এই লেখকের আগের গল্প- প্র্যাকটিক্যাল
“ধী বিশ্বাস…”
ক্লাস টিচার ছেলের নাম ধরে ডাকতেই ওর হাত ধরে এগিয়ে গেল সম্বিত। টিচারের বাড়িয়ে দেওয়া কাগজে ছেলের নামের পাশে অভিভাবকের স্বাক্ষর করল।
মিস গেইল ধীকে বুকে টেনে নিলেন। কপালে চুমু দিলেন। সম্বিতের হাতে ছেলের রিপোর্ট কার্ড তুলে দিয়ে বললেন, “দিস টাইম ইওর সান হ্যাজ সিকিওরড ফার্স্ট পজিশন, স্যার। কনগ্রাচুলেশন। প্লিজ মিট প্রিন্সিপাল স্যার।”
“থ্যাঙ্কস ম্যাম।” ক্লাস টিচারকে ধন্যবাদ দিল সম্বিত। ছেলেকে বলল, “গিভ থ্যাঙ্কস টু ম্যাম।”
“থ্যাঙ্ক ইউ ম্যাম।” নির্লিপ্ত উচ্চারণ করল ধী এবং বাবার হাত ধরে দরজার দিকে টানল।
রেজাল্ট নিতে আসা সব গার্ডিয়ানদের দিকে হাত নাড়ল সম্বিত। টা টা।
ক্লাসের বাইরে বেরিয়ে ছেলের মাথার চুল ঘেঁটে দিল। করিডোর দিয়ে হাঁটতে লাগল। সম্বিতের হাত টেনে ধী বলল, “বাবা, প্রিন্সিপালের কাছে আমি যাব না।”
“কেন যাবে না? তোমার স্কুল। ম্যাম বললেন যেতে। শুনলে না?”
“শুনেছি। কিন্তু আমি যাব না। ইউ মে…”
ছেলের কথা কাড়ল সম্বিত। দাঁড়িয়ে পড়ে বলল, “নট মে, সে মাস্ট। এটা কার্টসি বেটা।”
“ম্যাম তো তোমাকে বলেছে প্রিন্সিপাল স্যারকে মিট করতে। আমাকে তো বলেনি!”
ছেলের কথা শুনে ঠোঁট ছড়িয়ে হাসল সম্বিত। ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে বলল, “তোমার অভিমান হয়েছে বেটা?”
বাবার মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল তাকিয়ে ধী বলে, “অভিমান কী, বাবা?”
“অভিমান?” ছেলেকে কোল থেকে নামিয়ে সম্বিত বলে, “অভিমান মানে রাগ।”
“আমি রাগ করিনি বাবা।”
“জানি সোনা। অভিমান ঠিক রাগ নয়, ভ্যানিটি। পরে বুঝিয়ে বলব। এখন চলো। দেখে হাঁটো।”
প্রিন্সিপালের চেম্বার একতলায়। সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে ছেলেকে বোঝাতে লাগল। বলল, “তোমাকে নিয়েই প্রিন্সিপাল স্যারকে মিট করতে বলেছেন গেইল ম্যাম। এটা প্রোটোকল।”
“প্রোটোকল মানে?” ধী জানতে চাইল।
“নিয়ম বেটা।”
“রুলস?”
“একধরনের রুলস। তবে অফিসিয়াল।”
“অফিস আমি জানি বাবা। তুমি তো যাও।”
“হ্যাঁ, ধী। অফিসে অনেক নিয়মকানুন থাকে।”
“পোটো…?”
ধীকে থামিয়ে দিল সম্বিত। শুদ্ধ শব্দ শেখানোর তাগিদে কেটে কেটে উচ্চারণ করল, “প্রো-টো-ক-ল।”
মুখে হাসি ফুটিয়ে ধী বলল, “প্রোটোকল, অফিসিয়াল।”
“ঠিক বুঝেছ। এটা অফিসিয়াল ব্যাপার। এখন আমরা প্রোটোকল মেনে প্রিন্সিপালের অফিসে যাচ্ছি। তাই তো?”
সম্বিতের হাত টেনে দাঁড় করাল ধী। মিনতি করল, “আমাকে নিও না বাবা, প্লিজ! তুমি যাও।”
সম্বিত ঝুঁকল। প্রায় বসে পড়ে ছেলের মুখে সোজা তাকিয়ে বলল, “ভয় পেও না। আমি তো সঙ্গে আছি। প্রিন্সিপাল উইল অ্যাপ্রিসিয়েট ইউ।”
“আমি অ্যাপ্রিসিয়েশন চাই না বাবা। তুমি চাও?”
ছেলের প্রশ্নে ধাক্কা খেল সম্বিত। পায়ের তলার পৃথিবী কেঁপে গেল যেন। এ কী কথা বলল ধী, ওর সাফল্যের ভাগ পেতে উৎসুক সে!
“হ্যালো। হাউ আর ইউ?” চেনা মুখ গার্ডিয়ান সম্বিতের পাশে এসে দাঁড়ালেন। হেসে জিজ্ঞাসা করলেন, “ছেলের রেজাল্ট কেমন হল?”
সম্বিত হাসল। থাম্বস আপ দেখাল। ভদ্রলোক ধীয়ের গাল টিপে আদর করে দিলেন। নিজের মুঠির মধ্যে ধীয়ের দুই হাত জড়িয়ে নিয়ে ঝাঁকিয়ে বললেন, “ওয়েল ডান ডিয়ার, কনগ্রাচুলেশন!”
ধী মুখ নীচু করল দেখে ভদ্রলোক ওর হাত ছেড়ে দিলেন। সম্বিতকে বললেন, “ছেলে বড়ো লাজুক। ওকে। আনন্দ করুন। ওর মা কোথায়, আসেননি?”
“সে তার স্কুলে।”
“ম্যাডামেরও আনন্দ আজ। ইনফর্ম করেছেন তো?”
“বাইরে গিয়ে ফোন করব।”
“আরে মশাই এত প্রোটোকল আজ না মানলেও চলবে। এখান থেকেই কল করুন তো, ছোটো কল। হা হা। আজ কেউ কিছু বলবে না। দেখি, উপরে যাই। ছেলের মা আগেই চলে গেছে ক্লাস সিক্সে।”
ভদ্রলোক এগিয়ে যেতেই ধী মুখ তুলল। বাবাকে বলল, “আঙ্কল বলল প্রোটোকল!”
“হ্যাঁ। আমাদের মানতে হবে। লেটস মিট দ্য প্রিন্সিপাল। চলো।”
প্রিন্সিপালের অফিসের সামনে সেক্রেটারি বসেন। কাচের ঘর। কাচের কাটা অংশে মুখ বাড়াল সম্বিত। ভিতর থেকে কথা ভেসে এল, “ইয়েস প্লিজ!”
“আই অ্যাম ধী বিসওয়াসেস ফাদার।”
“হুইচ ক্লাস?”
“ক্লাস ফোর।”
একটা কাগজে চোখ বুলিয়ে সেক্রেটারি ম্যাডাম মুখ তুললেন। হাসি ছড়িয়ে বললেন, “প্লিজ ওয়েট। আই উইল কল ইউ।”
ধন্যবাদ জানিয়ে কাউন্টার ছেড়ে এল সম্বিত। দেখল ওদের আগে নারী-পুরুষ মিলিয়ে আটজন অপেক্ষা করছেন। সবার মুখে হাজার ওয়াট আলোর উজ্জ্বলতা ঝিলিক দিচ্ছে। ছেলেমেয়েদের প্রায় জড়িয়ে ধরে নীচু স্বরে গল্প করছেন গর্বিত মা-বাবা। সম্বিত ঘড়ি দেখল। কেন যে থারটি ফার্স্ট মার্চেই রেজাল্ট বের করে স্কুল! আজ ইয়ার এন্ডিংয়ের প্রবল চাপ ওর অফিসে। প্রিন্সিপালের সঙ্গে এখন দেখা করতে গেলে অফিস যেতে দেরি হয়ে যাবে। ছেলেটাও চাইছে না, ঘাবড়ে আছে প্রথমবার প্রিন্সিপালের চেম্বারে ঢুকতে হবে বলে। সম্বিতের মনে পড়ে যায়, ছেলেবেলায় হেড মাস্টারের ঘরে ডাক পড়লে ধীয়ের মতোই কেঁপে যেত ও। অন্য বন্ধুরাও ভয়ে সিঁটিয়ে যেত। এচ.এম. ছিলেন সাক্ষাৎ যমদূত! দিন পালটেছে। ছাত্র-শিক্ষক দূরত্ব অনেক কমে এসেছে। তবু নীচু ক্লাসের বাচ্চাদের ভয় স্বাভাবিক। আর সেটা যদি প্রথমবার হয় তো… আচ্ছা, প্রিন্সিপালের সঙ্গে দেখা করাটা তো নিছক সৌজন্য। নাকি আবশ্যিক? দেখা যাক, ভেবে সম্বিত ফের কাচের ঘরের সামনে গেল। ভিতর থেকে ‘ইয়েস প্লিজ’ আসার আগেই মুখ বাড়িয়ে বলল, “এক্সকিউজ মি। ইজ ইট ম্যান্ডেটারি টু মিট স্যার টুডে?”
“সরি স্যার। আর ইউ বিজি?”
“ইয়েস ম্যাম। আই অ্যাম টু অ্যাটেন্ড মাই অফিস। ইয়ার এন্ড…”
সেক্রেটারি তুরন্ত বললেন, “ওকে। স্টুডেন্ট’স নেম প্লিজ!”
ধীয়ের নাম শুনে মিসেস জুডিথ কাগজে কিছু একটা লিখলেন। তারপর মুখ তুলে সম্বিতকে বললেন, “জাস্ট কার্টসি ভিজিট স্যার। ইউ মে লিভ।”
গাড়িতে উঠে সম্বিত ছেলেকে জিজ্ঞাসা করল, “কী হল তোমার? ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছ অথচ মুখ কালো করে আছ? স্কুল থেকে বেরোনোর জন্য ছটফট করছিলে। শরীর খারাপ লাগছে?”
জানালার বাইরে তাকিয়ে ধী উত্তর দিল, “না বাবা। আই অ্যাম ফাইন।”
ছেলের চিবুক নিজের দিকে টেনে এনে সম্বিত বলল, “মুখ ঘোরাচ্ছ কেন? আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলো ধী।”
ফর্সা ধীয়ের মুখে যেন আরো অন্ধকার নেমে এল। সম্বিত হাত সরিয়ে নিল। ধী সামনের দিকে চেয়ে রইল। উদাস।
সম্বিতের মনে হল ছেলের কিছু একটা সমস্যা হয়েছে, কিন্তু বলছে না। ধীয়ের ভিতরে এই অস্বাভাবিকতা উদয় হয়েছে ও ফার্স্ট হয়েছে জানার পর থেকেই। যদিও বছরভর ক্লাস টেস্ট এবং ইউনিট টেস্টগুলোতে প্রথম স্থানেই থাকে ধী। আশ্চর্যজনকভাবে বার্ষিক পরীক্ষাতে দ্বিতীয় হয়ে যায়। শেষ পরীক্ষায় স্থানচ্যুতির একমাত্র কারণ অঙ্ক। প্রায় সব বিষয়ে একশো পেলেও অঙ্কে নব্বই বা তার কম পায় ধী। বাড়িতে অঙ্কের অনুশীলন বাড়িয়েছে। সেখানে ঠিকঠাক সমাধান করছে। কিন্তু শেষ পরীক্ষাতে এসে যত গোলমাল করে ফেলছে! এ নিয়ে সম্বিত বা ধীয়ের মা নীহারিকা কখনোই ছেলেকে বকাবকি করে না। ওরা কেবল খেয়াল রাখে ছেলেটা ঠিকমতো শিখছে কি না। সেটা যে ধী পারছে, সে ব্যাপারে দুজনেই নিশ্চিত। ছেলে প্রথম হল, নাকি কোনো স্থান পেল না এসবের কোনো গুরুত্ব ওরা দেয় না। বরং সারাবছর এগিয়ে থেকে শেষ পরীক্ষায় পিছিয়ে পড়া সত্ত্বেও ছেলের মুখের অম্লান হাসিটি ওদের তৃপ্ত করে। ছেলেকে নম্বরের ইঁদুর দৌড় থেকে দূরেই রেখে আসছে।
প্রথমবার বার্ষিক পরীক্ষায় অঙ্কে একশো পেয়ে যাওয়াতেই সারাবছরের ধারা বজায় রইল। ক্লাস ফোরে ধী ফার্স্ট বয় হল। অথচ ওর মধ্যে খুশির লেশমাত্র নেই, মুখ কালো করে আছে!
পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করল সম্বিত। দেখে ধী বলল, “বাবা, তুমি কি মাকে ফোন করছ?”
“না, টেক্সট করে দেব। মা তো এখন ট্রেনে স্কুল যাচ্ছে। কল করলে চেঁচামেচিতে হয়তো শুনতে পাবে না।”
“কী লিখবে মাকে? আমার রেজাল্ট?”
“হ্যাঁ।”
“লিখো না বাবা।”
“কেন বেটা, লিখব না কেন?”
“মা কি বলেছে তোমাকে, এক্ষুনি জানাতে?”
“তা বলেনি। তবু আমি লিখে রাখছি। যখন ফোন হাতে নেবে দেখতে পাবে।”
“মা কি স্কুলের সব আন্টিদের বলবে বাবা, আমি ফার্স্ট হয়েছি?”
“তা তো জানি না। বলতেও পারে, নাও পারে। কেন, তুমি কি চাও না মায়ের কলিগরা জানুক যে আমাদের ছেলে ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছে?”
“না, বাবা।”
সম্বিত ডানহাত দিয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলে, “কেন ধী? আমাকে বলো। তুমি ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছ, এটা তো গুড নিউজ। আর গুড নিউজ তো লোকে শেয়ার করে। মা যদি ওর স্কুলে শেয়ার করে সেটা তো ভালো বাবা।”
বাবার বুকে মুখ গুঁজে ধী বলে, “বাবা, আমি ফার্স্ট হতেই পারি না! সৌগতার হওয়ার কথা।”
ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে সম্বিত বলে, “হ্যাঁ, ঠিকই। সৌগতা ফার্স্ট হয়। কিন্তু এ-বছর ও তোমার থেকে টোটালে পাঁচ নম্বর কম পেয়েছে। আমি রেজাল্ট শিট দেখেছি। ক্লাসে তোমাদের দুজনের নেক টু নেক ফাইট। এবারে তুমি অঙ্কে ফুল মার্কস পেয়েছ।”
সম্বিতের বুক থেকে মুখ তুলে ধী বলে, “আমি ম্যাথসে হান্ড্রেড পেতেই পারি না!”
সম্বিত অবাক হল ছেলের কথা শুনে। মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “কেন পাবি না! তুই তো সব অঙ্ক পারিস। অন্যবার ভুল করে আসিস, নম্বর কেটে যায়। এবারে…”
সম্বিতের জামা টেনে ওর কথা থামিয়ে দিল ধী। বলে উঠল, “না, আমি অঙ্ক ভুল করি না!”
বলেই বাবার কাছ থেকে সরে গেল।
“ভুল না করলে টিচার তোকে কম নম্বর দেবেন কেন?”
সম্বিতের মুখে তাকিয়ে ধী ভয়ে ভয়ে বলল, “আমাকে মারবে না বলো?”
সম্বিত হেসে ফেলল। “আমি কি তোকে মারি বেটা? কখনো মেরেছি?”
আবার বাবার শরীর ঘেঁষে বসল ধী। সম্বিত ছেলেকে অভয় দিল, “মাও মারে না। মারে কি?”
“না বাবা, তোমরা আমাকে মারো না। কিন্তু সৌগতার মা ওকে খুব মারেন।”
“বাজে কথা। সৌগতা বলেছে তোকে?”
“আমি নিজেই দেখেছি আন্টি মারেন ওকে।”
“তুই কী করে দেখবি? বাড়িতে ছেলেমেয়েকে আদর করেন সব বাবা-মা। সৌগতাকেও করেন। ও ভুল বলেছে।”
“স্কুলেই মারেন ওকে। আমি দেখেছি।”
সম্বিত হেসে ফেলল। বলল, “ওর মা কি জে.ডি.এস.-এর টিচার যে স্কুলে বসে মেয়েকে মারবেন আর তুই দেখবি?”
“রেজাল্টের দিন মারেন তো! আন্টি রেজাল্ট নিতে আসেন। ইউনিট টেস্ট, হাফ ইয়ারলি। তখন তো আমি ফার্স্ট হই। বিল্ডিং থেকে লনে নেমেই আন্টি সৌগতাকে খুব বকেন। বলেন, ‘হাও ধী বিটস ইউ?’ বলেন আর মারেন। আমি দেখেছি। সৌগতা কাঁদে। আমার খুব কষ্ট হয় বাবা!”
সম্বিত আঁতকে বলে ওঠে, “সে কি!” ছেলেকে কাছে টানে। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “আমি আন্টিকে বলে দেব, তোমার বন্ধুকে আর মারবেন না উনি। তুমি কষ্ট পেও না।”
“আজ তো খুব মারবেন আন্টি। বাড়িতে গিয়েও মারবেন। ফাইনালে সেকেন্ড হয়ে গেল যে!”
“না না, মারবেন না। দাঁড়াও আমি ফোন করে বলে দিচ্ছি।”
“তুমি আন্টির ফোন নম্বর জানো বাবা?”
“সেও তো কথা। আমার কাছে নম্বর নেই। মা জানতে পারে হয়তো।”
“মা আন্টিকে লাইক করে না বাবা।”
ছেলেকে মৃদু ভর্ৎসনা করে সম্বিত বলে, “এসব কী বলছ ধী! চুপ করো।”
ধী চুপ করে যায়।
সম্বিত ভাবতে থাকে। তার মানে নীহারিকা জানে মায়ের হাতে বালিকা সৌগতার লাঞ্ছনা। ধী নির্ঘাত বলেছে ওর মাকে। নীহারিকা কথা বলে সৌগতার মায়ের সঙ্গে। শিক্ষিকা হিসাবেই হয়তো বোঝানোর চেষ্টা করেছে শিশুনিগ্রহ না করতে। ভদ্রমহিলাকে আজ দেখেছে সম্বিত। মেয়ের রেজাল্ট নিতে এসে সামনের সারিতে বসে ছিলেন। সৌগতার বাবাও ছিলেন। ধীয়ের রিপোর্ট কার্ড নেওয়ার পর সম্বিত খেয়াল করেনি ওঁদের চোখমুখের অভিব্যক্তি। সেই কারণেই কি ধী তখন দ্রুত বেরিয়ে যেতে চেয়ে ওর হাত ধরে টানছিল?
ভাবনা ছেড়ে ধীকে জিজ্ঞাসা করল, “আঙ্কলও কি ওকে রেজাল্ট নিয়ে বকাঝকা করেন? সৌগতা বলেছে তোকে?”
প্রশ্ন করেই সম্বিত বুঝল ঠিক হল না ধীকে এটা জিজ্ঞাসা করা। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলল, “লিভ ইট বেটা!”
সম্বিতের ফোন বেজে উঠল। জে.ডি.এস থেকে কল দেখে অবাক হল।
“হ্যালো… নো আই কান্ট গো ব্যাক নাও।… কী?… চ্যালেঞ্জ?… সৌগতার মা?… ওকে ম্যাম, আপনি পেপার চেক করুন।… করেছেন? নাইনটি ইন ম্যাথস?… প্লিজ হোল্ড অন!”
স্পিকারের দিকটা চাপা দিয়ে সম্বিত ছেলেকে জিজ্ঞাসা করল, “তুই সব অঙ্ক কষিসনি? ইউ ডিডন্ট সলভ অল?”
মুখ নামিয়ে ধী বলল, “আমি আগেই বলেছি, ম্যাথসে হানড্রেড পাব না।”
“কেবল আমার প্রশ্নের উত্তর দে। সব অঙ্ক করেছিলি, না করিসনি?”
“দশ নম্বরের একটা অঙ্ক ছেড়েছিলাম। টু সি সৌগতা হ্যাপি। আন্টি যেন না মারেন ওকে!”
নিজের ঠোঁটে আঙুল রেখে ধীকে চুপ করিয়ে দিল সম্বিত। ফোনে বলল, “ডোন্ট ফিল গিল্টি ম্যাম। আপনি চেক করেছেন ধী সব অঙ্ক ঠিক কষেছে এবং হানড্রেড দিয়েছেন নাম্বারস টোটাল না করেই। হাউ কুড ইউ ইমাজিন যে ধী সৌগতাকে ফার্স্ট দেখতে চায়!… ইয়েস ম্যাম।… গোয়িং ব্যাক টু স্কুল।”
ফোন বুক পকেটে রেখে ধীয়ের কপালে চুমু খেল সম্বিত। পিঠ চাপড়ে বলল, “ফিলিং প্রাউড অফ ইউ বেটা। এবার থেকে সব পরীক্ষায় দশ নম্বর ছেড়ে দিবি।”
এতক্ষণে ধীয়ের মুখে হাসি ফুটল। সম্বিতের কোলে উঠে পড়ল। মুখোমুখি হয়ে বলল, “ম্যাথসে ছাড়ব নম্বর? ফর সৌগতা?”
সম্বিত হেসে দিল, “হ্যাঁ, অঙ্কে। কিন্তু সৌগতার জন্য ছাড়বি না।”
ধী অবাক হয়ে বলে, “আমি তো ওর জন্য ছাড়ি বাবা!”
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সম্বিত। উদাস গলায় বলল, “স্পেয়ার ফর আন্টি।”
ধীয়ের গলায় বিস্ময়, “স্পেয়ার!”
সামনে রাস্তায় ক্রসিং দেখে রশিদ হর্ন বাজাল। ধীয়ের কথার সূত্রে সম্বিতকে বলল, “স্পেয়ার পার্টস দাদা?”
সম্বিত হো হো করে হেসে উঠল।
ধী বাবার মুখে চাইল। হাসল।
হাসি থামিয়ে সম্বিত বলল, “রসিদ, টেক ইউ টার্ন।”
মন্তব্য দেখছি না!
LikeLike
সব মন্তব্য এসে গেছে।
LikeLike
বুঝলাম যে কেউ মন্তব্যই করেননি!
LikeLike