আজ পঁচিশে ডিসেম্বর। ক্রিসমাস ডে। কিন্তু ক্রিসমাস নিয়ে কাজিরাঙ্গা জন্তুদের বিশেষ কোনো মাথাব্যথা নেই। সাড়ে পাঁচটা বাজতে চলল, অথচ গায়ে একটা মোটা কুয়াশার লেপ জড়িয়ে নিয়ে এখনো পুরো পাড়া ঘুমাচ্ছে। সুয্যিমামাও ভালো করে চোখ মেলে তাকাননি এখনো, তিতলিদের সঙ্গে দেখা করার জন্য যেন কারোরই কোনো ইচ্ছে নেই।
অথচ জঙ্গল দেখবে বলে তিতলি আজ ঘুম থেকে উঠেছে সেই ভোর সাড়ে চারটেতে। এরকম ভোরকে বলে কাক-ডাকা ভোর, সবাই ঘুমায় আর একমাত্র কাকেরা ঘুম থেকে উঠে গিয়ে হাঁকডাক করে বলে। কিন্তু কই কাকেদের গলাও তো তিতলি পাইনি শুনতে, ও কি তাহলে কাকেদেরও আগে উঠেছে আজ? কী দারুণ ব্যাপার! এই ঠান্ডায় হোটেলের ওই গরম বিছানা ছেড়ে ওঠা মোটেই সহজ ব্যাপার নয়, কিন্তু তিতলি দিব্যি লাফিয়ে উঠেছে, জিন্স-কোট-টুপি-গ্লাভস পরে নিয়ে গাড়িতে চেপে জঙ্গলে চলে এসেছে। সঙ্গে মা-বাবা আর মিশা।
মিশাকে নিয়ে আসার ব্যাপারে মায়ের খুব আপত্তি ছিল। ক্লাস টুতে পরা মেয়ে নাকি টেডি বিয়ার নিয়ে ঘুরছে দেখলে সবাই হাসবে। হাসুক গে, তিতলি টেডি বিয়ার নিয়ে ঘুরবে, ব্যস। মিশাকে না নিয়ে কোনো সুন্দর জায়গায় যাওয়া যায় নাকি? সেই কোন ছোটবেলা থেকে মিশা আছে তিতলি সঙ্গে। অনেক কষ্টে শেষ অবধি মিশাকে নিয়ে আসার পারমিশন পাওয়া গেছে। ভাগ্যিস গেছে, না-হলে হাতির পিঠে চড়ার অ্যাডভেঞ্চারটা আর হত না বেচারা মিশার।
তিতলিরা এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, সেটা ঠিক জঙ্গল নয়, জঙ্গলে ঢোকার মুখ। ভোরের আলো এখনো ভালো করে ফোটেনি, শুধু কয়েকটা চায়ের দোকানের কাঁপা কাঁপা আলো। তিতলিদের মতো আরো অনেকে জড়ো হয়েছে হাতির পিঠে চড়ে জঙ্গল সাফারি করবে বলে। কেউ কেউ চা খাচ্ছে, টুপি দেওয়া জ্যাকেটে সবাইকে দেখাচ্ছে এস্কিমোদের মতো। ঠান্ডাও বটে সেরকম, হাঁ করলেই মুখ দিয়ে সাদা সাদা ধোঁয়া বেরোচ্ছে। বাবা আর তিতলি খানিকক্ষণ কম্পিটিশন করল কে কত লম্বা ধোঁয়া বের করতে পারে।
একটু দূরেই সারি দিয়ে বেশ কয়েকটা উঁচু প্ল্যাটফর্ম, ওইগুলোতে দাঁড়িয়েই হাতির পিঠে চাপতে হবে। আধো অন্ধকারেই হাতিরা এসে পড়ল হেলেদুলে, পিঠে মাহুত। পরপর দাঁড়িয়ে পড়ল একে একে প্ল্যাটফর্মের গা ঘেঁষে। কাজিরাঙ্গায় অনেক বুনো হাতি থাকলেও এরা অবশ্য সবাই বন বিভাগের পোষা হাতি।
তিতলিদেরও ডাক পড়ল হাতির পিঠে চড়ার। সিঁড়ি দিয়ে তরতরিয়ে প্ল্যাটফর্মে উঠে পড়ল ওরা। তারপর প্ল্যাটফর্ম থেকে সোজা হাতির পিঠে বাঁধা গদিওয়ালা সুন্দর বসার বেঞ্চে—একদম মিশাকে কোলে নিয়ে, বাবা আর মায়ের মাঝখানে। ওরা ছাড়াও হাতির পিঠে বসেছে আরো তিনজন—এক দিদি ও তার বাবা-মা। বাঙালি নয় ওরা, অন্য কোন একটা ভাষায় কথা বলছিল।
বাবা মাহুতকাকুকে জিজ্ঞেস করল, “হাতি কা নাম ক্যায়া হ্যায়?”
মাহুতকাকু বলল, “মণিমালা।”
মনিমালা! কী সুন্দর নাম!
কী আনন্দই না হচ্ছে তিতলির মণিমালার পিঠে চড়ে। তবে তাই বলে বেশি হইচই করা উচিত নয়। জঙ্গলে এসে শান্ত হয়ে থাকতে হয়। কথাও বলতে হয় ফিসফিস করে, না হলে গন্ডার, হরিণ, পাখিরা সবাই ভয় পেয়ে যায়। জঙ্গল হল ওদের বাড়ি। ওদেরই বাড়িতে এসে ওদেরই বিরক্ত করা মোটেও ঠিক নয়—বাবা বলেছে অনেকবার।
জন্তুজানোয়ার-পাখি-পোকা এদের খুবই ভালোবাসে বাবা। বেড়াতে বেরিয়ে কত মজার জিনিস দেখায় বাবা তিতলিকে—পিঁপড়ের বাসা, মাছরাঙার জলে ধাঁ করে ডাইভ দেওয়া, ছাতারে পাখি ঝগড়া, আরো কত কী! বাবা অনেক গল্পও বলে। না, ঠিক গল্প বললে ভুল হবে, বাবা যা গল্প বলে সবই সত্যি। এই যেমন বাঘ-হরিণের সত্যি গল্পটা—বাচ্চা হরিণ জন্মানো মাত্র মা হরিণ তাকে চেটেপুটে এমন পরিষ্কার করে দেয় যে বাচ্চার গায়ে কোনো গন্ধই থাকে না। বাঘে তাড়া করলে তো বাচ্চা হরিণ দৌড়াতে পারবে না, তাই এরকম ব্যবস্থা। মা বাচ্চাকে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে রাখে, পরে ফিরে এসে দেখে যে বাচ্চা ঠিকই আছে। বাঘ ঝোপের পাশ দিয়ে চলে গেছে, অথচ টেরই পায়নি যে ঝোপে হরিণছানা লুকোনো। হরিণ ছানার গায়ে গন্ধ না থাকলে আর টের পাবেই-বা কী করে?
বাঘও অবশ্য খুব ভালো, শের খানের মতো একটা দুটো দুষ্টু বাঘ ছাড়া। বাঘ না বাঁচলে অন্য জন্তুরাও বাঁচবে না, বনের ধারে থাকা গরিব মানুষগুলোও বাঁচবে না। শিকারিদের নিয়েও অনেক গল্প করে বাবা, বিশেষ করে জিম করবেটের গল্প। জিম করবেট ছিলেন ভালো শিকারি। জন্তুদের খুব ভালোবাসতেন, আর সেইরকমই ভালোবাসতেন নিজের চারপাশের মানুষদের। আর মানুষের উপর খুব উৎপাত না করলে কখনোই কোনো বাঘ মারতেন না। কিন্তু এই কাজিরাঙ্গায় নাকি অনেক দুষ্ট শিকারি আছে, তারা এমনি এমনিই গন্ডারদের মারে। গন্ডারের খড়গ বিক্রি করবে বলে।
গতকাল বিকেলে গাড়ি করে গৌহাটি থেকে কাজিরাঙ্গা আসার পথে একটা গন্ডার দেখা গিয়েছিল—হাইওয়ে থেকে অনেকটা দূরে একটা নীচু জমিতে গন্ডারটা আপনমনে চলে বেড়াচ্ছে, একদম একা একা! গাড়ি থামিয়ে বাইনোকুলার দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে ওকে দেখেছিল তিতলিরা। আজকে নিশ্চয়ই অনেক কাছ থেকে গন্ডার দেখা যাবে।
কাজিরাঙ্গা জঙ্গলের অনেকটা জুড়ে তৃণভূমি বা গ্রাস ল্যান্ড। মানুষের সমান উঁচু এই ঘাসের নাম এলিফ্যান্ট গ্রাস। মসমস শব্দে শুঁড় দিয়ে সেই এলিফ্যান্ট গ্রাস ভেঙে দুলকি চালে এগিয়ে চলেছে মণিমালা আর অন্য হাতিরা। পায়ের সঙ্গে মুখও চলছে অনবরত ওদের। কায়দা করে শুঁড় ঘুরিয়ে অনেকটা করে ঘাস পুরে নিচ্ছে মুখের মধ্যে। খাওয়া আর চলা, চলা আর খাওয়া—কী মজার একটা ছন্দ।
হঠাৎই থেমে গেল মণিমালা। কী ব্যাপার? ভালো করে তাকাতে বোঝা গেল ব্যাপারটা। একটু দূরেই জমাট বাঁধা কুয়াশার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে একটা জন্তু, দুটো প্রকাণ্ড শিং বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু বাকিটা আবছা। বাইনোকুলার চোখে লাগিয়েও বিশেষ লাভ হল না। বাবা বলল, “মনে হয় ওয়াটার বাফেলো, ভালো করে আলো ফুটলে বোঝা যেত।”
ইশ, কখন যে ভালো করে আলো ফুটবে?
আলো ফুটলো খানিক পরেই, ধীরে ধীরে। ওরা বুঝলই না ঠিক কখন, কিন্তু দেখা গেল একটা নরম আলো ছড়িয়ে পড়েছে, আর দূরের নীল পাহাড় আর চারদিকের সবুজ ঘাস কেমন অদ্ভুত মায়াবী দেখাচ্ছে সেই আলোতে। আর এই ম্যাজিক আলোতেই তিতলি প্রথম দেখতে পেল হরিণটাকে, এক বুক ঘাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে কেমন ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। তারপর হঠাৎ কী মনে হতে এক লাফে ঘাসের জঙ্গলে উধাও হয়ে গেল, বাবা-মা ভালো করে দেখতে পাওয়ার আগেই।
গন্ডারদের অবশ্য আগে দেখল বাবা, চোখের ইশারায় দেখিয়ে দিল তিতলি আর মাকে। একটা নয়, দুটো নয়, একেবারে তিন-তিনটে গন্ডার। একটা আবার একদম বাচ্চা, বড়োদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খুব মন দিয়ে ঘাসের মধ্যে মুখ গুঁজে কী যেন খুঁজছে। গা-ভর্তি মোটা চামড়ার ভাঁজ আর নাকের উপরে খড়গ, ঠিক ছবিতে দেখা গন্ডারের মতো। কিন্তু এ কী, মণিমালা এত এগিয়ে যাচ্ছে কেন গন্ডারদের দিকে? তিতলি শক্ত করে বাবার হাত চেপে ধরল। গন্ডারেরা রেগে গিয়ে তেড়ে আসবে না তো ওদের দিকে? না, সে-সব কিছুই করল না ওরা। মণিমালা ছাড়া আরো চারপাশটা হাতি ওদের একদম নাকের ডগায় এসে দাঁড়িয়ে পড়ল, চারদিকে সবাই ক্যামেরা মোবাইল বের করে ফটো তুলতে লাগল, কিন্তু ওদের কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই! একটা গন্ডার খালি একটুক্ষণের জন্য মাথা তুলল, সবাইকে দেখে নিয়ে আবার মুখ গুঁজল ঘাসের মধ্যে। একটু দূরেই একটা মেঠো রাস্তা, গন্ডার ফ্যামিলি খানিক বাদে সেই রাস্তা পার হয়ে আরেকটা ঘাসের বনে ঢুকে গেল।
এদিকে সাফারির সময় প্রায় শেষ। খানিক দূরে একটা জলের তিরতিরে রেখা দেখা যাচ্ছে। তিনটে পেলিক্যান মস্ত ঠোঁট ঝুলিয়ে উড়ে যাচ্ছে সেই জলের দিকে। কিন্তু মণিমালা জলের দিকে গেল না, ঘাসের জঙ্গল ছেড়ে একটা অন্য পথে ফিরে চলল ওর স্টার্টিং পয়েন্টের দিকে। এই পথটা গেছে একটা নিবিড় বনের ভেতরে দিয়ে। চারদিকে উঁচু উঁচু গাছ, পাতার ফাঁক দিয়ে কোনোমতে একটু আধটু সূর্যের আলো নীচে এসে পড়েছে। চারদিকে শুধু পাখিদের চেঁচামেচি আর সেই সঙ্গে আরো সব অদ্ভুত আওয়াজ—ধুপধাপ খসখস, সরসর, হুসহাস, কত কী! বাবা বলেছিল যে কাজিরাঙ্গায় নাকি বাঘ-ভাল্লুক-লেপার্ড-বুনো হাতি-সাপ-বাঁদর সব আছে, সিংহ বাদ দিয়ে নাকি সবকিছু। তাহলে কি তাদের ডেরাতেই এসে গেল তিতলিরা? এর থেকে ঘাসের জঙ্গলই ঢের ভালো ছিল। কী দরকার ছিল মণিমালার এই বনের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার? এই শীতেও তিতলি কোট-টুপির ভেতর ঘেমে উঠল, আর গলা তো শুকিয়ে কাঠ।
যাই হোক, মণিমালার মতো বাহাদুর হাতির পিঠে বসে ছিল ওরা ভাগ্যিস, কোনো জন্তুজানোয়ার ওদের কাছে আসার সাহসও করল না। আর অন্ধকার ঠেলেঠুলে মণিমালাও ওদেরকে দিব্যি নিয়ে এল বড়ো রাস্তায়, তারপর কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা পৌঁছে গেল সেই চেনা প্ল্যাটফর্মগুলোর ওখানে।
সাফারি শেষ, এবারে নামতে হবে মণিমালার পিঠ থেকে। আর ঠিক তখনই খেয়াল করল তিতলি ব্যাপারটা। মিশা নেই। হারিয়ে গেছে মিশা। ‘মিশা!’ বলে ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলল তিতলি।
অবাক কাণ্ড! মিশাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো এত অপছন্দ মায়ের অথচ শুধু তিতলির দুঃখ বুঝে কেমন চারপাশে খুঁজতে লাগল মিশাকে। যদি পাওয়া যায়।
“কী রে, তুই খুঁজবি না?”
বাবার কথার কোনো উত্তর দিতে পারল না তিতলি। পারবেই-বা কী করে, কান্নায় যে গলা বুজে আসছে। আর এখানে খুঁজে কোনো লাভও নেই। তিতলি তো জানে মিশা কোথায়। মিশা পড়ে আছে এলিফ্যান্ট গ্রাসের জঙ্গলে। গন্ডার দেখার সময় কখন যে হাত থেকে পড়ে গেছিল মিশা, খেয়ালই করেনি তিতলি।
এদিকে নতুন সওয়ারির দল নিয়ে আবার জঙ্গলে পাড়ি দিল হাতির দল।
“রো মৎ, মুন্নি।” তিতলিকে বলে গেল মাহুতকাকু।
ঝাপসা চোখে ওদেরকে কোনোমতে হাত নেড়ে মা-বাবার সঙ্গে তিতলি গিয়ে বসল হোটেলের গাড়িতে। হোটেলে ফিরে চলল গাড়ি।
না, কিচ্ছু ভালো লাগছে না। রাস্তার ধারে বেগুনি ফুলের থোকা, গাড়ির মধ্যে বাজতে থাকা মিষ্টি সুরের অহমিয়া গান, এমনকি হোটেলে ফিরে টোস্ট-অমলেট-জুস, কোনো ভালো জিনিসই আর ভালো লাগছে না আজ তিতলির।
“বাহ্, দারুণ রোদ উঠেছে। চল, একটু বাগানে ঘোরা যাক।”
আসলে নানাভাবে তিতলির মন ভালো করার চেষ্টা করে যাচ্ছে বাবা। হোটেলের বাগানটা বেশ সুন্দর, রোদের মধ্যে পাতা বেতের চেয়ারগুলো দেখলেই বসতে ইচ্ছে করে। অন্তত অন্যদিন হলে ইচ্ছে করত।
যাই হোক, সেই বেতের চেয়ারগুলোতেই বসল ওরা। মা আবার ঘরের ভেতর থেকে ড্রইং খাতা আর প্যাস্টেল নিয়ে এল। তারপর যখন দেখল যে তিতলির ছবি আঁকাতেও কোনো উৎসাহ নেই, তখন নিজেই আঁকতে শুরু করে দিল ঘাসের জঙ্গলে দাঁড়িয়ে থাকা একটা মা গন্ডার আর তার বাচ্চা। দু-চোখ ভরে আবার জল এল তিতলির। বেচারা মিশা। এতক্ষণে হয়তো ওকে চিবিয়ে শেষ করে দিয়েছে গন্ডারের দল। ড্রইং খাতা থেকে তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকাল তিতলি।
ও মা! ঠিক দেখছে তো তিতলি? হোটেলের রিসেপশনে যে দাঁড়িয়ে আছে সে মাহুতকাকুই তো? আর মাহুতকাকুর হাতে ওটা মিশা না? হ্যাঁ, নিশ্চয়ই মিশা। ওই তো দু-রংয়ের দুটো চোখ—একটা কাচের চোখ, অন্যটা মায়ের সেলাই করে দেওয়া লাল বোতাম—দু-রকমের দুটো চোখ দিয়ে তিতলির দিকেই তাকিয়ে আছে। এক ছুটে হোটেলের রিসেপশনে চলে এল তিতলি। পিছন পিছন মা-বাবা।
“মণিমালা নে ঢুনকে দিয়া।” একগাল হেসে জানাল মাহুতকাকু।
আরো কথা বলতে জানা গেল সবকিছু। তিতলিদের পরে আরো দু-বার মণিমালা আজ সওয়ারি নিয়ে জঙ্গলে গেছিল। জঙ্গলের মধ্যে নাকি খালি মিশাকে খুঁজেছে মণিমালা, শুঁড় দিয়ে, চারদিকে শুঁকে শুঁকে। আর মিশাকে খুঁজে পেয়ে নাকি শুঁড় ঘুরিয়ে সোজা তুলে দিয়েছে মাহুতকাকুর হাতে। আর যেহেতু হোটেল থেকেই তিতলিদের সাফারির বুকিং হয়েছিল, ওদের খুঁজে পেতেও অসুবিধা হয়নি মাহুতকাকুর।
পুরো স্বপ্নের মতো শোনাচ্ছে ব্যাপারটা। এরকমও হয় তাহলে! মিশা, তিতলি, তিতলির কান্না সবকিছু মনে রেখে দিয়েছিল মণিমালা! বাবা একবার বলেছিল বটে যে হাতিদের সব মনে থাকে। আর মায়ের কাছে তো একটা বইই আছে, ‘এলিফ্যান্টস ক্যান রিমেমবার’। কিন্তু মণিমালাকে না চিনলে কি আর এভাবে বোঝা যেত যে সত্যিই এলিফ্যান্টস ক্যান রিমেমবার?
“ধন্য হাতি, ধন্য মণিমালা! আর সাবাস মিশা। একদম একা একা গন্ডারদের ডেরায় এতক্ষণ কেমন কাটিয়ে এল দিব্যি! ক্রিসমাস ডেতে তোর অ্যাডভেঞ্চারটা ভালোই হল, কী বল? তোর মতো সাহস কিন্তু কোনো সত্যিকারের ভালুকেরও নেই।” মিশাকে জড়িয়ে ধরে ওর কানে কানে বলল তিতলি।
অলঙ্করণ- সৃজন কাঞ্জিলাল
জয়ঢাকের সমস্ত গল্প ও উপন্যাস
What a lovely story! It reminds me of a mother-child pair of deer I had once seen in the long grass in a suburban area. When the mother saw me, she started bounding away in fright but the baby stood and stared at me amazed, far too curious to be frightened. Misha would have liked to see them.
LikeLike