রোমাঞ্চকর এই উপন্যাসের প্রিকোয়েল এইখানেঃ যমধারার জঙ্গলে
এক
ইনবক্সে ক্লিক করতেই চমকে উঠলাম। অয়নদার মেসেজ! কী করে সম্ভব এটা? অয়নদা তো মাসতিনেক আগেই হারিয়ে গিয়েছে! যমধারার জঙ্গলে আমরাই তো সেই হারানোর সাক্ষী। বা আমরাই দায়ী। পিসিমণি তো তাই মনে করে। বুকটা একটু দুরুদুরু করছিল। ভয়ে ভয়েই অয়নদার মেসেজ বক্সে ক্লিক করলাম। ইনবক্সে লেখা, ‘ফ্লাই ক্যাচারের বিজ্ঞানসম্মত নাম জানিস?’
এ তো অয়নদা ছাড়া অন্য কেউ হতেই পারে না! সেই বৈশিষ্ট্য। পক্ষীবিশারদ এই পিসতুতো দাদাটি কিছুতেই কোনও পাখির চেনা নাম বলতে চায় না। জিজ্ঞাসা করলে খটোমটো একটা বৈজ্ঞানিক নাম বলে মুখটা গম্ভীর করে অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখে। নয়তো আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসে।
দুই সহোদর বাড়িতে নেই। ফোন করলাম শুভকে। শুভ জানাল, ও বড়গাছিয়ায় জেরক্স করাতে গিয়েছে। এখন অনলাইন হতে পারবে না। ইন্দ্রকে ফোনে ধরলাম। ও বলল, ‘দাঁড়াও, দেখে বলছি।’
কিছুক্ষণ পরেই ইন্দ্রর ফোন। ওর ইনবক্সেও অয়নদার হেঁয়ালি ভরা মেসেজ। জানতে চেয়েছে, পার্পল সানবার্ড নামে কোনও পাখি ইন্দ্র চেনে কি না? ইন্দ্রও ভীষণ অবাক। অয়নদার হেঁয়ালির উত্তর দেওয়া যায় এখনই। গুগলে সার্চ করলেই এক নিমেষে বেরিয়ে আসবে উত্তর। কিন্তু হেঁয়ালি নয়, আমরা চিন্তিত মেসেজগুলোর উৎস নিয়ে। তাহলে কি অয়নদা হারায়নি? বা হারিয়ে গেলেও আবার ফিরে এসেছে? লুকিয়ে থেকে আমাদের সঙ্গে মজা করছে? দলের সকলকে ফোন করে দিলাম, ‘বিকেলে নবারুণ মাঠে চলে আয়।’
মাঠেই পরিষ্কার হয়ে গেল ব্যাপারটা। ওটা অয়নদাই। আমরা দলে আটজন। তাদের মধ্যে চারজনের ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট আছে। চারজনকেই অয়নদা ইনবক্স করেছে। সবই পাখিসংক্রান্ত জিজ্ঞাসা। তার মানে অয়নদা ফিরে এসেছে। বাড়িতে বসে আমাদের সঙ্গে মজা করছে। ঠিক হল, এরকমই বিকেলে খেলতে বেরিয়ে আমি, শুভ আর দীপু টুক করে একবার পিসির বাড়ি ঘুরে আসব। ট্রেনে বেশিক্ষণ লাগে না। পাতিহাল থেকে কোনা গোটা সাতেক স্টেশন। সন্ধের আগেই বাড়ি ফেরা যাবে। মা কিছুই বুঝতে পারবে না। অনুমতি নিতে গেলে মা আর যেতেই দেবে না।
পরদিন গেলাম অয়নদাদের বাড়ি। পিসিমণি আমাদের তিনজনকে দেখে মোটেও খুশি হয়নি। মুখ দেখে সেটা টের পাওয়া যাচ্ছে বেশ। তার মানে এখনও পিসিমণি মনে করে, অয়নদা হারিয়ে যাওয়ার জন্য আমরাই দায়ী। কী আর করা! এটাই হয়। খবরের কাগজে তো পড়ি, ঘুরতে গিয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে দুর্ঘটনায় কোনও বন্ধু মারা গেলে বাকিদের কী দুর্দশা হয়। মৃত বন্ধুর বাবা-মা খুনের মামলা দায়ের করে চোখের জলে নাকের জলে করে ছাড়েন বাকিদের। কোনও বন্ধু স্বেচ্ছায় বাড়ি ছাড়লেও বিপদ। কাছের বন্ধুদের বিরুদ্ধেই অপহরণের মামলা। পিসিমণি তো সেখানে শুধু মুখটা গোমড়া করে আছে। আমাদের বাড়ির সঙ্গে অবশ্য সম্পর্কের পাট চুকিয়ে দিয়েছে। সেটাই স্বাভাবিক। জঙ্গল থেকে হারিয়ে যাওয়া ছেলের তিনমাস খোঁজ না মিললে খারাপ কিছুই ধরে নেয় বাবা-মা। পিসিমণির ব্যবহারে মন খারাপ হয়নি আমাদের।
তবে আমাদের উত্তর পাওয়া হয়ে গিয়েছিল। অয়নদা ফেরেনি। ফিরলে পিসিমণি সেই উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারত না। আমরা ফিরে এলাম।
বাকিরা আমাদের বাড়িতে অপেক্ষা করছিল। অয়নদা ফেরেনি শুনে মনমরা হয়ে গেল সকলে। ব্যাপারটি কী ঘটছে, ভাবছি। কৃষ্ণ বলল, “ফেসবুকে লগ ইন করে দেখ না, আর কোনও মেসেজ এসেছি কি না?”
ফেসবুক খুললাম। ইনবক্সে দুটো মেসেজ। একটা অয়নদার। ওর মেসেজ পড়ে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলাম। তারপর তাকালাম সঙ্গীদের দিকে। ওদের মধ্যেই কি কেউ ষড়যন্ত্রে যুক্ত আছে? না হলে অয়নদা বা অয়নদার হয়ে মেসেজ করা কেউ জানল কী করে, আমরা ওর বাড়ি গিয়েছিলাম?
আমার মুখ-চোখ দেখে বাকিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। সকলে ‘কী হয়েছে, কী হয়েছে’ বলতে বলতে কম্পিউটারের দিকে এগিয়ে আসছিল। কিন্তু আমি টুক করে পেজটা মিনিমাইজ করে দিলাম। একটু পরীক্ষা করে নেওয়া যাক। ওদের বললাম, “তোরা এক এক করে ফেসবুক লগ ইন কর। দেখা যাক অয়নদা তোদের কী বার্তা পাঠিয়েছে।”
যাদের ফেসবুকে প্রোফাইল আছে তারা তাই করল। মেসেজ পড়ে আমারই দশা হল ওদের। সকলের ইনবক্সে একই মেসেজ, ‘কী রে, আমাদের বাড়ি গেলি?’ লেখার শেষে শয়তানি হাসি মার্কা একটা ইমোজি। বোঝাই যাচ্ছে, একটা মেসেজই কপি-পেস্ট করা হয়েছে সকলের ইনবক্সে।
এবার তাহলে কী করণীয়? ভাবছি। হঠাৎ মনে হল, কৃষ্ণ উঠে এসে ওর ফেসবুক লগ ইন করেনি। ওকে জিজ্ঞাসা করলাম। ফোনে কীসব খুটখাট করতে করতেই কৃষ্ণ জানাল, ও নাকি ওর ফোনেই দেখে নিয়েছে। ওকেও একই মেসেজ দিয়েছে অয়নদা। আমরা সকলে কৃষ্ণের মুখের দিকেই তাকিয়েছিলাম। ও ফোন থেকে মুখ না তুলেই বলল, “একবার ইনবক্স করে দেখ না, অয়নদা অনলাইনে থাকলে উত্তর দিতে পারে। সরাসরি কথা হলে ওটা অয়নদা না অন্য কেউ বোঝা যাবে।”
আমি ইনবক্সে লিখলাম, ‘তুমি কি অয়নদা? যদি হও তাহলে এত রহস্য করছ কেন? জান না, তোমাকে হারিয়ে আমরা কী কষ্টে আছি?’
কিছুক্ষণের মধ্যেই মেসেজটা যে দেখা হয়েছে সেই চিহ্ন ফুটে উঠল। তার পরক্ষণেই দেখা গেল, কেউ কিছু একটা টাইপ করছে।
ইনবক্সে মেসেজ ঢুকল। তাতে লেখা, ‘আমি কে জানতে চাও? তাহলে যমধারার জঙ্গলে আবার যাও। উত্তর আছে সেখানেই।’
দলের সকলেই আমার ঘাড়-মাথার উপর দিয়ে উঁকি মেরে চ্যাট দেখছিল। শুধু কৃষ্ণ ছাড়া। ও মোবাইলে খুটখাট করেই চলেছে। আমাদের দলে ওরই একমাত্র স্মার্টফোন আছে।
মেসেজ দেখে শুভ বলল, “তাহলে এখন উপায়? অয়নদা তো যমধারায় যেতে বলছে! কিন্তু ওখানে যাচ্ছি বললে কারও বাড়ি থেকে ছাড়বে না।”
শুভ ঠিকই বলেছে। যমধারা পর্বের পরে আমাদের সকলের বাড়িতেই কমবেশি সমস্যা তৈরি হয়েছিল। যদিও কিছুদিনের মধ্যে অভিভাবকেরা বুঝতে পেরেছিলেন, আমাদের কোনও দোষ নেই। তাছাড়া অয়নদাকে গুম করার পেছনে আমাদের কোনও স্বার্থ থাকতে পারে না, সেটা বোঝা বড়োদের পক্ষে অসম্ভব ছিল না। কিন্তু যমধারার নাম উচ্চারণ করলে ওরা আটকাবেই। উপায় বের করল ইন্দ্রই। বলল, “অয়নদাকে সমস্যার কথাটা বল।”
ইনবক্স করলাম। উত্তর এল সঙ্গে সঙ্গেই। প্রথমে একটা ভ্যাংচানো মিনিয়নসের ইমোজি। তারপরে উত্তর, ‘এটা কোনও সমস্যা! কোনও বন্ধুর নাম করে বেরিয়ে এস।’
“কী রে, কী করবি?” দলের কাছে জানতে চাইলাম।
বাবলা কিছু একটা বলতে চাইছিল। তার আগেই দীপু বলে উঠল, “একটা জিনিস খেয়াল করেছ? অয়নদা বা যেই হোক না কেন হঠাৎ তুই থেকে তুমিতে চলে গিয়েছে।”
সত্যিই তো! এটা খেয়াল করিনি তো আমরা! তার মানে কি এটা অয়নদা নয়? ওকে কেউ বা কারা আটকে রেখে ফাঁদ পাতছে আমাদের জন্য? রাজা বলল, “ফাঁদ পাতলেও আমাদের যাওয়া উচিত। অয়নদাকে আটকে রাখা হয়েছে আর আমরা ঘরে বসে থাকব? তাছাড়া ফাঁদ পাতার সম্ভাবনাই বেশি। যে ইনবক্স করছে সে কিন্তু মোবাইল থেকে নয় কম্পিউটার বা ল্যাপি থেকে ফেসবুক করছে। তার মানে ঘরে বসে নিশ্চিন্ত মনে আমাদের নিয়ে খেলা করছে। কিন্তু কেন? সেটা আমাদের জানা উচিত।”
তাহলে কী করে বাড়ি থেকে বেরনো যাবে? আমার মধ্যম সহোদর প্রস্তাব দিল, “আমরা যেমন মাঝে মাঝে ঘুরতে বেরোই সেইরকম বেরিয়ে সোজা বাঁকুড়া চলে যাব।”
আমার মধ্যম সহোদরটি মুখ খুললেই আমরা মজা পাই। এমন অবাস্তব সব তত্ত্ব-যুক্তি খাড়া করে যে তা নিয়ে মাসখানেকের জন্য অনাবিল মজার রসদ মেলে। ধেপুর প্রস্তাবে রে রে করে উঠল শুভ, “তোমার বিরাট বুদ্ধি! আটজনের বাড়ির লোককে চিন্তায় ফেলে রহস্য উদ্ধারে যাবে। উলুবেড়িয়া টপকাতে পারবে? বাড়ির লোক পুলিশে খবর দেবে। চ্যানেলগুলো সারাক্ষণ আমাদের ছবিসহ সেসব ব্রেকিং নিউজ করে দেখাবে। আর সাঁতরাগাছি বা উলুবেড়িয়ায় পুলিশ আমাদের ট্রেন থেকে ঘাড় ধরে নামিয়ে নেবে।”
ঝাড় খেয়ে ধেপু চুপ করে গেল। কিন্তু বাড়িতে বলে বেরনোর উপায় কী? দীপু বলল, “কচি আর ঋতুর বাড়ি যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে পড়তে পারি। বলব, ওদের দু’জনের পরপর জন্মদিন।”
কচি আর ঋতু দীপুর বন্ধু। কচির ভাল নাম শুভ। কিন্তু দলে একটা শুভ থাকায় ওকে আমরা কচি বলে ডাকি। ওর বাড়ি সোনারপুর আর ঋতুর বাড়ি বহরমপুর। দু’চারদিন সময় লাগবে বাড়ি ফিরতে। আমি বললাম, “অয়নদার ঘটনার মাসতিনেকের মধ্যে আবার একসঙ্গে বেরোতে গেলে বাড়ির লোকের সন্দেহ হতে পারে। তুই ওদের ফোন করে সতর্ক করে দে। বাড়ি থেকে ফোন করলে ওরা যেন বলে ওদের জন্মদিনে আমাদের সবাইকে নেমন্তন্ন করেছে।”
“আমরা বেরিয়ে যাওয়ার পরেও তো বাড়ির লোক ফোন করতে পারে!”
ইন্দ্রর সংশয়ে আমি বললাম, “সে করতেই পারে। কিন্তু আমরা সেই সুযোগ দেব না। সবাই নিয়মিত ব্যবধানে পরপর যে যার বাড়িতে ফোন করব। তাতে বাড়ির লোক নিশ্চিন্ত থাকবে। অন্য কোনও সন্দেহ করবে না। কিন্তু তার আগে কবে আমাদের যেতে হবে সেটা জেনে নিতে হবে।”
আমি ইনবক্স করলাম, ‘আমাদের কবে যেতে হবে?’ উত্তর এল, ‘পরশুদিন। আর একটা কথা, পুলিশে খবর দিয়ে লাভ নেই। তাহলে রহস্যের সব সমাধান আবার যমধারার জঙ্গলে হারিয়ে যাবে।’
পুলিশে খবর দেওয়ার কথাটা মাথাতেই আসেনি। অয়নদাকে ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনাতেই খুশি ছিলাম আমরা। উত্তরটা দেখে নিয়ে দীপুকে বললাম, “কচি আর ঋতুকে ফোন করে দে।”
দুই
ট্রেন সাঁতরাগাছি ছেড়েছে কিছুক্ষণ আগে। হেলেদুলে এগোচ্ছে। মাথার উপরে একটা রেলসেতু। হাওড়া-আমতা লাইন। আমাদের বাড়ি যাওয়ার রাস্তা। আগেরবারে বাঁকুড়া যাওয়ার সময়ে আমরা প্রচুর আনন্দ করেছিলাম। কিন্তু এবার চুপচাপ সকলেই। কী হচ্ছে আর কী হতে চলেছে কিছুই বুঝতে পারছি না। শুধু এটুকু বলতে পারি, ঝুঁকিটা অনেকখানি নিয়ে নিয়েছি আমরা। আগেরবারে সঙ্গে অয়নদা ছিল। সে আমাদের বড়ো। এবারের দলে সবচেয়ে বড়ো আমি। পুরো দলের সব দায় আমার। চাপটা বুঝতে পারছি।
ইন্দ্র কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। ট্রেনে সক্কাল সক্কাল ঝালমুড়ি উঠেছে। আগেই দেখেছি, ও বারবার আড়চোখে সেদিকে তাকাচ্ছে। শুভও একফাঁকে দেখে নিয়ে মুখ নিচু করে বসে আছে। গম্ভীর পরিবেশ দেখে নিজে থেকে কিছু বলছে না। ইন্দ্র বোধহয় থাকতে পারছিল না। কিন্তু ওর বলার আগেই কৃষ্ণ উত্তেজিত হয়ে বলল, “ইনবক্স, ইনবক্স।”
ও ফোনটা আমার হাতে দিল। অয়নদার ইনবক্স, ‘ট্রেন ছাড়ল? তোমার ফোনে নেট প্যাক ভরা আছে তো? নাকি এবার এস.এম.এস.-এ কথাবার্তা হবে?’ এই বার্তা কৃষ্ণের জন্য। কারণ, আমাদের বাকি তিনটি ফোনে ফেসবুক খোলা যায় না। নেটের ব্যবস্থা নেই। লোকটি অয়নদা বা যেই হোক, আমাদের সম্পর্কে সবই জানে দেখছি।
কৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করলাম, “কী রে, নেট প্যাক আছে তো?”
ও বলল, “দু’দিন চলে যাবে।”
সেটা ওই রহস্যময়কে জানিয়ে দিতে বললাম। তারপর ঝালমুড়ি ডাকলাম। ইন্দ্র আর শুভর অবস্থা খুব খারাপ।
ট্রেনে আর কিছু ঘটেনি। কোনও বার্তাও আসেনি। ঝালমুড়ি খেয়ে ইন্দ্র আর শুভ ঘুমিয়ে পড়েছিল। জানলার ধারে বসে বাবলা আর ধেপু গল্প করছিল। দীপু, রাজা চুপ করে বসে আছে। দলে ওরাই সবচেয়ে ছোটো। হয়তো মনে মনে টেনশন করছে। কৃষ্ণ মোবাইল রেখে শান্ত হয়েছে। আর আমি আগাগোড়া ভেবে চলেছি। এতগুলো ছেলে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ঠিক করলাম?
বাঁকুড়া স্টেশনে নেমে বুঝতে পারছিলাম প্রকৃতির প্রবল টানাটানি। ওদের বসতে বলে আমি এগিয়ে গেলাম শৌচালয়ের দিকে। দেখি, পেছন পেছন প্রায় পুরো পল্টন চলেছে। স্টেশনের বেঞ্চে বসে আছে শুধু রাজা, বাবলা আর কৃষ্ণ। মিনিট পনেরো পরে ফিরে এসে দেখি, বাবলা আর রাজা ঝিমোচ্ছে। কৃষ্ণর টিকির দেখা নেই। ব্যাগপত্তর পায়ের কাছে জড়ো করা। কেউ নিয়ে গেলে কিছু করার নেই। শুভ ওদের ভয় দেখানোর জন্য একটা ব্যাগ আস্তে করে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করতেই বাবলা মাথা তুলল। ওকে গোল করে ঘিরে আছি দেখে কৈফিয়ৎ দেওয়ার সুরে বলল, “ঘুমোইনি। চোখ বুজে বসেছিলুম।”
দীপু ব্যঙ্গ করে বলল, “তা তো দেখতেই পেলুম।”
কৃষ্ণ কোথায় জানতে চাইলাম আমি। ততক্ষণে রাজাও চোখ মেলেছে। ও বলল, “পরোপকার করতে গিয়েছে।”
“মানে?”
রাজা জানাল, “একজন এসে একটু সাহায্য করার কথা বলল। কৃষ্ণদা তার সঙ্গে গেল।”
“কতক্ষণ আগে?”
“তোরা যাওয়ার দু’তিন মিনিটের মধ্যেই।”
আমি বললাম, “এতক্ষণ পরোপকার করে পুণ্যফল ভোগও নিশ্চয় হয়ে গিয়েছে। ওকে ফোন করে ডেকে নে। অনেকটা পথ কিন্তু এখনও।”
আমি আমার ব্যাগটা কাঁধে তুলে নিলাম। অন্যেরাও যে যার ব্যাগের দখল নিচ্ছিল। তখনই ইন্দ্র বলল, “ফোন সুইচড অফ বলছে।”
শুনেই রাগ হল আমার। নিশ্চয়ই ফোনের চার্জ শেষ। সারাক্ষণ ফোনের পেছনে পড়ে থাকলে এরকমই হয়। দেরি হয়ে যাচ্ছে। দীপু, শুভ আর বাবলাকে প্ল্যাটফর্মের এদিক ওদিক ঘুরে আসতে বললাম। ইন্দ্র ফোনে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পরে ওরা ফিরে এল। কৃষ্ণর দেখা নেই। আমাদের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ পড়তে শুরু করেছে। ঠিক তখনই আমার ফোনে একটা এস.এম.এস. এল। অজানা নম্বর। তাতে লেখা, ‘কৃষ্ণ আমাদের কাছে আছে। চিন্তা নেই। যাই ঘটুক না কেন, তোমরা যাতে বাঁকুড়া ছেড়ে পালাতে না পার সেই ব্যবস্থাটা করে রাখলাম।’
তার মানে তো অপহরণ। বাঁকুড়ায় পা দিতে না দিতেই একজন উবে গেল! শুভ বলল, “বড়দা, একটা জিনিস ভেবে দেখ। এই দিনেরবেলা লোক গিজগিজ করা স্টেশন থেকে অপহরণ করা কি সোজা কথা?”
চুপ করে রইলাম। শুভর কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু কৃষ্ণ নেই, ওর ফোন বন্ধ আর এস.এম.এস.-এর বক্তব্য মেলালে তো অসম্ভব বলে মনে হয় না। ওকে বললাম, “কী হতে পারে, কী হওয়া সম্ভব সেটা ভেবে আর লাভ নেই। কৃষ্ণ যে আমাদের সঙ্গে নেই সেটা তো সত্যি।”
ধেপু হঠাৎ বলল, “দাদা, ধর যে লোকটা সাহায্য করার জন্য ডেকে নিয়ে গিয়েছিল সে হয়তো স্টেশন ওয়াগান টাইপের কোনও গাড়িতে কিছু তুলে দিতে বলেছিল। কৃষ্ণ যেই উঠেছে ওমনি নাকে ক্লোরোফর্ম দেওয়া রুমাল চেপে ধরেছে।”
আমার মধ্যম সহোদরটি একসময় গোয়েন্দা স্বপনকুমারের ভক্ত ছিল। ও সেই পঠিত বিদ্যা প্রয়োগ করছে। আমি মুখে আঙুল দিয়ে ওকে চুপ করার ইশারা করলাম।
কিন্তু এখন কী কর্তব্য? দীপু কী একটা বলতে যাচ্ছিল আমার মোবাইলটা টুং করে বেজে উঠল। আবার এস.এম.এস.। এবার স্পষ্ট নির্দেশ, ‘স্টেশনে বসে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। গন্তব্যের দিকে রওনা দাও। আর হ্যাঁ, পুলিশে না যাওয়ার কথাটা নিশ্চয় মনে করিয়ে দিতে হবে না?’ বুঝতে পারলাম, বাঁকুড়ায় পা দিয়ে আমরা অন্য কারও ফাঁদে পা দিয়ে দিয়েছি।
নির্দেশিত গন্তব্য বলতে তো যমধারার জঙ্গল। আরণ্যক গেস্ট হাউস।
তিন
আরণ্যক গেস্ট হাউসের ম্যানেজার তাপসদা দেখলাম আমাদের মনে রেখেছেন। জিজ্ঞাসা করলেন, “কিছু খবর আছে নাকি দাদা? আবার এলেন?”
তাপসদার প্রশ্ন শুনে সবাই এ ওর মুখের দিকে তাকাতে শুরু করল। আমি তাড়াতাড়ি বললাম, “না না, দাদার জন্য মন খারাপ লাগছিল। তাই আবার এলাম। পুলিশ তো হাল ছেড়ে দিয়েছে। আমরা একবার দেখি।”
ঘর ফাঁকাই ছিল। ডর্মিটরিটা নিলাম।
এলাকাটা খুব সুন্দর। কাছে পাহাড়। গেস্ট হাউসের কাছে জঙ্গল। কাছাকাছি সুন্দর গ্রাম। প্রবল প্রকৃতির মধ্যে থেকেও তা দেখার মন নেই আমাদের। মনের মধ্যে চাপা উত্তেজনা নিয়ে প্রকৃতির রূপ উপভোগ করা যায় না। মনটা যে মোবাইলে পড়ে আছে! ঘন ঘন মোবাইল দেখছি, সেই অদ্ভুত লোকটা বা অয়নদার কোনও নির্দেশ এল কি না। কাজ না থাকলে যা হয়। তার আগে যে যার বাড়িতে ফোন করে দিয়েছি। কৃষ্ণর বাড়িতে ইন্দ্র ফোন করেছে। বলেছে, আমরা পৌঁছে গিয়েছি। কৃষ্ণ আর সহ্য করতে পারছিল না। এসেই বাথরুমে ছুটেছে। বাড়ির লোক চিন্তা করবে বলে ও ফোনটা করে দিল।
খাওয়াদাওয়ার পরে শুয়ে শুয়ে ঘুম পেয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ ‘লেগেছে লেগেছে’ চিৎকারে ধড়মড় করে উঠে বসলাম। ঘুম চোখে দেখলাম ইন্দ্র ওর ফোনটা আমার দিকে এগিয়ে দিচ্ছে। ফোনটা কানে দিতে শুনি, একটা যান্ত্রিক স্বর। কেউ ফোন কেটে দিলে এই কথাগুলো সিস্টেম থেকে জানানো হয়। ইন্দ্রকে ফোনটা দিয়ে বললাম, “লেগেছিল হয়ত। কিন্তু বুঝতে পেরে কেটে দিয়েছে। কিন্তু কার ফোন লেগেছিল?”
ইন্দ্র বলল, “কৃষ্ণর ফোন।”
যাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে তার ফোন খোলা! সঙ্গে সঙ্গে ইন্দ্র উত্তর দিল, “আর খোলা নেই।”
“ব্যাপারটা কী হচ্ছে?”
“সম্ভবত কৃষ্ণ কিডন্যাপারদের নজর এড়িয়ে ফোনটা হাতে পেয়েছিল। কিন্তু ওদের চোখে পড়ে যাওয়ায় ফোনটা আবার কেড়ে নিয়ে সুইচ অফ করে দিয়েছে।” ধেপুর মতো দীপুরও গোয়েন্দা গল্প পড়ার পোকা নড়ে উঠেছে।
আমি কিছু বলার আগেই বাবলা বলে উঠল, “তাই যদি হত তাহলে তো কৃষ্ণ আগে ফোন করত। কিন্তু ফোন তো ইন্দ্রদা চেষ্টা করতে করতে লেগেছে।”
কথার যুক্তি আছে। সকলেই চুপ করে গেলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই আধা চিৎকার করে উঠল ধেপু। কোনও কিছু মাথায় এলে ও উত্তেজিত হয়ে পড়ে। ধেপু উত্তেজিত স্বরে বলল, “বুঝতে পেরেছি। কৃষ্ণকে কেন কিডন্যাপ করেছে জানিস? ওর ফোনে তো নেট আছে। যে নম্বর থেকে এস.এম.এস. আসছে ট্রু কলারে সার্চ করলেই তো সেটা কার নামে নেওয়া হয়েছে জেনে যেত। তাই ওকে আগে সরিয়ে দিয়েছে।”
শুভ ধেপুকে বলল, “মেজদা, মাথা ঠান্ডা কর। কৃষ্ণকে যদি কিডন্যাপ না করত তাহলে তো ওই রহস্যময় নম্বরের মেসেজ করার দরকারই হত না। ফেসবুকে যোগাযোগ করত।”
ধেপু চুপ করে যায়। আমার হঠাৎ মনে পড়ে, অয়নদা যে লোকটার কীর্তি দেখাতে আমাদের যমধারায় এনেছিল তার বাড়ি তো কাছাকাছি গ্রামে। কী যেন নাম গ্রামটার? চন্দনপিঁড়ি। এখন তো ফোনে কোনও নির্দেশ আসছে না। ওই গ্রামে একবার খোঁজ নিলে হয় না? লোকটা যদি ফেরে? বা ওর বাড়ির লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করে? তাহলে অন্তত বোঝা যাবে, আমাদের নাচানো লোকটা অয়নদা না অন্য কেউ। তাছাড়া বিকেল হয়ে এসেছে। খোঁজখবর নিয়ে ফেরার সময়ে সামনের বাজার থেকে খেয়ে ফিরব।
বাজারের কাছে এসে একবার থমকাতে হল। চন্দনপিঁড়ি গ্রামটা কোনদিকে যেন? একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম। হাঁটা শুরু করেছি। হঠাৎ ইন্দ্র বলল, “তোমরা যাও। আমি এই বাজারটায় মিশে থেকে নজর রাখি।”
এত টেনশনের মধ্যেও আমার হাসি পেল। সকলেই যে যার মতো মাথা খাটাচ্ছে। আর বেশিরভাগ পদক্ষেপই কোনও গোয়েন্দা গল্প বা থ্রিলার সিনেমার অনুকরণ। মুখে বললাম, “তুই এখানে মিশতে পারবি না। চারদিকটা দেখ। তোর সাজপোশাক, তোর কথা, হাঁটা সবই তোকে আলাদা করে রেখেছে। এখন ঘুরতে আসা লোকের ভিড় নেই। সহজেই নজরে পড়ে যাবি।”
ও তবুও নাছোড়। বলল, “তুমি ঠিকই বলেছ। যে বা যারা আমাদের সঙ্গে ধরাধরি খেলছে তারাও নিশ্চয় এখানকার লোক নয়। তোমরা গ্রামের দিকে গেলে। তারপর ওরা যদি পিছু নেয় আমি আড়াল থেকে ঠিক বুঝতে পারব।”
আমাদের দলের অলিখিত নিয়ম, অনিচ্ছুক ঘোড়াকে রেসের মাঠে না নামানো। তাতে অপদস্থ হওয়ার সম্ভাবনা। ওকে রেখেই আমরা এগিয়ে গেলাম।
চন্দনপিঁড়ি আসলে একধরনের পাথর। এখানে পাথরের কাজ বিখ্যাত। ওই গ্রামের বহু লোক পাথরের কাজ করেন। সেই জন্যই বোধহয় গ্রামের এমন নাম। বেশি দূর নয়। মিনিট দশেক হেঁটেই পৌঁছে গেলাম গ্রামে। ওই ভদ্রলোকের কী যেন নাম? এলকট মুঁড়া। একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, “এলকট মুঁড়ার ঘরটা কোনদিকে?”
লোকটা থমকে দাঁড়ালেন। আমাদের ছ’জনকে ভালো করে দেখলেন। তারপর হাত তুলে অপেক্ষা করার ইশারা করে হন্তদন্ত হয়ে চলে গেলেন। আমরা দাঁড়িয়ে আছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই একদল উত্তেজিত লোক আমাদের ঘিরে ধরলেন। কী বক্তব্য? একজন মাতব্বর গোছের বলল, “আবার আসেচু? আমাদের একটা লোককে হারায়ে দিয়েও সুক হয় নাই? আজ তুদের ছাড়বেক লাই৷ আগুয়ে যা।”
বিপদের আঁচ পেয়েই আমার সঙ্গীরা একে অপরের সঙ্গে পিঠ লাগিয়ে মারমুখী ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে পড়েছে। কোনও সিনেমায় দেখা ভঙ্গি। প্রায় গোটা একটা পাড়ার লোকের বিরুদ্ধে লড়ে জেতাটা সিনেমায় সম্ভব। বাস্তবটা বেশ কঠিন। সেটা মুহূর্তেই টের পেলাম। আমাদের রণং দেহি ভাব দেখে লোকগুলো যেন আরও ক্ষেপে গেল। ঝাঁপিয়ে পড়ল আমাদের উপরে। সঙ্গীদের তৈরি করা গোলচক্কর মার্কা চক্রব্যুহে ঢুকে পড়লেন একাধিক অভিমন্যু। একজন পাঞ্জা কষিয়ে ধরলেন আমার কাঁধটা। বুঝতে পারলাম, আমার বোরোলিনের শরীরে এঁর একটা থাবড়াতেই গালের একপাশের অনেকগুলো দাঁত ঝরে যাবে। লোকটাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম, “আপনাদের লোকের সঙ্গে আমাদের দাদাও হারিয়েছে। ওকে খুঁজতেই এসেছি।”
কিন্তু লোকটার একটাই কথা, আমাদের দাদার জন্যই ওদের লোকটা হারিয়েছে। বাবলা বোধহয় রেগে হাত চালিয়েছিল। ওর জামাটা ফড়ফড় করে ছেঁড়ার আওয়াজ পেলাম। তারপর ঠাস করে একটা চড়। ধেপু চেঁচাচ্ছে। রাজা আমার মতোই বোঝানোর চেষ্টা করছে। দীপু আর শুভর সঙ্গে প্রবল ধস্তাধস্তি হচ্ছে। আমার চোখে জল। ওদের কষ্টে নয়। অবুঝ লোকটা আমার কোনও কথাই শুনতে রাজি হল না। পেটে গুপ করে ঘুষি মেরে দিল। খুব লেগেছে। আমি ধপ করে পড়ে গেলাম।
আর কয়েক ঘা খেলে বোধহয় ট্রেনের ভেন্ডারে শুয়ে শুয়ে ফিরতে হত। হঠাৎ কোথা থেকে দেবদূতের মতো একটা পুলিশের জিপ এসে পড়ল। চটপট তিন-চারজন পুলিশ আর সিভিক ভলান্টিয়ার জিপ থেকে লাফিয়ে পড়ে আমাদের উদ্ধার করলেন। তারপর আমাদের জিপে ঠুসে দিয়ে এলাকা ছাড়লেন। কে বলে সবকিছু মিটে যাওয়ার পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়!
বাজারের কাছে জিপ থেকে আমাদের নামিয়ে দিলেন অফিসার। সমঝে দিলেন, আমরা যেন বেপাড়ায় গিয়ে আর মাতব্বরি না করি। কেন আমরা সেখানে গিয়েছিলাম আর কেন মারামারি লেগেছিল, অফিসার সেসব জিজ্ঞসা না করায় আমরাও চুপ করে ছিলাম।
গেস্ট হাউসের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। কিছুটা এগিয়েছি, ছুটতে ছুটতে ইন্দ্র এল। মার খেয়ে ওর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। ছেলেটা এতক্ষণ ছিল কোথায়? ও নিজেই তার উত্তর দিল, “তোমরা তো চলে গেলে। আমি যেখানে ঠেলাগাড়িতে চিংড়ির চপ বিক্রি হচ্ছে সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চারদিকে নজর রাখছি। অনেকক্ষণ পরে দেখলাম একটা পুলিশের জিপ গেল। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার খিদে পেয়ে গিয়েছিল। চিংড়ির চপ কিনে খাচ্ছিলাম। তখনই দেখি জিপটা ফিরে এল। তোমরা নামলে। আমি তো লুকিয়ে পড়েছিলাম।”
ওর কথাতেই স্পষ্ট হয়ে গেল, ও কেন আমাদের সঙ্গে যায়নি। চিংড়ির চপ খাবে বলে। বাকিদেরও খিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই? দুপুরের পরে মার ছাড়া তো আর কিছু খাইনি!
ওদের গেস্টহাউসে ফিরতে বলে আমি আবার বাজারে ফিরে গেলাম।
রাতে খাওয়াদাওয়ার পরে মেসেজ এল। রীতিমতো ধমক দিয়ে লেখা, ‘পাকামিটা একটু কম করলেই ভালো। সাতজন একসঙ্গে হয়েছ মানেই ফেমাস ফাইভ বা পঞ্চপাণ্ডবের মতো রহস্য সমাধান করে ফেলবে? মেরে সাতজনকে অষ্টাবক্র করে দেয়নি সৌভাগ্য। কাল সাড়ে দশটা থেকে এগারোটার সময়ে যমধারার জঙ্গলে চলে যেও। সব জেনে যাবে।’
চার
ঘুম থেকে উঠতে একটু বেলাই হয়ে গেল। বেরোতে হবে। সকলকে তৈরি হয়ে নিতে বললাম। দীপু বলল, “দেখ বড়দা, ইন্দ্রদা ঠিক এইসময়েই চা খেতে বেরিয়ে গেছে। ওর কিছুতেই তর সয় না।”
আমি বললাম, “তোরা তৈরি হয়ে নে। ও এলেই বেরিয়ে পড়ব।”
সকলে তৈরি অনেকক্ষণ। কিন্তু ইন্দ্রর আর দেখা নেই। এবার রাগ হচ্ছিল। ছেলেটার খিদে সহ্য হয় না কিছুতেই। ফোনে ধরার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ফোন বন্ধ। চার্জে বসানো আছে? সকলে খুঁজল। না, ফোন নিয়েই বেরিয়েছে। আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। আবার একজন! এবার তাহলে কি পুলিশে যাওয়া দরকার? তখনই এস.এম.এস.-টা ঢুকল, ‘কৃষ্ণ বড্ড ইন্দ্রদা ইন্দ্রদা করছিল। তাই ওকেও ডেকে নিলাম। তোমাদের যেখানে যাওয়ার কথা যাও। না হলে দু’জনকে ফেরত পাওয়া মুশকিল।’
আমি বসে পড়লাম বিছানায়। দলের সকলেই ভয়ে জড়োসড়ো। ইন্দ্রকে এতজনের মধ্যে থেকে তুলে নিয়ে গেল কী করে? সেটা সম্ভবই নয়। তাহলে? ইন্দ্র চা খেতে বেরোতেই ওকে পাকড়াও করেছে? হলেও হতে পারে। গেস্ট হাউসের আশপাশটা এখনও নির্জন। কেউ টেরটিও পাবে না। কিন্তু এখন কী করা? যাব যমধারার জঙ্গলে? যেতে বোধহয় হবেই। দলের দু’জন ওদের জিম্মায়। কথা না শুনে উপায় কী!
ধেপু যেতে চাইছিল না। রাজা ধমক দিল, “পাগল নাকি তুই? দেখছিস ভরা স্টেশন থেকে কৃষ্ণদা হাওয়া, এতগুলো লোকের মাঝখান থেকে ইন্দ্রদাকে তুলে নিল। আর তুই একা এই নির্জন গেস্ট হাউসে থাকলে তোকে আগেই তুলে নেবে।”
ধেপু বেরলো। ইচ্ছে ছিল, যমধারায় যাওয়ার আগে বাজারে গিয়ে সকালের চা-জলখাবার খেয়ে আসব। এখন আর কারও খাবার ইচ্ছেটাই নেই।
জঙ্গলের কাছে যখন পৌঁছলাম তখন প্রায় এগারোটা বাজে। দুটো গাড়ি নজরে এল। মানে আরও পর্যটক এসেছেন। আমরা এগিয়ে গেলাম। জঙ্গলে ঢোকার ঠিক আগে ধেপু বলল, “আমি এখানে আছি। তোরা যা।”
বাবলাও বলল, “আর ভালো লাগছে না। আমিও মেজদার সঙ্গে দাঁড়াচ্ছি।”
বুঝতেই পারলাম, ভয়ে আতঙ্কে ওদের পা আর চলছে না। পাহাড়ে ওঠার ধকল নিতে পারবে না। আমরা চারজন এগিয়ে গেলাম। আমি, শুভ, রাজা আর দীপু। যেতে আমাদের হবেই। যমধারায় ঢোকার আগেই এস.এম.এস.-এ নির্দেশ এসেছে, ‘চন্দ্রশর্মার শিলালিপির কাছে যাও।’
শিলালিপিটা একেবারে পাহাড়ের টঙের কাছে। এগিয়ে গেলাম।
যমধারা নামের ঝর্নার কাছে দুটো লোক দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের দিকে একবার তাকাল। পর্যটকই হবে। আমরা এগোলাম। পাহাড়ের ধাপে পা রাখতেই চোখে পড়ল, চুড়োর দিকে দুটো লোক দাঁড়িয়ে। আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। চারজনের পা-ই থমকে গেল। পুরোটাই তাহলে আমাদের কব্জা করার ছক? আমাদের টোপ দিয়ে ডেকে আনা হয়েছে। এখন আর ফেরার পথ নেই। পুরোপুরি ঘেরবন্দি। চড়াইয়ের দিকে পাহাড় টপকানো সহজ নয়। আমরা পারব না। তাছাড়া ওখানে দুটো লোক। ফিরে যাব? নীচে যমধারার কাছে দু’জন আছে। ওদের ঘায়েল যদি করতেও পারি তাহলে আবার গাড়ির কাছে বাধা পাব। গাড়িতেও তো লোক আছে দেখলাম। গাড়ির লোকেদের ঘায়েল করেও তো লাভ নেই। পাহাড়ের দু’জন ততক্ষণে নেমে আসবে। এতক্ষণ লড়ে পারব না। তাছাড়া ওদের কাছে অস্ত্র থাকলে লড়াইটা যমধারার কাছেই শেষ হয়ে যাবে। তার থেকে ওঠাই ভাল।
পাহাড়ের ধাপে চলার পথে একটা পাথরের ওপরে চকখড়ি দিয়ে লেখা ‘স্বাগত’। বাকিরাও দেখল লেখাটা। “আমাদের জন্য?” দীপু জানতে চাইল।
আমি বললাম, “জানি না।”
এখানে অবশ্য চকখড়ি দিয়ে, পাহাড় কুঁদে নানা লেখা পর্যটক বা স্থানীয় মানুষের স্বভাব। আগেরবারেও দেখেছি। এবারেও স্থানীয় ভাষায় লেখা চোখে পড়ল। আগেরবার সেসব নিয়ে সকলে কত আনন্দ করেছি। মনে পড়ছিল। একসময় শিলালিপির কাছে পৌঁছলাম। তারপর চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। নির্দেশ ছাড়া কিছু তো করার নেই। হঠাৎ টি-শার্টে টান পড়ল। পেছন ফিরে দেখি, শুভ আস্তে আস্তে টানছে। চোখাচোখি হতে ও আঙুল দিয়ে একটা পাথর দেখাল। পাথরের গায়ে বড়ো বড়ো করে চক দিয়ে লেখা, ‘যেখানে দেখিবে ছাই’।
এর মানে কী? আমি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকাতে ও দুই পর্যটকের একজনের প্যান্টের দিকে আঙুল তুলল। দেখতে পেলাম, প্যান্টের একটা পকেটে চকের দাগ। দেখে মনে হতেই পারে ওই লোকটাই এতক্ষণ চক দিয়ে পাথরে লিখছিল। আমাদের দেখতে পেয়ে চকটা পকেটে পুরেছে আর তাতেই দাগ লেগেছে। তাহলে ফাঁদে পড়লাম? প্রথমে লড়ার কথা মনে হল। তারপর ভাবলাম, দেখি না কী করে। শুভকে ইশারায় শান্ত করলাম।
কিন্তু লোকদুটো করছেটা কী? ক্যামেরায় ছবি তুলছে। একটা ফিতে নিয়ে শিলালিপি ঘিরে রাখা জালটা মাপছে। আমি সাহস করে জিজ্ঞাসা করলাম, “কী করছেন আপনারা?”
চকের দাগ বলল, “গুপ্তধন খুঁজছি।”
এই কথাটা আগেরবার ধেপু বলেছিল। বুঝতে পারলাম লোকদুটো মজা করছে আমাদের সঙ্গে। চুপ করে গেলাম। কিন্তু এবার করণীয়টা কী? আরও আধঘণ্টা দাঁড়িয়ে রইলাম। মোবাইল বের করে বারবার দেখলাম কোনও এস.এম.এস. এল কি না। তারপর আমরা নামতে শুরু করলাম। বোঝাই যাচ্ছে, ওই লোকটি বা অয়নদা আমাদের নিয়ে খেলা করছে। কিন্তু এমন খেলার মানেটা কী? কিছু তো একটা উদ্দেশ্য থাকবে!
নীচে নেমে যমধারার কাছের লোকদুটোকে দেখতে পেলাম না। জঙ্গল থেকে বেরিয়ে ধেপু-বাবলাকেও দেখতে পেলাম না। গেল কোথায়? তখনই রাজা চিৎকার করে উঠল, “বড়দা, গাড়ি, গাড়ি।”
দুটো গাড়িই তখন স্টার্ট নিয়েছে। একটা গাড়ির জানালা দিয়ে একটা হাত বেরিয়ে প্রবলভাবে নড়ছে। বোঝাই যাচ্ছে, গাড়িতে দারুণ ধস্তাধস্তি হচ্ছে। একঝলকের জন্য একটা মাথা বেরিয়ে এল জানালা দিয়ে। সঙ্গে সঙ্গেই কেউ মাথাটা চেপে গাড়ির ভেতরে ঢুকিয়ে নিল। ওটা ধেপুর মাথা। আমরা দৌড়তে শুরু করলাম। কিন্তু দারুণ গতিতে গাড়িদুটো বেরিয়ে গেল। ওই গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দেওয়া বৃথা। আমরা থামলাম। আর রাজা ধপ করে বসে পড়ল। ওর চোখ ছলছল করছে। কান্না জড়ানো গলায় বলল, “মাকে গিয়ে কী বলবি?”
মাকে গিয়ে কী বলব জানি না। ইন্দ্র, কৃষ্ণ বা বাবলার বাড়িতেই বা কী বলব? সকলের বাড়ির লোক আমার ওপরে কত ভরসা করে!
হঠাৎ শিলালিপির কাছের লোকদুটোর কথা মনে পড়ল। ওরাও নিশ্চয় একই দলের। ওদের ধরতে পারলে কিছু একটা সূত্র বেরোবে। আমরা আবার দৌড়ে জঙ্গলে ঢুকলাম। কিন্তু পাহাড়ের কাছে গিয়ে কাউকেই দেখতে পেলাম না। লোকদুটো গেল কোথায়? এদিক দিয়ে ছাড়া তো নামার রাস্তা নেই! লুকিয়ে পড়েছে? এখন আবার ওপরে উঠে খোঁজার অবস্থায় নেই আমরা। নীচে লুকিয়ে অপেক্ষা করব? ওরা যদি ওপরেই লুকিয়ে থাকে তাহলে সুবিধেজনক অবস্থানে রয়েছে। জঙ্গল না থাকলে ওখান থেকে ওরা এক বর্গকিলোমিটার এলাকায় নজরদারি চালাতে পারত। আমাদের নিশ্চয় নজর রাখছে। লুকিয়ে থেকে লাভ নেই। ফিরে যাওয়াই ভালো। গিয়ে পুলিশে খবর দিতেই হবে। আর ঝুঁকি নেওয়া যাবে না।
ফিরে আসছি, হঠাৎ রাগে ক্ষোভে শুভ পাথর ছুঁড়তে শুরু করল উপরের দিকে। দেখাদেখি দীপুও। দু’জনকে ধরে নিয়ে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এলাম।
যমধারা ছাড়িয়ে অনেকটা চলে এসেছি। একটা এস.এম.এস. ঢুকল। সেই শয়তানটা! লিখেছে, ‘তাহলে রইল বাকি চার। ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’ আমি সঙ্গে সঙ্গে ফোন করলাম ওই নম্বরে। কিন্তু ফোনটা বেজেই গেল। কেউ ধরল না।
গেস্ট হাউসে পা দিয়েই আমরা তাপসদার কাছে গেলাম। “থানাটা কোথায়?”
তাপসদা জানতে চাইলেন, “থানাপুলিশ কেন? আবার কী হল? দলের বাকিরা কোথায়?”
আমি বললাম, “কোনও সমস্যা নেই। আপনি শুধু কী করে যাব বলে দিন।”
তাপসদার ঘর থেকে বেরিয়ে আমাদের ঘরের দিকে যাচ্ছি, গেস্ট হাউসের গেটের কাছে একটা জিপ থামল। নামলেন আমাদের উদ্ধার করা সেই অফিসার আর দুই কনস্টেবল। আমরা দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম। অফিসার এসে আমাদের বললেন, “তোমাদের সকলকে একবার থানায় যেতে হবে।”
“থানায় কেন?” আমরা অবাক।
অফিসার বললেন, “কেন আবার? বেপাড়ায় দল পাকিয়ে ঢুকে গোলমাল করার জন্য।”
ঠিক তখনই তাপসদা বলল, “ওরা থানাতেই যাচ্ছিল।”
এবার অফিসার অবাক। “থানায় কেন?”
আমি বললাম, “আমাদের দলের চারজনকে কিডন্যাপ করা হয়েছে।”
শুনে অফিসার চোখ গোল্লা করে বললেন, “কিডন্যাপ! বাব্বা, বেশ তালেবরদের দল দেখছি। আবার কিডন্যাপের গল্প! চল হে, জিপে ওঠ। তোমাদের তো কাল্টিভেট করতে হচ্ছে।”
জিপে উঠে আবার অফিসার ব্যঙ্গ করতে শুরু করলেন, “তোমাদের কিডন্যাপের গল্পটা কেমন ফেঁদেছ একটু শুনি?”
আমি আদ্যোপান্ত বললাম। থামতেই এক কনস্টেবল বললেন, “স্যার, ছেলে বেশ রুস্তম হবে বড়ো হলে।”
শুনে অফিসার হাসতে হাসতে বললেন, “না হয়ে যায় না। ভরা বাঁকুড়া স্টেশনে দিনেরবেলায় কিডন্যাপের গল্প ফেঁদেছে।”
অফিসারের জিপ কাঁপানো হাসিতে যোগ দিলেন ড্রাইভার-কনস্টেবলেরাও।
চন্দনপিঁড়ি থেকে আমাদের উদ্ধারের পরে পুলিশের উপরে যেটুকু আস্থা জন্মেছিল আবার সেটা নষ্ট হয়ে গেল।
পাঁচ
থানার সামনে জিপ থামতেই লাফিয়ে নামলেন অফিসার। তারপর আমার দিকে চেয়ে বললেন, “নামতে আজ্ঞা হোক রুস্তমবাবু।”
শুনে মনে হচ্ছিল, একটা ঘুষি মেরে দিই ওঁর মুখে।
থানায় বোধহয় কোনও অনুষ্ঠান আছে। সামনের খোলা চত্বরে টেবিল-চেয়ার পাতা। এক অফিসার সেখানে ঘুরে ফিরে দেখছেন। আমরা অফিসারের পেছন পেছন অফিসে ঢুকলাম। অফিসার-ইন-চার্জ লেখা ঘরটার দিকে এগোচ্ছি, তখনই কে যেন বলে উঠল, “বড়দা, এসে গেছ?”
খুব পরিচিত স্বর। মুখে বোধহয় কিছু আছে। তাই গলাটা একটু অন্যরকম লাগল। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি ইন্দ্র। হাতে শালপাতার একটা প্লেট। সেটা মুখের কাছে নিয়ে খুব মন দিয়ে শিঙাড়ায় কামড় বসাচ্ছে। আমরা থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। ও কাছে এসে একটা শিঙাড়া এগিয়ে দিয়ে বলল, “দারুণ! খেয়ে দেখ, গরম আছে।”
ওর বলার ভঙ্গি দেখেই মেজাজ গরম হয়ে গেল। স্থান কাল ভুলে চিৎকার করে উঠলাম, “খাওয়া ছাড়া তোর মাথায় অন্যকিছু ঢোকে না?”
ইন্দ্র একটুও পাত্তা দিল না। বরং দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলল, “রেগে যাচ্ছ কেন? তোমাদের জন্যও আছে।”
এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। শুধু চিংড়ির চপ খাবে বলে আমাদের সঙ্গে চন্দনপিঁড়িতে যায়নি। এখন সকালবেলা থানায় এসে গিলছে। একটা থাপ্পড় কষাব বলে হাত তুলেছিলাম। অফিসার ধরে নিলেন। তারপর ব্যঙ্গ করে বললেন, “থানার ভেতরে মারপিট! গ্রেফতার হবে যে রুস্তমভাই। চল চল, বড়োবাবুর ঘরে।”
বড়োবাবু কার সঙ্গে যেন কথা বলছিলেন। অফিসার বললেন, “স্যার, সেই গন্ডগোল পাকানোর পাণ্ডাকে তুলে এনেছি।”
বড়োবাবু হাসলেন। তারপর বললেন, “এস। দলের বাকিরা কোথায়?”
আমি উত্তর দিতে যাচ্ছিলাম। তখনই শুভ চেঁচিয়ে উঠল, “অয়নদা!”
চমকে উঠেছিলাম। শুভর চিৎকারে আমাদের দিকে পেছন ফিরে বড়োবাবুর সঙ্গে কথা বলা লোকটাও ঘুরে তাকাল। আর তখনই আমার গলা দিয়েও একই চিৎকার বেরলো, “অয়নদা!”
বিস্ময়ের ধাক্কাটা কাটতেই মাথাটা গরম হতে শুরু করল। এরকম কেউ করে! আমার চোখে-মুখে বোধহয় রাগের ছাপ পড়ছিল। অয়নদা হাসতে হাসতে কাছে ডাকল। কাছে যেতেই ধরে বসাল পাশের চেয়ারে। তারপর ওর বলিষ্ঠ হাতে কাঁধটা শক্ত করে ধরে ঝাঁকিয়ে বলল, “এসব তো গল্পে পড়িস। নিজের জীবনে কেমন লাগে সেই অভিজ্ঞতা কোনওদিন পেতিস? একধাক্কায় কতটা বড়ো হয়ে গেলি বল তো?”
বড়োবাবু ততক্ষণে আমার অবশিষ্ট সঙ্গীদের বসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
রাগটা পড়তে শুরু করলেও সবটা পড়েনি। তাই গম্ভীর গলায় বললাম, “তোমার এইসব কাণ্ডের মানে কী এবার খোলসা কর। তার আগে যাদের যাদের তুমি তুলে নিয়েছ, তাদের দয়া করে ডাক।”
অয়নদা উঠে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে এল চারমূর্তিকে নিয়ে। ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই আমার মেজ সহোদর ভয়ে ভয়ে বলল, “দাদা, আমার কোনও দোষ নেই। অয়নদা জোর করে তুলে নিয়ে এল।”
আমি ওর হাতটা ধরে ঝাঁকিয়ে দিলাম। দিতেই ভাইয়ের ভয়টা কেটে গেল। ও ফিক করে হেসে উঠল।
অয়নদা ওর শয়তানির কাহিনি শুরু করতে যাচ্ছিল। ওসি সাহেব বাধা দিয়ে বললেন, “আগে কিছু খাবার ব্যবস্থা কর ভাইদের জন্য! সকাল থেকে তো ছুটিয়েছ।”
সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি। আমরা আপত্তি করলাম না। খেতে খেতে অয়নদার শয়তানির কাহিনি শুনতে শুরু করলাম।
অয়নদা বলল, “বুঝলি, শয়তানিটা মাথায় খেলে গিয়েছিল চন্দনপিঁড়ি গ্রামের এলকট মুঁড়ার বাড়িতে যাওয়ার পরে। এই এলকটকেই সেদিন রাতে জঙ্গলে তন্ত্রমন্ত্রের চর্চা করতে দেখেছিলাম (‘যমধারার জঙ্গলে’ দ্রষ্টব্য)। আর দেখেছিলাম, ওর কাছে একটা পাথরের মূর্তি আছে। ওই মূর্তিটাই জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে পুজো করে।
“তারপর থেকে বেশ কয়েকদিন ধরে এলকটকে অনুসরণ করেছি। ওর সঙ্গে কথা বলেছি। আস্থা অর্জনের চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন দেবতা, মারাং বুরুদের প্রতি আমার ভক্তি-শ্রদ্ধা দেখিয়েছি। ও তারপর আমাকে ওর বাড়ি নিয়ে যেতে রাজি হয়েছে। ওর বাড়িতে গিয়েই দেখতে পেয়েছিলাম আরেকটা মূর্তি। দুটো মূর্তি ভাল করে লক্ষ করলে বোঝা যায়, সেগুলোর পায়ের কাছে আবছা কিছু লেখা রয়েছে।”
শুভ চিৎকার করে উঠল, “গুপ্তধনের সংকেত!”
অয়নদা প্রবলভাবে হাত নাড়তে নাড়তে বলল, “আরে, না না। তোরা যে গুপ্তধনের কথা ভাবছিস তার সংকেত নয়। তবে ওই লেখার মূল্য গুপ্তধনের মণিমুক্তোর থেকে কম কিছু নয়। আমি এলকটকে জিজ্ঞাসা করলাম, মূর্তিদুটো ও কোথায় পেয়েছে। ও বলল, চন্দ্রশর্মার শিলালিপির কাছে। কীভাবে পেল জানতে চাইলে এলকট একটা গল্প বলল।
“ও একদিন চন্দ্রশর্মার শিলালিপির কাছে শিকার খুঁজছিল। বুনো খরগোশ, কাঠবেড়ালি। খুঁজতে খুঁজতে শিলালিপির উপরের দিকে অনেকটা উঠে গিয়েছিল। ওখানে লোকের যাতায়াত খুব কম। সেদিন ওই জায়গায় হনুমানের খুব উৎপাত। দুটো দলের মধ্যে মারামারি চলছিল। এলকট দেখেছিল একটা হনুমান তাড়া খেয়ে সুট করে পাথরের ফোকড়ের মধ্যে ঢুকে গেল। তাড়া করা হনুমানটাও সেটার পিছু নিল। কিছুক্ষণ পরে দুটোই পাহাড়ের আরও চুড়োর দিক দিয়ে বেরোল। এলকট বুঝল, এখানে কোনও সুড়ঙ্গ আছে। ও কাছে গেল। ফোকড়টা খুব ছোটো। মানুষ গলতে পারবে না। সুড়ঙ্গের অন্য মুখটা কেমন সেটা দেখতে ও সেই চুড়োয় উঠে গেল। ওই চুড়োয় লোকজন একেবারেই যায় না। তবে ওদিকের সুড়ঙ্গের মুখটা কিছুটা চওড়া। আর সেই সুড়ঙ্গে উঁকি দিয়েই ও একটা মূর্তি পড়ে থাকতে দেখে। সেটা বের করে। এলকটের মনে হয়, মারাং বুরু যেন ওর কাছে ধরা দিয়েছে। ও মূর্তিটা নিয়ে চলে আসে। তারপর শুরু হয় ওর তন্ত্রমন্ত্রের চর্চা।”
“তাহলে আরেকটা মূর্তি ও কোথা থেকে পেল?” বাবলা বলে।
“আরে বলছি বলছি। একটু হাঁফ ছাড়তে দে!” বলে হাসে অয়নদা। কিছুক্ষণের মধ্যেই বলতে শুরু করে, “এলকটের মনে হয়েছিল, অনেক দেবতা ওই সুড়ঙ্গে আছে। ও নিয়মিত ওখানে যেতে শুরু করে। রোজ একটু একটু করে সুড়ঙ্গের মুখটা বাড়ায়। একদিন ঢুকতে পারে ওর ভেতরে। কিন্তু ঢুকে ও হতাশই হয়। ওখানে আর মাত্র একটা দেবতা পড়েছিল। বাকি সব পাথর। সেই পাথরগুলোয় কীসব লেখা। এলকটের কথা শুনে আমি বুঝতে পারি, প্রাচীন কিছু নির্দশন থাকতে পারে ওই সুড়ঙ্গে। একটু কৌশল করি। ওকে বলি, ওই সুড়ঙ্গে প্রচুর দেবতার বাণী আছে। দেবতারা উদ্ধার করতে বলছে মনে হয়। ও সরল মানুষ। আমাকে বিশ্বাস করে। দু’জনে একদিন চুপি চুপি যাই। ওই সুড়ঙ্গে আর কোনও মূর্তি ছিল না। কিন্তু গোটা সাতেক শিলালিপি ছিল। ভালো করে দেখে বুঝতে পারি, দু’একটা প্রস্তরলিপি ভেঙে গিয়েছে। আসল লিপির সংখ্যা তিনটের বেশি হবে না।
“লিপিতে কী লেখা আছে সেটা পড়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। আমি একটা টুকরো সঙ্গে নিয়ে আসি। এলকট জানতে চাইছিল, ওই পাথরের টুকরোয় কী লেখা আছে? আমি বলেছিলাম, কোনও মন্ত্র লেখা থাকতে পারে। বাঁকুড়া-পুরুলিয়া বিশারদ মহীন কামিল্যার সঙ্গে আমার এক অধ্যাপক বন্ধুর পরিচয় ছিল। বন্ধুকে ধরে মহীনবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। উনি শিলালিপি পরীক্ষা করে বললেন, কোথায় পেলেন? এ তো গুপ্তযুগের কোনও প্রশস্তির অংশ বলে মনে হচ্ছে। মহীনবাবুই বললেন, দিল্লিতে আমার বন্ধু সত্য দুবে গুপ্তযুগ বিশারদ। উনি এ বিষয়ে আরও বিশদে বলতে পারবেন।
“দিল্লি যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। তার আগে এলকটকে বোঝালাম, দিল্লিতে এক বুড়ো সোখা আছে। সে এই মন্ত্রগুলো পড়ে শিখিয়ে দেবে। তোমাকেও দিল্লি যেতে হবে। আর মূর্তিদুটোও নিতে হবে। কীভাবে পুজো করতে হয় সেটা ওই সোখা জানে। এলকট রাজি হতে আমি মুখ গম্ভীর করে তোদের কাছে গিয়ে হাজির হলাম। একটু অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ দেওয়ার ইচ্ছে ছিল তোদের। তোরা আমার টোপ গিলে চলে এলি যমধারায়। তার আগে পুলিশ লাইনে খোঁজ লাগিয়ে এখানকার থানার অফিসারের পরিচিতকে খুঁজেছি। পাইনি। তখন আমার পরিচিত পর্বতারোহী এক পুলিশ অফিসারের সাহায্য চেয়েছি। ওঁর নাম তোরা খবরের কাগজে দেখে থাকবি। উনি অনুরোধ করায় এখানকার ওসি সাহায্য করতে রাজি হন। যাঁর সামনে তোরা এখন বসে আছিস।
“তোরা অবশ্য একটু মুশকিলে ফেলেছিলিস। যমধারার জঙ্গলে অভিযানের রাতে দলবেঁধে অজ্ঞান হয়ে গিয়ে। ভেবেছিলাম, পুরো পরিকল্পনাটাই মাটি। তোদের কাউকে নিয়ে হাসপাতালে না ছুটতে হয়! ছেড়ে রেখে যেতেও পারছিলাম না। যদি কিছু হয়। ভোররাত পর্যন্ত পাহারা দিতে হল। ভোরের আলো ফুটতে আমরা এলাকা ছেড়েছিলাম। অবশ্য একজনকে রেখে গিয়েছিলাম। তিনি লুকিয়ে লক্ষ রাখছিলেন তোদের। কেউ অসুস্থ হলে কায়দা করে আবির্ভূত হতেন।”
আমি বললাম, “তুমি আর এলকট দু’হাতে ভর দিয়ে যেভাবে যমধারার ওই পাহাড়ে উঠে গেলে! অজ্ঞান না হয়ে উপায় আছে?”
অয়নদা হেসে বলল, “আমি মার্শাল আর্ট শিখেছি দীর্ঘদিন। তোদের মনে নেই? তারপর শোন। দিল্লিতে তিনমাস ধরে রইলাম আমি আর এলকট। ওই ইতিহাসবিদ গবেষণা করে জানালেন, লিপিটি গুপ্তযুগের। তার সঙ্গে এলাহাবাদ প্রশস্তির মিল আছে। আর লিপিতে লেখা, শত্রুদের হাত থেকে কুলদেবতাকে রক্ষা করতে ওই পাহাড়ের কন্দরে তাঁদের লুকিয়ে রাখা হয়েছে। মজার কথা কী বল তো? ওই মূর্তিদুটো কিন্তু কুলদেবতা নন। ওগুলো স্থানীয় আদিবাসীদের মূর্তির আদলে তৈরি। কুলদেবতাকে রক্ষা করতে ওই আবরণ তৈরি করা হয়েছিল। ওদের আবরণের মধ্যে আছেন তাঁদের দুই রূপ – একটি শান্ত, আরেকটি রুদ্র। আরও গবেষণা চলছে। বাকি লিপির পাঠোদ্ধার চলছে। চন্দ্রশর্মার রাজত্ব কীভাবে শেষ হল তার লিখিত ইতিহাস পাওয়া যেতে পারে। সেরকমই ইঙ্গিত দিয়েছেন সত্য দুবে। ইতিহাসের অন্য একটা পরত খুলবে আশা করা যায়।”
অয়নদার জন্য আমার গর্ব হচ্ছিল। কিন্তু এমন একটা কাজের মধ্যে আমাদের সঙ্গে মজা করার মানে কী? আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “তাহলে আবার আমাদের জন্য রহস্য সিনেমার চিত্রনাট্য তৈরি করলে কেন?”
অয়নদা বলল, “তোরা তো সব গোয়েন্দা গল্পের পোকা। পড়তেও ছাড়িস না। আবার পড়া শেষ হলে বলিস, এসব কি সম্ভব! তোদের হাতেকলমে দেখিয়ে দিলুম। আর তোরা এত বড়ো একটা ঘটনার সাক্ষী থাকবি না তা কি হয়? তবে যমধারার জঙ্গলে প্রথমবারের পরীক্ষায় ফেল করলে তোদের বাদ দিতে হত।”
“তুমি ভরা স্টেশনে কৃষ্ণদাকে কী করে তুলে নিলে বল?” শুভ জানতে চায়।
ওর প্রশ্ন শুনেই কৃষ্ণ হো হো করে হেসে ওঠে। হাসি থামিয়ে বলে, “যাকে আমরা খুঁজতে এসেছি সেই যদি আচমকা সামনে এসে বলে, কী রে কৃষ্ণ, কচুরি খাবি নাকি? তাহলে আর কিডন্যাপের রইলটা কী!”
কথার ধরতাই দেয় অয়নদা। বলে, “দেখ, গল্প-সিনেমার মতো করে অপহরণ করতে গেলে পিটুনি খাওয়ার হেবি চান্স। তার থেকে সুযোগ বুঝে এক একজনের সামনে এসে দাঁড়ালেই কেল্লা ফতে হয়ে যাবে। বাঁকুড়া স্টেশনে একজনকে দিয়ে কৃষ্ণকে ডাকিয়ে নিয়ে তোদের কাছ ছাড়া করলাম। তারপর সামনে এসে দাঁড়াতেই কৃষ্ণ অবাক। ওকে গোটা পরিকল্পনাটা বোঝাতে হল। কিন্তু গাধাটা প্ল্যান চৌপাট করে দিয়েছিল আরেকটু হলে। ওকে ফোন ঘাঁটতে বারণ করেছিলাম। কিন্তু কোন ফাঁকে ও ফোন খুলে গেম খেলতে শুরু করেছিল। আর তখনই ইন্দ্রর ফোন। জোর করে ফোন কাড়তে হল।”
“গেস্ট হাউস থেকে ইন্দ্রদাকে অপহরণ করলে কী করে?” দীপু জানতে চায়।
অয়নদা হেসে বলে, “আমি কিছুই করিনি। ও নিজেই এসে ধরা দিয়েছে। ভোরবেলা কৃষ্ণকে দিয়ে ফোন করিয়েছিলাম। কৃষ্ণ আতঙ্কের গলা করে ইন্দ্রকে ফোন করে বাইরে আসতে বলেছিল। ইন্দ্র বেরিয়ে আসতেই আমি ওর সামনে দাঁড়ালাম। ব্যস! একই কায়দায় বাবলা আর ধেপুকে তুলেছিলাম। গাড়িতে মুখ ঢেকে শুয়েছিলাম। ধেপু আর বাবলা পাহাড়ে উঠল না। আর আমিও ড্রাইভারকে দিয়ে ওদের গাড়ির কাছে ডাকালাম। ওরা গাড়ির কাছে আসতেই মুখের ঢাকা খুললাম। ধেপুটা চমকে চেঁচিয়ে উঠতে যাচ্ছিল। কোনওরকমে আটকে, সব বলে ওকে থামানো গিয়েছিল। পরে ও কিন্তু অপহৃত হওয়ার অভিনয়টা ভালোই করেছিল।”
অয়নদা থামতেই আমি ইচ্ছে করে রাগ রাগ চোখে ধেপুর দিকে তাকালাম। ও চোখ নামিয়ে নিল। অয়নদা আবার বলল, “শোন, তোরা কিন্তু সবসময়েই নজরদারিতে ছিলিস। সেজন্যই চন্দনপিঁড়ি গ্রামে ঠিক সময়ে তোদের উদ্ধার করা গিয়েছে। না হলে পিটিয়ে তোদের তক্তা করে দিত।”
বাবলা জানতে চায়, “ট্রেন ছাড়ার পরেই কী করে মেসেজ পাঠালে?”
অয়নদা রহস্য করে বলল, “টাইম-টেবিল দেখে।”
বাবলা বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। অয়নদা বলল, “খুব সহজ ব্যাপার। রূপসী বাংলা ক’টায় ছাড়ে সেটা জেনে নিলাম। তার মিনিট দশেক পরে ফোন করলাম। ওই ট্রেনটা লেট থাকে না।“
“আর তোমাদের বাড়ি গেছি কী করে জানলে?” দীপু জানতে চায়।
অয়নদা বলল, “সাধারণ জ্ঞান প্রয়োগ করে। আমি ফিরেছি কি না এটা পরীক্ষা করতে আমাদের বাড়ি তোদের যেতেই হত। কারণ, আমাদের বাড়িতে এসব কিছুই জানে না। ফলে ফোনও করেনি তোদের। তোরা অবশ্য ফোন করে খোঁজ নিতে পারতিস। সেই সম্ভাবনার কথা ভেবেই কিন্তু ট্রেন ছাড়া বা আমাদের বাড়ি গেছিস কি না জানতে জিজ্ঞাসার চিহ্ন দেওয়া বার্তা পাঠিয়েছিলাম।”
ওর কথা শেষ হতেই এক কনস্টেবল একজনকে নিয়ে ঘরে ঢুকে ওসিকে বললেন, “স্যার, এলকট এসেছে। মিডিয়ার লোকজনও এসে গিয়েছে।”
অয়নদা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “এলকটদাদা, এরা আমার ভাইয়েরা।”
আমরা নমস্কার করলাম। অয়নদা ওসির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বলল, “স্যার, এবার বাকিটা সামলে নিন। আমরা চললাম।”
তখনই আমার রাজার কথা মনে পড়ল। রাজা কোথায়! অয়নদা বলল, “ওকে তুলে আনিনি তো আমরা।”
তাহলে গেল কোথায়? ওর কাছে তো কোনও ফোনও নেই। একবার গেস্ট হাউসে ফোন করে দেখব? ফোন করতে গিয়ে দেখি টাওয়ার নেই। ওসি সাহেব ল্যান্ডফোন থেকে ফোন করতে বললেন। করলাম। তাপসদা ফোন ধরলেন। জানতে চাইলেন, আমরা কোথায়। বললাম। উনি বললেন, “আপনার ভাই কাউকে খুঁজে না পেয়ে কান্নাকাটি করছে। আমার এখান থেকে কারও ফোন লাগছে না।”
আমি ফোন রাখতেই সবাই জানতে চাইল, কী হয়েছে? বললাম, “পুলিশ যখন আমাদের তুলে আনে তখন ও বাথরুমে ছিল। বেরিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিল।”
থানা থেকে বেরিয়ে দেখি সাংবাদিকদের ভিড়। দেখেই অয়নদা বলল, “তাড়াতাড়ি পা চালা।”
দ্রুত পা চালিয়ে থানাচত্বর ছাড়লাম। এত তাড়াহুড়ো কেন? অয়নদা বলল, “সাংবাদিকদের এড়াতে। দেখছিস না, কেমন বিকেলবেলায় সাংবাদিক সম্মেলন করানো হচ্ছে। যাতে ব্যাটারা যমধারায় বুম হাতে নিয়ে ঝামেলা পাকাতে না পারে। ওরা কাল যখন যাবে ততক্ষণে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের লোকেরা পুলিশ দিয়ে এলাকা ঘিরে ফেলব।”
“কিন্তু তোমারই তো ওদের সঙ্গে কথা বলা দরকার। তুমি না থাকলে এই ইতিহাসের খোঁজ পাওয়া যেত?” শুভ জানতে চাইল।
“পাগল নাকি! তারপর গোটা মাস আমার পেছনে পড়ে থাকুক মিডিয়া। ইন্টারভিউয়ের পর ইন্টারভিউয়ে ঘ্যানঘ্যান করে একই প্রশ্নের দিতে দিতে কাজকর্ম শিকেয় উঠুক। তাছাড়া আমি কে? আসল লোক তো এলকট। কিন্তু ওকে প্রশ্ন করে সাংবাদিকেরা কিছুই জানতে পারবে না। ও শুধু তন্ত্রমন্ত্রের কথাই বলবে। মারাং বুরু, বুড়ো সোখা ইত্যাদি। কী মজা!”
ছবিঃ অংশুমান