দেবদত্তা ব্যানার্জির আগের গল্প- আনসেখামুনের হৃদয়
খবর কাগজ খুলেই চমকে উঠেছিল রুবাই। আশাবরী টি-এস্টেটের মালিক অতনু সিনহার একমাত্র ছেলে ঐতিহ্যকে কাল বিকেল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। ঐতিহ্য রুবাইদের স্কুলেই ক্লাস ফাইভে পড়ত। এবছর লক-ডাউনের জন্য ঘরে বসেই অনলাইনে ক্লাস হয়। তাই নিজের ক্লাসের বাইরে কারো সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ হয় না আর। ঐতিহ্য খুব ভালো ফুটবল খেলত। পড়াশোনাতেও ভালো ছিল।
খবরটা এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলে রুবাই। ঐতিহ্যর ছবি দিয়েছে বড়ো করে। লিখেছে, কাল বিকেলে ঋতেশ দাশ ওর আঁকার স্যার ওকে আঁকা শেখাতে যায়। তখন সবাই খেয়াল করে ও বাড়ি নেই। মালি বলেছে, সে চারটে নাগাদ ওকে লনে খেলতে দেখেছিল। দারোয়ান বিকেলে কিছুক্ষণ গেট ছেড়ে ভিতরে গিয়েছিল। প্রথমে সবাই ভেবেছিল ও হয়তো আশেপাশে কোথাও আছে। কিন্তু সন্ধ্যার পরেও যখন ঐতিহ্য ফিরল না, ওর বাবাকে ফোন করেছিল বাড়ির কাজের লোকেরা। খবরে লিখেছে, ওর মা অহনাদেবী মহিলা সমিতির কাজে সেদিন পাশেই নিউমালে গিয়েছিলেন। ওর বাবা ছিলেন ফ্যাক্টরিতে। অপরেশ সিনহা, ওর দাদু গত কয়েক মাস ধরে বিছানায়, একটা স্ট্রোক থেকে পঙ্গু হয়ে পড়ে আছেন। দুজন কাজের লোক ব্যস্ত ছিল কাজে। কেউ ঐতিহ্যকে দেখেনি। পুলিশ এদিকে রিপোর্টারদের বাংলোর কাছে যেতে দিচ্ছে না, তাই কেউ মুক্তিপণ চেয়েছে কি না জানা যায়নি। অতনুবাবু পুলিশে খবর দিয়েছিলেন রাত ন’টায়।
রুবাই বাবা-মাকে খবরটা জানিয়েই ওর গেম টিচার অন্বয়দাকে ফোন করল। অন্বয়দা সপ্তাহে দু-দিন ঐতিহ্যকে ক্যারাটে শিখাতে যেত ওদের বাংলোতে।
ফোন তুলেই অন্বয়দা সব শুনে বলে, “সকালেই শুনেছি খবরটা। আমি এখন ওদের বাড়ি যাচ্ছি।”
“আমি কি যেতে পারি তোমার সঙ্গে?”
রুবাই ঝুলে পড়ে। বেশ কয়েকটা রহস্য সমাধান করে ওর এখন একটু নামডাক হয়েছে। অন্বয়দাও ওকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়। না করতে পারে না।
একটু পরেই অন্বয়দার বাইকে চড়ে নাকে মাস্ক আর মাথায় ক্যাপ পরে রুবাই বেরিয়ে যায়। বাংলোটা এন.এইচ. ৩১-এর ধারে, চা বাগানের একটু ভেতরে। একটু দূর দিয়েই গেছে রেল লাইন। দূর থেকে বাংলোটা বেশ কয়েকবার দেখেছে রুবাই। চারদিকে বাগান, ঘন চাইনিস ঘাসের বেড়া দেওয়া। তবে পিছন দিয়ে শঙ্খিনী নদীতে নামার একটা পথ আছে। শঙ্খিনী একটা ছোট্ট পাহাড়ি নদী, বর্ষায় জলে ভরে ওঠে। শীতে পায়ের পাতা ভেজা জল, কখনো-বা পুরো শুকিয়েও যায়। নদীর ব্রিজ থেকে সবুজ চা বাগানের শেড-ট্রির ফাঁকে বাংলোটা দেখা যায়।
রুবাইরা পৌঁছে দেখল বেশ থমথমে পরিবেশ। ঐতিহ্যর মা ভেতরের ঘরে বসা। ওর বাবা আর পুলিশ অফিসার ভাওয়ালবাবু কথা বলছেন। জানা গেল, এক কোটি টাকা মুক্তিপণ চেয়ে একটা উড়ো চিঠি এসেছে। বলা হয়েছে পুলিশ সরিয়ে দিতে বাড়ি থেকে। টাকা জোগাড় করতে হবে দু-দিনের ভেতর। আর তা কোথায় কীভাবে নেবে পরের চিঠিতে জানানো হবে। আজ দুপুরের মধ্যে পুলিশ না সরলে ওরা আর যোগাযোগ করবে না।
বেশ কিছু রহস্য উদঘাটন করে রুবাই এখন এলাকার পরিচিত মুখ। ওকে টিভিতেও দেখিয়েছে কয়েকবার। অফিসার ভাওয়াল আর ও.সি. মন্দার সেনও ওদের পরিচিত।
রুবাইকে দেখেই মন্দার বললেন, “আরে রুবাই, এই ঐতিহ্য কি তোমার বন্ধু?”
“আমাদের স্কুলেই পড়ত, তবে জুনিয়র।”
ওরা বসে ছিল চওড়া টানা বারান্দায় বেতের সোফায়।
“পেপারে খবরটা কী করে বের হল জানি না। ভয় পাচ্ছি যে ছেলেটার না কোনও ক্ষতি হয়ে যায়। আপনারা প্লিজ চলে যান, ওরা তাই বলেছে।” অতনু সিনহা হাতজোড় করে মন্দার সেনকে বলেন।
“দেখুন, অমন ভয় ওরা দেখাবেই। অপরাধীদের শাস্তি দেওয়াই আমাদের কাজ।”
“তাহলে এখানে বসে না থেকে অপরাধীকে খুঁজুন। আমাদের একটু একা ছেড়ে দিন।”
“আপনি বলুন, কাউকে আপনার সন্দেহ হয়?”
“সন্দেহ? আমি ব্যবসায়ী মানুষ। চারদিকেই শত্রু। বাগানেও নানা ঝামেলা চলছে। ইউনিয়নের ছেলেরাও আমার শত্রু। কার কথা বলি বলুন তো?”
কাগজে লাল আলতা বা রঙ-তুলি দিয়ে বড়ো বড়ো করে লেখা চিঠিটা ভাওয়ালবাবু হাতে তুলে নেন। বলেন, “এ তো হাতে লেখাও নয় ঠিক। পোস্টার। কীভাবে দিল এটা?”
“গেটে আটকে দিয়ে গিয়েছিল সকালে।”
“বাংলায় লিখেছে।”
“এখানকার আদিবাসী শ্রমিকরাও বাংলা জানে।” ভেতর থেকে উত্তর দেন ঐতিহ্যর মা অহনা।
“আপনার কাউকে সন্দেহ হয়?”
অফিসারের প্রশ্নে বাইরে বেরিয়ে আসেন অহনা। বলেন, “আপনাদের একটা কথা জানানো প্রয়োজন। মানে, কথাটা হল…”
“আমি বলছি অফিসার। অহনা আমার দ্বিতীয় স্ত্রী। ঐতিহ্যর মা ওকে জন্ম দিয়েই মারা যায়। সে-সময় অহনা এসেছিল ওর নার্স কাম গভর্নেস হয়ে। ঐতিহ্য ওকেই মা বলে ডাকত। সে-সময় আমি আলিপুরদুয়ারের ওখানে আমাদের আরেকটা বাগানে ছিলাম। তিন বছরের ঐতিহ্যকে স্কুলে ভর্তি করার সময় আমি অহনাকে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করি। ঐতিহ্য যখন সাত বছরের, তখন আমরা এই বাগানে এসেছি। কারণ, অহনাকে বিয়ে করার পর ঐতিহ্যর মামারা খুব ঝামেলা করেছিল। ওরা ঐতিহ্যকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। ওর দুই মামাই শিলিগুড়িতে থাকে, দিদাও আছেন। ঐতিহ্য অবশ্য অহনাকেই মা বলে জানে। কিন্তু অহনার ধারণা হয়েছে, ও যেহেতু সৎ মা, আপনারা ওকেই সন্দেহ করবেন।”
“ইন্টারেস্টিং! আপনার ওই দুই শালাবাবুর নামঠিকানা দিন। তবে আপনারা কেউই সন্দেহের ঊর্ধ্বে নন। জেরা সবাইকেই করব।” মন্দার বলেন।
“আর, আলিপুরদুয়ারের কাছে আমার যে বাগানটা আছে ওটার ৪৫% শেয়ার আমার এক বন্ধুর। ইদানীং ও পুরোটা কিনে নিতে চাইছিল। আসলে বাগানটা গত চার বছর ধরে ওই বন্ধু আরবই দেখে। কিন্তু এত ভালো লাভজনক বাগানটা আমি বিক্রি করতে চাইছিলাম না। তাই নিয়ে একটা ঝামেলা চলছে। ও চাপ দিয়ে কিনতে চাইছে।”
“তাঁর নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর দিন।”
“ঐতিহ্যর জন্য আমার খুব চিন্তা হচ্ছে অফিসার। ওর ঠান্ডা লেগে শ্বাসকষ্ট হয় এই সিজনে। গত মাসেও ডাক্তার দেখিয়েছি। ইনহেলার নেয়। রোজ রাতে ওষুধ খায় একটা মনটেয়ার এলসি কিড।” অহনা বলেন।
“এটা চিন্তার বিষয় কিন্তু। এক কাজ করতে পারেন, ওর ওষুধের নামগুলো আর কখন খায় লিখে গেটে টাঙিয়ে দিন। ওরা হয়তো লক্ষ রাখছে, পেয়ে যাবে।” ভাওয়াল বলেন।
আর দু-একটা কথা বলে ভাওয়াল আর মন্দার সেন টিম নিয়ে চলে গেলেন।
পুলিশের গাড়িটা চলে যেতেই অতনুবাবু রুবাইদের নিয়ে ড্রইং রুমে এলেন। এক পরিচারক বাগানের টাটকা চা আর কুকিজ রেখে গেল। রুবাই চা খায় না, ওর এখন ক্লাস এইট।
চা-পর্ব মিটতেই ওরা ভেতরের ঘরে ঐতিহ্যর দাদুর সঙ্গে দেখা করতে গেল। ভদ্রলোক বেড রিডেন প্রায় চার মাস। প্রথম দু-মাস নেওটিয়া হসপিটালে ছিলেন, গত দু-মাস বাড়িতে ফিরেছেন। একজন সবসময়ের আয়া আছে। ভদ্রলোক ঘুমোচ্ছিলেন।
আয়া বলল, “খুব ভেঙে পড়েছেন বলে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে।”
রুবাই অহনাকে বলে, “আন্টি, ঐতিহ্যর ঘরটা একটু ঘুরে দেখব?”
অহনা ওদের ভেতরের প্যাসেজের শেষ ঘরটায় নিয়ে যান। কুড়ি বাই চব্বিশ, বেশ বড়ো ঘর। সঙ্গে ছোটো বারান্দা রয়েছে। এদিক দিয়ে বাড়ির পিছন দিকে যাওয়া যায়। ফুল-বাগানের মাঝে একটা দোলনা রয়েছে। মালি জানাল, ওখানেই শেষ খেলতে দেখেছিল ঐতিহ্যকে। তারপর ঐহিত্য সামনের লনে ফুটবল নিয়ে খেলতে চলে যায়।
ঘরের চারদিকে বেশ কিছু খেলনা রয়েছে। আরেকদিকে পড়ার টেবিলে বই, আঁকার সরঞ্জাম, আঁকার খাতা। স্যার আসবেন বলে হয়তো গুছিয়ে রেখেছিল।
রুবাই বলে, “ওর আঁকার স্যার ক’টায় এসেছিলেন?”
“সাড়ে পাঁচটায় আসেন।” অহনা উত্তর দেন।
ঘরটা ঘুরে দেখতে দেখতে রুবাই বলে, “বাংলোর ভেতর কেউ এসে ওকে নিয়ে যায়নি। এত সাহস কারও হবে না। কিন্তু ও কেন বাইরে গেল?”
“ও কি বাগানে একা বেরিয়ে যেত?” অন্বয় প্রশ্ন করে অহনাকে।
“খুব কম। বাগানে একা গিয়ে কী করবে! এই বাগানে ওর কোনও বন্ধু নেই। আগে তবু সকালে হাঁটতে যেত। বাবা, মানে ওর দাদু অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তাও বন্ধ। বাড়ির গাড়িতেই মালবাজার বা স্কুল যেত আগে। এখন তো পুরো ঘরবন্দি।”
“ওর সেই বলটা কোথায়?” রুবাই চারদিকে তাকিয়ে বলে।
“কোন বল?” অতনুবাবু বলেন।
“ওই যে মালি বলল ও বল খেলছিল সামনের লনে। সেই ফুটবলটা কোথায়? বলটা কি কেউ তুলে রেখেছে?”
একে একে সবাইকে প্রশ্ন করা হল, কেউ বলটা দেখেনি। অথচ মালি বলছে, ও বল খেলছিল।
“হতে পারে বলটাই বাউন্ডারির বাইরে চলে গিয়েছিল। আর সেটা আনতেই ও বাইরে যায়।” অহনা বলেন।
“অপহরণকারী জানল কী করে ও ওই সময় গেটের বাইরে যাবে? তাহলে তো তাকে গনৎকার বলতে হয়।” রুবাই বলে।
সবাই চুপ।
“আপনারা তবুও চারদিকটা একটু খুঁজে দেখবেন তো, বলটা কোথায় গেল।” অন্বয়দা বলে অতনুবাবুকে।
একটু পরে রুবাইরা বাড়ি ফিরে আসে। সারাটা পথ রুবাই পরপর ঘটনাগুলোকে ভাবছিল।
বাড়ি ঢুকতে গিয়ে ও অন্বয়দাকে বলে, “মন্দারদাকে ফোন করো তো। একটা কাজ করতে হবে।”
“কী কাজ?”
“মালবাজার সহ আশেপাশের সব ওষুধের দোকানে খোঁজ নিতে বলো, কাল বিকেলের পর থেকে কেউ ঐতিহ্যর ওই ওষুধ আর ইনহেলার প্রেসক্রিপশন ছাড়া কিনেছে কি না।”
“এটা তো খড়ের গাদায় সূচ খোঁজা। মালবাজারে কমপক্ষে তিরিশটা ড্রাগ স্টোর রয়েছে। কিন্তু যদি শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি-ময়নাগুড়ি থেকে নেয়? কত জায়গায় খোঁজ নেবে?”
“মালবাজার-ওদলাবাড়ি-ডামডিম-চালসার দোকানে খোঁজ নিক। এসব জায়গায় বেশি দোকান নেই।”
“ওরা যে ওষুধ কিনবেই তার কী গ্যারেন্টি? যদি না কেনে?”
“দেখা যাক।”
পরদিন সকালে রুবাই অন্বয়দার সঙ্গে থানায় গিয়েছিল। ঠান্ডার জন্য অন্বয়দা নিজের গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিল। কাল সারাটা রাত ভেবেও রুবাই তেমন কোনও সূত্র খুঁজে পায়নি।
থানায় ঢুকতেই মন্দারদা জানালেন, “ঐতিহ্যর মামাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ওর বড়ো মামা চা পাতার ব্যাবসা করে এখন। লক-ডাউনে ব্যাবসার অবস্থা বেশ ডাউন। ছোটো মামা সিটি সেন্টারে একটা ছোটো রেস্তোরাঁ খুলেছে। সেটাও ফেব্রুয়ারিতে ওপেনিংয়ের পর ভালো চললেও লক-ডাউনে চার মাস বন্ধ ছিল। এখন খুললেও লোক হয় না। টাকার প্রয়োজন দুজনেরই রয়েছে। ওরা ঐতিহ্যর খবরটা পেপারে পড়ে নিজেরাই থানায় যোগাযোগ করেছিল কাল বিকেলে। বোনের ছেলেকে নিয়ে ওরা যথেষ্ট চিন্তিত। ওদিকে আরব সিংহানিয়ার অবস্থাও লক-ডাউনে বেশ খারাপ। এখন আর বাগান কিনে নেওয়ার কথা ভাবছেন না। তবে ৬% শেয়ার কিনতেই পারেন। তাহলে ৫১% শেয়ার পেয়ে যাবেন উনি।”
“আশাবরীর ব্যাবসা কেমন চলছে?” অন্বয় বলে।
“ভালো নয়। টি-ইন্ডাস্ট্রির অবস্থাই তো ভালো নয়। অতনুবাবুর বাগান ধুঁকছে। উনি বাগান বিক্রি করে রিয়েল এস্টেটে ইনভেস্ট করতে চাইছেন খবর আছে। কিন্তু বাগান তো এখনও ওঁর বাবার নামে।”
“ওষুধের খোঁজটা?” রুবাই প্রশ্নটা করেই ফেলে।
“না, ওই ওষুধটা বেশ কমন। অনেকেই কেনে। তবে ইনহেলারটা কমন নয়। খোঁজ চলছে তবু।”
“প্রেসক্রিপশন ছাড়া ইনহেলারটা কেউ কিনলেই পুলিশে খবর দেয় যেন এভাবে বলে দিন।”
তখনই ভাওয়ালবাবুর ফোনটা বেজে ওঠে। ধরতেই একটি অচেনা গলা ভেসে আসে।
ফোনটা রেখে মন্দারদা বলেন, “ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের ফোন। অতনুবাবু এক কোটি টাকা তুলতে আসবেন দুপুরে। তার মানে মুক্তিপণ দিচ্ছেন উনি। চলো, একবার ঘুরেই আসি। আজ আমি প্লেন ড্রেসে যাব ভেবেছি। থানার গাড়িও নেব না।”
“আমরা গাড়ি এনেছি, আমাদের সঙ্গেই চলো।”
অন্বয়দার গাড়িতেই ওরা আবার আশাবরী টি-এস্টেটে পৌঁছে গেল।
আজ বোধ হয় রুবাইদের দেখে একটু বিরক্ত অতনুবাবু। গম্ভীর হয়ে বললেন, “আজ আমি একটু ব্যস্ত। বেরোতে হবে একবার।”
“মি. অতনু সিনহা, আমরা আপনাকে সাহায্য করতে চাই। তাই আমাদের জানান যে টাকাটা কোথায় কীভাবে নেবে ওরা।”
“আমি ঐতিহ্যকে ফেরত চাই। এক কোটি টাকার থেকে ওর জীবনের দাম অনেক বেশি আমার কাছে। ও আমার সন্তান, শ্রীতমার একমাত্র স্মৃতি।”
“আমরাও তাই চাই। ওর ক্ষতি হবে না। আমরা জানি আপনি ব্যাঙ্কে যাবেন এখন। আপনি শুধু বলুন টাকাটা কী করে ওদের হাতে দেবেন আর কখন।”
“ওয়েল, আমি বলছি। শঙ্খিনী নদীর ব্রিজের ওপারে চা বাগানের ভেতর তিন নম্বর বড়ো শেড-ট্রির নীচে একটা কালো ব্যাগে টাকাটা রেখে আসতে হবে। আজ রাত আটটায়।”
“দারুণ। রাতের বেলায় চা বাগানের ভেতর কেউ নীচু হয়ে বুকে হেঁটে এসে ব্যাগটা নিয়ে গেলে দেখাও যাবে না।” মন্দার বলেন।
“কিন্তু আমার ছেলের জন্য এটা করতেই হবে আমায়। আপনারা বাধা দিতে পারেন না।”
“এতগুলো টাকা কি ব্যাঙ্কেই ছিল এভাবে?”
“হ্যাঁ, মানে না। ওই ১০% শেয়ার বিক্রি করলাম আরবকে। ও সব শুনে টাকাটা ট্রান্সফার করে দিয়েছে একটু আগে, বাকিটা ছিল। হার্ড ক্যাশ তুলব, ব্যাঙ্ককে বলেছি আজই চাই। আর সব একশোর নোটে।”
“আমাদের একটা কথা রাখবেন?” ভাওয়ালবাবু বলেন।
“না, নকল নোট বা অন্য কিছু আমি দেব না। তবে ঐতিহ্য বাড়ি ফিরে এলে আপনারা যা ইচ্ছা অ্যাকশন নিতে পারেন। টাকা দেওয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যে ওদের কথামতো ঐতিহ্যকে ফেরত পাব।”
“ওরা আজ কি চিঠি দিয়েছিল, নাকি ফোন করেছিল?”
“চিঠি, লাল রঙে লেখা।” বেতের টেবিলের নীচ থেকে এ-ফোর সাইজের কাগজটা এগিয়ে দেন অতনুবাবু। ভাওয়ালবাবু সেটা দেখে রুবাইয়ের হাতে দেন।
রুবাই আর অন্বয় চিঠিটা খুঁটিয়ে দেখে। রুবাই নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ শোকে। তারপর বলে, “রঙ শুকালেও গন্ধ রয়েছে। ক্যামেল কালার, কয়েক ঘণ্টার ভেতর লিখেছে চিঠিটা।”
“ঐতিহ্য আমার জীবনের সব। ওকে ওর মামাদের হাতে দিইনি, ওরাই বোধ হয় আমার এত বড়ো ক্ষতি করল। পেপারে খবরটা দেখে একটা বার ফোন করেনি জানেন! আমার ছেলেকে কেন দেব ওদের হাতে? অহনাকে ও মা বলেই মানে। ওরা আগেও একবার ওর স্কুলে এসে ওকে ভুলভাল বুঝিয়েছিল।”
“ওদের সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছি। শিলিগুড়ি পুলিশকে সব জানিয়েছি।”
“ঐতিহ্যকে বঞ্চিত করব না বলে অহনা আর আমি দ্বিতীয় কোনও সন্তান নিইনি। এই টাকা ক’টা ওর জীবনের থেকে বড়ো নয়।” উঠে পড়েন অতনুবাবু।
হুইল চেয়ারে করে অপরেশবাবুকে বারান্দায় নিয়ে আসেন অহনা। ভদ্রলোক যথেষ্ট ভেঙে পড়েছেন।
“একটু পরেই উকিলবাবু পেপার নিয়ে আসছেন। বাবা, তুমি সইগুলো করে দিও। বাকিটা আমি দেখছি।”
“শেয়ার কি ওঁর নামে?”
“হ্যাঁ, ব্যাবসা সবই বাবার নামে। আমি তো একমাত্র সন্তান, তাই সবই আমার ভাবতেই পারেন। কিন্তু যতদিন বাবা আছেন, আমি বাবার ছত্রছায়ায় রয়েছি।”
“ওকে, যদি প্রোগ্ৰাম কিছু চেঞ্জ হয় জানাবেন। নয়তো আপনি যেভাবে ভেবেছেন রাতে তাই করুন। আমার লোক থাকবে প্লেন ড্রেসে।”
“আমার মন বলছে যারা এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত আপনার খুব কাছের লোক। আপনি কি এখনও বুঝতে পারছেন না কে রয়েছে পর্দার আড়ালে?” রুবাই বলে।
“আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না। আগে ঐতিহ্য বাড়ি ফিরুক, তারপর ভাবব এসব। এখন ব্যাঙ্কে যেতে হবে। আমি উঠব।”
অতনুবাবুর এ-কথার পর সবাই উঠে পড়ল। রুবাই শুধু অহনাকে বলল, “বলটা কি খুঁজে পেলেন, আন্টি?”
“না, পাইনি। আর… আর… জানি না, মানে…”
“কী হয়েছে আন্টি? আর কিছু বলবেন?”
“ঐতিহ্যর মেডিক্যাল ফাইলে ওর প্রেসক্রিপশনটা নেই। মানে গতমাসের প্রেসক্রিপশনটা…”
“অন্য কোথাও আছে হয়তো। ওটা দিয়ে তুমি কী করবে?” অতনুবাবু বলেন।
“ওই যে ওরা কাল বলল ওষুধের নামগুলো যদি অপহরণকারীকে পৌঁছে দেওয়া যায়, তাই…”
“হোয়াট! কী করে পৌঁছে দিতে? তুমি কী বলছ এসব! তুমি কি চেনো তাদের?”
“লিখে গেটে ঝুলিয়ে দিতাম। কাল রাতে মনে পড়েছিল কথাটা। তুমি ছিলে না তখন। প্রেসক্রিপশন থেকে নামগুলো লিখব ভেবে ফাইলটা খুলেই দেখি নেই!”
“অন্য কোথাও রাখা আছে। এখন যাও তুমি। বাবাকে খাইয়ে দাও। উকিলবাবু আসবেন এখনই।”
ফেরার পথে রুবাই একদম চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। থানার কাছে ভাওয়ালবাবুকে নামানোর সময় ও বলল, “প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে ওষুধগুলো কে কিনেছে এবার সেটা খোঁজ নিন। ওদের বাড়ির কাজের লোকগুলোর গতিবিধি ওয়াচ করুন।”
“আমি একটা জিনিস ভাবছি, ওদের বাংলোটা বড়ো রাস্তা থেকে এক কিমি ভেতরে। বাচ্চাটাকে তো আর অতটা কেউ হাঁটিয়ে আনেনি। বাইকে করেও অপহরণ হয়নি। একমাত্র যদি কোনও চেনা লোক ওকে না ডেকে থাকে।” অন্বয় বলে।
“আমি দৃশ্যটা যেন দেখতে পাচ্ছি। ঐতিহ্য বল খেলছিল। পরিচিত কেউ এসে ডাকে। ও বল হাতেই বেরিয়ে যায়। হয়তো তার গাড়ি বা বাইকে উঠে বসে।” রুবাই বলে।
“কিন্তু সে কে?”
রুবাই আপন মনে বলে, “বাইক নয়, বাইকে গেলে অনেকের চোখে পড়ে যেত। গাড়ি নিয়েই এসেছিল অপহরণকারী। হয়তো একটু দূরে রেখেছিল। ওর খুব কাছের কেউ। অহনাদেবীর, ওর মামাদের আর আরব সিংহানিয়ার মোবাইল লোকেশন চেক করেছিলেন?”
“করেছি। ওর মামাদের একজন ওদলাবাড়ি এসেছিল। একজন অবশ্য শিলিগুড়িতেই ছিল। ওর মা নিউমাল জংশনে ছিল এক সভায়। লোকেশন তো ওদের বাংলোর কাছেই। আরবের ফোন বন্ধ ছিল প্রায় চার ঘণ্টা। ওকে আলাদা করে জেরা করতে হবে।”
“আচ্ছা, যে গাড়িতে ও স্কুল যেত তার ড্রাইভারকে জেরা করা হয়েছে?” রুবাই বলে।
মন্দার সঙ্গে সঙ্গে অতনুবাবুকে ফোনে ধরেন। কিন্তু জানা যায় সেই ড্রাইভার বাবুলাল ছুটিতে আছে। আরেকজন ড্রাইভার রফিক সেদিন অহনাদেবীকে নিয়ে নিউমালে গিয়েছিল।
“আজ রাতের নাটকে কী হয় দেখা যাক, আমি নিজে থাকব ওই সময়। চারজন সাদা পোশাকে পুলিশ থাকবে ওদিকে।” মন্দার বলেন।
“আমরাও থাকতে চাই।”
“লোক বেশি হলে ঐতিহ্যর বিপদ হতে পারে রুবাই।” মন্দার এড়িয়ে যান।
অন্বয় আর রুবাই বাড়ি ফিরে আসে।
রাত ন’টা অবধি কোনোরকমে বইতে মুখ গুঁজে কাটিয়েছিল রুবাই। তারপর আর ওর মন বসে না। অন্বয়দাকে ফোন করতেই যাচ্ছিল। অন্বয়দার বাইকের আওয়াজে নীচে নেমে আসে।
“মন্দার ফোন করেছিল। পৌনে ন’টা অবধি অতনুবাবু টাকার ব্যাগ রাখতে যাননি। তখন ও অতনুবাবুকে ফোন করে জানতে পারে পৌনে আটটায় অপহরণকারী প্ল্যান বদলেছিল। উনি যখন বের হবেন তার আগেই ল্যান্ড-লাইনে ফোন আসে যে দশ মিনিটের ভেতর টাকার ব্যাগটা ফ্যাক্টরির পিছনে যে চায়ের পাতা শুকোবার বিশাল ঘরগুলো আছে, তার পাশে একটা বড়ো পিপলগাছ আছে, সেখানে রেখে আসতে। জায়গাটা বেশ নির্জন। উনি তক্ষুনি ব্যাগটা ওখানে রেখে আসেন। এখনও অবশ্য ঐতিহ্য ফেরেনি।”
“উনি সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানাননি কেন?”
“ওঁর মাথা কাজ করছিল না। মন্দার থানায় ফিরেছে। খুব বিরক্ত। বাড়ির ল্যান্ড-লাইনটা ট্যাপ করাও হয়নি। তবে আমি অতনুবাবুকে দোষ দেব না। সবসময় ওঁর উপর নজর রাখছিল কেউ। তাই শেষমুহূর্তে লোকেশন বদলালেও উনি ছেলের নিরাপত্তার কথা ভেবে আর পুলিশকে জানাননি।”
“কী জানি! কেমন যেন সব ঘেঁটে গেল।”
“ঐতিহ্যর মাকে আমার কেমন যেন একটু লাগছে। আমি তো যেতাম ওদের বাড়ি, কেমন যেন ছাড়া ছাড়া।”
অন্বয়ের কথার ভেতরেই ফোনটা আবার বেজে উঠল। মন্দারের ফোন। স্পিকারটা অন করেই ফোনটা ধরে অন্বয়।
“বাচ্চাটাকে পাওয়া গেছে। ওদের বাংলো থেকে এক কিমি ভেতরে বাগানের দুটো পরিত্যক্ত ইন্সপেকশন বাংলো রয়েছে। ব্যবহার হয় না আর। সেখানে একটা ঘরে ছিল। ঘুমের ওষুধের প্রভাবে ঘুমোচ্ছে এখনও। অতনুবাবু ছেলেকে নিয়ে মালবাজার হাসপাতালে আসছেন।”
“বাচ্চাটা ওখানে, খবরটা কে দিল?”
“টাকাটা দিয়ে অতনুবাবু ফিরে হলঘরে বসে ছিলেন। ওদের বাংলোর ল্যান্ড-লাইনে আবার ফোনটা এসেছিল। কেউ ফোন করে বলেছে ছেলে ওখানে রয়েছে। উনি সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি নিয়ে, দুজন লোক নিয়ে চলে যান। ঐতিহ্যকে পেয়ে ফোন করে জানিয়েছেন।”
“আমরাও হাসপাতালেই যাচ্ছি।”
ফোনটা কেটে অন্বয়দা রুবাইয়ের দিকে তাকায়।
রুবাইয়ের বাবা মাল হাসপাতালের সুপার। তিনি সবটা শুনে তখনই গাড়ি নিয়ে হাসপাতালে রওনা দেন।
***
ঐতিহ্যকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। ডাক্তার পরীক্ষা করে বললেন, “জোর করে জ্ঞান ফেরালে ব্রেনে চোট পড়তে পারে। ও ঘুমাক, সকালে উঠে যাবে। তবে ভয়ের কিছু নেই।”
রুবাই এক ফাঁকে মন্দারকে প্রশ্ন করে, “ওষুধটার কোনও খোঁজ পেয়েছিলে মন্দারদা?”
“হ্যাঁ, মালবাজারের একটা দোকান ওই ওষুধ বিক্রি করেছে। প্রেসক্রিপশন দেখেই করেছে। কিন্তু কে নিয়েছে ওভাবে বলতে পারছে না।”
“দোকানে সি.সি.টি.ভি. তো থাকা উচিত।”
“হ্যাঁ,” ফোনে একটা ছবি দেখিয়ে মন্দার বলে, “এই লোকটা ওষুধ কিনেছিল। মাথায় টুপি, গলার মাফলার দিয়ে কান ঢাকা, মুখে মাস্ক। এই সি.সি.টি.ভি.-র ছবি দেখে চেনা যাচ্ছে না।”
রুবাই এক মিনিটের ভিডিওটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে। লোকটার নর্মাল হাইট, হাতে কালো চামড়ার গ্লাভস। কালো জ্যাকেটটাও খুব কমন। কাউন্টারে প্রেসক্রিপশন দেখিয়েই ওষুধ নিয়ে চলে গেল।
“দোকানের বিলের কাউন্টার পার্টে ঐতিহ্যর নাম লেখা। এটাই অপহরণকারী দলের লোক।” মন্দার বলে।
পরদিন সকালে ঐতিহ্য বাড়ি ফিরেছিল। ছেলেটাকে বেশি চাপ দিতে বারণ করেছিলেন ডাক্তারবাবু। মন্দার সেন, অন্বয় আর রুবাই এসেছিল ওকে দেখতে।
ঐতিহ্যর ঘুম ভাঙলেও সে বড্ড দুর্বল। একটা আচ্ছন্ন ভাব এখনও রয়েছে। দুটো দিন ওকে বোধ হয় ঘুম পাড়িয়েই রেখেছিল। ও কোথায় ছিল জিজ্ঞেস করলেই বলছে মনে নেই।
রুবাই ঐতিহ্যর রঙ-তুলিগুলো নাড়াচাড়া করছিল। হঠাৎ একটা জিনিস চোখে পড়তে চমকে ওঠে ও। আরেকবার রঙ আর তুলিগুলো নেড়েচেড়ে দেখে। তারপর ঐতিহ্যর কাছে গিয়ে বলে, “তোর ফুটবলটা কোথায় রে?”
“বাবুলাল আঙ্কলের গাড়িতে হবে। কেন?”
রুবাই বলে, “বাবুলাল আঙ্কল মানে তোর ড্রাইভার, সে তোকে ওখানে পৌঁছে দিয়েছিল, তাই না?”
আর উত্তর দেয় না ঐতিহ্য। আবার চুপ।
রুবাই মৃদু হেসে মন্দারকে বলে, “মনে হয় বুঝতে পেরেছি সবটাই।”
মন্দার ওর কথা শুনে বলে, “বাবুলাল তার মানে…”
“না, ড্রাইভার একা নয়। তাকে দিয়ে অপহরণ করানো হয়েছিল। রুবাই বল খেলতে খেলতে বাবুলালের ডাকে বল নিয়েই বেরিয়ে গিয়েছিল। তাই বলটা গাড়িতে থেকে যায়। কেউ জোর করে ধরে নিয়ে গেলে বলটা বাগানেই পড়ে থাকত।”
“তাহলে কে?”
“নাটকটা করিয়েছিলেন রুবাইয়ের বাবা অতনু সিনহা। কারণ, তাঁর টাকার দরকার ছিল। অথচ চাইলে অপরেশবাবু বাগান বা শেয়ার বিক্রি করতে দিচ্ছিলেন না। তাই ড্রাইভারকে দিয়ে ছেলেকে তুলে নেন তিনি। জানতেন আন্টি সেদিন থাকবেন না। এরপর দু-দিন পরিত্যক্ত বাংলোয় ছেলেকে বাবুলালের কাছেই রেখেছিলেন। ঐতিহ্যর মা যখন ওষুধের কথা বলেন, ঘাবড়ে গিয়ে প্রেসক্রিপশন চুরি করে বাবুলালকে দিয়েই ওষুধ কিনিয়েছিলেন। হাজার হোক ছেলের ক্ষতি চাননি। আমার প্রথম সন্দেহ হয় ক্যামেলের লাল রঙ আর তিন নম্বর তুলিটা নেই দেখে। ওই দুটো ঘর থেকেই নিয়েছিলেন অতনুবাবু। যে পেপার ব্যবহার করা হয়েছে সেটাও ওঁদের বাড়ির কম্পিউটারের পেপার, পরীক্ষা করলেই ধরা পড়বে। ওই রঙ ব্যবহার করে বাবুলালকে দিয়েই চিঠি লেখাতেন অতনুবাবু। সুযোগমতো আটকে দিতেন গেটে।”
সবটা শোনার পর মন্দার সেন বলেন, “কিন্তু প্রমাণ কী করে করবে?”
“প্রমাণ তো টাকাটা। উনি বলেছিলেন আরব সিংহানিয়া চাপ দিয়ে বাগান কিনতে চাইছেন। কিন্তু আপনাদের তো আরববাবু জানিয়েছেন অতনুবাবুই বাগান বেচতে চাইছিলেন। এখন ওঁর কেনার টাকাই ছিল না। পরে অবশ্য ১০% শেয়ার কিনতে উনি রাজি হয়েছিলেন, ওঁকেও ছেলে অপহরণের গল্প বলেই টাকাটা রাতারাতি হাতে পেয়েছিলেন অতনুবাবু। টাকাটা আদৌ কোথাও দেওয়া হয়নি। খোঁজ নিয়ে দেখুন, কোনও ব্যাবসায় লাগিয়েছেন হয়তো। না-হলে এখনও বাড়িতেই আছে। সেটা আর প্রেসক্রিপশন চুরি, এগুলোই প্রমাণ। উনি ছাড়া বাংলো থেকে প্রেসক্রিপশন কে নেবে?”
এসব শুনে জ্বলন্ত চোখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে ছিলেন অহনা। অতনু সিনহা মুখ ঢেকে সোফায় বসে পড়েছিলেন।
মন্দার বলেন “কিন্তু বাবুলাল কেন…”
“টাকার জন্য করেছে। ও ঐতিহ্যকে ভালোবাসে। ও ভয় পেয়েছিল, ও না করলে অন্য কাউকে দিয়ে অতনুবাবু কাজটা করাতেন। আর ঐতিহ্যকে তো চকলেট বা দুধের সঙ্গে কিছু খাইয়ে আচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছিল। ওর তাই মনে নেই কিছুই। তবে বলটা যে আঙ্কলের গাড়িতে ও হাতে নিয়ে উঠেছিল এটা ওর অবচেতন মনে থেকে গিয়েছিল। ক্যামেলের লাল রঙ আর তুলিটা ব্যবহার না করলে অবশ্য এত সহজে আমিও ধরতে পারতাম না। তাছাড়া ওষুধের ব্যাপারটা ওঁর মাথায় ছিল না, পরে প্রেসক্রিপশনটা নিয়েও উনি ভুল করেছিলেন। এই সূত্রগুলোই ওঁকে অপরাধী প্রমাণ করে দিল। ওই বাংলোয় সার্চ করলে কালো জ্যাকেট ও গ্লাভস-টুপি সব পেয়ে যাবে পুলিশ। ফরেনসিক পরীক্ষা করলেই প্রমাণ হয়ে যাবে অপরাধী কে।”
দেওয়ালে একটা টিকটিকি ডেকে উঠল ‘টিক টিক টিক’।
ছবি-প্রদীপ গোস্বামী
ছবিটা দারুণ হয়েছে, শিল্পীকে ধন্যবাদ
LikeLike