সক্কাল সক্কাল গঙ্গাস্নান সেরে ভিজে ধুতির উপর নামাবলিটা জড়িয়ে নিলেন বৃন্দাবন ঘোষাল। আজকের গন্তব্য এখনও ঠিক করে উঠতে পারেননি তিনি। ঘাট পেরোতেই চোখে পড়ল বড়ো একটা জটলা। একটা খাঁচার ভিতর জনা পঞ্চাশেক মানুষ। মানুষ বললে অবশ্য বেশি বলা হয়। এরা হল সাহেবদের সিলেভ। দেশিয় বাবুরাও বিভিন্ন কাজে এদের ব্যবহার ও কেনাবেচা করে থাকেন। সারা কলকাতায় এমন কোনও বাবুর বাড়ি নেই যেখানে ক্রীতদাস নেই। সাহেব ও বাবুরা মিলে কলকাতা শহরটাকে গোলাম কেনাবেচার বাজার বানিয়ে দিয়েছে। দূর থেকে জাহাজে করে গোলাম আসে কলকাতায় বিক্রির জন্য। লাভের জন্য দালালরা গৃহস্থ বাড়ি থেকে ছেলেমেয়ে চুরি করে পর্যন্ত। যদিও বেশিরভাগ গোলামদের বিক্রীত হবার প্রধান কারণ দারিদ্র্য। অন্নকষ্ট এমন এক তাড়না, যে তার থেকে বাঁচতে মানুষ নিজের সন্তানকে বিক্রি করে দিতেও দ্বিধা করে না।
দারিদ্র, অন্নকষ্ট! দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন বৃন্দাবন ঘোষাল। দরিদ্র হওয়ার মূল্য কি তাঁকে দিতে হয় না! দুটো পয়সার জন্য, একটু অন্নসংস্থানের জন্য বড়োলোক বাবুদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের মনের মতো চারটি কথা বলে, মোসাহেবি করে তো তাঁকেও পেট চালাতে হয়। সেটাই-বা দাসত্বের চেয়ে কতটা উন্নত!
রাস্তা আটকে ঝাঁক বেঁধে বসে আছে হাড়গিলে পাখিরা। মড়াখেকো সব। গঙ্গাস্নাত, শুচি শরীর নিয়ে সাবধানে পা ফেলেন বৃন্দাবন। ছুঁয়ে ফেললেই আবার নামতে হবে গঙ্গায়। অশুচি শরীর নিয়ে রামবাবুর বাড়ি গেলে, জানাজানি হয়ে গেলে তুলকালাম হবে। হ্যাঁ, বৃন্দাবন ঠিক করে নিয়েছেন আজ তিনি যাবেন রামকমল সেনের বাড়ি। নাম করতে না করতেই সামনে রামবাবুর হাতি হাজির। সঙ্গে মাহুত ও দুই পেয়াদা। নিশ্চয়ই বাজার থেকে কুলি কিনতে এসেছে। বৃন্দাবন বামুন পা চালান। রামকমল সেন গোঁড়া হিন্দু, আর ট্যাঁকশালের দেওয়ানও বটে। প্রচুর অর্থ আর প্রতিপত্তি। তাঁর মন জুগিয়ে কলাটা মুলোটা আদায় করার জন্য কী কী করা উচিত, তা ভাবতে থাকেন বৃন্দাবন মনে মনে।
“কী হে বৃন্দাবন, সকাল সকাল অমন ব্যাজার মুখ নিয়ে আমার দুয়ারে কেন? তুমি জানো না সকালবেলা অমন অলুক্ষুনে মুখ আমি পছন্দ করি না!” গম্ভীর গলায় বললেন বাবু রামকমল সেন।
“আজ্ঞে, তা জানি তো কত্তা, কিন্তু সকালবেলা এই প্রশস্ত রাজপথে যা পাপাচার ঘটে চলেছে তা শুনলে আপনার মুখও ব্যাজার হয়ে যাবে বাবু।” হাত কচলে বললেন বৃন্দাবন ঘোষাল।
“তা বেশ বেশ। তোমার মতো ভিখিরি বামুনের চোখেও তাহলে দিনে দুপুরে শহরের বুকে পাপাচারের নমুনা পড়ছে বলো! তা কেমন পাপাচার শুনি একটু।”
রামকমলের তাচ্ছিল্যটুকু এক ঢোঁকে গলা দিয়ে নামিয়ে বললেন বৃন্দাবন, “আজ্ঞে কত্তা, আপনি মা-বাপ। আমি গরিব বামুন, আপনার সামনে আমার ছোটো মুখে ওসব নোংরামির কথা বলা উচিত না, কিন্তু না বললেও তো নয়। সমাজ বলে তো একটা জিনিস আছে নাকি! এসব অনাচারের বিহিত না হলে সে যে একেবারে রসাতলে যাবে।”
“ওসব ধানাই-পানাই ছেড়ে আসল কথাটা বলো দেখি। আমি কাজের মানুষ, সারাদিন ধরে তোমার গৌরচন্দ্রিকা শোনার সময় আমার নেই।” বিরক্ত হলেন রামকমল।
“আহা, চটবেন না কত্তা। এই দেখুন সকালবেলা গঙ্গাস্নান করে কোশাকুশি নিয়ে আপনার বাড়ি আসছি, কী, না একটু ধম্মকথা হবে, আর ওই পোড়ামুখোগুলো কানে আমার কীসব অধম্মের কথা ঢুকিয়ে দিল, যেন বিষ! বলে কিনা, আমরা গোরু খাই গো, আমরা মোচলমানের জল খাই।’ এসব চিৎকার করে করে কান আমার পচিয়ে দিল। আবার তারা নাকি সব হিন্দুর ছেলে। ওই মেলেচ্ছ মাস্টারের কাছে এসব শিখছে। সে ফিরিঙ্গি মাস্টার বলে নাকি ঈশ্বর নাই, ধম্ম-অধম্ম বলে কিছু হয় না, পিতামাতার বিরুদ্ধে যাওয়া নাকি ন্যায়সঙ্গত! এমনকি এও শুনলাম যে হিঁদু বামুনের ছেলে দক্ষিণারঞ্জন মুখুজ্জের সঙ্গে নাকি নিজের বোনের বিয়ে দেবে ওই যবনটা! কী লজ্জা! কী লজ্জা! বলি দেশে আইন-বিচার নাই গো! যা খুশি তাই করবে এই মড়াখেকোগুলো!” থামল বৃন্দাবন।
কথাগুলো মনে ধরেছে রামকমলের। সত্যি-মিথ্যে মিশিয়ে বেশ একটা বক্তব্য দাঁড় করিয়েছেন বৃন্দাবন। আজ মনে হচ্ছে দেওয়ানজির কাছ থেকে ভালো কিছু হাতানো যাবে।
বৃন্দাবনকে মনোমতো দক্ষিণা দিয়ে বিদায় করলেন রামকমল। এ-জাতীয় খবর ইতিমধ্যেই তাঁর কানে এসেছে। কিছু ছেলে নাকি উপনয়নকালে উপবীত নিতে চাইছে না, যাদের উপবীত আছে তারাও তা ত্যাগ করে দিচ্ছে। সন্ধ্যা-আহ্নিক করতে চাইছে না, তার পরিবর্তে ইলিয়াড ও ওডিসি আবৃত্তি করছে এই অকালপক্কের দল। হিন্দু কলেজের অনেক অভিভাবকেরই অভিযোগের তির ওই নতুন মাস্টারমশাইয়ের প্রতি। তার প্ররোচনাতেই নাকি এসব হচ্ছে। আর সহ্যশীল হয়ে থাকলে চলবে না। আজ বৃন্দাবন যা বলে গেল তাতে এরপরও এসব চালাতে দিলে সমাজ, ধর্ম বলে আর কিছু থাকবে না। হিন্দু ছেলেদের এই কুসঙ্গ থেকে বাঁচাবার জন্য যতদূর সম্ভব চেষ্টা করে যেতে হবে তাঁকে। হিন্দু কলেজ কমিটির অন্যতম হিন্দু সভ্য তিনি। তিনি সচেষ্ট না হলে অভিভাবকেরা আর ভরসা করবেন কাকে!
২
এই মাস্টারমশাইটির প্রাণশক্তি দেখে হতবাক হয়ে যান হেয়ার সাহেব। কতটুকুই-বা বয়স! এসেছেনও তো মোটে বছর তিনেক। কিন্তু ছাত্রদের যেন চুম্বকের মতো আকর্ষিত করে রাখেন চারপাশে। স্কুল ছুটির পরও ছুটি নেই তাঁর। স্কুলের আগে, পরে, এমনকি বাড়িতেও ছেলেদের ভালোবাসার অত্যাচার সহ্য করতে হয় তাঁকে। আজও তেমনভাবেই ঘিরে আছে ছেলেরা। দক্ষিণারঞ্জন, প্যারীচাঁদ, রাধানাথ এরা সবাই খুব মেধাবী ছাত্র। মাস্টারমশাই তাদের প্রাণাধিক। ওদের বৃত্তের সামনে গিয়ে কীভাবে তিনি বলবেন কথাগুলো, যেগুলো তিনি নিজেও খুব ভালো করেই জানেন সর্বৈব মিথ্যা। কাছে এগিয়ে গেলেন হেয়ার সাহেব। ছেলেরা মাস্টারমশাইয়ের কবিতার কথা আলোচনা করছিল। হেয়ার সাহেব নিজেও পড়েছেন ডিরোজিওর কবিতা। ‘ফকির অফ জাঙ্গিরা’, ‘টু ইন্ডিয়া, মাই নেটিভ ল্যান্ড’ এসব কবিতা যাঁর কলমে আসে, তিনি কি মানুষের মন দূষিত করতে পারেন!
হেয়ার সাহেবকে এগিয়ে আসতে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানায় মাস্টারমশাই সহ অন্যান্য ছাত্ররা। হেয়ার হেসে অভিবাদন গ্রহণ করে ডিরোজিওর উদ্দেশে বললেন, “আপনার সঙ্গে আমার কিছু দরকারি কথা আছে মিস্টার ডিরোজিও। আপনার ছাত্ররা যদি কিছুক্ষণের জন্য তাঁদের প্রিয় মাস্টারমশাইটিকে আমার সঙ্গে একান্তে কিছু কথা বলতে অ্যালাও করেন তো ধন্য হই।”
হেসে উঠলেন ডিরোজিও। তার সঙ্গে ছাত্ররাও। সত্যিই তাদের মাস্টারমশাইটি প্রিয়ই বটে। এঁর সব কথা শুনতে ইচ্ছে করে, মানতে ইচ্ছে করে। সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন—কোন বিষয়ে তাদের শেখাননি তিনি! আর মানবিকতা! তার ঊর্ধ্বে তিনি কিছুই রাখেন না। এমন মানুষ প্রিয় হবেন না তো কে হবেন? মহাত্মা হেয়ারের জিম্মায় ডিরোজিওকে রেখে ছাত্ররা অগ্রসর হয়।
ডিরোজিওর কাছে এ-কথাটা কীভাবে উত্থাপন করবেন, বুঝতে পারলেন না হেয়ার সাহেব। হিন্দু কলেজের কমিটি তাঁর বিরুদ্ধে ছাত্রদের হিন্দুধর্মকে অবমাননা করার শিক্ষা দেওয়ার অভিযোগ এনেছে। ডিরোজিওর হাত দুটি ধরে এই অপ্রিয় কথাটি অত্যন্ত মনোবেদনার সঙ্গে জানালেন ডেভিড হেয়ার। বললেন, “কমিটির নির্দেশে তুমি আর বালকদের সঙ্গে ধর্ম নিয়ে আলোচনা করতে পারবে না ডিরোজিও। তোমার ধর্ম বিষয়ক আলোচনার কুপ্রভাব পড়ছে ছেলেদের জীবনযাপনে।”
“কিন্তু ধর্ম বিষয়ে কোনও কুমন্ত্রণা তো আমি দিই না স্যার। আমি শুধু প্রশ্ন করতে বলি বালকদের। শুধু ধর্ম কেন, সামাজিক রীতিনীতি, সংস্কার, দর্শন সবকিছুতেই প্রশ্ন করতে শেখাই আমি। এই জিজ্ঞাসাই তো জ্ঞান আহরণের একমাত্র পথ। সবকিছুকে অন্ধের মতো মেনে চলার মাধ্যমে একমাত্র গড্ডল ব্যতীত আর কিছুই তৈরি হয় না। মানুষ তৈরি করতে গেলে সমস্ত রেওয়াজকেই জিজ্ঞাসার মধ্যে ফেলা যে অবশ্য কর্তব্য স্যার। তা সে যে ধর্মেরই হোক না কেন।” আত্মপক্ষ সমর্থন করলেন ডিরোজিও।
“সে তো আমি জানি মিস্টার ডিরোজিও। কিন্তু হিন্দু সমাজপতিরা…”
“হিন্দুধর্ম শুধু না, প্রতিটি ধর্ম অশিক্ষা ও দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে কুসংস্কার ছড়ায়। আর এতে লাভবান হয় শুধুমাত্র ধনী সমাজপতিরা, যারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধাভোগকারী। সতীদাহের মতো নারী হত্যাকারী মনুষ্যধর্ম বিরোধী প্রথা যে ধর্মে বর্তমান, সে ধর্ম পবিত্র হয় কী করে? গঙ্গাজলে সন্তান বিসর্জন, বাল্যবিবাহ, বিধবা বালিকাদের অসহ্য জীবনযাপন—এ সমস্ত প্রথায় যারা উৎসাহ দেয়, তারা কি মানুষ!”
“আমি তোমার কবিতা ‘ফকির অব জাঙ্গিরা’ পড়েছি ডিরোজিও। সতীদাহের ভয়ংকর আঁচ থেকে বাংলার মেয়েদের নিষ্কৃতি পাওয়ার অধিকার আছে বৈকি। রামমোহন খুবই লড়েছেন এ-বিষয়ে, আইন পাশও হয়ে গেছে। তবে সমাজে লাগু হতে কিছুটা সময় তো লাগবেই। কিন্তু তোমার বিরুদ্ধে অন্য আরও অভিযোগ আছে, ডিরোজিও।”
“সে তো থাকবেই মহাত্মা হেয়ার। আমি যে ধর্ম নির্বিশেষে আঘাত হেনেছি। হিউমের দর্শন পড়িয়েছি। কবিতায় দেখিয়েছি স্বাধীনতার মূল্য। দাসপ্রথার দুর্নাম করেছি। তাতে যে সব বড়ো মানুষদের গায়ে আঘাত লেগেছে। সারা কলকাতা শহরে এমন কোনও বড়োলোকের বাড়ি নেই যেখানে ক্রীতদাস নেই। রোজ রোজ জাহাজঘাটায় পশুদের মতো জড়ো করা হয় দরিদ্র মানুষদের। কেনাবেচা করা হয়। সাহেব থেকে বাঙালি বাবু কেউই কম যায় না এতে। অন্নক্লিষ্ট কৃষকদের নামমাত্র দাদন দিয়ে নীল চাষ করানো হয়। অনিচ্ছুকদের কপালে জোটে মারাত্মক অত্যাচার। এসব নিয়ে মুখ খোলা কি অন্যায়? যে যাই বলুক স্যার, আমার ছাত্রদের মুখে এইসব অন্যায়ের প্রতিবাদের ভাষা আমি অবশ্যই দিয়ে যাব। চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম। এইসব তথাকথিত ভদ্র বাড়ির সন্তানদের ভেতর থেকেই আসা চাই বিপ্লবের ঝড়।”
“প্রিয় ডিরোজিও, বুঝি আমি এসব। তোমার হয়ে কথা বলেও ছিলাম কমিটির কাছে। কিন্তু হেড-মাস্টারমশাই আমার প্রতি আঙুল তুলেছেন, বলেছেন আমি নাকি তোমার খোশামুদে। তোমার জনপ্রিয়তা, ছাত্রদের তোমার প্রতি ভালোবাসা এসবের কারণে ঈর্ষার পাত্র হয়েছ তুমি। তারপর সমাজপতিদের বিক্ষোভ তো আছেই। রামকমল সেন প্রমুখ হিন্দু কলেজ কমিটির সদস্যরা তোমাকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করার পরামর্শ দিয়েছেন। আমি আর একটু সময় চেয়ে নিয়েছি ডিরোজিও। তুমি যদি শুধুমাত্র পেশাদারি বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাদানে রাজি হও, তাহলে হয়তো একবার শেষ চেষ্টা করে দেখতে পারি।” বিষণ্ণ স্বরে বললেন হেয়ার সাহেব।
“ক্ষমা করবেন স্যার। পেশাদারি শিক্ষাদান কী জিনিস, তা আমার জানা নেই। জানা থাকলে কলেজের সময়সীমার বাইরে ছাত্রদল আমায় ঘিরে রাখত না। একজন শিক্ষকের কাজ হল ছাত্রদের মনের জানালা খুলে দেওয়া, তাদেরকে মুক্ত চিন্তার অধিকারী হতে অনুপ্রেরণা দেওয়া। সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কারের প্রতি আঙুল তুলতে শেখানো। ঈশ্বরের অস্তিত্বের স্বপক্ষে বিপক্ষে যুক্তি দিয়ে বিচার করতে উৎসাহিত করা। মহান মানুষদের দর্শনের সঙ্গে পরিচয় ঘটানো। এর বাইরে, শুধুমাত্র বেতনের পরিবর্তে যান্ত্রিক বিষয় জ্ঞান দেওয়াকে আমি শিক্ষকতা বলে স্বীকার করি না।” চুপ করলেন ডিরোজিও। তারপর মাথা উঁচু করে বললেন, “আমার ছাত্রদের মধ্যে সত্যের বীজ রোপণ করেছি আমি, হেয়ার সাহেব। আমি চলে যাব, কিন্তু আমার ছাত্ররা সত্যের পতাকা বহন করবে, আরও অনেক মুক্তমনা ডিরোজিও তৈরি হবে, শিকল ভাঙবে, প্রশ্ন করবে। আমার শিক্ষাকে কেউই পশ্চাতে ফেলতে পারবে না।”
৩
“বন্ধুগণ, আজ বিশে ফেব্রুয়ারি আঠারশো আটত্রিশ। আমাদের ইয়ং বেঙ্গল দলের পক্ষ থেকে ‘অ্যাকুইজিশন অফ জেনারেল নলেজ’ কমিটি গঠিত হল। এই কমিটির প্রধান উদ্দেশ্য, পাশ্চাত্য বিজ্ঞানচর্চার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক সংস্কার যেমন জাতিগত বৈষম্য দূরীকরণ, বাল্যবিবাহ ও কুলীন বহুবিবাহ প্রতিরোধ, স্ত্রীশিক্ষা ও বিধবাবিবাহ প্রচলন। আমাদের প্রিয় শিক্ষক প্রয়াত হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আজ আমরা আমাদের মাঝে পেয়েছি সম্মাননীয় অতিথি মহাত্মা ডেভিড হেয়ার স্যারকে…”
বক্তৃতা দিচ্ছেন সোসাইটির প্রেসিডেন্ট তারাচাঁদ চক্রবর্তী। সদস্যদের ভিড়ে রাধানাথ শিকদার, প্যারীচাঁদ মিত্র, কৃষ্ণমোহন ব্যানার্জি, রামতনু লাহিড়ীদের উজ্জ্বল মুখ। উন্নত বক্ষে তাঁরা নিয়ে নিচ্ছেন সমাজ পরিবর্তনের অঙ্গীকার। তাঁদের প্ৰিয় মাস্টারমশাইয়ের শিক্ষাকে তাঁরা হারিয়ে যেতে দেবে না কোনোভাবেই।
বৃন্দাবন ঘোষাল গঙ্গাস্নান সেরে, নামাবলি গায়ে দিয়ে খুঁজতে থাকেন তাঁর আসন্ন শিকার। তাঁর পথে এসে জড়ো হয় রাজ্যের হাড়গিলে পাখি।
অলংকরণ= অংশুমান দাশ