সেএক আজগুবি গপ্পো
নেই জগতের হিচ আ হিচ শহরের একটি মেয়ে পা পিছলে পড়ে গেল ধপাস করে। কেটে গেল এখানে ওখানে। কয়েকদিন পরে যখন ক্ষত শুকিয়ে টান ধরলো চামড়ায় মেয়েটি গেল তার পিসির বাড়ি একটা মলম নেওয়ার জন্য যা ওকে ওই টান ধরার কষ্ট থেকে বাঁচাবে।
বয়স্কা পিসি জানালেন, “আমার কাছে তো আর ওই মলম নেই বাছা। তুই বরং এদুটো নিয়ে যা।” দুটো ডিম দিলেন বাজারে নিয়ে গিয়ে ঔষধ বিক্রেতাকে দেওয়ার জন্য। এর বদলে সে ওই মলম দিলেও দিতে পারে।
বেশ খানিকটা সময় বাদে বাজার থেকে ফিরে এসে মেয়েটি এক গপ্পো শোনালো তার পিসিকে।
“পিসিগো বাজারে যেতে যেতে আমার ডিম দুটো কোথায় যেন পড়ে গেল। কী করি কী করি ভাবতে ভাবতে জামার পকেটে হাত ঢুকিয়ে পেলাম একটা মুদ্রা। ওটা দিয়ে একটা লোকের কাছ থেকে পেলাম একটা ছুঁচ দিয়ে বানানো মিনার।
“শুরু করলাম সেই মিনারে ওঠা। উঠতে উঠতে একসময় পৌঁছে গেলাম মিনারের একেবারে ওপরে। ওখান থেকে পুরো হিচ আ হিচ শহরটাকে দেখতে পাচ্ছিলাম। ওখান থেকেই দেখতে পেলাম আমার ডিম দুটো থেকে একটা মুরগি আর একটা মোরগ জন্মেছে। মুরগিটাকে দেখতে পেলাম এক বুড়িমার বাড়িতে। আর মোরগটা পাশের গ্রামে দানা খুঁটে খাচ্ছে।
“এসব দেখে ঠিক করলাম আগে মোরগটাকে নিতে যাব। গেলাম সেই গ্রামে। ওখানকার কৃষকদের ডেকে বললাম, “এই যে আমার মোরগ ফেরত দাও আর সাথে দাও মজুরি। কারণ ওটা তোমাদের পড়ে থাকা শস্য খুঁটে খেয়ে গ্রাম পরিষ্কার রেখেছে।” অনেক দরদাম কষাকষির পর ওরা রাজি হল আমাকে আধ গরুর গাড়ি ভর্তি চাল দেবে। ওজন করে দেখা গেল সে চালের পরিমাণ ২৫ মণ। কিন্তু আমার কাছে তো ঝোলা ছিল না নেবো কিসে? তাই একটা ভেড়া মেরে তার চামড়া দিয়ে বানিয়ে নিলাম আমার ঝোলা। ওরা চাল ঢেলে দিল ওই ঝোলায়। সেই ঝোলা আমি ঝুলিয়ে দিলাম আমার মোরগের গলায় । তারপর ওকে নিয়ে চললাম বাজারের উদ্দেশ্যে।
“শহর থেকে তখন অনেকটাই দূরে আমি। দুদিন ধরে হাঁটতে হাঁটতে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। মোরগটার অবস্থাও দেখলাম বেশ কাহিল। ঝোলার ভারে বেচারার গলা একেবারে ঝুলে পড়েছে । এক সরাইখানায় উপস্থিত হয়ে ওখানকার লোকদের কাছে জানতে চাইলাম, “কী করা যায় বলো দেখি ভালোমানুষের পোয়েরা?”
ওরা বলল, “আধখানা কাঠবাদাম পুড়িয়ে তার ছাই লাগিয়ে দাও ওর গলায়।” আমি সেটাই করলাম।
“সকালে যখন ঘুম ভাঙল দেখলাম মোরগটার পিঠ থেকে একটা বড় কাঠবাদামের গাছ জন্মে নিয়েছে। সরাইখানার কাছের গ্রামের যত ছেলেমেয়ে জমা হয়েছে ওর চারপাশে। বাদাম পাড়ার জন্য মাটির ঢেলা ছুঁড়ছে। আমি ঝটপট একটা ডালে চেপে দেখলাম প্রায় ১০০ ফুটের মতো উঁচু মাটির ঢেলা জমে গেছে চারপাশে। সময় নষ্ট না করে আমি ওইসব মাটির ঢেলাগুলো ভেঙে সমান করে দিলাম। দেখলাম মাটিটা খুব ভালো জাতের। তরমুজ খরমুজ ভালো চাষ হবে এই মাটিতে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। ছড়িয়ে দিলাম তরমুজ খরমুজের বীজ।
“পরের দিন সকাল ঘুম ভেঙে জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখতে পেলাম বড় বড় তরমুজ জন্ম নিয়েছে। সাথে থাকা ছুরি দিয়ে একটা তরমুজ কাটতে যেতেই ছুরিটা পড়ে গেল তরমুজটার ভেতরে। কী আর করি? স্নানের পোশাক পরে ওই যেটুকু কেটেছিলাম তার মধ্যে দিয়ে ঢুকে পড়লাম তরমুজটার ভেতরে। ছুরিটা খুঁজে পেতে তো হবে, তাই না বলো, পিসি?
“ভেতরে কী দেখলাম জানো? একটা বিরাট শহর ওখানে। কত লোকজন, চিৎকার চ্যাঁচামেচি বাপ্ রে বাপ। কাছেই একটা খাবারে দোকান দেখে এগিয়ে গেলাম। একটা মুদ্রা দিলাম দোকানদারকে। বিনিময়ে পেলাম এক প্লেট হালিম। কী স্বাদ গো পিসি হালিমটার! আমি তো খাওয়ার শেষে প্লেটটা চেটেই যাচ্ছিলাম।
“চাটছি চাটছি হঠাৎ ওপর থেকে কী একটা এসে পড়ল চুলের মতো । টেনে তুলতেই বুঝলাম আসলে ওটা একটা মোটা দড়ি। যেটার সাথে আবার সাতটা দড়ি বাঁধা আছে। প্রত্যেকটা দড়ির মাথায় বাঁধা আছে একটা করে উট। তার পরেই খুঁজে পেলাম আমার ছুরিটাকে। একেবারে শেষের উটটার লেজে আটকে ছিল।”
পিসি জানতে চাইলেন, “আর কিছু বলার আছে তোর?”
“না, আমার গল্প ফুরালো নটে গাছটি মুড়ালো।”