গল্প-পাঁচশোয়ার মশা-নীলাশিস ঘোষ দস্তিদার-বর্ষা ২০২১

সন্ধ্যা ভট্টাচার্য গল্প প্রতিযোগিতা ২০২০( তৃতীয় স্থান)

golpopanchshoyar mosha. head piece. upa

শেষ থিওরি পরীক্ষা বায়োলজি দিয়ে বেরিয়ে ক্যান্টিনে মিল্ক শেকের অর্ডার দিয়ে একধারে বসল পাঁচজন। মাৰ্চ মাঝের দিল্লিতে গরম কমই। প্র্যাক্টিক্যাল মিটলেই ক্লাস ইলেভেন শেষ। পরের বছর হায়ার সেকেন্ডারি। মিল্ক শেকের সঙ্গে সঙ্গে আলোচনা। সবার পরীক্ষা ভালোই হয়েছে। এবার একটু রেস্ট চাই।

পাশের মাঠে ঘাসকে সজীব রাখতে স্প্রিংকলার ঘুরছে। ফুটবলের ক্রেজ এখন। কয়েকটা ছেলে একপাশে বল পেটাচ্ছে। পাঁচজনের চোখাচোখি হল। না, পরীক্ষার দরুন অনেকদিন প্র্যাকটিস হয়নি, শরীর আনফিট। সপ্তাহ খানেক লাগবে ফিট হতে। ঘটনা এই পাঁচজনই অর্থাৎ মনু বা মানসী বড়ুয়া, দীপু বা দীপিকা চ্যাটার্জি, অনু বা অনন্যা দাশ, রিতু বা রীতিকা কাপুর আর তুলি বা তুলিকা মিত্র হল স্কুলের মেয়েদের রিজিওন্যাল চ্যাম্পিয়ন ফুটবল টিমের পাঁচ রেগুলার মেম্বার। তুলিকা গত দুই বছর ধরে দিল্লির প্রতিনিধিত্বও করেছে। পাঁচজনই স্কুলের নার্সারি সেকশন থেকে একসঙ্গে পড়ছে বলে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। অনন্যার মা’র ফোন এল ক্যান্টিন মালিক জিতেন্দ্ৰভাইয়ার কাছে। সে অবশ্য মিল্ক শেকের অর্ডার নেবার সময়েই জেনে নিয়েছে পরীক্ষা কেমন হয়েছে, অভিভাবকদের ফোন এলে জানাতে হবে। স্কুলে মোবাইল আনা নিষেধ। এখন সামনে থাকা অনন্যাকে ফোন ধরিয়ে দিল জিতেন্দ্র। অনন্যার মা সন্ধ্যায় সবাইকে বাড়িতে আসতে বলে দিলেন। অনেক পড়াশুনো করেছে মেয়েগুলো, আজ একটু খাওয়াদাওয়া করুক। অন্য অভিভাবকদের উনিই জানিয়ে দেবেন।

সন্ধ্যাবেলা আলোচনা শুরু হল, সামনের ছুটিতে কী করা যায় সেই নিয়ে। একটা মতৈক্য হল, দিন কয়েকের জন্য কোথাও ঘুরে আসা যায়। রীতিকার মামার বাড়ি খালি পড়ে আছে ভীমতালে। সেখানে যাওয়া যায়, তবে সমস্যা হল কেয়ারটেকার খুব অলস, গেলে অসুবিধায় পড়তে হয়। নাকচ হল ভীমতাল। মনুর ইচ্ছে ট্রেকিং-এর। একটা দল সোনমার্গে সব লেক ট্রেক করে ঘুরে আসবে, তাদের সঙ্গে যাওয়া যায়। নিরাপত্তার প্রশ্নে তাও নাকচ করে দিলেন ততক্ষণে এসে যাওয়া অন্য অভিভাবকরা। দীপিকার বাবা লাজুকভাবে জানালেন, জায়গা একটা আছে, যদিও ভীমতাল বা কাশ্মীরের মতো সুন্দর নয়। কোথায়? পশ্চিমবঙ্গে বোলপুরের কাছেই একটা গ্রাম আছে, নাম পাঁচশোয়া। সেখানে ওঁদের পৈতৃক ভিটে, জমিজমা আছে। সপরিবার জ্যাঠামশাই আছেন। থাকার অঢেল জায়গা, কাজের লোকজনও আছে মেলা। মেয়েরা পুকুরে সাঁতার কেটে নিজেদের পুকুরের মাছ খেয়ে, গাছে চড়ে আম চেখে আসতে পারবে। দীপিকা ভারি অবাক হয়ে প্রশ্ন করল, “দিনের বেলাতেও মশারি লাগে এমন সাংঘাতিক মশার উপদ্রবের জায়গায় কেন পাঠাতে চাইছে বাপি!”

ভদ্রলোক মুচকি হেসে জানালেন, “মশার উপদ্রবে সব আত্মীয়দের গ্রামে যাওয়াই বন্ধ হয়ে গেছিল। কিন্তু জ্যাঠামশায় গতকাল জানিয়েছেন, সবাই আবার আসতে পারে। মশা নাকি গত বছরেই কমে গেছিল, এবার একেবারেই উধাও! কী ব্যাপারকে জানে, কিন্তু দীপিকার পিসতুতো দুই দিদি আসছে দিন কয়েক থাকতে। জ্যাঠামশাই চান আরেক নাতনি দীপিকাও আসুক।”

রীতিকার মা একটু কিন্তু কিন্তু করলেন, “বঙ্গালে তো গরম পড়ে যায় জলদি। এখন গর্মি কেমন? রীতিকা গরমে এসি ছাড়া ঘুমোতে পারে না!”

দীপিকার বাবা মুচকি হেসে জানালেন, “সে ব্যবস্থা সবচেয়ে আগে হয়েছে। দীপিকার পিসির দাবিতে। পুরোনো আমলের উঁচু ছাদ ও মোটা দেয়ালের বাড়িতে এমনিতেই গরম কম লাগে, তায়, দুটো নতুন তৈরি বড়ো ঘরে এসি লাগিয়ে একদম শহুরেদের মনের মতো করা হয়েছে। অ্যাটাচড বাথরুমে কমোড ইত্যাদিও আছে!”

এবার পরামর্শ একদম হুল্লোড়ের সঙ্গে গৃহীত হয়ে গেল। একটা বড়ো কারণ, একটা রহস্য আছে। মশা কমল কী করে! সবাই বাড়ি গিয়েই যাত্রার তোড়জোর শুরু করে দিল।

প্রাক্টিক্যাল শেষ হল পরের সপ্তাহের শুক্রবার। রবিবার সকালে শিয়ালদা রাজধানী থেকে দুর্গাপুর স্টেশনে নামল পাঁচ মূর্তি। পিঠে ব্যাকপ্যাক আর হাতে একটা করে মাঝারি ট্রলি সুটকেস। সবাই খেলাধুলোর সরঞ্জাম এনেছে। দীপিকার বাবার জ্যাঠামশাই অর্থাৎ বড়ো ঠাকুরদা জানিয়েছেন ফুটবলের মাঠ তৈরি আছে, বয়স থাকলে তিনিও খেলতে নামতেন!

ফোনের নির্দেশ অনুযায়ী স্টেশনের বাইরে এসে ওরা দেখল ওদের জন্য একটা ইনোভা গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছেন দীপিকার এক জ্যাঠা। মালপত্র ভরতে একটু সময় গেল, তারপর গাড়ি ওদের নিয়ে ছুটল ইলমবাজার হয়ে বোলপুরের দিকে। গাড়িতে অঢেল জলখাবার, খেতে খেতে এসে গেল ইলমবাজারের জঙ্গল। দেখে পাঁচজনেই রোমাঞ্চিত, যাত্রাপথের ক্লান্তি দূর।

বোলপুরের একটু আগে গাড়ি ডানদিকে বাঁক নিল। তারপর সবুজ ক্ষেতের মধ্য দিয়ে এসে পৌঁছল কম্পাউন্ড, গাছগাছালিতে ঘেরা এক প্রাচীন কিন্তু সুন্দর, মস্ত দোতলা বাড়ির সামনে। সামনে ছোটো একটু লন, ফুলের কেয়ারি। মোবাইলে জানান দেওয়া ছিল। বাড়ির সামনে একটা ছোটোখাটো জনতা অপেক্ষারত। দীপিকা গিয়ে বড়ো ঠাকুরদাকে প্রণাম করল, তারপর অন্য গুরুজনদের। পিছনে পিছনে সবাই। তারপর ওয়েলকাম ড্রিঙ্ক হিসেবে ডাবের জল।

লাঞ্চের সময় হয়ে যাচ্ছে, তাই স্নানের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হল সবাইকে। দোতলার এককোণে দুটো বিশাল মাপের ঘরে ওরা এবং দীপিকার দুই পিসতুতো দিদি থাকবে। একটি করে প্রমাণ সাইজের পালঙ্ক ছাড়াও দুটি মানুষের মাপের জানালার সামনে দুটি করে সিঙ্গেল বেড। জানালা দিয়ে দূরে আদিগন্ত ক্ষেত, পুকুর ইত্যাদি দেখা যাচ্ছে। আগে দখল হল সিঙ্গেল বেডগুলি।

ফ্রেশ হতে হতে দেখা গেল ঘরের ছাদ অনেকটা উঁচুতে বলেই বা দেয়াল অনেকটা মোটা বলেই কিনা কে জানে, ঘরে দিব্যি আরাম হচ্ছে, গরম তেমন লাগছে না। তবে দিল্লির চেয়ে আর্দ্রতা অনেক বেশি, হালকা ঘামে মালুম হচ্ছে। কড়িবরগার ছাদের ডাইনিং হলের মধ্যে আধুনিক বাড়ির দোতলা ঢুকে যায়। সেখানে আধুনিক ডাইনিং টেবিল একটু বেমানান লাগলেও শোনা গেল, আগে মাটিতে বসে কাঁসার থালা-বাটিতে খেতে হত, যা এখন চলবে না। ওরা অবশ্য সমস্বরে জানাল, এই পোর্সেলিনের ডিশ-বোল নয়, ওরাও কাঁসার থালা-বাটিতে খেতে পারে। রান্নার পদেও তাই। চিকেন ওরা দিল্লিতে খায়, এখানে নিজেদের পুকুরের মাছ খেতেই এসেছে, দীপিকা সরব হতেই ঠাকুরদা খুশি। দেখা যাবে, কে কেমন খেতে পারে।

দুপুরে ঘুমের পর উঠে বিকেলে বাড়ির চারপাশে ঘোরাঘুরি। পুকুর দেখা হল, ছিপ ফেলে মাছ ধরার আয়োজন দেখা হল, তারপর চপ-মুড়ি খেতে খেতে বাড়ির পিছনের সবজির বাগান পরিদর্শন। জানা গেল, বাড়ির খাওয়ার সবজি ফলানো হয় অর্গানিক ফার্মিং অনুসরণ করে। গোয়ালে খান চারেক গরু আছে, তাদের গোবর দিয়ে গোবর-গ্যাস প্ল্যান্ট চলে, তার অবশিষ্ট স্লারি ব্যবহার করে কেঁচো সারও বানানো হয়, পুকুরে মাছের খাবার হিসেবেও দেওয়া হয়। সারা বাড়িতে লেবু ফুলের গন্ধ। খোঁজ নিয়ে জানা গেলে লেমন গ্রাস চাষ হচ্ছে গ্রামে। তার এক্সট্র্যাক্ট স্প্রে করা হয়। বাড়ির চারদিকে লেমন গ্রাসের বেড়াও লাগানো। বোধ করি মশা কমাতে এই দাওয়াই সবচেয়ে কাজে দিয়েছে। মশা নাশক স্প্রেও হয় অবশ্য।

বাড়ির একদিকে চণ্ডীমণ্ডপ। মা কালীর মন্দির আছে, নিত্য পূজা হয়। একটু জরাজীর্ণ অবস্থা। বসে সন্ধ্যারতি দেখল ওরা। প্রসাদ হিসেবে লুচি, হালুয়া ইত্যাদি খেয়েই প্রায় পেট ভরে গেল ওদের।

খেয়াল করল অনন্যা। মশা কামড়াচ্ছে না বললেই হয়! অন্যরা সায় দিল। অবশ্য লেমন গ্রাসের গন্ধ এখানেও। দীপিকার পিসতুতো দিদিরা সুন্দর গান করে। চণ্ডীমণ্ডপে আরতির পর বেশ খানিকক্ষণ গান হল। দীপিকার বড়ো ঠাকুরদা একটু ভাবালু হয়ে উঠলেন। কতদিন পর আবার বাড়ি যেন সরগরম হয়ে উঠেছে! একমত তাঁর দুই পুত্র ও তাঁদের পরিবারেরাও। তাঁর নাতি-নাতনিরা প্রায় সবাই বিশ্বভারতীতে পড়ে। পুত্রদের একজন বোলপুর কোর্টে ওকালতি করেন। অন্যজন, যিনি দুর্গাপুর স্টেশনে গেছিলেন, বড়ো ঠিকাদার।

নৈশ ভোজনে যে কাতলা মাছ খাওয়া হল, রীতিকা তো নয়ই, বাকি চারজনও তত সুস্বাদু মাছ আগে খায়নি। নিজেদের পুকুরের মাছ বলে কথা। শোনা গেল, বড়ো ঠাকুরদার এক নাতি নাকি শ্রীনিকেতনে কৃষিবিদ্যা নিয়ে পড়ার পর এখন মাছ আর সবজি চাষে লেগে গেছে। চাকরি নয়, তার ইচ্ছে খান দশেক পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করবে। মানসী সেই দাদাকে ধরে পড়ল, ওরও নাকি মাছ খুব ভালো লাগে। কথা হল যে, আগামীকাল সকালে একচোট ফুটবল খেলার পর ছিপ দিয়ে মাছ ধরাও হবে, মাছচাষের খুঁটিনাটি শেখাও হবে।

রাত্রে দীপিকা শোবে দুই দিদির সঙ্গে। বাকি চারজন আরেক ঘরে। পালঙ্কেই চারজন এঁটে যেত। কিন্তু তুলিকা আর রীতিকা দুই জানালার ধারে সিঙ্গেল খাটে শুয়ে দেখেছে জানালার কাচের মধ্য দিয়ে তারাভরা এমন আকাশ দেখা যাচ্ছে, যা ওরা দিল্লিতে দেখে না! এসি চালানো হয়েছিল, কিন্তু রীতিকাই বন্ধ করে দিল। ওর নাকি দিব্যি আরাম লাগছে, আর, মশা নেই যখন, জানালা খুলে শোয়াই ভালো।

এই সময় রীতিকা জিজ্ঞাসা করল তুলিকার হাতে ধরা ফুলটা কী। তুলিকার বাবার খুব বাগানের শখ। দেখাদেখি তুলিকারও। সে জানাল, জবা ফুলের মতো দেখতে ফুলটা আজ ঠাকুরের পুজোয় ছিল। নতুন দেখে সে একটা ফুল পুরুতমশায়ের কাছে চেয়ে নিয়েছে। ফুলটা প্রায় জবার মতোই, কিন্তু হালকা গন্ধ আছে দেখে সে মাঝে মাঝে ওটা শুঁকছে।

হাসি-ঠাট্টা শুরু হয়ে গেল। বারো ক্লাসের পর কে কী নিয়ে পড়বে, মোটামুটি ঠিক হয়ে যাচ্ছে। মানসী ফিশারিজ-এর দিকে যাবে, তুলিকা হর্টিকালচার, নয়তো বোটানি।

চাঁদের আলোয় ঘর ভেসে যাচ্ছে, পাশের ঘর থেকে দীপিকার দুই দিদির গান ভেসে আসছে, এরই মধ্যে ছাদ থেকে শোনা গেল এসরাজের সুর। বাড়ির কেউ ছাদে উঠে বাজাচ্ছে।

পরদিন সকালে ফুটবল খেলা দেখতে বেশ ভিড়। গ্রামের মেয়েদের কয়েকজন এক কোচিং সেন্টারে খেলতে যায়। তারা ছাড়াও খেলতে এল পাশের এক আবাসিক বিদ্যালয়ের ফুটবল দলের ছাত্রছাত্রীরা। বাড়ির ছেলেরাও নামল, এমনকি দীপিকার জ্যাঠামশাইরাও অল্প সময়ের জন্য নামলেন। দিল্লির মেয়েরা কেমন খেলে জানার কৌতূহল নিয়ে এসেছে উৎসাহী জনতা। আর, তাদের নিরাশ করল না পঞ্চকন্যা। এখানে মাটিতে বালির ভাগ বেশি। দিল্লির তুলনায় মাটি অনেক নরম। বলের বাউন্সও কম। খানিক অসুবিধার পর মানিয়ে নিয়ে তেড়েফুঁড়ে খেলল তারা। রীতিকার জবরদস্ত ট্যাকল জনতার প্রশংসা পেল। আর, তুলিকা গোটা দুয়েক গোল করায় তাদের দল জিতেও গেল।

ফ্রেশ হবার পর লুচি-সুজি-ওমলেটের ব্রেকফাস্ট ও তারপর ছিপ দিয়ে মাছ ধরা। মানসী নোট বুকে মাছ চাষের অনেক খুঁটিনাটি লিখে নিচ্ছে দেখে ইয়ার্কি ফাজলামি প্রচুর হল। দুপুরে মৌরলা মাছের টক, ছিপ দিয়ে ধরা চারাপোনার ঝোল আর বিউলির ডাল খেয়ে মুগ্ধ পঞ্চকন্যা। অনন্যা আর দীপিকা রান্নাবান্না ভালোবাসে, তারা আগেই রান্নাঘরে হানা দিয়েছিল। খাওয়ার পর মোবাইলে রাঁধুনিদিদির ইন্টারভিউ রেকর্ড করে নিল, পুরো রেসিপি প্র্যাক্টিক্যল সমেত। দীপিকার বড়ো ঠাকুরদা বাইরের বারান্দায় ইজিচেয়ারে শুয়ে পরম তৃপ্তির হাসি নিয়ে সব দেখে যাচ্ছেন।

বিকেলে সবাই মিলে দুটো গাড়ি করে যাওয়া হল বিশ্বভারতীতে। উত্তরায়ণ কমপ্লেক্স, কলাভবন, আশ্রমমাঠ, সিংহসদন ইত্যাদি দেখার পর ক্যানাল ধরে আমার কুটির। গাছের তলায় বসে ক্লাস হয় পঞ্চকন্যা আগে শুনেছিল, এবার প্রত্যক্ষ করল। আমার কুটিরের হ্যান্ডিক্র্যাফট অল্পবিস্তর কেনাকাটার পর শ্রীনিকেতন হয়ে ফেরা। শ্রীনিকেতন প্রোজেক্ট নিয়ে বলার ফাঁকে ফাঁকে ঘুরিয়ে দেখাল দীপিকার কৃষিবিদ দাদা। যে সময় সম্ভ্রান্ত ঘরের পুরুষমাত্রেই জজ-ব্যারিস্টার বা সিভিল সার্ভেন্ট হতে চাইতেন, সেই সময় যাঁর মেজদা আবার দেশের প্রথম আই.সি.এস, সেই রবীন্দ্রনাথ জ্যেষ্ঠপুত্র, বন্ধুপুত্র, কনিষ্ঠ জামাতাকে তখন প্রায় অচেনা মার্কিন মুলুকের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি, পশুপালন পড়তে পাঠালেন শুনে পঞ্চকন্যা রীতিমতো অবাক। এমন রবীন্দ্রনাথকে তো ওরা চিনতই না!

ফিরে এসে হাতমুখ ধুয়ে, জলখাবার খেয়ে দীপিকার ঠাকুরদার কাছে ওরা আশ্রমের বিবর্তন ও তার সঙ্গে সঙ্গে বোলপুর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের উন্নয়নের গল্প শুনল। এই গ্রামেই শান্তিনিকেতনী বাটিক, কাঁথা স্টিচ ইত্যাদির কাজ করে দিব্যি দিন গুজরান করছে প্রচুর মেয়ে, শুনল তারা।

এসব শুনতে শুনতেই আবার সন্ধ্যারতির সময় এসে গেল। আজ আবার ওরা খেয়াল করল যে মশা কামড়াচ্ছে না বললেই হয়। তবে, আমার কুটিরে মশা ছিল বলে মনে পড়ল মনুর।

রাত্রে শোবার আগে আবার গানবাজনা। যথারীতি তারায় ভরা আকাশ দেখতে দেখতে সবাই ঘুমোল এবং এসরাজের সুর আজকেও শোনা গেল। আজ জানা গেছে, দীপিকার উকিল জ্যাঠামশাই এসরাজ বাজান।

সকালে যথারীতি খেলা। খেলার পর স্নান-প্রাতরাশ সেরে আজ যাওয়া হবে সিউড়ি, ম্যাসাঞ্জোর ড্যাম দেখতে। কিন্তু রীতিকা আর তুলিকাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক অপেক্ষার পর দুজন কোথা থেকে উদয় হল। কী করছিল কিছু বলল না। অল্প বকাঝকার পর সবাই চলল সিউড়ি। সুন্দর রাস্তা এবং দু-পাশের দৃশ্যাবলী। ড্যাম দেখে সবাই খুশি। ফেরার পথে সিউড়ির বিখ্যাত মোরব্বা কেনা হল।

ফিরে আসার পর দেখা গেল, জনা দুয়েক প্রতিবেশী ভদ্রলোক বসে গল্প করছেন বড়ো ঠাকুরদার সঙ্গে। একজন অবসরপ্রাপ্ত অর্থনীতির অধ্যাপক প্রোফেসর দত্তরায়, অন্যজন একজন অবসরপ্রাপ্ত উদ্ভিদবিজ্ঞানী ড. গুহ। দুজনের বাড়িই এই বাড়ির কম্পাউন্ডের লাগোয়া—একজনের উত্তরদিকে, অন্যজনের দক্ষিণে। দুজনেই খবর পেয়ে এসেছেন দিল্লির মেয়েদের হালহকিকত জানতে, তারা কেমন চিন্তাভাবনা করে তার সঙ্গে পরিচিত হতে। প্রোফেসর দত্তরায় ও তাঁর স্ত্রী মিলে গরিব ছেলেমেয়েদের জন্য ট্রেনিং স্কুল চালান, তারা হ্যান্ডিক্রাফটের কাজ শিখে স্বাবলম্বী হয় যাতে সেই চেষ্টা করেন। লেমন গ্রাসের চাষ এঁদের উৎসাহেই শুরু হয়েছে এবং বেশ কিছু লোকের কর্মসংস্থানের উপায় হয়েছে। এরই মধ্যে এসে গেলেন তাঁদের স্ত্রীরা, ভিতরে গল্প করছিলেন বাড়ির মহিলাদের সঙ্গে। তাঁদের পিছন পিছন জলখাবার নিয়ে দীপিকার জেঠিমারা। প্রোফেসর দত্তরায়ের স্ত্রী জিজ্ঞাসা করলেন, দিল্লির হইচই ছেড়ে কখনো পঞ্চকন্যার কেউ গ্রামে এসে থাকতে পারবে কিনা। অনন্যা বলে উঠল, নিশ্চয়ই পারবে। পারতে হবে। ভারত আসলে থাকে গ্রামে এবং গ্রামকে এড়িয়ে থাকা যাবে না। সবাই হইহই করে ওঠায় উৎসাহিত হয়ে প্রোফেসর দত্তরায় উন্নয়নের গান্ধীয়ান মডেলের উপযোগিতা বোঝাতে শুরু করে দিলেন। তবে তাঁর স্ত্রী ইশারায় বোঝালেন ক্লাস চলবে অনেকক্ষণ, মেয়েরা যেন খাবারগুলো ঠান্ডা না করে ফেলে, জলদি খেয়ে নেয়। একপ্রস্থ হাসির সঙ্গে সঙ্গে মেয়েরা খাওয়া শুরু করে দিল। সত্যি, খিদেও পেয়েছে।

অধ্যাপক একটু থামতে বড়ো ঠাকুরদা প্রসঙ্গ অন্যদিকে ঘোরালেন। উদ্ভিদবিজ্ঞানী ড. গুহকে দেখিয়ে তিনি জানালেন, ইনি দেশবিদেশে কাজ করেছেন। অবসর নেওয়ার পরেও কাজ করে চলেছেন। সবজি বাগানের দেওয়ালের পিছনেই বিঘে তিনেক জমিতে ওঁর কাজ চলে। নানাবিধ ফুল ফোটান এবং বাড়ির পুজোয় যে ফুল লাগে তা প্রায় ওঁর বাগান থেকেই আসে। মেয়েদের প্রশ্ন থাকলে করতেপারে। অনন্যা জানতে চাইল, রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে যে শোনা যায় তিনি নানা ধরনের ফুল এদেশে নিয়ে এসেছিলেন বিদেশ থেকে, তা সত্যি কি না। মৃদু হেসে সম্মতি জানালেন ভদ্রলোক। দীপিকা জানতে চাইল, বিদেশি গাছ এদেশে স্বচ্ছন্দে বাড়তে পারে কি না। আবার মৃদু হাসলেন তিনি। উৎস-দেশের সঙ্গে এদেশের অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ মোটামুটি এক থাকলে তেমন কোনো সমস্যাই নয়। না হলে একটু মুশকিল। শীতপ্রধান দেশের গাছ ক্রান্তীয় জলবায়ুতে সেভাবে বাড়তে পারে না। উলটোটাও সত্যি। আবার জল বা মাটিতে থাকা বিভিন্ন লবণের মাত্রার উপরও গাছের বৃদ্ধি নির্ভর করে ইত্যাদি জানালেন তিনি।

এর মধ্যে মন্দিরে আরতি শুরু হওয়ায় ডাক পড়ল সবার। আজ খুব সুন্দর ফুলের সাজে সাজানো হয়েছে মন্দির ও মূর্তি। গরম নেই, সুন্দর হাওয়া দিচ্ছে। ধূপ-ধুনোর গন্ধে, কাঁসর-ঘণ্টার আওয়াজে মনোরম পরিবেশ। সবচেয়ে বড়ো কথা, কাউকে একটি মশাও কামড়াচ্ছে না। বড়ো ঠাকুরদা আক্ষেপ করলেন, আগে যদি এমন সুন্দর পরিবেশ থাকত, অর্থাৎ মশার উৎপাত না থাকত, তাহলে আত্মীয়রা এড়িয়ে চলত না। একই সঙ্গে আশাও প্রকাশ করলেন, এখন সবাই ধীরে ধীরে আসা শুরু করবে। প্রতিবেশীরা চলে গেলেন।

নৈশভোজের পর শুতে এসে দেখা গেল কামরাতেও ফুল দিয়ে সাজিয়েছে তুলিকা আর রীতিকা।

একদিন পর চলে যাওয়া। সকালে খেলাধুলোর পর আজ পুকুরে প্রচুর সাঁতার কাটল পঞ্চকন্যা। এমন পুকুরের কাছে সুইমিং পুল নিতান্ত নস্যি! তারপর প্রাতরাশ সেরে প্রোফেসর দওরায়ের বাড়িতে। বাচ্চাদের ক্লাস চলছে। হ্যান্ডিক্রাফট বানানো দেখে, লেমন গ্রাসের ক্ষেত হয়ে, লেমন গ্রাস অয়েল নিষ্কাশন দেখা। সারাবাড়ি লেমন গ্রাসের গন্ধে ভরপুর। খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতে দেখতেই মধ্যাহ্ন-ভোজের তাড়া আসায় চলে আসতে হল পঞ্চকন্যাকে।

খাওয়ার টেবিলে হঠাৎ দীপিকাই আবিষ্কার করল, কনুইয়ের কাছে ক’টা মশার কামড়ের দাগ! অন্যরাও জানাল, অল্পবিস্তর মশার কামড় তারাও খেয়েছে।

বিকেলে উদ্ভিদবিজ্ঞানী ড. গুহর কাছে যাওয়া। এঁর ফার্ম হাউস দীপিকাদের বাড়ির কম্পাউন্ডের দক্ষিণে, বেশ ক’টা পলি হাউসে অনেক গাছ। বেশিরভাগ চেনা-অচেনা ফুল গাছ। একটা ছোটো কিন্তু আধুনিক ল্যাবরেটরিও আছে। টিস্যু কালচারের যন্ত্রপাতি স্কুলেও আছে, তাই চিনতে পারল ওরা। একটা যন্ত্রকে পি.সি.আর মেশিন বলায় পঞ্চকন্যা জানাল, ভাইরাসজনিত রোগ ধরতে এই মেশিনের ব্যবহার হয় শুনেছে তারা। ড. গুহ হেসে জানালেন, কোনো ডি.এন.এ নমুনার অনেক প্রতিলিপি বাড়ানো যায় এই মেশিনে। তারপর সেই প্রতিলিপিগুলি জেল ইলেক্ট্রোফোরেসিস যন্ত্রে পর্যবেক্ষণ করে খুঁজে বার করা যায় কোনো নির্দিষ্ট বিন্যাসকে। ফলে, কোনো ডি.এন.এ সিকোয়েন্স বা এককথায়, কোনো জিন-অ্যালিলের উপস্থিতি খুঁজে বার করতে এই মেশিনের ব্যবহার অপরিহার্য।

অনু এবং মনু ভারি অবাক হয়ে জানতে চাইল এই যন্ত্র দিয়ে ক্লোনিং সম্ভব কি না। ড. গুহ জানালেন, ক্লোনিং পদ্ধতির মধ্যে এই মেশিন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এবার দীপিকা জানতে চাইল এই যন্ত্র দিয়ে জিন মডিফিকেশন সম্ভব কি না। ড. গুহ আবার হাসলেন। জিন মডিফিকেশন হয় ট্রান্সফর্মেশনপদ্ধতিতে এবং তার যন্ত্রপাতি আলাদা। তবে, অভীষ্ট জিন ট্রান্সফর্ম-কৃত কোষে এল কি না, তা যাচাই করার জন্য পি.সি.আর যন্ত্র অপরিহার্য।

এর মধ্যে দীপিকার ঠাকুরদা সমেত অন্যরাও ডাকতে চলে এসেছেন। আজ বাদে কাল মেয়েরা চলে যাবে। আজ বিশেষ ডিনার। তার আগে মিনি জলসা। ড. গুহরাও তৈরি হয়ে আসবেন। বিদায় দেবার আগে উনি মেয়েদের উপহার হিসেবে কিছু ফুল-টুল দেবেন কি, জানতে চাইল রীতিকা। একটু অবাক হয়ে উনি জানালেন পলি হাউসগুলিতে ফুটে থাকা ফুলগুলির মধ্যে যার যা পছন্দ, সে সেটা নিতে পারে। রীতিকা আর তুলিকা একে অন্যকে দেখে নিয়ে জানতে চাইল, তারা কোনো গাছের ডাল বা সম্ভব হলে চারাগাছ পেতে পারে কি না। এবার ভ্রূ কুঞ্চন করলেন ড. গুহ। কোন গাছ? তুলিকা এবার পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল পলি হাউসে। পিছনে সবাই। তুলিকা এসে দাঁড়াল কয়েকটি জবাগাছের মতো গাছের সামনে। মেয়েরা চিনল। এই ফুলটাই তুলিকার হাতে ওরা দেখেছিল দিন তিনেক আগের সন্ধ্যায়। জবার মতো দেখতে, কিন্তু হালকা গন্ধ আছে। বেশ খানিকক্ষণ তুলিকার দিকে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞাসা করলেন ড. গুহ, কেন ওই গাছ সে চায়। সবাইকে দেখে নিয়ে তুলিকা জানাল, এই ফুল গাছই হল পাঁচশোয়ার মশক নিবারণের কারণ। দিল্লির জলবায়ুতেও এই গাছ কাজ করে কি না দেখার জন্যই একটা করে চারাগাছ সে আর রীতিকা নিয়ে যেতে চায়।

ড. গুহর গলায় এবার চ্যালেঞ্জের সুর। কী করে নিশ্চিত হচ্ছে তুলিকা? তুলিকা জানাল, মশা হঠাৎ কমে গেল কীভাবে, সে প্রশ্ন তাদের মনেই ছিল। প্রথম সন্ধ্যায় আরতির সময় এই প্রায় জবার মতো সুন্দর ফুল দেখে সে। হাতে নিয়ে দেখতে গিয়ে অল্প গন্ধের আভাস পেয়ে শুঁকতে গিয়ে তার নজর পড়ে, ফুলের পাপড়ির ভিতর, গর্ভদণ্ডের উপর সেঁটে বসে থাকা দু-তিনটি মশার উপর। রাতে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে সে বোঝে, সেগুলি পুরুষ মশা। পরদিন সকালেও আরো দু-তিনটি নতুন পুরুষ মশা তার নজরে আসে। সবক’টি মশা যেন ফুলের রস আস্বাদন করতে গিয়ে ঘুমিয়ে আছে। নড়তে পারছে না। শান্তিনিকেতন, বিশেষত আমার কুটির বেড়াতে যাবার সময় সে বুঝে যায় অন্যত্র মশা থাকলেও, পাঁচশোয়াতে এমন কিছু আছে যার দরুণ হুল ফোটাবার মতো মশা নেই। লেমন গ্রাস, নাকি ওই ফুল? রীতিকার সঙ্গে পরামর্শ করে ম্যাসাঞ্জোর যাবার আগে তারা হানা দেয় ড. গুহর বাগানে আর বেশ কিছু ফুল নিয়ে তাদের রস নিজেদের হাতে পায়ে লাগিয়ে তাদের ধারণা হয়, ওই ফুলের রসে এমন কিছু আছে যার দরুণ মশা হুল ফোটায় না। রীতিকা রস লাগিয়েছিল, তাকে মশা কিছু করেনি। তুলিকা রস লাগায়নি, তাকে হুল ফুটিয়েছে। ব্যাপারটা সম্বন্ধে তুলিকা নিশ্চিত হয় প্রোফেসর দত্তরায়ের বাড়িতে। যেখানে লেমন গ্রাসের তেল বার করা হচ্ছে, সেখানেই মশার উৎপাত, অল্প হলেও আছে, আর পঞ্চাশ গজ দূরে দীপিকাদের মন্দিরে বা বাড়িতে একদম নেই। এর ব্যাখ্যা কী হতে পারে! এখন দিল্লিতে ফুল কাজ করলে বোঝা যাবে, আবহাওয়া কোনো ফ্যাক্টর নয়, এই ফুল সর্বত্র মশক নিবারক।

ড. গুহ আর তাঁর স্ত্রী একসঙ্গে হাততালি দিয়ে উঠলেন। ব্রাভো, সাবাশ ইত্যাদি সম্ভাষণ শোনা গেল এতক্ষণ দমবন্ধ করে শুনতে থাকা অন্যদের কাছ থেকেও।

দীপিকার ঠাকুরদা এসে প্রথমে তুলিকার মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন, তারপর ঘুরলেন ড. গুহর দিকে। “বটে বাবু! ডাক্তার, এত কাণ্ড করেছ, নাতনিরা না এলে তো জানতেই পারতুম না। ইশ, আর ক’বছর আগে যদি তুমি আসতে গো পাঁচশোয়ায়, বাড়ির লোকগুলো আসতে পারত বটে হর-বছর। তা, ব্যাপারটা খুলে বলো দিকি।”

চায়ের আসরে খুলে বললেন গুহ। একবার ইন্দোনেশিয়ার রেনফরেস্টে তাঁর নজরে পড়ে জবাফুলের মতো একটা ফুলের উপর ভিড় করে আছে পুরুষ মশারা। যদিও গেছিলেন সরকারিভাবে অন্য ধরনের গাছের জার্মপ্লাজম কালেকশনে, এই গাছের ডালও সংগ্রহ করে আনেন তিনি। টিস্যু কালচার করে গোটাকয় গাছকে তিনি বাঁচিয়ে তোলেন, দেশিয় জবার সঙ্গে সফল কলমও করে ফেলেন। ইন্দোনেশীয় সরকার অনুমতি দেয় গাছ ভারতে নিয়ে আসার, তবে, পরীক্ষার ফল তাদের পাঠাতে হয়। ভারত সরকারের প্রোজেক্ট নিয়ে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই গাছের কার্যকারিতা নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছেন তিনি। দিল্লিতে তো বটেই। মজা এই, সব গাছের ক্ষমতা সমান নয়। কিছু গাছের ফুলে ফেরোমেন জাতীয় এক উদ্বায়ী মাদক পদার্থ নিঃসৃত হয়, যা পুরুষ এনোফিলিস বা কিউলেক্স মশাকে টেনে আনে, আর ফুলের রস পান করে তারা প্রায় নিশ্চল, অকর্মণ্য হয়ে থাকে, বংশবিস্তার করতে পারে না। আবার, অদ্ভুতভাবে, ওই ফেরোমেন স্ত্রী মশাদের ভয়ানক অপছন্দের। ওই গন্ধ পেলে তারা পগারপার। গুহ এখন নির্ণয় করার চেষ্টা করছেন, কোন বা ক’টি জিন এই মশক নিবারণী ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে, যেজন্য সব গাছের ক্ষমতা সমান নয়। জিন নির্ণয় হয়ে গেলে এর ফুলের রস দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মশক নিবারণের দিকে এগোনো যাবে। ডেঙ্গির মশা নিয়েও কাজ করতে হবে, সেজন্য তুলিকার মতো সহকারী তাঁর চাই। সবার হর্ষধ্বনিতে সায় মিলল। দীপিকাও মত বদলে ফেলল, ভবিষ্যতে জেনেটিক্স নিয়ে পড়তে হবে।

দুর্গাপুর স্টেশনে অন্যদের সঙ্গে তাদের ট্রেনে চড়াতে এলেন ড. গুহও। সবাইকে একটি করে ফুলের রসের লোশন দিয়ে আশীর্বাদ করে বিদায় নিলেন। দিল্লিতে কাজ করে কি না লোশন, জানাতে হবে কিন্তু।

golpopanchshoyar mosha. tail piece. sri

অলঙ্করণ- উপাসনা, শ্রীময়ী (টিম বোম্বাগড়)

জয়ঢাকের সমস্ত গল্প ও উপন্যাস

4 thoughts on “গল্প-পাঁচশোয়ার মশা-নীলাশিস ঘোষ দস্তিদার-বর্ষা ২০২১

  1. দারুণ লাগল গল্পটা। সঙ্গে উপাসনা আর শ্রীময়ীর অলংকরণ লা জবাব

    Like

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s