গল্প-অভিশপ্ত একশৃঙ্গী -রূপম চট্টোপাধ্যায়-শীত ২০২১

সন্ধ্যা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য প্রতিযোগিতা’২০২১-প্রথম স্থান

golpoAbhishopto Ekshringi_Illustration

বাংলোর গেটে স্কর্পিও থামতেই হাসিমুখে এগিয়ে এল সুখলাল। মাথায় হাত ঠেকিয়ে বলল, “সেলাম সাব।”

চাবি হাতে নেমে এল ধ্রুব। সবুজের বুকে দাঁড়িয়ে প্রাণভরে শ্বাস নিল কিছুক্ষণ। পরম সামনের সিটে ঘুমোচ্ছিল। জব্বলপুরে জলখাবার খেয়ে সেই যে ঘুমিয়েছে, একবার সিউনির কাছে শুধু জিজ্ঞেস করেছিল, “ঘন্টাখানেক?”

এবার সে-ও নেমে হাতের বোতল থেকে চোখে-মুখে জল ছিটিয়ে, ঘুম-জড়ানো গলায় বলল, “আজ আর কোথাও বেরোচ্ছি না।”

সুখলাল এগিয়ে গেছিল ব্যাগগুলো নেওয়ার জন্য। গাড়ি থেকে একটা লম্বামতো ব্যাগ টেনে বার করতে যাচ্ছিল। ধ্রুব প্রায় হাত ধরে থামাল ওকে। তারপর নিজেই ব্যাগটা তুলে নিল, “বাকি সব উঠাও।”

“কেয়া থা সাব ইসমে?” সুখলাল সামান্য বিস্মিত।

ধ্রুব মুচকি হাসল, “শ্যুটিং করনা হ্যায়।”

“ক্যামেরা!” বড়ো হয়ে যায় সুখলালের চোখ, “ফিলিম? ইয়া ন্যাশনাল জিওগ্রাফিওয়ালে?”

ধ্রুব এমনভাবে ঘাড় নাড়ল যে সুখলাল ঠিক বুঝতে পারল না। মধ্যপ্রদেশের গভীর জঙ্গলের এই ফরেস্ট বাংলোতে খুব একটা ভিড় হয় না। যত ভিড় উল্টোদিকের পেঞ্চ ন্যাশনাল ফরেস্ট কিংবা আরো কিছুদূরে সাতপুরা টাইগার রিজার্ভে। যদিও এই বাংলো, জঙ্গল পেঞ্চ ফরেস্টেরই অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু নদীর উলটো দিকে। লোকজন সাধারণত ওঠে কর্মাঝিরি আর তুরিয়া গেটের কাছে। সামান্য দু’চারজন পর্যটক যারা নির্জনতা ভালবাসে তারাই এদিকে আসে। ক্যামেরা কাঁধে ছবি তুলতেও আসে কেউ কেউ। আবার অনেক সময় ভালোমানুষের মুখোশ পরে পোচাররাও হাজির হয়। সুখলাল জানে, এরা যে উদ্দেশ্যেই আসুক, ঠিকঠাক টিপস দিতে পারলে ভালো বখশিশ পাওয়া যাবে।

#

খাতায় নাম-ধাম লিখছিল ধ্রুব, সেই সুযোগে সুখলালের সঙ্গে রুমে চলে এল পরম। গতকাল থেকে গাড়িতে জার্নি হচ্ছে, বড্ড ক্লান্ত লাগছে। একটু স্নান করা প্রয়োজন। সে দরজা লাগিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল।

ধ্রুব ঘরে এসে ওকে দেখে খুশি হয়ে বলল, “বাহ! স্নান সেরে নিয়েছিস! দাঁড়া, আমিও করে নিচ্ছি। ওরা খাবার গরম করছে।”

ধ্রুব ফ্রেশ হয়ে বেরোতেই সুখলাল হাজির। টেবিলে থালা সাজাতে সাজাতে হিন্দিতে বলল, “কাল কি সাফারিতে যাবেন আপনারা?”

“যাব।” সংক্ষিপ্ত উত্তর ধ্রুবর।

“তাহলে আমি কাল আপনাদের নামে বুক করে দিতে বলছি?”

“নিশ্চয়ই।” ধ্রুব খেতে শুরু করেছে, “তোমাদের খাওয়া হয়ে গেলে একবার আসবে তো, কিছু কথা আছে।”

সুখলাল মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেল। পরমের মনে এই মুহূর্তে অনেক প্রশ্ন জাগছে। কিন্তু এখন প্রশ্ন করে লাভ নেই। তার চেয়ে চুপচাপ খেয়ে নেওয়াই শ্রেয়। জঙ্গলের হাওয়াতে খিদেও পেয়েছে বেশ।

ধ্রুব একজন প্রোফেশনাল চোরাশিকারী। আন্তর্জাতিক বাজারে ওকে অনেকেই জেমস নামে চেনে। ভারতের বিভিন্ন অভয়ারণ্যে গোপনে শিকার করে ও। কখনো বাঘ, কখনো গণ্ডার। শুধুমাত্র টার্গেটকে মাটিতে ফেলাই ওর কাজ। বাকিটা দেখার জন্য তিন-চারজনের একটা টিম আছে।

“এখানে তো আসিসনি আগে?” খাওয়া শেষ করে আঙুল চাটতে চাটতে বলল ধ্রুব।

“সাতপুরা এসেছিলাম তো গতবছর। সেই যে..” কথা সম্পূর্ণ করে না পরম, “এবারে কীসের অর্ডার আছে?”

“মনের।” চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়ায় ধ্রুব। হাত ধুচ্ছে।

কথাটা বোধগম্য হয় না পরমের, “মনের? বুঝলাম না।”

শিকারের দু’-তিন দিন আগে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাওয়াটাই ধ্রুবর স্বভাব। সেখানে পৌঁছে ট্যুরিস্ট দলের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। ছবি তোলার বাহানায় ভালো করে চিনে রাখে জঙ্গলের গলিঘুঁজি।

ধ্রুব একটা চেয়ারে বসতে বসতে বলল, “আচ্ছা, একশৃঙ্গ বলতে তোর মাথায় প্রথমেই কী আসে?”

“ইউনিকর্ন।” একটুও না ভেবে বলল পরম, “ছোটবেলায় প্রোফেসর শঙ্কুর একশৃঙ্গ অভিযানে পড়েছিলাম।”

“সে তো গল্প! বাস্তবে?”

“বাস্তবে! শুনেছি মহেঞ্জোদারোতে একশৃঙ্গী ঘোড়ার মূর্তি পাওয়া গেছে। আরও কিছু বইতে..”

“ঘোড়া বাদ দিয়ে অন্য কিছু?”

একটু ভাবে পরম, “গণ্ডার। কিছু পোকা, গিরগিটিও আছে বোধহয়!”

“একশৃঙ্গী হরিণ?”

“হরিণ! ঠিক মনে পড়ছে না। তবে হরিণের তো দু’দিকেই শিং থাকে। একদিকেও থাকে বোধহয়..”

“থাকে। কিন্তু আমি বলছি, একশৃঙ্গী হরিণের কথা। মাথার মাঝে শিং। শুনেছিস?”

“না।” কাঁধ ঝাঁকায় পরম, “তেমন আবার হয় নাকি?”

“২০০৮ সালে ইতালির এক চিড়িয়াখানায় তিনটে হরিণ শাবকের জন্ম হয়েছিল। তাদের একজনের মাথার মাঝখানে শিং ছিল।”

“আর বাকিগুলো?”

“নরমাল। জীববিজ্ঞানীদের বক্তব্য জিনগত গোলমালেই নাকি ওরকম হয়েছে। আবার ২০১৪-তে স্লোভেনিয়ায় এক শিকারী একশৃঙ্গী হরিণ মেরেছিল। বেশ হইচই পড়ে গেছিল সেবার। অর্থাৎ একশৃঙ্গী হরিণ বিরল হলেও একেবারেই পাওয়া যায় না, তা কিন্তু নয়।”

পরম একটু সন্দিগ্ধ সুরে বলল, “তোর কি ধারণা এখানে একশৃঙ্গী হরিণ আছে? আর আজ পর্যন্ত কেউ দেখতে পায়নি?”

ধ্রুব উত্তর দেওয়ার আগেই সুখলাল ঘরে ঢুকল। কিন্তু টেবিল থেকে থালা তুলতে যেতেই থমকে গেল, আড়ষ্টভাবে বলল, “এখানে টাকা আছে, সাব!”

ধ্রুবর চোখে-মুখে কৌতুক খেলা করছে, বলল, “সুখলাল তুমি তো এখানকার স্থানীয় লোক, তাই না?”

“জ্বি।”

“অনেক বছর ধরে এই বাংলোতে আছ?”

“হাঁ, সাব।”

“এখানে যারা আসে, তাদের কাউকে নিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছ কখনও?”

“সবাই তো সাফারিতেই যায়, সাব। আমার সঙ্গে কে যাবে? ফিরভি এক-আধজন পাখির ছবি, হরিণের ছবি তুলতে পয়দল যায়, তখন আমাকে জবরদস্তি সাথে নিয়ে নেয়।”

“আমাদের নিয়ে একবার জঙ্গলে যাবে? জঙ্গলের রাজার সঙ্গে দেখা করতে চাই।”

এবারে সহজ হয় সুখলাল, মুখের হাসি ফেরে, “বিলকুল সাব! সবাই তো এখানে শের দেখার জন্যই আসে। আমি কাল ব্যবস্থা করে দেব।”

কোলে বালিশ টানতে-টানতে ধ্রুব বলল, “শের আমরা অনেক দেখেছি সুখলাল, এবারে জঙ্গলের রাজাকে দেখতে চাই। এই জঙ্গলের রাজা, যাকে তোমরা পুজো করো, তোমাদের জঙ্গল দেওতা..?”

সুখলালের মুখ শুকিয়ে গেল হঠাৎ, মাথা নামিয়ে বলল, “আপনার কথা আমি বুঝতে পারছি না, সাব!”

“ঠিক আছে। টাকাটা টেবিলে রেখে তুমি যেতে পারো।” দৃঢ় গলায় জানাল ধ্রুব।

।।২।।

খাওয়ার পর একটু গড়ানোর ইচ্ছে ছিল পরমের। কিন্তু ধ্রুব বলল, “আলো কম হওয়ার আগেই চল এক চক্কর দিয়ে আসি।”

জঙ্গলের মধ্যে ইচ্ছেমতো ঘোরা যায় না। কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। বিশেষ করে পেঞ্চের মতো বাঘের খাসতালুকে এসে।

ওরা অবশ্য বেশি দূরে গেল না। বাংলোর কাছেই, অথচ বাংলোর শ্রবণসীমার বাইরে। অভয়ারণ্যে দিন-রাত মানুষ দেখে দেখে বন্যপ্রাণীরাও অভ্যস্ত হয়ে গেছে। যত হিংস্রই হোক তেড়ে এসে তুলে নিয়ে যাওয়ার ভয় নেই। পরম তবু দুয়েকবার ভালো করে চারপাশটা দেখে নিল।

“ভীমবেঠকা গেছিস কখনো?” ধ্রুব জিজ্ঞেস করল।

পরমের আর্থিক অবস্থা ধ্রুবদের মতো নয়। ধ্রুবদের জমিদারি ছিল। এখনো বিভিন্ন স্থানে যা জমি আছে তা বিক্রি করে পায়ের উপর পা তুলে বসে খেতে পারে। উল্টোদিকে পরমের বাবা স্কুলের ক্লার্ক ছিলেন। আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য কোনকালেই ছিল না। ইদানীং ধ্রুব’র সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার পর ও দুটো পয়সার মুখ দেখতে পাচ্ছে।

মাথা নেড়ে বলল, “তোর সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে বাবা-মা’র সঙ্গে একবার পুরী গেছিলাম। আর একবার দীঘা।”

ধ্রুব ওর হতাশাকে পাত্তা না দিয়ে বলল, “ভীমবেঠকা না গেলেও ওখানকার গুহাচিত্রের ব্যাপারে নিশ্চয়ই জানিস? আমি স্কুলে থাকতে গিয়েছিলাম মাসির বাড়ি, ভোপালে। এতদিন পর সেই পুরনো ছবি খুঁজে বার করেছি। কিন্তু এর জন্য পুরো কৃতিত্ব রাজমোহন ঠাকুরের।”

“সে আবার কে? নামটা শোনা-শোনা লাগছে!”

“ওর বাবার নাম শুনে থাকবি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ব্রিজমোহন ঠাকুর। বড় ছেলে মুরারিমোহন পশ্চিম দিল্লির বিধায়ক।”

“তোর সঙ্গে পরিচয় হল কী করে?”

“হয়নি। শুধু খবর পেয়েছিলাম ও পেঞ্চ এসেছিল। তারপর আশ্চর্যজনকভাবে একদিন অদৃশ্য হয়ে যায়।”

“বাংলো থেকে?” পরমের মনে আবার বাঘের ভয় ফিরে আসে।

“না।” ফেরার পথ ধরে ধ্রুব, “খুব ভোরে নাকি জিপ নিয়ে বেরিয়ে গেছিল। সঙ্গী বলতে একজন স্থানীয় লোক। খবরের কাগজে এর বেশি ছাপেনি। কী মনে হতে নেটে সার্চ করতে শুরু করলাম। শুনলে অবাক হয়ে যাবি, গত দশ বছরে অন্তত সাতজন মানুষ এই অঞ্চল থেকে গায়েব হয়ে গেছে। পরবর্তীকালে আর কখনোই যাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তার মধ্যে রাজমোহনসহ তিন-চারজন লোককে আমি চিনি। সবাই কম-বেশি আমার কাজের সঙ্গে যুক্ত।”

“মন্ত্রীর ছেলে”, পরম গলা নামিয়ে বলল, “তারও এইসব শিকারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল!”

“মন্ত্রীসাহেবের তিন ছেলে। ছোট ছেলে রাজমোহন কলেজে থাকতেই বিভিন্নরকম নেশা, জুয়া ধরে। বাপের টাকার অভাব নেই। আবার ক্ষমতায় থাকার সুবাদে পুলিশও কিছু বলতে সাহস পেত না। একসময় অন্ধকার জগতের লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা করতে শুরু করে। শুটিংয়ের হাত ছিল দুর্দান্ত। আর রক্তে শিকারের নেশা। দুইয়ে মিলে…”

ধ্রুব বাংলোর দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টে চেয়ে থেকে বলল, “যদিও চান্স কম, তবু একবার বাইরে থেকে দেখে নেওয়া ভালো। অন্য কেউ আমাদের পিছু নিয়েছে কি না?”

পরম ঘাবড়ে গিয়ে বলল, “পিছু নিয়েছে? পুলিশ?”

ধ্রুব হেসে ফেলল, “তুই বড্ড নার্ভাস! চল রুমে যাই।”

গেটের কাছে ম্যানেজার কাউকে কিছু বোঝাচ্ছিলেন, ওদের দেখে হাসিমুখে জানতে চাইলেন, “কিছু অসুবিধে হচ্ছে না তো?”

ধ্রুব মিষ্টিগলায় উত্তর দিল, “সব বঢ়িয়া।”

#

পরের দিনটা কাটল বেশ দ্রুত। খুব ভোরেই ওরা বেরিয়ে গেছিল সাফারিতে। পরপর অনেকগুলো জিপ। নির্দিষ্ট রুট ধরে ঘুরছিল সবাই।

জঙ্গলে সারি সারি পলাশ, মহুয়া, ধাওয়া, অমলতাস। আর আছে সাদা ধবধবে ঘোস্ট ট্রি, ভুতুড়ে গাছ। রাত্রিবেলা দেখলে সত্যিই চমকে যেতে হয়। প্রচুর হরিণ দেখতে পেল ওরা। গোটাকতক শেয়াল, নীলগাই, হনুমান। আর অবশ্যই বাঘ। ট্যুরিস্টরা অনেকেই লাফালাফি শুরু করে দিয়েছিল। গাইড জানাল, টাইগার ফরেস্ট হলেও রোজ যে বাঘ দেখা যাবে তার কোনও মানে নেই। অনেকেই নাকি দু’তিন বার সাফারি করেও বাঘবাবাজীর দর্শন পায় না। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে ওরা বেশ ভাগ্যবান।

বাংলোয় ফিরে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিল ধ্রুব। এই মুহূর্তে ওকে দেখলে ভীষণ কুঁড়ে বলে মনে হবে, অথচ পরম জানে ওই জঙ্গলেই রাত্রিবেলা ওর অন্য চেহারা দেখা দেয়। লম্বাচওড়া, টানটান শরীরের প্রতিটি কোষে তখন খেলা করে অপরিমিত শক্তি আর সাহস।

“কাল রাত্রে অনেক ভেবেছি”, সোফায় বসতে বসতে বলল পরম, “কিন্তু তিনটে জিনিসকে মেলাতে পারিনি।”

“কোন তিনটে জিনিস?”

“একশৃঙ্গী হরিণ। ভীমবেঠকা। রাজমোহন ঠাকুর। অনেকটা যেন রানাঘাট-দার্জিলি-তিব্বত!”

পরমের দিকে মুখ ফেরাল ধ্রুব, “তিন নয় চার। সুখলালকে জিজ্ঞেস করা জঙ্গল-রাজার কথা ভুলে গেলি?”

“সেটাও কি এর সঙ্গে জড়িত?” পরমকে উদভ্রান্ত লাগে।

“পাসওয়ান বলে একজন এজেন্ট আছে। ইউ পি থেকে অপারেট করে। ওর কাছে খবর পেয়েছিলাম, রাজমোহন নাকি এখানে হরিণের এক রেয়ার স্পিসিসের খোঁজ পেয়েছিল।”

“একশৃঙ্গী হরিণ!” পরম বিস্মিতভাবে শুধোল।

“হরিণের নাম শুনেই কেন জানি না, আমার ছোটবেলায় দেখা ভীমবেঠকার কথা মনে পড়ে গেছিল। পুরনো অ্যালবাম খুঁজে একগাদা ছবি বার করলাম। আনাড়ি হাতের তোলা। দেওয়ালে যারা এঁকেছিল তারাও হাজার হাজার বছর আগের মানুষ। বেশ কয়েকটা ছবিতে দেখলাম একজন লোককে ঘিরে হরিণের দল। একটা ছবির হরিণের মাথায়  মনে হল যেন একটাই শিং। আমার দেখার বা বোঝার ভুল হতেও পারে। কিন্তু একটা ভাব, সেই যুগে যারা এঁকেছিল তারা কি কল্পনা থেকে এঁকেছিল, নাকি চোখের সামনে দেখা দৃশ্য এঁকেছিল? যদি দ্বিতীয় তথ্যটা সঠিক বলে ধরে নিই, আর আমার বুঝতে ভুল না হয়ে থাকে তাহলে খুব ক্ষীণ একটা সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে, পেঞ্চ রিজার্ভ ফরেস্টের কোথাও সেটা ছিল বা আছে। অবশ্য রেয়ার স্পিসিস বলতে যে একশৃঙ্গী হরিণের কথাই বলছে সেটা জানতে পারলাম কলকাতা থেকে। পাসওয়ানের কাছে শুনেছিলাম রাজমোহন নাকি কলকাতা থেকে হঠাৎই একদিন পেঞ্চ রওনা দেয়। এমনকি বাড়িতেও কাউকে খবর দেয়নি। শুধু পাসওয়ানকে বলেছিল, বড়ো কাস্টমার রেডি রাখতে।”

“কলকাতাতে কার কাছে জানতে পারলি?”

“মনোহরকাকার কাছ থেকে।”

“মনোহরকাকা আবার কে?” পরম এবার সামান্য অধৈর্য।

“কলকাতাতে ব্রিজমোহনের বাংলোর কেয়ারটেকার। মধ্যপ্রদেশের মানুষ। রাজমোহন যেহেতু মধ্যপ্রদেশ থেকে হারিয়ে গেছিল তাই পুরো চাপটা ছিল এম.পি পুলিশের উপর। ব্রিজমোহন প্রভাব খাটিয়ে সিবিআই লাগালে তাদেরও নজর ছিল এই পেঞ্চ এবং আশেপাশে। কলকাতার ব্যাপারটা কারো মাথাতেই আসেনি। আমি খোঁজ নিয়ে জানলাম রাজমোহন প্রায় মাসদেড়েক কলকাতাতে চুপচাপ বসেছিল। তারপর হঠাৎই একদিন ধাওয়া দিল মধ্যপ্রদেশে। কেন?”

“তুই ওর বাংলোতে গেছিলি?”

“গেছিলাম। রাজমোহনের প্রচুর বন্ধুবান্ধব ছিল। তাই সটান একদিন হাজির হয়ে বললাম, আমি রাজমোহনের বন্ধু, ও কি ফিরেছে?

মনোহরকাকা সহজ-সরল মানুষ। বিশ্বাস করে সেদিন অনেক কথাই বললেন। তাঁর দোষেই নাকি ছোট-মালিকের এই অবস্থা।”

“মানে?” উত্তেজনায় পরমের মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল কথাটা।

“একটা মূর্তি দেখালেন আমাকে। ওই মূর্তির একটা জোড়া দেখেই নাকি ছোটবাবু তড়িঘড়ি মধ্যপ্রদেশ যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। মাটির তৈরি মূর্তি আর তাকে ঘিরে একটা লোককথা..”

ধ্রুব হঠাৎ চুপ করে গেল। বাইরে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। একটু পরেই সামান্য ইতস্তত করে ঘরে ঢুকল সুখলাল। মুখ না তুলেই বলল, “কাল আমার ছুটি আছে সাব। আপনারা চাইলে আমি আপনাদের জঙ্গলের ভেতর একটা গাঁও-তে নিয়ে যেতে পারি। সেখানে একজন আছে যে জঙ্গলরাজার ডেরা চেনে।”

কয়েক সেকেন্ড ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল ধ্রুব। উত্তেজনায় চকচক করছে ওর চোখ-মুখ। হিসহিসিয়ে বলল, “কাল সকালে আমরা চেক আউট করছি তাহলে? পরম, আমার পার্সটা দে তো।”

#

একমনে মাটির হাঁড়ি বানাচ্ছিল বুধিয়া। সুখলালের কথা শুনে ঘাড় নাড়তে নাড়তে স্থানীয় ভাষায় কিছু উত্তর দিল। তা শুনে অসহায়ভাবে ধ্রুবর দিকে তাকাল সুখলাল, “যেতে চাইছে না!”

ধ্রুব কোনও কথা না বলে ব্যাগ থেকে একটা মূর্তি বের করে রাখল বুধিয়ার সামনে। মাটির হরিণ। লম্বায় ইঞ্চিচারেক হবে। মূর্তির মাথায় একটাই শিং, মাঝখানে। খুব যে নিখুঁত তা বলা যাবে না। দেবস্থানে পুজো দেওয়ার জন্য যেমন মাটির তৈরি হাতি, ঘোড়ার মূর্তি পাওয়া যায় খানিকটা সেরকম।

পরম গতকালই মূর্তির ইতিহাস শুনেছে। সমবেদনা দেখিয়ে ধ্রুব ওটা আদায় করেছে মনোহরকাকার কাছ থেকে। এরই জোড়া মূর্তি দেখে আর মনোহরকাকার মুখের গল্প শুনেই নাকি রাজমোহন মরিয়া হয়ে ছুটে এসেছিল পেঞ্চে। গল্পটা ধ্রুবও শুনেছে।

এই অরণ্যের গভীরে বসবাসকারী আদিবাসীদের ভগবান হল জঙ্গলরাজা। জঙ্গলের গোপনে কোথাও নাকি লুকানো আছে তাঁর থান। নিজের হাতে তিনি গণ্ডী এঁকে দিয়েছেন থানের চারপাশে। ফলে বাঘ-জাতীয় হিংস্র প্রাণীরা ওই এলাকাতে পা দেয় না। জঙ্গলরাজার চৌহদ্দিতে নাকি নিশ্চিন্তে খেলা করে হরেকরকম হরিণের দল। যার মধ্যে একশৃঙ্গীও আছে।

মূর্তিটা দেখে বুধিয়া যেন দ্বিধায় পড়েছে। সুখলাল তাকে বলেছে, ওখানে পৌঁছে দিলে সাহেব তাকে অনেক টাকা দেবে। কিন্তু বুধিয়া জানে, ওই এলাকা নিষিদ্ধ। ওখানে পা দিলে মানুষ বেঁচে ফেরে না। বার্ষিক পরবের দিন আদিবাসীরা এইরকম হরিণের মূর্তি বানিয়ে সীমানার মুখে রেখে দিয়ে আসে। জঙ্গলরাজার নিজস্ব পুরোহিত আছেন। শুধু তাঁরই অধিকার আছে ওখানে যাওয়ার। তিনি এসে ভক্তদের রাখা মূর্তি নিয়ে যান। যদিও আজ পর্যন্ত কেউ দেখেনি তাঁকে।

ধ্রুব এবারে মুখ খুলল, “তোমাকে আমি অনেক টাকা দেব, বুধিয়া। সেই টাকায় তোমার বেশ কয়েকবছর চলে যাবে।” বুধিয়া ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে মাথা নীচু করে জবাব দেয়, “কিন্তু আপনারা আর ফিরতে পারবেন না…ওখান থেকে কেউ ফেরে না…” যত্তসব অশিক্ষিত মানুষের কুসংস্কার, মনে মনে ভাবে ধ্রুব। পাত্তা না দিয়ে বলে, “তুমি আমাদের শুধু সেই জায়গাটা দেখিয়ে দেবে। ফেরার ভাবনা তোমাকে ভাবতে হবে না।”

#

সুখলাল ওদের সঙ্গে আসতে রাজি হয়নি। ওখান থেকে ওর বাড়ি কাছেই। হাঁটাপথে মাত্র আধঘন্টা।

ধীরগতিতে জঙ্গলের পথে চলছিল গাড়ি। পেছনের আসনে নিমরাজি বুধিয়া। তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে এদের অনাহুত অনুপ্রবেশে সে বিরক্ত। কিন্তু উপায় নেই। বুধিয়া জানে, এইসব শহুরে মানুষদের বড্ড গোঁ। এরা শিকারের সন্ধানে ভঙ্গ করে ছাড়বে অরণ্যের নির্জনতা।

“রোকিয়ে বাবু।”

বুধিয়ার কথাতে জোরে ব্রেক চাপে ধ্রুব। বাঁ-দিকে শুঁড়িপথ এঁকেবেঁকে মিলিয়ে গেছে সবুজের কোলে। সেই রাস্তায় গাড়ি যাবে না। বাধ্য হয়ে গাড়ি থেকে নিজের জিনিসপত্র নামিয়ে হাঁটতে শুরু করে ওরা।

এই গহীন অরণ্যের ভেতরে কোনও রাখঢাক নেই। ধ্রুব অনায়াসে তার ব্যাগ থেকে বন্দুক বের করল। শিকারী রাইফেল। সাইলেন্সার লাগানো। ওর এক গুলিতে হরিণ কেন বাঘ এলেও মারা পড়বে। বুধিয়া আড়চোখে একবার তাকিয়েই কেঁপে উঠল। ওর ভীতিপূর্ণ চোখের ভাষা পড়ে হাসি ফুটে উঠল ধ্রুবর ঠোঁটে।

জঙ্গল ক্রমশ ঘন হচ্ছে। গায়ে গা লাগিয়ে শতাব্দী প্রাচীন মোটা মোটা গাছের গুঁড়ি ওদের বাধা দিচ্ছে। গাঢ় সবুজের ভেতর অপরিসীম নীরবতা। পাখির ডাকও বিশেষ শোনা যাচ্ছে না।

কতক্ষণ হেঁটেছে খেয়াল নেই ওদের। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে পরম আন্দাজ করল ঘন্টাখানেক হবে। মৃদুস্বরে কিছু বলতে যাচ্ছিল, আচমকাই বুধিয়া দাঁড়িয়ে পড়ল। মুহূর্তে টান টান হয়ে গেল ধ্রুবর শরীর।

সামনে তিরতির করে বয়ে চলেছে একটা জলধারা। নদী না বলে নালা বলাই ভালো। তার উপর একটা সাঁকো। গাছের গুঁড়ি ফেলে তৈরি করা।

বুধিয়া বিড়বিড় করে বলল, “এখনো ফিরে যাওয়ার সময় আছে। এই বয়ে চলা জল তাঁর সীমারেখা। পার করলেই মৃত্যু।”

ধ্রুবর কানে কি বুধিয়ার কথা যাচ্ছে? আদৌ না। তার স্থির দৃষ্টি সামনে নিবদ্ধ।

ওই তো! হ্যাঁ, ওই তো জলের ক্ষীণ ধারার পাশে পাথরের আড়ালে নরম, সবুজ ঘাসে মুখ ডুবিয়ে রেখেছিল সে এতক্ষণ। সম্ভবত ওদের গন্ধ পেয়ে অথবা শব্দ শুনে মুখ উঁচু করে তাকাল। কোনও ভুল নেই। মনোহরকাকার দেওয়া সেই মূর্তির মতো, হুবহু। হরিণ। মাথার মাঝখানে একটা মাত্র শিং।

পেছনে পড়ে রইল বুধিয়ার সকাতর অনুরোধ। শিকারীর মতো পা টিপে টিপে সাঁকো পার হলো ধ্রুব। ওর দেখাদেখি পরমও। সহসা হরিণটা উপলব্ধি করল নিজের বিপদ। নিমেষে নিজের শরীর ঘুরিয়ে তৈরি হলো ছোটার জন্য। আর তক্ষুণি সাঁ করে বাতাস কেটে ছুটে গেল ধ্রুবর বন্দুকের গুলি। নির্ভুল লক্ষ্যে। কিন্তু এ কী! নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারল না ধ্রুব। হরিণটা তার ঘাতক গুলির পরোয়া না করে পূর্ণ উদ্যমে ছুটতে শুরু করেছে। জীবনে প্রথমবার ধ্রুবর গুলি এড়িয়ে বেঁচে গেল কোনও শিকার। দাঁতে দাঁত চেপে সে বলল, “আচ্ছা! আমার হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়া অত সহজ নয়।”

পরম একবার চোখ ফিরিয়ে দেখল বুধিয়া এখনো দাঁড়িয়ে আছে সেই সাঁকোর সামনে, বিষণ্ণ মুখে।

#

জঙ্গলের ঝোপঝাড়, লতা কাটিয়ে ধ্রুব যত সহজে এগিয়ে যাচ্ছিল, পরম পারছিল না কিছুতেই। এর মধ্যে বারদুয়েক হরিণটা দেখা দিয়েছে। সে যেন লুকোচুরি খেলছে ওদের সঙ্গে। আর ততই জেদ বেড়ে চলেছে ধ্রুবর।

ক্লান্ত হয়ে পরম একসময় দেখল ধ্রুব হাতদশেক দূরে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। হাতের বন্দুক কেমন নুয়ে পড়েছে। শরীরের সেই টানটান ভাব উধাও। চোখে যেন সারা পৃথিবীর বিস্ময়।

পরম দ্রুত এগিয়ে গিয়ে ওকে নাড়া দিল, “ধ্রুব! এই ধ্রুব!”

ধ্রুব পিছু ফিরল ঠিকই কিন্তু চোখের দৃষ্টি সম্পূর্ণ অচেনা। ঘোরলাগা গলায় বলল, “ও দাঁড়িয়ে আছে পরম! ও দাঁড়িয়ে আছে সামনে!”

“কে দাঁড়িয়ে আছে?” একটা অজানা ভয় বয়ে গেল ওর শিরদাঁড়া দিয়ে।

“রাজমোহন ঠাকুর।”

“রাজমোহন ঠাকুর?” অবাক হয়ে বলল পরম, “কিন্তু তাতে কী?”

“যে লোকটা হারিয়ে গেছে আজ তিনবছর আগে, সে কী করে দাঁড়িয়ে থাকে? তাছাড়া আমার বন্দুক থেকে যে গুলিটা করলাম, সেটা কোথায় গেল?”

“মানে!”

“আমার বন্দুক ভর্তি আছে পরম। একটাও গুলি খরচ হয়নি!” হঠাৎ যেন ভীষণ ভয় পেয়ে বলে উঠল ধ্রুব, “আর এক মিনিটও এখানে নয়। বাঁচতে চাইলে পালা! এক্ষুণি পালা।”

পরমকে অবাক করে ধ্রুব হঠাৎ পেছনদিকে ছুটতে শুরু করল। ভয় জিনিসটা ভীষণ ছোঁয়াচে। তার উপর ধ্রুবর মতো সাহসী, বেপরোয়া ছেলেকে ওইভাবে ছুটতে দেখে পরমও ঘাবড়ে গিয়ে ওর পিছু নিল, “ধ্রুব, দাঁড়া..”

ধ্রুব ওর কথা শুনতে পেয়েছে বলে মনে হলো না। সে এক নিঃশ্বাসে ছুটছে। গাছপালা, লতাপাতা ভেদ করে। অনেকক্ষণ ছোটার পর ওরা সেই সাঁকোটা দেখতে পেল। বুধিয়া তখনো দাঁড়িয়ে আছে। সাঁকো পেরিয়ে ওর পাশ দিয়ে তীব্র গতিতে ছুটে গেল ওরা দু’জন। যাওয়ার সময় মনে হলো বুধিয়া যেন বিড়বিড় করে বলছে, “সবাইকে বারণ করি যেতে.. ওদেরও বারণ করেছিলাম.. তোমাদেরও.. কেউ শোনে না..”

#

ভয়ানক হাঁপাচ্ছে ধ্রুব। গলা শুকিয়ে এসেছে। দৃঢ় শরীরে আর একটুও জোর নেই। পরমের অবস্থা আরো শোচনীয়। তবু প্রাণপণে সে চেষ্টা করছে ধ্রুবকে ধরার। এই জঙ্গলে একবার পথ হারালে কোনোদিনই বেরিয়ে আসা যাবে না।

ধ্রুব হঠাৎ বন্দুক রেখে মাটিতে শুয়ে পড়ল। জোরে জোরে শ্বাস টানতে টানতে বলল, “আমরা আর ফিরতে পারব না। কখনও না। আমাদের আসা উচিত ছিল না এখানে।”

অত কষ্টের মধ্যেও এবার ধমকে উঠল পরম, “কী যা-তা বলছিস। আমরা অনেকটা চলে এসেছি। আর একটু গেলেই সামনে সেই রাস্তা। ওখানে গাড়ি রাখা আছে আমাদের। বুধিয়াও এক্ষুণি এসে পড়বে।”

হঠাৎ পাগলের মতো হা হা করে হাসতে শুরু করল ধ্রুব। পরম দেখল ওর দু’চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে। হাসতে হাসতেই বলল, “বুধিয়া পেছনে, না? একবার সামনে তাকিয়ে দেখ!”

এতক্ষণ পর্যন্ত এক অদৃশ্য ভয় তাড়া করছিল পরমকে। শুধু মনে হচ্ছিল এই বুঝি কেউ ঝাঁপিয়ে পড়বে ওদের উপর। এবার ধ্রুবর কথায় সামনে তাকিয়ে হাঁ হয়ে গেল ও।

এত ছুটেও কোথাও যায়নি ওরা। সামনে তিরতির করে বয়ে চলেছে সেই নালা। তার উপরে সেই সাঁকো। আর সাঁকোর ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে বুধিয়া।

“আমাদের বাঁচাও বুধিয়া!” চিৎকার করে উঠল পরম।

“এই সাঁকো পেরিয়ে যারা ওপাশে যায় তারা আর ফেরে না সাহেব!” নির্মম শোনায় বুধিয়ার গলা, “তোমরা এবার শিকার করতে থাকো। যত ইচ্ছে।”

হাত থেকে কিছু একটা ওদের দিকে ছুঁড়ে দেয় বুধিয়া। মনোহরকাকার দেওয়া সেই মূর্তিটা। মূর্তিটা জলে পড়েছে। ভিজছে ক্রমশ। হঠাৎ যেন নড়ে উঠল সামান্য। ধীরে ধীরে বড়ো হতে থাকল মূর্তিটা। ওদের বিস্ফারিত চোখের সামনে এবার দাঁড়িয়ে পড়ল একটা হরিণ। একটা জ্যান্ত হরিণ। তার মাথার মাঝখানে শিং। একশৃঙ্গী হরিণ!

ওদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে নিজের শরীর সোজা করল সে এবার। ছোটার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ধ্রুবর মুখেও ক্রমশ ফুটে উঠল অপার্থিব জিঘাংসা। নিজের বন্দুক বাগিয়ে ধরল সে-ও।

দূর থেকে অরণ্যের পুরোহিত বুধিয়ার গলায় উৎসাহ ভেসে এল, “শিকার করো বাবু, শিকার!”

অলঙ্করণ-স্যমন্তক চট্টোপাধ্যায়

জয়ঢাকের সমস্ত গল্প ও উপন্যাস

1 thought on “গল্প-অভিশপ্ত একশৃঙ্গী -রূপম চট্টোপাধ্যায়-শীত ২০২১

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s