মহাশ্বেতার আগের গল্প- শুকতারার গল্প, খুলির আর্তনাদ(১ম) , খুলির আর্তনাদ(২য়), খুলির আর্তনাদ(৩য়) খুলির আর্তনাদ(৪র্থ) শলকেনের ছবি (১ম পর্ব) শলকেনের ছবি (২য় পর্ব), তুফান ১ম পর্ব, তুফান ২য় পর্ব, কালো বিড়াল (অ্যালেন পো), গ্যাব্রিয়েল আর্নেস্ট, অতিথি, জলসাঘরের ভূত
“কে?”
“আমি।”
“ও। তুমি? এখানে?”
“এই বসেছিলাম। অপেক্ষা করছিলাম।”
“ও আচ্ছা।”
“হাঁপিয়ে গেছ মনে হচ্ছে। একটু বসবে?”
“হ্যাঁ। বসি। একটু জিরিয়ে নিই।”
“তোমায় এখান দিয়ে সাঁতরে যেতে বহুবার দেখেছি আমি।”
“তাই? আমি তোমায় দেখিনি কেন তাহলে?”
“জানি না। খেয়াল করোনি হয়তো।”
“বা রে, মাটির তলায় সুইমিং পুলে একটা মেয়ে, আর আমি খেয়াল করব না? কিন্তু ভাল হয়েছে তোমায় খুঁজে পেয়েছি। এইখানে আলোগুলো বড্ড টিমটিমে। আমার সব সময় মনে হয় কিছু একটা আমায় এসে ধরে খেয়ে ফেলবে।”
“তাহলে রোজ আসো কেন?”
“আমার বাবা জোর করে পাঠায়। আমায় সারাদিন ভিতুর ডিম, ছাগল বলে গালাগালি দেয়। আমি নাকি মেয়েলী। কিন্তু তুমিই বলো, বাড়ির পিছন থেকে এই অন্ধকার সুরঙ্গের ভিতর দিয়ে সাঁতার কেটে ওইপারে, মানে বসার ঘরে গিয়ে উঠলে কি আমার সব ভয় কেটে যাবে? আমি একদিনে সাহসী হয়ে যাব? বাবারা কিচ্ছু বোঝে না।”
“ঠিক বলেছ। তোমার নিশ্চয়ই খুব ভয় হয়?”
“হ্যাঁ, সে তো হয়ই। প্রথম যখন এই বাড়িতে এলাম, নিজেদের সুইমিং পুল থাকবে বলে কি আনন্দটাই না হয়ে ছিল আমার। তাও আবার এইরকম একটা মাটির তলায় সুড়ঙ্গ-ওয়ালা সুইমিং পুল। আমার একটা বন্ধুর বাড়িতেও এইরকম জিনিস নেই। কিন্তু বাবা সব নষ্ট করে দিল। বাকি সবকিছুর মতো এইটাকেও আমায় অত্যাচার করবার জন্য কাজে লাগায়। আমার আর কিচ্ছু ভাল লাগে না। সেদিন আমার পোষা কুকুরটা হঠাৎ করে মরে গেল। চোখে জল এসে গেছিল। তাই দেখে সঙ্গে সঙ্গে গালে একটা থাপ্পড় দিল। ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই। এমনিতেই কথায় কথায় কিল চড় ঘুষি। এইরকম ভাবে বেঁচে থাকতে কারুর ভাল লাগে?”
“এ বাবা। তোমার ভারী দুঃখ, না? ঠিক আছে, এখানে তোমার যতক্ষণ ইচ্ছে, বসতে পারো।”
“তুমি খুব ভালো। আমার আর এখানে ভয় লাগছে না, জানো তো? ভালই লাগছে বরং। এখানে বাবা নেই।”
“এখানেই থেকে যাও তাহলে।”
“পাগল নাকি? বাবা বসবার ঘরে স্টপওয়াচ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বেরোলেই বকবে এত সময় লাগালাম বলে।”
“তোমার বদলে আমি চলে যেতে পারি।”
“পারবে তুমি? তাহলে খুব ভাল হয়।”
“ঠিক তো?”
“হ্যাঁ। আমি আর ফেরৎ যেতে চাই না।”
“বেশ।”
মেয়েটা তারপর মাছের মত সাঁতরে সুড়ঙ্গ দিয়ে বেরিয়ে গেল। অন্যপারে যখন সে মাথা উঁচোলো তখন সে বদলে গেছে। বাবা কিন্তু তখন খুব খুশি, ছেলে এই প্রথম এত দ্রুত সুইমিং পুল এপার ওপার করেছে। হয়তো এই বছর ইশকুলে সাঁতারের টিমে ঢুকে পড়তে পারবে।
সেই রাতে তারা সপরিবারে একটা দামি রেস্তোঁরায় খেতে গেল। সবার খুব আনন্দ। কেউ জানল না, ছোট্ট ছেলেটা আসলে এখন সুইমিং পুলে আছে, আস্তে আস্তে নীল জলে মিলিয়ে যাচ্ছে তার শরীর, তার মন, তার সব ভয়। তারপর অনেক, অনেক দিন কেটে যাবে। সে শুধু অপেক্ষা করবে। আবার কখনো কেউ যদি আসে…
অলঙ্করণ-মৌসুমী