শিবশংকর ভট্টাচার্যর সমস্ত গল্প
কাল ছোটকা অনেক রাত করে ফিরেছে। রাত্তিরের খাওয়া শেষ হয়ে আম্মা অন্তু-সুমনকে মশারির ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে যাবার পর। তবু চোখ-টোখ কচলে দু-ভাই ছোটকার ঘরের দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করেছে। রাত গভীর হলে বাংলোয় বিজলিবাতি জ্বালাবার নিয়ম নেই। জঙ্গলের জীবজন্তুদের নাকি চলাফেরায় অসুবিধে হয় তাতে। মোমবাতির আলোয় ছোটকার খাটের ওপর একটা ঢাকা দেওয়া ঝুড়ি ছাড়া কিছুই নজরে পড়েনি। খুব ব্যস্ত হয়ে ছোটকা শিশিবোতল নিয়ে কীসব ঢালাঢালি করছিল। ওদের পায়ের শব্দে চমকে উঠে এক ধমক—“যাও বলছি এখন শুতে! যা দেখবার দেখবে কাল সকালে।”
তবু দুটিতে গোমড়া মুখে দাঁড়িয়ে আছে বলে ঝুড়ির ঢাকাটা একটু ফাঁক করে এক ঝলক যা দেখাল তাতে কিছুই আন্দাজ করা গেল না, দেখা তো দূরের কথা। শুধু ঘুমোতে যাবার পরেও অন্ধকার ঘর জুড়ে একটা মিষ্টি বুনো বুনো গন্ধ ভেসে রইল বাতাসে। ঘুম এলও অনেক দেরি করে। বাংলোর হাতার বাইরের লোহার বেড়ার ওপর রাত-চৌকিদারের লাঠি ঠোকার শব্দ শোনা গেল বহুবার।
সক্কালবেলা ঘুম ভাঙা চোখে বারান্দায় এসে দুজনে অবাক!
উঠোনের জ্যাকারান্ডা গাছটার তলায় কুসুম কুসুম রোদে খাটিয়া পেতে ছোটকা বসে আছে। আর তাঁর কোলের ওপর ছোট্ট ছোট্ট দুটো চিতেবাঘের ছানা!
আম্মা বারান্দায় বসে উল বুনতে বুনতে হাঁক পাড়লেন, “যুঠি, ওদের খাবারদাবারগুলো এখানেই দিয়ে যা।”
যুঠিদিদি রান্নাঘর থেকে বলল, “দাদাভাইরা দাঁত মাজেনি এখনও, খাবে কী?”
আম্মা চোখ পাকিয়ে তাকাতেই অন্তু-সুমন ছুটল বাড়ির ভেতর। আম্মাকে আজ বড্ড রাগী রাগী দেখাচ্ছে। কলঘর থেকে এসে উঠোনে পা দিতে না দিতেই আম্মা হাঁকলেন, “ওদিকে কোথায়? খাওয়ার টেবিলে এসো।”
দু-ভায়ের মুখ চুন। সুমন গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে মুখ লাল করে দাঁড়িয়ে। অন্তুর ভুরু কোঁচকানো।
“বা রে, বাঘের ছানা দেখব না বুঝি?”
“দূর থেকে দেখো। বুনো জন্তু ঘাঁটাঘাঁটি করতে নেই।”
“ছোটকা ধরলে বুঝি দোষ হয় না!”
“দোষ হলেই-বা শুনছে কে? হাতে-পায়ে একটু বেড়ে উঠলেই হল! বড়ো হলেই তো ডানা গজায় সকলের! তোমাদেরও গজাবে একদিন। পইপই করে বারণ করা হল, শুনল? আরে বাপু, ফরেস্টে চাকরি করলেই এর-ওর-তার ছানা বাড়িতে এনে তুলতে হবে? যে-ছানা দুধ ছাড়েনি। চোখ ফোটেনি—তাকেও? টের পাবে একদিন। নাও, তোমরা বসে কী ভাবছ, দুধটা খেয়ে নাও দিকি এক চুমুকে। টোস্ট যেন একটাও পড়ে না থাকে প্লেটে।”
বেশ বোঝা গেল আম্মার মাথা আজ আর সহজে ঠান্ডা হবে না। অমন যে যুঠিদিদি, তার মুখেও কথাটি নেই। এঁটো প্লেট-গেলাস তুলে নিয়ে যাবার সময় ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে চোখ মটকে আড়াল করে হাসল।
ছোটকা নরম করে তাকাল এদিকে।—“রাগ কোরো না মা।”
“না, রাগ করব কার ওপর! আমার কথা শুনছে কে?”
“ওদের মা শঙ্খচূড় সাপের ছোবল খেয়ে মরে গেল যে।”
“গুল মারিস না!”
“সত্যি! ভিন্নু এক্কেবারে ঠিক সময়ে তুলে এনেছে। না নিয়ে এলে এরাও মরত। কী করবে বলো?”
“মায়ের দুধ না পেলে এমনিতেও বাঁচবে না।”
“ঠিক বাঁচবে, তুমি আছ তো। সেই ভরসাতেই তো নিয়ে এলাম। মেঘুকে কীরকম দুধ খাওয়াতে বাঁশের চোঙ আর বোতলে করে! সেই মেঘু কত বড়ো হয়েছে জানো মা! কাল সুবর্ণরেখার বাঁকের কাছে দেখলাম ওকে। প্রথমটায় তো চিনতেই পারেনি আমায়। জিপ থেকে নেবে কাছে যাবার পর শুঁড় বুলিয়ে সে কী আদরের ঘটা! জিপের পিছু পিছু ছুটেও এল অনেকটা।”
আম্মার বোনার কাঁটা থেমে গেছে কখন। ভুল বোনা ঘর থেকে উল খুলে ফেলছে। অনেকক্ষণ বাদে মুখ তুলে চাইল।—“আমি তো বুড়ো হয়েছি, নাকি হইনি?”
“পাগল! তুমি তো আমার ছোট্ট মেয়েটা, বুড়ো আবার হলে কবে? অ্যাই কে বুড়ো বলেছে রে আমার মেয়েকে? খবরদার!”
আম্মার থুতনি ধরে নেড়ে দিল ছোটকা। মায়ের পায়ের কাছে কম্বলের ওপর শুইয়ে দিয়েছে ছানা দুটোকে। এলোমেলো পা বাড়িয়ে চলে বেড়াবার চেষ্টায় আছে তারা। বেকায়দায় গড়িয়ে পড়ছে এ-ওর গায়ের ওপর। একটি আবার আম্মার পায়ের ওপরে মোটাসোটা থাবা চাপিয়ে দিয়েছে। বোজা চোখে নরম ঘাড় দুলছে এদিক ওদিক। বোঁচা নাক উঁচিয়ে বাতাস পরখ করতে গিয়ে উলের সুড়সুড়িতে হেঁচে ফেলছে। দেখেশুনে উবু হয়ে বসে থাকা অন্তু আর সুমন হেসে বাঁচে না।
আম্মা উল গুছিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। কোঁচকানো ভুরুতে বিরক্তি আছে কি নেই বোঝা গেল না।
“জানি না বাপু তোমাদের আদিখ্যেতার কথা। কত তো দেখলাম তোমার রঙ্গ সেই ছোটবেলা থেকে। হ্যাঁ রে, বনের জানোয়ার কখনও সত্যি সত্যি পোষ মানে? না কিছু মনে রাখে! ও কী, তোমরা আবার বসলে যে? চলো চান করতে! বিকেলের গাড়িতে জেঠু আর বম্মা আসবে গাল্লু বোনকে নিয়ে। মনে আছে তো সে-কথা? চলো চলো!”
চানের ঘরে গিয়ে সুমন অন্তুর কানে কানে বলল, “ওদের কী বলে ডাকব দাদাভাই?”
সাবান মাখানো থামিয়ে যুঠিদিদি হাসল।
“নাম আবার কী দিবি? অমন ভালো বোনটাকে তো ডাকা হয় গাল্লু বলে। কী নামের ছব্বা! আমি বলি শোন, একটার নাম হোক বাঘু আর অন্যটার ঘুঘু। তাকিয়ে দেখিস ভালো করে, পেত্থমটা থাকে সবসময় আগ বাড়িয়ে পেট-রোঁয়া ফুলিয়ে, পরেরটা যেন একটু নরম-সরম সাবধানী। হয় লাজুক, নয়তো বেজায় সেয়ানা। হ্যাঁ বাপু, ওই বাঘু আর ঘুঘুই ভালো।”
দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পাট চুকিয়ে যুঠিদিদি কোলের বাচ্চাটাকে ঘুম পাড়িয়ে কাঁথায় শুইয়ে আম্মার চুল আঁচড়াতে বসল। চিরুনি চালাচ্ছে আর বিড়বিড় করছে—“ও মা! সলতে দিয়ে দুধ খাওয়ানো কি মুখের কথা! চোখমুখ ফোটেনি যে এখনও। খিদের নেতিয়ে পড়ছে। আবার দুধে ডোবানো সলতে বাড়িয়ে দিলেই মুখ ফিরিয়ে নেয়। কেবল গায়ে ঢুঁ দিয়ে মাকে খোঁজে, খাবার খোঁজে। শেষটায় ও-দুটোকেও বুকের কাছে নিয়ে শুলাম। কী খাওয়ার ধুম! ঠিক যেন মাকেই খুঁজে পেয়েছে। আদর খেয়ে থরথর করে কাঁপছে আর গরগর করে আওয়াজ করছে। হ্যাঁ গো মা, আমি তো মানুষ, আমার গায়ে ওরা চিতে-মায়ের গন্ধ পেল?”
বলে নিজেই নিজের গায়ের আঁচল নাকে নিয়ে শুঁকছে যুঠিদিদি। আম্মার ঘুম ঘুম চোখ দুটো তাকিয়ে আছে কত্তো দূরের ধোঁয়া নীল আকাশিয়া আর সিসার শিস বনের মাথা ছুঁয়েছে যেখানে আকাশ, সেখানে। অথবা আরও দূরে কোথাও।
চিতাবাঘের ছানা দুটোর চোখ ফুটতে সাতদিন লাগল। ওদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ছুটির দিনগুলো চলে গেল অন্তু-সুমনের। হাত-পা আর ঘাড় শক্ত হতে হতে পনেরো দিন। নতুন গজানো হলদেটে রোঁয়াগুলোর ওপর সবে আবছা মেটে রঙের ফুলগুলো দেখা দিতে শুরু করেছে, ব্যস। অন্তু আর সুমনের বাড়ি ফেরার সময় হয়ে গেল।
ছোটকার হাত ধরে জঙ্গলের জিপে উঠে ওরা যখন শহরের দিকে রওনা হচ্ছে, যুঠিদিদির এক কোলে নিজের ছেলে যুধিষ্ঠির আর এক কোলে জড়াজড়ি করে ছানা দুটো। দূর থেকে সবুজ কাচের চুন্নি-গুলির মতো চকচকে চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। পথের ধুলোয় চোখ কড়কড় করে উঠল অন্তু আর সুমনের। ছোটকা গাড়ি চালাতে চালাতে আনমনা গলায় বলল, “ছ’মাস বাদে বড়দিনের ছুটিতে যখন এখানে আসবি, দেখবি ওরা কত বড়ো হয়ে যাবে।”
ঠিক একমাস বাদে আম্মার চিঠি এল।
আদরের অন্তুসোনা আর সুমনসোনা,
তোমরা চলিয়া যাইবার পর আমার বড় একা একা লাগে। বড়দিনের ছুটিতে আবার তোমাদের লইয়া আসিব। খুব মজা হইবে তখন। জানো সেই মেঘু বলিয়া হাতিটা, যাহাকে তিন বছর আগে তোমরা ছোট্ট দেখিয়াছিলে, সে একদিন আসিয়া আমার সহিত দেখা করিয়া গিয়াছে। সত্যিই মেঘের মতো বড় আর ঘন কালো হইয়াছে তাহার চেহারা। আমি আদর-টাদর করিবার পর রকমসকম দেখিয়া বোঝা গেল, মনে মনে সে তেমনই ছোট্টটিই আছে। বাংলোর এদিক ওদিক ঘুরিয়া, ডাকাডাকি করিয়া বোধহয় তোমাদেরও খোঁজ করিল। না পাইয়া চোখের জলও ফেলিল। আমাকে কিছুতেই ছাড়িতে চাহে না। শেষটায় সেই বাঁশের চোঙ আর বড় বোতলে অনেক দুধ খাওয়ানোর পর আমার একটি হলুদ উলের গোলা উপহার লইয়া তবে গেল। বেচারা কিছুদিন হইল চোরা শিকারিদের একটি গাড়ি উলটাইয়া ‘রাগী’ বদনাম কিনিয়াছে। তোমাদের ছোটকা অবশ্য বলে, বনের সমস্ত জানোয়ারেরই ঐরকম রাগী হইয়া উঠা উচিত। নইলে বন আর থাকিবে না।
বাঘু আর ঘুঘু বড় হইতেছে দিনে দিনে। এবার তাহাদের কীর্তির কথা বলি শোনো। বলিতে নাই, চেহারা অত্যন্ত সুন্দর হইয়াছে দুজনেরই। সোনালি লোম গজাইয়াছে সারা গায়ে, তাহার ওপর খয়েরি ফুল ফুল ছোপ। ছোটো বলিয়া মাথা আর থাবা শরীরের তুলনায় বড়ো। চোখের রঙ উজ্জ্বল সবুজ। যে দেখে সে আর চোখ ফিরাইতে পারে না। নজর লাগিবে বলিয়া তোমাদের যুঠিদিদি ওদের গলায় কালো ফিতা দিয়ে বুনো ঠাকুরের বড় বড় মাদুলি ঝুলাইয়া দিয়াছিল। সদ্য গজানো দাঁতে চিবাইয়া তাহার কিছু আর বাকি রাখে নাই। অবশ্য যুধিষ্ঠিরের কোমরেরটা এখনও আছে। যুঠি উহাদের বড়ই ভালোবাসে। রোজ বিকালে লাল ফিতা দিয়া তিনজনেরই মাথায় ফুল বাঁধা হয়। আহা, রূপ দেখিয়া হাসিয়া বাঁচি না। অবশ্য তাহারা দুইজন লোক মোটেই ভালো নয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছিঁড়িয়া কুটিকুটি করে। ফলে লাল রিবন কিনিতে কিনিতে আমি ফতুর এবং যারপরনাই বিরক্ত।
সেইদিন আমি তেঁতুলের আচার তৈরি করিয়া রোদ্দুরে দিয়াছিলাম। দুই দুষ্টু আড়ালে আড়ালে গা-ঢাকা দিয়া সমস্ত নজরে রাখিয়াছে। আমি চলিয়া যাইতেই আচারের থালার উপর ঝাঁপাইয়া পড়িয়া সারা গায়ে মাখিয়া ভূত সাজিয়া বসিয়া ছিল। স্বাদ বোধহয় ভালো লাগে নাই। বাঘের মুখে তেঁতুলের আচার, ভালো না লাগিবারই কথা। আমার কাছে গিয়া মিউ-মিয়াও করিয়া কী নালিশ করাই করিয়াছে! যেন আমারই সব দোষ।
এইবার আসিয়া বাড়িতে একটা বালিশও আস্ত দেখিতে পাইবে না। ঠাকুরঘরের ছোট্ট বালিশগুলিও আস্ত রাখে নাই। সারা বাড়িতে তুলা উড়িতেছে। উড়ন্ত তুলার পিছনে তাড়া করা একটা নতুন খেলা হইয়াছে।
কী যে ব্যস্ত আছি ইহাদের লইয়া, বলিবার নয়। আজকাল আবার যার-তার দুধ খাইয়া বেড়ানো স্বভাব হইয়াছে তোমাদের বাঘুরাম আর ঘুঘুরামের। সেইদিন দেখি লালু কুকুরটার দুধ খাইতেছে। যুঠি বকাঝকা করিবার পরেও লজ্জা নাই। লালুর অবশ্য আপত্তি আছে বলিয়া মনে হয় না। লালুর ছানারাও তেমন কিছু বলে নাই। টেঁপি গোরুটার দুধ খাইতে গিয়াছিল একদিন, লাফালাফি সার হইয়াছে, নাগাল পায় নাই।
কী আর বলিব, দুইজনে স্বাধীনভাবে লেজ উঁচু করিয়া সারা বাড়ি-বাগান চষিয়া বেড়ায়। মাঝে মাঝে লোহার বেড়ার কাছে গিয়া জঙ্গলের দিকে চাহিয়া কী দেখে। বোধহয় মরা মায়ের কথা মনে পড়ে। খুবই খেলুড়ে মেজাজ হইয়াছে। উলবোনা বন্ধ করিয়াছি। বুনিতে বসিলেই উলের গোলা লইয়া পিটটান দেয়। যুঠিকে বড়ই ভালোবাসে। যুধিষ্ঠিরকে তো বটেই। তাহার সহিত খেলিতে চায়। তবে সে-বেচারি মানুষের বাচ্চা, উহাদের সহিত ঠিক পারিয়া উঠে না।
তবে এত বড় দুই বীর কিন্তু বেলুনকে বড় ভয় পায়। বেলুন দেখিলেই লুকায়। একবার একখানি বেলুন উহাদের মুখের উপর ফটাস করিয়া ফাটিয়া যাইবার পর হইতেই সাবধান হইয়াছে।
আর কী বলিব, কোনোমতে উহাদের বাঁচাইতে পারিয়াছি এই আমার কপাল। মা-হারা বনের শিশু বাঁচানো কি সহজ কথা! বড় হইয়া বনের জীব বনে চলিয়া যাইবে। তবে বড় মায়া বাড়াইয়া যাইবে। আজকাল নাম ধরিয়া ডাকিলে সাড়া দিতে শিখিয়াছে। তবে গলার আওয়াজ এখনও বাঘ-বাঘ হয় নাই। যাই হোক, ইহাদের কথা বলিয়া শেষ করিতে পারিব না। তোমরা আসিয়া নিজের চক্ষেই দেখিতে পাইবে।
বলিতে ভুলিয়াছি, তোমাদের ছোটকার বদলির আদেশ আসিতেছে। বড়দিনের ছুটির শেষে সকলে মিলিয়া একসঙ্গেই এই বাংলো ছাড়িয়া চলিয়া যাইতে হইবে। এইবার যাইব আসামের জঙ্গলে। চিতার ছানাদের কথা ভাবিয়া ছোটকা আরও এক বছর পর বদলি চাহিয়া চিঠি দিয়াছিল, ফল হয় নাই। সৎ মানুষের শান্তি নাই। বড় বড় মানুষেরা চোরা শিকারিদের বন্ধু, তোমার ছোটকার বন্ধু নাই। লোভী, বদ লোকগুলি জঙ্গলে থাকিবেই ঝোপঝাড়ের অন্ধকারে গা-ঢাকা দিয়া।
দুঃখ করিও না। হয়তো বড় হইয়া তোমরাও ছোটকার মতো ফরেস্টের চাকুরি করিবে, অথবা জঙ্গলে বেড়াইতে আসিবে কখনও। এই জঙ্গলে আসিলে হয়তো বাঘু-ঘুঘু অথবা মেঘুর সঙ্গে দেখা হইয়া যাইবে কপাল গুণে দৈবাৎ। তখন যেন চিনিয়া লইতে ভুল না হয়। অবশ্য তোমাদের যুঠিদিদি আর তাহার ছেলে যুধিষ্ঠির তো এখানেই থাকিবে, তাহারাই চিনাইয়া দিতে পারিবে।
ভালো থাকিও। লেখাপড়া করিও। বড় হও। আমার অনেক অনেক আদর নাও। পত্রের উত্তর দিও।
ইতি
তোমাদের আম্মা
অলঙ্করণ-শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য
খুব সুন্দর। এইরকম গল্প ভবিষ্যতের পাঠক সম্ভাবনা সৃষ্টি করে।
LikeLike