নির্বিচারে মানুষ খুনের পর, সে পালিয়েছিল। আর ধরা পড়ল কিনা আমারই হাতে? তখনও তার তেজ কমেনি। তখনও নিজস্ব হত্যাতত্ত্বকে নতুন করে বোঝাবার চেষ্টা করছে। বুঝলাম ওর শাস্তি দরকার এবং সে-শাস্তি আমাকেই দিতে হবে। সে-ঘাতককে আটকে রাখলাম এমন রাজ্যে, যেখানে রূপকথা ছাড়া কিছু নেই।
বেশ কিছুদিন পর দেখা করলাম তার সঙ্গে। নৃশংস গলায় চেঁচিয়ে উঠল, “এ কোথায় রেখেছ আমায়? রাজ্যের গুল-গপ্পো, কথা-বলা পাখি, আকাশে ওড়া ঘোড়া—এক্ষুনি মুক্তি দাও, পাগল হয়ে যাচ্ছি।”
তৎক্ষণাৎ ফের তাকে একই জায়গায় ফিরিয়ে দিলাম।
পরের বার যখন দেখা হল, তার সুর নেমেছে বটে, কিন্তু দৃষ্টি ঘাতকের রয়ে গেছে। ঘাড় বাঁকিয়ে মৃদু স্বরে বলল, “যদি একবার এই কারা থেকে বের হতে পারি…”
তাকে ফের সেই কারাগারে ফিরালাম।
এরপর বহুদিন কেটে গেছে। সে-ঘাতকের কথা প্রায় ভুলেই গেছিলাম। কিন্তু একদিন কারাগার পরিষ্কার করতে গিয়ে তাকে বের করে দেখি, দুই চোখে কেমন মায়া মাখা। একটা দূর-পাহাড়ি সুর গুনগুন করছে। হেসে বলল, “চাঁদনি রাতে ব্যাঙ্গমার গান শুনেছ? আর দেখেছ পক্ষীরাজের ওড়া? নিদুলি মন্ত্র জানো? পেয়েছ কখনও কাঠ-পরিদের সুবাস। তারপর কেমন একটা কান্না-মাখা হাসি হেসে, আমার হাত গলে ফের ঢুকে গেল নিজের খোপটাতে। বুঝলাম, তার শাস্তি শেষ হয়েছে। এখন তাকে চাইলেও ও-জেল থেকে বাইরে আনা যাবে না।
(কিছুই নয়। মেইন ক্যাম্ফ বইটা, বইয়ের তাকে রেখে দিয়েছিলাম, হলদে পাখির পালক আর ঠাকুমার ঝুলির মাঝখানে।)
অলঙ্করণ-মৌসুমী রায়