দেশ ও মানুষ সব পর্ব একত্রে
বাবা
চন্দন নাথ
ইতিহাসে তাঁর দুটো এম.এ. থাকলেও এবং শিক্ষক হলেও বাবার কাছে চাষবাস ছিল নেশার মতন।১৯৭৬-এ চলে গেলেন যখন, তখন আমরা ছোটো।তবু জমিগুলো ছিল। তাঁর প্রিয়জন কেউ কেউ চাষের বিষয়গুলো দেখভাল করতেন। মহিনদা ছিলেন…স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী, আমাদের মা তাঁর কাছে ‘মা’ ছিলেন। তাঁর ঋণ ভোলার নয়।কিন্তু ৭৮-এর বন্যায় বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল আমাদের।স্কুলে ঘরছাড়া সবার সঙ্গে ছিলাম আমরাও অনেক দিন। ওই সময় আমাদের সব জমির কাটা পাট ‘জাগ’ দেওয়ায় ছিল।পাটের ‘জাগ’-গুলো যাঁকে দেখতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তিনিই লোপাট করেছিলেন সুযোগ বুঝে।
বোঝা গিয়েছিল জমি এভাবে চাষ করা সম্ভব নয়। একে একে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল জমিগুলো। পাটকাঠি শুকনো, পাট শুকনো…এসব এখন স্মৃতি আমার কাছে। এইরকম চুড়ো করে রাখা পাটকাঠির ভেতরে ঢুকে লুকোচুরিও খেলতাম আমরা বকা খেয়েও। শুধু ভাবি, বাবা যদি চলে না যেতেন জমিগুলো থাকত,বাড়তও ক্রমশ। আমাকে সঙ্গে নিয়ে রোজ যিনি আল ভেঙে এ-জমি সে-জমির দেখতে যেতেন তিনি কি চাইতেন না আমিও তাঁর মতো করে ভালোবাসি চাষবাসের জগৎটা… চিনতে শিখি ফসল ফলানোর আনন্দ! জানি চাষিদের কাছে সবসময় সুখের সময় নয়। চাষে ঝুঁকি থাকে। তবু কেন যেন মনে হয় বাবা চাইতেন আমি মাটির সোঁদা গন্ধটাকে চিনতে শিখি। শুধু আমাকে কেন, আমাদের ভাইবোনদের হয়তো সেই গন্ধটা আরো ভালোবাসতে শেখাতেন তিনি।