প্রতিবেশী গাছ সব পর্ব একত্রে
বট
অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
বট গাছ বাংলার নিজস্ব গাছ। এই গাছকে আশ্রয় করে গড়ে ওঠে একটি সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল। ছায়া প্রদানকারী এই বৃক্ষটি আয়তনে বিশাল হওয়ার জন্য অনেক উপকারে লাগে। বট গাছের ছায়ায় বসে হাটবাজার, মেলা, সংঘটিত হয় উৎসব, পূজাপার্বন। অনুষ্ঠিত হয় জনসভা, নানা ধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গ্রীষ্মের দুপুরে গাছের ছায়ায় শীতল আশ্রয় মেলে রাখাল বালকের কিম্বা কোন পথচারীর। মাটিতে গামছা বিছিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে পরিশ্রান্ত মানুষ। এই গাছের নীচে তৈরী করা হয় মন্দির। ভারত সহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে এই গাছ কাটা হয় না।
কাক, শালিক, বাদুরের প্রিয় খাদ্য এই গাছের গোল গোল লাল টুকটুকে পাকা ফল। এই গাছটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল কোন কোন পাখির। গাছ জন্মানোর অল্প কালের মধ্যেই ডাল থেকে ঝুরি নামতে শুরু করে। মাটির সমান্তরালে বাড়তে থাকা সুতোর মত সরু ঝুরিগুলোর ডগা এক সময় মাটি ভেদ করে গেঁথে গিয়ে নিজেরাই পরিণত হয় এক একটি কাণ্ডে। ধীরে ধীরে চারপাশে বেড়ে বেড়ে বট গাছ রূপান্তরিত হয় এক মহীরুহে। এমন একটি প্রাচীন গাছ রয়েছে হাওড়ার বোটানিক্যাল গার্ডেনে।
বৈজ্ঞানিকরা মোরাসি পরিবারভুক্ত (Moraceae) এই গাছটির নাম দিয়েছেন Ficus benghalensis । আয়ুর্বেদ চর্চা যারা করেন তাঁরা এই গাছটিকে ডাকেন বট, ন্যগ্রোধ বা বহুপদ নামে। ছায়া উৎপাদনকারী বৃক্ষদের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ এটি। চওড়া গাঢ় সবুজ পাতাগুলির উপরের তল মসৃণ।
এদেশের মানুষেরা দীর্ঘদিন ধরেই এই গাছটি নানা কাজে ব্যবহার করে আসছেন। তার কয়েকটি নীচে উল্লেখ করা হল।
১) ডায়েরিয়া ও ডিসেন্টরি রোধে – সরু ডালে যে পত্র উদ্গম হয় সেই পাতার কুঁড়িটি একদিন জলে ডুবিয়ে রেখে সেই জলটি ব্যবহার করা হয় ডায়েরিয়া ও ডিসেন্টরি রোধে।
২) ডায়েরিয়া ও ডিসেন্টরির প্রতিষেধক হিসাবে – গাছের তরুক্ষীর ডায়েরিয়া ও ডিসেন্টরির প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
৩) অর্শরোগে – কয়েক ফোঁটা তরুক্ষীর দুধের সঙ্গে মিশিয়ে প্রত্যহ খাওয়ার বিধি রয়েছে অর্শরোগে।
৪) শ্বেতপ্রদরে – বট এবং ডুমুর গাছের ছাল মিশিয়ে খাওয়ানো হয় শ্বেতপ্রদর রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের।
৫) দাঁতের রোগে – ক) বট গাছের ঝুরি ব্যবহার করে দাঁত মাজলে দাঁতের রোগ হয় না, এবং খ) বট গাছের মূল বেঁটে পেস্টের (মণ্ড) মতো ব্যবহার করলে মাড়ি শক্ত থাকে।
৬) ব্যাথা নিরোধক হিসাবে – বট গাছের ডাল ছেঁচে যে রস এবং তরুক্ষীর পাওয়া যায় সেটি মাংস পেশী এবং গাঁটের ব্যাথায় মলমের মত লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
৭) আঁচিল – বট গাছের ডাল ছেঁচে যে রস পাওয়া যায় তা আঁচিলের উপর লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
৮) ডায়ারিয়া – সাম্প্রতিক কালে প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে (Patil and Patil 2010. International Journal of Pharma and Biosciences) উল্লেখিত হয়েছে, ডায়ারিয়া প্রতিরোধে বট গাছের পাতার কুঁড়ির জলীয় নির্যাস চিনি এবং মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার বিধান দেওয়া রয়েছে চরক-এ।