১
চোখ খুলতেই টুটুলের মনে পড়ে গেল আর মাত্র চারদিন, তারপরই ওদের ঘুরতে যাওয়া। বাবা এবার একটা দারুণ সারপ্রাইজ দিয়েছে ওদের সবাইকে। তাতান আর তিন্নিও ভাবতে পারেনি এইরকম একটা সারপ্রাইজ ওদের জন্য অপেক্ষা করছে। শেষে টিকিট দেখানো হল যখন তখন বোঝা গেল বিষয়টা সত্যি। মা যদিও জানত, তাও কিছু বলেনি, চুপ করে ছিল। স্কুলে হেনরি মিস ওদের ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে বললেন, “ভেরি গুড, লাস্ট ইয়ার আমিও গেছিলাম। ফ্রম অ্যাস্ট্রোনট মার্কেটে সব জামাকাপড় পেয়ে যাবে। ইউ শুড ক্যারি এ গুড বাইনোকুলার অ্যান্ড ক্যামেরা। কিছু প্রবলেম হলেই ফোন করবে।”
টুটুল হেসেছিল। এইজন্যই হেনরি ম্যাম ওর এত প্রিয়। উনি সবসময় উৎসাহ দেন, কোনো সময় রাগ করেন না। তাতানকে সেই গল্প করছিল টুটুল। তাতান তখন গাজর খেতেই ব্যস্ত, ওর কানে গেল না কথাগুলো। ঝোলা কান দুটো নাড়িয়ে কেবল বলল, “আমার জিনিসপত্র ঠিক করে গুছিয়ো, তিন্নির জন্য ড্রাই ফিশ নিতে গিয়ে আমার ড্রাই গাজর ভুলে যেও না।”
টুটুলের ভারি রাগ হল। “একরত্তি খরগোশ, বেশি কথা! চিপ খুলে নেব পাকামি করলে।”
তাতান পাত্তা দিল না। জিভ ভেঙিয়ে বলল, “চিপ খুলতে হলে তিন্নির খোলো, সারাদিন মাছ খায়, গায়ে আঁশটে গন্ধ।”
তিন্নি দুলকি চালে নিজের মোটা লেজ নিয়ে তখন সবে ঘরে ঢুকেছে। তাতানের কথা ওর কান দিয়ে বেশ ঢুকেছে। গোঁফ ফুলিয়ে রেগে উঠল। “চুপ কর খরগোশ কোথাকার! খালি খাই খাই আর ঘুম। আমার মতন ব্যায়াম তো করিস না, লাফাতেও পারিস না। মোটুরাম একটা।”
তাতান বলল, “বিড়ালের বড়ো গলা। লাফালাফি করিস কি সাধে? চুরি করে খাস যে।”
“উফ্, তাতান, তিন্নি, তোরা চুপ কর। আমার মাথাব্যথা করছে।”
অবশেষে টুটুলের চিৎকারে ওর পোষ্য খরগোশ তাতান আর বিড়াল তিন্নি চুপ করল। বাবা ওদের ঘাড়ে চিপ ঢুকিয়েই ভুল করেছে, বেশ নিজেদের ভাষায় কথা বলত। এখন এই চিপের জন্য ওদের ভাষা বাঙলায় ট্রান্সলেট হয়ে আসে, আর টুটুলের কথাও ওরা বুঝতে পারে, সঙ্গে নিজেদের মধ্যেও একই ফ্রিকয়েন্সিতে কথা বলতে পারে, বুঝতেও পারে।
সেই থেকেই ব্যস দুজনের ঝগড়া শুরু। আর ক’টা দিন পরেই রকেটে চেপে ওরা চাঁদে যাচ্ছে ঘুরতে, সেই নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। কেবল ঝগড়া আর ঝগড়া। টুটুল অতিষ্ঠ হয়ে গেল। মাথা ঠান্ডা করে ও নিজের ঘরে ঢুকল। আজ তার অনেক কাজ। নিজের সব দরকারি জিনিসপত্র গুছিয়ে নিতে হবে। মা যদিও বলেছে, ‘বেশি লাগেজ করা যাবে না। ঘুরতে যাচ্ছি ওখানে, থাকতে তো যাচ্ছি না।’ সেই মতন মাত্র একটা ছোট্ট হ্যান্ড ব্যাগ নিচ্ছে টুটুল, সেটাতে থাকবে ওর বাইনোকুলার। যেটাতে নাইট ভিশন আছে, আর যেটা দিয়ে পৃথিবীর দিকে তাকালে চিনের প্রাচীরের শ্যাওলা অবধি দেখা যাবে। ক্যামেরা যদিও বাবার হেফাজতে, চাইলে সেটা দিয়ে ছবি তুলে তক্ষুনি তা পাঠিয়ে দিতে পারবে কাকাইকে। চাঁদে যাওয়ার মজাই আলাদা। উত্তেজনার চোটে টুটুলের রাতের ঘুম চলে গেছে।
অবশেষে যাওয়ার দিন চলে এল। রকেটের নাম ‘লুনারকার’, ছাড়বে দমদম এয়ারপোর্টের রকেট সেকশন থেকে বেলা এগারোটায়। ওরা স্নান-খাওয়া শেষ করে সকাল সাতটার মধ্যে এয়ারপোর্টে চলে গেল। উফ্, কী আনন্দ টুটুলের! জীবনে প্রথম সে রকেটে চড়বে। তাতান আর তিন্নিও খুব খুশি; মা আবার ওদের আজ নীল রঙের জামা পরিয়ে দিয়েছে। সব চেকিং করে অবশেষে ওরা তিনজন আর তাতান-তিন্নি রকেটে চেপে বসল।
রকেটের ভিতরে নরম মখমলের বিছানা। এখানে আবার রোবট মিস্টার ড্যারি রকেট চালক। আর হোস্টেসরা সবাই রোবট। যে যার বিছানায় গিয়ে সিট বেল্ট পরে ওরা শুয়ে পড়ল। প্রায় ছয় ঘণ্টার পথ, কিন্তু শুয়েই যেতে হবে। বিছানায় শুতেই রোবট জেরি ওদের আইসক্রিম দিয়ে গেল।
২
“কী সুন্দর জায়গা বাবা! আর দেখো, পৃথিবীকে কী অপূর্ব লাগছে।” বাইনোকুলার দিয়ে টুটুল তখন পৃথিবী দেখতে ব্যস্ত। পাশে তিন্নি ঝিমাচ্ছে।
“হ্যাঁ, কিন্তু গাছপালা নেই একদম।”
মার কথার উওরে বাবা বলল, “সে সামনের মাসেই এখানে মাটি তৈরি করে গাছ লাগাবে বলেছেন বৈজ্ঞানিকরা। অক্সিজেন তো তৈরি হয়েই গেছে। কিন্তু আমাদের গাড়ি আসছে না কেন, রোবট পুন আমাকে ওয়াটস অ্যাপ করল ঠিক পাঁচটায় চলে আসবে?”
“একটা ফোন করে নাও।”
“এখানে ফোন বেশি ব্যবহার করা যায় না। প্রেসিডেন্ট বারণ করেছেন।”
“তাহলে পুন জানবে কী করে?”
“ফ্লাইং রোবটদের দিয়ে খবর পাঠাতে হবে হয়তো।”
বাবার কথা শেষ হতেই একটা ঝাঁ-চকচকে সাদা রঙের গাড়ি আকাশ থেকে মাটিতে নামল, ঠিক হেলিকপ্টারের মতন। গাড়ির দরজা হাওয়ায় যেন খুলে গেল আর ভিতর থেকে বেরিয়ে এল বেঁটেখাটো লাল রঙের রোবট পুন।
“ওয়েলকাম মিস্টার অ্যান্ড মিসেস মজুমদার। ওয়েলকাম টু মুন, মাইসেলফ রোবট পুন।”
বাবার সঙ্গে করমর্দন করে ওদের লাগেজ গাড়িতে ওঠাল পুন। ওদিকে তাতানের ঘুম এখনো ভাঙেনি, সে বাস্কেটের মধ্যে শুয়ে নাক ডাকছে। তিন্নি সেদিক থেকে বেশ স্মার্ট, ঝিমুনি কাটিয়ে চটপট গাড়িতে উঠে বসল। গাড়ির ভিতরটা দেখার মতন, সুসজ্জিত, এলানো সোফা, একটা ছোটো টিভি আরো কত কী।
গাড়ি এবার আকাশে উড়ল। টুটুলের মনে হল রাস্তা দিয়ে গেলেই ভালো হত, চাঁদের রাস্তা, দোকানপাট দেখা যেত। কিন্তু পুন বলল, “এখানের রাস্তা খুব খারাপ। অনেক গর্ত, তাই সময় বেশি লাগে। তার থেকে আকাশপথে কম সময় খরচ হয়।”
গাড়ি আকাশপথে মাত্র দশ মিনিটের মধ্যে ওদের কটেজের সামনে নিয়ে এল যেটা ঠিক মন্স হাইজেন্সের একদম পাদদেশে। মন্স হাইজেন্স হল চাঁদের সবথেকে উঁচু পাহাড়। এই দেশে মাটির রং সাদা। আর কৃত্রিম অক্সিজেন আছে বাতাসে, তাই সর্বক্ষণ একটা মৃদু গন্ধ নাকে আসে।
পুন ওদের কটেজে নামিয়ে চলে গেল। যাওয়ার আগে বলে গেল, “অবশ্যই যখন ঘুরতে যাবেন আগে খবর দিলেই হবে।”
ওরা এসেছে চাঁদের উওর পৃষ্ঠে যেখানে এখন সবসময় দিন। তবে পুন ওদের দক্ষিণ পৃষ্ঠে নিয়ে যাবে ওর উড়ন্ত গাড়িতে যেখানে এখন রাত চলছে।
৩
কটেজের মালিক থেকে সব কর্মী এখানে রোবট। ওদের নিয়ে মোট তিনটে ফ্যামিলি আছে এই কটেজে। কটেজগুলো এখানকার দেখতে খানিকটা পৃথিবীর ইগলুর মতন। ঠান্ডার প্রকোপ এখানে একটু বেশি। সাধারণত বিকেলের দিকে একটু বাড়ে, তাই বিকেলের পর থেকে ঘুরতে যাওয়া বারণ। তবে দিনের বেলায় খুব গরম, যদিও অ্যাস্ট্রোনট শপ থেকে কেনা জামা পরে অত গরম লাগে না।
দুপুরে খাওয়াদাওয়া করে মা একটু বিশ্রাম করতে গেল ঘরে। বাবার কটেজের মালিক রোবট জেরির সঙ্গে বেশ ভাব হয়ে গেছে, তাই গল্প করতে চলে গেল জেরির ঘরে। টুটুল তার দুই সঙ্গী তাতান আর তিন্নিকে নিয়ে ঘুরতে বের হল কটেজের আশেপাশে।
এখানে ভয়ের কিছু নেই, কেবল বড্ড খানাখন্দ। এদিক ওদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রচুর কটেজ, কিন্তু রাস্তায় ভিড় নেই। কেবল চার-পাঁচজন টুরিস্ট ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মাথার উপর দিয়ে মাঝেমধ্যেই হুসহাস করে ফ্লাইং কার চলে যাচ্ছে। ওরা এগিয়ে গেল ওদের কটেজের পিছন দিকটায়। তিন্নি বলল, “এখানে পোকামাকড় নেই কেন?”
তাতান ফোড়ন কাটল, “কেন, থাকলে তোর খুব সুবিধা হত? এই তো ড্রাই ফিশ ফ্রাই খেলি, তাও পোকা লাগে?”
“চুপ কর খরগোশ কোথাকার! তোর গাজরও নেই এখানে দেখেছিস?”
টুটুল বলল, “চুপ কর না, দেখ কী শান্ত পরিবেশ এখানে। গাড়ির ধোঁয়া নেই, ভিড় নেই, কী সুন্দর সবকিছু। সবসময় ঝগড়া করিস না।”
হাঁটতে হাঁটতে ওরা খুব সুন্দর একটা বাড়ির সামনে এসে পড়ল। বাড়িটা টুকটুকে লাল রঙের, সাদা মাটির উপর লাল রঙের বাড়িটা অপূর্ব লাগছে। বাড়ির আশেপাশে আবার কতরকমের অদ্ভুত অচেনা ফুল ফুটে আছে। এরকম ফুল ওরা ওদের দেশে দেখেনি। একটা আকর্ষণ শক্তি আছে মনে হয় বাড়িটার। ওরা তিনজনেই মন্ত্রমুগ্ধের মতন ঢুকে পড়ল সেই বাড়ির গেট দিয়ে। চাঁদে দেখা কটেজগুলোর থেকে এই বাড়ি একদম আলাদা—নীচু ছাদ, তার উপর সুতোর কারুকার্য করা। ফুলগুলো সামনে থেকে দেখলে বোঝা যায় ওর মধ্যেও সুতোর কাজ করা আছে নিপুণভাবে। আসলে পুরো বাড়িটাই তো সুতোর কাজ করা—লাল সুতো আর সাদা সুতোয় নকশা কাটা।
“এটা কার বাড়ি?” অবাক চোখে টুটুল বলল।
তাতান উত্তর দিল, “পাতাগুলো সুতোর, নকল।”
তিন্নি হেসেই কুটিপাটি। “তুই আসল ভেবে খেতে গেছিলি? বোকা খরগোশ।”
টুটুলের সে-সব কথায় কান নেই। ও এগিয়ে গেল বাড়িটার দিকে।
৪
চাঁদ থেকে ফিরে আবার সেই পড়াশোনায় মন দিতে হচ্ছে টুটুলকে। এত সুন্দর একটা ভ্রমণ সারাজীবন মনে থাকবে। মা বলেছে, ‘মনখারাপ করিস না। আবার আমরা চাঁদে যাব। তবে এবারের মতন চারদিনের জন্য নয়, দশ দিন থেকে আসব।”
মনখারাপ কি শখ করে করছে টুটুল? ওর খালি মনে পড়ে যাচ্ছে সেই বাড়িটার কথা। দিম্মাকে ও খুব ভালোবাসত। দিম্মা যখন মারা গেলেন, ওর খুব দুঃখ হয়েছিল। কিন্তু সেই বাড়িটায় মন্ত্রমুগ্ধের মতন যখন ঢুকেছিল টুটুল ঠিক ওর দিম্মার মতন সাদা শাড়ি পরা, পাকা চুলের আরেকজন দিম্মার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। কী সুন্দর আন্তরিকতার সঙ্গে সেই দিম্মা টুটুল, তিন্নি আর তাতানকে নিজের ওই লাল সুতোর বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন, যেন কতদিনের চেনা। টুটুল বলেছিল, “হাই, আই অ্যাম টুটুল।”
সেই দিম্মা তাঁর সোনালি ফ্রেমের চশমাটা একটু নামিয়ে হেসে বলেছিলেন, “আমি বাংলা বলতে পারি।”
লজ্জা হয়েছিল টুটুলের। শাড়ি পরা দিম্মা তো বাংলা বলতেই পারেন, মেমসাহেবরা তো শাড়ি পরে না।
দিম্মা ওদের চেয়ারে বসিয়ে সুন্দর একরকমের মিষ্টি খেতে দিয়েছিল। চেরি ফলের মিষ্টি, কিন্তু টুটুলের সব থেকে আশ্চর্য লেগেছিল বাড়ির ভিতরটা দেখে। সেখানে সবরকম আসবাবপত্র, দেওয়াল, পর্দা সবকিছু সুতো দিয়ে অপূর্ব কারুকার্যখচিত। অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছিল টুটুল, “এসব কে করেছে?”
দিম্মা হেসে বলেছিলেন, “আমার কাজ যে এটাই, আমি রোজ সুতো দিয়ে অনেক কিছু বানাই। দাঁড়াও।” বলেই দেরাজে রাখা একগোছা সুতো দিয়ে চটপট একটা ফুল বানিয়ে দিয়েছিলেন সেই দিম্মা।
তাতান অবাক হয়ে বলেছিল, “জাদু! তুমি জাদু পারো?”
দিম্মা হেসে উঠেছিলেন আবার। “না হে খরগোশ সোনা, আমি জাদু জানি না। এসো আমার সঙ্গে।”
দিম্মা ওদের তিনজনকে নিয়ে গিয়েছিলেন ভিতরের ঘরে, যা দেখে ওদের তিনজনের চোখ ছানাবড়া। বিশাল বড়ো এক চরকা পুরো ঘর জুড়ে সুতো তৈরি করছে। আর টুং-টাং শব্দ তুলে তার সঙ্গে লেগে থাকা বড়ো বড়ো চাকা, কলকব্জা তালে তালে ঘুরে চলেছে। ঘরের একদিকে বড়ো বড়ো সুতোর বান্ডিল পরপর সাজানো আছে। তিন্নি বলেছিল, “এ তো সুতো তৈরির কারখানা!”
টুটুলের মাথায় তখন চট করে চলে আসে, “তুমি, মানে আপনি কি চাঁদের বুড়ি? যিনি চরকা কাটেন?”
দিম্মা হেসে বলেছিলেন, “হ্যাঁ, ঠিক বলেছ। আমি সেই চাঁদের বুড়ি। তবে আমাকে আপনি না বলে দিম্মা আর তুমি বলেই ডেকো, কেমন?”
টুটুল তো খুব খুশি। চাঁদের দিম্মার সঙ্গে খুব ভাব হয়ে গেছিল তার। তবে শর্ত একটাই, চাঁদের দিম্মা বলেছিলেন তাঁর বাড়ি কেবলমাত্র বাচ্চারাই দেখতে পারে। বড়োদের সঙ্গে তাঁর গল্প করতে ভালো লাগে না। কাজেই তারা দেখতেও পায় না। সুতরাং তাঁর বাড়ির কথা বড়োদের বলা বারণ। যদি দিম্মা জানতে পারেন বড়োরা তাঁর বাড়ির হদিশ পেয়ে গেছে তবে তিনি তক্ষুনি বাড়ি গুটিয়ে ফ্লাইং কারে করে চাঁদের অন্য রাজ্যে পাড়ি দেন। কাজেই তাতান-তিন্নিও কথা দিয়েছিল যে ওরা বাবা-মাকে কিছুতেই দিম্মার কথা বলবে না। এরপর বাকি চারদিন ওরা তিনজন অন্য কোথাও ঘুরতে না গিয়ে কেবল দিম্মার বাড়িতেই গল্পের আসর বসাত। তাতান দিম্মার বাগানের মিষ্টি গাজর আর তিন্নি অ্যাকুরিয়ামের সুস্বাদু মাছ খেয়ে খুব খুশি। টুটুল খালি দিম্মার সঙ্গে গল্প করেই খুশি—কতরকমের সুতো দেখেছিল, কারুকার্য দেখেছিল। ফুল বানাতেও শিখিয়েছিলেন চাঁদের দিম্মা। কেবল বাবা আর মার সন্দেহ হতে শুরু করেছিল চাঁদের বিভিন্ন প্রদেশ না দেখে এই তিনজন খালি এইখানেই কোথায় ঘুরতে যায়! টুটুল অবশ্য হেসে বলেছে একটা ছোট্ট মিথ্যে কথা—“ওদিকে একটা পার্ক আছে যেখানে অনেক বাচ্চারা খেলা করে। আমাদের ওখানেই ভালো লাগে মা। দেশে তো আর পার্ক নেই। তোমরা বরং ঘোরো।”
ফেরার দিন খুব মনখারাপ ছিল টুটুলের। দিম্মা অবশ্য বলেছেন আবার দেখা হবে। একটা ছোট্ট সুতোর বান্ডিল দিয়ে বলেছিলেন, “যখন আমার কথা মনে হবে, এই সুতোর কাছে মুখ দিয়ে কথা বলবে। দেখবে এই সুতোই আমার কথা তোমাকে বুঝিয়ে দেবে।”
চাঁদ থেকে ফিরে এখন ওরা তিনজন মিলে টুটুলের ঘরে বসে দুঃখ করছে। উদাস হয়ে টুটুল বলল, “আবার কবে দিম্মার কাছে যেতে পারব, দিম্মার সঙ্গে গল্প করতে পারব কে জানে?”
তাতান আর তিন্নিও চুপ করে বসে ছিল টুটুলের পাশে। এমন সময় টুটুলের হাতে ধরা সুতোর বান্ডিলটা হঠাৎ কেমন যেন নেচে উঠল। টুটুল চমকে উঠল, সঙ্গে তাতান আর তিন্নিও ভয় পেয়ে গেল। অবিকল চাঁদের দিম্মার গলায় সুতোর বান্ডিল বলে উঠল, “খুব শিগগিরই।”
অলঙ্করণ- সৃজন কাঞ্জিলাল