সায়ন্তন আকাশের দিকে চেয়ে রইল। সূর্য সারাদিন আলো দিয়ে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরছহে এবার। যাবার আগে সেদিনের মতন শেষবারের জন্যে পৃথিবীকে রঙে রঙে সাজাতে বসল সে। আকাশে হলুদ, গোলাপী, গেরুয়া, কমলা, গাঢ় লাল আরো কত রকম রঙ খেলা করতে শুরু করল। আকাশের মস্ত ক্যানভাসে ছবির পর ছবি আঁকা হতে শুরু করল, মুছেও যেতে লাগল খানিক পরে। তারপর আকাশ আঁধার করে সন্ধে নামল। এক দুই তিন চার, তারার দল এসে জমতে শুরু করল আকাশের উঠোনে। সায়ন্তন সব ভুলে তাকিয়ে ছিল ওপর দিকে। চোখ সরাচ্ছিল না। যদি কোনো দৃশ্য মুহূর্তের অসতর্কতায় হারিয়ে যায়। এমন আশ্চর্য সুন্দর রঙের ম্যাজিক, আলোর ম্যাজিক, অন্ধকারের ম্যাজিকও আগে কখনও দেখেনি সে। সমীরনের গলার শব্দে চমক ভাঙল তার। তিনি মাঝিকে বলেন, “পাড়ে লাগাও। ফিরতে হবে আবার।”
বাড়ি ফেরার পথে গাড়িতে আসতে আসতে বাবার ডান হাতটা জড়িয়ে ধরল সায়ন্তন। গাঢ়স্বরে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ বাবা।” সমীরণ খুব আরামের শ্বাস ছাড়লেন একটা। কথা বললেন না। শুধু ছেলের এই ভালোলাগাটাকে নিজের দেহে, নিজের মনে মেখে নিতে লাগলেন নিবিড় করে।
ছবিঃ শিমুল
সত্যিই সবচেয়ে সেরা ম্যাজিক! আর সেই ম্যাজিকটি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন যে ম্যাজিশিয়ান, তাঁকেও প্রাণ খুলে তারিফ করছি।
LikeLike
গল্পটা অসাধারণ
LikeLike