এই লেখার আগের পর্বগুলো তাপস মৌলিকের সব লেখা
কিন্তু টেরে আর রেবুফত নেমে আসছে কেন? কী হয়েছে ওদের? ওদের মতো এরকম শক্তিশালী জুটি হঠাৎ এমন ফিরে আসছে কেন সেটা আমাদের কারও মাথায় ঢুকল না। ল্যাচেনাল আজ বেশ তাড়াতাড়ি এগোচ্ছিল। গত কয়েকদিনের তুলনায় আজ অনেক স্বচ্ছন্দ লাগছিল ওকে। ও-ই প্রথম তুষারধ্বসে নেমে আসা বরফের স্তূপটার মাথায় উঠে সেই বিপজ্জনক নালাটা পেরিয়ে গেল। এ পথে এই নিয়ে তিনবার ওঠা হল আমার। রাস্তাটা প্রায় মুখস্থ হয়ে গেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এবারও রুটটা যথেষ্ট কঠিন আর বিপজ্জনক মনে হল। নালা পেরিয়ে যে খাড়াই বরফের দেওয়ালটায় ফিক্সড রোপ লাগানো ছিল তার তলায় ছোট্ট একটুকরো সমতল চাতালের ওপর টেরে আর রেবুফতের সঙ্গে সাক্ষাৎ হল।
“কী হল?” টেরেকে জিগ্যেস করলাম।
“ধুর ধুর, এ রাস্তায় কোন পাগল যায়?” টেরেকে খুব হতাশ মনে হল, “সাইক্লোনের মতো হাওয়া, তার সঙ্গে জেলির মতো নরম তুষার আঠার মতো পা আটকে ধরছে… জানো, গতকাল তিন নম্বর থেকে চার নম্বর ক্যাম্পে যেতে আমাদের সা-ত ঘন্টা সময় লেগেছে!”
“চার নম্বরে তাঁবুটা খুঁজে পেয়েছিলে?”
“হ্যাঁ, তবে তাঁবুর পোলগুলো সোজা করতে হয়েছে। ওপরে জমা তুষারের ওজনে পোলগুলো সব বেঁকে গেছিল। তারপর ওই প্রচণ্ড হাওয়ার মধ্যে আরেকটা তাঁবু খাটিয়েছি আমরা। তখনই তো রেবুফত বলল ওর পা দুটো অসাড় হয়ে গেছে!”
“আমি ভাবলাম হয়ে গেল, নিশ্চয়ই ফ্রস্টবাইট ধরে নিয়েছে,” রেবুফত যোগ করে, “ভাগ্যি ভালো তাড়াতাড়ি তাঁবুতে ঢুকে টেরে আমার পায়ে ভালো করে মালিশ করে দিল, তারপর একটা দড়ি দিয়ে অনেকক্ষণ রগড়ানোর পর ফের ধীরে ধীরে রক্ত সঞ্চালন শুরু হল।”
“আজ সকালে তো আরও মারাত্মক ঠান্ডা ছিল,” টেরে বলে চলে, “হাওয়ার জোর গতকালের চেয়েও বেশি! ভাবলাম, গতকাল সুস্থ সতেজ অবস্থায় সাত ঘন্টায় আমরা মোটে হাজার ফিট উঠতে পেরেছি, এই পরিস্থিতিতে শেষ চার হাজার ফিট ওঠার কোনও আশাই নেই আর! জানি, শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, কিন্তু লক্ষ্যটা ধরাছোঁয়ার মধ্যে হলে তবেই না! বলতে বাধ্য হচ্ছি, শৃঙ্গজয়ের ব্যাপারে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।”
আমি আর ল্যাচেনাল সঙ্গে সঙ্গে তীব্র প্রতিবাদ জানালাম, কিন্তু মনে হল না আমাদের উদ্দীপনার আঁচ ওদের দু’জনের মনে কিছুমাত্রও লাগল। মানছি, প্রতিরাত্রের নতুন তুষারপাতের ফলে রুটের অধিকাংশ জায়গাই গভীর নরম তুষারে ঢাকা, ঠেলে ঠেলে পথ চলা এক প্রাণান্তকর পরিশ্রমের কাজ, তার সঙ্গে আছে কঠিন চড়াই ঢাল বেয়ে ওঠার কষ্ট আর অতি উচ্চতার জন্য শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের স্বাভাবিক ক্ষয়, সব মিলিয়ে টেরের মতো আসুরিক শক্তির অধিকারীকেও কাবু করে ফেলেছে। তবে সে আমাদের নিরুৎসাহ করল না মোটেই।
“আমরা যাচ্ছি ওপরে,” দ্বিধাহীনভাবে জানালাম আমি, “যখন নেমে আসতে দেখবে জানবে শৃঙ্গজয় হয়ে গেছে। এবারে করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে!”
মনে হল ল্যাচেনালও আমার মতোই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবার। টেরে আর রেবুফত আমাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে নেমে গেল, কিন্তু ওদের ভাবভঙ্গি দেখে মনে হল আমাদের সাফল্যের ব্যাপারে ওরা যথেষ্ট সন্দিহান। ওদের সন্দেহ যে ভুল সেটা প্রমাণ করার দায়িত্ব এখন আমাদের কাঁধে।
আবার উঠতে শুরু করলাম আমরা। রেবুফত আর টেরের নেমে আসার পথের চিহ্ন ধরে এগোতে বেশ সুবিধেই হল আমাদের, তুষার সরিয়ে সরিয়ে সবে ওরা এ রাস্তায় নেমেছে। সরকি, আংথারকে, ল্যাচেনাল আর আমি পালা করে সামনে থেকে সে রাস্তাটাই আরও ভালো করে তৈয়ার করতে করতে উঠতে থাকলাম। ভালোই এগোচ্ছিলাম আমরা, তবে এত কঠিন ও সমস্যাসংকুল রুট দেখে অভিজ্ঞ আংথারকেও বেশ বিস্মিত হল। পানসি, অর্থাৎ আংশেরিং ওকে আগেই বলেছিল যে কাঞ্চনজঙ্ঘা কিংবা এভারেস্টে কখনও এত কঠিন রুটের মোকাবিলা করতে হয়নি ওদের। হিমালয়ের এত উচ্চতায় আগে কখনও এই শেরপাদের পিটন ও দড়িদড়াসহ পর্বতারোহণের কলাকৌশল প্রয়োগ করে কঠিন বরফের খাড়া দেওয়াল বেয়ে উঠতে হয়নি। তবে সবকিছু ঠিকঠাকই চলল, মসৃণভাবেই এগিয়ে চললাম আমরা। গত দু’বারের তুলনায় রাস্তাটা এবার অনেক সহজ মনে হচ্ছিল। এর থেকেই বোঝা যায় হিমালয় অভিযানে অতি উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা কত জরুরি। প্রখর সূর্যের তাপে চারদিক যেন জ্বলে যাচ্ছে। তিন নম্বর শিবিরে যখন পৌঁছলাম তখন দরদর করে ঘামছি সবাই আমরা।
তিন নম্বর শিবিরটা একটা দুর্দান্ত জায়গায়। আগে পিছে বিশাল বিশাল বরফের চাঁইয়ের আড়ালে তুষারাবৃত এক ফাটলের মধ্যে, ছোট্ট কিন্তু আরামদায়ক আর নিরাপদ। আমাদের এখন শৃঙ্গ অভিযানের চূড়ান্ত যাত্রার জন্য শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। আজ এই তিন নম্বর ক্যাম্পে পৌঁছনো অবধিই পরিকল্পনায় ছিল। তাঁবুতে ঢুকে বেশিরভাগ সময় স্লিপিং ব্যাগের ভেতর শুয়ে শুয়েই কাটিয়ে দিলাম। উলটোদিকের তাঁবুতে রান্নাবান্না করে শেরপারা দরজা দিয়ে পাঠাতে থাকল। আবহাওয়া চমৎকার। এ যাত্রায় এখনও অবধি সবকিছুই আমাদের পক্ষে আছে, মনে হয় শৃঙ্গজয় অসম্ভব হবে না।
এত উচ্চতায় স্টোভের গরম করার ক্ষমতা কমে গেছে, শেরপাদের চা তৈরি করতে বহুক্ষণ সময় লাগল। বিকেলে চা খেয়ে দু-একটা সিগারেট সহযোগে কিছুক্ষণ গল্প করার পর বাধ্য ছেলের মতো অডটের করে দেওয়া লিস্ট অনুযায়ী পরপর একগাদা ওষুধ খেয়ে নিলাম, শেরপারাও খেল। সন্ধের অন্ধকার নামার আগেই তিন নম্বর ক্যাম্পের সব্বাই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।
পরদিন ভোরবেলা সূর্য ওঠার জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছিলাম। আজকের লক্ষ্য কেবল চার নম্বর ক্যাম্প অবধি পৌঁছনো, ঘন্টাচারেকের বেশি সময় লাগার কথা নয়। অবশ্য ক্যাম্পটা তুলে নিয়ে আজ আমাদের আরও এগিয়ে একেবারে কাস্তে হিমবাহের মাঝখানে ফের বসাতে হবে। সবাই গোছগাছ করে তৈরি হয়ে নিলাম। আমি কিছু ভিডিও ছবি তুললাম। নিচের বিস্তীর্ণ তুষারক্ষেত্রের মাঝে দু’নম্বর ক্যাম্পটাকে এখন ছোটোখাটো একটা গ্রামের মতো লাগছে। বড়ো বড়ো মেস টেন্ট, ভ্যালি টেন্টের সঙ্গে ছোটো ছোটো কিছু হাই অল্টিচিউড টেন্ট মিলিয়ে মনে হচ্ছে ওটা যেন আমাদের অ্যাডভান্সড বেস ক্যাম্প।
“টেরে আর রেবুফত নিশ্চয়ই এখনও ঘুমোচ্ছে,” ল্যাচেনাল বলল।
সূর্যতাপে নরম হয়ে গলে যাবার আগে ভোরবেলার অপেক্ষাকৃত জমাট তুষারের সুবিধে নিতে আমরা সক্কাল-সক্কালই বেরিয়ে পড়লাম আর যেরকম ভেবেছিলাম তার চেয়েও তাড়াতাড়ি চার নম্বর শিবিরে পৌঁছে গেলাম। রাস্তায়ও কিছু ভিডিও তুললাম, বিশেষ করে সেই বার্গশ্রুন্ড অর্থাৎ হিমবাহের উপরাংশ আর নিম্নাংশের ঢালের মাঝে বিশাল অনুভূমিক ফাটলটা যেখানে আছে সেই এলাকায়। আবহাওয়া আজও খুব ভালো। আংথারকে আর সরকি পুরো রাস্তা দুর্দান্ত এল, একজন ল্যাচেনালের সঙ্গে দড়ি বেঁধে, আরেকজন আমার সঙ্গে। তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাওয়ায় চার নম্বর ক্যাম্পটা তুলে নিয়ে কাস্তে হিমবাহের একেবারে মধ্যিখানে বসানোর জন্য হাতে অনেক সময় পেয়ে গেলাম। ভেবে বেশ আশ্বস্ত লাগল যে এই ক্যাম্পের পর রাস্তায় আর তেমন কোনও দুর্গম জায়গা নেই যেখানে আমাদের পিছু হটতে হতে পারে। তাড়াতাড়ি ক্যাম্পের একটা তাঁবু খুলে গুটিয়ে ফেললাম আমরা, খাবারদাবার আর সাজসরঞ্জাম যা বয়ে নিয়ে যেতে হবে সে সবও গোছগাছ করে চারজনে ভাগ করে নিলাম।
ল্যাচেনালকে বললাম, “এক ঘন্টার মধ্যে আমাদের সামনের এই বড়ো তুষারঢালটা পেরিয়ে কাস্তে হিমবাহের কিনারায় পৌঁছে যাওয়া উচিত। রাস্তা খুব বেশি নয়।” একটা তাঁবু ওখানেই খাটানো রইল। বয়ে নিয়ে যাওয়া তাঁবুটা নতুন জায়গায় বসানোর পর আংথারকে আর সরকি আজ এই তাঁবুতে ফিরে আসবে, কাল সকালে তাঁবুটা তুলে নিয়ে বাকি মালপত্র সমেত ফের নতুন ক্যাম্পে উঠে আসবে। অতঃপর সেখান থেকে আমরা শেষ শিবির, অর্থাৎ পাঁচ নম্বর ক্যাম্পের উদ্দেশে রওনা দেব।
গাধার মতো পিঠে মাল বোঝাই করে রওনা দিলাম ফের। বিস্তীর্ণ তুষারঢালটার প্রথম কয়েক গজ নরম তুষারে প্রায় কোমর অবধি ডুবে গেলাম, তারপর তুষারের গভীরতা ক্রমশ কমে এল। একটু পরেই দেখলাম কঠিন বরফের ঢালের ওপর নরম তুষারের কেবল পাতলা একটা আচ্ছাদন। ঢালটার চড়াই আল্পসের সবচেয়ে খাড়াই ঢালের সঙ্গে তুলনীয়। মাঝেমধ্যে আইসঅ্যাক্স দিয়ে ধাপ কেটে এগোতে হল, তবে বেশিরভাগ সময়ই স্রেফ ক্র্যাম্পনের কাঁটা গেঁথে গেঁথে সোজা উঠে চললাম। ধাপ না কেটে এভাবে ক্র্যাম্পনের সাহায্যে উঠলে অবশ্য বিশ্রামের জন্য দাঁড়ানোর সুযোগ পাওয়া যায় না, এই উচ্চতায় ব্যাপারটা খুবই পরিশ্রমসাধ্য। সবাই স্টিম ইঞ্জিনের মতো হাঁপাচ্ছিলাম আমরা।
শেরপাদের মোটেই খুশি বলে মনে হল না। চলার কৌশলে এ ধরণের রাস্তায় আমাদের মতো ওরা পারদর্শী নয়। তবে পিছিয়ে পড়ে দলছুট হয়ে যাওয়ার ভয়ে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি উঠছিল ওরা। অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য কয়েকশো গজ এভাবে পেরোনোর পর আমরা কাস্তে হিমবাহটার প্রান্তে এসে উপস্থিত হলাম। ল্যাচেনাল আগে আগে যাচ্ছিল, দাঁড়িয়ে পড়ে চারদিক দেখতে লাগল। একটু নিচে দাঁড়িয়ে আমিও আশেপাশে তাঁবু ফেলার উপযুক্ত স্থান খুঁজছিলাম। আমাদের দু’জনেরই দৃষ্টি একসঙ্গে একটা দুর্দান্ত জায়গার ওপর পড়ল – তুষারঢালটা পেরিয়ে যেখানে এসে আমরা উপস্থিত হয়েছি ঠিক সেখানেই একটা বড়ো বরফের চাঁইয়ের পাদদেশে জায়গাটা যেন আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। তাঁবু ফেলার পক্ষে একেবারে আদর্শ জায়গা। সেই বরফের চাঁই এবং পাশের একটা ছোটো বরফাবৃত গিরিশিরা প্রাকৃতিক দেওয়ালের মতো হাওয়া থেকে অঞ্চলটা আড়াল করে রেখেছে।
উল্লসিত সুরে ল্যাচেনাল বলল, “এখানে ক্যাম্পটা ঠিকঠাক গুছিয়ে বসাতে পারলে আল্পসের শ্যাময় উপত্যকায় আমার ছোট্ট বাসাটার মতোই আরামদায়ক হবে।”
সঙ্গে সঙ্গে কাজে লেগে পড়লাম আমরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁবুটা খাটানো হয়ে গেল। এদিকে বিকেল প্রায় পড়ে এসেছে। আংথারকে আর সরকিকে তাই নিচের ক্যাম্পে রওনা করিয়ে দিলাম। এই কঠিন রুটে নিজেরা নিজেরা নেমে যেতে হবে দেখে ওরা দু’জন মোটেই খুশি হল না। তবে নামার সময় আংথারকে যে আইসঅ্যাক্সের সাহায্যে কয়েকটা বাড়তি ধাপ কেটে নিতে কিছু মনে করবে না সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ছিলাম, দরকার পড়লে ধাপ কেটে কেটে পুরো রাস্তাটাই একটা সিঁড়ি বানিয়ে ফেলবে ও।
“গুড নাইট, স্যার!”
আমাদের সঙ্গে উষ্ণ করমর্দনের পর শেরপা দু’জন ঢাল বেয়ে নিচে অদৃশ্য হয়ে গেল। আমরা ক্যাম্প গোছানোয় মন দিলাম। চারদিকে কুয়াশা ঘিরে এল। হাড় কাঁপানো একটা ঠান্ডা হাওয়া ছাড়ল, হাওয়ার তোড়ে তুষারকণা উড়ে এসে আমাদের চোখেমুখে ঝাপটা মারতে শুরু করল। দু’জনের কারুরই তেমন খিদে নেই, তাও জোর করে খেলাম। তারপর চা তৈরি হয়ে গেলে চায়ের সঙ্গে অডটের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী একের পর এক ওষুধ গেলার পালা। ল্যাচেনাল যাই বলুক, ক্যাম্পটা মোটেই তেমন আরামদায়ক হল না, বড়োজোর ‘মোটামুটি’ বলা যেতে পারে। বুটগুলো যাতে ঠান্ডায় জমে শক্ত না হয়ে যায় তাই সেগুলোকে নিজের নিজের স্লিপিং ব্যাগের ভেতর তলার দিকে চালান করে দিলাম, তারপর রাতভোর টানা সুন্দর একটা ঘুমের জন্য প্রস্তুত হলাম।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙামাত্র তাড়াতাড়ি তাঁবুর দরজার চেন ফাঁক করে মাথাটা বাইরে গলিয়ে দেখলাম। সূর্য উঠছে, আকাশ পরিষ্কার, তবে মারাত্মক ঠান্ডা বাইরে। ‘যাক! আজ অন্তত তাহলে বর্ষা এসে পৌঁছচ্ছে না এখানে!’ মনে মনে কথাটা চিন্তা করে বেশ নিশ্চিন্ত হলাম। আবহাওয়ার শেষ খবরটা বেশ ভাবনায় ফেলে দিয়েছিল আমায়। মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে এখন আমাদের প্রতিযোগিতা চলছে। আংথারকে আর সরকি এসে পৌঁছনোমাত্র মালপত্র চারজনে ভাগাভাগি করে নিয়ে রুকস্যাক গুছিয়ে ফেললাম। ঠান্ডায় কাঁপছিলাম সবাই, খুব তাড়াতাড়ি আস্তানা ছেড়ে রওনা হতে পারলাম না তাই। একটা তাঁবু যেরকম ছিল সেরকমই খাটানো রইল, পাঁচ নম্বর ক্যাম্পের জন্য আরেকটা তাঁবু প্যাক করে নিয়ে অবশেষে আমরা রওনা দিলাম।
প্রথমে কাস্তে হিমবাহের মাঝবরাবর বাঁদিকে কিছুটা এগিয়ে ভাঙাচোরা বরফের চাঁইভর্তি দুর্গম একটা অঞ্চল এড়ানো গেল। এভাবে একটা বিস্তীর্ণ উপত্যকার গোড়ায় এসে উপস্থিত হলাম। একের পর এক সাজানো বিভিন্ন নতির বিরাট বিরাট কতগুলো তুষারঢাল মিলে চওড়া উপত্যকাটা তৈরি হয়েছে। তবে সামনের পুরো রাস্তাটাতেই তেমন দুর্গম কোনও প্রতিবন্ধকতা নেই। কেউ কোনও কথা বলছিলাম না। পিঠের ওজন আর চলার প্রচণ্ড পরিশ্রমের মোকাবিলায় ব্যস্ত সবাই। সামনে যে কোন অজানা অপেক্ষা করে আছে সেই ভাবনা সবার মাথার ভেতরই ঘুরঘুর করছিল। আমার কাছে সবচেয়ে দুশ্চিন্তার কারণ হল বর্ষা। আজ জুন মাসের দু’তারিখ। মেরেকেটে আর চারদিনের বেশি ভালো আবহাওয়া আমরা আশা করতে পারি না। ব্যাপারটা হয়তো একদম টায়ে-টায়ে হয়ে যাবে, তবে নষ্ট করার মতো এক মুহূর্ত সময়ও আমাদের হাতে নেই। আমাদের সামনে এখন কেবলমাত্র এই বিস্তীর্ণ তুষার উপত্যকা, রাস্তায় অন্তত তেমন দুর্গম কোনও বাধাবিপত্তি নেই, মনে হচ্ছে ভাগ্যদেবী আমাদেরই পক্ষে। তাই আমি কিংবা ল্যাচেনাল, দু’জনের কেউই আমাদের সাফল্যের ব্যাপারে মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহকেও প্রশ্রয় দিলাম না।
মাঝে মাঝেই থামতে হচ্ছিল, লজেন্স কিংবা একটুকরো চকলেট খাওয়ার অছিলায়। আমাদের পেছনের দৃশ্য দেখলে যে কোনও লোকের মাথা ঘুরে যাবে! দু’নম্বর শিবির বুকে নিয়ে পড়ে থাকা সেই বিস্তীর্ণ তুষার প্রান্তরটা একটা ছোট্ট রুমালের মতো দেখাচ্ছিল। গ্রেট অন্নপূর্ণা হিমবাহ, যেটা পেরোতে আমাদের কিনা এক ঘন্টা সময় লেগেছে, এখান থেকে সেটাকে বরফের তৈরি ছোট্ট একটা জিভের মতো লাগছিল। দূরে অন্নপূর্ণা পর্বতপুঞ্জের বিশাল তুষারপ্রাচীরটার ওপর দিয়ে পরিষ্কার তিব্বত দেখা যাচ্ছে; একদম বাঁদিকে ধৌলাগিরির কিছুটা অংশও দেখা যাচ্ছে। নিচ থেকে এঁকেবেঁকে ওপরে উঠে আসা আমাদের চলার রাস্তাটাও পুরোটাই দেখতে পাচ্ছিলাম এখান থেকে।
আমাদের ডানদিক দিয়ে যে তুষারাবৃত গিরিশিরাটা একেবারে অন্নপূর্ণার শৃঙ্গ অবধি উঠে গেছে তার বাইরের দিকের প্রান্তটা বেশ আঁকাবাঁকা আর এবড়োখেবড়ো। তুষারকণা বয়ে নিয়ে চলা প্রচণ্ড হাওয়া সেই এবড়োখেবড়ো প্রান্তের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় কেমন একটা বিচিত্র আওয়াজ হচ্ছিল, যেন চিরুনির দাঁড়ার মধ্য দিয়ে কেউ জোরে ফুঁ দিচ্ছে। মাথার ওপর দিয়ে কুয়াশার মতো হাওয়ায় উড়ে চলা তুষারকণার মেঘ তীব্র বেগে সরে সরে যাচ্ছে। সামনে কিছুটা দূরে খাড়া দাঁড়িয়ে আছে গোলাপি রঙের পাথরে তৈরি একটা উঁচু ঢিবি, অনেকটা পাখির ঠোঁটের মতো দেখতে। তিরের ফলার মতো একটা পাথুরে গিরিশিরা সোজা এগিয়ে গেছে সেই ঢিবিটা অবধি।
ল্যাচেনালকে বললাম, “ওই গিরিশিরাটার ওপরে নিশ্চয়ই কোথাও আমাদের ছোট্ট ‘কফিন’ টেন্টটা বসানোর একফালি জায়গা পাওয়া যাবে, কী বলো তুমি?”
ল্যাচেনাল ঘাড় নেড়ে বলল, “পাওয়া তো উচিত! যে করে হোক গিরিশিরার ওই পাথুরে জমির ওপরেই তাঁবুটা লাগাতে হবে, তা হলে এই ঠান্ডা বরফের মেঝেতে থাকতে হবে না। দরকার হলে অনেকগুলো পিটন পুঁতে তার সঙ্গে তাঁবুটা বেঁধে রাখব।”
দৃঢ়প্রতিজ্ঞ চিত্তে আমি আর ল্যাচেনাল পালা করে সামনে থেকে রাস্তা বানিয়ে চললাম। প্রচণ্ড হাওয়ায় শেরপা দু’জনের দেখলাম যথেষ্ট অসুবিধে হচ্ছে। প্রায়ই দম নেবার জন্য থামতে হচ্ছিল আমাদের। কয়েকটা বরফের স্তূপ আর একটা বেশ লম্বা ফাটল এড়াতে দু-তিনবার বেশ খানিকটা ঘুরপথে এগোতে হল। মাঝেমাঝেই কিছু অঞ্চলে নরম বরফে অনেকটা ঢুকে যাচ্ছি, পা টেনে টেনে চলা সে সব জায়গায় প্রাণান্তকর পরিশ্রমের কাজ। অনেকক্ষণ যাবৎ টানা ওপরে উঠে চলেছি, কিন্তু গিরিশিরাটা যেন মনে হচ্ছে সেই একই দূরত্বে রয়ে গেছে!
“বিরক্তিকর! যে কেউ হতাশ হয়ে পড়বে!” ল্যাচেনাল অভিযোগ জানায়।
ক্রমশ রাস্তা সহজ হয়ে এল, তুষার অপেক্ষাকৃত জমাট বাঁধা পেলাম, পা আর সেখানে অতটা ডুবে যাচ্ছে না। মনে হচ্ছিল বিশাল এক ঢালু ছাদ বেয়ে উঠে চলেছি, পৃথিবীর ছাদ! ঢালটার চড়াই মোটামুটি সমান, তাই প্রায় চল্লিশ ডিগ্রি খাড়াই হলেও ক্র্যাম্পন পায়ে উঠতে তেমন সমস্যা হচ্ছিল না। প্রতি দশ গজ অন্তর থেমে বিশ্রাম নিতে হচ্ছিল আমাদের, আবার বেশিক্ষণ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলেই তীব্র ঠান্ডায় পা দুটো মনে হচ্ছে যেন অবশ হয়ে আসছে! বেকার দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করার অবশ্য উপায় নেই আমাদের। ‘অবশেষে পাঁচ নম্বর ক্যাম্পে পৌঁছচ্ছি! এটাই শেষ ক্যাম্প!’ মনকে এই বলে সান্ত্বনা দিতে দিতে চোয়াল শক্ত করে এগিয়ে চললাম আমরা। গিরিশিরাটার কাছাকাছি অঞ্চলে জমাটবাঁধা তুষারের আস্তরণ বেশ পাতলা, প্রতি পদক্ষেপে ক্র্যাম্পনের ভারে ভেঙে গিয়ে নিচের নরম তুষারে পা ঢুকে যাচ্ছে, চলা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। অবশেষে, শরীরের সমস্ত শক্তি একত্র করে শেষ কয়েক গজ উঠে পাথুরে গিরিশিরাটার ওপরে পৌঁছে গেলাম।
“হা ভগবান!” হতাশভাবে বলে উঠল ল্যাচেনাল।
দূর থেকে দেখে যে গিরিশিরাটা বরফহীন পাথুরে মনে হয়েছিল, কাছে এসে দেখি সেটা স্বচ্ছ কাচের মতো কঠিন মসৃণ বরফে আচ্ছাদিত। কাচের মতো বরফের ভেতর দিয়ে পাথুরে মাটি দেখা যাচ্ছে! কঠিন বরফঢালে কোথাও কোনও খাঁজ-খোঁজ, একফালি সমতল জায়গাও নেই। অগত্যা সেই ঢালের ওপরেই আমাদের তাঁবু খাটাতে হবে!
একটু পরে শেরপারা এসে পৌঁছল। আমরা এখন ২৪,৬০০ ফিট উচ্চতায় আছি। উচ্চতার প্রভাবে বেচারারা বেশ কাবু হয়ে পড়েছে দেখলাম। মুখে কোনও কথাই বেরোচ্ছে না কারও, ইঙ্গিতে বোঝাল যে ব্যথায় মাথা ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু বিশ্রাম নেবার সময় নেই, সবাইকেই কাজে লেগে পড়তে হবে। আইস অ্যাক্স দিয়ে বরফ কেটে কেটে ছোট্ট একটা সমতল জায়গা বানালাম। এরকম খাড়াই বরফঢালে কাজটা করতে গিয়ে প্রচুর বরফ কেটে সরাতে হল। প্রতি তিরিশ সেকেন্ড অন্তর আমায় বিশ্রাম নিতে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যেন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে! শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর আমার কোনও নিয়ন্ত্রণই যেন নেই এখানে, ধ্বক ধ্বক করে হৃৎপিণ্ডটা বুকে ঘা মেরে চলেছে। ওদিকে শেরপারা দেখলাম বিশ্রাম না নিয়ে টানা পাঁচ মিনিট কাজ করে যেতে পারছে!
ঘন্টাখানেক পরে চাতালটা তৈরি হল। জায়গাটা গিরিশিরার একদম গা ঘেঁষে। ল্যাচেনাল গিরিশিরাটার গায়ে পাথরের ফাটল খুঁজে দুটো পিটন বেশ করে গেঁথে ফেলল, আমাদের তাঁবুটা সেই দুই পিটনের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে সুরক্ষিত করা গেল।
আংথারকের সঙ্গে আকার-ইঙ্গিত এবং ভাঙা ভাঙা ইংরিজিতে আমার কিছু কথাবার্তা হল। ওকে বললাম, “আগামীকাল সকালে তোমাদের ওই ল্যাচেনাল সাহিব আর এই বড়া সাহিব অন্নপূর্ণার ওই শৃঙ্গে ওঠার জন্য রওনা দেব।”
“ইয়েস, স্যার।”
“তুমি হলে শেরপাদের সর্দার। আমাদের শেরপাদের মধ্যে তোমার অভিজ্ঞতা সবচেয়ে বেশি। তুমি যদি আমাদের সঙ্গে চল তাহলে আমি খুবই খুশি হব।”
“থ্যাংক ইউ, স্যার।”
“সবাই মিলে শৃঙ্গবিজয়ের কৃতিত্বটা ভাগাভাগি করে নেওয়া উচিত! আসবে তুমি আমাদের সঙ্গে?”
এতদূর এসে শৃঙ্গজয়ের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাক সেটা কেউই চায় না। শেরপাদের মনোভাব আন্দাজ করে ওই মুহূর্তে আংথারকেকে এই প্রস্তাবটা দেওয়া আমার কর্তব্য বলেই মনে হয়েছিল। আংথারকে চুপ করে একটু ভাবল, তারপর দেখলাম পিছিয়ে গেল। বলল প্রস্তাবটা দেওয়ায় ও খুবই কৃতজ্ঞ, কিন্তু ও যেতে চায় না।
“অনেক ধন্যবাদ, বড়া সাহিব। কিন্তু ঠাণ্ডায় আমার পা দুটো জমে যাচ্ছে…”
“ও, আচ্ছা!”
“…আমি নিচে চার নম্বর ক্যাম্পে নেমে যাওয়াই পছন্দ করব।”
“নিশ্চয়ই, আংথারকে, তোমার যেমন ইচ্ছে! তবে যদি নিচে নেমে যেতে হয় তাহলে এখনই রওনা দিয়ে দাও, বেলা পড়ে আসছে।”
“থ্যাংক ইউ, স্যার।”
মুহূর্তের মধ্যে ওদের রুকস্যাক গোছানো হয়ে গেল। নেমে যাওয়ার সময় যখন ওরা ফিরে তাকাল, দেখলাম আমাদের এখানে একা ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে বলে ওদের চোখে একরাশ উদ্বেগ।
“সালাম, স্যার। আমাদের শুভেচ্ছা রইল!”
“সালাম, সাবধানে যেও!”
কয়েকমিনিট পরে, যে তুষারঢাল বেয়ে একটু আগেই আমরা উঠে এসেছি তার ওপর ছোটো ছোটো দুটো কালো বিন্দুর মতো ওদের নেমে যেতে দেখছিলাম। এই শেরপাদের মানসিকতা কেমন অদ্ভুত! বিশ্বস্ততা আর হার-না-মানা মনোভাবের জন্য প্রবাদপ্রতিম এই শেরপারা উঁচু উঁচু পাহাড়ে উঠতে যে ভালোবাসে তাতে কোনও দ্বিমতই নেই, কিন্তু যখন ওদের এই প্রচণ্ড পরিশ্রমের ফসল ঘরে তোলার সময় এল তখন কেমন নির্দ্বিধায় পিছিয়ে গেল ওরা। তবে আমাদের চিন্তাধারাও যে ওদের কাছে সমান অদ্ভুত ঠেকে সে বিষয়ে আমার মনে কোনও সন্দেহ নেই।
আমি আর ল্যাচেনাল দু’জনেই চুপ, কারও মুখে কোনও কথা নেই। তবে সেই নীরবতার মধ্যেও আমরা একে অন্যের জেদ আর মাটি কামড়ে লড়ে যাওয়ার অটুট প্রতিজ্ঞা টের পাচ্ছিলাম। এবার আর কিছুতেই আমরা খালি হাতে ফিরছি না।
রাতটা বেশ ভুগতে হবে মনে হচ্ছে! জায়গাটা বেশ বিপজ্জনক, তাঁবুর নিচের বরফও তেমন স্থিতিশীল নয়। প্রচণ্ড হাওয়ায় ওপরের বরফঢাল বেয়ে তুষারকণা নেমে এসে তাঁবুর ছাদে জমা হচ্ছে, জমা হতে হতে ওজন বেশি বেড়ে গেলে তাঁবুটাই না চেপটে দেয়! পিটন দুটো যে পাথরে পোঁতা সেটা নরম লাইমস্টোন, তাঁবুর খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করা আইসঅ্যাক্সগুলোও নরম তুষারে গাঁথা। আপাতত মনকে সান্ত্বনা দেবার কাজে লাগলেও দরকারের সময় ওগুলো কতটা নির্ভরযোগ্য হবে সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। মুখে কিছু না বললেও মনে মনে দু’জনেই ভয় পাচ্ছিলাম যে আমাদের তৈরি করা চাতালটার বাইরের কিনারা ভেঙে তাঁবুটা তুষারঢাল বেয়ে গড়িয়ে না পড়ে!
শৃঙ্গজয়ের উদ্দেশ্যে চূড়ান্ত যাত্রার আগে এই শেষ রাত্রে আমাদের মনের গতি স্লথ হয়ে গেছিল। মনঃসংযোগ করতে প্রচণ্ড অসুবিধে হচ্ছিল আমার, কোনওকিছুতেই যেন কোনও আগ্রহ নেই! কথাবার্তা টানা টানা বিলাপের মতো শোনাচ্ছিল। একে অপরকে ঠেলা দিতে দিতে শেষে অনেক কষ্টে স্টোভ জ্বেলে একটু চা বানানো গেল, সেই চায়ের সঙ্গে নিত্যকার রুটিনমাফিক ওষুধের বড়িগুলো গিলে ফেললাম। এই পরিস্থিতিতে গলা দিয়ে কোনও খাবার নামানো একেবারে অসম্ভব ব্যাপার।
এই সময় প্রচণ্ড জোরালো একটা ভয়ঙ্কর হাওয়া উঠল। তাঁবুর নাইলনের কাপড়টা সে হাওয়ায় ফরফর করে আওয়াজ করতে শুরু করল। বারবার ভয় হচ্ছিল বাতাসের ধাক্কায় এই বোধহয় তাঁবুটা উড়ে যাবে! ডুবন্ত মানুষ যেমন হাতের কাছে যা পায় তাই আঁকড়ে ধরে বাঁচার মরিয়া চেষ্টা করে সেরকম হাওয়ার প্রতিটা ঝাপটায় তাঁবুর পোলগুলোকে প্রাণপণে আঁকড়ে ধরছিলাম আমরা! তুষারপাত শুরু হল বাইরে, আর সেই তুষারঝড় ভয়ানক এক দৈত্যের মতো হা হা হা হা অট্টহাস্য হাসতে হাসতে আমাদের তাঁবুর চারদিকে ঘুরপাক খেতে থাকল।
শরীরের প্রতিটি নড়াচড়ার জন্য মনের সমস্ত শক্তি একত্রিত করতে হচ্ছিল। জামাকাপড় বদলানোর তো কোনও প্রশ্নই নেই, সুন্দর স্লিপিং ব্যাগের মধ্যে নোংরা বুটজুতোগুলো ঢুকিয়ে তলার দিকে ঠেলে দিয়ে আমরাও ভেতরে ঢুকে চেন এঁটে দিলাম। বুটজুতোগুলো স্লিপিং ব্যাগের ভেতরে রাখার এই বুদ্ধিটার জন্য মনে মনে পিয়ের অ্যালেনকে ধন্যবাদ দিলাম সে রাত্রে। আমাদের জন্য যারা পর্বতারোহণের এই দুর্দান্ত সাজসরঞ্জামগুলো বানিয়ে দিয়েছে তাদেরকেও ধন্যবাদ জানালাম।
তাঁবুর মধ্যে ল্যাচেনাল চাতালটার বাইরের দিকের কিনারায় শুল, আমি ভেতরদিকে। দু’জনের কারও কাছেই ব্যাপারটা তেমন সুবিধের হল না। ল্যাচেনালের বারবারই মনে হতে লাগল সেই ছোট্ট চাতালটার প্রান্ত টপকে তুষারঢাল বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে ও মহাশূন্যের নিকষ কালো অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে। এদিকে ওপরের ঢাল বেয়ে ক্রমাগত তাঁবুর ছাদে নেমে আসা তুষারের চাপে আমার প্রায় দমবন্ধ অবস্থা!
“তাঁবুটা ইলাস্টিক নাইলন দিয়ে তৈরি বলে রক্ষে, নইলে এতক্ষণে তুষারের চাপে কাপড়টা ছিঁড়ে যেত,” ল্যাচেনালকে বললাম, “এই রে! আমার ক্যামেরাটা স্লিপিং ব্যাগের ভেতর ঢোকাতে ভুলে গেছি!”
তাড়াতাড়ি একটা হাত বার করে ক্যামেরাটা খুঁজে স্লিপিং ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে ঠেলে ঠেলে তলার দিকে বুটজোড়ার পাশে পাঠিয়ে দিলাম। ভাগ্যিস মনে পড়ল! কাল শৃঙ্গে উঠতে পারলেও যদি ছবি তুলতে না পারি তাহলে তো কোনও প্রমাণই থাকবে না!
বাপ রে বাপ! সে এক রাত কাটল বটে! ল্যাচেনাল বার বারই পিছলে চাতালের কিনারার দিকে নেমে যাচ্ছে, আর আমার এদিকে তাঁবুর ছাদের চাপে চেপটে যাওয়ার জোগাড়! দু’জনেই বার বার ঘড়ি দেখছিলাম। পরিস্থিতি ক্রমশ আরও খারাপ হতে শুরু করল। আর যেন নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না আমি, তুষারের ওজন যেন গুঁড়িয়ে দেবে এবার! শেষে একজন বক্সার যেভাবে গার্ড নেয় সেভাবে বুকের সামনে দুটো হাত আড়াআড়ি ক্রস করে তাঁবুর ছাদটা ঠেকিয়ে রেখে ফুসফুসের সংকোচন-প্রসারণের জন্য একটু জায়গা বানিয়ে দম নেবার ব্যবস্থা করলাম। বাতাসের প্রচণ্ড আওয়াজে কানে তালা ধরে যাচ্ছে, তার প্রতিটা ঝাপটার সঙ্গে শুনতে পাচ্ছি মূল গিরিশিরার এবড়োখেবড়ো প্রান্ত দিয়ে বাতাস বয়ে যাওয়ার সেই তীক্ষ্ণ হুইসলের মতো আওয়াজ। তাঁবুর পোলগুলো বিপজ্জনকভাবে বেঁকে যাচ্ছে, মরিয়া হয়ে জাপটে ধরে সেগুলো জায়গামতো রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কেন যে টেন্টটা উড়ে গেল না সেটাই রহস্য! প্রকৃতির সঙ্গে এই অসম এবং মরণপণ যুদ্ধের কাছে আল্পসের পাহাড়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানোর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতাও নস্যি। সারাদিন কষ্টকর পথ চলার পর খুবই ক্লান্ত পরিশ্রান্ত ছিলাম, কিন্তু ঝড়টা এক মুহূর্তও দু’চোখের পাতা এক করতে দিল না আমাদের।
ওদিকে আমাদের সাফল্যের ব্যাপারে সন্দিহান রেবুফত আর টেরে নেমে গেছিল দু’নম্বর শিবিরে। সেখানে পৌঁছে ওরা দেখল কোজি আর শ্যাজ নিচ থেকে উঠে এসেছে। ওপর আর নিচের খবরাখবর আদানপ্রদান হল। টেরে আর রেবুফত ক্লান্তিতে নুয়ে পড়ছিল। ওদের সঙ্গী দুই শেরপা পানসি আর আয়লারও একই দশা; ক্যাম্পে পৌঁছে তারা যে সেই শেরপাদের তাঁবুতে ঢুকল, সারাদিন আর তাদের দেখাই পাওয়া গেল না। কোজি আর শ্যাজ ফের চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। পাহাড় চড়ায় ওরা দু’জন নিয়মিত পার্টনার, তাই ফের একসঙ্গে একই দড়িতে বাঁধা অবস্থায় চলতে পেরে দু’জনই খুশি। পরদিন ভোরবেলা দু’নম্বর শিবির ছেড়ে ওরা তিন নম্বরের দিকে যাত্রা শুরু করল এবং তারপর পরিকল্পনামাফিক আমাদের একটা ক্যাম্প পেছনে পেছনে উঠে আসতে লাগল।
ক্লান্তি কেটে গেলে ধীরে ধীরে টেরে তার শক্তি ফিরে পেল। ও বুঝল যে শৃঙ্গজয়ের মরিয়া একটা চেষ্টা আমরা করবই। হতাশা ঝেড়ে ফেলে নতুন উদ্যমে ফের সে তার রুকস্যাক গোছানো শুরু করল। এদিকে রেবুফত তখন মন দিয়ে তার অভিজ্ঞতা লিখে চলেছে। বিকেল হতে না হতেই বাইরে হালকা তুষারপাত শুরু হল।
“নমস্কার, বন্ধুগণ, কেমন আছ সব?” হঠাৎ একটা সাদা ভূতের মতো তাঁবুর ভেতরে ঢুকে এল আইজ্যাক, “বাকিরাও আসছে পেছনে।”
এরপর ঢুকল অডট আর নোয়েল, সারা গা তুষারে সাদা ওদেরও। দু’নম্বর ক্যাম্পে উঠে এসে অভিযানের বাকিদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার উত্তেজনায় তারা তাঁবুর ভেতরেই মহানন্দে পোশাকের তুষার ঝেড়ে ফেলতে শুরু করল। বিকেল তখন সাড়ে পাঁচটা।
“সে কী! তোমরা এখানে?” অবাক হয়ে বলল আইজ্যাক, “আমরা তো ভাবলাম কোজি আর শ্যাজকে দেখতে পাব!”
“নাঃ! তুমি আমাদেরই দেখছ!”
টেরে ওদের ব্যাখ্যা করল রেবুফতের পায়ে ফ্রস্টবাইটের লক্ষণ দেখা দেওয়ায় কীভাবে আগের দিন ওরা পাঁচ নম্বর ক্যাম্প বসাতে না পেরে ফিরে এসেছে। তারপর বলল, “আগামীকাল সকালে ফের বেরোচ্ছি আমরা।”
বাইরে তুষারপাত আরও বেড়েছে তখন। অডটের এখানে আসার উদ্দেশ্য ছিল অতি-উচ্চতায় পর্বতারোহীদের কৃত্রিম অক্সিজেন ব্যবহার করার উপযোগিতা নিয়ে কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা করা। সে নোয়েলকে পাকড়াও করে নানারকম ডাক্তারি পরীক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। নোয়েলের মুখে একটা মুখোশ পরিয়ে, পিঠে উচ্চচাপে সংকুচিত অক্সিজেন ভরা ডুরালুমিনের একটা সিলিন্ডার চাপিয়ে তার থেকে একটা নল অডট মুখোশটার মধ্যে ঢুকিয়ে দিল। দেখে মনে হচ্ছিল নোয়েল যেন চাঁদে যাচ্ছে! সেই অবস্থায় নোয়েলকে অডট ক্যাম্পের চারদিকে ছুটিয়ে মারল। বেচারা নোয়েল, সে নিজেই শুধু বুঝতে পারল না তাকে দেখতে কেমন কিম্ভূতকিমাকার লাগছে, বাকিরা সবাই হেসে কুটিপাটি!
অডটের ডাক্তারি পরীক্ষানিরীক্ষা হয়ে গেলে সবাই ফের তাঁবুতে জড়ো হল। আইজ্যাক বলল সে ফ্ল্যাশলাইট ব্যবহার করে কিছু ছবি তুলতে চায়, “বিশ্বে সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় ফ্ল্যাশলাইট ফোটো তুলে আমি রেকর্ড করতে চাই।”
বস্তুত, দু’নম্বর ক্যাম্পের উচ্চতা বিশ হাজার ফিটের চেয়ে সামান্যই কম, আর ফ্ল্যাশ ব্যবহার করে হিমালয় অভিযানে এখনও খুব বেশি ফোটো তোলা হয়েছে বলে মনে হয় না।
রাতের খাওয়াদাওয়ার পর আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেল, তারারা জ্বলজ্বল করে উঠল। স্নিগ্ধ চন্দ্রালোকে দূরে অন্নপূর্ণা পর্বতপুঞ্জের সেই দৈত্যাকার তুষারপ্রাচীর রাতজাগা প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে রইল। রেডিওর সর্বশেষ আবহাওয়ার খবর বেশ উদ্বেগজনক। বর্ষা উত্তরবঙ্গে পৌঁছে গেছে, তার ওপর পশ্চিমি ঝঞ্ঝারও পূর্বাভাস রয়েছে। পরদিন, দোসরা জুন সকালে আকাশ ঝকঝকে নীল। সারাদিনই আবহাওয়া দুর্দান্ত থাকবে বোঝা গেল। অভ্যাসবশত টেরে খুব ভোরবেলাই বেরিয়ে পড়ার জন্য তৈরি হয়ে নিল। রেবুফত আর দু’জন শেরপাকে সঙ্গে নিয়ে ভোর ছ’টায় যখন সে ক্যাম্প ছাড়ল তখনও সূর্য ওঠেনি। চার নম্বর শিবিরে আমরা তখনও গভীর ঘুমে মগ্ন। বিপজ্জনক নালাটায় পৌঁছনোর আগে টেরেরা যখন নেমে আসা তুষারধ্বসে তৈরি সেই বরফের স্তূপটা বেয়ে উঠছে, নিচের দু’নম্বর ক্যাম্প থেকে টেলি-লেন্স ব্যবহার করে আইজ্যাক তাদের কিছু ছবি তুলে রাখল।
অন্নপূর্ণার সম্পূর্ণ পর্বতগাত্রটাই যেন সেদিন আমাদের দখলে! দূর থেকে যদি কেউ শক্তিশালী দূরবিন দিয়ে পর্বতগাত্রটা দেখে তাহলে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখতে পাবে। ২৩,৫৫০ ফিট উচ্চতা অবধি চার-চারটে শিবির ফেলা হয়েছে। দু’নম্বর শিবিরের ছোটোবড়ো তাঁবুগুলি ঘিরে বেশ কয়েকজন মানুষ ঘোরাঘুরি করছে, জটলা করছে। একটু ওপরে টেরে আর রেবুফত তাদের দুই শেরপা পানসি ও আয়লার সঙ্গে আইস অ্যাক্স দিয়ে ধাপ কেটে কেটে নতুন রাস্তা বানিয়ে উঠে চলেছে। আরও ওপরে, শ্যাজ ও কোজি তাদের দু’জন শেরপাসঙ্গী আংদাওয়া আর ফুথারকে-কে নিয়ে তিন নম্বর ক্যাম্প ছেড়ে চার নম্বরের দিকে এগিয়ে চলেছে। আর সবচেয়ে ওপরে আমি ও ল্যাচেনাল, আংথারকে এবং সরকি – এই দুই শেরপাকে সঙ্গে নিয়ে, চার নম্বর ক্যাম্প ছেড়ে কাস্তে হিমবাহের ওপরের সেই বিস্তীর্ণ তুষারঢাল বেয়ে কোমর অবধি নরম তুষারে ডুবে গিয়ে ঠেলতে ঠেলতে উঠে চলেছি।
বিকেলবেলা নিচে মিরিস্তি খোলার উপত্যকা জুড়ে ঘন কালো মেঘ করে এল। ধীরে ধীরে দু’নম্বর শিবির বুকে নিয়ে শুয়ে থাকা বিস্তীর্ণ সেই তুষারক্ষেত্রের আকাশও মেঘে ঢেকে গেল। মেঘের একচিলতে ফাঁক দিয়ে দূরবিন চোখে লাগিয়ে আইজ্যাক দেখতে পেল, অনেক ওপরে তিরের মতো দেখতে একটা পাথুরে গিরিশিরার পাদদেশে নতুন একটা ছোট্ট কালো বিন্দু! ‘ওটা নিশ্চয়ই পাঁচ নম্বর ক্যাম্প হবে!’ মনে মনে ভাবল আইজ্যাক, ‘আগামীকাল সকালে কী তবে শৃঙ্গজয়ের লক্ষ্যে চূড়ান্ত যাত্রা শুরু করবে ওরা?’ আবহাওয়া কীরকম থাকে তার ওপরই নির্ভর করছে এই প্রশ্নের উত্তর!
কুয়াশা ক্রমে আরও ঘন হয়ে ঘিরে এল। চতুর্দিক সাদায় লেপে দেওয়া সেই কুয়াশার মধ্য থেকে হঠাৎ সাহায্যের জন্য কারও চিৎকার শোনা গেল। নোয়েল আর আইজ্যাক তড়িঘড়ি তাঁবু ছেড়ে বেরিয়ে এল। দেখা গেল ঘন কুয়াশায় ক্যাম্প খুঁজে না পেয়ে আংদাওয়া আর ফুথারকে অন্ধের মতো হাতড়ে বেড়াচ্ছে বাইরে! কোজি আর শ্যাজের সঙ্গে ওরা চার নম্বর ক্যাম্পে গিয়েছিল। সেখানে এখন একটাই তাঁবু আছে, আরেকটা আমরা পাঁচ নম্বরে নিয়ে এসেছি। কোজি আর শ্যাজ তাই বাধ্য হয়েই শেরপাদের নিচে পাঠিয়ে দিয়েছে।
রেবুফত আর টেরের দলের আজ তিন নম্বর ক্যাম্পে পৌঁছনোর কথা, আগামীকাল সেখানকার যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্প তুলে দিয়ে ওরা চার নম্বরে উঠে আসবে। পরশু দু’নম্বর ক্যাম্পে যারা আছে তারা ওপরে উঠে ফের তিন নম্বর শিবির স্থাপন করবে।
কিন্তু পরিকল্পনামাফিক পরের দিনের জন্য অপেক্ষা না করে সেদিন সন্ধেবেলাই রেবুফত আর টেরে চার নম্বর ক্যাম্পে এসে উপস্থিত হল। হৈচৈ পড়ে গেল ক্যাম্পে। সবাই এক্কেবারে চাঙ্গা। টেরে নিজেই অবাক হয়ে ভাবছিল, হিমালয় অভিযানে কখন যে শরীর কেমন আচরণ করবে বোঝা ভারী মুশকিল। মাত্র চারদিন আগে সে আর রেবুফত অত্যন্ত কষ্টেসৃষ্টে, রাস্তায় সাত ঘন্টা ধরে রগড়ে, প্রায় হামাগুড়ি দিতে দিতে তিন নম্বর থেকে চার নম্বর ক্যাম্পে উঠেছিল। আর আজ ওরা যা করল, হিমালয় অভিযানের ইতিহাসে তার তুলনা মেলা ভার! ভোর ছ’টায় দু’নম্বর শিবির থেকে রওনা দিয়ে বেলা এগারোটার মধ্যেই ওরা তিন নম্বরে পৌঁছে গেছিল, তারপর তিন নম্বর ক্যাম্প তুলে দিয়ে সেখানে যা যা ছিল সমস্ত বয়ে নিয়ে চার নম্বরে এসে উপস্থিত হয়েছে! দলের মাত্র চারজন মিলে দু-দুটো তাঁবুসহ দুটো হাই অল্টিচিউড ইউনিট এবং বাইশ পাউন্ড খাবারদাবার বয়ে চার নম্বরে তুলে এনে পুরো একদিন বাঁচিয়ে দিয়েছে। যাক, তাহলে শেষ পর্যন্ত ল্যাচেনালের মতো রেবুফত আর টেরেও ঠিক সময়েই তাদের সেরা ফর্ম ফিরে পেল!
টেরে আর রেবুফত চার নম্বর ক্যাম্পে উঠে আসায় সবচেয়ে খুশি যদি কেউ হয়ে থাকে তা হল শ্যাজ আর কোজি। নইলে যে পরদিন সকালে ওদের দু’জনকে পুরো চার নম্বর শিবির ঘাড়ে তুলে পাঁচ নম্বরে উঠতে হত! ভাবতেই ওদের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছিল। যাই হোক, রেবুফত আর টেরের দলের এই অভাবনীয় কীর্তি সবাইকে মানসিকভাবে চনমনে করে তুলল। শারীরিকভাবেও সবাই ফিট এখন। কিছুটা অডটের প্রেসক্রিপশনমত অ্যাসপিরিন, ঘুমের বড়ি এবং অন্যান্য ওষুধের দৌলতে, আর বাকিটা প্রশান্ত এবং নিশ্চিন্ত মানসিক অবস্থার কল্যাণে, চার নম্বর শিবিরে সে রাত্রে ওরা দুর্দান্ত ঘুমোল।
ব্যবহৃত ছবিঃ অন্নপূর্ণা অভিযান (এরপর আগামী সংখ্যায়)
তাপসদা,অসাধারণ হয়েছে।বইটা বেরোনোর আগেই আমি প্রিবুক করলাম।পর্বতারোহণ কোর্স করার সময় কত বিদেশী আমায় বললো যে হিমালয় তোমাদের দেশে,অভিযান বড় কম হয় না,কিন্তু এক্সপিডিশন নিয়ে লেখে না কেন কেউ?লগবুক ব্যাপারটা আমাদের পর্বতারোহীদের মধ্যে কতটা প্রকট?জানিনা। তোমার হাতে আরও অনেক এক্সপেডিশন সাহিত্য সামনে আসুক,এই আশাতেই রইলাম।
LikeLiked by 1 person
অনেক ধন্যবাদ সুদীপ।
LikeLike