বারাকপুর মডার্ন স্কুলের আপার কেজির ছাত্র পাঁচ বছরের অভিরাজ দেবনাথ শুনিয়েছে একটা
লাল কাকের গল্প
সেই ভোরবেলা ঠোঁট দিয়ে জানালার কাচে ঠক ঠক আওয়াজ তুলে ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছিল পাখিটা। এখন আবার সামনের রাস্তার ইলেকট্রিক তারে বসে তারস্বরে ডেকে চলেছে কা কা করে। কাঁহাতক আর সহ্য হয়। হুশ হুশ করে কাকটাকে তাড়াবার চেষ্টা করতে ছুটে এল টুকু-
“জান বাবা কাকটা আমাকে থ্যাঙ্কইউ ওয়াদা করছে।”
“মানে!”
“আমি একটা গ্রেপস হনুমান মন্ত্র পড়ে কাকটাকে খেতে দিয়েছিলাম।হনুমান মন্ত্র পরা গ্রেপসটা খেয়ে কাকটা এত শক্তিশালী হয়ে গেছিল যে উড়তে উড়তে কাকটা একদম আউটার স্পেসে পৌঁছে গেছিল।
“আউটার স্পেসে ঘুরতে ঘুরতে কাকটার এলিয়েনেদের সাথে মোলাকাত হয়ে গেল। এলিয়েনরা কাকটাকে ওদের ফুটবলের মতো গোল ইউ এফ ওতে তুলে নিল।এলিয়েনদের দেখতে ছিল অনেকটা ক্যাটারপিলারের মত। কাকটা তো অনেক ক্যাটারপিলার দেখছে তাই ওর একটুও ভয় লাগল না। এলিয়েনদের কাছে একটা গ্যাজেট ছিল। গ্যাজেটটা কাকের সামনে রেখে দিল এলিয়েনরা। ওমনি কাকের ভাষা বুঝতে পারল এলিয়েনরা, আর এলিয়েনদের কথাও কাকের কানে কা কা হয়ে পৌঁছতে লাগলো। কাক এলিয়েনদের ফ্রেন্ড হয়ে গেল।”
এলিয়েনরা কাকটাকে বলল “কাক বন্ধু তুমি কি আমাদের তারার দেশ দেখতে চাও?”
কাকটা বলল, “জরুর দেখতে চাই।”
এলিয়েনরা কাকটাকে বলল, “আমাদের তারার দেশে যেতে তো অনেক সময় লাগবে, তুমি এই মেডিসিনটা খেয়ে নাও তাহলে তোমার আর খিদে পাবে না আর আমাদের তারার দেশে না পৌঁছন পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকবে।”
বলে একটা লাল রঙের ছোট জেমসের মত ট্যাবলেট কাকটাকে খেতে দিল। কাকটার খুব আনন্দ হল, ওকে আর ঘুরে ঘুরে খাবার খুঁজতে হবে না। এই কাকটা যেই আমগাছটার ডালে বাসা বানিয়ে থাকত, সেখানে মাঝে মাঝেই অন্য কয়েকটা কাক এসে ওর বাসায় রাখা খাবার চুরি করে নিয়ে যেত। কাকটার দুঃখের অন্ত ছিল না।
লাল বড়িটা খাবার পর কাকটার এত ঘুম পেয়ে গেল যে ও মেঝের ওপর শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
কাকটার ঘুম ভাঙতে দেখে একটা লাল শক্ত বিছানায় ও শুয়ে আছে। বিছানাটা খুব ঠাণ্ডা। অনেক অনেক বিগ বিগ লাল ক্যাটারপিলার ওকে ঘিরে রেখেছে। এত বড় ক্যাটারপিলার আগে কখনো দেখেনি কাকটা। কাকটা ভয়ে চিৎকার করে উঠল।
ওমনি সামনে রাখা সেই এউ এফ ওর গ্যাজেট থেকে কাকের স্বরে আওয়াজ উঠল, “স্বাগতম দূর সবুজ গ্রহের বন্ধু। তোমার কি কোন কষ্ট হচ্ছে।”
কাকটা বলে উঠল “খুব শীত করছে।”
একটা বিশাল বড় ক্যাটারপিলার এসে কাকটাকে ছুঁয়ে দিল। কাকটার রং লাল হয়ে উঠল আর ঠাণ্ডাও ভেগে গেল।
কাকটা ডানা মেলে উড়তে লাগল। উড়তে উড়তে সামনের একটা গাছে গিয়ে বসল। সেই গাছটা দেখতে বিলকুল আমগাছের মতো, কিন্তু লাল রঙের আর বরফের মতো শক্ত আর ঠাণ্ডা । কাকটা যেদিকে দেখে সে দিকেই সব লাল আর লাল।
কাকটার খুব খিদে পেয়ে গেছিল। গ্যাজেটের সামনে উড়ে এসে কাকটা কা কা বলে ডেকে উঠল।
ওমনি অনেকগুলো লাল ক্যাটারপিলার এসে হাজির হল, “বল সবুজ গ্রহের বন্ধু।”
“আমার খুব খিদে পেয়েছে।” কা কা করে বলে উঠল লাল হয়ে ওঠা কাক।
লাল বরফের পাত্রে টিকটিকি লজেন্সের মতো একটা ছোট লাল রঙের ট্যাবলেট নিয়ে এল একটা ক্যাটারপিলার। খাবার দেখেই কাক রেগে গেল, “আমি আর ওই লাল ট্যাবলেট খাব না, আমাকে বিস্কুট দাও, মাংস দাও…”
সেই বিশাল বড় ক্যাটারপিলার, যেটা কাকের গায়ে হাত বুলিয়ে লাল করে দিয়েছিল, সে এসে বলল, “আমাদের লাল তারায় অন্য কোন খাবার পাওয়া যায় না। এখানে কেউ মরে না আবার কোন কিছু জন্মায়ও না। তাই আমাদের কোন খাবার প্রয়োজন হয় না। খাবার ইচ্ছে হলে আমরা ওই লাল বড়ি একটা খেয়েনি। লাল তারায় আমার কয়েকজন ছাড়া আর সবই জমে বরফ হয়ে আছে।”
কাক রেগে গিয়ে বলল “আমি থাকতে চাই না তোমাদের লাল আইস প্ল্যানেটে। আমার সবুজ গ্রহই ভাল। আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে এস।”
ক্যাটারপিলারটা বলল, “তাই হবে সবুজ গ্রহের বন্ধু। তোমাকে ফিরিয়ে দিয়ে আসাটা খুব কঠিন। তোমাদের গ্রহ এখান থেকে অনেক আলোক পথ দূরে। আমাদের তারাটাও তোমাদের গ্রহের মত সবুজ ছিল। একদিন অন্য একটা তারা এসে ধাক্কা দিল আমাদের তারায়। ওই প্রচণ্ড ধাক্কায় সব জমে লাল বরফ হয়ে উঠল। আমরা কিছু ক্যাটারপিলার যারা মহাকাশযানে চেপে মহাবিশ্বে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম তারই শুধু বেঁচে গেলাম। চল বন্ধু তোমাকে তোমার সবুজ গ্রহে ছেড়ে দিয়ে আসি।”
ক্যাটারপিলারের পেছন পেছন কাকও উড়তে উড়তে খোলা দরজা দিয়ে ইউ এফ ওর ভেতর গিয়ে ঢুকল। দরজা বন্ধ হয়ে গেল।
ইউ এফ ওর জানালা দিয়ে কাক দেখতে পেল লাল তারাটা ক্রমেই ছোট হয়ে মিলিয়ে গেল চোখের সামনে থেকে।
ক্যাটারপিলারটা একটা ছোট লাল বড়ি এগিয়ে দিল কাকের দিকে,“বন্ধু খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।”
কাকের ঘুম ভাঙতে দেখে, ক্যাটারপিলার ওর পাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। কাককে নড়াচড়া করতে দেখে বলল, “বন্ধু তোমার সবুজ গ্রহ এসে গেছে, বিদায়” বলে ইউ এফ ওর দরজা খুলে দিল।
কাকটা উড়তে উড়তে নেমে এস বসলো ওর বাসাওয়ালা আমগাছে। যেই না বসেছে ওমনি অনেক গুলো কাক কা কা করে চিৎকার করে ওকে কামড়াতে এল। কাকটা প্রাণ বাঁচাতে উড়ে এসে বসলো আমাদের ব্যালকানিতে। কা কা চিৎকার শুনে ব্যালকানিতে গিয়ে দেখি আরে এটা ত আমার বন্ধু কাক। কিন্তু লাল হয়ে গেল কী করে?
কাকটা কা কা করে খুব কান্নাকাটি করছিল। আমি তখন ওকে একটা গ্রেপস এনে হনুমান মন্ত্র পড়ে খেতে দিলাম। গ্রেপসটা খাওয়ার পরই কাকের রঙটা ম্যাজিকের মতো লাল থেকে কালো হয়ে গেল।
ভাবছ তো আমি কী করে এত কিছু জানলাম?
বলব না!
শ্রুতিলিখন করেছেন – অরিন্দম দেবনাথ
বাঃ! খুব সুন্দর!
LikeLike