সঞ্জয় মিত্রের আগের ছড়া মুরগি চুরি
যখনই সময় পায় ফাঁকে ফুঁকে বিন্দাস
ফেসবুকে মজে থাকে সার্জেন শিবদাস
পাঁচ হাজার ফ্রেন্ড লিস্ট ফলোইং দশ হাজার
প্রতিদিনই প্রোফাইল পিকচারে চেঞ্জ তার।
ট্যাব দেখে নাড়ি টিপে স্টেথো ভোলে রোজ দিন
জিব দেখে চেক করে লাস্ট কার পোস্টিং
ইঞ্জেকশান ফুঁড়ে চোখ রাখে বক্স ইন
রুগি বলে আগে স্যার ছুঁচটা তো তুলে নিন
তুলবে কে ? তখনই তো এগারোটা লাইকিং
ঝালাপালা রুগি বলে আমাকে রেহাই দিন।
স্টেথো দেখে ভুলে যায় লেখা প্রেসক্রিপশান
কটা এলো এর মাঝে ফ্রেন্ড ইনভিটেশান।
নেশা ছিল সিগারেট ছুটে গেছে কোন যুগ
বেঁচে থাকা প্রতি পলে এখন তা ফেস বুক।
সার্জারি কেস পাশে বেতো রুগি পা ফুলো
দাস শিবে দেখে নেবে লাইক কে কে দিলো
চেম্বার বুধ শনি, সোমবারে লেকচার
বাকি দিন সার্জারি ডাইরিটা ভরা তার
শত শত রুগি যত ইদানীং গোমরায়
যত বাবু গ্যাসে কাবু, কারো পেট কামড়ায়
কারো জিভ ওল্টায় থেমে যায় ধুকপুক
ডাক্তারি লাটে ওঠে হাতে থাকে ফেসবুক।
জরু নিয়া পুরুলিয়া থেকে এলো সীতারাম
পেটে ব্যামো আরে রামো মরো মরো অবিরাম
ডাক্তার শিবদাস খ্যাতি আছে যাই হোক
সট্টান নিয়ে এলো তার কাছে সব লোক
পাল্স দেখে, পেট দেখে, স্টেথো চাপে কন্ঠে
মন থাকে প্রোফাইল ছবি ও কমেন্টে
কোনমতে নাম লিখে থামে প্রেসক্রিপশান
মোবাইলে ফেসবুক, তথাতে অ্যাটেনশান
দোস্ত যত বলে কত, এটা কোন ব্যবহার,
উৎকট নেশা ছাড়, তুই না রে ডাক্তার !
কে শুনছে কার মানা, ফেসবুকে শিবদাস
চার বেলা মজে আছে নেশা ইনফেকশাস
আরো পোস্ট, ফ্রেন্ডশিপ, আরো ট্যাগ লাইকিং
কার কত ছবি আসে কে বেড়ালো কুন মিং
আজ কার বার্থ ডে, কেক কাটে ওটা কে
ডিনারে তো কাকু, তবে ধারে ঐ মোটা কে ?
এর মাঝে কে পাঠালো পালোয়ানি ভিডিও
গোটা গাড়ি খেয়ে নিলো বডি, চাকা, ডিকিও।
দিতে হবে এক্ষুণি পোস্টটাকে শেয়ারিং
তা না হলে মাথা হবে আনু চানু সারাদিন।
এইভাবে দুখে দুখে হতভাগা রুগিদের
যাচ্ছিল দিন কেটে ঝঞ্ঝাট ও বিপদের।
ক্রমে ক্রমে কত জমে শত কাজ ও কারবার
ভুলে গেছি শিবদাস ফেসবুকি ডাক্তার
একদিন সোমবার রেড রোডের ওখানে
প্রচন্ড জ্যাম দেখি কী কারণে কে জানে
জানা গেল কিছু লোক দেখতে তো ফিটফাট
ক্রসিংয়ে সটান খাড়া, এদিকে নো দৃকপাত
হাতে হাতে মোবাইল নেই কথা গলপো
ফেস বুক টিপে চলে কেলো টা কী বলবো।
চিনেছি তো মাঝখানে, শিবদাস নিশ্চুপ
একমনে ঘাড় গুঁজে টিপে চলে ফেসবুক।
প্র্যাকটিস লাটে গেছে রুগি টুগি ভেগেছে
স্টেথো গড়াগড়ি খায় মরচেটা লেগেছে ।
বন্ধুরা বলে ‘এ কী বাওয়াল বলুন তো
সাইকিয়াট্রিস্ট দেখি এখনই চলুন তো’
ডক্টর ঘোলাটিয়া দেশজোড়া নাম তার
দু হাজার ফিস তার চেম্বার শনিবার।
চুপ থেকে ভেবে তার জোর মন্তব্য
সোশাল মিডিয়া দূরে রাখা কর্তব্য
ফেসবুক বদ নেশা বহু লোকে ধরেছে
ব্রিলিয়ান্টো মাথারা এ রোগেই মরেছে
একে নিয়ে চলে যাও পাহাড়ের ঘেরাটোপ
মনে রেখো চলবে না মোবাইল ল্যাপটপ
কোনো উত্তেজনায় একে যেন না ধরে
নিয়ে এসো পুনরায় ছ সপ্তাহ পরে।
দুহাজার হাতে নিয়ে ঘোলাটিয়া ফের চুপ
মন দিয়ে মোবাইলে টিপছেন ফেসবুক।।
ছবিঃ তিতিল
জয়ঢাকের সব ছড়া একত্রে